গান নং ৯১~১০০
গান নং ৯১
হৃদে বেদনা ভরা শুধু দিও সান্তনা
এতাপ হতে ত্রাণ চাহি।
না! না! না!
শুধু দিও সান্তনা।
শ্রান্ত চরণ যদি পথ চলিতে না পারে
দিও শক্তি আর দিও নতুন বাঁধা
এক্লান্তি হতে মুক্তি চাহি।
না! না! না!
শুধু দিও সান্তনা।
যদি সত্য বলিতে না পারি মুখে
মিথ্যা বলি না যেন কোন দুঃখে
দিও প্রাণে অসীম সাহস
কারো অধীন করো না
এ ব্যথায় শান্তি চাহি।
না! না! না!
শুধু দিও সান্তনা।
গান নং ৯২
একবার বলরে রাম নাম তোমরা বদন ভরে
এ এমন মধুর নাম রাখ হৃদয়ে পুরে
গাও এ নাম প্রাণ ভরে মধুর সুরে
তোমার সকল অশান্তি সকল ভ্রান্তি যাবে দুরে
গাও রাম নাম বদন ভরে।
কত মুনি ঋষি মানবের জনম জনমের সাধনায়
এই রাম নাম এই ধরায় এলো ত্বরাতে তোমায় আমায়
পেয়ে এমন নাম তবু অলস কেন অকারণে দিন বয়ে যায়
গাও রাম নাম বদন ভরে।
যা কিছু তোমার আছে তুলে দাও রাম চরণে
কি কাজ তোমার আছে শুধু শুধু এ ভার বহনে
ভার দিয়ে তারে নির্ভার মনে তারে রাখ স্মরণে
গাও রাম নাম বদন ভরে।
আর নাইরে ভয় এলো ভয় হরা রাম নাম
এলো নাম রাম নাম এ নাম ছিল নিত্য গোলোক ধাম
নয়নে দেখ রাম মূরতি মুখে রাম নাম জপ অবিরাম
গাও রাম নাম বদন ভরে।
থাকবি না কেউ পিছে পড়ে উঠিছে রাম নামের ঢেউ
এ অমৃত সুধা হতে আর বাদ যাবে না কেউ
পাপী তাপী অধম যারা রাম নামে ত্বরবে তারা
শুধু রাম গুণ গাও
গাও রাম নাম বদন ভরে।
গান নং ৯৩
এই যে মধুর হরিনাম এলো
সবাই নামে মজে প্রেম পেল
শুধু আমার মন মজল না।
এ নাম ছিল অনর্পিত নিত্য গোলোক ধামে
কলিতে এ নাম হল সমর্পিত জীবের তরে এলো নেমে
প্রাণের ঠাকুর হরিচাঁদ দিল এ নাম ওড়াকান্দি ধামে
সবাই হরি বলে চলল ধেয়ে শুধু আমার যাওয়া হল না।
তোতা পাখির বুলির মত মুখে হরি বলি শত শত
মিছে কাঁদি অবিরত আমার মনে নাই প্রেম স্বল্প পরিমাণ।
কবে সাধু গুরুর চরণ পাব ভক্তি রাঙে মন রাঙাবো
হরি প্রেমের বাজারে যাব করব প্রেমে হরি নাম গান।
মনে আমার আশা আছে তর্ক বিবাদ ফেলে পাছে
আমি যাব হরির কাছে আর মায়ায় ভুলে রব না।
গান নং ৯৪
শ্যাম কোন সুরে বাজাও বাঁশি
সুর শুনে ছুটে আসে তোমার কাছে
তোমার আপন ব্রজবাসী।
সবাই আসে না তোমার কাছে সবাই শোনে না সুর
সেই শুধু ছুটে আসে তোমার বাঁশির সুর
যার হৃদয়ে পশিল আসি।
কোন সুতে বাঁধিয়াছ ব্রজ গোপীগণে
ছাড়িতে না চাহে তোমা তাদের জীবন মরণে
বাঁধা আছ কোন প্রেমে তুমি কাঁদ নিশিদিনে
ভক্ত প্রাণে মাধুর্য প্রেম দিলে
তুমি কারে ভালবাসি।
আজও তুমি বাজাও বাঁশি নিকুঞ্জ কাননে
নিত্য শোনে তোমার বাঁশি তোমার আপন জনে
আমার এ জনমে হল না ভক্তি তোমার চরণে
পর জনমে আসি যেন তোমার ভক্ত হয়ে
মাধুর্য প্রেম নিয়ে যেন তোমায় ভালবাসি।
গান নং ৯৫
পড়িয়া মায়া-মোহের ঘোর আঁধারে
হরিচাঁদ, আমি ডাকি তোমারে
আমারে পথ দেখায়ে দাও
ও দয়াল হরিচাঁদ, আমারে পথ দেখায়ে দাও।
যাদের আমি আপন ভেবে দুহাতে জড়ায়ে ধরি
তারাই কেড়ে লয় পরম ধন আমার উপর করে নজরদারী
নিয়ে যায় ভুল পথে তারা ভুলের দিশারী
তুমি ছাড়া কেউ নেই আমার
ও দয়াল হরিচাঁদ, তোমার কাছে আমায় ডেকে নাও।
দেখে শুনে মনে হয় তারা পরম বন্ধুর মত
তাদের কাজে মত্ত করতে প্রলোভন দেখায় কত শত
আমিও এমন অভাগা ভুলে পড়ে ভুল করি অবিরত
আমায় রাখ তুমি তোমার পথে
ও দয়াল হরিচাঁদ, আমার ভুল ভাঙায়ে দাও।
তোমার নাম জপি যেন আমি জন্ম জন্মান্তরে
জ্ঞান ভক্তি মাধুর্য প্রেম দাও আমার এ রিক্ত অন্তরে
আমি যেখানে যাই থাকি যেন তোমার পথ ধরে
আমি ভুলেও যেন ভুলে না যাই তোমার নাম
ও দয়াল হরিচাঁদ, আমায় তোমার প্রেম ভক্তি ভিক্ষা দাও।
গান নং ৯৬
(আমার) ঘরের চাবি দিয়ে যাব
যাহারে
(আমি) তার সন্ধানে যাব কোথা
প্রাণের মানুষ পাব কোথা
আহারে।
যে পথ দিয়ে যেতে হবে
সে পথের তুমিই আপন
(তুমি) পথ দেখায়ে নিয়ে যাবে
যেথা তোমার আপন ভবন
(তুমি) পথের বাকে দাড়ায়ে রবে
নীরবে আমার পানে চেয়ে
(আমি) তোমার হেরিয়া নিশান
যাব না ভুল পথে ধেয়ে
আঁধারে।
আমার ভাবনা তোমায় নিয়ে
তুমি আমায় নিয়ে ভাব
(আমি) তোমারে চাই আমার পাশে
আমারে তোমায় দিয়ে যাব
(তুমি) নিবে না জানি থাকিতে জীবন
ফুরাবে না তোমা পানে চাওয়া
(আমি) এই সত্য জানি, রব প্রতিক্ষায়
ধীরে ধীরে তোমার পথে যাওয়া।
তোমার আমার মিলন বাঁশি
এ লগনে নাই বা বাজালে
(আমি) না যেন ছাড়ি মিলন আশা
যদি বা আমারে তুমি ভাসালে
পাথারে।
গান নং ৯৭
কেন ওপারেতে বসে আছ, এপারে আমি একা
সামনে আঁধার ঘন তোমারে যায়না দেখা।
এপারে তরী নাই, ওপারে তোমার তরী
কোন আশা নাই, ওপারে যাবার
বিনে তোমার তরী
সন্ধ্যা ঘনায়ে আসে মোর গগন জুড়ি
তবুও পাইনা তোমার পথরেখা।
গান নং ৯৮
(মন) একবার তুমি হরি বল
বিষয় বাসনা ভুলে
সকল ভাবনা ভুলে
একবার তুমি হরি বল।
একবার যদি বলতে পার রে
(তোমার) যাবে সকল যাতনা
(তোমার) পূর্ণ হৃদয় শূন্য হবে
শূন্য হৃদয় পূর্ণ হবে---
হরিপ্রেম বাসনা
একবার তুমি হরিবোলে
প্রেম বাজারে চল।
তারে একবার যদি ডাকতে পার,
আর না ডাকতে হবে
তারে না ডাকলেও হরি তোমার,
সঙ্গে সঙ্গে রবে
তোমার সঙ্গে কথা কবে
চলবে ফিরবে গান গা’বে
কখনো ঝরাবে অশ্রুজল।
গান নং ৯৯
বুঝি বিগত জনমের পাওয়া এ বিরহ
এ জনমে শোধ হলো
স্মৃতিপটে বিরচ বেদনা- দেখা নাহি দাও
তোমারে বুঝিতে নারি আমি ঝরাতে নারি অশ্রুবারি
তাই বুঝি হায় নিত্য চেনা ক্ষণিকে ভোল।
বিরস কঠিন হিয়া তোমার
বাঁধিতে প্রেম নাহি আমার
নিজ প্রেমে ভোলাও অনিবার
আমারে হারায়ে তুমি যে আবার
নিজ পরাণে বিরহের বান তোল।
বোধ হয় কথা ছিল- তোমার সন্ধানে
যাইব যেথা- তুমি নাই সেখানে
বাঁধিব তোমারে শূন্য পরাণে
তুমি যে প্রাসাদে বন্দি রহ
আজিই তাহার সন্ধান কহ
আমি যাইব আনিতে তোমারে আজি এখনে
বন্দি নাই হও কেন বন্দি হয়ে রও
পথের সাথী ডাকছে তোমায়
আজি সে দুয়ার খোল
একবার সুখে মধুর সুরে প্রাণ ভরে
হরি বল।
গান নং ১০০
মা আজ চলে যাচ্ছিস
আমাকে কার কাছে রেখে গেলি
তুই চলে যাচ্ছিস
এই বলে কারো চোখে জল দেখলাম না
আনন্দ করছে, নাচছে- আনন্দের নাচ
মা চলে গেলে বুঝি এমন করে।
তোর কথা শুনলাম না কারো কাছে
কে কত টাকা দিয়ে তোর মূর্তি গড়েছে
কত টাকা দিয়ে তোর মন্দির করেছে
কত টাকা দিয়ে কোথা হতে ভাস্কর এনে
কোথা হতে ডিজাইনার এনে তোর মন্দিরের গেট করেছে।
সর্বত্র এই আলোচনা।
তোর কত সন্তান তোর চরণ ধরে
কি বলেছে জানি না- তুই কি দিলি তাও জানি না
তুই চলে যাচ্ছিস- এই বলে কারো ভাবনা দেখলাম না
কারো চোখের জলে তোর চরণ ভিজেছে কি না দেখতে পেলাম না।
কিছু চাইতে পারলাম না
মা তোর কাছে কি চাইতে পারলাম না
তোর যাওয়ার আগে চক্ষে দেখি জল
কাঁদছিস মা নীরবে।
সন্তানের কাঁদন হেরি, দুঃখ ব্যাথা বিপদ-আপদে
তুই মা আসিস ভিন্নরূপে বারে বারে।