গান নং ০১৬-০৩০
১৬ নং গান- তালঃ যৎ
ভক্ত গোলকচাঁদের হুঙ্কারে শমন পলায়,
মুখে জয় হরি বল গৌর হরি বল, বলে মুখে নাম সুধায়।
১। নারিকেলবাড়ী জন্ম নিল, দৈবযোগে ব্যাধি হল,
ঠাকুরের ও সঙ্গ পেল, এসে ওড়াকান্দি গায়।
হরিচাঁদের পদে পড়ি, ধুলাতে যায় গড়াগড়ি,
তাইতে হরি কৃপা করি, ব্যধি হতে মুক্তি পায়।
২। হরিচাঁদের কৃপা পেয়ে, নামে প্রেমে মত্ত হয়ে,
হরিনামের তরী বেয়ে, ঘরে ঘরে নাম বিলায়।
মধুমতীর পশ্চিম ভাগে, গঙ্গাচর্ণার মরা গোগে,
ডাক শুনিয়া গঙ্গা জাগে, গোলোকচাঁদের মহিমায়।
৩। পাপী তাপী উদ্ধারিতে, হরি এল এ জগতে,
গোলকচাঁদ তার সাথে সাথে, প্রেম সাগরে জোয়ার দেয়।
রুদ্র মণ্ডল পাপী ছিল, তারে গিয়ে উদ্ধারিল,
বিনোদ বলে আমি কেবল, বাকী রলেম এ ধরায়।
১৭ নং গান- তালঃ একতালা
প্রেমের শিরোমণি আমার অশ্বিনী গোঁসাই,
ও সে হরি সঙ্গীত রচিয়তা, তার মত আর দেখি নাই।
১। গোলকচাঁদের দয়া ছিল, গঙ্গাচর্ণা উদয় হল রে,
ভক্তের মুখে শুনতে পাই।
পুত্র বরে তুষ্ট করে, ধন্যরে অম্বিকা মাই।
২। মহানন্দের প্রাণের দুলাল, গুরুচাঁদ সেই ভক্তের কাঙ্গাল রে,
যেন ভিন্ন ভেদ আর নাই।
গেয়ে হরিচাঁদের গুণগীতি, গুণের বলিহারি যাই।
৩। প্রেমের তনু হৃদয় খোলা, মুখে শুধু হরিবোলা রে,
যেন অন্য বোল আর নাই।
আমার হরি প্রেম সিন্ধু নীরে, ডুবিয়া রইল সদাই।
৪। বিনোদ বলে মানুষ রতন, একদিনও না করলেম যতন রে,
গেলাম না হরিভক্তের ঠাই।
আমার শেষের দিনের রইল দাবী, যেন ভক্তের চরণ পাই।
১৮ নং গান- তালঃ একতাল
লক্ষ্মীখালির গোপাল সাধুরে, ভবে তার মত কি হয়,
ও সে হরি নামের ডঙ্কা মেরে, দক্ষিণ দেশ প্রেমে মাতায়।
১। গুরুচাঁদের আদেশ নিয়ে, হরি নামে মত্ত হয়ে রে,
নয়ন জলে ভেসে যায়।
নামের জোরে হৃদ মন্দিরে, হরিচাঁদের দেখা পায়।
২। একদিন প্রসন্ন সুতারের বাড়ী, মুখে বলে হরি হরি রে,
ও সে কেন্দে বুক ভাসায়।
ভক্তের মান বাড়াতে হরি, এসে মরা দেহে পরাণ দেয়।
৩। ধন্য ধন্য গোপাল সাধু, হরি নামে পেয়ে মধু রে,
সে মধু জগতে বিলায়।
ও সে নামের বলে বিনা চাউলে, ভক্তের বাড়ী ভাত রান্ধায়।
৪। এমন ভক্ত নাই সংসারে, হরির নাম দর্প করে রে,
ও সে বনের বাঘ ফিরায়।
ও দীন বিনোদ বলে নাই কপালে, ভবে এলেম অসময়।
১৯ নং গান- তালঃ যৎ
ভক্ত দশরথের জীবন লীলা প্রেমময়।
ছিল গৌর ভক্ত শিরোমণি, দৈবযোগে ব্যাধি হয়।
১। শৌচাচারে হয়ে শুচিবাই, আসল পথের খোঁজ খবর নাই,
কেন্দে সদা ছাড়িত হাই, রোগ সারে না কোনতায়।
লোকের মুখে শুনতে পেল, ওড়াকান্দি ঠাকুর এলো,
কঠিন ব্যাধি যত ছিল, মুখের কথায় মুক্তি পায়।
২। জীর্ণ জ্বরা দেহ নিয়ে, যষ্ঠি হাতে ভর করিয়ে,
নয়ন জলে বুক ভাসায়ে, ওড়াকান্দি উদয় হয়।
যে দিন ওড়াকান্দি গেল, জ্বরের পালা সেইদিন ছিল,
হরিচাঁদের দেখা পেল, তুচ্ছ জ্বর পালায়ে যায়।
৩। ঠাকুর বলেরে দশরথ, তন্ত্রমন্ত্র জপলি কত,
তাইতে কষ্ট পেলি এত, শোন বলিরে দুরাশয়।
শৌচাচারে দিন কাটালি, তার মধ্যে তুই কি পাইলি,
জনম ভরে জল ছিটালি, সুখ হল না কোনতায়।
৪। হরিচাঁদের সে ভাব হেরি, কাঁদতে লাগল চরণ ধরি,
বলে দয়াল হরি কৃপা করি, চরণ তরী দেও আমায়।
ঠাকুর তারে চরণ দিল, সেইদিন হতে ভক্ত হল,
বিনোদ বলে আমি কেবল, বাকী রইলাম এ ধরায়।
২০ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
জীবের হল ভাগ্যদয়,
নামের তরী লয়ে হরি এলো পারঘাটায়।
১। তরীতে বোঝাই কি রতন, ও তুই বুঝলি নারে মন,
শুধু ওড়াকান্দি যাওয়া আসা করলি অকারণ।
তথায় সকাম নিষ্কাম মেলে প্রেমধন, খুঁজিয়া না দেখলে তায়।
২। আমার গোঁসাই হীরামন, আর গোলক বদন,
দশরথ মহানন্দ মৃত্যুঞ্জয় লোচন।
হয়ে তারা প্রেম মহাজন, জীবকে হরির নাম বিলায়।
৩। কলির জীব পার করতে, এলো এই অবনীতে,
দুঃখী তাপী পার করিলে আপন কৃপাতে।
অধম কার্তিক বলে ঐ তরীতে পার করিও শেষ বেলায়।
২১ নং গান- তালঃ একতালা
তুমি যদি ভব পারের নাইয়া
দীনবন্ধুরে আমি কেন রইলাম পড়িয়া।
১। ও দীনবন্ধুরে, পারের আশায় রইলাম বসে তোমার নাম শুনে
তুমি পার কর পার কর দয়াল চরণ তরী দিয়া।
২। হলেম বড় অপরাধী এই ভবে আসিয়া,
কর্মদোষে রইলাম পড়ে অভাগা বলিয়া।
৩। বন্ধু বান্ধব ছেড়ে গেল অসময় দেখিয়া,
আমি একেলা বসিয়া কান্দি কি যেন হারাইয়া।
৪। নিদানে পড়িয়া ডাকি দুঃখের হাই ছাড়িয়া,
অধম বিনোদ বলে নিদান কালে পার কর আসিয়া।
২২ নং গান- তালঃ ঠুংরী
হরিচাঁদ বলিয়া ডাকে গুরুচাঁদ বলিয়া ডাকে রে,
ও সে তার কিসের ভয় আছে দুনিয়ায়,
ও সে খায় না তারে বনের বাঘে, দেখে চোখের জল ফেলায়।
১। তাহার প্রমাণ আছে আমার ভক্ত হরিপাল,
গহন বনে বাঘকে দেখে ফেলায় চোখের জল,
তারে দেখা দিয়ে দীনের দয়াল, বাঘের হাতে প্রাণ বাঁচায়।
২। হরি প্রেম সিন্ধু পারে হীরামন ছিল,
কৃপা করে হরি তারে শ্রীচরণ দিল,
মরা দেহে পরাণ পেল, হরিচাঁদের করুণায়।
৩। হরি বলে কেন্দেছিল তারকচাঁদ সরকার,
হরি তারে দেখা দিল এসে মাথার পর,
শেষে প্রেম সাগরে খেলায় সাঁতার, নয়ন জলে ভেসে যায়।
৪। ভক্ত যারা তরে গেল ঐ নামের বলে,
আমি কেবল রইলাম পড়ে এ ভবের কুলে,
ও তাই কেঁদে কেঁদে বিনোদ বলে, কি হবে আমার উপায়।
২৩ নং গান- তালঃ ঠুংরী
যত বদ্ধ জীবের লাগিয়া, যত দুঃখী তাপী লাগিয়া,
আমার সোনার মানুষ এল ধরায়,
লয়ে ভক্তবৃন্দ দ্বাদশ রাখাল ওড়াকান্দি উদয় হয়।
১। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী শুভ লগন পেয়ে,
জনম লভিল হরি নামের তরী লয়ে,
শেষে প্রেমের বাজার মিলাইয়া, ভব পারের মন্ত্র দেয়।
২। প্রেমের মূরতি খানি হেরিলে নয়নে,
ভব বন্ধন ঘোঁচে জীবের ঐ রূপ দরশনে,
ও তার ভয় থাকে না শেষের দিনে, ভব নদীর পারঘাটায়।
৩। নিজে হরি বোলায় হরি প্রেমে মাতিয়া,
জগতবাসী আকুল হল সে ভাব দেখিয়া,
তারা নামের ডঙ্কা বাজাইয়া, মুখে হরির নাম সুধায়।
৪। বিনোদ বলে জগতবাসী সবাই গেল তরে,
আমি কেবল রইলাম পড়ে এ দুনিয়া পরে,
আমি কেমনে যাব ভব পারে, বান্ধব নাই দুনিয়ায়।
২৪ নং গান- তালঃ ঠুংরী
তোমরা হরিচাঁদের ভক্ত যারা রে চরণ ধুলি দেও আমায়।
আমার তাপিত অঙ্গ শীতল করি গড়াগড়ি দিয়া পায়।
১। না জানি কোন অপরাধে, কত পাপ করেছি পদে রে,
ভুলে মায়ারই খেলায়।
আমার এ পাপ দেহ ধন্য করি, চরণ ধুলি মেখে গায়।
২। কেউ বুঝল না মনের ব্যাথা, তাপিত প্রাণ কোথা রে,
মলেম ত্রিতাপ জ্বালায়।
আমার ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াইল ভক্তের চরণ ছায়ায়।
৩। দিনের দিনে ডুবল বেলা, ফুরাল মোর ভবের খেলা রে,
আমার কি হবে উপায়।
আমায় ধুলি দিয়ে দাও পাঠায়ে, পুনঃ না আসি ধরায়।
৪। ভবের পরে ঘুরি একা, না পেলাম তাই তারই দেখা রে,
জনম গেল রে বৃথায়।
এ দীন বিনোদ ভাসে নয়ন জলে ভক্তের চরণ আশায়।
(ঝুমুর)
৫। চরণ ধুলি দাও আমারে, যত হরি ভক্ত কৃপা করে,
চরণ ধুলি মাথায় করি, মুখে বলব হরি হরি।
২৫ নং গান- তালঃ খেমটা
দীনের দরদিয়া রে দুর্দিনে দেখা দিও আমারে,
ভবে আমার মত কপাল পোড়া কেহ নাই এ সংসারে।
১। মনে বড় আশায় ছিল তোমার চরণ পাব,
শ্রীচরণ পরশে আমার তাপিত প্রাণ জুড়াব,
আমার হৃদয় মাঝারে বসাইব, পেয়ে দয়াল তোমারে।
২। বিষয় পশার দিয়ে আমায় রেখেছ ভুলায়ে,
ভুলের ফুলের মধু পানে আছি মত্ত হয়ে,
দয়াল তুমি আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে নিও ভব পারে রে।
৩। দিন ফুরালে দিও দেখা ভব পার ঘাটায়,
কৃপা করে নিও দয়াল তোমার ঐ নৌকায়,
তুমি পার করিয়া দিও আমায়, এ জনমের তরে রে।
৪। এ জীবনে ভাবি শুধু শেষের দিনের কথা,
তোমা বিনা কারে জানাই তাপিত প্রাণের ব্যাথা,
অধম বিনোদ বলে জনম বৃথা মায়ায় ফাঁসী পরে রে।
২৬ নং গান- তালঃ ঠুংরী
তোমার লাগিয়ারে হরিচাঁদ, ঝরে না দুটি আঁখি,
আমি কাল পাষণ্ড ভবার্ণবে, আমার মত নাই পাতকী।
১। মায়াময় সংসারে এসে, মায়ায় ঢেকে থাকি,
আমি অন্ধকারে ঘুরে মরি, আমার আর কত দিন আছে বাকী।
২। পুত্র কন্যা আমার বলে, মায়াতে ঘিরে রাখি,
কবে মায়ার বাঁধন যাবে ছিঁড়ে, সেদিন আমার হবে নাকি।
৩। কবে তুমি দিবে দেখা, কিভাবে কি তোমায় ডাকি,
আমার মনের ব্যাথা কেউ বুঝল না, এ জগতে সবই ফাঁকি।
৪। তুমি যদি আমার হতে, আমায় আজি করতে সুখী,
অধম বিনোদ বলে হরি বলে, উড়ে যায় যেন প্রাণ পাখী।
২৭ নং গান- তালঃ ঠুংরী
প্রাণ দরদিয়ারে কবে তোমার মনের মত হব,
আমার এ দেহ মন জীবন যৌবন, তোমার চরণে বিকাবো।
১। এ জগতে এসে দয়াল খুঁজে দেখতে পাই,
ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াইতে আর ত কেহ নাই।
আমার এ প্রাণের বাসনা সদাই, তোমার চরণ তলে রব।
২। বুক ভরা বেদনা নিয়ে ঘুরি এ সংসারে,
ব্যাথার ব্যাথিত পেলাম নাক এ দুনিয়ার পরে।
আমার এ পোড়া হৃদয় মাঝে রে, কবে তোমায় পাশে পাব।
৩। ছন্ন ছাড়া জীবনে মোর কি হবে গতি,
চোখের জল মুছাইয়া দিতে, কেহ নাই মোর সাথী।
এ দীন বিনোদ বলে, শেষ মিনতি তোমার চরণ পুজিব।
২৮ নং গান-তালঃ ঠুংরী
হে গুরু তোমার চরণে মতি হল না আমার,
মায়ার ঘরে ভূতের খেলা, গেল না চিত্তের আঁধার।
১। মায়া মোহ অন্ধকারে, পড়ে আছি এ সংসারে,
অশুদ্ধ কু-সংস্কারে, দূরে গেছে প্রেম আচার।
২। বিবেক বন্ধু আত্মহারা, যত রিপু প্রবল তারা,
হয়ে গেল দফা সারা, করে নিয়ে একাকার।
৩। দশ ইন্দ্রিয় ধরা পলো, ছয় জনার দলে মিশিল,
আমার মন মতি তার সঙ্গ নিল, উপায় ত দেখি না আর।
৪। বিশুদ্ধ ভাব কবে পাব, ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াইব,
বিনোদ বলে পড়ে রব, চরণ দুটি করে সার।
২৯ নং গান- তালঃ ঠুংরী
অবুঝ মন কেন বুঝে বুঝলি না,
আত্ম তত্ত্ব না বুঝে তুই হয়ে রলি দিনকানা।
১। সংসার বলিস আমার আমার, খেটে মলি ভূতের ব্যাগার,
আসা যাওয়া হয় বারে বার, কাজের কাজী হলি না।
২। মহাজনে দিল চালান, ভবের হাটে পাতলি দোকান,
বারে বারে যায় তোর লোকসান, হিসাব করে দেখলি না।
৩। কি ব্যাপারে ভবে আলি, কাঁচ ভেবে কাঞ্চন বিকালি,
মহাজনের দেনা হলি, জবাব দিতে পারবি না।
৪। বিনোদ বলে মনরে ভোলা, সার কর ঐ নামের ভেলা,
তাহলে তোর পারের বেলা, কোন চিন্তা রবে না।
৩০ নং গান- তালঃ রাণেট
সুখ হল না ওহে গুরু সাধের রাজ্যে বাস করে।
রাজ্যের মাঝে চোর ঢুকেছে, হারা হলেম মাল পত্তরে।
১। রাজ্যের রাজা যে জন ছিল,
চোর ডাকাতের পাল্লায় পড়ে সে নাকাল হল।
ও সে জ্যান্ত মরা হয়ে রল, কাহার কেবা বিচার করে।
২। ভাঙ্গা ঘরে একে নাই বেড়া,
নয়ন দরজার কপাট নাইরে, মটকা রয় ছাড়া।
ফাকা পেয়ে সেই ছয় জন চোরা, আমার সবকিছু নিয়েছে হরে।
৩। উল্টা দেশের উল্টা বিচার হয়,
চোর থুয়ে আমাকে ধরে নিল জেলখানায়।
তারা খালাস পেল ছয় জন চোরায়, আমি রইলাম কারাগারে।
৪। বিনোদ বলে রইলেম জেলখানায়,
এমন কেহ নাইরে বান্ধব, আমার পক্ষে সাক্ষী দেয়।
আমার শেষের দিনে মামলার সময়, গুরু কি যেন হয় কর্মান্তরে।