মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

অন্তখণ্ডঃ দ্বিতীয় তরঙ্গ

অন্তখণ্ড
দ্বিতীয় তরঙ্গ
বন্দনা

জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
(জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
প্রেমানন্দে হরিগুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
 
শ্রীমদ্ধীরামন গোস্বামীর মৃত গরু ও মনুষ্য বাঁচাইবার কথা
পয়ার
পাতলা নিবাসী নাম বাল্যক বিশ্বাস।
সদা হরি পদে মতি সুদৃঢ় বিশ্বাস।।
বাহিরে ঐশ্বর্য ভাব অন্তরে বৈরাগ্য
ওঢ়াকাঁদি আসে যায় ভজনে সুবিজ্ঞ।।
প্রভু হরিচাঁদের ভকত মহাজন।
হরিচাঁদ বলে ডাক ছাড়ে সর্বক্ষণ।।
শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদির দায় তারা করে।
মতুয়ার সম্প্রদায় খ্যাত চরাচরে।।
মহাপ্রভু হরিচাঁদ ধাম ওঢ়াকাঁদি।
তাঁহার ভকত যত মতুয়া উপাধি।।
প্রভু শ্রীহরিচাঁদের মতুয়া বাল্যক।
মতুয়া বলিয়া তারে ঘোষে সর্বলোক।।
হরি বোলা ভকত কাহারে যদি পায়।
ভক্তি সহকারে পূজে আনন্দ হৃদয়।।
মতুয়া বাল্যক যিনি তাহার নিবাসে।
গোস্বামী শ্রীহীরামন মাঝে মাঝে আসে।।
একদিন হীরামন আসিল তথায়।
বাল্যক ছিল না বাড়ী কার্যান্তরে যায়।।
বাল্যকের মাতা হন কৌশল্যা নামিনী।
মতুয়া পাইলে ভক্তি করিতেন তিনি।।
কৌশল্যার পেটে ছিল বেদনা অঙ্কুর।
আর দিন এল শ্রীহীরামন ঠাকুর।।
গোস্বামীকে দিয়াছেন তামাক সাজিয়ে।
কৌশল্যা পড়িল পদে দণ্ডবৎ হ’য়ে।।
পদরজ নিতে দিল শ্রীচরণে হাত।
গোস্বামী তখন করে হুঁকার আঘাত।।
সে আঘাতে মূর্ছান্বিতা হয়ে প’ল বুড়ি।
পুনরায় মারিলেন দোহাতিয়া বাড়ি।।
অমনি কৌশল্যা ধনী জীবন ত্যজিল।
গোঁসাই গৃহেতে গিয়া বসিয়া রহিল।।
প্রাঙ্গণেতে কৌশল্যার মৃত শব ল’য়ে।
হুড়াহুড়ি লাগাইল গ্রামীরা আসিয়ে।।
সবে বলে এ পাগল মানুষ মারিল।
কোথা হ’তে এ পাগল পাতলায় এল।।
উলঙ্গ ভৈরব প্রায় না পরে বসন।
এরা এর ভক্তি করে কিসের কারণ।।
কেহ কেহ বলে ভাই ভালই করেছে।
যেমন মানুষ ওরা তেমন হ’য়েছে।।
কেহ বলে ও কথায় নাহি কোন ফল।
বাঁধিয়া থানায় ল’য়ে চল এ পাগল।।
কেহ বলে এ পাগল বাঁধা বড় দায়।
কবে কারে খুন করে কহা নাহি যায়।।
কেহ বলে এ পাগল থাকিতে হেথায়।
এজাহার কর গিয়া যাইয়া থানায়।।
বাল্যক আসুক বাড়ী নাহিক বাড়ীতে
তার দ্বারা এজাহার করিব থানাতে।।
বলিতে বলিতে তথা বাল্যক আসিল।
সকল বৃত্তান্ত সবে বাল্যকে কহিল।।
বাল্যক শুনিয়া বলে গোঁসাই মারিল।
মা যদি মরিল তবে ভালই হইল।।
বড়ই প্রসন্ন মোর মায়ের কপাল।
গোস্বামী সাক্ষাতে মৃত্যু পাবে পরকাল।।
এজাহার দিতে যাব কিসের কারণ।
মাতা মোর গিয়াছেন বৈকুণ্ঠ ভবন।।
গ্রামীরা অবাক হ’ল সে কথা শুনিয়া।
যার যার নিজ কর্মে গেলেন চলিয়া।।
বাল্যকের গৃহমধ্যে গোঁসাই বসেছে।
বেলা অপরাহ্ণ মুহূর্তেক মাত্র আছে।।
রায়চাঁদ নামে কবিরাজ একজন।
গোস্বামী নিকটে গিয়া কহে সেই জন।।
গলায় বসন দিয়া বিনয় ভক্তিতে।
গোস্বামী চরণ ধরি লাগিল কাঁদিতে।।
কহ প্রভু তব পদে করি নিবেদন।
মৃত দেহ ল’য়ে মোরা করি কি এখন।।
আপনি করুণ আজ্ঞা সেই আজ্ঞামতে।
ল’য়ে শব যাই সব দাহন করিতে।।
বিষম বিপদ তাতে মনে ভয় গণি।
এতে কি বিপদ যার সহায় আপনি।।
প্রাতেঃ মরিয়াছে গাভী সেই এক দায়।
ডাকিতে ডাকিতে তার বৎস্য মৃতপ্রায়।।
গাভী মরা ফেলিয়াছি মা মরা পোড়া’ব।
দুধ বিনা কাঁদে বৎস্য কি দিয়া বাঁচাব।।
হীরামন বলে ডেকে শুন ওরে রাই।
অদ্য মাকে পোড়াইয়া কার্য কিছু নাই।।
শঙ্খধ্বনি কর গিয়া মাতৃ কর্ণমূলে।
রামাগণে হুলুধ্বনি করুক সকলে।।
আমি আছি প্রভু হরিচাঁদেরে ভাবিয়া।
গাভীটা কোথায় আছে দেখে আসি গিয়া।।
মরা গাভী ফেলাইয়া এসেছে গো-চরে।
গিয়ে গাভীটার মাথা উঁচু করে ধরে।।
মা কেন রহিলি শুয়ে আসিয়া ডাঙ্গায়।
দুধ না পাইয়া বুন কাঁদিয়া বেড়ায়।।
দুগ্ধপোষ্য ছোট ভগ্নী ঘাস নাহি ধরে।
তুই দুধ না দিলে মা বাঁচে কি প্রকারে।।
দিন ভরি ভগ্নী মোর করিছে রোদন।
তুই দুধ না দিলে মা হইবে মরণ।।
অবলা ভগিনী সদা হাম্বা হাম্বা করে।
চেয়ে দেখ দুধ বিনে গোঙ্গাইয়া মরে।।
গৃহস্থ মরিল তোর আমার প্রহারে।
তবু তার পুত্র মোরে দৃঢ় ভক্তি করে।।
কর্ম কর্তা হরিচাঁদ তার নামে ভ্রমি।
যাহা করে তাহা করি কর্মী নহে আমি।।
এমন গৃহস্থ ছেড়ে যাইবা কোথায়।
মা হয়ে মা কেন হেন কঠিন হৃদয়।।
আমারে করহ দয়া রক্ষ এ বিপদে।
প্রভু হরিচাঁদ সেবা দিব তোর দুধে।।
এতবলি পৃষ্ঠদেশে মারিল চাপড়।
হাম্বারব করি গাভী উঠে দিল দৌড়।।
যেখানেতে ছিল বৎস্য সেই খানে গিয়া।
বাছুরে পিয়ায় দুগ্ধ অঙ্গ ঝাড়া দিয়া।।
উহুড়িয়া উহুড়িয়া বৎস্য অঙ্গ চাটে।
হেনকালে হীরামন আইল  নিকটে।।
বৎস্যকে ছাড়িয়া গাভী হীরামনে চাটে।
বৎস্য গিয়া হীরামন পদে মাথা কোটে।।
এ দিকেতে কৌশল্যার দুই কর্ণমূলে।
দুই শঙ্খধ্বনি করে দুইজন মিলে।।
নারীগণে হুলুধ্বনি দিতেছে আসিয়ে।
শত্রুলোকে কহে বাল্যকের মার বিয়ে।।
মুহুর্মুহু হরিধ্বনি করিছে সকলে।
বাল্যকের মা উঠিল হরি হরি বলে।।
বাল্যক বলিছে হরি দিয়া হুহুঙ্কার।
তাহা দেখি পাষণ্ডীর লাগে চমৎকার।।
পাষণ্ডীরা বলে ধর কোথায় গোঁসাই।
জনমের মত তার চরণে বিকাই।।
ধন্য ওঢ়াকাঁদি বাবা হরিচাঁদ।
না জানিয়া নিন্দি মোরা করি অপরাধ।।
ধন্য ধন্য হরিচাঁদ ভক্ত মতুয়ারগণ।
ধন্য ধন্য বাল্যক ভকত একজন।।
ধন্য ধন্য বাল্যকের মাতা সাধ্বী নারী।
জনম বৃথায় যায় বল হরি হরি।।
ধন্য ওঢ়াকাঁদি ধন্য অবতীর্ণ হরি।
না চিনিয়া মোরা কেন পাপে ডুবে মরি।।
হীরামনে দেখিতে লোকের ভিড় হ’ল।
অন্তর্যামী হীরামন অদৃশ্য হইল।।
কাঁদিয়া পাষণ্ডী সব ভূমে গড়াগড়ি।
হীরামনে অন্বেষণে করি দৌড়াদৌড়ি।।
সে হ’তে পাতলা গ্রাম নামে মেতে গেল
দশরথ গোস্বামী করেন যাতায়াত।
ইষ্টসম ভক্তি সবে করে অবিরত।।
হরি হরি বলি সব মতুয়া হইল।
হীরামন প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
প্রভু হীরামন কীর্তি অলৌকিক কাজ।
রচিল তারকচন্দ্র কবি রসরাজ।।
 
হীরামন গোস্বামীর বাহ্যলীলা
দীর্ঘ ত্রিপদী
মৃত্যুঞ্জয়ের রমণী                    ওঢ়াকাঁদি যান তিনি
লইয়া চলিল মৃত্যুঞ্জয়।
সঙ্গেতে তারকচন্দ্র        আর শ্রীগোলোকচন্দ্র
সূর্যনারায়ণ সঙ্গে যায়।।
যোগানিয়া গ্রামে বাস     নাম গোলোক বিশ্বাস
তিনি চলিলেন এই সাথে।
বেলা অপরাহ্ণ প্রায়         কাশীমার পিত্রালয়
উপস্থিত নিশ্চিন্ত পুরেতে।।
কাশীরাম ধর্মপুত্র                    মল্লিক শ্রীচন্দ্রকান্ত
তিনি চলিলেন সে দিনেতে।
তারক শ্রীচন্দ্রকান্ত          দোহার মন একান্ত
হীরামন পাগলে দেখিতে।।
ভজন মজুমদার           আসিয়া তাহার ঘর
হীরামন দিল দরশন।
শীতকালে পৌষমাস      গায় নাহি শীতবাস
মাত্র একটি লেংটি ধারণ।।
চন্দ্রকান্ত দক্ষিণেতে        তারক বসি বামেতে
তার মধ্যে বসি হীরামন।
দণ্ডেক মাত্র বসিয়া        ভূমেতে পড়ে লুটিয়া
বলে তোরা কররে শয়ন।।
কাশীমাতার ভগ্নী          একখানি কাঁথা আনি
হীরামন গাত্রোপরে দিল।
তিনি কন গোস্বামীরে     যাও প্রভু শয্যাপরে
তারকে কোলে করি শুইল।।
তারকের হ’ল ভয়         হীরামন গায় গায়
লাগিবে আমার অঙ্গ তাপ।
আমার পাপের দেহ       কামানলে সদা দাহ
ভাবে কোথা হরিচাঁদ বাপ।।
এতভাবি যোড়ি কর       হস্ত রাখি শিরোপর
হরিপদ করিছে স্মরণ।
গোস্বামী কহিছে বাণী     আমি সব পাপ জানি
উরুপরে দিলেন চরণ।।
পাপী তাপী উদ্ধারিতে     হরি এলেন জগতে
যার আশা মোর হরিচাঁদে
যেই যাবে ওঢ়াকাঁদি       সেত নহে অপরাধী
তার পাপ মুছি বামপদে।।
যে মোর হরেকে ডাকে    সে জন থাকুক সুখে
আমার মনের অভিলাষ।
তার পাপ ঘুচাইব          শুভাশুভ আমি নিব
যেই যশোমন্তসুত দাস।।
শয্যা হ’তে উঠিলেন       দক্ষিণ পদ দিলেন
তারকের বক্ষের উপর।
তারকে করিয়া স্থির       গোঁসাই হ’ল বাহির
বলে তোর নাহি কোন ডর।।
গাত্র কান্থা শিরে ল’য়ে    ঘরের বাহিরে গিয়ে
বসিলেন পূর্বমুখ হ’য়ে।
হরি পদ ধোয়াইয়া         ক্ষণে উঠে ঝোঁক দিয়া
জলে যায় কান্থা তেয়াগিয়ে।।
প্রাতঃকালে নামি জলে   পূর্বমুখ হ’য়ে চলে
ডেকে বলে যারে মৃত্যুঞ্জয়।
যাও হরি দরশনে          বিলম্ব করহ কেনে
মোর হ’রে সুখে যেন রয়।।
মৃত্যুঞ্জয় চলে গেল        ওঢ়াকাঁদি উতরিল
হরিচাঁদ দরশন করি।
প্রণমিয়া শ্রীপদেতে        মহাপ্রভু আজ্ঞামতে
দেশে যাত্রা করিলেন ফিরি।।
ঈশ্বর মজুমদার            আসিয়া তাহার ঘর
সে দিবস রহিল তথায়।
পরদিন প্রাতঃকালে       এসে মল্লকাঁদি বিলে
হীরামনে দেখিবারে পায়।।
অগাধ জলের পরে        হাঁটিয়া গমন করে
মৃত্যুঞ্জয় তরী বেয়ে যায়।
গোস্বামীর সন্নিকটে        যবে তরী বেয়ে উঠে
সে সময় জলে সাঁতরায়।।
নৌকাপরে রেখে বটে     গলে বাস করপুটে
মৃত্যুঞ্জয় কহিছে তখন।
বলে গোস্বামীর ঠাই       মোর দেশে চল যাই
তরী পরে করি আরোহণ।।
হীরামন বলে দাদা        নিজ তরী বাহি সদা
তরঙ্গিণী নীরে ডুবি ভাসি।
নিতে তোমাদের দেশে   ইচ্ছা যদি মনে ভাসে
তবে তোমাদের নায় আসি।।
মৃত্যুঞ্জয় হস্ত ধরি                    উঠাইল যত্ন করি
দ্রুতগতি তরী বেয়ে যায়।
মধুমতী নদী এসে         নদী মাঝখানে শেষে
হীরামন ঝাঁপ দিতে চায়।।
কেঁদে কয় মৃত্যুঞ্জয়        নামিও না ধরি পায়
নামিলে পাইব বড় শোক।
প্রভু বলে কি বলিস        তুইত আমারে নিস
আমারে ত নেয়না গোলোক।।
মৃত্যুঞ্জয় উচাটন           গোলোক ধরিয়া চরণ
কাঁদিয়া কহিছে উচ্চৈঃস্বরে।
জানিয়া আমার মন       গোঁসাই নামে এখন
কাজ কিবা এ জীবন ধরে।।
মনে যা ভেবেছি আমি    গোঁসাইত অন্তর্যামী
অন্তরেতে জানিয়া সকল।
এই নদী দিয়া পাড়ি       আগে যাব মম বাড়ী
বাড়ী নিব লেংটা পাগল।।
লেংটি এনে দিলে কেহ   পরিতে বলিলে সেহ
ওত কারু কথা না মানিবে।
যদি লেংটি নাহি পরে     গেলে বাড়ীর ভিতরে
মেয়ে লোকে দেখে লজ্জা পাবে।।
না বুঝিয়া পাই কষ্ট       হারে মোর দুরদৃষ্ট
কর্ম জালে বন্দী হইলাম।
অষ্ট পাশ মুক্ত যিনি       অন্তর্যামী শিরোমণি
হেন পদ পেয়ে হারালাম।।
গোঁসাই কহিছে দাদা      হাঁদলে গাধার বাঁধা
খাঁদা আধা দেহ নামাইয়া।
দেহ পড়ি দেহ পড়ি       মাসীবাড়ী মাসীবাড়ী
সূর্য মাসী আছে ডুমুরিয়া।।
লেংটি পরে অবশেষে     সূর্য নারায়ণ বাসে
গোঁসাই যাইয়া বসিলেন।
মাসী কই মাসী কই       আয় মাসী দেখে যাই
গোঁসাই ডাকিতে লাগিলেন।।
সূর্যনারায়ণ এসে                    দণ্ডবৎ হ’য়ে শেষে
করজোড়ে রহে দাঁড়াইয়া।
গোঁসাই কহেন মাসী       তোরে বড় ভালবাসি
মাসীমারে দেহ ডাকাইয়া।।
পাতলার মাসী যিনি       তাহারে কর রাঁধুনী
শীঘ্র তাড়াও গৌরের মেয়ে।
বাজারে হয়েছে টান       পাতলা পাত দোকান
ক্রয়বান ফিরিয়া না যায়ে।
সূর্য হ’য়ে অতি স্ত্রস্ত       এনে এক নব বস্ত্র
গোস্বামীকে দিল পরাইয়া।
লেংটি পড়িয়া ছিল        তারক তুলিয়া নিল
লইলেন মস্তকে বাঁধিয়া।।
গোস্বামী বলে ডাকিয়া    সকলে লহ ভাগিয়া
লেংটি ধরে করে কাড়াকাড়ি।
সবে করে ধরাধরি         একটু একটু করি
সকলে সে লেংটি নিল ফাঁড়ি।।
কেহ গলে ঝুলাইল        কেহ মস্তকে বাঁধিল
প্লীহা কি যকৃত ছিল যার।
কারু ছিল কাশি জ্বরা      ধারণ করিল যারা
দুই দিনে রোগারোগ্য তার।।
বসন ফেলায়ে দিয়ে       গোঁসাই উলঙ্গ হ’য়ে
যে সময় যাত্রা করিলেন।
মেয়েলোক যত ছিল      গোস্বামীর কাছে এল
প্রণামী শ্রীপদ সেবিলেন।।
গোঁসাই উলঙ্গ বেশে       গোলোক বিশ্বাস এসে
এমন সময় উপনীত।
গোস্বামীর পদধরে         মেয়েরা রোদন করে
দেখিয়া গোলোক চমকিত।।
গোলোক বিশ্বাস কাঁদে    ধরিয়া গোস্বামী পদে
গোঁসাই কহিছে রে গোলোক।
যাইতাম তোর ঘরে       তুই নিলি না আমারে
দেখিয়া নিন্দিবে যত লোক।।
তোর বাড়ী যত নারী      তাহারা লজ্জিতা ভারি
নির্লজ্জ লোকের বাড়ী যাই।
মাসী বড় ভালবাসে        আসিয়া মাসীর বাসে
মাসীমার হাতে ভাল খাই।।
সূর্যনারায়ণ পরে           তামাক সাজিয়ে ধরে
হুঁকা নাহি নিলেন গোঁসাই।
কলিকা উঠায়ে নিয়ে      তাহার অগ্নি ফেলিয়ে
তামাক রাখিল মাত্র তাই।।
তামাক হাতে রাখিয়া     সূর্যনারায়ণে দিয়া
বলে মাসী যতনে রাখিস।
কি ঘটে কার কপালে     উপকার হ’বে কালে
খাইলে সারিয়া যাবে বিষ।।
শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত          পান কর অবিরত
খাইলে খণ্ডিবে ভব ক্ষুধা।
দীন হীন এ তারক        সুধা পেতে অপারক
হরি লীলা সুধাধিক সুধা।।
 
অভিন্নাত্ম দ্বিপুরুষের একসঙ্গে মৃত্যু ও দাহন
দীর্ঘ ত্রিপদী
গোঁসাই যাত্রা করিল       পাদুমা গ্রামে আসিল
ফেলারাম বিশ্বাসের ঘরে।
শিরোমণি জ্যেষ্ঠ পুত্র      আত্মা তার সুপবিত্র
ফেলারাম নাম তেই ধরে।।
গাছবাড়ীয়া নিবাস         নামে চৈতন্য বিশ্বাস
তার পুত্র কুশাই নামেতে।
কুশ আর ফেলারাম        দুই জনে গুণধাম
মত্ত হন প্রভুর প্রেমেতে।।
দুই জন একতরে                   হরিনাম করি ফেরে
এক সঙ্গে শয়ন ভোজন।
দুই জনে এক বুলি        একসঙ্গে স্নান কেলী
গলাগলি করিয়া শয়ন।।
কোন গ্রামের ভিতর       ব্যাধি হ’লে কলেরার
নিতে এলে দু’জনেই যেত।
সেই সেই গ্রামে গিয়ে     দু’জনে একত্র হয়ে
হরিনামে কলেরা তাড়া’ত।।
হরিলুট দিতে হ’লে        দু’জন সুজন মিলে
সেই বাড়ী যেত দুইজন।
নাম করে মধুস্বরে         নাম গানে মোহ করে
দু’জনেই মোহ অচেতন।।
কুশাইর মৃত্যুকালে        বদনেতে হরি বলে
সবে বলে হরিনাম লও।
আমি যাত্রা করিলাম      অদ্য যাইব শ্রীধাম
ফেলারামে সংবাদ জানাও।।
কুশইর এক আত্ম          এ সংবাদ দিল দ্রুত
পদুমায় ফেলারাম ঠাই।
শুনি কহে ফেলারাম       যে সংবাদ শুনিলাম
দাদা গেল তবে আমি যাই।।
যাইব দাদার সাথে        দাদা যান যেই পথে
আমি তবে সেই পথ লই।
জন্মিলে মরণ আছে       কেবা কতদিন বাঁচে
কোন সুখে আমি বেঁচে রই।।
নাহি রোগ নাহি ব্যাধি     বলেছেন কাঁদি কাঁদি
এই আমি ওঢ়াকাঁদি যাই।
দাদা ম’ল চিতা পরে     সে সাথে দিও আমারে
একত্তরে যাব দুটি ভাই।।
বলে হরে কৃষ্ণ! রাম!     প্রাণ ত্যজে ফেলারাম
প্রাণ যায় কুশাইর ঠাই।
দু’জনের সৎকার          হ’ল এক চিতা পর
একত্র হইল দু’টি ভাই।।
এ দিকে সৎকার করে     দেহে গলাগলি ধরে
ওঢ়াকাঁদি চলিল দু’জন।
যাইতে শ্রীধাম পথে       দেখা হ’ল আত্ম সাথে
বাটী গিয়া শুনিল মরণ।।
ঠাকুর দর্শন করি                    দোঁহে বলে হরি হরি
নিত্য দেহ প্রেমেতে মগন।
ঠাকুরের আজ্ঞামতে       চলিল পুষ্পক রথে
দোঁহে যান বৈকুণ্ঠ ভবন।।
শুনেছি সাধুর তরে        যাহারা পিরিতি করে
একের মরণে দুই মরে।
তাহা যদি নাহি হয়        পিরিতি কাহারে কয়
হেন প্রেম নাহি যেন করে।।
দুই জনে দুই স্থলে        কোন দ্রব্য কেহ খেলে
দু’জনেই সুস্বাদ পাইত।
যে যাহা ভেবেছে মনে    দেখা হ’লে দুই জনে
মনোকথা প্রকাশ করিত।।
পুরুষে পুরুষে আর্তি       যেন পুরুষ প্রকৃতি
পিরিতে সুহৃদ সুললিত।
রসরাজ প্রেমোজ্বল        রসে করে টলমল
উদার উন্মত্ত চিত রীত।।
দু’জনের প্রেম ভক্তি      হ’ল হরিচাঁদ প্রাপ্তি
নিযুক্ত হইল সেবা কাজে।
দু’জনার প্রেমোৎসবে     হরি হরি বল সবে
কহে দীন কবি রসরাজ।।
 
হীরামন গোস্বামীর পদুমা ও কালীনগর লীলা
পয়ার
শ্রীহীরামন গোস্বামী পদুমা গ্রামেতে।
আসিলেন ফেলারাম জীবিত থাকিতে।।
বিকালে এল গোঁসাই বিশ্বাসের বাসে।
গোঁসাই দেখিতে লোক বহুতর আসে।।
পার্শ্ববর্তী লোক সব পুরুষ বা নারী।
আসে যায় সবে কয় বলে হরি হরি।।
কহিলেন ফেলারাম বিশ্বাস কুশাই।
কৃতার্থ হইনু অদ্য মোরা দুটি ভাই।
ফেলারাম কহিলেন কুশাইর স্থানে।
গোঁসাই এসেছে কিছু লুঠ দেও এনে।।
আগমনে সংকীর্তন আরম্ভিল সবে।
যাবার বেলায় এরা লুঠ নিয়া যাবে।।
আনাইল বাতাসা হরির লুঠ দিতে।
রাখিল কীর্তন মাঝে আনন্দ করিতে।।
লেপন করিয়া ঠাই আসন সাজিয়ে।
তুলসী, কুসুম, আসনের পর দিয়ে।।
উঠিল পরমানন্দ কীর্তনের রোল।
ঘুরিয়া ফিরিয়া সবে বলে হরিবোল।।
কীর্তনের মাঝে বসি হাসিছে গোঁসাই।
ঝুঁকে পদ লুঠে প’ল স্মৃতি জ্ঞান নাই।
স্বরূপের জ্যেষ্ঠ পুত্র কাঙ্গালী মণ্ডল।
গলে বস্ত্র করজোড়ে কহে স্তুতি বোল।।
আপনি যে উলঙ্গ উন্মত্ত নাম গানে।
হরি লুঠে পদ লাগে ভয় হয় মনে।।
কথা শুনি লুঠ পানে করে দৃষ্টিপাত।
পদটান দিতে বাধ্য হ’ল অকস্মাৎ।।
হীরামন বলে মোর হরি সর্বময়।
অনলে অনিলে জলে স্থলে শূন্যে রয়।।
বল শুনি তবে পদ রাখি কোনখানে।
তোরা পদ রাখ হরি নাই যে স্থানে।।
লুঠ হরি, পদ হরি, রাখিব কোথায়।
এত বলি দুটি পদ রাখিল মাথায়।।
ক্রমে মহাভাবে তনু মন শিহরিল
চিত হ’য়ে কুষ্মাণ্ডের মত পড়ে গেল।।
কুম্ভকার চক্রাকার লাগিল ঘুরিতে।
এই পদ কোথা রাখি লাগিল বলিতে।।
পদ রাখিয়াছি আমি হরিলুঠ স্থানে।
লোকে মন্দ বলে কার্য মন্দ সে কারণে।।
হরি ছাড়া স্থান আমি পাইব কোথায়।
কোথায় রাখিব পদ না দেখি উপায়।।
সূক্ষ্ম জ্ঞান ভাব মোরে নাহি দিল হরে।
কি উপায় করি তোরা বলে দে আমারে।।
হরি ছাড়া স্থান তোরা দেখায়ে দে ভাই।
কোন স্থানে পদ রাখি ওঢ়াকাঁদি যাই।।
কাঙ্গালী হইয়া ভীত পড়িল কাঁদিয়ে।
ফেলারাম কুশাই কেন্দেছে দাঁড়াইয়ে।।
রায়চাঁদ রায় পুত্র কোদাই নামেতে।
পদ তলে প’ল ঢলে কাঁদিতে কাঁদিতে।।
সবে হরি হরি বলে করে কাঁদাকাঁদি।
হীরামন কহে ভক্ত হৃদি ওঢ়াকাঁদি।।
তুলসী কানন, পদ্ম বন সংকীর্তন।
সেই স্থানে হরি বিরাজিত সর্বক্ষণ।।
বিধির নির্মিত পদ বল কোথা রাখি।
আমি বোকা হরি ছাড়া স্থান নাহি দেখি।।
আমি বোকা আর বোকা ছিল বৃকোদর।
মল ত্যাগ না করিল দ্বাদশ বৎসর।।
নামাইয়ে পদ দুটি উঠে লম্ফ দিয়ে।
সংকীর্তন মাঝে লুঠ দিল লুটাইয়ে।।
প্রেমে মত্ত হ’য়ে হ’ল সেই নিশি ভোর।
মৃত্যুঞ্জয় সঙ্গে এল সে কালীনগর।।
তথা এসে বাল্য সেবা নিলেন গোঁসাই।
কহিছেন পুনঃ আমি পদুমায় যাই।।
প্রহরেক কালীনগরের বাড়ী বসে।
উলঙ্গ হইয়া জলে ঝাঁপ দিলে শেষে।।
কালীনগরের নদী পার হইলেন।
উত্তরাভিমুখে পদুমায় চলিলেন।।
তারক শ্রীমৃত্যুঞ্জয় দিলেন সাঁতার।
পিছে পিছে চলিলেন আনন্দ অপার।।
পিছে পিছে নেচে গেয়ে দুইজন চলে।
ঢেউ লাগে কালীনগরের নদীকূলে।।
পদুমায় চলিলেন ফেলারাম বাটী।
পশ্চাতে তারক মৃত্যুঞ্জয় এই দুটি।।
সাদরে আসনে হীরামনে বসাইলে
শ্রীচরণ পাখলিল দু’নয়ন জলে।।
মুক্তকেশী হ’য়ে ফেলারামের রমণী।
কেশদ্বারা পাদপদ্ম মুছালেন তিনি।।
গোস্বামীকে তৈল মাখে আট দশ জনে।
স্নান করাইল পুকুরের জল এনে।।
বসাইল ঘরে এন সেবাদির কার্যে।
পায়স পিষ্টক আনে ফেলারাম ভার্যে।।
সম্মুখে আনিয়া থালা ভাজা বড়া ল’য়ে।
গোস্বামীর মুখে দিল স্বহস্তে তুলিয়ে।।
দশনে চিবা’য়ে মুখে রাখে হীরামন।
বিস্তার নাহিক করে দু’পাটি দশন।।
বড়া ধরি পুনঃ দিতেছিল বদনেতে।
অমনি চপটাঘাত করিল মুখেতে।।
ফেলারাম বলেছে সৌভাগ্য বড় মোর।
অমনি মারিল মুখে দ্বিতীয় চাপড়।।
ধাইয়া চলিল প্রভু পুকুরের পাড়ে।
মৃত্যুঞ্জয় চলিলেন গোস্বামীকে ধ’রে।।
হীরামন ধরে শেষে মৃত্যুঞ্জয় কেশে।
কপালেতে দুই মুষ্ট্যাঘাত মারে রোষে।।
চক্ষের নীচায় নাসিকার দুই পার্শ্বে।
দুই ভুষা মারি ইটা ধরিলেন শেষে।।
ঠেকাইতে হীরামনে হাত তুলিলেন।
মৃত্যুঞ্জয়ে ছাড়িয়া গোস্বামী চলিলেন।।
চণ্ডী মল্লিকের ঘরে করিল শয়ন।
গোঁসাই গোঁসাই বলি চলিল মদন।।
চৌকির খামায় লগ্ন গোস্বামীর পাও।
পদ ধরি বলে প্রভু মোর পদ দাও।।
গোস্বামীর পদে মাথা যখনে নোয়ায়।
অমনি মারিল লাথি তাহার মাথায়।।
বামপার্শ্বে খাম্বা ঠেকে যেন ছে’চা হ’ল।
গোস্বামীর লাথি হেতু জীবন রহিল।।
উঠিয়া চলিল প্রভু দক্ষিণাভিমুখে।
কালীনগরের দিকে চলিলেন রুখে।।
শ্রীগৌরচাঁদের পুত্র শ্রীউমাচরণ।
বোরা জমি পরিষ্কার করে সেই জন।।
আইল উপরে বহু কাঁদা তুলিয়াছে।
সে আইল ‘পর দিয়া গোঁসাই চলিছে।।
আসিয়া উমাচরণ করে দণ্ডবৎ।
অমনি গোঁসাই শিরে করে পদাঘাত।।
মস্তক পশিল গিয়া কাদার ভিতরে
মৃত্যুঞ্জয় গৃহে প্রভু যান ক্রোধভরে।।
গোঁসাই বসিল গিয়া রন্ধনশালায়।
ঘরের নিকটে ভয়ে কেহ নাহি যায়।।
ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুঞ্জয় তারকে পাঠায়।
গৃহে বসি ঝোঁকে মাত্র দেখিবারে পায়।।
হেনমতে রাত্রি গেল গোস্বামী উঠিল।
উত্তরের গৃহে এসে সকলে বসিল।।
নিশিতে স্বপনে দেখেছেন মৃত্যুঞ্জয়।
তোমাকে রাখিতে নারি গোস্বামীকে কয়।।
তোমায় চরণে যেন থাকয় ভকতি।
তোমাকে রাখিতে নাই আমার শকতি।।
স্বপ্ন শুনি হীরামন নামাইল পদ।
চলিলেন পূর্বমুখে বলি হরিচাঁদ।।
নদীর কিনারে গ্রাম কলাবাড়ী আদি।
প্রেমাকুল কূলে বসি ঝোঁকে নিরবধি।
উত্তার নয়ন হ’য়ে বসিয়া তথায়।
পুনঃ আসিলেন মৃত্যুঞ্জয়ের আলয়।।
গোঁসাই বলেন কল্য না হ’ল রন্ধন।
রন্ধন করুক বধূ করিব ভোজন।।
ছিলাম রসই ঘরে না হইল রাঁধা।
সুস্থির হ’য়েছি অদ্য খেতে দাও দাদা।।
তাহা শুনি কাশীশ্বরী করিল রন্ধন।
গোঁসাই সুস্থির হ’য়ে করিল ভোজন।।
পুনর্বার হীরামন যাত্রা করিলেন।
তারক আসিয়া পদে প্রণাম করেন।।
ভূমিষ্ঠ হইয়া পদে করে প্রণিপাত।
গোঁসাই করিল পৃষ্ঠদেশে পদাঘাত।।
শব্দ হ’ল বিপরীত লড়ে উঠে ঘর।
পদ পড়ে পুষ্পসম পৃষ্ঠের উপর।।
বিপরীত শব্দ শুনে এল মৃত্যুঞ্জয়।
ক্রোধিত হইয়া এসে হীরামনে কয়।।
তারকে মারিলে পেয়ে কিবা অপরাধ।
সবাকার পিতা হয় এক হরিচাঁদ।।
গললগ্নী কৃতবাসে কহিছে তারক
আমার অন্তরে বড় হয়েছে পুলক।।
এক লাথি দিয়াছেন আর লাথি দিলে।
পাইতাম শ্রীপদ তাহাতে বাদী হ’লে।।
গোস্বামীর প্রতি কেন চাহ কোপদৃষ্টে।
পদ্ম পুষ্পসম বাজিয়াছে মম পৃষ্ঠে।।
জন্মের সার্থক আমি কৃপার ভাজন।
গোঁসাই দিলেন লাথি ধন্য এ জীবন।।
অন্যলোকে লাথি ভেবে হ’য়েছে আকুল।
লাথি নহে মম পৃষ্ঠে আশীর্বাদ ফুল।।
তাহা শুনি গোস্বামীজী হাঁটিয়া চলিল।
মৃত্যুঞ্জয় তাহা শুনি নীরব হইল।।
হীরামন লীলা খেলা মহিমা অপার।
এ লীলা রচিল কবি রায় সরকার।।
 
হীরামন গোস্বামী কর্তৃক মৃন্ময়ী দুর্গাদেবীর স্তন্যপান
পয়ার
বেথুড়ী গ্রাম নিবাসী গোবিন্দ বিশ্বাস।
তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা চৈতন্য বিশ্বাস।।
কৃষ্ণভক্ত শিরোমণি সাধু অতিশয়।
বৈষ্ণব সুবুদ্ধি, অতি নির্মল হৃদয়।।
করিতেন দুর্গোৎসব শরৎকালেতে।
আসিতেন হীরামন সে লীলা দেখিতে।।
বসিয়া দেখিত পূজা প্রণালী সকল।
তাহা দেখি নয়নে বহিত অশ্রুজল।
ব্রাহ্মণেরা মণ্ডপের বাহির হইলে।
হীরামন উঠিতেন দুর্গা দুর্গা বলে।।
মা দুর্গা! মা দুর্গা! বলে ছাড়িতেন হাই।
হাসিয়া বলিত আমি মার কোলে যাই।।
এত বলি গোস্বামী মায়ের গলা ধরি।
বলে পুত্র কোলে কর ওগো মা শঙ্করী।।
এত বলি কোলে উঠিবারে আয়োজন।
হেনকালে এল তথা পূজক ব্রাহ্মণ।।
বলে ও পাগল ও কি করহ ওখানে।
যাইতে হয় না মার কোলেতে এখনে।।
এত শুনি প্রতিমার গলা ছেড়ে দিয়া।
চাহিয়া প্রতিমা পানে র’ল দাঁড়াইয়া।।
মৃদু মৃদু হাসে আর মৃদু ভাষে কয়।
মায়ের কোলেতে বলে যাওয়া নাহি যায়।।
মার সেবা অন্তে কিছু প্রসাদ লইব।
মায়েরক কোলেতে বসি স্তন্য দুগ্ধ পিব।।
তাহা না হইলে মোর আমি অভাজন।
মা কেন করে না দয়া না পিয়ায় স্তন।।
আমি যেন অভাজন মার দয়া কই।
কোন গুণে নাম ধরিয়াছে দয়াময়ী।।
এতেক বলিয়া পুনঃ যাইয়া সত্বরে।
বাম হস্ত দিয়া প্রতিমার গলা ধরে।।
ডান হস্ত প্রতিমার বক্ষঃপর দিয়া।
বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়া স্তন দেখেন টিপিয়া।।
আমাদের এই মাতা সেই মাতা হ’লে।
দেখিয়া চিনিত মোরে করিতেন কোলে।।
প্রভু রাম পূজিলেন দুঃখের সময়।
মাল্যবাণ পর্বতে মা হ’লেন উদয়।।
অকালে দেবীর পূজা ব্রহ্মা পুরোহিত।
পূজা নিল দেবী বড় হ’য়ে হরষিত।।
সংকল্পিত অষ্টোত্তর শত নীল পদ্ম।
শতদল পদ্মে পূজিলেন পাদপদ্ম।।
সেই দিন পদ্ম আনে তোর কোন বাবা।
সেই দিন গত এবে কেমনে চিনিবা।।
চৌকি দিতে লঙ্কাতে মা হ’য়ে উগ্রচণ্ডা।
রাবণের বাড়ী ছিলে হাতে ল’য়ে খাণ্ডা।।
বরাবর জানি তুই পাষাণীর মেয়ে।
লঙ্কা ছেড়ে দিয়াছিলি মুষ্ট্যাঘাত খেয়ে।।
দৌবারিণী কাজ নাই চিনিবি কেমনে।
এখনেতে দুধ খেতে দিবিনে দিবিনে।
পাতালে মহীর বাড়ী ছিলি ভদ্রাকালী।
সে যে ছিল ত্রেতাযুগ এ যে কাল কলি।।
সংকল্প করিয়া প্রভু পূজিল তোমায়।
ছলনা করিলে তবু দুঃখের সময়।।
পাষাণীর গর্ভে জন্ম ধর্ম বরাবরি।
দুঃখের সময় কৈলি এক পদ্ম চুরি।।
সে যুগে দেখেছি তোর কাজ কর্ম যত।
প্রভুকে করিলি দয়া কাঁদাইয়া কত।।
পাষাণীর মেয়ে বলে যত নিন্দা করি
মোরে ধিক শতধিক অপরাধ ভারি।।
যত সব পাষাণ তোমার পিতৃ জ্ঞাতি।
তাহারা ভাসিল জলে দুঃখে হ’য়ে সাথী।।
যদি কহ ব্রহ্মবাক্য নলের উপরে।
তথাপি সহায় হ’য়ে তারা ভাষে নীরে।।
তোমার যে জ্যেষ্ঠ ভাই মৈনাক নামেতে।
সমুদ্রে ডুবিয়াছিল ইন্দ্রের ভয়েতে।।
হনুমান যায় করিবারে রাম কার্য।
ভাসিল পর্বত মামা করিতে সাহায্য।।
রামদাস বলে আমি সাহায্য না চাই।
রাম নাম বলে আমি এক লম্ফে যাই।
কহিল পর্বত মামা পার বটে যেতে।
আমাকে কৃতার্থ কর পদ পরশেতে।।
ভাসিলাম রামকার্যে সাহায্যের আশে।
সে আশা বিফল মম হৈল জলে ভেসে।।
তাহা শুনি মারুতির দয়া উপজিল।
পদ বৃদ্ধাঙ্গুলি তার অঙ্গে ছোঁয়াইল।।
তাহার ভগিনী হ’য়ে প্রভুকে কাঁদালে।
শীল হ’ল দয়াশীল দয়াময়ী শীলে।।
সুশীলা দুঃশীলা মত নিষ্ঠুরতা দেখি।
ভিতরে খড়ের ব’ড়ে দুধ পিয়াবা কি।।
মোর সেই প্রভু ওঢ়াকাঁদি হরিচাঁদ।
দায় ঠেকা নাহি এবে পাবে না ও পদ।
আমারও সে রূপ নাই, নাই সেই দিন
প্রভুর সে রূপ নাই, দীন হ’তে দীন।।
দেখিলাম এই বাড়ী পূজার প্রণালী।
নীলপদ্ম বিনা পূজা খুশী হ’য়ে নিলি।।
সেই প্রভু হরিচাঁদ হৃৎপদ্মে রাখি।
দেব দেবী পূজার্চনা চক্ষে নাহি দেখি।।
আইনু পূজার দিন গোবিন্দের বাড়ী।
সম্মুখে পড়িলি তাই দেখিগো শঙ্করী।।
গোবিন্দ চৈতন্য পূজা করে গো তোমায়।
তোমা হ’তে ভক্তি কম করে না আমায়।।
গোবিন্দের রমণী চৈতন্যের রমণী।
সতী সাধ্বী পতিব্রতা এরা দ্বিভগিনী।।
ইহাদের ভক্তি আর মনের টানেতে।
পারিনা থাকিতে তাই আসি গো দেখিতে।।
এই দুই মায় খেতে দেয় ভালমতে।
দুধ খেতে চেলে মোরে তাও দেয় খেতে।।
তোমার পূজাটি মাগো পড়িল সাক্ষাতে।
দেখিলাম পূজার প্রণালী ভালমতে।।
তাহাতে ভেবেছি মাগো এসেছ এখানে।
না আসিলে গোবিন্দ চৈতন্য পূজে কেনে।।
না দিলে মা দুধ খেতে না করিলে কোলে।
কি করিব যাই আমি ওঢ়াকাঁদি চলে।।
দেখিতে দেখিতে প্রতিমার চক্ষে জল।
ঝর ঝর ঝরিছে অটল যেন টল।।
হীরামন বলে মার দয়া উপজিল।
অমনি যাইয়া মার স্তনে মুখ দিল।।
ঈষৎ চুম্বক মাত্র স্তনে মুখ দিয়া।
ওঢ়াকাঁদি শ্রীধামেতে চলিল ধাইয়া।।
বাবা হরিচাঁদ বলি সাতারিল জলে।
আশ্চর্য গণিয়া সবে হরি হরি বলে।।
রামাগণে বামাস্বরে হুলুধ্বনি দিল।
দুর্গা প্রীতে ভক্ত গণে হরি হরি বল।।
হীরামন সুচরিত মহিমা অপার।
পয়ার প্রবন্ধে কহে রায় সরকার।।

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free