৩য় অংশ
কৃষ্ণ বেপারীর কাহিনী
খুলনা জেলা মধ্যে চিতলমারী থানা।
খুলনা জেলা মধ্যে চিতলমারী থানা।
চল বাণীয়ারী গ্রাম সকলের জানা।।
সেই গ্রামে বাস করে শ্রীকৃষ্ণ বেপারী।
অশ্বিনীর প্রিয় ভক্ত সদা বলে হরি।।
অশ্বিনীর চরণেতে দৃঢ় ভক্তি তার।
মন প্রাণ সপে দিয়ে হল নির্বিকার।।
একদিন সে অশ্বিনী ঘুরিতে ঘুরিতে।
উদয় হইল গিয়া কৃষ্ণের বাড়িতে।।
হরি বলে যখনেতে বাড়িতে উঠিল।
কৃষ্ণের রমনী এসে চরণে পড়িল।।
কেদে কেদে সেই নারী চরণ ধোয়ায়।
আসন পাতিয়া শেষে বসিবারে দেয়।।
ধুপ ধুনা দিযে সে যে হুলুধ্বনি করে।
কৃষ্ণ আসিয়া গুরুর চরণেতে পড়ে।।
যুগল চরণ ধরি কাদিতে লাগিল।
তার নারী পাখা দিয়ে বাতাস করিল।।
সংবাদ পাইয়া এল আরো দুইজন।
ভাষারাম ঠেট আর শ্রীগুরু চরণ।।
তারা এসে দুইজনে প্রণাম করিল।
আহারাও অশ্বিনীর অনুগত ছিল।।
শ্রীকৃষ্ণ বলেছে তার রমনী ঠাই।
কিবা খেতে দিবা আমি তোমাকে শুধাই।।
তার নারী ব্যস্ত হয়ে গৃহ মধ্যে যায়।
ঘরে আছে পাকা পেপে দেখিবারে পায়।।
বৈশাখ মাসের শেষ পাকা আম আছে।
তাই নিয়ে সে রমনী বাহিরে এসেছে।।
ফল কেটে খেতে দিল অশ্বিনীর ঠাই।
পরাণ ভরিয়া খেল অশ্বিনী গোঁসাই।।
তারপর তিন জনে একখানে বসে।
মাছ ধরিবারে যাবে করে পরামিশে।।
তাই জেনে সে অশ্বিনী বলিল বচন।
কোন মাছ ধরিবারে করিয়াছ মন।।
তাহারা বলেছে সবে অশ্বিনীর ঠাই।
যেই মাছ খেতে চাও এনে দিব তাই।।
অশ্বিনী বলেছে আমি আড় মাছ চাই।
পার যদি সবে মিলে এনে দাও তাই।।
তাই শুনে তিন জন করিল গমন।
জুতি হাতে চলেলেন শ্রীগুরু চরণ।।
নদীতে যাইয়া সবে নৌকায় উঠিল।
দশ হাত নৌকা বেয়ে কিছুদুর গেল।।
বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে যায়।
অল্প জলে আড় মাছে গর্ত করে রয়।।
পাঙ্গান বলিয়া তারে জনগণ কয়।
জলে নেমে খোজ করে গোজ গেড়ে দেয়।।
একুশটি গর্তে সেই ঠিক করা আছে।
নৌকা বেয়ে তিন জনে তার কাছে গেছে।।
আগানায় জুতি হাতে শ্রীগুরু চরণ।
মাঝখানে বসে আছে সেই কৃষ্ণধন।।
পাছানায় বসে সেই ভাষারাম ঠেটা।
আস্তে আস্তে নাও বায় হাতে নিয়ে বৈঠা।।
একে একে কুড়িখানা পাঙনে কোপায়।
খালি জুতি উঠে আসে মাছ নহে পায়।।
শ্রীকৃষ্ণ বেপারী কহে এক কোপ বাকি।
এ কোপেও যদি ভাই হয়ে যায় ফাকি।।
গোঁসাই বলেছে আমি আড় মাছ খাব।
সেই মাছ যদি আজ দিতে না পারিব।।
জীবন ত্যাজীব আজি শুন ওরে ভাই।
শ্রীগুরু চরণ বলে মোর কথাই তাই।।
এই কোপে মাছ যদি মিলাতে নারিব।
এ নৌকা ডুবায়ে দিয়ে সকলে মরিব।।
এত বলি তিন জন প্রতিজ্ঞা করিয়া।
নৌকা সঙ্গে দড়ি বাধে গুরুকে স্মরিয়া।।
সে গুরুচরণ দড়ি বাধিলেন পায়।
কৃষ্ণ বেপারী সে বাধিল মাজায়।।
ভাষারাম বাধে দড়ি নিজের গলায়।
অনুরাগে তিনজন মরিবারে চায়।।
গুরুকে স্মরণ করি শেষ কোপ দিল।
এক বড় আড় মাছ সে কোপে বিধিল।।
তাই দেখে সকলের আনন্দিত মন।
তারপর খুলে ফেলে সবার বান্ধন।।
মাছ নিযে তিন জন বাড়ীতে আসিল।
অশ্বিনী তখন ওঠে রওনা হইল।।
কারে কিছু না বলিয়া দ্রুতগতি ধায়।
কৃষ্ণের রমনী গিয়ে ধরিলেন পায়।।
অশ্বিনীর পদ ধরি সে রমনী বলে।
কোন অপরাধ পেয়ে মোরে যাও ফেলে।।
যদি কোন অপরাধ করে থাকি বাবা।
অভাগিনী অবলারে ক্ষমা করে দিবা।।
সাধন না জানি বাবা ভজন না জানি।
নিজ গুনে কৃপা কর ওহে গুণমনী।।
অশ্বিনী বলেছে মাগো শুন মোর কথা।
দড়ি দিয়ে বাধে মোরে তাই পাই ব্যাথা।।
তিন জনে তিন স্থানে আমাকে বেধেছে।
চেয়ে দেখ সেই খানে ফুলিয়া রয়েছে।।
গলদেশে ফুলিয়াছে বন্ধন জ্বালায়।
কোমরে হয়েছে দাগ দেখ মোর গায়।।
পায়েতে বাধিল মোরে চেয়ে দেখ তাই।
বল মাগো এই ব্যাথা কোথায় জুড়াই।।
তাই দেখে তিনজনে চরনে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কাদিতে লাগিল।।
নয়নের জলে ভেসে কেদে কেদে কয়।
তোমার চরণ বিনে দাড়াব কোথায়।।
ক্ষমা কর অপরাধ মাগি পরিহার।
তোমার নফর মোরা এ দেহ তোমার।।
কান্না দেখে অশ্বিনীর দয়া উপজিল।
সকলকে নিয়ে শেষে গৃহ মধ্যে গেল।।
আড় মাছ খেতে দিল রন্ধন করিয়া।
অশ্বিনী খাইল তাহা পরাণ ভরিয়া।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
অশ্বিনীর প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
পূর্ণচন্দ্রের কাহিনী
খুলনা জেলায় আছে শুড়িগাতী গ্রাম।
সেই গ্রামে বাস করে পূর্ণচন্দ্র নাম।।
অশ্বিনীর প্রিয় ভক্ত সরল হৃদয়।
অশ্বিনীর গুণগান গাহিয়া বেড়ায়।।
হরি হরি বলে মুখে ওড়াকান্দি যায়।
গুরুচাঁদ চরণেতে প্রণাম জানায়।।
গুরুচাঁদ আশীর্বাদ করিয়া গ্রহণ।
অশ্বিনীর পিছে পিছে চলে সর্ব্বক্ষণ।।
কিছুদিন অশ্বিনীর সঙ্গেতে ঘুরিয়া।
পুনরায় আসিলেন ঘরেতে ফিরিয়া।।
সংসারী সাজিয়া সদা করিতেন কর্ম।
হাতে কাম মুখে না এ যুগের ধর্ম।।
এই ভাবে চলিতেন ভকত সুজন।
হরিনাম করিবারে ঝরে দু’নয়ন।।
এইভাবে কতদিন গত হয়ে গেল।
দৈবের ঘটনা তাহা কে খন্ডাবে বল।।
একদিন সেই গ্রামে গন্ডগোল হয়।
দুই দলে মারামারি করিল সবায়।।
সেইখানে পূর্ণচন্দ্র ঠেকাইতে গেল।
ঠেকাইতে গিয়ে তিনি আসামী হইল।।
বিপক্ষেরা কেস করে যাইয়া থানায়।
আসামীর পক্ষ তারা পালাইয়া ভয়।।
পূর্ণচন্দ্র নির্ভয়েতে ঘরেতে রহিল।
আসামী হয়েছে তিনি কিছু না জানিল।।
একদিন সে অশ্বিনী বলে হরি হরি।
উদয় হইল এসে সেই বালা বাড়ী।।
অশ্বিনীকে দেখে সেই পূর্ণচন্দ্র বালা।
আনন্দেতে আত্মহারা হইল বিভোলা।।
অশ্বিনী চরণে গিয়ে প্রণাম করিল।
ছল ছল আখি দু’টি কহিতে লাগিল।।
এই বাড়ী এই ঘর সকল তোমার।
তোমার চরণে আমি করি পরিহার।।
বাড়ীর সবাই এসে প্রণাম করিল।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে ঘরেতে বসাল।।
হুলুধ্বনি হরিধ্বনি করে সবে মিলে।
ধুপ ধুনা দিয়ে শেষে ভাসে আখি জলে।।
এইভাবে ভক্তি করে ভোজন করাল।
তারপরে সবে মিলে প্রসাদ খাইল।।
হরি বলে সে অশ্বিনী শয়ন করিল।
সেই দিন সেই রাত্রি তথায় রহিল।।
ভোরবেলা পূর্ণচন্দ্র ঘুম থেকে জাগি।
বারান্দায় বসিলেন হুকা সেবা লাগি।।
হেনকালে থানা হতে দারোগা আসিল।
পুলিশ সঙ্গেতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করিল।।
পূর্ণচন্দ্র বালা নামে সে বাড়ী কোথায়।
বাড়ী আছে কি না আছে কহে মহাশয়।।
পূর্ণচন্দ্র বলে এই তার বাড়ী হয়।
মম নাম পূর্ণচন্দ্র দিনু পরিচয়।।
দারোগা বলেছে তুমি আসামী হয়েছে।
আগে পরে তাহা তুমি কখন জেনেছ।।
থানা হতে আসিয়াছি তোমাকে ধরিতে।
হুকুম আছে মোদের হাত কড়া দিতে।।
ঘর থেকে নেমে এস করিব বন্ধন।
থানাতে লইয়া যাব তোমারে এখন।।
তাই শুনে পূর্ণচন্দ্র কি যেন ভাবিয়া।
অশ্বিনীর পদপ্রান্তে কহিছে কাদিয়া।।
শুন শুন ওগো বাবা করি নিবেদন।
আসামী হয়েছি আমি বড় অভাজন।।
মারামারি গন্ডগোল আমি করি নাই।
আসামী হয়েছি কেন বল আজি তাই।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী বাহিরেতে এল।
দারোগার কাছে এসে কহিতে লাগিল।।
থানা হতে আসিয়াছে রিপোর্ট পাইয়া।
এই আসামীর নাম শুনাও পড়িয়া।।
দারোগা সেই খাতা ধরে দেখাতে লাগিল।
পূর্ণচন্দ্র নাম কভু খুঁজিয়া না পেল।।
বার বার সেই খাতা করে অন্বেষণ।
তাই দেখে দারোগা সে ভাবে মনে মন।।
অশ্বিনীর মুখপানে দারোগা চাহিয়া।
কি যেন ভাবিয়া কাঁদে চরণে পড়িয়া।।
অপরাধ করিয়াছি কেদে কেদে কয়।
ক্ষমা কর অপরাধ ওগো মহাশয়।।
অশ্বিনী বলেছে বাবু সুস্থ কর মন।
ঈশ্বর ইচ্ছায় হয় এসব ঘটন।।
তাই শুনি সে দারোগা সকলকে নিয়া।
থানায় চলিল সবে বিদায় হইয়া।।
তাই দেখে সকলেতে মানিল বিস্ময়।
অশ্বিনীর চরণেতে গড়াগড়ি যায়।।
অধম বিনোদ বলে আর কিবা চাও।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি গুণ গাও।।
শীতলের গুরুভক্তি
গোড়ানালুয়া গ্রামেতে নামেতে শীতল।
হরিভক্ত শিরমণী বলে হরি বল।।
বাড়ই বংশেতে জন্ম হইল তাহার।
অশ্বিনীকে ভালবাসে নির্ম্মল অন্তর।।
অশ্বিনীর গুণকথা বলিতে বলিতে।
ঝর ঝর আখি দু’টি লাগিত ঝরিতে।।
মাঝে মাঝে সে অশ্বিনী সে বাড়ী যাইত।
পরিবার সহ এসে পদেতে পড়ি।।
ভক্তি করে অশ্বিনীকে করাত ভোজন।
সেবাতে হইত তুষ্ট অকতের মন।।
শীতলের মন ছিল অতীব সরল।
অশ্বিনীকে কাছে পেল ঝরে আখিজল।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ নামেতে মাতিয়া।
অশ্বিনীকে ভালবাসে মন প্রাণ দিয়া।।
যে সময় যেই ফল গাছেতে পাকিত।
অশ্বিনীকে আগে দিয়ে পরে সে খাইত।।
একদিন তার গাছে পেঁপে পেকেছিল।
অশ্বিনীকে খেতে দিয়ে মনেতে ভাবিল।।
দুই দিন পরে তাহা গেল ভুলিয়া।
পাঁচদিন পরে সেই অশ্বিনী সুজন।।
শীতলের বাড়ী এসে দিল দরশন।
শীতলের নারী এসে ধোয়াল চরণ।।
শীতল আসিয়া করে চরণ বন্দন।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে আসনে বসাল।।
চিড়ামুড়ি খেতে দিবে জোগাড় করিল।
মুড়ি না খাইব আমি বলেছে গোঁসাই।
পাকা ফল খাব আমি এনে দেও তাই।।
তাই শুনি সে শীতল কেঁদে ছাড়ে হাই।
পাকা পেঁপে ঘরে আছে মোর মনে নাই।।
তোমাকে খাওব বলে ঘরেতে রেখেছি।
মন বড় দুরাচার ভুলিয়া গিয়েছি।।
এত বলি তার নারী গৃহ মধ্যে যায়।
পাকা পেঁপে এনে দিল অশ্বিনী সেবায়।
ফল খেয়ে বলেছেন অশ্বিনী গোঁসাই।।
তোমাদের দেয়া ফল বড় ভাল খাই।।
তারপর সে রমনী পাক ঘরে গেল।
হরিভক্ত সেবা লাগি রন্ধন করিল।।
গুরুকে করায় সেবা হরি বলে মুখে।
অশ্বিনী করেন সেবা পরম কৌতুকে।।
সেবা করি সে অশ্বিনী বিশ্রাম করিল।
পিঠা তৈরী করিবারে প্রস্তুত হইল।।
আলো চাল ভিজাইয়া আনিল যখন।
তখন অশ্বিনী উঠে করিল গমন।।
তাই দেখে কাঁদিতেছে শীতলের নারী।
অশ্বিনী চরণে পড়ে যায় গড়াগড়ি।।
অশ্বিনী বলেছে মাগো শুন দিয়া মন।
গুড়িগাতী উৎসবে যাইব এখন।।
সেইখানে দিয়ে মাগো অদ্য নিশি রব।
ফিরিবার পথে তব পিঠে খেয়ে যাব।।
এত বলি সে অশ্বিনী করিল গমন।
তাই শুনি সকলের আনন্দিত মন।।
তারপর চাল কুটি পিঠা যে করিল।
খেজুরের রস দ্বারা পিঠা ভিজাইল।।
সেই পিঠা হড়ি করি সরা চাপা দিয়া।
রাখিলেন যত্ন করি ঘরেতে তুলিয়া।।
আর যত পিঠা ছিল ছেলে মেয়ে খেল।
স্বামী সনে তার নারী পিঠে না খাইল।।
আজ আসে কাল আসে মনেতে ভাবিল।
এইভাবে সাত দিন গত হয়ে গেল।।
সাতদিন পরে সেই অশ্বিনী সুজন।
শীতলের বাড়ী এসে দিল দরশন।।
শীতলের নারী আর শীতল আসিয়া।
কাঁদিতে লাগিল তারা পদেতে পড়িয়া।।
কেঁদে বলে ওগো বাবা বলি তব ঠাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
শীতল কহিছে তার নারীর নিকটে।
পুনরায় চাল কুটি করে দাও পিঠে।।
তাই শুনি সে অশ্বিনী কহিতে লাগিল।
ঘরে আছে ভিজে পিঠি তাই খাব ভাল।।
তাই শুনি তার নারী গৃহ মধ্যে যায়।
ভিজান পিঠার হাড়ি আনিল তথায়।।
হাড়ি খুলে খেতে দিল অশ্বিনীর ঠাই।
পরাণ ভরিয়া খেল অশ্বিনী গোঁসাই।।
অশ্বিনীর সঙ্গে যত ভক্তগন ছিল।
যেমন টাটকা পিঠা তেমন খাই।।
অধম বিনোদ বলে আর কিবা চাও।
অশ্বিনীর প্রীতে সবে হরি গুণ গাও।।
মতির ঘটনা
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় অশ্বিনী সুজন।
হরিনাম করিবারে ঝরে দু’নয়ন।।
হরিচাঁদ গুণগান রচনা করিয়া।
ভক্তগন মাছে তাহা বেড়ায গাহিয়া।।
নিজের রচনা পদ নিজে সুরকার।
শুনিয়া সবার চোখে বহে প্রেমধার।।
মতি নামে একজন দারখালী বাড়ী।
অশ্বিনীর সঙ্গে ঘোরে বলে হরি হরি।।
কন্ঠস্বর ছিল তার অতি মধুময়।
গান শুনে সব লোকে মানিতে বিস্ময়।।
সে অশ্বিনী যত গান রচনা করিল।
সব গান সেই মতি গাহিয়া চলিল।।
অশ্বিনীর ভালবাসা সে মতি পাইয়া।
অশ্বিনীর সাথে সাথে বেড়ায় ঘুরিয়া।।
অশ্বিনীর এক মেয়ে বিমলা নামেতে।
চেহারায় কৃষ্ণা বর্ণা নিয়ম দেখিতে।।
একদিন বলিলেন অশ্বিনী গোঁসাই।
শুন শুন শুন মতি তোমাকে জানাই।।
মোর মনে এক ইচ্ছা জাগে সর্বক্ষণ।
তুমি মোর সেই ইচ্ছা করহে পূরণ।।
তুমি মোর বিমলাকে বিবাহ করিবে।
আমার মনের বাঞ্ছা তবে পূর্ণ হবে।।
এই কথা শুনি মতি মনে মনে কয়।
কাল মেয়ে বলে তার ইচ্ছা নাহি হয়।।
প্রকাশ্যে বলেছে তাই অশ্বিনীর ঠাই।
আমার মনের কথা তোমাকে জানাই।।
বিবাহ করিতে মোর হয়নি সময়।
অন্য পাত্রে কন্যা দান কর মহাশয়।।
অশ্বিনী বলেছে মতি কি কথা বলিলে।
কাল মেয়ে বলে তুমি অবজ্ঞা করিলে।।
শুন বলি ওগো মতি, বলি যে তোমায়।
বিবাহ করিতে তব হবে না সময়।।
এই কথা যখনেতে অশ্বিনী বলিল।
মনে মনে সেই মতি ভাবিতে লাগিল।।
আমার মনের কথা জানিতে পারিয়া।
অভিশাপ দিল মোরে কি যেন ভাবিয়া।।
তারপর সেই মতি গৃহেতে চলিল।
এইভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।।
অশ্বিনীর লীলা সাঙ্গ যখনে হইল।
তারপর সেই মতি মেয়ে দেখে এল।
দিন ধার্য্য সব কিছু ঠিক হয়ে গেল।।
বিবাহের দিন মাত্র একদিন আছে।
সর্পঘাতে সে মেয়ের মরণ হয়েছে।।
তারপর কিছুদিন গত হয়ে যায়।
বিবাহ করিতে তার জাগিল হৃদয়।।
অনেক দেখিল মেয়ে বিবাহ না হয়।
যেইখানে যায় তথা বাধা পেয়ে যায়।।
একবার কালশিরা গ্রামেতে চলিল।
মেয়ে দেখে বিবাহের দিন ঠিক হল।।
বিবাহ করিতে যাবে এমন সময়।
কলেরায় সে মতি হল মৃত্যুপ্রায়।।
এইভাবে সে মতির বিয়া না হইল।
বিবাহের আশা মতি শেষ ছেড়ে দিল।।
অশ্বিনীর কথা যেই মনেতে পড়িত।
নির্জনে বসিয়া মতি তখনে কাঁদিত।।
অশ্বিনীর ছবিখানি হৃদয় ধরিয়া।
উদাসীন সেই মতি বেড়াত ঘুরিয়া।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
তীর্থ ভ্রমণ ও মানব লীলা সম্বরণ
একদিন সে অশ্বিনী ভাবে মনে মনে।
সংসার বন্ধন আমি এড়াব কখন।।
এ সংসারে পুত্র কন্যা কেহ কারো নয়।
মায়ামহ ধুলা খেলা শুধু অভিনয়।।
অসার ভেবেছি সব হরি নাম সার।
যাহা দ্বারা হতে হবে ভবসিন্ধু পার।।
তাই ভবে সে অশ্বিনী করেছে চিন্তন।
হেনকালে তার নারী দিল দরশন।।
মালঞ্চ বলেছে তার স্বামীর নিকটে।
ছল ছল আখি দু’টি কহে করপুটে।।
দিবানিশি হরিগুণ গাহিয়া বেড়াও।
আমার মনের বাঞ্ছা তুমি হে পুরাও।।
রিতুবতী হইয়াছি রতি কর দান।
যদি কথা না রাখিবে তেজিব পরাণ।।
এক কন্যা জন্মিয়াছে তোমার ঔরসে।
এক পুত্র চাই আমি তোমার সকাশে।।
হেন বাক্য যখনেতে অশ্বিনী শুনিল।
মনে মেন সে অশ্বিনী ভাবিতে লাগিল।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
সে নিশি বঞ্চিল সেই নারীর কারণ।।
মনে ছিল পিতৃধন করিব যতন।
তাহা না হইল আমি নারীর কারণ।।
বিরহেতে দহিতেছে সাকরে হিয়া।
হরি হরি বলে সদা বেড়ায় কাঁদিয়া্।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ, করিয়া স্মরণ।
গৃহ হতে সে অশ্বিনী করিল গমন।।
মহানন্দ ছবিখানি রাখিয়া মনেতে।
ছল ছল আখি দু’টি লাগিল হাটিতে।।
অনাহারে থাকি সদা হরি গুণ গায়।
এইভাবে হরিভক্ত পথ চলি যায়।।
ঘোর অন্ধকার হল নদীর কিনারে।
জনহীন নদীতটে ভাসে আখি নীরে।।
আঠার বাকি নদীতে খরস্রোত বয়।
রাত্রিবেলা বসে কাঁদে তার কিনারায়।।
পার হয়ে যাবে নদী ভাবে মনে মন।
নৌকা নাই পারে যেতে কি করি এখন।।
হরি বলে কাঁদিতেছে প্রেমিক অশ্বিনী।
নাম শুনে ভেসে ওঠে এক কুম্ভিরীনী।।
তাই দেখে সে অশ্বিনী ঝাপ দিয়া পল।
হরি ভক্ত কাছে পেয়ে পৃষ্ঠেতে করিল।।
কুম্ভিরীনী হরিভক্ত পৃষ্ঠেতে করিয়া।
আখি জলে ভাসিতেছে জলেতে ভাসিয়া।।
ধীরে ধীরে কুম্ভিরীনী চলিতে লাগিল।
পৃষ্ঠে বসে সে অশ্বিনী মনেতে ভাবিল।।
এমন বন্ধন মোর আছে এ জগতে।
জলের কুম্ভির পার করেছে নদীতে।।
হরি বলে সে অশ্বিনী কাঁদিতে লাগিল।
মহাভাবে মহারত্ন জ্ঞান হারাইল।।
কুম্ভিরীনী আনন্দেতে ওপারেতে গেল।
অশ্বিনীকে কুলে রেখে জলেতে লুকাল।।
এইভাবে সে অশ্বিনী অচৈতন্য হয়ে।
সারানিশি নদীকুলে রহিলেন শুয়ে।।
যখনেতে হরিভক্ত উদয় হইল।
তখনেতে হরিভক্ত চৈতন্য পাইল।।
হরি বলে মহারত্ন করিল গমন।
প্রেমে গদগদ চিত্ত ঝরে দু’নয়ন।।
পশ্চিম দিকেতে চলে বলে হরি হরি।
সন্ধ্যাবেলা উপনীত গিয়ে এক বাড়ী।।
জঙ্গলের মধ্যে সেই বাড়ীখানি হয়।
লোকজন কিছু নাই কি হবে উপায়।।
সেই ঘরে উঠিলেন অশ্বিনী গোঁসাই।
বসিবার স্থান আছে দেখিলেন তাই।।
সেই খানে বসিলেন হরি হরি বলে।
প্রেমেতে মাতিয়া রত্ন ভাসে আখি জলে।।
ক্ষুধায় কাতর হয়ে চারিদিকে চায়।
খাদ্য নিয়ে এক মেয়ে আসিল তথায়।।
খাদ্য বস্তু রেখে তথা সেই মেয়ে কয়।
তুমি বাবা হরিভক্ত বলি যে তোমায়।।
এই বনমাঝে মোরা থাকি দুইজন।
হরিভক্ত পেলে হই আনন্দিত মন।।
খাও বাবা হরিভক্ত এখানে থাকিয়া।
মম স্বামী কাছে যাই সেবার লাগিয়া।।
এত বলি সেই মেয়ে করিল গমন।
অশ্বিনী বসিয়া তথা করিল ভোজন।।
ভোজনান্তে সে অশ্বিনী শয়ন করিল।
ঘুমে অচেতন হয়ে তথায় বঞ্চিল।।
ভোরবেলা জেগে দেখে অশ্বিনী গোঁসাই।
সেইখানে ঘরবাড়ী কিছুইত নাই।।
মনে মেন সে অশ্বিনী কহিতে লাগিল।
তব লীলা গুরুচাঁদ বোঝে কেবা বল।।
ভকত হৃদিরঞ্জন করুনা নিদান।
তব লীলা বুঝিবারে নাহি মোর জ্ঞান।।
আমি বড় অভাজন এই দুনিয়ায়।
অপরাধ ক্ষমা করে রেখ রাঙ্গা পায়।।
ভক্তের পিছনে তুমি বেড়াও ঘুরিয়া।
আহার যোগায়ে ফের ভক্তের লাগিয়া।।
হরি বলে সে অশ্বিনী লাগিল কাঁদিতে।
জলে ভরা আখি দু’টি লাগিল হাটিতে।।
এইভাবে পদব্রজে করিল গমন।
কাশি কাঞ্চি বৃন্দাবন করেছে ভ্রমণ।।
বহুদিন ঘুরে ঘুরে চলিতে লাগিল।
তারপর সে অশ্বিনী হরিদ্বার গেল।।
হরিদ্বারে বসে তার পিপাসা জাগিল।
তামাক খাইতে ইচ্ছা তখন হইল।।
মনে তার ইচ্ছা হল হুকা খাইবার।
বৃক্ষ তলে বসে বসে চিন্তা করে তার।।
হেনকালে এক ছেলে কোথা হতে এল।
তামাক সাজিয়া হুকা অশ্বিনীকে দিল।।
হুকা ধরি প্রাণ ভরি তামাক খাইল।
কিছু পরে সে বালক অদৃশ্য হইল।।
তাই জেনে হরিভক্ত কাঁদিয়া কহিল।
নয়নের জলে বক্ষ ভাসিতে লাগিল।।
তুমি প্রভু হরিচাঁদ কাঁদিয়া কহিল।
নয়নের জলে বক্ষ ভাসিতে লাগিল।।
তুমি প্রভু হরিচাঁদ বড় দয়াময়।
জানিয়া ভক্তের মন আসিলে হেথায়।।
জেনে মন ভগবান হুকটি সাজিয়া।
বালকের রূপে প্রভু গেলে হাতে দিয়া।।
চাকরেতে হেন কাজ করেনা কথন।
মনে জেনে তাই প্রভু দিলে দরশন।।
ভকত হৃদিরঞ্জন দয়াময় হরি।
ভক্তের হইয়া ভৃত্য কর্ম্ম যাও করি।।
কি দিব তুলনা তব ওগো দয়াময়।
দয়া করি অধমেরে রেখ রাঙ্গা পায়।।
মহাভাবে আত্মভোলা অশ্বিনী গোঁসাই।
হরি বলে দিবা নিশি ছাড়িতেন হাই।।
উদাসীন হরি ভক্ত হাটিতে লাগিল।
পায়েতে আঘাত লেগে মাটিতে পড়িল।।
আঘাত লাগিয়া পায় ক্ষত হয়ে গেল।
অতি কষ্টে হেটে হেটে নবদ্বীপে এল।।
মন্দিরেতে যে ঘটনা হইল সেথায়।
সেই সব লেখা আছে চরিত্র সুধায়।।
তারপর সে অশ্বিনী দেশে ফিরে এল।
শুড়িগাতী বালাবাড়ী উদয় হইল।।
পূর্ণচন্দ্র বালা অশ্বিনীর ভক্ত।
সেই বাড়ী গিয়ে তিনি হল উপনীত।।
দেখিয়া সে পূর্নচন্দ্র কাদিয়া উঠিল।
বহুদিন পরে গুরু দরশন হল।।
অশ্বিনীর দেহখানি অতি কৃশকায়।
তাই দেখে পূর্ণচন্দ্র কেঁদে কেঁদে কয়।।
শুন বাবা বলি তোমা ধরি তব পায়।
আমাদের ছেড়ে তুমি যেও না কোথায়।।
যত্ন করি অশ্বিনীকে ভোজন করাল।
তিন চারদিন সেই বালা বাড়ী রল।।
একদিন কহিলেন অশ্বিনী গোঁসাই।
শুন তুমি পূর্ণচন্দ্র বলি তব ঠাই।।
বহুদিন হেরিনাক মায়ের চরণ।
মম সঙ্গে চল তুমি করি দরশন।।
তাই শুনি পূর্ণচন্দ্র তরণী সাজাল।
নৌকাযোগে গঙ্গাচন্না উদয় হইল।।
নৌকা মধ্যে বসে আছে অশ্বিনী গোঁসাই।
তাই শুনে আসিলেন বাড়ীর সবাই।।
পুলিন বিপিন তারা বিমাতা নন্দন।
অশ্বিনীর মাতা এর করিয়া ক্রন্দন।।
মায়ের কোলেতে আছে অশ্বিনীর ছেলে।
অমূল্যকে কোলে করে ভাসে আখিজলে।।
তাই দেখে সে অশ্বিনী কুলেতে নামিল।
মায়ের চরণ ধরি কাঁদিতে লাগিল।।
কেঁদে বলে ওগো মাতা বলি তব ঠাই।
বিদায় করহে মাগো শ্রীধামেতে যাই।।
পুলিন বিপিন এসে প্রণাম করিল।
হরি বলে সে অশ্বিনী আশীর্বাদ দিল।।
সকলেতে সুখে রও গৃহেতে থাকিয়া।
আমি ভাই চলে যাই বিদায় হইয়া।।
নয়নে হেরিয়া সেই আপন নন্দন।
মনবাঞ্ছা পুর্ণ হলে ঝরে দু’নয়ন।।
কাঁদিতে কাঁদিতে তিনি নৌকায় উঠিল।
অমনি সে পূর্নচন্দ্র তরনী ভাসাল।।
পুনরায় শুড়িগাতী আসিলেন বেয়ে।
নৌকা হতে বালা বাড়ী উঠিলেন গিয়ে।।
ক্রমেই ঘায়ের ব্যাথা বাড়িতে লাগিল।
কাতরে অশ্বিন বলে ওড়াকান্দি চল।।
তাই শুনি পূর্নচন্দ্র অশ্বিনীকে নিয়ে।
নৌকাযোগে উতরিল আমড়িয়া গিয়ে।।
আমড়িয়া বাস করে শ্রীনীলরতন।
অশ্বিনীর প্রিয় শিষ্য জানে সর্ব্বজন।।
দেখে সে নীলরতন লাগিল কাঁদিতে।
অশ্বিনীকে কোলে করে লইল ঘরেতে।।
যত্ন করি তার নারী ধোয়াল চরণ।
ছলছল আখি দু’টি ঝরে দু’নয়ন।।
এইভাবে কয়দিন তথায় রহিল।
তাই দেখে পূর্ণচন্দ্র ঘরে ফিরে এল।।
সেই গ্রামে অশ্বিনীর যত ভক্ত ছিল।
একে একে সবে মিলে দেখিতে আসিল।।
দেখিলেন অশ্বিনীর অতি কৃশকায়।
সবে মিলে ভাবিলেন কি হবে উপায়।।
ক্রমেই ঘায়ের ব্যাথা বাড়িতে লাগিল।
অশ্বিনী বলেছে ওড়াকান্দি লয়ে চল।।
সে নীলরতন তাহা শুনিতে পাইয়া।
বড় এক নৌকা আনে জোগাড় করিয়া।।
নৌকায় ছাওনী বেঁধে আসন পাতিল।
অশ্বিনীকে কোলে করে নৌকায় শোয়াল।।
অশ্বিনীর কাছে বসে সে নীলরতন।
নৌকা বেয়ে চলে তারা আর তিনজন।।
নব গোঁসাই কার্ত্তিক আর বাবুরাম।
অশ্বিনীর প্রিয় ভক্ত সবে গুণধাম।।
হরি হরি বলে সবে তরণী বাহিল।
ওড়াকান্দি ঘাটে গিয়ে তরী ভিড়াইল।।
অন্তরেতে গুরুচাঁদ জানিয়া তখন।
নিজে তাই ঘাটে এসে দিলে দরশন।।
তখনি অশ্বিনী এসে চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কাঁদিতে লাগিল।।
কেঁদে বলে ওগো প্রভু করি নিবেদন।
আমি এবে কি করিব বল প্রাণধন।।
গুরুচাঁদ বলে বাপ শুনরে অশ্বিনী।
এ জগতে চিরদিন বাঁচে কোন প্রাণী।।
এ সংসারে সব মিছে হরিনাম সার।
হরিনামে হয়ে যাবে ভবসিন্ধু পার।।
মিছে কেন চিন্তা কর ওহে বাছাধন।
তোমা সম হরিভক্ত আছে কোন জন।।
সঙ্গে যারা এসেছিল তাহাদের বলে।
অশ্বিনীকে নিয়ে যাও চাঁদসীতে চলে।।
গুরুচাঁদ আজ্ঞামতে তাহাই করিল।
নৌকা বেয়ে কয়জনে সেখানে চলিল।।
সারারাত বেয়ে বেয়ে চাঁদসী পৌছাল।
ভোরবেলা ঘাটে গিয়ে নৌকা ভিড়াইল।।
সেই রাত্রে ডাকতার স্বপনে দেখেছে।
মোর কাছে এক মহামানব এসেছে।।
তার ঘরে পুত্র কন্যা কিছু হয় নাই।
পুত্র হবে তোর ঘরে বলিল গোঁসাই।।
ভোরবেলা ঘাটে এসে দেখিতে পাইল।
স্বপ্নে দেখা সে মানুষ ঘাটেতে আসিল।।
যত্ন করি অশ্বিনীকে ঘরেতে আনিল।
চরণ ধরিয়া শেষ কাঁদিতে লাগিল।।
কেঁদে বলে ওগো বাবা বলি তব ঠাই।
তব কাছে আসি আজ পুত্র বর চাই।।
স্বপনেতে তোমাকেই দেখিয়াছি আমি।
তব মুখে পুত্র বর দাও আজি তুমি।।
কান্না দেখে বলেছেন অশ্বিনী গোঁসাই।
তব ঘরে পুত্র হবে বলিলাম তাই।।
সঙ্গে যারা এসেছিল অবাক হইল।
পায়ের ঘায়ের কথা তাহাকে বলিল।।
তাই শুনি ডাকতার কহিল তখন।
মহারত্ন গুণনিধি সাধু শিরোমণি।।
ইচ্ছাতে করেছে রোগ আমি ভাল জানি।
তাই শুনে সে অশ্বিনী কহিল তখন।।
মোরে লয়ে চল সবে গুরুর ভবন।
তাই শুনে সবে মিলে নৌকায় তুলিল।।
হরি হরি বলে সবে নৌকা ছেড়ে দিল।
অর্ধপথে গিয়ে সেই অশ্বিনী গোঁসাই।
সে নীলরতন ধরে ছাড়িলেন হাই।।
হরি বলে সে অশ্বিনী কহিতে লাগিল।
মৃদুস্বরে কহে বাণী আখি ছলছল।।
আমি যদি চলে যাই পৃথিবী ছাড়িয়া।
গুরুপাশে রেখ মোরে যতন করিয়া।।
এত বলি মহারত্ন হরি হরি বলে।
হরিনাম করে আর ভাসে আখি জলে।।
হরি হরি হরি বলে ত্যাজীব জীবন।
বিদ্যুতের মত জ্যোতি উঠিল তখন।।
তাই দেখে সবে মিলে করে হায় হায়।
ব্রহ্মরন্ধ ফেটে গেছে দেখিবারে পায়।।
কেদে কেদে সবে মিলে ছাড়িতেছে হাই।
হেন রত্ন আর মোরা কোথা গিয়ে পাই।।
চলে গেলে ওগো বাবা মোদের ছাড়িয়া।
কেমনে থাকিব মোরা শোক পাসরিয়া।।
এইভাবে কেদে কেদে কাতর হইয়া।
ধীরে ধীরে চলিলেন তরনী বাহিয়া।।
শোক সম্বরিয়া সবে তরণী বাহিল।
নারিকেল বাড়ী এসে উপনীত হল।।
গ্রামবাসী সবে এসে কেদে ছাড়ে হাই।
হেন রত্ন ছেড়ে যাবে মনে ভাবি নাই।।
শোক নিবারণ করি সমাধি করিল।
তারপর গঙ্গাচন্না সংবাদ জানাল।।
সংবাদ পাইয়া সবে কাদিতে লাগিল।
পরিবারসহ কেদে আকুল হইল।।
তারপর সবে মিলে শোক পাসরিয়া।
সৎকাজ করিলেন সকলে মিলিয়া।।
সোনার মানুষ গেল জগৎ ছাড়িয়া।
হরিভক্ত কাঁদে সবে বিরলে বসিয়া।।
তেরশ তেত্রিশ সাল তিশরা আষাঢ়।
বুধবারে মহারত্ন ত্যাজিল সংসার।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
সমাপ্ত