মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ১১১~১২০

গান নং ১১১
সখীর হৃদয়ে কিসের ভাবনা 
অকারণে বিধে কাঁটার বেদনা 
সখী, দিও প্রাণ মন নিবেদি তাহারে 
ঘুচিবে তোমার মরম যাতনা। 
 
দোঁহার মিলন হইবে ভাবিয়া 
নিশিদিন যাচ দিন যে গুনিয়া 
যে ভাবনাগুলি সুপ্ত রহিল 
ক্রমশ বিকশি ফুটিয়া উঠিল 
সখী, দিও তাহা দিও তাঁহার চরণে 
শান্ত হইবে মনের কামনা। 
 
দিনে দিনে সখী, দিন গেল চ'লে 
কুড়ানো ফুলের মালিকা গাঁথিয়া 
প'রাব বলিয়া যে হার গাঁথিনু 
অনাদরে তাহা পড়িল ঝরিয়া 
প্রাণের অধিক ভাবিনু যাহারে 
ভু'লে যেতে হ'বে তা'রে চিরতরে 
সখী, এ জনম গেল শুধু ভালবেসে 
লভিব জনম মিলিব দুজনে 
মনের গভীরে রহিল বাসনা।
 
গান নং ১১২
ভোর হতে এখনও রয়েছে বাকী
ও পাখী তুই কেন এই নিশীথ রাতি করিস ডাকাডাকি।
 
এমনি শীতের নিশি তাতে উত্তরীয় বাও
মধুর বাসর ছেড়ে কেন দুঃখের গীত গাও
করুণ সুরে উতাল পরাণ, প্রিয় তোর হারায়েছে নাকি।
 
যার হারায়েছে সুজন বন্ধু, তার বেদনা বোঝে নারে কেউ
তার দুঃখ সাগরে বান আসেরে, দুকূল ভাঙ্গা ঢেউ।
তুই যেমন কাঁদিসরে বসে ডালে, 
সেও কাঁদিবে কালে কালে, তুই জানিস তা কি।
 
সেই না দেশে যারে চলে, যে দেশে তোর বন্ধুরে পাবি
ও মন, কবে যাবি ব্রজের কুলে, তোর বন্ধুরে তা ক’বি।
প্রাণ বন্ধুর কাছে এই রইল দাবী, 
বৃন্দাবনেরে সঙ্গে ল’বি, অন্তিম কালে যেখানেতে থাকি।
 
গান নং ১১৩
ও নদীরে, তোর ভাঙন চরে বাঁধলাম আমার ঘর
তুই আপন করতে কাছে আসিস, করে যাস পর।
 
তোর শীতল পরশ পাব বলে ভাঙন চরে রই
ঘর ভাঙ্গিয়া গেলিরে তুই, পরশ পেলাম কই
আমি তবু তোরই আশাতে রই
আসিস যদি পেলে বন্ধু কোন অবসর।
 
তোর বানের জলের ঢেউ লাগিয়া, ভাঙ্গে আমার বাসা
ঢেউয়ের সাথে দুলে ওঠে, আমার স্বপ্ন পূরণ আশা
আমার মূক কণ্ঠে জাগায় ভাষা
কুল ছাপিয়ে ওঠে নেচে, আমার হৃদ সরবর।
 
গান নং ১১৪
আমরা ভোলার চেলা, হরিবোলা
নাচি রেখে দিল খোলা।
আমরা হরিবোলা, আমরা হরিবোলা।
 
নেংটি পরে নিশান ধরে, লাফাই যেন পাগল প্রায়
হরিনামের ধ্বনি তুলে, আকাশ বাতাস দেই কাঁপায়
শুনে ডঙ্কা কাঁসি শঙ্খ ধ্বনি, হয়ে যাই আত্মভোলা।
হরিরূপে হয়ে উন্মুখ, ওড়াকান্দি করে মুখ, ধূলায় করি গড়াগড়ি
আমরা ভুলে শৌচাশুচি, আপন পর, করি সবাই জড়াজড়ি
নিয়ে ভক্তগণের চরণ ধূলি, চলি সত্য সাধন পথে চলা।
 
নিশান তত্ত্ব করি ব্যক্ত, সত্য যুগের কথা
মালি-কোকিলিনীর কথা, তাদের মনের ব্যাথা
হয়ে মহাপাপী, দুঃখী তাপী, নিশান নিয়ে করে সাধন
হয়ে মুক্ত ভক্তিযুক্ত রাজকুলে করে জনম গ্রহণ
কলির জীব হতে মুক্ত, সেই নিশান নিয়ে হয়ে মত্ত
গুরুচাঁদ জেনে তত্ত্ব, দিল মন্ত্র সত্য পথে চলা।
 
অকামনা প্রেমের প্রেমিক মতুয়া গোঁসাই
কোথা হতে পেল প্রেম, আমার গুরুচাঁদ সাই।
সে যে দ্বাপর যুগের রাস, রাধা-কৃষ্ণ গোপীসনে আসে
আমার ভোলা বাবা, হয়ে ভোলা গমন করে রাসে।
নিস্কাম প্রেমের পুরী, হয়ে প্রেমের অনুসারী
হয়ে আত্মভোলা, রাসে দেয় গড়াগড়ি।
সেই প্রেমের রস, দিতে ভক্ত সমাজে
গুরুচাঁদ রূপে ভোলা মত্ত হল কাজে।
দিল সেই প্রেমের ধারা, ভক্তগণ মাতোয়ারা
বৃন্দাবনের নয়ন ঝরে, যায় না শুধু মনের গোলা।
 
 
গান নং ১১৫
সখী, সে মানুষ গেল কই।
এই তো তারে দেখতে পেলাম
পলক দিয়ে হারা হলাম
এখন তারে ছাড়া কেমনে রই।
 
নিরিখপুরে স্বরুপ ধরে দাঁড়িয়ে ছিল সে
হয়ে ছন্নমতি অন্যগতি হারালেম শেষে
এখন কোথায় খুঁজি, তারে কোথায় গেলে পাই।
 
তার রুপের তাপে ধরল আগুন, আমার কপাল পুড়ে গেল
মন পুড়ে ছাই হল, সই আমার প্রাণটা কেন রল
তার রুপের ছটায় লাগল ধাঁধাঁ, অন্ধ হয়ে রই।
 
সে রুপ আবার দেখব বলে নয়ন মুদে আছি
তারে দেখতে ডাক দিবি সই আছি কাছাকাছি
বৃন্দাবনের এই আকিঞ্চন, ধরব ঐ শ্রীচরণ
কপাল গুণে তা হল কই।
 
এ কালে না পেলাম দেখা, নিদানে কি পাব?
পাই বা না পাই, কোন দুঃখ নাই
যেন তোমার নামে মেতে রই।
 
ব্রহ্মাণ্ড গ্রাস করে রয়েছ দেহভাণ্ডে
তবু মোহান্ধ দুর হয় না জ্ঞান কাণ্ডে
রাগানুগা ভক্তিযুক্ত হয়ে চিত্ত, যেন প্রেমার্ণবে ডুবে রই।
 
দিলে গরল ফেলে সরল বুলি
তবু সরল পথে নাই কো চলি
হাতে কাম মুখে নাম, কই বা বলি
এবার আশিষ কর, এই হরিনাম
যেন আর না ভুলে রই।
 
তোমার স্বরুপ প্রকাশ কর ভক্ত হৃদয়ে
প্রেমবন্যা বহিয়া যাক দু'চোখ ভাসায়ে
বৃন্দাবনের এই মিনতি, দুঃখ তাপে না হই ভ্রান্তি
যেন তোমার চরণ ধরে রই।
 
গান নং ১১৬
আমি, আর যেন না আসি ফিরে,
তোমার চরণ আমার দিয়ে শিরে, 
ডুবিয়ে দাও প্রেম সিন্ধু নীরে, 
অতলে যাই তলিয়ে ধীরে ধীরে।
 
চাওয়া পাওয়ার নাই কামনা, শুধু ঐ শ্রীচরণ বাসনা, 
মণির এক বিন্দু কণা, দিয়ে কেন চাও গো ফিরে।
 
আমি ভেবেছিলাম আমারই সব, তাই লেগে থাকে শুধু অভাব,
সবই তোমার এই দীনভাব, এবার জাগাও হৃদ মন্দিরে।
 
আমি তোমার ধনে তোমায় তুষি, আমার বলে হই গো দোষী,
অমাবস্যায় পূর্ণ শশী, জ্বালে না আলো আকাশ ভরে।
 
বৃন্দাবনের গেল জনম, হল নারে হরি শরণ, 
ধর্ম-কর্মের এমন ধরণ, অন্তিমে আর উপায় নাইরে।
 
গান নং ১১৭
মিড সাহেবের চরণে প্রণাম।
ছিল সে খ্রিস্টে অনুরাগী, হয়ে গুরুচাঁদের সহযোগী, 
কত অসাধ্য করল সাধন, কত না তার রয়েছে প্রমাণ।
 
মনে মনে আশা চিতে, খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারিতে, 
গুরুচাঁদে রাখলে হাতে, সহজে সব হবে সমাধান। 
গুরুচাঁদ সোনার মানুষ, মানুষ মানুষে জাগা'ল হুঁশ,
হয়ে গেল সহকর্মী, গুরুচাঁদের প্রেম প্রতিদান।
 
অধম পতিত দলিত জাতি, জাগাইতে দিবারাতি, 
গুরুচাঁদ নিষ্ঠারতি, মিড সাহেবে করে আহ্বান।
গুরুচাঁদে দিয়ে সায়, রাজশক্তির সহায়তায়,
সহযোগী হল তায়, প্রথমে শিক্ষায় অবদান।
 
গ্রামে গ্রামে করল স্কুল, মৃত বৃক্ষে ফুটালে ফুল, 
এমন কর্মের নাই সমতুল, রেখে গেল তার প্রমাণ।
শিক্ষায় হয়ে আলোকিত, জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত, 
হল সংস্কারে নিবেদিত, এ যে মিড সাহেবের অবদান।
 
ইহাতে না হয়ে ক্ষান্ত, নমশূদ্রের জাতি বৃত্তান্ত, 
শাস্ত্র দেখে আদ্যপান্ত, দ্বিজ নমশূদ্র লিখে যান। 
চণ্ডালত্ব করতে মোচন, সেন্সাসের কাগজ করে আনয়ন, 
কেটে দিল চণ্ডাল লেখন, মুক্ত হল সেই বদনাম।
 
কাটিয়ে সামাজিক বর্ম, যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম,
চাকরি দানে করিল সম্পূর্ণ, ছিড়ে ফেলে কুটিল বিধান।
ডাক্তার মুনসেফ হইল কত, কর্ম নিষ্ঠায় অবিরত, 
পতিত জাতি হইল সম্মানিত, এ সকল শিক্ষার অবদান।
 
কার কর্ম কে যেন করে, কে করায় কি প্রকারে,
শ্রীহরি সব করেরে, সম্পাদন করে গুরুচান।
মিডের মত সহযোগী, সুকর্মেতে অনুরাগী, 
বৃন্দাবন কর্মত্যাগী, তার ধর্ম কর্ম সব হল ম্লান।
 
গান নং ১১৮
আপনারে চিনতে পারলাম না। 
 
আমার ঘরে আছে প্রাণের বধু, 
বাহির খুঁজে ম'লেম শুধু। 
নিত্য আমায় দেয় অমৃত, 
আমি গরল বলে পান করি না।
 
যখন আমার বিষাদ চিত্ত 
ডুবে ডুবে চিন্তায় মত্ত 
(আমার) সকল মুশকিল আসান করে 
তার চেতনায় যায় ভাবনা।
 
বহু বাসনায় মিছে ঘুরি 
কামনা মোর ফুরাতে নারি 
যখন শ্রান্ত ক্লান্ত হতাশ হই 
বধূ মোরে দেয় সান্তনা।
 
আমায় বলে সে যে প্রতিদিন 
দীনহীন হতে দীন 
এই ভাবনা মনেতে রাখ 
তা বিনে আর ঠাই রবে না।
 
বৃন্দাবন তার কথা শোনে না 
দিনে দিনে বাড়ে যন্ত্রণা 
সব ছেড়ে তাই ঠাই নিয়েছি 
মরি তবু চরণ ছাড়ব না।
 
গান নং ১১৯
জাতে উঠা
যাহারা জাতে উঠিতে চাহেন
তাহারা জাতে উঠুন।
আমি বেজাতের দলের লোক
বেজাতই থাকব।
 
তোমরা আমাকে দলে টানিও না,
আমাকে জাতে উঠাতে পারিবে না,
বরঞ্চ তোমাদের জাত হইতে নামিতে হইবে।
একদা যাহাদিগকে বেজাত, ছোট জাত বলা হইত
আজ তাহাদের কতিপয় শিক্ষিত হইয়া জাতে উঠিতেছে,
ঘটনাটা বড়ই মর্ম পিড়াদায়ক।
জাতে না উঠিলে বোধহয় উহাদের মান থাকে না,
কি আশ্চর্য!!
যেদিন তাহার কোন জাত ছিল না;
তখন সে কোন জাতে উঠিয়াছিল?
সে প্রশ্ন একবারও তাহার মনে উদয় হয় না।
বড় জাতের রঙিন চশমায় সব রঙিন দেখিতে শুরু করে,
তাই ত জাতে উঠিবার এত চেষ্টা।
 
যাহারা উঠিতে চায়, উঠুক।
আমার কোন জাত নেই,
তাই জাতে উঠার বালাই নাই।
বলুক না লোকে আমাকে ছোট, ঘৃণ্য জাত
তাতে কি আসে যায়।
আমি ত আমিই। 
জাতহীন এক মানব সন্তান।
 
গান নং ১২০
ঘরের কোণে বন্দি হয়ে, থাকবি কতকাল
বাহির হয়ে দেখ না এবার, হয়েছে সকাল।
মৌন হয়ে রবি যদি, বাঁধন আটবে এসে
বুক চিতিয়ে দাঁড়া এবার, বাঁধন পড়বে খসে।
মরার মত বেঁচে আছিস, বাঁচার মত বাচ
মৃত দেহে প্রাণ জাগা রে, ফুৎকারে উল্লাস।
সত্য ন্যায়ের পথটি ধরে, এগিয়ে তুই যাবি
পাহাড় সমান বর্ম হয়ে, মিথ্যা রুখে দিবি।
বাচিঁস, বাঁচাস সঙ্গী যারা, থাকবে সাথে তোর
রাঙা আলোয় দেখবি তবে, রাত হয়েছে ভোর।
 

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free