মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ১২১-১৪০

নামে জগন্নাথ রায়, মান্য যাঁর অতিশয় 
পুকুর কুলের পরিচয়

আদিতে সর্দ্দার বংশ, প্রতাপের সেনা অংশ 
অতঃপর কৃষি জীবি হয়
।।
এই দীন গ্রন্থকার, এই বংশে জন্ম তার 
জন্ম ধন্য দেখি গুরুচাঁদে!
হরি হল অবতংস, ধন্য নমঃশূদ্র বংশ 
ভাগ্য গুণে পেয়ে হরিচাঁদে
।।
এই জগন্নাথ রায়, দাঁড়াইয়া কথা কয় 
সভা মাঝে বহুত প্রকারে

জ্ঞান-গর্ভ কথা কয়, সবে করতালি দেয় 
সভা শুদ্ধ ধন্য ধন্য করে
।।
নব কৃষ্ণ সেই জন, জ্ঞানী গুণী মহাজন 
সভামধ্যে বহুত কহিল

সবে তার কথা শুনি, ধন্য ধন্য করে ধ্বনি 
জয় শব্দে করতালি দিল
।।
জ্ঞানে গুণে মহাবলী, পিয়ারী চরণ ঢালি 
অন্য ভাবে উপাধি বিশ্বাস

দাঁড়াইয়া সভা মাঝে, কথা বলে মহা তেজে 
মনে হয় ফেলেনা নিঃশ্বাস
।। 
কথা কয় কতক্ষণ, মুগ্ধ হয় সর্ব্বজন 
সবে বলে ' ধন্য ব্যক্তি বটে!
উমাচরণ বিশ্বাস,সচিয়াদহেতে বাস 
কথা বলে সভার নিকটে
।।
রামলোচন বিশ্বাস, দাঁড়াইয়া সভা-পাশ 
বলিলেন জ্ঞান গর্ভ কথা

তাঁহার বচন শুনি, সবে করে জয় ধ্বনি 
বাক্যে তার এত মধুরতা
।।
পণ্ডিত শ্রী রাম নাথ, কর জোড়ে প্রণিপাত 
করিলেন সভাজন প্রতি!
ধীরে ধীরে কথা কয়, যেন কেহ গীত গায় 
কন্ঠ - স্বর সুললিত অতি
।।
বিদ্যার যতেক গুণ, ধন মান সব ন্যূন
বিদ্যাহীন রয় যেই জাতি!
নমঃশূদ্র ঘরে ঘরে, যা'তে বিদ্যা শিক্ষা করে 
সেই কথা বলিলা সম্প্রতি
।।
এই ভাবে জনে জনে, কথা কয় সভা স্থানে 
কেহ কম কেহ বলে বেশী

সকলের বলা হলে,উঠিলেন সভাস্থলে 
গুরুচাঁদ যেন পূর্ণ শশী
।।
বীণাপাণী লয়ে বীণা, আপনার মধ্যে লীনা
গাহে যদি সুধাময় গীতি

অথবা নারদ ঋষি, সুর সাধে যবে বসি 
যদি শোনে কমলার পতি
।।
অথবা কৈলাস পতি, যেমন করিল গীতি 
যে দিনে গলিল নারায়ণ

সৃষ্টি মোহ-প্রাপ্ত হয়, নারায়ণ পদে তায় 
গঙ্গা করে জনম গ্রহণ
।।
তেমনি সুরের ধ্বনি, গুরুচাঁদ গুণমনি 
নিজ কন্ঠে আনিল সে দিন

সে স্বরে নাহি তুলনা, যেমন কমলা - বাসনা
অনাহত ধ্বনি মাঝে লীন
।।
গুরুচাঁদ কয় কথা, বসে শোনে সব শ্রোতা 
অপূর্ব্ব ভাবেতে নিমগন

এ যেন ক্ষীরোদ কুলে, দৈত্য - ভীত দেব কুলে 
ভয় নাই বলে নারায়ণ
।।
সে সব মধুর কথা, অমিয় - পূরিত গাঁথা
কহিবারে শক্তি মোর নাই

যদি গুরু করে দয়া, দেয় মোরে পদছায়া 
মনে তবে আমি জোর পাই
।।
বারশ ' সাতাশী সালে, এই সভা নমঃকুলে 
প্রথমে হইল অধিষ্ঠান

পতিত - পাবন বন্ধু, গুরুচাঁদ কৃপাসিন্ধু 
অন্ধে চক্ষু করেছিল দান
।।

 


কুভাব কুরুচি যত, দেশে ছিল প্রবাহিত 
সে সকলে ফেলিল মুছিয়া

বোঝে নমঃশূদ্র জাতি,জাতি যদি চাহে গতি 
যেতে হ'বে সূক্ষ্ম পথ দিয়া
।।

 

শ্রী শ্রী গুরুচাঁদের বক্তৃতা ও নির্দেশ

উত্তিষ্ঠঃ জাগ্রতঃ প্রাপ্য বরান্নি বোধত “ - উপনিষদ -

তরুণ-অরুণ-কান্তি, রুপে চোখে লাগে ভ্রান্তি 
কোন খানে কড়া ক্রান্তি নাহি কিছু আন্

অমল - কমল - ছবি, নেমে যেন এল রবি 
রূপে ছোটে আলোকের বান
।।
আজানুলম্বিত ভুজ, লাজ পায় মনোসিজ 
ঢল ঢল চন্দ্র মুখ নিরক্ষণ করে

ঘন কৃষ্ণ মেঘ প্রায়, গুচ্ছে গুচ্ছে দেখা যায়
শিরোপরে কেশদাম দোলে থরে থরে
।।
আয়ত লোচন - দ্বয়, অচঞ্চল মণি - প্রায় 
অপলকে চেয়ে রয় সভাজন প্রতি

প্রশস্ত ললাট তটে, জ্যোতিঃ যেন ফুটে উঠে 
উচ্চ নাসা শোভা পায় অপূর্ব্ব সঙ্গতি
।।
প্রশস্ত বক্ষের ছাতি, সুদৃশ্য দশন - পাতি 
অঙ্গ বেড়ি অঙ্গ রাখা আছে পরিহিত
 
হাসি হাসি কথা কয়, বাঁশী যেন গান গায় 
শুনি কথা যত শ্রোতা সবে প্রফুল্লিত
।।
ডাক দিয়া সবে কয়, “মহাজ্ঞানী মহাশয় 
মহাজন যতজন আছেন সভায়

যাহা করি নিবেদন,সবে হয়ে এক মন 
দয়া করি কিছুক্ষণ শুনুন আমায়
।।
এই মহাজন সভা, ইন্দ্র - সভা তুল্য শোভা 
হেন সভা মনোলাভা মনেতে আহ্লাদ

এ হেন সভার মাঝে, বসি সভাপতি সাজে 
জানিলাম ইহা মম পিতৃ আশির্বাদ
।।
কাঙ্গাল জাতির ঘরে, এসেছিল দয়া করে 
মনে ছিল এই জাতি করে যাবে বড়

অপূর্ণ থাকিতে কাজ, গেছে চলে হরি রাজ 
না পুরিতে মনোসাধ নিল অবসর
।।
যাত্রাকালে ডেকে মোরে, গেছে বলে কত করে 
মনে মনে যত আশা ছিল তাঁর মনে

মোর মনে জাগে তাই, যতকাল বাঁচি ভাই 
সেই সব কাজ আমি করিব জীবনে
।।
অতঃপর ধন্যবাদ, নিন্ যত সভা সদ 
যত কৃপা গুণে মোরে কর সভাপতি

যা ' কিছু বলিতে চাই, তা 'তে মোর কিছু নাই 
সবে বলে পিতা মোর অগতির গতি
।।
জাতিতত্ত্ব - ইতিবৃত্ত, নমঃশূদ্র জাতিতত্ত্ব 
স্ব জাতি সভার মাঝে বলিবারে চাই

পূর্ব্ব পূরুষের কথা,তা 'তে ভরা - পবিত্রতা 
বংশ - পরিচয় - গাঁথা শুনুন সবাই
।।
শাস্ত্রে লেখে শুনি তাই, তার তুল্য পুণ্য নাই 
পূর্ব্ব পুরুষের কীর্ত্তি যদি শোনা যায়

ব্রহ্ম হত্যা নর হত্যা, সর্ব্ব পাপ মোক্ষদাতা 
বংশ কীর্ত্তি শ্রবণেতে সর্ব্ব পাপ ক্ষয়
।।
তাহার প্রমাণ রয়,মহারাজা জন্মেজয় 
সর্প যজ্ঞে পাপী হল ব্রহ্ম হত্যা পাপে

মনে ভাবে মহাশয়, কিবা করি হায়! হায়!
ব্রহ্ম হত্যা পাপ শুনি প্রাণ মোর কাঁপে
।।
রাজ্যে যত ছিল মুনি, সবারে ডাকিয়া আনি 
ব্রহ্ম হত্যা পাপ ক্ষয়ে চাহিলেন বিধি

কহে যত মুনি ঋষি, একাসনে শোন বসি 
পূর্ব্ব পুরুষের কথা শুভ কীর্ত্তি আদি “
।।
অতঃপর জন্মেজয়, মহাপাপ করে ক্ষয় 
এক মনে শুনে কথা বংশে যাহা হ'

পুণ্যগাঁথা শুনি কানে, শান্তি পেল দগ্ধ - প্রাণে 
ব্রহ্ম হত্যা পাপ তার দূরে চলে গেল
।।

 

তাই বলি সভাজন, সবে হয়ে এক মন 
নমঃশূদ্র জাতি কথা শুন মন দিয়া

পুণ্যলাভ করি সবে, প্রাণে মহাশক্তি পা'বে 
দিনে দিনে লভ্য হবে পরম রতন
।।
নমঃশূদ্র কবে হল,পূর্ব্বে তারা কিবা ছিল
সংক্ষেপেতে সেই কথা বলিব সভায়

আচার বিচার যত, সব ব্রাহ্মণের মত 
শুধুমাত্র যজ্ঞ সূত্র গলে নাহি রয়
।।
সবে করে কৃষি কাজ, তা'তে নাহি কোন লাজ 
পূর্ব্বকালে আর্য জাতি করিত সবাই

সরল অন্তর - খোলা, নাহি জানে ছলা-কলা 
বিলাস - ব্যসন গৃহে কিছুমাত্র নাই
।। 
নিরিবিলি নিজ ঘরে, ঘর - গৃহস্থলী করে 
অল্পেতে সন্তুষ্ট সবে লোভ ক্ষোভ নাই

সহজ জীবন - পথে,দূরে বিলাসিতা হ'তে 
যাহা দেয় বসুমতী তাহা মোরা খাই
।।
উদার পবিত্র - জাতি, ধর্ম্মাভাব চিরসাথী
সেবা পূজা দেবতারে করে ঘরে ঘরে

সরল বিশ্বাসী প্রাণ, অকাতরে করে দান 
ভিক্ষুক অতিথি জনে বিচার না করে
।।
এমন সরল যারা, তারা কেন সর্ব্বহারা 
সেই কথা সভা মাঝে বলিবারে চাই

সরল বিশ্বাস বলে, এই ঘরে হলে ছেলে 
অনন্ত করুণা - সিন্ধু শ্রী হরি গোঁসাই
।।
যাহা বলে ইতিহাসে, তাহা কিছু সল্প -ভাষে 
সভাজনে বলি তবে পিতৃপদ ভাবি

সে - বড় করুণ কথা, মনে হলে বাজে ব্যথা 
বুক - ভাঙ্গা দুঃখ ময় সে দিনের ছবি
।।
চরাচর এ ব্রহ্মাণ্ড,কোথা মূল কোথা কাণ্ড 
কেবা সৃষ্ট করে তারে কোন বিধিমতে

জড় - অচেতন সাথে, কিবা ভাবে কোন মতে 
চেতনা রূপিণী শক্তি আছে বসি তা'তে
।। 
স্রষ্টা - সৃষ্টি কি সম্বন্ধ,সুখ দুঃখ ভাল মন্দ 
চেতনা চেতনে রহে কোন সূত্র ধরি

কেবা দেহে কথা কয়, কেবা সুখ - দুঃখ বয় 
কেবা গেলে জড় দেহ রহে ভূমে পড়ি
।।
জীবন মরণ কিবা, কিবা রাত্রি কিবা দিবা 
কোন সূত্রে গাঁথা আছে জীবের জীবন

জীবন প্রভাত হ'তে, নরজাতি এ ধরাতে 
করিয়াছে অবিরত এ সব চিন্তন
।। 
অধরে ধরিবে বলে, দিনে দিনে পলে পলে 
চেতনারে ভর করি করেছে সমর
 
জড় দেহ করি ক্ষয়, লভিবারে সু বিজয় 
করেছে সাধনা কত যুগ যুগান্তর
।। 
অসীম মনের শক্তি, দিয়ে তাহে অনুরক্তি 
বিশ্ব - শক্তি সাথে তারে করেছে মিলন

জড়ের বান্ধন ছুটে, চেতন শক্তি লুটে 
অধরাকে পেয়ে ধরা সফল জীবন
।।
কূপ - বারি যথা কাঁদে, পড়িয়া বাঁধের বাঁধে 
অন্তহীন সিন্ধু ডাকে আয়! আয়! আয়!
বাঁধা যদি ভেঙ্গে যায়, কূপ - বারি ছুটে ধায় 
অনন্ত সাগর মাঝে আপনি মিলায়
।।
মিলনের ইতিহাস, যাহা কিছু সু - প্রকাশ 
সিন্ধু - বুকে মিলিবার আগে হয় শেষ

মিলিলে সিন্ধুর সনে, কিবা হয় কেবা জানে 
কূপবারি ছাড়ে কায়া ভোলে নিজ বেশ
।।
মানবের সাধনাতে,যাহা ফুটে হৃদি - পাতে 
যাবত সীমানা রহে তদবধি কয়
 
স্মৃতি - পটে বাঁধে তারে, স্মৃতি বলি ব্যাখ্যা করে 
শুনে জেনে শ্রুতি নাম করিল নির্ণয়
।।
জ্ঞান কাণ্ডে রহে গাঁথা, এসব মহান কথা 
গুণময় করি দেখে নির্গুণ রতনে

অসীম সসীম হয়, শেষাশেষ যুক্ত হয় 
এই তত্ত্বে ব্যাখ্যা করে চেতনা চেতনে
।।

বাঁধা - হীন বাঁধা হলে, ভুল পড়ে আদি মূলে
তাই বারে বারে সেথা আছে যে সংশয়

সংসার - পীড়িত জীব, সীমামধ্যে সাজে ক্লীব
ভাল মন্দ সুখ দুঃখ তা'তে সৃষ্টি হয়
।।
কর্ত্তারূপে এ ব্রহ্মাণ্ড, হাতে নিয়ে মান দণ্ড
চিৎ শক্তি করিতেছে সদা নিরীক্ষণ

দণ্ড যদি পড়ে হেলে, বিষম অসম হলে 
অসমে ভাঙ্গিয়া সম করে নিরূপণ
।।
জগতের তুলা দণ্ডে, দেখিতেছি দণ্ডে দণ্ডে
বারে বারে হানা দেয় অসম বিষম

চিৎ - শক্তি ধরি বুকে, সম দিতে পৃথিবীকে 
নররূপে ভেঙ্গে দেয় যাহা ব্যতিক্রম
।।
একদা ভারত খণ্ডে, আসিয়া উত্তর বঙ্গে
রাজার আলয় জন্মে জ্ঞান-অবতার

বুদ্ধ নামে পরিচিত, করিলেন জীব - হিত 
ভেদাভেদ ভুলি সবে হল একাকার
।।
পেয়ে তত্ত্ব এক বর্গ, ভূতলে নামিল স্বর্গ 
বিশ্ব-শক্তি মহামন্ত্র উঠিল ধ্বনিয়া

জন্ম - মৃত্যু - দুঃখ জ্বরা, নিখিল অখিল - জোড়া 
অভিনব ব্যাখ্যা তার করিল ডাকিয়া
।।
জীবে শক্তি পায় বুকে, ত্রিতাপ জ্বালার মুখে 
অহিংসা পরম সত্য জাগিল হৃদয়ে

নাহি হিংসা নাহি দ্বেষ, এক জাতি এক দেশ 
দলে দলে বৌদ্ধ ছুটে সে ধর্ম্ম বিজয়ে
।।
ভারত বিজয় হল,তবে ভূ ভারতে গেল
মানব মনের বাধা গেল যে টুটিয়া

কিবা শিল্প কি সাহিত্য, কিবা ধর্ম্ম কিবা তত্ত্ব
শাশ্বত রূপের ছবি উঠিল ফুটিয়
।। 
দিনে দিনে দিন যায়, প্রকৃতির কি খেলায় 
জীব কুল পূনঃ ভুল করিল ভুলিয়া

ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের নামে, ভারতের পুণ্য ভূমে 
বৌদ্ধ ধর্ম্ম নাশ করে সকলে পিষিয়া
।।
দলে যত ভারী হয়, অত্যাচার বেড়ে যায় 
ক্রমে ক্রমে বৌদ্ধ নাম গেল দেশান্তরে
 
ধর্ম্মে ভালবাসে যারা, কতই সহিল তারা 
প্রাণ - দায় শেষে যায় কানন প্রান্তরে
।।
রাজ - শক্তি যার রয়, সবে তার পদাশ্রয়
সেই বলে হীন জন কতই প্রবল

হিন্দু রাজা সিংহাসনে, বৌদ্ধ নাই কোন খানে 
ধর্ম্ম তরে মাথা দিল মহৎ সকল
।।
তার যত বংশধর, দূরে থাকি পরাস্পর 
নিরালে বসিয়া কিছু পালে রীতি নীতি

ধনবান বলবান,করিবারে হত মান 
আখ্যা দিল তা সবারে অপবিত্র জাতি
।।
কালচক্র ঘুরে আসে, নিরুপায় অবশেষে 
হিন্দু ধর্ম্ম কবলেতে বৌদ্ধ আসে ফিরে

ভারতের ইতিহাসে, বঙ্গ বা অপর দেশে 
হিন্দু রূপী বৌদ্ধ দেখা যায় ঘরে ঘরে
।। 
তাই দেখি সর্ব্ব দেশে, যা ' দিগে অস্পৃশ্য ভাষে 
হিন্দুর সকল নীতি নাহি জানে তারা

কিছু হিন্দু কিছু বৌদ্ধ, এই নীতি দেশ শুদ্ধ
বৌদ্ধ সবে মানি লয় হয়ে দিশেহারা
।।
বঙ্গ দেশে নিষ্ঠাবান, ছিল যত মতি মান 
ধর্ম্ম ছাড়ি প্রাণ রক্ষা করিতে না চাহে
 
ধর্ম্ম তরে দূরে যায়, কত অত্যাচার সয় 
ধর্ম্ম - তরে বন মধ্যে হীন হয়ে রহে
।।
এই ধর্ম্ম বীর যারা, সেই বংশে জন্মি মোরা 
কালের কুটিল চক্রে হয়ে আছি হীন

বহুদিন গত হয়, সবে মহা দুঃখ সয় 
এই ঘরে এল তাই হরি ভক্তা ধীন
।।
নয়নের জলধারা, বহুযুগ ফেলে তারা 
কেন্দে কেন্দে বলে কোথা আছ দয়া ময়

অসহ্য দুঃখের ভার, সহিতে পারিনে আর 
দুঃখ নাশ কর দুঃখ হারী! রসময় '
।।

ব্যাথিতের সে কান্নায়, ব্যথা হারী ব্যথা পায় 
তাই নর রূপে এল ব্যথিতের ঘরে

মহাসাধু যশোবন্ত, যাঁর গুণে নাহি অন্ত 
সেই ঘরে এল হরি রামকান্ত বরে
।।
শ্রী হরি ঠাকুর নাম, গুণাতীত গুণধাম 
পরম সৌভাগ্য মোর জন্মি পুত্র রূপে

চরণ দিলেন হরি, নমঃশূদ্র বঙ্গ ভরি 
আপনার ঘরে পায় নিখিলের ভূপে
।। 
ব্যথিতের সাথে মিশি, ক্ষীরোদের পূর্ণ শশী 
অকাতরে প্রেমধন দিল ঘরে ঘরে

কত অন্ধ দৃষ্টি পায়, প্রাণ - হীনে প্রাণ দেয় 
আদিব্যাধি ভব রোগ সব দেয় দূরে
।।
যতসব মহাজন, জানে ইহা সর্ব্বজন 
হীরামন নামে সাধু রাউৎখামারে

পড়ে ছিল মরা শব, জুটিয়া স্বজন সব
তারে ফেলে যায় সবে ওড়াকান্দী ' পরে
।। 
শ্রী হরির কৃপাগুণে, সে হীরা বাঁচিল প্রাণে 
দেশে দেশে জয় ধ্বনি উঠিল প্রচুর
 
দলে দলে লোক ধায়, পড়ে গিয়ে রাঙ্গা পায় 
সবে বলে ' প্রাণদাতা শ্রী হরি ঠাকুর!
ঘরে এল ভগবান, জাগিল জাতির প্রাণ 
নমঃশূদ্র জাতি জন্ম হল সেই দিনে

কেহ কোথা নাহি ছিল, হরি পেয়ে এক হল 
নমঃশূদ্র তাই চিনে আপনার জনে
।।
করুচি কুনীতি যত, পদে পদে বজ্রাঘাত
হানিয়াছে পিতা মোর পরম দয়াল

আদর্শে গৃহস্থ সাজে, স্থান দিতে বিশ্বমাঝে 
নমঃশূদ্রে দিল শিক্ষা সাজিয়া কাঙ্গাল
।।
ছিন্ন-ভিন্ন,ছন্ন - ছাড়া, নমঃশূদ্র ছিল মরা 
বাঁধিয়া একতা সুত্রে কহে বজ্র বাণী

শোন নমঃশূদ্র ভাই, ধর্ম্ম বিনা গতি নাই 
ধর্ম্ম ছেড়ে মরনেরে কেন আন টানি
।।
মিথ্যাচার ব্যভিচার, করিয়াছে অন্তঃসার
পবিত্র মানব কুলে কলঙ্ক পড়িল

নর হয়ে পশু ভাবে, পাপে মজে ' দিন যাবে
তার লাগি বিধাতা কি তোদের গড়িল?
আচার মানিয়া শ্রেষ্ঠ, হলে সবে পথ ভ্রষ্ট 
পবিত্র চরিত্র ধনে হয়েছ বঞ্চিত

না জানিয়া তত্ত্ব সার, বৈষ্ণবের কি আচার
মনে ভাব পুণ্য কিছু করেছ সঞ্চিত
।।
বৈষ্ণবের কুটীনাটি, মনে কর ধর্ম্ম খাঁটি 
পরকাল করে মাটি ইহকালে পাপী

বাহিরে পরমানন্দ, অন্তরেতে ক্লেদ গন্ধ 
' মুখেন মারিতং বিশ্ব ' প্রাণে ওঠ কাঁপি
।।
ধর্ম্ম নহে এত সোজা, পাপ কি মাথার বোঝা 
ইচ্ছা মাত্রে ফেলে দিয়ে হইবে খালাস ?
ময়লা কয়লার গায়, ধু 'লে কি সে কালী যায় 
হীরা ফেলে কাঁচ খণ্ড কে করে তালাস?
কালী যদি ধুতে চাও, অগ্নি মধ্যে ঝাঁপ দাও 
ময়লা পুড়িয়া হবে দেহ সুনির্ম্মল

পাপ-চিন্তা পাপ-কথা, ছেড়ে দাও মলিনতা
পবিত্র চরিত্র পাবে পরম সম্বল
।।
ধর্ম্ম নহে দূরে কোথা, ঘর ছেড়ে খোঁজ বৃথা 
আপনার ঘরে ধর্ম্ম আছে ঘুমাইয়া

চরিত্র পবিত্র রেখে, সত্য বাক্য বলে মুখে 
হরি বলে ধর্ম্ম বাতি লহ জাগাইয়া
।। 
ঘরে তের দূরে বার, ঘরে থেকে ঘর সার 
তীর্থে তীর্থে কিবা কর ফল কিবা তায়?
ঘরে আছে কত চোরা, তোমাকে করিল সারা
তীর্থে শুধু অর্থ বিত্ত সর্ব্বনাশ হয়
।।
ঘরে যদি ঠিক হয়, তীর্থে যাবে কিবা দায়
তীর্থ - পতি জগদিষ্ট রয় তার ঘরে

প্রমাণ দেখরে তার, পাণ্ডবের কি আচার 
ঘরে বাঁধা কৃষ্ণ ধন জনমের তরে
।।

 

গৃহ ধর্ম্ম রক্ষা করে, যুধিষ্ঠির নর বরে 
মাতৃবাক্য গণ্য করে বেদাতীত বাণী

পঞ্চ ভ্রাতা এক প্রাণ, পিতৃতুল্য করে জ্ঞান
মহারাজ যুধিষ্ঠিরে দিবস রজনী
।।
সুপবিত্র সুচরিত্র, আলস্য নাহিক মাত্র 
যাঁর যাঁর কর্ম্ম করে এক আজ্ঞা মতে

দৌপদী পবিত্র সতী, তুষিলেন পঞ্চ পতি 
আপনি জগত পতি বাঁধা প্রেম - সূতে
।।
কিবা ধ্যান কিবা ন্যাস, লিখেছেন বেদব্যাস 
করেছিল পঞ্চ ভাই পাণ্ডব সুমতি

গৃহ ধর্ম্ম সদাচার, সত্য বাক্য পরস্পর
সেই বলে জিনিলেন আসমুদ্র ক্ষিতি
।।
কৃষ্ণ ঘরে বাঁধা যাঁর, তীর্থ কোথা লাগে তাঁর 
সর্ব্ব তীর্থ তাঁর ঘরে রহে নিরন্তর

যুদ্ধে যেবা আছে স্থির, নাম তাঁর যুধিষ্ঠির
জীবন সংগ্রামে স্থির থাক সর্ব্ব নর
।।
সঞ্জীবনী - সুধা যথা, স্পর্শ মাত্রে যায় ব্যথা 
শ্রী হরির বাণী তথা আনে জাগরণ

যেই শক্তি ছিল রুদ্ধ, ঘরে ঘরে নমঃশূদ্র 
অন্ধকার অন্তে সূর্যে করে দরশন
।।
ঘরে ঘরে দিল শিক্ষা, পবিত্র চরিত্র দীক্ষা
সহজ জীবন পথে সরল আচার

হাতে কাজ মুখে নাম, দিল সবে মোক্ষধাম
ঘরে ঘরে হরিনাম করিল প্রচার
।।
দূর করি দিল মোহ, আড়ম্বর সমারোহ
বড় কথা বলে কেহ বড় নাহি হয়

কথা রেখ কাজ কর, ছোট বড় যা'হয় কর 
কথা বৃথা, কাজে জানা যায় পরিচয়
।।
ঘরে ঘরে এই কথা, বলে গেছে মোর পিতা 
এক সূত্রে ক্রমে গাঁথা হ'ল নমঃশূদ্র

শুধু নমঃশূদ্র নয়, যারা যারা দুঃখী রয় 
সবে মিলি এক সাথে করে ধর্ম্ম যুদ্ধ
।।
তেলী মালী কুম্ভকার, জোলা তাঁতী মালাকার 
ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য আর নবশাখ

ব্যথিত মুসলমান, হ'ল কত আগুয়ান 
হরিচাঁদে পেয়ে তারা বলে 'মোরা এক '
।।
গৃহধর্ম্ম - সুআচার, পিতা দিল ঘরে ঘর 
দলিত -পতিত -নর উঠিল মাতিয়া

তাঁর ভাবে ভাব ধরা, তাঁর প্রেমে মাতোয়ার 
মতুয়া “ উপাধী কয় সে ভাব দেখিয়া
।।
তিরোধান আগে পিতা, বলিলেন মোরে কথা
সেই কথা সার বলি করেছি গ্রহণ

সে-আজ্ঞা বহিয়া শিরে, ঘুরি দেশ দেশান্তরে 
সেই বাণী কহি সবে শুন সভাজন
।।

যে জাতির ঘরে, বিদ্যা নাহি ভরে 
দুর্ভাগা জানিবে তারে

ধন - মান - বৃথা, বিদ্যা নাহি যথা 
লোকে উপহাস করে
।।
বিদ্যার কারণে, মুনি ঋষি গণে 
তপস্যা করিল যত

বিদ্যা ছিল বলে, এই বিশ্বতলে
পৃথিবী সুন্দর এত
।।
বেদ স্মৃতি শ্রুতি, অগনিত পুঁথি 
সৃজন করেছে বিদ্যা

বিদ্যার জননী, দেবী বীণাপাণী 
সর্ব্বগুণে তাই সিদ্ধা
।।
বিদ্যা-শক্তি-ধারী, দেবী বাগেশ্বরী 
পরমেশ - প্রিয়তমা

জ্ঞানের আলোকে, উজলি ত্রিলোকে 
জগদীশ-মনোরমা
।।
অসীম - অধর, যিনি সর্ব্বসার 
লীলার কারণে তেঁহ

রূুপ - গুণে ধরে, বিশ্ব চরাচরে 
প্রকাশে বিরাট দেহ
।।

 

সৃষ্টি যে বিকার, মায়া রূপ তার 
তাই হ'ল জানা জানি
 
বিদ্ শব্দে জানা, অজানা - ললনা
বিদ্যাদেবী বীণাপাণি
।।
অসীম শক্তি, সসীম মূরতি
সৃষ্টি রূপে স্ব - প্রকাশ

বিদ্যা জানে তাঁরে, তাই বিদ্যা ধরে 
'বেদ ' রচে বেদব্যাস
।।
বিদ্যার - বাহন, স্বর ও ব্যঞ্জন
অক্ষর রূপেতে ক্ষর

সুর - শব্দ - যোগে, বহুবিধ ভাগে 
প্রকাশিত নিরন্তর
।।
বহু সাধনাতে, নর এ জগতে 
বিদ্যার সাধনা করে

অরূপেতে রূপ, দিয়া শব্দ রূপ 
চিত্র করি রাখে ধরে
।।
ভারত যখন, বিদ্যার যতন 
করেছিল ঋষি - যুগে

অভূত অপূর্ব্ব, সভ্যতার পর্ব্ব 
ফুটেছিল তাঁর আগে
।।
বিদ্যার কারণে, সান্দীপনি স্থানে 
কৃষ্ণ বলরাম যায়

বিদ্যার মাহাত্ম্যো, জানি সেই তত্ত্বে 
বাল্মীকি কবিতা গায়
।।
দস্যু রত্নাকর, জানে চরাচর 
পাপ - কর্ম্মে ছিল রত

দস্যু বৃত্তি করে, বন বনান্তরে 
করিত কালাতি পাত
।।
একদা নারদ, প্রভুর পার্ষদ 
সেই পথে করে গতি

পেয়ে দরশন, প্রফুল্লিত মন 
দস্যু রত্নাকর অতি
।।
করি আক্রমন, কহিছে বচন 
আজি তোর নাহি রক্ষা

সব দে'রে মোরে, পে'লি যথাকারে 
যা ' কিছু করিয়া ভিক্ষা”
।।
নারদ সুজন, নহে ভীত মন 
হাসিয়া বলিছে কথা

শুন রত্নাকর, ঘোর অবিচার 
মোর ' পরে কর বৃথা
।।
আমি ত উদাসী, ঘুরি দিবা নিশি 
ঘর বাড়ী কিছু নাই

আমার নির্ভর, সবার উপর 
ধন বল কোথা পাই?
মোর রক্ষা নাই, বলিয়াছ ভাই 
চিন্তা তা'হে নাহি করি

কেবা কারে মারে ? কেবা রাখে কারে?
সব করে সেই হরি
।।
যে করে সৃজন, সে করে নিধন 
তাঁর হাতে সব শক্তি

তুমি আমি বল, কোথা পাই বল 
বলহীনে নাই মুক্তি
।।
দেখ ভাবি মনে, কিসের কারণে 
দস্যু বৃত্তি কর বনে

আপনা-আপনি, কি কারণে শুনি 
ডাকিলে নিজ - মরণে ?
দস্যু কহে হাসি, ওগো ভণ্ড ঋষি?
চাতুরীতে তুমি দড়

কথার ছলনে, ভুলাইবে মনে 
চালাকী ভেবেছ বড়
।।
নহি সেই পাত্র, দিলে বিল্বপত্র 
ভোলারে ভুলাতে পার

আমি রত্নাকর, নাহি সে প্রকার 
এখানে সে আশা ছাড়
।।

 

ধর্ম্ম - বুলি কত, করি কণ্ঠ - গত 
বহুৎ বলিলে কথা

বেশী নাহি জানি, তবু শোন মুনি 
কি বলে তোমার গীতা
।।
রক্ষেৎ আত্মনং “ সতত, এই মহাজন - মত 
ধর্ম্ম তত্ত্ব আদি মূল

আত্ম বন্ধু জনে, পালিবে যতনে 
ইথে নাহি কর ভুল
।।
প্রাণ রক্ষিবারে, এই চরাচরে 
সবে পর - দ্রব্য লয়

আত্ম রক্ষা তরে,যাহা কিছু করে 
তা 'তে পাপ নাহি হয়
।।
পরিবার জন, করিতে পালন 
যেই কাজ আমি করি

আত্ম রক্ষা হয়, বলিনু নিশ্চয় 
পাপের কি ধার ধারি
।।
আশ্রিত পালন,বেদের লিখন
ধর্ম্ম মধ্যে গণে ' তারে

পিতা মাতা ভাই, পত্নী পুত্রেরাই 
বেঁচে থাকে মোরে ধরে
।।
স্বজন পালনে, পাপ কোন খানে 
আমিতো ' নাহিক দেখি

বাজে কথা ছেড়ে, ঝুলি ঝোলা ঝেড়ে 
দেহ 'ত সোণার পাখী
।।
নারদ সুজন, স্মরি নারায়ন 
দস্যুরে বলিছে ডাকি
 
শোন রত্নাকর, বচন আমার
মনে ভেবে দেখ দেখি
।।
স্বজন পালন, বেদের লিখন 
বলিয়াছ নিজ মুখে

যাদের কারণে, মজিলে আপনে 
তদের কভু কি ডেকে
।।
বলিয়াছ কথা, শুন পিতামাতা
শোন পত্নী পুত্র ভাই

সবার লাগিয়া, বনেতে থাকিয়া
যে ভাবে দিন কাটাই
।।
এ কর্ম্ম বিহিত, কিম্বা অনুচিত 
কোন উক্তি করে তারা

এই কর্ম্ম ধারা, সমর্থন তারা 
করে কি তোমারে ছাড়া
।।
এ কর্ম্মে যে ফল, তাহারা সকল
ভাগ নিতে কেহ রাজী ?
অথবা একেলা, বসি সারা বেলা 
দেখিতেছ ভোজ বাজী
।।
যাহ একবার, আপনার ঘর 
পুঁছহ সবার তরে

যত কর্ম্মফল,শুধু কি কেবল 
বহিবে আপন শিরে? “ 
নারদের বাণী, নিজ কর্ণে শুনি 
রত্নাকর ভাবে মনে

এ হেন বারতা, শুনি নাই কোথা 
কি শুনিলাম কি ক্ষণে
।।
বাঁধিয়া নারদে, অতি দ্রুত পদে 
ঘরে গেল রত্নাকর

শুধায় সবারে, যাহাদের তরে 
পাপ করে নিরন্তর
।।
নিতে কর্ম্মফল, কেবা আছে বল
যা কিছু করেছি আমি

এর ফল ভোগী, কেহ মোর লাগি 
আছে কি সংসার ভূমি? “
শুনি তার কথা, পিতা মাতা ভ্রাতা
পত্নী পুত্র সবে কয়

কর্ম্ম করে যেই, ফল পাবে সেই 
অন্যে ফল কোথা পায়?

 

শুনি সমাচার, দস্যু রত্নাকর 
হায় হায় করি ছুটে

নারদের পায়, গড়াগড়ি যায় 
চরণে মস্তক কুটে
।।
দয়ার ঠাকুর, মহিমা - প্রচুর 
নিজ গুণে দিলে দেখা

বল কি উপায়, পাপের জ্বালায় 
পরাণ যায় না রাখা
।।
করিয়াছি ভুল, হারায়েছি মূল
বাতুল হয়েছি মোহে

পাপ বিষে জ্বলে, মরি পলে পলে 
শকতি নাহিক দেহে
।।
কর কৃপা মোরে, ঘুরি মরু ' পরে 
তৃষ্ণিত - পরাণ জ্বলে

করুণা নিদান, করি কৃপা দান 
রাখহ চরণ তলে
।। 
স্তুতি বাণী শুনি, সে নারদ মুনি 
করুণা করিয়া কয়

'শোন রত্নাকর! নাহি কোন ডর 
পাপে নাহি কর ভয়
।।
একাসনে বসি, কর দিবানিশি 
পাপহারী রামনাম

নামের হিল্লোলে, প্রেমের কল্লোলে 
লভ্য হবে মোক্ষ ধাম
।। 
আর বলি কথা, অপূর্ব্ব বারতা 
তোমার অজ্ঞাত যাহা

লভিবে করুণা, পূরিবে বাসনা 
অন্যথা হবে না তাহা
।।
আপনি ভারতী, করিবে বসতি
রসনা জুড়িয়া তব

রচিবে কাহিনী, প্রেম - সুধা - খনি 
রাম - কীর্ত্তি গাঁথা সব “
।।
দস্যু রত্নাকর, শুনি অতঃপর
প্রাণান্তে সাধনা করে

দেহ হ'ল লয়, পাপ হ'ল ক্ষয় 
নাম গুণে প্রাণ ধরে
।।
তাহে প্রীতি অতি, দেবী সরস্বতী
জিহ্বাগ্রে আসন পাতি

বসিলা যখনি,উঠিল তখনি
অমর - মধুর - গীতি
।।
কাব্য রামায়ন, করিল রচন 
ঘুচিল পাপের দাপ

বিদ্যার কৃপায়, সেই মহাশয় 
মহাপাপে পেল মাপ
।।
অমর বাল্মীকি, যেমতি পিণাকী 
রাম - গুণ গায় সুখে

মরে রত্নাকর, বাল্মীকি অমর
সুধা - মাখা নাম মুখে
।।
যাহারে করুণা, ভারতী করে না 
তাহার জীবন বৃথা

অন্ধে দৃষ্টি পায়, মূকে কথা কয় 
করুণা করিলে মাতা
।।
শাস্ত্র গ্রন্থ ছাড়ি, বর্ত্তমান ধরি 
কিছু কথা আরো বলি

সুসভ্য বলিয়া, পরিচয় দিয়া 
নর নারী যে সকলি
।।
কোন গুণে তারা, এত শক্তি - ধরা 
ভেবে দেখ তাই মনে

লভি বিদ্যাধনে, ধনে মানে জনে 
মান্য বান সর্ব্ব স্থানে
।।
বুদ্ধি আছে যার, শকতি তাহার 
দেহ - বল কিছু নয়

বিদ্যা দেয় বুদ্ধি, চিত্তে আনে শুদ্ধি
তা'তে বুদ্ধি বৃদ্ধি হয়
।।

 

 

ইংরাজের জাতি , জনে ক্ষুদ্র অতি 
শুধুই বিদ্যার গুণে

বিশ্ব ভরা রাজ্য , পরিচয়ে আর্য 
পু্জিছে সকল জনে
।।
বাণীর দয়ায় , লক্ষ্মী ঘরে রয় 
যশ মান সব পায়

ইংরাজ-রাজত্বে , সূর্য নাহি অস্তে 
এত বড় কথা কয়
।।
এই বঙ্গ দেশে , জানহে বিশেষে 
যারা ধনী মানী গুণী

পেয়ে বিদ্যা ধন , সকলে এখন 
মান্যবান তাহা জানি
।।
বুদ্ধি দেয় বল , নির্ব্বুদ্ধি দুর্ব্বল 
পদানত চিরতরে

বুদ্ধি বলে করি , হাতে দণ্ড ধরি 
মাহুত তাড়না করে
।।
সংখ্যা বলে বলী, আমরা সকলি 
তা'তে কিবা আসে রায়

বিদ্যাহীন বলে , ছলে, বলে ,কলে 
মোদেরে চরিয়ে খায়
।।
বিদ্যা বলে বলী , আছে যত বলী 
অসীম শক্তি - ধরা

বিদ্যাহীন মোরা , তাই দেখি তারা 
করে রাখে জ্যান্তে মরা
।।
তাই বলি ভাই ,মুক্তি যদি চাই 
বিদ্বান হইতে হবে

পেলে বিদ্যাধন , দুঃখ নিবারণ
চির সুখী হবে ভবে
।।
আমি বলি বাণী , যতেক পরাণী 
শুন দিয়া সবে মন

সাজিতে বিদ্বান , হও আগুয়ান 
ভাই নমঃশূদ্র গণ
।। 
বিদ্যা যদি পাও, কাহারে ডরাও
কার দ্বারে চাও ভিক্ষা

রাজ শক্তি পাবে , বেদনা ঘুচিবে 
কালে হবে সে পরীক্ষা
।।
বলেতে প্রবল , নমঃশূদ্র দল 
শক্তি মাত্র আছে দেহে

বিদ্যার আলোকে, জাগহে পুলকে 
জাতি আজি তাই চাহে
।।
ব্রাহ্মণ - সন্তান! সাজরে বিদ্বান 
ব্রহ্ম - ক্ষাত্র - শক্তি তেজে

দুই শক্তি মিলে , এই ভূ - মণ্ডলে 
সাজরে রাজার সাজে
।।
দীন নমঃশূদ্র , সবে কহে ক্ষুদ্র 
কলঙ্কের বোঝা ভারি

সিংহ শিশু হায়! ভুলি পরিচয় 
মেষ দলে রহে পড়ি
।।
জাগ সিংহ জাগ , বরাভয় মাগ 
-বিশ্ব দলিয়া পায়

- বিশ্ব সৃজন , করেছে যেজন 
সেই দিবে পদাশ্রয়
।।
জাগা'বে তোমারে , তাই তব ঘরে 
নিজে হল অবতার

পেয়ে ভগবান , রবে হত - মান 
সবে সব অত্যাচার
বিদ্যার অভাবে , অন্ধ হয়ে সবে 
অন্ধকারে আছে পড়ে

জ্বেলে দাও আলো, মোহ দূরে ফেল
আঁধার ছুটিবে দূরে
।।
আর বলি কথা , শুন সব ভ্রাতা 
কু - আদর্শ যাহা আছে

আজি হতে ভাই , কহ সর্ব্ব ঠাঁই
সকল ফেলরে মুছে
।।

 

পরান্ন - গ্রহণ , অবাধ ভ্রমণ 
নারীর পক্ষেতে মানা

পাঠশালা কর , একসাথে মর 
ভাই ভাই হোক্ চেনা
।।
কে আছে কোথায় , কি ভাবে কি কয় 
দিন কাটে কোন ভাবে?
লহ সমাচার , দেশ - দেশান্তর 
যেখানে যাহারে পাবে
।।
বিদ্যাহীন মোরা , তাই ধন-হারা 
কাঙ্গাল সাজিয়া থাকি

ধনধান্য পেলে , দুঃখ যাবে চলে 
সবে হ'ব চির সুখী
।। 
করি প্রাণ পণ , ধন উপার্জন 
ঘরে ঘরে কর ভাই

হোক্ হীন স্থান , সাধু ভাবে আন
যেথা যত ধন পাই
।।
সর্ব্বোপরি কথা , চরিত্রে শুচিতা 
রাখা চাই জনে জনে!
দেহ কিংবা মনে , শুভ্রতা যতনে 
রাখা চাই সর্ব্বক্ষণে
।। 
অশনে বসনে , শয়নে ভোজনে 
পরিস্কার থাক সবে

যেখানে শুচিতা , নাহি মলিনতা 
লক্ষ্মী সেই ঘরে রবে
।।
সমাজ সামাজিকতা , যুক্তিহীন কথা
কথা কাটাকাটি সার

বাজে কথা ফেলে, মিশে এক দলে 
স্ব জাতি কর উদ্ধার
।।
রাজ - শক্তি বিনা, সমাজ জাগে না 
বহুত প্রমাণে পাই

রাজ - শক্তি ধরে , এ ভব সংসারে 
উচ্চ পদে ওঠা চাই
।। 
স্বাস্থ্য হীন জাতি ,নাহি পায় গতি 
আত্ম শক্তি কর রক্ষা

শিক্ষা স্বাস্থ্য পেলে --- অজেয় ভূতলে--
আর কিবা লাগে ভিক্ষা ?
ভদ্রতা সভ্যতা , চলা - ফেরা - কথা
সকলি করিবে ভাল

আচার - বিচারে , ঘরে কিংবা পরে
সরল স্বভাবে চলো
।।
এক জাতি-মাতা , সবে ভগ্নী ভ্রাতা 
মনে প্রাণে তাই জানো

এক সূতে গাঁথা , করিয়া একতা 
এক পথে সবে টানো
।।
মোরা ভাই ভাই , কিসে ভয় পাই 
ভয় গেছে দূরে চলে

ভূভার - হারক , পতিত - তারক 
হরিচাঁদ যেই কুলে
।।
জাগো নমঃশূদ্র , নহ কেহ ক্ষুদ্র 
কুল - ধর্ম্মে গরীয়ান্

দেখাও জগতে , নমঃশূদ্র হ'তে
নাহি কেহ বরীয়ান্
।। 
আত্ম পরিচয় , মনে নাহি হায়!
তাই এত দূর্গতি ভালে

পূর্ব্ব বিবরণ , কর রে স্মরণ 
শক্তিতে ওঠরে জ্বলে
।।
ধর্ম্ম - রক্ষা তরে, গহন কান্তারে 
যে জাতি সহিল দুঃখ

প্রতাপের সাথে , অস্ত্র নিয়ে হাতে 
শত্রু নাশে লক্ষ লক্ষ
।।
জননীর-প্রায় , যেই জাতি হায়!
ঘরে ঘরে দেয় অন্ন

শুচি - শুভ্র প্রাণ , বালক - সমান 
বরণ করেছে দৈন্য
।।

 

 

দধীচির মত, পরহিতে রত 
সুচরিত অতিশয়

আত্ম ভোলা ঋষি, প্রাণ দেয় হাসি 
পিছে ফিরে নাহি চায়
।।
ধর্ম্ম কর্ম্মোজ্জল, প্রেমেতে উছল
ঢল ঢল চোখে দৃষ্টি

'জনেনা ছলনা, অসত্য বলে না 
এই নমঃশূদ্র কৃষ্টি
।।
আঁধার গুহায়, সিংহ ঘুমে রয় 
দুরন্ত ফেরুর দল

সিংহে মৃত ভাবি, মিশিয়াছে সবি 
করিতেছে কোলাহল
।।
হওরে চেতন, কেশর - কেতন 
নাচাও সিংহ রাজ

কর রে হুঙ্কার, ধ্বনি ভয়ঙ্কর
নামুক ইন্দ্রের বাজ
।।
ফেরু-পাল দলে, পদতলে দলে
সম্মুখে রুখিয়া চলো

নমঃশূদ্র জয়, হোক্ সর্ব্ব ময়
ঘরে ঘরে সবে বলো
।।
এই মহাবাণী, গুরুচাঁদ মনি 
মহাতেজে যবে বলে

নমঃশূদ্র জয়”, সর্ব্বজনে কয় 
জয় জয় ধ্বনি তোলে
।।
কি এক শক্তি, বিদ্যুতের গতি 
সবার বুকেতে আসে

তেজের আগুন, জ্বলিছে দ্বিগুণ 
হীনতা - দীনতা নাশে
।।
মনে হয় বিশ্ব, তাহারা অবশ্য 
করিতে পারে যে চূর্ণ

কেবা বাঁধা দেয়, বারি যবে ধায় 
গঙ্গারে করিয়া পূর্ণ ?
সভাজন কয়, আর নাহি ভয় 
ঘরে এল কর্ণ ধার

জাগ জাগ ভাই, আর কথা নাই 
কেটে গেছে অন্ধকার
।।
প্রাণ - জাগরণী, উদ্বোধনী বাণী 
গুরুচাঁদ করে শেষ

জয় জয় জয়, গুরুচাঁদ জয় 
ধ্বনি করে সর্ব্ব দেশ
।।
আসন গ্রহণ, করিল তখন 
সভাপতি গুরুচাঁদ

কর জোড় করে, প্রণামের ছলে 
সবে করে আশীর্ব্বাদ
।।
সভা ভঙ্গ হল, শ্রী গুরু কহিল

থামিল বীণার গীত

সভাজন তায়, মঞ্চ প্রতি ধায় 
সবে প্রেমে পুলকিত
।।
সবে করপুটে, ভুমিতলে লুটে 
কত যে প্রণতি করে

সাঙ্গ পাঙ্গ গণে, মহাপ্রভু ভণে 
' চলহে তরণী পরে '
।।
দিবা অবসান, রবি অস্তে যান 
প্রভু উঠে তরী পরে

বলিছে ঈশ্বর, চিত্তে সকাতর 
দুটি কর জোড় করে
।।
' করিয়া করুণা, হেথা সব জানা 
বিলম্ব করিতে হবে'

প্রভু তাতে কয়, ওগো মহাশয় 
এ কার্য না সম্ভবে
।।
যদি সাধ্য হয়, তবে পুনরায়
এদেশে আসিব আমি

কখন কি হবে, কেবা তাহা কবে 
সব জানে অন্তর্যামী
।।

 

মনে কুতূহলী, এক কথা বলি
যাহা বুঝি মোর মনে

ঠাকুর গাইনে, হবে এক দিনে 
মেশা মিশি দুই জনে
।।
আজি নাহি রব, গৃহেতে ফিরিব 
বাধা নাহি দিও তাতে

ঈশ্বর ইচ্ছায়, সব কিছু হয় 
খুলি তরী এই রাতে
।।
তরণী ছাড়িল, নর নারী দল 
জয় ধ্বনি করে কূলে

দিল হুলু ধ্বনি, করে হরি ধ্বনি 
মহেশ বসিয়া হা'লে
।। 
ছোট নদী ছাড়ি, অতঃপর তরী 
মধুমতী - বক্ষে পড়ে

ঢল ঢল ঢল, অতি নিরমল
জ্যোছনা আকাশ জুড়ে
।।
মন্ত্রী যজ্ঞেশ্বর, সু - মধুর স্বর 
ভবেতে হৃদয় পোরা

মধুমতী জল, ছোটে কল কল 
ছল ছল আঁখি - তারা
।।
আকাশে জ্যোছনা, রূপের সীমানা 
কেবা দিতে পারে তায়

মনে হয় জলে, কোটী চন্দ্র গলে 
নাচিয়া নাচিয়া যায়
।।
বহিছে মলয়, শরীর জুড়ায় 
তরণী দোলায় রঙ্গে

করে লুটাপুটী, ঢেউগুলি জুটি 
মুক্তাকণা সে তরঙ্গে
।।
দেখি অপরূপ, ভাবের ভাবুক 
মন্ত্রী যজ্ঞেশ্বর গায়

' রে জগতবাসী, দেখ ছুটে আসি
কোন চাঁদে কি খেলায়
।।
দেখ সবে এসে, মন হরা বেশে 
ভরা-চাঁদ ভরা-নায়

আকাশের চাঁদ, পেতে সেই পদ
জলে পড়ে গলে যায়
।।
সোনার পুতুল, ভূবনে অতুল
রাতুল রূপের ছবি

দেখে যারে তোরা, রূপের পসরা
আর কি দেখিতে পাবি ?
ছিল কোনখানে, কেবা তাহা জানে 
আপনি নামিল ধরা

কি দেখিবি বল, হবিরে পাগল
ভূলে যাবে আঁখি তারা'
।। 
মধুর স্বরেতে, বিধু গায় সাথে 
প্রেমেতে মগন সবে

দেশ কাল ভুলি, মেতেছে সকলি
কোন কথা কেবা কবে
।।
হা'লেতে মহেশ, নাহি জ্ঞান লেশ 
নাচিছে বেহাল হয়ে

তরণী ঘুরিছে, তা ঠিক আছে 
কাঁদিছে প্রলাপ কয়ে
।।
কথা নাহি কয়, প্রভু লীলা ময় 
বসে রহে চুপ করে

হেন কালে হায়, কি হল তথায় 
কিবা বলি অতঃপরে
।। 
কিবা মনোহর, মকর সুন্দর 
জলে 'পরে উঠে ভাসি

বরাঙ্গ - ধারিণী, নয়ন - রঞ্জিনী
অপরূপ - রূপ রাশি
।।
আয়ত - লোচনা, পূরিত - করুণা 
শঙ্খ - পদ্ম চারি হাতে

মকর - বাহিনী, সাগর - জননী
পদ্মাসনে বসে তা'তে
।।

 

তরণীর প্রতি, ছুটে দ্রুতগতি 
জ্যোতি অতি মনোলোভা

সবে দেখে হায়, জল উঠে নায় 
তরী বুঝি পড়ে ডোবা
।।
কল কল কল, ছুটে আসে জল 
গুরুচাঁদ যেথা বসে

পশিল মকর, তরীর ভিতর 
জননী কহিল হেসে
।।
স্বভাব - সুন্দর, ওগো মহেশ্বর!
দাসীরে পড়িল মনে

নর রূপে এলে, এই ভূ-মণ্ডলে 
তারিতে পতিত জনে
।।
কত দিন হায়! তব রাঙ্গা পায় 
নয়নে নাহিক দেখা

বহু ভাগ্য ফলে, আজি দেখা দিলে 
প্রেমময় প্রাণ সখা
।।
মনে যেন রয়, দাসীকে সদায় 
আর নাহি কোন ভিক্ষা

আজি শুভদিনে, পূজিয়া চরণে 
লইব প্রেমের দীক্ষা
।।
আমার হৃদয়ে,সুগন্ধ ছ'ড়ায়ে 
কমল ফুটেছে সদা

সেই পদ্মদলে, চরণ কমলে 
ডালি দিব নাহি বাঁধা'
।।
এতেক বলিয়া, চরণ পূজিয়া 
জননী ফিরিয়া চলে

বিধু ডেকে কয়, ' ঐ যায়, ঐ যায় 
মকর ভাসিয়া জলে'
।।
মহেশ কহিল, তরণী ডুবিল 
সলিল পশিল বেগে'

কহে যজ্ঞেশ্বর, 'রক্ষা নাই আর 
কেমনে তরণী জাগে '
 
আহা কি আশ্চর্য, লীলার মাধুর্য 
প্রভুর কার্যের ধারা

যত বেগে উঠে, তত বেগে ছোটে 
জল নাহি দেখে তারা
।।
ফিরে এল জ্ঞান, যত মতিমান
নীরবে ভাবিছে বসে

দেখিনু কি হায়! আমরা কোথায়
কিছু নাহি পাই দিশে
।।
অন্তর জানিয়া, মধুর হাসিয়া 
ছল করি প্রভু বলে

কি দিয়ে কি করে, কোন ভাব ধরে 
আপনা আপনি খেলে
।।
কি বিধুভূষণ, পণ্ডিত সুজন 
রামতনু যজ্ঞেশ্বর

হত - বাক হয়ে, রয়েছে বসিয়ে 
বল দেখি সমাচার
।।
চীৎকার করে, বল পরস্পরে 
'তরণী ডুবিয়া যায়'

আমি ত আকুল, ভাবিয়া ব্যাকুল 
এরা সবে কিবা কয়
।।
কিবা কোথা হল, মোরে তাই বল
শুনিতে বাসনা মনে

নদীর ভিতরে, চীৎকার করে 
এমন করিলে কেনে ?
সাধু যজ্ঞেশ্বর, প্রেমে থর থর 
জুড়ি দুই কর বলে

তুমি গঙ্গা ধর, বুঝিনু এবার
দেখিনু নয়ন মেলে”
।।
প্রভু কহে রেগে, শোন ওরে যগে 
এ সব কাহিনী রাখ

অপ গণ্ড - প্রায়, কি কস কোথায় 
মনে মনে সব থাক
।।

 

সবে দিশে-হারা, সঙ্গে আছ যারা 
জ্ঞান কাণ্ড কিছু নাই

ভাবেতে বিভোল, ভাবের পাগল 
বোধ-বুদ্ধি সব ছাই
।।
অগাধ নদীতে, সবে গানে মেতে 
বেহুস বসিয়া রও

তরী ডুবে যায়, কে রাখিবে তায় 
সে সব আমারে কও
।। 
তোমাদের সাথে, বিদেশের পথে 
চলাচল বড় ভুল

রক্ষা করে হরি, তাই বাঁচে তরী 
অকূলে মিলিল কূল”
।।
শুনি ক্রোধ বাণী, যজ্ঞেশ্বর গুণী 
ভক্তি আনিয়া প্রাণে

নিয়ে ভক্তি-বাণ, হয়ে আগুয়ান
প্রভুর চরণে হানে
।।
পেয়ে মহাবল, চোখে ঝরে জল
বলে 'হরি বল ' কণ্ঠে

প্রভু প্রতি কয়, ওহে দয়াময় 
ভয় নাহি কোন দণ্ডে
।।
ছলনা করিতে, এ-বিশ্ব জগতে 
তোমার তুলনা নাই
 
সবাকে ভুলায়ে, রেখেছ ঘুমায়ে 
দেখা নাহি পাই তাই
।।
তুমি ইচ্ছা ময়, তোমার ইচ্ছায় 
বাধা দিতে কেবা পারে?
তবু যাহা দেখি, ওগো কমলাখি!
বলিব জগৎ ভরে
।।
দেখেছি স্বচক্ষে, লাগেনা পরীক্ষে 
অন্তরীক্ষে দেবী গঙ্গা

পূজেছে চরণ, ভাসায়ে বয়ন 
সদাশিব - অন্তরঙ্গা
।।
বুঝিলাম আমি, গঙ্গাধর তুমি 
এ নহে চোখের ভ্রান্তি

তুমি সর্ব্বেশ্বর, ব্রহ্ম - পরাৎপর
ভুল নহে কড়া ক্রান্তি
।।
প্রেম-মাখা-সুরে, ভক্ত - যজ্ঞেশ্বরে 
প্রেমের কাহিনী কয়

বিধু কাঁদে হায়, গড়াগড়ি যায় 
রামতনু মহাশয়
।।
হা'লে বসে কান্দে, মহেশ আনন্দে 
তরী চলে ছল ছল

নাচে মধুমতী, করে মাতামাতি
জলে উঠে কল কল
।।
নীরবে বসিল, কিছু না কহিল
গুরুচাঁদ গুণমণি

ভাবাবেশে তান, ধরে গুণবান
যজ্ঞেশ্বর মহাজ্ঞানী
।।
সারা রাত ধরি, চলে সেই তরী 
ভাবে মগ্ন সবে রয়

প্রভাত হইল, তরণী ভিড়িল
ওড়াকান্দী শ্রী আলয়
।।
জয় ধ্বনি করি, বলে হরি হরি 
উত্তরিল সবে তীরে

সব ভক্তগণে, প্রভুর চরণে 
বিনয়ে প্রণাম করে
।।
শ্রী গুরু - চরণ, করিয়া স্মরণ 
মনে করি তাহে বল

সভা পর্ব্ব গাই, শ্রী গুরু দোহাই 
ভরসা চরণ তল
।।

 

 

 

 

 

শিক্ষা বিস্তারে শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ

হে মোর দুর্ভাগা দেশ!
যা 'দেরে করেছ অপমান

---- রবীন্দ্রনাথ

দত্তডাঙ্গা সভা - মধ্যে গুরুচাঁদ কয়
শিক্ষা বিনা এ জাতির নাহিক উপায়
।।
সেই বাণী সবে মানি নিল দেশে দেশে

পাঠশালা করে সবে পরম উল্লাসে
।।
ওড়াকান্দী পাঠশালা করে রঘুনাথ

ক্রমে ক্রমে শিক্ষাদান ক'রে সুত্রপাত
।।
নিম্ন প্রাথমিক হতে ক্রমে কালে কালে

ছাত্র বৃত্তি বিদ্যালয় করে কুতূহলে
।। 
ওড়াকান্দী, ঘৃতকান্দী, ঘোনাপাড়া আদি

গ্রামে গ্রামে স্কুল হল কেহ নহে বাদী
।।
প্রভু-জ্যেষ্ঠ-পুত্র জানি শ্রী শশী ভূষণ

তেহ ওড়াকান্দী স্কুলে করে অধ্যয়ন
।।
প্রভুর মধ্যম পুত্র সুধন্য কুমার

ওড়াকান্দী পাঠশালে পাঠে তৎপর
।।
এই ভাবে দিন যায় বহুৎ ঘটনা

অন্য স্থানে সেই সব করিব বর্ণনা
।।
কিভাবে শশীভূষণ কোথা শিক্ষা পায়

কোন ভাবে কলিকাতা পাঠ শেষ হয়
।।
তাহার জীবনী যবে করিব লিখন

সেই স্থানে সেই সব করিব বর্ণন
।।
এবে শুন কিবা হ'ল প্রভুর দেশেতে

নমঃশূদ্র গণ সবে চলে কোন পথে
।।
জাতিতে কায়স্থ নাম শ্রী গিরিশ চন্দ্র

কুলীনের শ্রেষ্ঠ বসু উপাধির ছন্দ
।।
ঘৃতকান্দী গ্রামে বাস ওড়াকান্দী কাছে

দেশে কি বিদেশে কীর্ত্তি বহু করিয়াছে
।।
কাঠের ব্যবসা করি বহু লভ্য হয়

অধিকাংশ সময়েতে কলিকাতা রয়
।।
ধনবান বলি তারে সবে মান্য করে

দেশের মঙ্গল চিন্তা ছিল যে অন্তরে
।।
মনে ভাবে মহাশয় কোন কার্য করি

দেশ-মধ্যে কাজ কিছু করি যদি পারি
।।
কারে কহি মনোগত কথা মোর যত

স্বজাতি বান্ধব দেশে অল্প পরিমিত
।। 
হরিপুত্র গুরুচাঁদ অতি বিচক্ষণ

তার কাছে উপদেশ করিব গ্রহণ
।।
মহতের পুত্র তিনি স্বভাবে উদার

তাঁর তুল্য দেশ মধ্যে কেহ নাহি আর
।।
কিবা উপদেশ দেয় সেই মহামতি

দেশে গিয়ে সেই বার্ত্তা জানিব সম্প্রতি
।।
শাস্ত্রে বলে স্বর্গাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ দুই জন

দেশ-মাতা নিজ-মাতা করি নির্ব্বাচন
।।
নর কুলে জন্ম লয়ে এই দুই জনে

সেবিবে দোহার পদ বিবিধ বিধানে
।।
সত্য বটে বহু অর্থ পাইয়াছি আমি

এই অর্থে সেবা করি নিজ মাতৃভূমি
।।
নিজ ঘরে মান যার নাহি কদাচন

মানী বলে অন্যে তারে করেনা গ্রহণ
।।
দেশ-সেবা কাজ করে যদি মান পাই

মান পাব কবে যশ সর্ব্বত্র সবাই
।।
কোন ভাবে এই কার্য সমাধা করিব

বড় কর্ত্তা গুরুচাঁদে তাহা জিজ্ঞাসিব
।।
এত ভাবি দেশে এসে সেই মহাশয়

শ্রী গুরুচাঁদের গৃহে হইল উদয়
।।
প্রণাম করিয়া বলে প্রভু গুরুচাঁদে

'বড় কর্ত্তা বলি কথা যাহা জাগে হৃদে '
।।
সমাদরে প্রভু তারে বসা'ল আসনে

কুশল জিজ্ঞাসা করে বসুজীর স্থানে
।।

কুশলাদি জানাজানি হয় পরস্পরে
বসু মহাশয় বলে পূর্ব্ব কথা ধরে
।।
'মনের বাসনা আমি কহি তব স্থানে

অর্থ দ্বারা কিছু কার্য করিব এখানে
।।
কি - কি -কার্য করা ভাল সেই উপদেশ

আমাকে বলিয়া দিন করিয়া বিশেষ
।।
মহোল্লাসে প্রভু বলে ' ধন্য মহাশয়

তব তুল্য ব্যক্তি অল্প আছে এ ধরায়
।।
মহৎ উদ্দেশ্য তব নিজেও মহৎ

ধনী মানী গুণী জ্ঞানী আর তাতে সৎ
।।
দেশের মঙ্গল তরে কেন্দেছে পরাণ

পরম উদার তুমি অতি ভাগ্যবান
।।
তব প্রতি ঈশ্বরের করুণা থাকিবে

দেশে কি বিদেশে সবে তব নাম লবে
।।
দেশ-মধ্যে কাজ যদি করিবারে চাও

যাহা কহি তাহা কর মোর বাক্য লও'
।।
এমত সময় বলে বসু মহাশয়

একটি বাসনা আমি জানা'ব তোমায়
।।
' এই দেশে চিকিৎসার বন্দোবস্ত নাই

দাতব্য-চিকিৎসালয় করে দিতে চাই'
।।
প্রভু বলে 'মহাশয় বড় ভাল কথা

ব্যাধি-দূর-করা বটে অতি উদারতা
।।
অজ্ঞান-ব্যাধিতে ভরা আছে এই দেশ

জ্ঞানের আলোকে ব্যাধি তুমি কর শেষ
।।
উচ্চ বিদ্যালয় এই দেশে কোথা নাই

উচ্চ বিদ্যালয় কর এই ভিক্ষা চাই
।।
প্রভুর মনেতে উঠে পূর্ব্ব-দুঃখ যত

পাঠশালা করি করে শিক্ষা সূত্র-পাত
।।
পাঠশালা পাঠ পড়ি শ্রী শশিভূষণ

ইচ্ছা করে উচ্চ শিক্ষা করিতে গ্রহণ
।।
দেশ মধ্যে উচ্চ বিদ্যালয় কোথা নাই

প্রভু বলে 'এ বালকে কোথা বা পাঠাই
।।
জয় পুর বাসী কবি শ্রী তারকচন্দ্র

তারে ডাকি বলিলেন প্রভু গুরুচন্দ্র
।।
উচ্চ শিক্ষা নিতে চায় আমার নন্দন

তোমার গৃহেতে তারে করহে গ্রহণ”
।।
লক্ষ্মীপাশা বিদ্যালয়ে শ্রী শশীভূষণ

তারকের গৃহে থাকি করে অধ্যয়ন
।।
বিদেশে সন্তানে রাখা শিক্ষার কারণে

দীন দুঃখী জনে তাহা পারিবে কেমনে
।।
দীনের - বান্ধব প্রভু দীনে বড় দয়া

দীনেরে পালিল প্রভু দিয়ে পদছায়া
।।
সেই দুঃখ মনে পড়ে প্রভু বলে বাণী
 
'যাহা বলি তাহা কর বসুজী আপনি '
।।
প্রভুর মুখেতে শুনি এ বাক্য মধুর

ধন্য ধন্য করে তাঁরে বসুজী প্রচুর
।।
'তব আজ্ঞা শিরোধার্য আমি করিলাম

করিব ইংরাজি স্কুল কথা যে দিলাম
।।
প্রভু বলে 'শুন শুন বসু মহাশয়

তোমার গুণের কথা কহনে না যায়
।।
অশিক্ষিত নমঃশূদ্র তব কৃপাগুণে
 
পাইবে পরম রত্ন বিদ্যা - মহাধনে
।।
বিদ্যাদান তুল্য দান আর কিছু নাই

দেশ - গুরু হলে তুমি বসুজী মশাই
।।
বিনয়ে বসুজী কহে ' কর্ত্তা মহাশয়

মম প্রতি আশির্বাদ সদা যেন রয়'
।। 
প্রভু বলে ' এই বার্ত্তা দিব ঘরে ঘরে

তব নাম লেখা রবে সোনার অক্ষরে'
।।
বহু আলোচনা করে সে গিরিশচন্দ্র

গৃহে গেল প্রাণে পেল বড়ই আনন্দ
।।
তবে প্রভু ডেকে বলে নমঃশূদ্র গণে
 
শোন নমঃশূদ্র সবে বাঁচিলে জীবনে
।।
পরম উদার চিত্ত ধনী ভাগ্যবান
 
ঘৃতকান্দী গ্রামে বাস কায়স্থ প্রধান
।।

 

 

 

 

 

গিরিশ নামেতে খ্যাত সবে জান তাঁরে 
উচ্চ বিদ্যালয় করে তোমাদের তরে
।।
তাড়িতের মত বাণী দেশে দেশে যায়

সবে বলে ধন্য! ধন্য! বসু মহাশয়
।।
যে আনন্দ নমঃশূদ্র সবে পেল প্রাণে

বর্ণিতে অসাধ্য তাহা বর্ণিব কেমনে
।।
বসু - বাড়ী দিবা রাতি সবে আসে যায়

এ সব দেখিয়া প্রফুল্ল বসু মহাশয়
।।
বসু মহাশয় পুনঃ এল প্রভু কাছে

বিদ্যালয় স্থান লাগি প্রভু কাছে যাচে
।।
ওড়াকান্দী ঘৃতকান্দী হতে সমদূর

উচ্চ ভিটা ছিল এক দিখিতে বন্ধুর
।।
ভিটার কাহিনী কিছু বলিবারে চাই

প্রাচীন লোকের মুখে যা শুনিতে পাই
।।
বাবাজী কোমল দাস নামে মহাশয়

কিছুকাল বাস করে ওড়াকান্দী গাঁয়
।।
অবতীর্ণ হরিচাঁদ সফলানগরী

ওড়াকান্দী এল পরে দেশ পরিহরি
।।
হরির ভাবের অন্ত কেবা কোথা জানে

ভ্রমন করিত প্রভু নানাবিধ স্থানে
।।
কখনও একাকী চলে প্রভু কেহ সঙ্গে

ভাসিয়া চলিত প্রভু লীলার তরঙ্গে
।।
ওড়াকান্দী এল পরে সে কোমল দাস

প্রভুকে দেখিয়া হল চরণের - দাস
।।
বাহ্যভাবে সেই ভাব বোঝা নাহি যেত

মাঝে মাঝে সে কোমল প্রভুকে ডাকিত
।।
একদা ঊষার কালে সূর্য উঠে নাই

'হরি ' বলে মহাপ্রভু ছাড়িলেন হাই
।।
বিরাট হইল শব্দ যেন বজ্রঘোষে

কম্পমান হল সবে শব্দের তরাসে
।।
সে কমল দাস ছিল শ্রীগুরুর ধ্যানে

মহাবেগে শব্দ পশে তার দুই কানে
।।
ধ্যান ভঙ্গে সে বাবাজী দ্রুত বেগে চলে

হরিচাঁদে দেখা পেল গ্রাম মধ্যস্থলে
।।
হস্তে ধরি তারে বলে 'বাবাজী গোঁসাই

চল মোরা দুইজনে ঘুড়িয়া বেড়াই
।।
তিন স্থানে অদ্য মোরা বসিব দু'জনে

তিন কার্য হবে তথা রাখিও স্মরণে
।।
এত বলি দুই প্রভু দ্রুত গতি চলে

উপনীত হল দোহে এহ ভিটা-স্থলে
।।
গ্রামের পশ্চিম দিকে ভিটে এক ছিল

দুই প্রভু পদ্মাসনে সেখানে বসিল
।।
ওড়াকান্দী হাইস্কুল এবে যথা রয়

সেই ভিটা এই ভিটা কহি পরিচয়
।।
ক্ষণকাল বসি তথা দুই প্রভু উঠে

দক্ষিন দিকেতে দোহে দ্রুতগতি ছোটে
।।
সফলানগরী ছাড়ি রামদিয়া গ্রাম

খাল কূলে বটবৃক্ষ শোভে অনুপম
।।
এবে সেই বৃক্ষ নাই তার শিশু আছে

দুই প্রভু বসিলেন সেই বৃক্ষ নীচে
।।
কলেজ হয়েছে সেথা অতি মনোহর

হরি - পদরজে ফল ফলেছে এবার
।।
কিছুকাল বসি পরে দুইজনে ধায়

পূর্ব্ব দিক ধরি চলে ঘৃতকান্দী গাঁয়
।।
ঘৃতকান্দী ছাড়ি পুনঃ উত্তরাভিমুখে

এক ভিটা পরে বসি কথা বলে সুখে
।।
স্থান যদি চাহিলেন বসু মহাশয়
 
সেই ভিটা দেখাইলা প্রভু দয়াময়
।।
দুই গ্রাম হতে ভিটা সমদূর বটে

স্কুল হলে হবে তাহা দোঁহার নিকটে
।।
বিল দেশে উচ্চ ভিটা এমত প্রকার

মোদের উদ্দেশ্য পক্ষে নাহি দেখি আর
।।
স্থান দেখি বসুজীর আনন্দিত মন

স্থান করিবারে সেথা করিল মনন
।।

 

 

আসবাব পত্র লাগি যাবে কলিকাতা
সবে মিলি যুক্তি করি ঠিক করে সেথা
।।
স্থির হল কিছুদিন পরে দেশ হ'তে

কলিকাতা যাবে সব জিনিষ আনিতে
।।
হেন কালে শুন সবে অপূর্ব্ব ঘটনা

আজো মনে হলে তাহা জাগে প্রাণে ঘৃণা
।।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ আদি বর্ণ হিন্দু যত

নমঃশূদ্র প্রতি হিংসা করে যে সতত
।।
পদতলে পিষ্ট করি রাখিবারে চায়

নমঃর উন্নতি হলে বিষে দহে কায়
।।
ওড়াকান্দী হতে দূর ফুক্ রা গ্রামেতে

ব্রাহ্মণ কায়স্থ বাস করে একসাথে
।।
বিশেষ ব্রাহ্মণ তথা মান্যবান অতি

পণ্ডিত আচার্য সব করিছে বসতি
।।
নমঃশূদ্র শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র রহে চারিধারে

সবে জানে কত শক্তি তারা সেথা ধরে
।।
হিংসুক ব্রাহ্মণ যত ভাবে মনে মন

উচ্চ শিক্ষা পায় যদি নমঃশূদ্র গণ
।।
কিছুতে নিস্তার মোরা নাহি পাব আর!
নমঃশূদ্র করিবেক সব অধিকার
।।
গ্রামবাসী সবে মিশি করে পরামিশে!
'শীঘ্র করি বলে ক'য়ে থামাও গিরিশে
।।
সে কেন করিবে স্কুল নমঃর ভিতরে

শিক্ষা পেলে নমঃ আর নাহি মানে কারে
।।
একান্ত গিরিশ যদি স্কুল দিতে চায়

আসিয়া করুক স্কুল হেথা এই গাঁয়
।।
স্বজাতি কায়স্থ তার আছে এই দেশে

ব্রাহ্মণ পণ্ডিত মোরা হীন - হেয় কিসে?
জন কত চলি যাও গিরিশের বাড়ী

কিছুতে তাহাকে মোরা নাহি দিব ছাড়ি
।।
সঙ্গে করে আন তাকে আমাদের গাঁয়

আমাদের কথা শুনি দেখি সে কি কয়
।। 
সলা-পরামর্শ করি যতেক ব্রাহ্মণ

লোক পাঠাইয়া দিল তথা দুই জন
।।
বহুৎ বিনয়ে তারা অনেক কহিল

'বিশেষ কারনে তোমা' ব্রাহ্মণে ডাকিল
।।
ফুকরা নিবাসী যত ভট্টাচার্য আছে

তব দরশন তারা একবার যাচে
।। 
সরল বিশ্বাসী ধনী গিরিশ সুজন

তাহাদের সাথে করে ফুকরা গমন
।।
যেই মাত্র সেই গ্রামে উপস্থিত হল

বহুৎ সন্মান করি তারে বসাইল
।।
ঘিরিয়া বসিল তারে পণ্ডিত মণ্ডলী

বলে ' বসু মহাশয়! শুন কথা বলি
।।
সত্য মিথ্যা নাহি জানি শুনিয়াছি কথা

জন্মভূমি ' পরে তব বিশেষ মমতা
।।
সেই খানে তুমি নাকি করিবে স্কুল

যবে উঠিয়াছে কথা নাহি হবে ভুল
।।
আর নাকি দিতে চাও চিকিৎসালয়

এই কার্যে হবে নাকি বহু অর্থ ব্যয়
।।
লক্ষ্মীর কৃপায় তব অর্থা ভাব নাই

গুটি কত কথা তবে বলিবারে চাই
।।
চিকিৎসালয় দিবে দাও নাহি করি মানা

স্কুল দিবে কোন মর্ম্মে কিছু তো বুঝিনা
।।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ কোথা যেথা তব ঘর

তুমি বাস কর বাপু! নমঃর ভিতর
।।
নমঃ জাতি চিন তুমি বিদ্যা শিক্ষা নাই

বিদ্যাহীন বলে মোরা তাদেরে চরাই
।।
স্কুল যদি পায় তারা বিদ্বান হইবে

আমাদের মান বাপু কভু না রহিবে
।।
বিশেষতঃ এই দেশে উচ্চ বিদ্যালয়

ওলপুর ভিন্ন আর কোথা নাহি হয়
।।
বিদ্যা দান - পুণ্য যদি লভিবারে চাও

এই গ্রামে উচ্চ বিদ্যালয় করে দাও
।।

 

 

পুণ্য হবে মান রবে বাঁচিবে ব্রাহ্মণ
কর্ত্তব্য কি অকর্ত্তব্য বুঝ বাছাধন'
।। 
এতেক যদ্যপি বলে ব্রাহ্মণ সকল

গিরিশ কাতরে বলে আঁখি ছল ছল
।।
'যে বার্ত্তা কহিল মোরে ব্রাহ্মণ সকলি

হতজ্ঞান তাহে আমি বল কিবা বলি ?
কথা দিয়া আসিয়াছি সবাকার ঠাঁই

কেমনে প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গি বল দেখি ভাই
।।
বাক্যে-নষ্টে ধর্ম্ম-নষ্ট “শাস্ত্রে তাই বলে

বাক্য দিয়া বাক্য নষ্ট করি করি কি কৌশলে
।।
সর্ব্ব কার্য বিধিদাতা তোমরা ব্রাহ্মণ

হেন - বাক্য পুনঃ নাহি কর উচ্চারণ
।।
বিশেষতঃ বড়কর্ত্তা গুরুচাঁদ যিনি

এই কার্য করিবারে বলিয়াছে তিনি
।।
তাহার সন্মান যদি আমি নাহি রাখি

তিনি ভাবিবেন আমি দি'ছি তাঁরে ফাঁকি”
।।
সে মতে বিনয়ে কহি ' শুন সর্ব্বজন

হেন অনুরোধ নাহি করো কদাচন
।।
গিরিশের মুখে শুনি এমত কাহিনী

জ্বলিয়া উঠিল সব ব্রাহ্মণ বাহিনী
।। 
ক্ষুব্ধ স্বরে ব্যঙ্গ করে বলে ক্রোধ ভরে

'থাক থাক মোরা সবে চিনেছি তোমারে
।।
একে কলিকাল তাহে ব্রাহ্মণ নির্বীর্য

তাই শূদ্র হেন মতে করে কত কার্য
।।
জানি জানি কেন হল হিন্দুর দুর্গতি

অবহেলা করে সবে ব্রাহ্মণের জাতি
।।
দেব-দেবী সবে আজি রয়েছে নিদ্রিত

কাল নাই মোরা তাই সেজেছি পতিত
।।
হায় রে ব্রাহ্মণ জাতি! অভাগা সাজিলি

ব্রহ্ম কুলে জন্ম লয়ে কলঙ্কে মজিলি
।।
কালেতে সকল করে দেখিলাম তাই

নৈলে ব্রহ্ম-কোপে পড়ে হত সব ছাই
।। 
মনে পড়ে পিতামহ দুর্ব্বাসার কথা

যার কোপে পুড়ে যেত ঘাস-লতাপাতা
।।
সেদিন নাইরে আর কলির প্রভাবে

ব্রাহ্মণের অপমান করিতেছে সবে
।।
হায়! পিতা ভৃগু মুনি কোথায় রহিলে

সন্ততির কি দুর্দ্দশা দেখ আঁখি মেলে
।।
রাজা ছিল রামচন্দ্র গুণে সীমা নাই

ব্রাহ্মণের আজ্ঞাবহ রহিত সদাই
।।
তার রাজ্যে শুদ্র এক তপস্যা করিল

ব্রাহ্মণ করিলে আজ্ঞা মাথা কেটে নিল
।।
সে রাম অযোধ্যা নাই নাহি সেই কাল

বোঁড়া হয়ে ঢোঁড়া সেজে আছি নাগ-কাল
।।
ম্লেচ্ছে রাজ্যে বাস করি ম্লেচ্ছের আচার

ধর্ম্মাধর্ম্ম পাপ-পুণ্য কিছু নাহি আর
।।
নীচে জনে উচ্চ কথা উচ্চ কণ্ঠে কয়

ধর্ম্ম-কথা অপগণ্ডে ধার্ম্মিকে শিখায়
।।
ধন্য! বসু মহাশয়! মান্যবান অতি

তব ঠাঁই শিখিলাম কিছু ধর্ম্ম-নীতি
।।
ধর্ম্ম সব গেছে আজি যুক্তির ভিতর

শাস্ত্র-বাক্য ভাবে সবে সকলি অসার
।।
তুমি বল বাক্য দিয়ে বাক্য নষ্ট করা

ধার্ম্মিকের পক্ষে নাকি নহে এই ধারা
।।
কিন্তু মহাশয় বল কোন নীতি বলে

কুরুক্ষেত্রে যুধিষ্ঠির মিথ্যা কথা বলে
।।
কোন নীতি বলে বল জয়দ্রথ ম'?
সে সব কি ধর্ম্মনীতি অনুসারে হল ?
আর জান পঞ্চ বাণ ভীষ্ম রাখে সেরে

অর্জ্জুন আনিল বান বল কি প্রকারে ?
ছলে বলে কি কৌশলে শত্রু-নাশ হ'লে

তা'তে পাপ নাহি স্পর্শে শাস্ত্রে এই বলে
।।
আর দেখ অধিকারী - ভেদে কর্ম্ম আছে

আদি শাস্ত্র রামায়নে সে কথা লিখেছে
।।


 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free