গান নংঃ ৭৬-৯৫
লোকশিক্ষা
রাগিনী-বিরোলা
৭৬। তাল-কাণ্ডয়ালী
এই হরি নাম মহামন্ত্র সর্ব্ব যুগের সার,
হাতে কাম মুখে হরিনাম লওরে বারে বার।
ছাড় অসৎসঙ্গ কু-কথা বারে বার।
সত্য বাক্য মনকে সূক্ষণ, রাখ মন আমার।।
১। ডঙ্কা, সিঙ্গা, ঝাজ, ঢোল, কাশী লও ধরি,
উচ্চস্বরে ব্যক্ত ক’রে, বল হরি হরি।
গোলকে গোপনে ছিল, কলিতে নাম ব্যক্ত হল,
মন সাধ মিটাইয়ে নেও, পুরিয়া উদর।।
২। বহু শাস্ত্রিক বক্ত যারা, তাদের এই রীতি,
তর্ক দিয়ে জয়ী হইবে, মনের এই গতি।
বৃথা তর্ক ছেড়ে দেও, পরের সম্বল করে লও,
পারের বেলা ঘটবে জ্বালা, গতি কে তোমার।।
৩। শাস্ত্র গ্রন্থ লোক বুঝান, দৃষ্টান্ত প্রমাণ,
উহাতে কখনও পাওয়া যায় না ভগবান।
মন প্রাণ দিয়ে তাঁহারে, নয়ন রেখে এক নেহারে,
যুদ্ধের বেশে, রূপের দেশে, করগে সময়।।
৪। প্রেমিক গুরুর হুকুম নিয়ে, যেও সমরে,
যুদ্ধে অগ্রসর হইও, অতি হুসিয়ারে
সদা রেখ উর্দ্ধ নয়ন, পলক মারিও না কখন,
জুড়িও ঐ রূপের বাণ, জ্ঞান ধনুক উপর।।
৫। অনুরাগ সৈন্যকে নিয়ে, রণে দেও হানা,
কাম দ্রোনকে বধ আগে, দুষ্ট সেইজনা।
আদিত্য কয় শুনরে দীনা, শ্রী হরি নাম ভুলিও না,
হরি গোসাইর উপাসনা, ছাড়িও না আর।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-বিরোলঅ
৭৭। তাল-কান্ডয়ালী
যদি পারের আশা কর ও সুজন মনা;
সকালে ধরিও পাড়ি-বসে থেক না।
সদা বল হরি হরি, দু’হাতে হাইল ধরি
শ্রদ্ধা মাস্তুলে দিয়ে, বিবেকের টানা।।
১। ভক্তি বাদাম তুলে দিয়ে, আনন্দ প্রাণে,
প্রেম বায়ুতে খাটাইও, অনুসন্ধানে।
যখন উঠবে ভাবের তুফান, ঢেউ খেলিও হয়ে মগন,
আনন্দ পাবি সর্বক্ষণ, পূরিবে সব কামনা।।
২। কু-মতির ঐ কু-পবন, যদি উথলে,
উল্টা বেয়ে যেও তরী, রাখিও তায় নঙ্গর করি,
মুখে বল হরি হরি, পবনের ভয় রবে না।।
৩। ভোর বেলা ধরিলে পাড়ি, শঙ্কা নাই তাহার,
অনায়াসে উঠে পাড়ি, হয়ে যায় সে পার।
শেষ বেলা ধরিলে পাড়ি, দিবা শেষে বেড়ায় ঘুরি,
অন্ধকারে ডুবায় তরী, দুর্ভোগে মরে সেই জনা।।
৪। প্রহ্লাদ দিয়ৈছিল পাড়ি, অতি সকালে,
মহাসুখে পার হ’য়ে যায়, হরি বল বলে।
প্রহ্লাদ চারি ভাইর কনিষ্ঠ, কর্ম্ম গুণে সর্বশ্রেষ্ঠ।
ত্রি-ভূবনে নাম উৎকৃষ্ট, রল তাহার ঘোষণা।।
৫। আদিত্য কয় দিনে দিনে, দিন ফুরায়ে যায়,
সুখ শয্যায় ঘুমিয়ে রলি, পারের কি উপায়।
হরি গোসাই কয় পারের বেলা,
ঘটবেরে তোর বিষম জ্বালা,
পাড়ি ধর এই ভোর বেলা, পারে যদি যাওরে দীনা।।
রাগিনী-মহসালা
৭৮। তাল-ঝুলুন
এমন সুমধুর হরিনাম নিয়ে একবার দেখনা।
উদর ভরি নিলে পরে, অরুচি কখন হবেনা।।
১। যে পেয়েছে নামের মর্ম্ম, করতে চায় সে হরির কর্ম্ম।
চিনে নিয়ে হরি ব্রহ্ম, হৃদয় করে নাম জপনা।।
২। পেল মর্ম্ম পাগলঅ ভোলঅ, খেলে সদা নামের খেলা।
তাড়িয়ে দিয়ে ভরের জ্বালা, শ্মশানেতে দিচ্ছে হানা।।
৩। পঞ্চাননে পঞ্চমুখে, জপে ঐ নাম পরম সুখে।
ব্রহ্মাজপে চর্তুমুখে, জপে নারদ নিয়ে বীন।।
৪। আদিত্য কয় দীনবন্ধু, পার হও যদি ভব সিন্ধু।
হরি গোসাই পারের বন্ধু, সদা করিস তাই ধারণা
রাগিনী-হেলারি
৭৯। তাল-ঝাপ
এল সোনার মানুষ ওড়াকান্দী
কে দেখবি ত্বরায় চলে আয়।
মানুষ দেখলে জুড়ায়, তাপিত জীবন,
প্রেম হিল্লোলে মন গলিয়ে যায়।।
১। যদি সেই মানুষ ধরতে চাও, মুখে হরি গুনগান গাও
নিরীখ ধরে সদা রও সেই মানুষ পানে,
এবার কামের ঘরে কপাট মেরে, নামের হুঙ্কার ছাড় সদায়।।
২। সেই মানুষ শান্তিপুরে, শান্তি মায়ের স্নেহাগারে
গেলে পরে দেখবি তারে, জুড়ারি জীবন।
তবে প্রেমানন্দে কাল কাটাবি,
দেখতে পাকি ঐরুপ সদায়।।
৩। সেই মানুষ ধরা বিষম দায়, শান্তিপুরে থাকে সদায়,
ধরতে গেলে ছুটিয়ে পালায়।
তুই কেমন করে ধরবি তারে, উল্টাকলে চলে সদায়।।
৪। (দয়াল) হরি গোসাইর দয়াবানী,
করলে গুরুর করন জানি,
পাবি সেই মানুষের দরশন।
বোকা দীনারে তুই, করলি না করন,
মানুষ মিলবে কোন গুনের দায়।।
রাগিনী-গুজরাটিয়া
৮০। তাল-আদ্ধা
এল কলির শেষে পাগল বেশে,
এল পাগল হরিচাঁন।
আমার হরিচাঁদের প্রেম বাজারে,
যেতে পারে হয় যার একমন।।
১। হরিচাঁদের নির্ম্মল করন, যার মন করেছে হরন,
তার কি ঘরে থাকে প্রাণ।
ও সে ঘরের বাহির, হয়ে গিয়াছে, ত্যাজ্য করে সব কুলমান।।
২। হরিচাঁদের ঐ রূপ বরন, দেখলে জুড়ায় তাপিত জীবন,
এমন রূপ কেউ দেখনাই।
ঐ রূপ দেখবি যদি নিরবধি, হরিচাঁদ বলে সদা কান।।
৩। কর গুরুচাঁদের করন, সে হয় প্রেমের মহাজন,
ডেকে বলে কে নিবি আয়।
বলে কে নিবি কে নিবি তোরা, ধর বলে যাচে প্রেমধন।।
৪। হরি গোসাই পেয়ে প্রেমধন, জগতে করলেন বিতরণ।
মাতাইল এ ত্রিভূবন।
ও সে মাতাইল পুরুষ নারী, মাতৃলনা দীনবন্ধুর মন।।
মনশিক্ষা
রাগিনী-ঘুগুট
৮১। তাল-আড়া
আমার মন পাখীতে বুঝ মানে না উপায় কি করি।
আমি দিবানিশি বুঝাই তারে রে মন,
পাখীর নয়নে ঝরে না বারি।।
১। পাখী আনন্দ হৃদি পিঞ্জরে, সপ্ত তালায় বসত করে রে
পাখী বাল ভাল আহার করে রে মন।
হরি নামে যায় না গড়াগড়ি।।
২। পাখী ঘৃত মাখন ননী খেয়ে, রল বন পানে চেয়ে রে।
আমার কি লাভ হল, পাখী পুষে রে মন,
পাখী কখন জানি যাবে উড়ি।।
৩। পাখী কেন হরি বল বলেনা, ভাবিতেছি সেই ভাবনারে।
পাখী সদা জপে কু-মন্ত্রণা রে মন,
পাখী একদিনও না বলল হরি।।
৪। পাখি হরিচাঁদের চরণ ভূলে, সর্ব্বদা কু-বুলি বলে রে।
দীনা বলে নামে পাষান গলেরে মন,
আমার মন গল্ল না জনম ভরি।।
মনশিক্ষা
রাগিনী-অরুণভেরী
৮২। তাল-ঠুংরী
শ্রী হরির ঐ কৃপা বৃক্ষে,
মন পাখী তুই পড় যেয়ে উড়ে।
যাবি খেদ শরীরে, কুতুহলে, হরিচাঁদ কৃপা নগরে।।
১। পাখী প্রেম বায়ুতে যাবি ভর করি,
ভক্তির পাখা দিয়ে ঝাকা, যাবিরে উড়ি।
বসবি দয়াডালে, সে নাম ফুলে
মধু পান কর উদর ভরে।।
২। পাখী কৃপা নগর হরির অবস্থান,
নামের মধু খাও রে শুধু, করনা গুমান।
এবার শ্রদ্ধা রাখি ও মন পাখী,
রও কৃপা বৃক্ষের উপরে।।
৩। (ডালে) আশার বেড়ি থাক জড়ায়ে,
কল্পতরু ফলের পানে, সদা রও চেয়ে।
চেয়ে রও চিরকাল, মিলবে সে ফল।
স্থান পাবি শান্তি কুটীরে।।
৪। দীনা বলে উপায় কি করি,
মন পাখীতে লয় না কথা, ঐ দুঃখে মরি।
করে কু-ভাবনা কু-পথ হানা,
হরি নামের বুলি নাহি ধরে।।
রাগিনী-ইরাহারা
৮৩। তাল-ঝাপ
মন পাখি তুই হরি বলে বাহু তুলে ডাক দেখি।
ও তুই ডাকলে পরে দেখবি তারে, জুড়াবে তোর দুই আঁখি।
১। জংলি ভাষা ত্যাজ্য করে, হরি নাম বিরাগ ভরে,
প্রেমশ্বরে ডাক পাখি।
তবে পাখি জনম যাবে কেটে, যাবি শেসে প্রেমের হাটে,
নামে ঝরবে দুই আঁখি।।
২। সদা কর জোরা মালি, হেলা করে দিন খুয়ালি,
কার আশায় হয়ে সুখী।
পাখি চিরকাল কাটালি হেলে, কাঁদবিরে তুই নদীর কুলে,
হারাবি তোর দুই আঁখি।।
৩। স্থুলের কথা ভুলে গিয়ে, কু-কর্ম্মে রলি মজিয়ে,
পারের উপায় করলি কি।
পাখি এ দেহের গৌরব ছাড়, ভব পারের সম্বল কর,
তা বিনে তো গতি কি।।
৪। এসেছ ভবে কি ধন লয়ে, কি ভাবেতে যাও চলিয়ে,
রবির সুতকে বলিবি কি।
যে দিন হস্ত পদ বন্ধন করে, নিয়ে যাবে যমের ঘরে,
কি বলে দিবি ফাঁকি।।
৫। ভবে এসে রলি বসে, কাল কাটালি রঙ্গ রসে,
এমনি দিন যাবে নাকি।
হরি গোসাই বলে কর্ম্ম ফলে, দীনা গেলি রসাতলে,
বিষয় চিন্তা গায় মাখি।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-উরুশেন
৮৪। তাল-ঝাপ
দয়া করে বল সাধু ভাই
আমি প্রেমিক গুরু কোথা পাই প্রেমিক গুরু চিনব কেমনে।
কি তার রতি মতি, ভাবের গতি হে
বল বসত করে কোন খানে।।
১। কি প্রকারে যাবে জানা, প্রেমিক গুরুর কি নিশানা,
কি আকার তার কি বেশ ভূষনে।
কেমন আঁকি তারা, রূপ চেহারা হে,
তারে ধরিব কি সন্ধানে।।
২। অধর মানুষ যে ধরেছে, যাব আমি তারি কাছে,
চিনায়ে দেও সেই গুরুধনে।
আমার এই আকিঞ্চন, করব সাধন হে,
সদা থাকিব তাঁর চরনে।।
৩। প্রেমিক গুরুর সহবাসে, থেকে আমি মন উল্লাসে
পূজব তাঁরে অতি যতনে।
আমি পেলে দেখা, সুজন সখা হে, সাধন করিব মন প্রাণে।।
৪। আদিত্যের ঐ সু-আদেশে, হরি গোসাইর কৃপাদেশে,
যাব বলে বাসনা মনে।
ভেবে দীনা বলে, চরণ তলে হে, রব এ দেহ সমর্পণে।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী – ভাটিয়াল
৮৫। তাল – ঝাপ
কত গুনে এঘরখানি গড়েছিল কোন গুণমনি,
ও সে কোথা থাকে কেউ না দেখে,
কার কাছে শুনিব বাণী।।
১। তাঁহার গুণের কথা বলিব কত,
সেই ঘরের ভিতরে কল, করেছে যত।
ও তার জোড়ায় জোড়ায় কব্জা এটে,
বসাল কল সে সন্ধানী।।
২। চিনিনা চিনিয়ে দেও তারে,
কোথায় তাহার হয় উৎপত্তি, কি নামটি ধরে।
আমি কেমন করে ধরব তারে, কোথায় রয় সে গুণমণি।
৩। সেই ঘরেতে আছে আট কোঠা,
না জানি তার নয়দরজা, কি ভাবে আটা।
আরও কোথায় বা তার মটিকোঠা,
কোথায় রেখেছে প্রেম রতœ খানি।।
৪। (ঘরে) চৌষট্টি জন কার নাম কি ধরে,
কার কোন খানে হয় বসতি, বলে দেও মোরে।
ভেবে দীনা বলে, কি কৌশলে,
পাব হরি গোসাইর দয়া কণি।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-মেনলোহই
৮৬। তাল-কান্ডয়ালি
তুই করলি না তোর দেহের নিরুপণ।
হারাইলি আত্ম তত্ত্ব, পরমার্থ গুরুতত্ত্ব পরম ধন।।
১। নয়টি জেলায় দেহরাজ্য, পেয়াদা, মৃধা পঞ্চ বাধ্য,
ছয় জনেতে তহশীলদারী, করেন গ্রাহ্য।
নবীন রাজা নামটি ধরি, বসে আছে অন্তপুরি,
ঘুমের ঘরে কপাট মারি, আছে মুমেতে অচেতন।।
২। ছয় জনে ছয় তহশলি নিয়ে, ভ্রমে জিলা মোকাম মিয়ে
তহশলি করে সন্ধ্যানেতে, অতি গোপনে।
তহশীলের মাল করে চুরি, তিলেক মাত্র হয়না দেরি
সহরিয়া চোর সন্ধান ভারি, দিক ভুলায়ে করে হরণ।
৩। তাতে তিন মহকুমা চারটি থানা, লোভি কামুক যেতে মানা
গেলে পরে ঘটে যন্ত্রনা, সেই রাগ দরবারে।
স্থুল, প্রবর্ত্ত, সাধক, সিদ্ধি, চার থানার চার নিয়ম বুদ্ধি
হাকিম হয় তার সর্ব্ব সিদ্ধি, হুজুরে হয় বিচার পতন।
৪। মেরুদন্ডের দক্ষিণভাগে, পিঙ্গলা নাড়ী বিরাজ করে,
মধ্যেতে সুষুুা থাকে, ইড়া নাড়ীর যোগে।
রাজার হল এই তিন নারী, চলে তারা দ্রুত ভারী,
কফ, পিত্ত, বায়ু লয়ে চলেতেছে, সেই নারী তিন জন।।
৫। ইড়া, সুষুুা, পিঙ্গলা, সত্ত্ব, রজ, তম গুনে করে খেলা,
যে দিন তারা হয় উতলা, জীবের সারা দায়।
ভেবে বলে হরি গোসাই, দীনবন্ধু তোর রক্ষা নই,
হারাইলি আত্ম তত্ত্ব, চিনলি না সেই ড়গুরু কি ধন।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-জয় জিয়ালই
৮৭। তাল-কহরাবা
রিপুর পীড়নে-
সারা জীবন যায় অকারন তত্ত্ব না জেনে,
আমি না জানিলেম গুরু তত্ত্ব, দেহে কে রয় কোন খানে।।
১। চতুর্দ্দল হয় কোনখানেতে, বসতি কাহার,
বল গুরু দয়া করে, ধরে কোন আকার।
সে কি কাজের হয় অধিপতি, কি কাজ করে সে জানে।।
২। ষড়দলটি কোন খানেতে, বল সেই বাণী,
সেই পদ্মেতে বসত করে, কোন গুণমনি।
তাহার কি আকৃতি, না পাই স্থিতি,
কি কাজ তার ভার বহনে।।
৩। দশম দল আর দ্বাদশদলে, থাকে কোন কোন জন,
কার কি বর্ণ, কি কার কর্ম্ম, বলে দেও এখন।
আরও কোনখানে ঘোড়শদল দ্বিদল,
কোখানে থাকে কোন জনে।।
৪। সবার স্বরূপ কি কাহার রূপ, তাহা শুন্তে চাই,
কি কার্য কার হয় অধিকার, বল হে গোসাই।
হরি গোসাই এবার তত্ত্ব জানবার, বাসনা দীনার মনে।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-জয় জিয়ালই
৮৮। তাল-কহরাবা
তত্ত্ব বলব কিরে তায়
গুহ্যমূলে চতুর্দ্দলে জীবাত্মা সে রয়।
তার আকার হল রক্ত বর্ণ, ভার বহন তার জল কাজ হয়।।
১। আরও শুন বলিরে তাই, তত্ত্বের বাণী,
ভূতাত্মা সে লিঙ্গ মুলে শাস্ত্রেতে জানি।
আছে হরিতাল বর্ণ তাহার, ষড়দলে রয় সদায়।।
২। পরম আত্মা নাভিতে রয়, দশম দলেতে,
আকার হয় তার বিদ্যুৎ বর্ণ, কর্ম্ম বায়ূতে।
আছে আত্মারাম বক্ষস্থলে, দ্বাদশদল বসত আশ্রয়।।
৩। চন্দ্র বর্ণ আকার হয় তার, আহার হরি কথা,
হাস্য হয়ে সদা থাকে, আনন্দ যথা,
প্রেমানন্দ অপার থাকে বিভোর, তিনি যে আনন্দময়।।
৪। কণ্ঠস্বথলে ষোড়শ দলে, আত্মা রামেশ্বর,
আকার হয় তার সূর্য্য বর্ণ হরি কথা সার
আছে বুদ্ধি জ্ঞান, রস আস্বাদন, হরি ভজন সর্ব্বদায়।।
৫। মস্তকেতে দ্বিদল পদ্ম, সহস্র আরে,
পরম আত্মা রয় তাহার নাম, মহাজন ধরে।
হরি গোসাইর বাণী, তত্ত্বখানি, শুনরে দীনা দুরাশয়।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-অরুণভেরি
৮৯। তাল-ঠুংরী
আমার দেহখানি গুণমণি গড়িয়ে সে কোথা গেল।
আমার আঠার মোকামের পাশে,
কে কোন খানে থাকে বল।।
১। আমার দেহের খবর বল সাধু ভাই,
দেহের মালিক কোথায় থাকে, তারে কেমনেতে পাই।
হয় তার কি আকৃতি, রূপের জ্যোতি,
কোথায় তার বসতি বল।।
২। দেহে আট কোঠরা নয় দরজা হয়,
কোনখানেতে মহাশক্তির বসতি আশ্রয়।
বল নয় দরজায় কে কে থাকে,
জীবাত্মার স্থান কোথা বল।।
৩। ব্রহ্মা বিষ্ণু থাকে কোথা,
দয়া করে বল সাধু সেই সব বারতা।
বল হাকিনী কোন খানে থঅকে, শুনিবার বাসনা হল।।
৪। ভাবি আমি নিশি দিনে,
মানব দুর্লভ জনম গেল, তত্ত্ব বিহনে।
হরি গোসাইর দয়া বিনে, দীনার সাধন না হইল।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-অরুণভেরি
৯০। তাল-ঠুংরী
অনিবার্য্যে দেহ রাজ্যের
খবর যেয়ে জেনে নে এবার।
শ্রীশ্রীহরির ভাব সংকীর্ত্তন
জানলে দেহের খবর, ঘুচবে আঁধার,
দেহ তোর হবে দীপ্তাকার।।
১। আঠার মোকামের পাশে রয়,
একবারে বলিব কত, কথা সমুদয়।
আছে দেহের মালিক সহস্রারে,
পরম ব্রহ্ম জ্যোতির্ম্ময় যার।।
২। চতুর্দ্দলে রয় মহাশক্তি,
জীবাত্মা ধন তাহার কোলে করে বসতি।
আরও ভ্রু-মধ্যে দ্বিদলেতে,
হাকিনী সে রয় নিরন্তর।।
৩। লিঙ্গে ব্রহ্মা করে অবস্থান
পাট মধ্যে মহাবিষ্ণু, থাকে সর্ব্বক্ষণ।
আছে ব্রহ্মা লিঙ্গে মনোরঙ্গে,
খেলা করতেছে অনিবার।।
৪। দেহের রাজা হরিধনে
ডাক তারে প্রেম ভরে, আকুল প্রাণে।
হরি গোসাই বলে তত্ত্ব বিনে,
দীনারে তোর নাই পারা পার।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-বিরলা
৯১। কতাল-কান্ডয়ালী
আর কত বুঝাব তোরে বল দেখি আমায়
বুঝাইলে বুঝা মাননা এ ভারি বিষ্ময়।
তোর বুঝ নিতে কি জনম যাবে, সাধন ভজন করবি কবে,
শুনে নেরে নিঘুর ভাবে, কে কোন খানে রয়,
১। নাভি মুলের অগ্রভাবে সূর্যের স্থিতি,
তাহার অগ্রে বকায়ু পিত্ত, করে বসতি।
তালু মুলে চন্দ্রের বাস, রাহু করে সর্ব্বনাশ,
অকালেতে গিয়ে রাহু গ্রাস করে তাহায়।।
২। ঋতুকালে চন্দ্র সূর্যের যদি হয় মিলন,
সেই দিবসে পুর্ণিমা, জেনে লবে মন।
দীপ্ত করে সপ্ত তাল, স্বর্গ মত্ত পাতাল ভূতল,
পূর্ণ হয়ে পূর্ণ চন্দ্র জম্মে দুনিয়ায়।।
৩। কাম রাহুর ঐ উত্তেজনে চন্দ্র কম্পিত,
গ্রাস করে না যেন সদা থাকো, হুসিয়ার মত।
হবি যদি সর্ব্ব জয়ী, জানিসনে আর গুরু বৈ,
রবির সুতে কোন মতে, ছোবে না তোমায়।।
৪। আদিত্য কয় অজ্ঞানতায়, রবি কতদিন,
জন্মে জন্মে সাধন বিনে, করলি দেহ ক্ষীন।
হরি গোসাইর পদে নত, হয়ে থাকগে মনের মত,
দীনা তোরে বলব কত, তত্ত্বেরি বিষয়।।
তত্ত্বগীতি
রাগিনী-উল্টাকেশী
৯২। তাল-গড়খেমটা
এবার চিনে লও গে তারে
এবার চিনে লও গে তারে।
পিতৃধন হয় মহারত্ন, আদি শক্তি মুলাধারে।।
১। মুলাধার রক্ত আকার, তাতে ধরে চারটি আকার,
ব হতে চারি অক্ষর, আছে তাই শাস্ত্রের মাঝারে,
মায়া ডাকিনী শক্তি, বয় সে তথাকারে,
সাড়ে তিন প্যাচে তিনি, কুন্ডলিনী, আছে শ্রীহরিকে ঘিরে।।
২। পরম আত্মা পরম ব্রহ্ম, যার হাতে এ ব্রহ্মান্ড,
করতে পারে অসীম কান্ড, জিনিতে শক্তি নাই সংসারে
তিনি কখন সাকার, হয় নিরাকার, এক এক বর্ণ ধরে,
ক্ষণেক আরাম নাই তার বিশ্রাম, কখন বাহির কখন ঘরে।।
৩। ডেকে বলে আদিত্য, হরি গোসাই জানে তত্ত্ব,
শিখে নিলে তার মাহাত্ম্য, যাবি তুই আব্রহ্ম ভেদ করে।
বোকা দীনবন্ধু ঘুরে মর, কেন অন্ধকারে,
তুই জ্ঞানের আলো জ্বালাইয়ে, হুশের ঘরে থাকিস পড়ে।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-খাম্বাজ
৯৩। তাল-খেম্টা
গুরু তত্ত্ব না জানিয়ে, আগে কেন ধর মূল,
তাইতে কি তোর প্রেমের গাছে ফুটবে ফুল।
গুরু তত্ত্ব আগে জান মন, প্রেম লতায় বেড়বে দুকূল।।
১। মনরে গুরু তত্ত্ব না জেনে, গুরুর করণ বিহনে,
প্রেমের গাছে ফুল ফোটেনা কখনে।
গুরুর করণ করলে পরে, প্রেমের গাছের পাবি মূল।।
২। মনরে ভেবে দেখ ঐ নির্গমে, আগম নির্গম সাধনে,
অধর চাঁদকে পেতে পারে সব জনে।
আগম নিগম সাধন বিনে, অধর চাঁদকে পাওয়া ভুল।।
৩। মন রে গুরুর তত্ত্ব যেয়ে জান, গুরুর বাক্য সদা মান,
তাহলে তোর হবে প্রেমের অঙ্কুর।
সেই অঙ্কুরে লতা বেড়ে, সেই লতায় ধরিবে ফুল।।
৪। মনরে হরি গোসাই বলে গুন, দীনবন্ধু কর সাধন,
অসুর হয়ে রবি নাকি চিরদিন।
যে দিন শমন এসে বাঁধবে কশে,
পিটায়ে ভাঙ্গবে দুকূল।।
তত্ত্ব গীতি
রাগিনী-দেবগিরী
৯৪। তাল-ঠুংরী
ঘর কে গড়িল কোথা রল তালাস করসিল না।
ঘরের মধ্যে কে রয় সেই সমুদয়,
নেহার করে একদিন দেখলিনা।।
১। চৌরশি ক্রোশ ঘরখানি, হাড়ের গাথনি,
সেই ঘরেতে দিয়েছে তায়, চামড়ার ছাউনি।
তার জোড়ায় জোড়ায় কব্জা এটে, গড়েছে ঘর সেই জনা।।
২। জ্ঞানের আলো বসাইল, মাক্তার উপর,
সেই আলো বন্ধ হলে, জগৎ অন্ধকার।
আলো বন্ধ হয় ঐ কু-বাতাসে, সে বিনে আর বন্ধ হয় না।
৩। ঘরের মধ্যে আট কোঠরা, নয় দরজা হয়,
নয় জন দ্বারী নয় দরজায়, দাঁড়াইয়ে রয়।
তার আঠার মোকামের পাশে, আরও আছে আঠার জনা।।
৪। ঘরের মধ্যে কাল কামিনী, রয় নামটি ধরে
নিন্দ্রাযোগে সে সর্ব্বধন, নিয়ে যায় হরে।
ঘরে আরও আছে পঞ্চজনা, ঘরের মালিক আছে একজনা।
৫। হরি গোসাই বলে যদি, ধরবি মালিক জন,
অনায়াসে শান্তিপুরে, করিবি গমন।
তোর ঘরের মালিক নয় বহুদুর দীনবন্ধু করগে সাধনা।।
রাগিনী-অরুন ভেরী
৯৫। তাল-ঠুংরী
হরি গুনমণি গড়ে তিনি দেহ রাজ্য করলেন স্থিতি।
রাজ্যে নয়টি জেলা - আঠার মোকাম
মন মন্ত্রী হয় চালকপতি।।
১। নাভির অগ্রে সূয্যের অবস্থান,
(তালু) পরে সহস্রারে, চন্দ্র আছে নিরূপন।
তাইতে চন্দ্র, সূর্য্যে দেহরাজ্যে আলো করে দিবা রাতি।।
২। আছে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল, ভূতল,
বীতল, তলাতল, রসাতল এই সপ্ততল।
আছে সপ্ত সাগর রাজ্যের ভিতর,
তাতে রয় সাত মহামতি।।
৩। দেহের রাজ হরি দয়াময়,
ভক্তিভরে ডাক তারে কাতর হৃদয়।
ও তুই ধরগে তারে সেই অধরে,
ছেড়ে কুল মান জাতি।।
৪। দেহের কোন খানে কি খুঁজে বেড়ালে,
পরম রতন পায়না কখন, প্রেম ভক্তি নইলে।
ছেড়ে কুটি নাটি ময়লা মাটি, গুরু পদে রাখো আর্থী।।
৫। হরি গোসাই বলে গুরু করে সার,
মন-প্রাণ সমর্পয়ে মরার মতো মর।
দীনা হওগে রত, মনের মত, মিলবে জগৎ গুরুপতি।।