মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ৭৫-৮৩

৭৫ নং গানঃ (শ্রীগৌরাঙ্গের প্রলাপ)
তাল-ঢিমেতেওট
 
নব ভাবে আজ কে মাতা’ল গৌরাঙ্গে।
 
দেখে নবীন মেঘ, ছুটিল কৃষ্ণ প্রেমের বেগ,
মনচোরা বলে ভাসে নয়ন তরঙ্গে।
 
বলে নিত্যানন্দে, ধরে দে মোর কৃষ্ণচন্দ্রে,
মনের আনন্দে রাখব তারে সঙ্গে সঙ্গে।
 
তাল-রাণেট
ওরে সখীরে!
ঐ যে নীলাম্বর পরে, ধরে দে মোর পীতাম্বর রে
না দেখে শ্যাম জলধরে, নয়নে না জল ধরে রে
(আমায় ধরে দে ধরে দে দেরে সই)
 
ওরে সখীরে!
আমি বহু দিন তার অদর্শনে, জ্বলি বিচ্ছেদ হুতাশনে রে,
আমি যাই শ্যামের অন্বেষণে, পড়েছিলাম ধরাসনে রে,
দেখে চিত্ত কি ধৈর্য ধরে।
 
ওরে সখীরে!
আমি নয়ন দিয়ে কালরূপে, পড়েছি কলঙ্ক কূপে রে,
এখন সবে তুচ্ছ কথায় তুলে, দ্বন্দ্ব ছলে মন্দ বলে রে,
যাই না কার কাছে লজ্জা ডরে।।
 
ওরে সখীরে!
ঐ যে বিজলী বসন পরা, দাঁড়িয়েছে মনচোরা রে,
ধরা দিবে না ভেবেছেন মনে, গিয়েছেন দূর গগনে রে,
তবে কাজ কি আমার কলেবরে।
 
ওরে সখীরে!
ঐ যে লইয়া ময়ূরের পাখা, উড়ে যায় ত্রিভঙ্গ বাঁকা,
সখী! কালা জল খেলার ছলে, বসন ভিজাল জলে রে,
কেন অসময় চাতুরী করে।
 
ওরে সখীরে!
আমি পূর্বেতে নিত্য তুচ্ছ মনে, কাঁদিয়েছি ভগবানে রে,
বুঝি সেই অপরাধে, রাধে ত্যজিল হরি পরিবাদে রে,
আমি যাব এখন কোথাকারে।।
(মনের দুঃখ আর বলব কারে)
 
তাল-একতালা
যেমন মলিনা মুখী চাতকিনী পাখী, জলদ বান্ধব বিনে।
যেন না হেরী চন্দ্রিমা বদনে, কালিমা চকোরিনী দিশিদিনে।
 
সখী আছে তেম্নি ধারা, বিনে মনচোরা,
সদা ঝরে দুটি আঁখি।
দিলে যে জ্বালা কেশব, সহেছি সে সব,
আর কি আছে বাকী।
 
সখী! যে বাঁশির স্বরে, মনোপ্রাণ হরে,
ভুলা’ত কুল কামিনী।
ঐ শুনলো সঙ্গিনী, সে বাঁশির ধ্বনি,
ঠিক যেন ব্রজের ধ্বনি।
 
সখী! দেখ দেখ চেয়ে, দাঁড়িয়ে কালীয়ে,
মাথায় মোহন চূড়া।
যেন মৃদু সমীরণে, সুধীর গমনে,
নব ঘনে করে কড়া।।
গলের বনফুল মালা, খসাইয়া কালা,
মেরেছে আমার গায়।
যেন করে নবঘন, শিলা বরিষণ,
তেম্নি লেগেছে আমায়।
 
তাল-ঝুমুরী (চলতি)
সখী! ধর ধর ধরগো আমায়।
আমার কেহ নাই কেহ নাই।
 
কালা এত নিদয় হ’ল কেন
হল কালার জ্বালায় শরীর কালা।
আমি না দেখিয়ে ছিলাম ভাল
সখী! দেখে জীবন জ্বলে গেল
আমার আর সহে না সহে না
কালার বিরহ যাতনা।
ঐ যে কালা চলে গেল
আমার জীবন লইয়া গেল।
আমি জ্বলিয়ে ম’লেম যে
আমি পুড়িয়ে ম’লেম যে
পরাণ বিরহে কি রহে
তোরা বল গো হরে কৃষ্ণ হরে
শুনি কৃষ্ণ নাম কর্ণকুহরে।
 
মিল তাল-তাল রাণেট
ওহে হরি হে
যেমন আপনার নামটি আপনি লয়ে কেঁদে বেড়াও আকুল হয়ে হে
তেম্নি রাধা প্রেম দিয়া মোরে, কাঁদাও দেশ দেশান্তরে হে।
দেহ হরি প্রেম হরিবরে, পথের ভিক্ষারী করে হে।
------------- হরিবর সরকার
 
৭৬ নং গানঃ (শ্রীগৌরাঙ্গের আক্ষেপোক্তি)
তাল-একতালা
নিতাইরে ওরে ভাই নিতাই চল যাই
ব্রজ বলে প্রাণ কাঁদেরে গুণের ভাই
কই মোর শ্রীদাম সখা! সই বিশখা রে, কোথা বিধুমুখী রাই।
 
কই রে আমার মনচোরা, কই রে আমার পীতধড়া,
খুড়া উপানন্দ পিতা নন্দ, কোথা যশোমতি মাই।
 
কোথা দাম বসুদাম সুদাম, কোথা রে, দাদা বলরাম,
নিতাই! কই কমলী, কই শ্যামলী, কোথা মোর ধবলী গাই।
 
কোথা সে চম্পক লতা, রঙ্গিণী সুচিত্রে কোথা,
পারি নে চলিতে কই ললিতে (বুঝি) কেউ আমার বলিতে নাই।
 
তাল-যৎ
বেধে প্রণয় ফাঁদে, পরাণ কাঁদে, প্রবোধ মানে না।
কেন ছলনা চল না দেখতে ব্রজ ললনা।
 
কোথা মধুবন, কোথা নিধুবন,
আমি বিধুমুখীর কুঞ্জবনে বুঝি গেলাম না।
 
আমার বন্ধু নাই, আমার বান্ধব নাই,
আমার আত্মা নাই বিনে রাই ব্রজঙ্গনা।
 
প্রাণেশ্বরী বিনে, কাঁদি নিশিদিনে,
আমার মনের দুঃখ মনে জানে, অন্যে জানে না।
 
মিল তাল-একতালা
নয়ন জলে জীবন জ্বলে, মহানন্দ ডেকে বলে,
রাধার চরণ পদ্ম দুরারাধ্য, তা বিনে নাই হরির গতি।
 
৭৭ নং গানঃ তাল-একতালা
কাজ কি আমার মন্ত্র বীজে।
হরিচাঁদ ছবি রবির কিরণে উথলিল মধু হৃদ সরোজে।
 
যে অমৃত পিয়ে পিয়ে, রসে ডগমগ হয়ে,
গেছে আত্মারাম মাত্তা লাগিয়ে, মন সরে না গৃহ কাজে।
 
যত ছিল বৈদিক ক্রিয়া, সে ক্রিয়া হহ্ল অক্রিয়া,
ছিল অষ্টপাশে মা মহামায়া, সে মা গেছে পুত্র ত্যজে।
 
যত ছিল যাগ যজ্ঞ, সে যজ্ঞ হল অযজ্ঞ
কলৌ নাম সংকীর্তন মহাযজ্ঞ, অর্ঘ দিলাম তারই মাঝে।
 
ভক্তি মুক্তি দুই পৈশাচী, তারা হলে ভক্তি দাসী,
আমার জাত মেরেছে সর্বনাশী, বিবর্ত বিলাস খুঁজে।
 
ডেকে বলে মহানন্দ, উদয় গিরি গোলকচন্দ্র,
ও তা দেখলি নারে তারক অন্ধ, র’লি উলুকের সং সেজে।
 
৭৮ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
পাগল হতে আর আমার বাকি আছে কি।
হয়েছি পাগল আর হব কি।
হরি বলে বাহু তুলে ডাক ছাড়ে অ’দে পাগল।

নি’মে নি’তে শিবে গদা, বাসর ঘরে করে গোল,
জুটে যত জাত পাগল, সবে বলে হরি বল,
বাজায় খোল আর মাদোল, ভাব পাগল আর প্রেম পাগল,
আমি পাগল হলেম তাই দেখি, ও সখী।
 
আমার মন হয়েছে হন্যা পাগল, বিষ্ণু তৈলে কি করে,
সে মানে না গ্রহণের বেড়ী, সাই দরদী যা করে,
যে করে সে করে, পাগলে পাগল করে,
ক্ষেপা পাগল কয় আমারে, ঘরে পরে করে কি, ও সখী।
 
সাইজি যেদিন রাইজি বলে, হাই ছেড়ে কড়া নিলে,
গোপীর ভজন রাগের করণ, ঠাহর পেলেম সেই কালে,
ন’দেবাসী সকলে পাগল হল এককালে,
পাগলে পাগল দল বেঁধেছে সদলে,
ঐ দলে এই দলে, সব দলে  আমি থাকি, ও সখী।
 
উর্দ্ধরেতা গোপীর ভজন, পাগল হলেম তাই শুনে,
অটলবিহারী পাগল রসরাজ সিন্ধুপানে,
সোমরস অন্বেষণে পাগল গোপীর প্রেম ঋণে,
মরিনে বাঁচিনে কি করি তা বুঝিনি,
সেই পাগলের বিহনে, ঘরে র’তে পারিনে,
আমার কাজ কি লো কুলমানে,
আমার রাজ্য ধনে কার্য কি, ও সখী।
 
নিত্যধামে গোপীর প্রেমে, সহজ পাগল হরিচাঁদ,
সেই পাগলের জন্য হয়, উন্মত্ত পাগল গোলকচাঁদ,
কাঁদে মহানন্দ চাঁদ, কইরে আমার পাগল চাঁদ,
পাগলচাঁদ, ক্ষেপাচাঁদ, তারকচাঁদ তার জানে কি, বুঝে কি।
 
৭৯ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
পাগল নয় পাগলের আকার
কফ নয়লো সই কফ উলুর্ব্বান, জ্বর নয়লো সই জ্বরের বিকার।
 
রোগ নয় মহা-রোগে মরে, কি করবে ভৈরব কস্তরে,
চতুর্মুখের কি ধার ধারে, পঞ্চরসে নাড়ে দোষ যার।
 
তার বিচ্ছেদ বিরহ দাহ, জ্বলে মলেম অহরহ,
ছেড়ে দিলাম এ পাপ দেহ, যা থাকে কপালে আমার।
 
এসে দে গো জীবন বন্ধু, পান করি তার রসসিন্ধু,
কেউ যদি সই থাকিস বন্ধু, কর গো এ রোগের প্রতিকার।
 
লক্ষ্মী বিলাস তুচ্ছ করি, অভিলাষ বিলাস মঞ্জুরী,
হরিচাঁদের প্রেমের ডুরি, তাই দিয়ে মন বাঁধ গো আমার।
 
গোঁসাই গোলক রোগের রাজা, গুরুচাঁদ সেই রোগের ওঝা,
রোগ থাকে যার সেই ধর গে যা,
রোগ না ভোগ নাই তারকের ছার।
 
৮০ নং গানঃ তাল-কাওয়ালী
আমারে যে পাগল বলে
ভাবের পাগল যত জনা, গোলায় পড়ে ঘুরছে গোলে।
 
ভাবের পাগল রসের পাগল, ভাব দিয়া করিছে পাগল,
তোরা সবে বাঁধাসনে গোল, মিশেছি পাগলের দলে।
 
ভবের গোলে বিরক্তি লেগে, মন গেছে মন মানুষের আগে,
চিন্তা জাগে তার ভাব উদ্বেগে, মন গিয়াছে উর্দ্ধে চলে।
 
যে দিন করলেম রূপ দরশন, কেড়ে নিল ত্রিতাপ বসন,
মানি না কামাদির শাসন, লেংটার কি ভয় বাটপাড় বলে।
 
ক্ষেপা পাগলের সেরা বাতুল, আঁচার অনাচার সমতুল,
তাড়িয়ে দিছি ঐ গাঙ্গের কুল, তিলক মালা দুই মণ্ডলে।
 
কাজের পাগল মহানন্দ, গুরুচাঁদের পদারবিন্দ,
হৃদয় ধরে সদানন্দ, তারক কাঁদে ভবের কুলে।
 
৮১ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
মদ খেয়ে নি’তে মাতাল, মাতাল সংসার।
আমরা যে মদ খাই ভাই নেশা নাইরে তার।।
 
আমরা যে মদ খাই ভাই, আমরাই মাতি কেবল,
চ’তে নি’তে খায় মদ, জগতে মাতে সকল,
কেবল বলে হরিবল, সোর শব্দ গণ্ডগোল,
মদ খেয়ে সব করল পাগল, পুরুষ নারী একাকার চমৎকার।
 
বড় মদো নাড়া বুড়ো, বুড়াকালে মদ খায়,
জগার ছেলে মদ ঢালে, হাঁড়ার ছেলে খায় বিলায়,
হরিউল্লা কাজীর বেটায়, সে এসে সেই মদ খায়,
যবন বামন এক পেয়ালায়, মোটে নাই জাতির বিচার একাচার।
 
আমরা যে মদ খাই ভাই, ডাকি শ্যামা মারে,
চ’তে নি’তে খায় মদ, ডাকে যেন কারে,
কেবল বলে হরে, হরে কৃষ্ণ হরে,
হরে কৃষ্ণ হরে, মাতালের মন হরে,
ডাকে যাহারে পাই যদি তাহারে,
মিলিব দুহারে হারে মজা হারে, এত কি মদের এয়ার কি বাহার।
 
যেমন দোকানের মদ খায় নি’তে, সেই দোকানে চলরে ভাই,
যে মাতাল তেমনি মদ, না খেলে কি মজা পাই,
মদ না দিলে নি’তে ভাই, মারিব যদি নাগাল পাই,
খুন করিব বাঁচা নাই, শ্রীবাস বামনা বেটার একেবার।
 
আমার হরিচাঁদের প্রেমের মদ, ভাণ্ডারী তার গুরুচাঁদ,
উজাড়িয়া খায় মদ, হীরামন আর বদনচাঁদ,
খায় বিলায় আর বাড়ে সাধ, তারক বিন্দু না পায় তার এক ধার।
 
৮২ নং গানঃ তাল-একতালা
গৌর প্রেম লেগেছে যারে গো।
সপে গৌর পদে মন, সেই অনুশীলন, প্রেম কি ভুলিতে পারে।
 
কাজের পাগল প্রেমেতে বিভোল, কে বেঁধে রাখিবে তারে,
দারুণ শৃঙ্খলে বাঁধিল রাখিতে নারিল, শ্রীরঘুনাথ দাসেরে।
 
প্রতি দ্বারে দ্বারে রাখিয়া প্রহরী, সনাতন রাখে ঘরে,
বেঁধে রাখিতে পারে না, পারেতে ঠেকে না, কুম্ভিরিনী পার করে।
 
প্রেম যে করিল নামেতে মাতিল, ডুবিল রূপ সাগরে,
গোরাচাঁদের এমনি গুণ, কিসে তাঁর বিগুণ, কে বিঘ্ন ঘটাবে তাঁরে।
 
প্রেমরস সোহাগায় বানাগ্নি, যে জ্বালায় হেমকান্তি যে দেয় ধরে,
সে যে গলিল আপনে, বিশুদ্ধ লবণে, কাঁচা হাড়ি যেন জারে।
 
গোঁসাই গোলক সেই লক্ষ্যবানে জয়ী পাইল হরিচাঁদেরে,
ঘুচে তারকের বিষাদ, গোঁসাই গুরুচাঁদ, এবার যদি দয়া করে।
 
৮৩ নং গানঃ তাল-একতালা
মনা ভাই দেখনা চেয়ে ভবের খেলা, দেখনা চেয়ে ভবের খেলা
সে কথা কেউ ভাবিনে, হয় না মনে দিনে দিনে ডুবল বেলা।
 
অজপা বল যারে, সে মানুষ হাওয়া ভরে,
এই ঘরে বিরাজ করে, ঘর বেঁধে সাত তালা।
তাঁরে কেউ না চিনি, কেউ না দেখি, বাধ্য করে কেউ না রাখি,
পলকে দেয় রে সব ফাঁকি, শরিকি না শরিক আলা।
 
পিতৃধন মাতৃধনে, ধনী সবে সেই ধনে,
পিতৃধনে সযতনে রাখলি না মন ভোলা।
তোর মাতৃধন যত্ন যত, যদি পিতৃধনে কিছু হত,
তবে তোর হয়ে যেত, থাকত না সংসারের জ্বালা।
 
ভবের এই উল্টা বাজী, তাতে মন হচ্ছ রাজী,
হলি না কাজের কাজী, পাজি মন পাগলা।
চিনলি না অমূল্য রতন, যেন কোনদিনে তুই হবি পতন,
কর্ক্কটির গর্ভী যেমন, তাই হলি মন ফুরিয়ে গোলা।
 
 মাতৃ চার ধন বাহিরে, কত না যতন করে,
রেখেছে তাঁর উপরে, সয় না মাটি ময়লা।
কত সুখ পেয়ে যুবতীর সনে, বঞ্চিত হলি পিতৃধনে,
তাইতে তোর মাতৃধনে, নড়াবড়া দুর্বলা ধলা।
 
হরিচাঁদের চরণ ধন, সেই মোদের সর্বস্ব ধন,
গোলকচাঁদ কয় প্রেমধন, গলায় চাঁদের মালা,
চাই না মোরা আর কোন ধন, মিছে তারক কেন করিস রোদন,
কিসে তুই পাবি সে ধন, ভক্তি সাধন নাই এক তোলা।

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free