গান নং ১০৮-১১৭ (শেষ)
১০৮ নং গানঃ তাল-একতালা (আগমনী কবিগান)
মন ভ্রমর রে হরিচরণ পদ্মে পড়
এবার প্রেমানন্দ ভরে, চরণপদ্মে পড়ে, নাম মধু পান কর।
ছিল বিরাজার কুলে, বিরাজের ছলে,
যমুনার জল এল তারপর।
রাধার প্রেম বন্যায় ভেসে, নবদ্বীপ এসে,
যুগল পদ্মে মিশে হন কি সুন্দর।
পেয়ে সুগন্ধির মধু, পিয়ে ভক্ত সাধু,
পূর্ববঙ্গ শুধু বাকী বল তার।
লয়ে মৃত্যুঞ্জয় লোচন, গোলক হীরামন,
শ্রীধাম ওড়াকান্দি পুনঃ অবতার।
পেয়ে পদ্ম ফুলের গন্ধ, তারক মহানন্দ,
প্রেম মকরন্দ পিয়ে অনিবার।
মথি নিল যবন হিন্দু, হরি প্রেম সিন্ধু,
হরিবর এক বিন্দু নাহি পেল তার।
(অন্তরা)
কলির জীব ধন্যরে শ্রীহরি অবতার।
এল নিত্যানন্দ মহানন্দ তারকচাঁদ সদানন্দ শিবশঙ্কর।
এবার নন্দ হল যশোমন্ত বিশ্বামিত্র রামকান্ত সন্দীপন,
ভারতী তিন শক্তি একত্তরে (২) এল গোলকের নাথ,
সেই সীতানাথ, শুনে সেই গোলকচাঁদের হুহুঙ্কার।
প্রভুর কড়ার ছিল মায়ের সনে, জন্মিব ঐশান্য কোণে,
করেন সেই ইচ্ছা পূর্ণ অন্নপূর্ণা মার (২) স্বামী মহানন্দের
দয়া বিনে অগণ্য প্রেম শূন্য দীন হরিবর।
-------------- হরিবর সরকার
১০৯ নং গানঃ তাল- একতালা (আগমনী)
আমায় শান্তি দে মা শান্তিময়ী ঠাকুরাণী।
তুমি উৎকলবাসিনী, লক্ষ্মী স্বরূপিনী, লোচন নন্দিনী এদানী।
জগবন্ধুর মানবলীলা হরিচাঁদের প্রেমের মেলা,
ভক্তে দেয় করঙ্গের মালা, হরিচাঁদ গৃহিণী,
যত হরিবোলা ম’তো মাতাল, জগত মধু ত্রিতাপ তাপিত জননী।
কোন গুণে বর্ণিব মা তোর মহিমা অপার,
আমি ত পাষণ্ড ভণ্ড দুরাচার।
মা তোর ওড়াকান্দি পূর্ণ লীলা পূর্ণ অবতার।
মাগো গয়াধামে পিণ্ড দিলে, জীব যায় বৈকুণ্ঠে চলে,
পুণ্য শেষ হলে মর্তে আসে পুনরায়,
মা তোর কামনা সাগরে ডুবলে বাঞ্ছা পূর্ণ তার
মাগো জীব তরাতে ভবে এলে, আমি অধম পড়ে রলেম ভুলে,
কৃপা কি হবে না এ অধমের উপরে।
তুমি কৃপা কর, ও কৃপাময়ী, মধুসুদনে এবার।
---------- শ্রী মধুসূদন সরকার
১১০ নং গানঃ তাল-রাণেটি
এস হে গুরুচাঁদ, বস আমার হৃদয় খাটে।
তুমি আসিলে আনন্দ হবে (আমার) নিরানন্দ যাবে ছুটে।
হৃদয় খাটে বস আসি, আমার সুমতি যে প্রাণ বিলাসী,
তোমার ঐ চরণে করব দাসী, দেহের প্রতিবাসী সবাই জুটে।
সাধন ভজন দুই সহোদর, তোমার ঐ চরণে করব নফর,
তব পদে হয়ে কিঙ্কর, সদায় থাকবে ঐ চরণ নিকটে।
নিষ্ঠা নিস্কাম ভ্রাতা দুইজন, কাম ক্রোধ রিপু ষোল জন,
করবে তারা পদ প্রক্ষালন, এনে প্রেমবারি শান্তি ঘটে।
শ্রদ্ধা ভক্তি বিল্ব দলে, শান্তি শক্তি কুসুম তুলে,
আমি মালা গেঁথে ফুলে ফুলে, দিব তোমার গলে করপুটে।
চিন্তা বিবেক এ দেহ মন, ধর্ম কর্ম সর্বস্ব ধন,
তোমার ঐ চরণে করব অর্পণ, আমার যা আছে এ দেহ মঠে।
দয়াল শ্রীপতিচাঁদ বলে, কালীচরণ যাস না ভুলে,
ও তোর কালান্ত কাল চরম কালে, গুরুর রূপ দেখবি চিত্রপটে।।
-------- কালীচরণ সরকার
১১১ নং গানঃ তাল- (সন্ধ্যা আরতি)
জয় যশোমন্তের তনয়, জয় জগদীশ।
জয় জয় জগদীশ হরি জয় জগদীশ।
সাঁঝে বাতি দেও হে সবে গোরস তৈলে।
আরতি করে হরিচাঁদের ভক্তে মিলে
অনলে সুগন্ধি ধুপে ধূপতি জ্বালিয়ে
চরণে তুলসী দাও চন্দনে মাখিয়ে।
অমল কমল ফুলে সাজায়ে ডালা,
কমলা সেবিত পদে সেবেন কমলা।
ব্যজনে মরুর পুচ্ছ আর তালপত্র
সুরমা রমণীগণে ব্যজনে শ্রীগাত্র।
শঙ্খ বাজে ঘণ্টা বাজে বাজে করতাল
মধুর মৃদঙ্গ বাজে শুনিতে রসাল।
দিবাকর শশধর দিবাকর সূত
শঙ্কর শঙ্করী নাচে দেখিতে অদ্ভুত।
মৃত্যুঞ্জয় দশরথ নাচে নাচে হীরামন
প্রেম ভরে মাতোয়ারা হয়ে মহানন্দ।
ভনে তারক চন্দ্র দাসে আরতি কাহিনী
আরতি ইতি ভক্তগণ কর হরিধ্বনি।
ভজ হরি কও হরি লও হরি নাম
হা রে হা রে হা রে হরিশ্চন্দ্র গুণধাম।
(ডাক) প্রভু সবেরে করিলে দয়া আমায় কেন বাম
হা রে হা রে হা রে হরিশ্চন্দ্র গুণধাম।
হা রে হা রে হা রে গোলকচন্দ্র গুণধাম।
হা রে (৩) মৃত্যুঞ্জয় গুণধাম।
হা রে (৩) দশরথ গুণধাম।
হা রে (৩) হীরামন গুণধাম।
হা রে (৩) মহানন্দ গুণধাম।
হা রে (৩) হরিভক্ত গুণধাম।
১১২ নং গানঃ তাল- (ভোগারতি)
দেখ রে ভকত লোকে, মনের পুলকে,
ভোজন মন্দিরে হরি যশোমন্তের নন্দন
কাঞ্চন আসনে বসে রেশম বরণ রে।
কর্পূরবাসিত বারি, পূর্ণিত সুবর্ণ ঝারি,
তাহে প্রভু হরিচন্দ্র করলেন আচমন।
দিল স্বর্ণথালে শান্তি দেবী, শালান্ন ব্যঞ্জন রে
শাক সুক্তা ডাল বড়ি, ভাজা টক চড়চড়ি,
দধি দুগ্ধ ঘৃত মধু খাদ্য অগণন।
মাতা অন্নপূর্ণা দিল রাঁধি, করিলেন ভোজন রে।
শঙ্খ বাজে ঘণ্টা বাজে, মধুর মৃদঙ্গ বাজে,
মন্দিরে মাদল বাজে জুড়াল শ্রবণ।
করে রামাগণে বামাস্বরে মঙ্গলাচরণ রে।
ভোজন করিয়ে অন্ত, উঠিলেন হরিচন্দ্র,
সুবর্ণ খড়ুকায় করে দন্তের খালন
সুবাসিত বারি দিয়ে করিলেন আচমন রে।
ভোজনান্তে শয্যাপরে, বসিলেন হর্ষান্তরে,
শান্তিমাতা করিতেছে চরণ সেবন।
করে রামাগণে প্রেম ভরে চামর ব্যঞ্জন রে
দশরথ মৃত্যুঞ্জয় ভোজন আরতি গায়,
করজোড়ে স্তুতি করে ভক্ত হীরামন
ভক্ত বিশ্বনাথ পাতে হাত, প্রসাদ কারণ রে।
গোলক পুলক চিত্তে প্রসাদ পাত্র লয়ে মাথে,
আনন্দে করতেছে কত নর্তন কীর্তন।
বলে আনন্দ বাজারে, প্রসাদ নিবি কোন জন রে।
ব্রহ্মা বিষ্ণু পুরন্দরে, যে প্রসাদ বাঞ্ছা করে,
কে আনিল ওড়াকান্দি জীবের কারণ।
তোরা জয় হরিবল গৌর হরিবল, পলাবে শমন রে।
কাঙ্গাল সেবা লও হে ঠাকুর, কাঙ্গালের ঠাকুর তুমি।
ভিক্ষা করে এনেছিরে, বিদুরের খুদ খেয়েছিলে।
সে হতে অধম আমি, তুমি দয়ালের শিরোমণি।
-------- শ্রীমতিলাল সরকার
১১৩ নং গানঃ তাল-
(ধরণ)
বাংলা ১২৪৩ শে, ফাল্গুন মাসে,
হল লীলার অভ্যুত্থান।
হয়ে শ্রীপতিতে সমাবেশ, শ্রীগুরুচাঁদের আদেশ,
কলির জীব করিতে কল্যাণ।
(১ নং ফুকার) প্রভুর অন্ত শয্যা হবে যখন, শ্রীপতিকে করে যতন,
বলে ওরে ভাই।
ভবে তোর মত আর কেহ নাই, ভবে তোর মত আর নাই,
আমার দেহের শক্তি আছে যত, কিছু আছ তুমি অবগত,
আর কিছু শুনা তত্ত্ব, তুমি যোগাবিস্ট হও এখন।
শুনে হেন বাক্য, হৃদয় করে ঐক্য,
প্রভুর শ্রীচরণ করে লক্ষ্য, তখনই চেয়ে রল।
(মিল) এত দিনের পরে, ভক্তের বোঝা মাথায় করে,
আজ আমার থামিতে হল।
(প্যাচ) আমার মন যেন থাকে তব চরণ পাশে,
গুরুচাঁদ দাঁড়াও এসে মোহন বেশে।।
খুলে দাও যুগল আঁখি, প্রাণ ভরে তোমায় দেখি,
আমার বাকী দিন কয় দিন বাকী। দিও রূপের আলো।
(প্যাচ) গুরুচাঁদের আজ্ঞা, প্রতিজ্ঞা তাই আমার অন্তরে রইল।
(২ নং ফুরাক) আমি মাতা পিতা হয়ে হারা, তোমা ধনে পেয়ে ধরা
অঙ্গে দিলে স্থান,
ভবে কে আছে তোমার সমান, ভবে কে আছে তোমার সমান
আমার সুখ ঐশ্বর্য দিলে যত, পেয়েছি তা অপরিমিত,
আজ আমায় করে অনাথ, তুমি কোথা যাও হে গুরুচাঁদ
তোমার জয় পতাকা রইল জগতে আঁকা,
প্রভু যে পাবে তোমার দেখা, তার ত জনম ভাল।
(অন্তরা) ঐ রূপে দাও দেখা, প্রভু ঐ রূপে দাও দেখা,
(তোমার) পদে আঁকা যাচ্ছ দেখা, ধ্বজ বজ্রাংকুশ রেখা।
বাসরে গঞ্জিলে গোকুল রঞ্জিলে, যমকে ভঞ্জিলে রাখাল সখা,
ওহে কালশশী, বাঁজাও বাঁশী, শিরে লয়ে শিখি পাখা।
অঙ্গের কিরণ রেশম বরণ, যুগল চরণ হিঙ্গুলে মাখা,
তোমার তিন রূপে একরূপ রসের স্বরূপ, ঝলক দিচ্ছে বিজলিতে।।
(পর চিতান) সকল ধর্মের কর্তা তুমি ধন পূর্ণ ভাণ্ডার,
গোঁসাই গোলক লোচন হীরামন, হল সে ধনের মহাজন,
তোমার মত প্রেমদাতা কে আর।
তোমার ভক্তের সঙ্গে মধুর ভাবে, মন যেন রয় সদাই ডুবে,
এই ধন আমি চাই।
যেন হরিগুণ বদনে গাই, হরিগুণ বদনে গাই।
হরিনাম রসে আর প্রেম রসে, মন রসনা যেন সদাই রসে,
এই ভিক্ষা চাই অবশেষে, আমার আর কোন বাসনা নাই।
লক্ষ্মীকান্ত বলে জীবন অন্তকালে, যেন তারকচাঁদ হৃদয় দোলে,
বড় আশায় ছিল।
-----------লক্ষ্মীকান্ত সরকার
১১৪ নং গানঃ তাল-গড়খেমটা
হরি বিনে আর কেহ নাই ভবে।
কত অপরাধে অপরাধী, কতদিনে দয়া হবে।
আমি অধম মুঢ়মতি, না জানি ভজন স্তুতি,
আমি না জানি সাধন, না জানি পুজন, চরণ দিবে কি না দিবে।
সত্যযুগে ছিলেন হরি, ত্রেতায় রাম ধনুকধারী,
তুমি দ্বাপর যুগে করলে লীলে হরি গোপী মনোৎসবে।
গৌর লীলা সাঙ্গ করি, ওড়াকান্দি এলেন হরি,
লয়ে ভক্তবৃন্দ সঙ্গে করি, এবার হরি প্রেম বিলায়।
বলে গোঁসাই লক্ষ্মীকান্তে, প্রাণ সপে দে শ্রীপতিকান্তে,
রাধা দেখবি সদায় হৃদয়কান্তে, হরি শান্তিময় দেখিবি।
----- শ্রীরাধানাথ শিকদার
১১৫ নং গানঃ
শচীপতি বসে আছে সাধনের সন্ধান জেনে।
ও সে ক্ষণেক হাসে ক্ষণেক কান্দে ক্ষণেক পদ্মাসনে।।
হরিচাঁদের সঙ্গে খেলা করে বসে রোজ দু’বেলা,
নয়নে মিলায় গো মেলা, ও ভাব লক্ষণে।।
সেই যে মেলার দক্ষিণ ভাগে, আপনি শ্রীপতি জাগে,
মাতা মঞ্জুলিকা তার বামভাগে, আছে যুগল মিলনে।।
শচীপতির বাক্য নিলে, এই মেলা তোর যাবে মিলে,
প্রেমচাঁদরে তুই রইলি ভুলে, তত্ত্বভেদী হলি নে।
১১৬ নং গানঃ তাল-
জীবের আর ভয় কিরে আছে
কলিযুগে ওড়াকান্দি হরিচাঁদ উদয় হয়েছে
তার প্রেম বন্যায় স্রোত বয়ে জগত মেতেছে
তিনি ঘাটে পথে নিশান দিয়ে রথ চালাইছে।
তার ভক্তবৃন্দ পারের জন্য তরী সাজাইছে
স্বামী তারকচাঁদ কয়, ও তিনকড়ি ভয় কিরে আছে,
তোর পারের কর্তা গুরুচাঁদ সেই ঘাটে বসেছে।
১১৭ নং গানঃ তাল-
কবে শ্রীধাম ওড়াকান্দি যাবরে, আমার পরাণ কান্দে হরিচাঁদ বলে
সে যে প্রেম জলদী দীন দরদী গো, দীন জনকে স্নেহেতে করে কোলে।
ওড়াকান্দির মানুষ রতন,
কর মন, সেই সেই মানুষের যতন, বন্ধু নাই কেউ তাহার মতন,
তারে যতনে মিলিয়ে রতন গো, হরিচাঁদের মহাভাব সিন্ধু জলে।
যে জন তারে দেখেছে একবার,
ভুলে থাকে সাধ্য কার, সে নয় নিজের বাধ্য তার,
হরিচাঁদের পায়ে দিয়ে সব ভার গো, নিত্যানন্দে চিত্ত যে তাহার দোলে।
কলির জীবের দিতে পারের পথ,
ওড়াকান্দি সরল সহজ মত, পথের পরে হরিচাঁদের রথ,
রথে উঠল মৃত্যুঞ্জয় দশরথ গো, গোলক তারক মহানন্দ এককালে।
যে জন তারে পারে ডাকিতে,
সেকি পারে গৃহে থাকিতে, জল ঝরে তার যুগল আঁখিতে,
বিজয় বলে দিন থাকিতে গো, সকাল সকাল চলে আয় ভাই সকলে।
--------------- পাগল বিজয় সরকার।