মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

মহা-মহাপ্রভুর একাদশ আজ্ঞাঃ (গদ্য)

মহা-মহাপ্রভুর একাদশ আজ্ঞাঃ

দৈনিক প্রার্থনা কর।

প্রার্থনা অর্থাৎ যাঞা করা, কোন কিছু চাওয়া। প্রতিদিনই কাহারও নিকট কোন বস্তু বা কিছু যাঞা করা তাহার নাম দৈনিক প্রার্থনা। নিত্যই কোন ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা কি উচিৎ? তাহা হইলে তিনি বিরক্ত হইবেন। অতএব তাহা চাওয়া উচিৎ নহে। তবে এক কথা যে, নিত্যই কোন কিছু চাহিলে যিনি বিরক্ত না হইয়া বরং সন্তুষ্ট হন, এমন যদি কেহ থাকেন তবে তাঁহাকেই খুঁজিয়া লও। এমন ত সংসারে খুঁজিলে মিল না, তবে কাহার নিকট প্রার্থনা করিব? এমন কোন ব্যক্তির অন্বেষণ কর, যিনি না চাহিতেই যাচিয়া সাধিয়া সকলকে প্রার্থনাধিক বস্তু দান করিতেছেন। এমন কেহ কি আছেন? আছেন বৈকি। যিনি না চাহিতে মাতৃস্তনে জন্মের পূর্বে সুধা পুরিয়া রাখিয়াছেন, যিনি না চাহিতে চন্দ্র, সূর্য দ্বারা দীপ্তি এবং আমাদের আহার্য শস্যাদি দান করিতেছেন। যিনি না চাহিতে স্নিগ্ধ সমীরণ দ্বারা আমাদের জীবন রক্ষা করিতেছেন। যিনি না চাহিতে সুশীতল পানীয় জল সৃষ্টি করিয়া আমাদের পিপাসা নিবারণ করিতেছেন, যিনি না চাহিতে অগ্নি সৃষ্টি করিয়া আমাদের প্রয়োজনে সিদ্ধ করিতেছেন। যিনি না চাহিতে পৃথিবী সৃষ্টি করিয়া আমাদের মাতৃসমা করিয়া রাখিয়াছেন। তাহার নিকট প্রার্থনা কর। যিনি আমাদের জন্য ধান্য, চাউল, পায়েস, পিষ্টক প্রভৃতি, যিনি আমাদের জন্য খর্জ্জুরের রস এবং ইক্ষুর রস দ্বারা নানাবিধ সুখাদ্য সন্দেশ, রসগোল্লা প্রভৃতি, যিনি আমাদের জন্য কমলা, কুল, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, শ্রীফল আঙ্গুর বেদানা অসংখ্য সুরসাল ফল তৈয়ারী করিয়া রাখিয়াছেন, তাহার নিজের জন্য নয়, আমাদের জন্য। তাহার নিজের খাইবার জন্য নয়, আমাদের খাইবার জন্য। এমন দয়াময়ের নিকট প্রার্থনা কর, অবশ্য অভিষ্ট পূর্ণ হইবে।

প্রথম প্রার্থনাঃ
হে সত্যময় হরি! তুমি আমাকে সত্য কথা বলিতে শক্তি দান কর।

দ্বিতীয় প্রার্থনাঃ
প্রভু! তুমি আমাকে এমন চক্ষু দান কর যাহা দ্বারা আমি জগতের সমস্ত নারীদিগকে মাতৃজ্ঞানে দর্শন করিতে পারি।

তৃতীয় প্রার্থনাঃ
হে জগৎ পিতাঃ তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর, যাহাতে আমি মাতা পিতাকে ভক্তি করিতে পারি।

চতুর্থ প্রার্থনাঃ
হে জগন্ময় জগন্নাথ! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি জগতের সকল জীবকে প্রেম করিতে পারি।

পঞ্চম প্রার্থনাঃ
হে জগদীশ্বর! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে চরিত্রবান ব্যক্তিকে জাতিভেদ দ্বারা অমান্য না করি।

ষষ্ঠ প্রার্থনাঃ
হে হৃষিকেশ! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি দেহস্থিত ষড়রিপুর নিকট সাবধান থাকিতে পারি।

সপ্তম প্রার্থনাঃ
হে সর্বময়! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি (সর্বধর্মের পরিব্রাজক রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মুহম্মদ (সঃ), গৌরাঙ্গ প্রভৃতির) কাহারও ধর্মকে নিন্দা না করি।

অষ্টম প্রার্থনাঃ
হে অকপট হৃদয়, সরলাত্মন হরি! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি বাহ্যিক সাধুভাব ত্যাগ করিয়া আত্মা দিয়া তোমাকে ডাকিতে পারি।

নবম প্রার্থনাঃ
হে নামরূপী কর্মময় হরি! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি কর্মে ব্যাপৃত থাকিয়াও মনে মুখে তোমার নাম করিতে পারি।

দশম প্রার্থনাঃ
হে সর্বান্তর্যামীন্ আত্মাময় হরি! তুমি আমাকে এই শক্তি দান কর যাহাতে আমি তোমাকে আত্মদান করিতে পারি, যদি আমার কলুষিত আত্মা তোমাকে দেওয়ার উপযুক্ত না হইয়া থাকে তবে যাহাতে তোমাকে দেওয়ার উপযুক্ত হয়, তুমি এইরূপ করিয়া গড়িয়া লেখা লও। যেন আমার কর্মী তোমার কর্মী হয়। যেন আমার চাহনি তোমার মতো সরল ও অকুটিল হয়। আমার কর্মী যেন তোমার গুণাবলী আকর্ষণ করে। আমার নাসিকা যেন তোমার ন্যায় সদা সৎ গন্ধে সুখ শান্তি ও আনন্দ লাভ করে। আমার রসনা যেন তোমার লীলামৃত কথনে অনুব্রত অনুরক্ত থাকে। আমরা ত্বক যেন কোন স্পর্শমাত্র তোমার স্পর্শ অনুভব করে। আমার পদদ্বয় যেন তোমার শ্রীপাদ পদ্ম দর্শনার্থে চক্ষুদ্বয়ের সাহায্য করিয়া শ্রীশ্রীধাম গমন করে। আমার সর্বাঙ্গ যেন তন্ময় হইয়া তোমার প্রেম সাগরে ডুবিয়া থাকে।

একাদশ প্রার্থনাঃ
হে শ্রীহরি! আমি যেন 'শ্রীশ্রীহরি মন্দির' প্রতিষ্ঠা করিতে পারি এবং তদুপযোগী সেবাকার্যে নিযুক্ত থাকিতে পারি। আমি যেন আমিত্বহীন হইয়া শ্রীমন্দিরের সেবক হইতে পারি। হে হরি! আমি যেন প্রাতঃ, মধ্যাহ্ন এবং সন্ধ্যা, এই ত্রিসন্ধ্যা তোমার মন্দিরের নিকট নাম সংকীর্তন করতঃ মন্দির প্রদক্ষিণ করিয়া তোমাকে সাষ্টাঙ্গে দণ্ডবৎ করিতে পারি। সে হরি! আমি স্বপরিবারে যেন তোমার চিরদাস থাকিতে পারি। হে হরি! ভবিষ্যতে যাহারা আমার এই বংশে জন্মগ্রহণ করিবে, তাহারা যেন তোমার শ্রীমন্দিরের সেবক হইয়া অতুল্য প্রেম শান্তি লাভ করে। হে হরি! আমার ঐকান্তিক বাসনা, যেন জগৎবাসী সকলে তোমার বিশুদ্ধ প্রেমভাগী হইয়া শ্রীমন্দিরের নিকট নতশিরে প্রণত থাকে।

দ্বাদশ প্রার্থনাঃ
হে হরি আত্মান্তর্যামিন্! মনে বড় আশা তোমাকে আত্মদান করিব, তুমি দেহের মালিক হও এবং তোমার প্রার্থনা তুমি কর। তোমার প্রার্থনা তুমি না করিলে আমি কি করিয়া করিব? এই দৈনিক প্রার্থনা যেন আমার পরিবারস্থ সকলে তোমাকে অর্পণ করে এবং তুমি তাহাদের হৃদয় থেকে এই প্রার্থনা করিও। তোমার দ্বাদশ আজ্ঞা তুমিই প্রতিপালন করিও। দৈহিক ইন্দ্রিয় প্রাবল্য এবং দুঃখ হেতু যেন তোমার কার্যে ভুল না করি।

আমার এই দ্বাদশ প্রার্থনা এবং দেহ, মন, প্রাণ তোমাকে অর্পণ করিতে যে অযোগ্য দুরাশা করিয়াছি, হে বাঞ্ছাকল্পতরু, তুমি গ্রহণ এবং পূর্ণ কর।
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free