গান নং ৮৪-৯৪
৮৪ নং গানঃ তাল-একতালা
দয়াময় সাধন ভজন জানব কত, সাধন ভজন জানব কত
হলেম না কাজের কাজী কোন কাজেই, সব দেখি ভোজ বাজীর মত।
মিছে সব শাস্ত্র জানা, আসল পথ ঠিক হল না,
যে জন যার উপাসনা, সেই বলে তার মত।
শুনি, নানা মুনি শাস্ত্র বকে, বনপর্ব ভারত থেকে,
কঃ প্রস্থঃ প্রশ্ন বকে, ধর্ম বকে ধর্মসুত।
শিব ভজে শৈব যারা, শাক্ত কয় কালী তারা,
সূর্য কয় সৌর যারা, গণেশ কয় গাণপত্য।
জপে কৃষ্ণ মন্ত্র জোলা নকিম, তোর কৃষ্ণ বীজ নামাজের করিম,
শক্তি বীজ করিম রহিম, অসীম মতের মূল এক পথ।
নাস্তিকে কয় নিরাকার, ধর্ম কহ ঠিক মানি কার,
মূল ব্রহ্ম কে কার কে কার, যে যার যে যার আত্ম।
তোমায় খৃষ্টে বলে কই যীশুজী, বৌদ্ধ বলে বৌদ্ধ ভজি,
তোরে কয় বদর গাজী, মাল্লা মাঝি নেয়ে যত।
এক ব্রহ্ম নয় অভিন্ন, ভিন্ন ভেদ ভক্তের জন্য,
শ্যামা শ্যাম শিব অভিন্ন, গণেশ আদিত্য।
তোমায় সাধন করে যে সাধকে, যে ভাবে যে তোমায় ডাকে,
সেই ভাবে দয়া তাকে, হও দেখি তার বশীভূত।
হীরামনের মন ভরা, গোলকচাঁদের মনহরা,
মহানন্দ কয় আমরা, ঐ রূপের আশ্রিত।
কিসের পঞ্চ তত্ত্ব পঞ্চ ব্রহ্ম, তুই দয়াল আমার আব্রহ্ম,
তারক তার পায়না মর্ম, হয় না রূপের অনুগত।
৮৫ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
দয়াময় তোর যে দয়ার নাই তুলনা।
তোর যে দয়ার নাই তুলনা।
কি দয়া করছ ভবে সর্বজীবে দিয়াছ রূপের নিশানা।
কি দিয়া করছ বটে, দয়া তোর সর্ব ঘটে,
দেখতে পাই ঘটে ঘটে, এমন আর হবে না।
দেখি নরবপু সব একাকার, তাতে রং ভেঙ্গেছে কি চমৎকার,
ভিন্ন জীব সব একাকার, আকারে আকার মিশে না।
কি দয়া বৃক্ষ লতায়, করেছ লতায় পাতায়,
দেখলে তার একটি পাতায়, গুণের সীমা হয় না।
দয়াল করেছ যে কারিকুরি, কলায় সুরস সুখ খেজুরী,
কত রস তোর হুজুরি, কে করে তার গণনা।
ব্রহ্মাণ্ড ঘুরছে কলে, দয়াল তোর দয়া বলে,
কত ব্রহ্মাণ্ড চলে, অগণিত গণনা।
দয়াল কি খেলা জগতে খেলায়, যেমন বালকে কড়ি দান ফেলায়,
দিয়া দান কুড়িয়ে লয়, অমনি মিশায় ষোল আনা।
সব হতে দয়া ভারী, আমাকে করছ হরি,
বিষ্ঠাকীট তার মজুরী, আমা হতে হয় না।
কত খাওয়াও সুরস, পরাও সুবাস, কত সুখে করাও ঘর গৃহবাস,
গাছ তলায় করিলেও বাস, সাবাস সাধু কয় সব জনা।
যে পরিমিত কায়া, অপরিমিত দয়া,
করেছ যে দয়া এ আঁধারে ধরে না
দয়াল তোর দয়া আর রাখব কোথায়, ওরে ইচ্ছাময় তোর যে ইচ্ছা হয়,
গোঁসাই গোলক নিরাশয়, তারকের আশা গেল না।
৮৬ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
জীবের চিত্ত সন্দ গেছেরে, কাজ কি আর ও সব কথায়।
যে দিন গৌর নিত্যানন্দ, গৌড়েতে এসেছে।
সে দিন হতে আর কি জীবের চিত্ত সন্দ আছেরে।
গৌর নিতাই করে দু’ভাই পাষণ্ড দলন,
যত ধর্মস্ব পুণ্যস্ব জ্ঞানী দলে নরোত্তম রে।
আমার হরিচাঁদের আগমনে গোলকচাঁদের দম্ভে,
জীবের সাধন ভজন পৈশাচ বৃত্তি পলায় অবিলম্বে রে।
শুদ্ধ সহজ বিশুদ্ধ প্রেম পাগলের মেলায়,
তোরা হরি বলে আয় সকলে সময় বয়ে যায় রে।
প্রেমানন্দে মহানন্দ ডাকে বারে বারে,
তারক কাঁদে পড়ে পদে, গুরুচাঁদ যা করে রে।
৮৭ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
আমাদের বৈশম্পায়ন জ্বর, আটকেছে দোষের ঘরে।
হয়ে বায়ু প্রবল পিত্ত বিকল, কফ শুকায়ে বিকার ধরে।
ভাব সূর্যের নিদ্রা বেশে, কুসঙ্গ স্বপ্নদোষে,
মজ্জাগত জ্বর আটকেছে মস্তক পরে।
ঔষধ কর চিন্তামণি, বৃন্দাবন বালক আনি,
যদিও পাও সদজ্ঞানী, সৎ বৈদ্য ধরে,
দিয়ে প্রেম বিন্দু রসসিন্ধু, মধুর বিন্দু তার উপরে।
দোষ পেয়েছে ক্ষেত বৃদ্ধি, কি করে মহৌষধি,
তার উপরে ইন্দ্রিয়াদি জোগাড় করে,
আছে ঈড়া আর পিঙ্গলা, বেড়ে সুষুম্নাকে শুস্ক করে।
বলে তারক রসনা, পঞ্চরস পাচন খা না,
নামেতে ক্ষুধা বাড়ে রুচি ধরে,
আছে দশা রোগী চিরভোগী, হরিচাঁদ কি দয়া করে।
------------------ দশরথ বিশ্বাস
৮৮ নং গানঃ তাল-একতালা (প্রসাদী সুর)
আমি কেবল প্রেম ভিক্ষারী।
চাই না সুকেশা সুন্দরী নারী।
চাই না মুক্তি, চাই না ভক্তি, চাই না অট্টালিকা পুরী।
চাই না গুরুগিরি, চাই না বাবুগিরি, চাই না তুচ্ছ জমিদারী।
হব না ভুপ, চাই না সুরূপ, চাই না সুকুমার কুমারী।
যদি সে ধন যায় সন্দেহ যাতে, উদাসিনী কৌমারী।
চাই না পুণ্য, চাই না স্বর্গ, খাব অন্ন ভিক্ষা করি।
চাই না তীর্থ ভ্রমণ, যশোকীর্তন, অক্ষয় জীবন চাই না হরি।
ব্রহ্মত্ব ইন্দ্রত্ব চাই না, শিবত্ব পদ তুচ্ছ করি।
দেহ সদানন্দের আনন্দের ধন, মহানন্দের চরণতরী।
-------------- হরিবর সরকার
৮৯ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
নাম লয়ে নামল এবার নিতাই চৈতন্য।
পাষণ্ড কলির জীব করিতে ধন্য।
হরি বলে হেলে দুলে, বাহু তুলে নাচে গায়,
এসে আপনি ঈশান, নামের নিশান উড়াচ্ছে সব পাড়াগাঁয়।
কেহ সংকীর্তন গায়, কেহ বা তার তাল যোগায়,
করে ভক্তবৃন্দ গায় গায়, কোলাকুলি গায় গায়,
এবারে পাবে সব হতভাগায়, হয়েছে অবতীর্ণ যে জন্য।
বাজে কংস্য কাঁসি, শঙ্খ বাঁশী মৃদঙ্গ, খোল করতাল,
বাজে নাগারা টিকারা, কেহ করে করে করে তাল,
ধরে হরিনামের তাল, কেউ ধরেছে ধরাতল,
করে লম্ফঝম্ফ তাল বেতাল, ধরাতল যায় রসাতল,
দুঃখী তাপীর পরাণ শীতল, যত দিন দীন দৈন্য প্রেম শূন্য।
এল গোলক ত্যজে কাঙ্গাল, সেজে পীতবাস পরিহরি,
জীবের পারের পন্থা ছেড়া কান্থা, ডোর কৌপীন শ্রীহরি,
কেঁদে বলে শ্রীহরি, কে নিল মোর শ্রীহরি,
সদা উঠে শ্রীহরি, প্রেম অষ্ট প্রহর-ই,
ভজ সঙ্গে বিহারী, বলেছে হরি হরি,
বলেছিল নয়ন প্রহরী, কে হরিল সুবর্ণ সুবর্ণ।
মিশে হাড়ি মুচি শৌচাশুচি মোটে নাই জাতির বিচার,
ত্যজে দেশাচার জাতি কুলাচার, সবে করেছে ব্রজাচার,
করে তুচ্ছ বেদাচার, কেউ করে তা ভেদাচার,
করে ব্রজের সদাচার, বেদাচার ই কদাচার,
নামে মুগ্ধ হল চরাচর, দুঃখে কাঁদ শমন চর,
হল ভব সাগর বালিচর, কাঁপে পাপী জলচর,
দেখে হরিনাম প্রচার, মুগ্ধ হয় খেচর ভূচর,
হরিচাঁদের অনুচর, হয়েছে নানা বর্ণ একান্ন।
এবার রুদ্র অংশে অবতংশে হল আপনি নাথ,
লয়ে ভক্তবৃন্দ মহানন্দ এল আপনি গোলকনাথ,
সঙ্গে গুরু জগন্নাথ অক্ষয় প্রেম ধন বিলায় নাথ,
চিনিল না হরে অনাথ, দুরাচার গণ্য জঘন্য।।
----------- হরিবর সরকার
৯০ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
তোরা কেউ নিবি নাকি রে?
আমার আউল গোঁসাইর করণ সোনার মালা।
সে যে আ’ল আ’ল পালি পালি, পাব জানে না ভোলা।
মালা যে পরেছে যে ছুয়েছে, সে হয়েছে পাগলা।
সে যে মনোসুতের গাঁথা মালা, ছিঁড়লে ঘটে জ্বালা।
মালার সৌরভে জাত মাতিল, রূপেতে উজলা।
দিসনে চোরের নৌকায় সাধুর নিশান, কাজ কি তিলক মালা।
হয়ে গুরুনিষ্ঠ কৃষ্ণ বিষ্ণু সকল ঠেলে ফেলা।
গেল বাউল মারা পল ধরা, দেখে মালার খেলা।
বড় পাগলের আহ্লাদে মহানন্দ শরীর কালা।
যদি থাকে হাউস হরে বেহুস হরিবলা।
---------------- হরিবর সরকার
৯১ নং গানঃ তাল-একতালা
করণ করে কি কাজ আছে।
দেখে সই রসরাজ, পাগলের কাজ,
করণ কারণ ধুয়ে গেছে।
শাস্ত্রে লেখা পঞ্চসতী, সবের আছে উপপতি,
তাঁদের নাম লইলে প্রাত কালে, সকল পাতক যায় গো ঘুচে।
জটিলা কুটিলা ছিল, সতীত্ব করণ করিল,
তাঁদের কৃষ্ণ ছাড়া করণ করা, ঘটে জল ঘটে না পিছে।
ব্যাভিচারী গোপীর ধর্ম, তারই মধ্যে প্রেমের জন্ম,
তাইতে প্রাপ্ত হল পরম ব্রহ্ম, মায় ঝি করণে মরেছে।
দেশ ছাড়া পাগলের করণ, করণ চায়না কেবল চায় মন,
সে যে মনোমত ধন মন্মথমোহন, মনোসুতে বাঁধা রয়েছে।
হীরামন আর গোলকচন্দ্র, তারক আর মহানন্দ,
ডেকে বলে হরিবর কিসের খবরদার, দয়া বিনে তার সকলই মিছে।
------- হরিবর সরকার
৯২ নং গানঃ তাল-একাঙ্গী
যদি কেউ হরিচাঁদ নামে দয়াল থাক এই ধরা পরে
পতিত পাবন হেতু দয়া কর এ পামরে।
নাথ! কভু না দেখি নয়নে, সাধু মুখে শুনি কানে,
ডাকিলে কাঙ্গাল জনে, তুমি দেখা দাও তারে।
হরিচাঁদ নামে কত, ভবে আছে অগণিত,
তুমি বিনে দীননাথ, আর আমি ডাকি না কারে।
ডাকি সে হরিচাঁদে, যার লাগি প্রাণ কাঁদে,
যে বেঁধে ভক্তির ফাঁদে, জন্মিলা যশোমন্তের ঘরে।
যে হরি পাপীর জন্য, ওড়াকান্দি অবতীর্ণ,
যশোমন্তের বাঞ্ছা পূর্ণ, যে রামকান্তের বরে।
রাণী কি সৌভাগ্য করেছিল, অনায়াসে গোবিন্দ পেল,
বাসুদেবে কক্ষে ছিল, গাইল মধুর স্বরে।
ভক্ত বাক্য রক্ষা হেতু, জীবে দিতে মুক্তি সেতু,
নবম বৎসর পরে, অন্নপূর্ণা মা’র উদরে।
যদি নাহি দিবে দেখা, কেন হে কাঙ্গাল সখা,
অযোগ্য দাস হরিবরে, আনিলে এ ধরা পরে।
যতদিন না দেখা পাব, আশা পথ চেয়ে রব,
ভুলিব না পিতৃভাব, তুমি যেন সন্তানরে।
যদি কহ হে নিরদয়, আমি যে তব পিতা নয়,
সম্বন্ধহীন যদি কেউ হয়, প্রাণ কাঁদে কি তার তরে।
জাগ্রত পিপাসা নয়ন, পাব বলে তব দর্শন,
কখন চাহে না দেখিতে কৃষ্ণ বিষ্ণু হরি হরে।
------------- হরিবর সরকার।
৯৩ নং গানঃ তাল-ঠুংরী
আয় কে যাবি হরিচাঁদের আনন্দ মেলায়, ভব পারের ভেলায়।
আমরা এমন ত আর দেখি নাইরে, নামে প্রেমে জগত মাতায়।
এল অদ্বৈত তারকনাথ উর্দ্ধরেতা লয়ে সীতা মায়।
এল নিত্যানন্দ মহানন্দ, অজ্ঞানান্ধে আনন্দ বিলায়।
নাচে শ্রীহরি পাল, মদন গোপাল, ধুলায় পড়ে গড়াগড়ি যায়।
মিশে রাজা প্রজা সিংহ অজা, পাগলচাঁদের আনন্দ বাড়ায়।
যত অন্ধ খোঁড়া কানা বোবা, দেখে শুনে নাচে হাসে গায়।
মেলায় গেলে পরে শ্রদ্ধা করে, অমনি তাহার ভব সাগর শুকায়।
পেয়ে চেতন গুরু, কল্পতরু, অধম হরে মায়া ঘুমে রয়।
--------- হরিবর সরকার
৯৪ নং গানঃ তাল-ঢিমেতেওট
হরি বিনোদ বেশে বিরাজ কর এসে, আমার হৃদি বৃন্দাবনে।
দশ ইন্দ্র যাগ ভঙ্গ কর, শরণ দেও চরণে।
জীবাত্মা ব্রহ্মার দর্প টায় ঘুচাও হে ঠাকুর।
নাশ অজ্ঞান বকপাপ অঘাসুর হে।
দশ বায়ু দশ রাখাল সনে, চিত্তগুহা গোবর্ধনে,
নববিধ ভক্তি ধেনুগণে, ভুঞ্জাও পুণ্য লতার জ্ঞান অঙ্কুর।
ত্রিতাপ দাবানল শীতল কর হে জলদ বরণ,
কর অষ্টপাশ কানন দলন, গোপাল গোচারণে।
পুণ্য তলায় ফল বর্গ ফল, টায় সুকৃতি ফল,
তাহে মুক্তি কুসুম পঞ্চদল হে।
আত্মারাম রাম দাদার সাথে, সাধন বায়স চরাও তাতে,
আরও নব ধেনুর চর্বণেতে, আশা মূলসহ কর নিস্ফল।
বিষ কালিদহ কাম কালীয়ে কর দমন।
ও তার পঞ্চজন সহকারী সম্মিলনে।
হইয়ে আনন্দ শ্রীনন্দ বাজাক জয় ভেরী,
পোহাক নিরানন্দ শর্বরী হে।
হবে স্নেহ মাতা নন্দরাণী, দিবে বাৎসল্য রস নদী,
নাচ সখ্যরসে নীলমণি, দেখবে শান্ত গোল দাস্য নারী।
মেখে শ্রদ্ধা চন্দনে অনুরাগ তুলসী,
কালশশী হে! দিব তোমার ঐ চরণে।
অকাম কাম রাধা আরাধা
নিত্য কিশোরী লইয়া রাস কর রাসবিহারী হে।
ও সে সহস্রার কুঞ্জেতে গমন, কর হে শ্যাম রাধারমণ,
কর মধুর রসে মধুর মিলন, মোহন রসরাজ বেশ তাই হেরী,
আমার রাগময়ী গোঁসাই, গোলক কুঞ্জ সেবায় বাধ্য
তারকের কেবল সাধ্য নাই হে ঐ রূপ দরশনে।