সভাগীতিঃ ১ম অংশ
সভা গীতি
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ জয় জয় জয়।
যশোমন্ত রামাকান্ত জয় জয় জয়।।
অন্নপূর্ণা সত্যভামা মাতা জয় জয়।
জয় জয় হরিবংশধরগণ জয়।।
জয় শ্রীশশিভূষণ শ্রীসুধন্যচন্দ্র।
(লাইন জ্ঞাপ)
জয় জয় ভগবতী জয় শ্রীশ্রীপতি।
প্রমথ মন্মথ জয় অগতির গতি।।
পতিত পাবন হেতু জয় জয় জয়।
জয় জয় অন্তরঙ্গ মতুয়ার জয়।।
জয় জয় অকামনা প্রেমভক্তি জয়।
যেই জন প্রাপ্ত হ’ল তাঁর জয় জয়।।
পঠনে শ্রবণে জয় হরিনাম জয়।
সফলা নগরী ওঢ়াকাঁদি জয় জয়।।
যেবা দেশে যেই ভক্ত সেই স্থান জয়।
জনক জননী তাঁর জয় জয় জয়।।
হরিগুরুচাঁদ বাঞ্ছাকল্পতরু জয়।
এ দীনের স্থান প্রভু রেখ রাঙ্গা পায়।।
রাজা পঞ্চম জর্জের রাজ্যভিষেক উপলক্ষ্যে ঠাকুরের দরবার ও রাজদত্ত পরিতোষিক প্রাপ্ত ১৯০৫ সাল
রাজা পঞ্চম জর্জের অভিষেক দিনে।
হইল বিরাট সভা দিল্লীর আসনে।।
মনোহর বেশে হয় সে সভা সুজন।
নানাবিধ কারুকার্য তাহে সুশোভন।।
যুধিষ্ঠির রাজসুয় যজ্ঞ করেছিল।
ময়দানব সে সভা রচনা করিল।।
ততোধিক সেই সভা হইল সুজন।
বহু রাজগণ এল পেয়ে নিমন্ত্রণ।।
মিত্র কি করদ রাজা এল সর্বজন।
সভা হেরি সবাকার প্রফুল্লিত মন।।
মহারাজ বসিবেন রত্নসিংহাসনে।
রাজাগণ অভিষেক করেন যতনে।।
মণি মুক্তা প্রবলাদি বহু করে দান।
স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে করে রাজার সম্মান।।
সেই উপলক্ষ্যে সভা প্রত্যেক জিলায়।
লাটের উপর তাহা ন্যস্ত করা হয়।।
সেই উপলক্ষ্যে সভা ফরিদপুরেতে।
প্রভুর নিকট কার্ড এল তথা হ’তে।।
যাইতে উদ্যোগী প্রভু বলেন সবায়।
মাত্র চারিজন সঙ্গী যাইব তথায়।।
বিশ্বেশ্বর চৌধুরী ঠাকুর ভগবতী।
গোবিন্দের পুত্র অভিমন্যু হয় সাথী।।
এ সবে করিয়ে সঙ্গী প্রভু দয়াময়।
খুলনা হইতে পরে কলিকাতা যায়।।
তথা হ’তে আইলেন ফরিদপুরেতে।
উপনীত হইলেন আনন্দিত চিতে।।
কুমুদ মল্লিক যিনি ডেপুটি সে হয়।
তাহার বাসায় যান প্রভু দয়াময়।।
প্রভুকে হেরিয়ে হ’ল আনন্দ অপার।
ভক্তিভরে প্রভু পদে মাগে পরিহার।।
উত্তর আসন পরে বৈসে দয়াময়।
অপরে বসিল সবে হরিষ হৃদয়।।
সেই স্থানে সবে মিলে ভোজ সমাধিল।
ম্যাজিস্ট্রেট স্থানে প্রভু একাকী চলিল।।
নেহারিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট যতনে বসায়।
সুমধুর ভাবে প্রভু সনে কথা কয়।।
কিবা অভিপ্রায় নিয়ে হেথা আগমন।
প্রভু বলে আসিয়েছি পেয়ে নিমন্ত্রণ।।
এত শুনি ম্যাজিস্ট্রেট ভাবিল হৃদয়।
সামান্য না হইবে ইনি জানিনু নিশ্চয়।।
মহারাজ তুল্য ব্যক্তি হেরি যে লক্ষণ।
রাজ উপহার প্রাপ্ত যোগ্য ইনি হ’ন।।
এইমত ভাবে হৃদে সেই মহামতি।
বলে রাজা উপহার পাবেন সম্প্রতি।।
প্রভু সনে বহুক্ষণ হ’ল আলাপন।
যাহাতে এ জাতি পায় উচ্চতরাসন।।
ম্যাজিস্ট্রেট তাহা অনুমোদন করিল।
মহানন্দে প্রভু মোর পূর্ব স্থানে এল।।
এদিকেতে হইয়াছে সভা আয়োজন।
অতীব বিচিত্র ভাবে হয় সুশোভন।।
নানাবিধ কারুকার্য বর্ণনা অতীত।
সুচিত্র কত যে শোভা শোভে চারিভিত।।
হেন সভা মাঝে বৈসে মহারথীগণ।
জমিদারবর্গ যত শূদ্র কি ব্রাহ্মণ।।
নানাদেশ বাসী হয় নাম লব কত।
সকলেই সভামাঝে হ’ন সমবেত।।
বায়ান্ন খানা চেয়ার বিচিত্র সজ্জিত।
এক সারি রাখিয়াছে সে সভায় ভিত।।
বসিয়েছে যথাযোগ্য ব্যক্তি যেবা হয়।
সে সভায় দ্বারদেশে প্রভু দয়াময়।।
অঙ্গেতে পরেছে সুনির্মল পরিচ্ছদ।
রাজতুল্য বেশ ধরে প্রভু গুরুচাঁদ।।
কুমুদে লইয়ে প্রভু সভাতে পৌছিল।
উত্তম আসন দানে প্রভুকে তোষিল।।
ম্যাজিস্ট্রেট হেনকালে প্রভুস্থানে এসে।
প্রভু মাথে পুষ্পাঞ্জলি দানিল হরিষে।।
প্রভুর অঙ্গেতে দিল কুম্কুম চন্দন।
আতর গোলাপ করে অঙ্গেতে লেপন।।
স্বহস্তে ফুলের হার শ্রীকণ্ঠে দোলায়।
চারিদিকে হ’তে কেহ করে জয় জয়।।
সভাস্থলে মহাপ্রভু হ’ন অগ্রগণ্য।
সভাসদগণে সবে করে ধন্য ধন্য।
সুবর্ণ পদকখানি ধরিয়ে করেতে।
আনন্দেতে অর্পিলেন প্রভুর কণ্ঠেতে।।
অপরূপ শোভা তাহে সভাতে হইল।
দেবগণ মধ্যে যথা দেবেন্দ্র বসিল।।
পদক অর্পিয়ে পুনঃ বলেন বচন।
এক কথা বলি আমি করুণ শ্রবণ।।
সবাকার অগ্রগণ্য হ’লেন সভায়।
সর্বঠাই এ সম্মান থাকিবে বজায়।।
রাজদত্ত এ সম্মান দানিয়ে প্রভুকে।
অপরে একান্নজন পাইল প্রত্যেকে।।
জয় জয় নাদে সভা সমাপ্ত হইল।
অতপর প্রভু মোর পূর্বস্থানে এল।।
কুমুদে লইয়ে পথে যবে বাহিরায়।
চারিটি প্রহরী এসে প্রণমিল পায়।।
তারা কহে আপনি যে হন মহাত্মন।
বিদায় প্রার্থনা করি মোরা চারিজন।।
কুড়ি টাকা চারিজনে দেন দয়াময়।
ধন্যবাদ দিয়ে তারা হইল বিদায়।।
কুমুদের বাসাশ্রমে বৈসে দয়াময়।
কুমুদের অত্যানন্দ ধরে না হৃদয়।।
স্বভক্তি অন্তরে সেবে বিবিধ ব্যঞ্জনে।
পরিতুষ্ট মহাপ্রভু হলেন ভোজনে।।
মহানন্দে সেই স্থানে বঞ্চিল রজনী।
প্রভু চলে নিজবাসে প্রভাত যামিনী।।
অবিলম্বে আপনার আবাসে পৌছিল।
রাজার মঙ্গল হিতে হরি হরি বল।।
আত্মগ্লানি
এইভাবে প্রভু মোর জীবের লাগিয়ে।
ভ্রমিতেছে অনুক্ষণ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে।।
ভক্তগণ শ্রীধামেতে হইয়ে উদয়।
রাজদত্ত এ সম্মান শুনিবার পায়।।
কেহ বলে ওহে ভাই শুনহ সকলে।
হেন ভাগ্য না হইবে আর কোন কালে।।
কৃপা করি এসেছেন প্রভু দয়াময়।
শুধু আমাদের লাগি এসব করয়।।
দ্বিজ নমশূদ্র মোরা কেহ না জানিত।
হীন জাতি ব’লে সবে উপেক্ষা করিত।।
আমাদের বুদ্ধি বলে না হ’ল সাধন।
করিলেন গুরুচাঁদ পতিতে তারণ।।
এই মর্ম কোনদিন কেহ নহে জানে।
অজ্ঞান সাগর মাঝে আছি নিশিদিনে।।
এ হেন উচ্চ বংশে জনম লভিয়ে।
বারেকের তরে তাহা দেখে না চাহিয়ে।।
ভ্রমের মহিমা পদে হ’য়ে নিমজ্জিত।
কুল পানে পুনঃ নহে চাহি কদাচিৎ।।
অন্যান্য জাতির ঠাই নতশির করি।
অজ্ঞান আঁধারে রহি বহুকাল ধরি।।
সিংহের শাবক হ’য়ে আপনা ভুলিয়ে।
উলুবনে রহিয়েছে শৃগাল সাজিয়ে।।
হীনজন সম কত ক’রেছি বড়াই।
আত্মতত্ত্ব ভুলে গিয়ে আপনা হারাই।।
বৃথা গর্ব করি সদা ন’য়ে হীন গতি।
ভ্রমেও ভাবিনা মোরা হই কোন জাতি।।
পেয়েছি আঁধারে আলো কভু নহে দেখি।
আত্মসুখ ভুলিয়ে ঐহিকে হই সুখী।।
এই জাতি নমশূদ্র অথবা ব্রাহ্মণ।
পরিচয় হ’ল শুধু প্রভুর কারণ।।
কেহ নহে জানি মোরা ব্রাহ্মণ নন্দন।
অজ্ঞান আঁধারে শুধু রয়েছি মগন।।
জাতিশ্বর গুরুচাঁদ জাগাইল জাতি।
কৃপা করি জ্বেলে দিল জ্ঞানালোক বাতি।।
যাহার কৃপায় ঘুচে অজ্ঞান আঁধার।
এস সবে সেই পদে মাগী পরিহার।।
মানসে গঠিয়ে মূর্তি রাখি হৃদি মাঝে।
মিটাইব মন সাধ মন ফুলে পুঁজে।।
পতিতের বন্ধু আর হবে না এমন।
জনমের মত প্রেমে খেল সন্তরণ।।
এমত সুযোগ আর মিলিবেনা ভাই।
ওপদ আশ্রয় করি জীবন কাটাই।।
ব্রহ্মার বাঞ্চিত ধন পেয়েছি এবার।
হেন দিন বয়ে গেলে মিলিবে না আর।।
দৃঢ় করি ধর সবে গুরুচাঁদ পদে।
বিচরণ ভনে তাহা মনের আহ্লাদে।।
ঢাকা নমশূদ্রের বিরাট সভা
একদা হইল সভা ঢাকার শহরে।
নমশূদ্র সম্মিলন উপলক্ষ্যে করে।।
তথা হতে প্রভু ঠাই এল নিমন্ত্রণ।
তথায় যাইতে প্রভু করেন মনন।।
শ্রীযজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস শ্রীদুর্গাচরণ।
অনুরুদ্ধ কীর্তনিয়া সঙ্গেতে গমন।।
আনন্দেতে আইলেন জগবন্ধু দাস।
প্রভু সনে উপনীত পরম উল্লাস।।
ডক্টর সি.এস. মিড প্রভুর সংহতি।
নেবেল সাহেব আছে উপনীত তথি।।
গুরুচাঁদ প্রভু যবে হ’ল উপনীত।
বহু নমশূদ্র এসে হ’ল উপস্থিত।।
অভ্যর্থনা করি সবে প্রভুকে লইল।
ভক্তিভরে উপযুক্ত স্থানে বসাইল।।
পরেতে হইল তথা সভা আয়োজন।
সভাপতি রূপে করে প্রভুকে বরণ।।
বহু সমাদর করি লইল সভায়।
সভাস্থানে আলো করি বসে দয়াময়।।
নানা বর্ণ ফুল হার করিল অর্পণ।
বক্ষপরে দুলিতেছে মধুর দর্শন।।
একেত প্রভুর হয় জ্যোতির্ময় রূপ।
তাহে শোভে ফুল হার কিবা অপরূপ।।
বিস্মিত ভাবেতে সবে করে দরশন।
কেহ বলে হেন রূপ না দেখি কখন।।
প্রভুর উভয় পার্শ্বে সাহেব দু’জন।
আনন্দেতে করিয়েছে আসন গ্রহণ।।
তাহাদের দুই পার্শ্বে বসিল দু’জন।
যেন দোঁহে করিতেছে চামর ব্যঞ্জন।।
ক্রমাগত যথাস্থানে বৈসে বহুজন।
হ’য়েছে বিরাট সভা লোক অগণন।।
কেহ করি ঠাকুরের চরণ বন্দন।
বিপুল ভাবেতে কত ক’রেছে স্তবন।।
গুরুচাঁদ রূপে তুমি নমশূদ্র কুলে।
কোটি চন্দ্র প্রভা করে চরণ কমলে।।
অজানুলম্বিত বাহু চৌরাশ কপাল।
ভুজদ্বয় শোভে যথা পদ্মের মৃণাল।।
কোকনদ জিনি পদ মরি কি সুন্দর।
আহা কিবা করে শোভা সুন্দর অধর।।
মনে হয় এই পদ ব্রহ্মার বাঞ্ছিত।
যোগী ঋষিগণ বুঝি ওপদ সেবিত।।
এহেন ভাবেতে কেহ করেছে স্তবন।
যেন তাহে স্নিগ্ধ হ’ল সভাসদগণ।।
হেনকালে এক ব্যক্তি এলেন তথায়।
ধনাঢ্য নন্দন বটে গর্বিত সে হয়।।
রুঢ়ভাষে সেই ব্যক্তি বলেছে বচন।
সভাসদগণে শুন আমার কথন।।
এই দেশে বহু বহু আছে বিজ্ঞ ব্যক্তি।
তার একজনে সবে কর সভাপতি।।
কোথা’র কেবা ইনি কে চিনিবে তাহারে।
সভাপতি যোগ্য নও এ সভ্যমাঝারে।।
এই মত বলে যদি বচন বিন্যাস।
গর্জন করিয়ে উঠে যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস।।
কেবা তুমি নাহি জানি কটু কথা কও।
কেবা হবে সভাপতি তারে এনে দাও।।
বিদ্যার গৌরব কিংবা ধন অহংকারে।
রুঢ় ভাবে কথা কও সভার মাঝারে।।
অনুক্ষণ আছি মত্ত মোহের বিকারে।
কেবা হয় সভাপতি নাহি চিনি তারে।।
বিদ্যাভ্যাস করি হেন চক্ষু হীন হয়।
এ জীবনে তাহা কভু না দেখি কোথায়।।
যতদিন অজ্ঞানের অন্ধকারে রবে।
ততদিন এ মানুষ কেমনে চিনিবে।।
তোমার জনম বুঝি এই পূর্ববঙ্গে।
পরিচয় পাইলাম কথার প্রসঙ্গে।।
সভাপতি শব্দ অর্থ ভবে কিবা হয়।
প্রকাশিয়ে কহ দেখি করিয়ে নির্ণয়।।
নিরুত্তর থাক কেন সভাসদগণ।
সভাপতি শব্দ অর্থ কর নিরূপণ।।
কোন ব্যক্তি এই বিশ্বে হয় সভাপতি।
কোন মানবের হয় এহেন শকতি।।
কোন জন সভাপতি আমাকে বুঝাও।
তারপর সভাপতি তারে করি লও।।
চেয়ে দেখ দুই পার্শ্বে রাজবংশধর।
কেন থাকে তাহা কিছু জান বিজ্ঞবর।।
উভয় ডাক্তার এবং ধর্ম প্রচারক।
তারা কেন সাজিয়েছে পার্শ্ব সুরক্ষক।।
ভূপতির বংশ জন্ম সভাপতি নয়।
তার তত্ত্ব জান কিছু ওহে মহাশয়।।
এমত বলিতে ক্রোধে হইল কম্পন।
ডক্টর সি.এস. মিডে চিন না কখন।।
এবে আমি সেই কথা করিব বর্ণন।
মন দিয়ে শুন এবে যত সভাজন।।
খৃষ্টধর্ম প্রচারক মধ্যে ইনি নেতা।
কি দেখিয়ে অই পদে নোয়াইল মাথা।।
হেনকালে মিড বলে শুন মহাশয়।
অতিরিক্ত ক্রোধ করা কভু ভাল নয়।।
আমি বলি সেই কথা সবাকার ঠাই।
কি কারণ অই পদে মস্তক নোয়াই।।
এত বলি সেই মিড সভায় দাঁড়াল।
হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।
মিডের বক্তৃতা
ডক্টর সি.এস. মিড সভার মাঝারে।
ঠাকুরের আজ্ঞা নিয়ে কহে ধীরে ধীরে।।
আমরা এ ঠাকুরকে কেন মানিয়েছি।
ইনিই জগত কর্তা বুঝিয়ে নিয়েছি।।
অনুমান নাহি মান বর্তমান বিনে।
বুঝিতে পেরেছি তাই প্রত্যক্ষ প্রমাণে।।
পঞ্চলক্ষ নমশূদ্র কর্তা শুধু নয়।
সর্বজাতিশ্বর সবাকার গতি হয়।।
নমশূদ্র কুলোদ্ভব জগত রঞ্জন।
ভকতের প্রাণধন বিপদ ভঞ্জন।।
নমশূদ্র কুলে এসে হ’ল অধিষ্ঠান।
অনুক্ষণ চিন্তা তার বিশ্বের কল্যাণ।।
এই মত বাক্য যদি মিড বলিল।
সভাস্থ সকল লোক স্তম্ভিত হইল।।
হো হো গুরুচাঁদ রোল সভায় উঠিল।
হরিধ্বনি করি মিডে ধন্যবাদ দিল।।
আকুল হইয়া কেহ কাঁদিতে লাগিল।
নয়ন জলেতে বক্ষ ভাসিয়ে চলিল।।
সভামাঝে বহি যায় প্রেম তরঙ্গিণী।
প্লাবিল হইয়ে তাতে ভাসিল ধরণী।।
কাঁদা কাঁদি ঢলাঢলি সভায় হইল।
বিনয় বচনে কেহ প্রভুকে বলিল।।
ওহে প্রভু দয়াময় পতিত পাবন।
নিজ গুণে রাখন নাম অধম তারণ।।
আমরা অজ্ঞান মাঝে আছি ডুব দিয়ে।
কেমনেতে প্রভু তোমা লইব চিনিয়ে।।
এইভাবে স্তব করি ক্রমে শান্ত হ’ল।
তারকচন্দ্র সরকার বক্তৃতা করিল।।
নানাভাবে পেল শান্তি সভাসদজনে।
সভা সাঙ্গ করিলেন আনন্দিত মনে।।
প্রেমানন্দ ভরে সবে বল হরি হরি।
বিচরণ কহে কর শ্রীগুরুকাণ্ডারী।।
মহাপ্রভুর ভোজন
সভা সাঙ্গ করি সবে, প্রেমানন্দ উৎসবে,
একে একে সবে চলি যায়।
সঙ্গে করি জগন্নাথ, চলিয়াছে রাধানাথ,
উপনীত আপন বাসায়।।
উত্তম আসন পরে, বসি প্রভু হর্ষান্তরে,
রহিলেন ভক্তগণ ল’য়ে।
হরি কথা আলাপনে, রহে প্রভু ভক্ত সনে,
পুনঃ বৈসে ভোজ সমাপিয়ে।।
শ্রীমুখেতে বলে বাণী, যেন অমৃতের খনি,
সুধারাশি করে বরিষণ।
শুনে সে মধুর ভাষ, হয় কত প্রেমোচ্ছাস,
প্রেম বারি হ’তেছে পতন।।
পান করি কথামৃত, সবে হ’ল দ্রবীভূত,
আত্মস্মৃতি হারিয়েছে সবে।
কেহ হ’ল সংজ্ঞাহীন, যেন দেহে প্রাণহীন,
ডুবে আছে যেন মহাভাবে।।
হরিকথা আলাপনে, থাকিল আনন্দ মনে,
এদিকেতে ভাস্কর উদয়।
প্রেমের নাহিক ক্ষান্ত, বহিতেছে অবিশ্রান্ত,
মহাবেগে ধারা বাহি যায়।।
যত ছিল নমশূদ্র, আইলেন ভদ্রাভদ্র,
সবে এসে দিল দরশন।
স্থানীয় যতেক নারী, এস সবে সারি সারি,
স্বামীসহ এল কোন জন।।
এইমত এল যত, তাহা বা বর্ণিব কত,
অগণিত লোক আমদানি।
ঘিরিয়েছে চারিপাশে, দাঁড়াইয়ে কেহ বসে,
সে বাবুর বাসা যতখানি।।
ঠাকুরের রূপ দেখি, পালটিতে নারে আঁখি,
অনিমেষ সবে চেয়ে রয়।
কিবা এ রূপের ছটা, নব মেঘে ঘনঘটা,
যেন তাহে বিজলী খেলায়।।
বলে দিদি কোথা ছিল, এ হেন মানুষ বল,
হেন রূপ কভু হেরি নাই।
কেবা হেন ভাগ্যবতী, হেন রূপ গুণনিধি,
মরি ল’য়ে তাহার বালাই।।
পাঠিয়েছে কোন বিধি, হেন রূপ গুণনিধি,
ধন্য বিধি তারে ধন্য মানি।
না জানি কত নির্জনে, গঠিয়াছে সন্তর্পণে,
রূপ যেন পদ্মরাগ মণি।।
কোন নারী বলে দিদি, এল বুঝি গুণনিধি,
পূর্ণশশী মানব আকারে।
এই সেই বিশ্ববন্ধু, ত্বরাইতে ভবসিন্ধু,
তাহে রূপ শোভে এ আধারে।।
এই মত সব ধনী, করিতেছে কানাকানি,
কেহ কাঁদে আকুল হইয়ে।
ফুকারিয়ে কেহ কাঁদে, হিয়ে ধৈর্য নাহি বাঁধে,
ঢলে পড়ে স্মৃতি হারাইয়ে।।
হেন রূপ হেরি নাই, কেবা এল এ গোঁসাই,
কোন দেশে করেন বসতি।
(লাইন জ্ঞাপ)
না হেরিয়ে ছিনু ভালো, এবা কি বিপদ হ’ল,
নাহি পারি আঁখি ফিরাইতে।
কেমনে গৃহেতে যাব, মরমে বেদনা পাব,
নাহি পারি মন নিয়ে যেতে।।
এইমত রামাগণ, কাঁদিতেছে কোন জন,
চক্ষে ধারা বহে অনিবার।
গুরুচাঁদ রূপ ছবি, উদিল অক্ষয় রবি,
বেলা হ’ল একই প্রহর।।
প্রভু বলে অকস্মাৎ, খেতে দাও রাধানাথ,
শুনে বাবু মহা ব্যস্ত হ’ল।
গিয়ে দেখে রান্না ঘরে, কেহ নাই তথাকারে,
শিরে যেন বজ্রাঘাত প’ল।।
পরেতে সন্ধান করে, মেয়েরা রন্ধন করে,
বুঝি সব যতনে রেখেছে।
হেরিলেন সর্ব ঠাই, রান্না বান্না কিছু নাই,
শুধু সব সাজান রয়েছে।।
কেঁদে বলে কি হইল, কি করি উপায় বল,
কেবা কোথা গেল কি জন্যেতে।
আর না সহিতে পারি, ক্রোধে হ’ল অঙ্গ ভারি,
মহাক্রোধে চলে বাহিরিতে।।
ক্রোধ ভরে চলে বাণী, চাহিয়ে নিজ রমণী,
ধরে নাই ইন্দন জ্বালান।
কোন মেয়ে লোক নাই, কি উপায় বল তাই,
প্রভু মোর এবে খেতে চান্।।
ব’লেছে কর্কশ বাণী, অনেকেই তাহা শুনি,
সবে মাত্র করে হায় হায়।
নিজ মুখে চান খেতে, যদি নাহি পারি দিতে,
হায় হায় কি হবে উপায়।।
এত শুনি মেয়ে গণে, চলি যায় ভীত মনে,
রান্না ঘরে দিল দরশন।
হ’য়ে গেছে রান্নাসারা, দেখে সব ভাণ্ড পোরা,
কেবা যেন করেছে রন্ধন।।
নেহারিয়ে সব ধনী, করিতেছে কানাকানি,
বল দিনি এবা কোন রীতি।
সব দ্রব্য ভারে ভারে, রেখেছে রন্ধন করে,
এই রান্না করে কোন সতী।।
এই মত রামাগণে, ভাবিয়ে না পায় মনে,
প্রভু বলে আর কিবা চাও।
গগনে অধিক বেলা, হ’য়েছে ক্ষুধার জ্বালা,
ত্বরা করি মোরে খেতে দাও।।
শুনিয়ে প্রভুর কথা, হৃদয়ে লইয়ে ব্যাথা,
বলে কেহ সকরুণ স্বরে।
আপনার দরশনে, এল সব রামাগণে,
কেহ নাহি ছিল রান্নাঘরে।।
প্রভু বলে মম পাশ, কেন কহ মিথ্যা ভাষ,
পাকশালে হইয়াছে রান্না।
উত্তম ব্যঞ্জন করি, রাখিয়েছে সারি সারি,
রান্না করি রাখে অন্নপূর্ণা।।
এই বাক্য বলে যবে, আশ্চর্য গণিয়ে সবে,
রান্না ঘরে চলিলেন ধেয়ে।
মহাপ্রভু বলে যাহা, দৌড়ে গিয়ে দেখি তাহা,
কাঁদিতেছে বসি সব মেয়ে।।
সবে বলে কাঁদ কেন, মোদের বচন শুন,
এই রান্না কেবা করিয়াছে।
কেঁদে বলে সব ধনী, মোরা কিছু নাহি জানি,
এসে দেখি রন্ধন হ’য়েছে।।
এতেক শুনিয়ে সবে, আশ্চর্য মনেতে ভেবে,
সবে যেন হইল বিহুশ।
কেহ বলে ওহে ভাই, এমত যে দেখি নাই,
এ ঠাকুর মনের মানুষ।।
মুহূর্তেক মধ্যে রান্না, বিনে সেই অন্নপূর্ণা,
আর কেহ কভু পারে নাই।
নহে ইহা হবে কেন, সমাপিত এ রন্ধন,
তাই বলে শ্রীগুরু গোঁসাই।।
এবে বুঝিলাম সার, পূর্ণ ব্রহ্ম পরাৎপর,
ইচ্ছাময় ভুবন পাবন।
মিড বলিলেন যাহা, প্রমাণিত হল তাহা,
গুরুচাঁদ ব্রহ্ম সনাতন।।
যিনি আদি অন্ত রূপি, হ’য়েছে ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী,
বুঝি তিনি এসেছে এবার।
জীবের দুর্গতি হেরি, নিজ ধাম পরিহরি,
ওড়াকান্দি মানুষ অবতার।।
পাপী তাপী উদ্ধারিতে, প্রভু এল অবনীতে,
হবে বুঝি ক্ষীরোদের চাঁদ।
শ্বেত নীল পীত বর্ণ, মিলনে তপত স্বর্ণ,
রূপে মুগ্ধ গগনের চাঁদ।।
তাই বুঝি হেন ভাব, আহা কি মধুর ভাব,
নেহারিনু স্বচক্ষেতে সবে।
গুরুচাঁদ মূর্তি ধরি, নমকুলে অবতরী,
এল ত্বরাইতে কলিজীবে।।
এই মত বলাবলি, কাঁদাকাঁদি ঢলাঢলি,
করিতেছে বাবু রাধাকান্ত।
অতপর করি স্থান, প্রভুর সমীপে যান,
বলে ভোজ নিন প্রাণ কান্ত।।
প্রভু এলো ভোজ নিতে, রাধানাথ জোড় হাতে,
দাঁড়িয়ে রহিল সম্মুখেতে।
রামাগণ অন্ন এনে, যোগায় প্রভুর স্থানে,
প্রভু ভোজ করে আনন্দেতে।।
উপাদেয় খাদ্য যত, সুস্বাদু সম অমৃত,
প্রভু বলে আরো দাও কিছু।
এমত হবার নাই, সুধা হ’তে স্বাদ পাই,
দেখ বহু লোক আছে পিছু।।
এইরূপে দ্রব্য যত, সেবিলেন মনোনীত,
অম্বলাদি মিষ্টান্ন যতেক।
অন্য অন্য মিষ্টি যাহা, কিছু কিছু খেল তাহা,
অবশিষ্ট থাকিল অনেক।।
আনন্দে ভোজন করি, বসিলেন শয্যাপরি,
তাম্বুলাদি সেবে দয়াময়।
অবশিষ্ট ছিল যারা, ভোজন করিল তারা,
বলে হেন সেবিনা কোথায়।
সত্য বটে এই রান্না, করিয়েছে অন্নপূর্ণা,
তাই সেবি অমৃত সমান।
সত্যই দয়াল প্রভু, গুরুচাঁদ বিশ্ব বিভু,
এই বাক্য কভু নহে আন্।।
অপরেতে রামাগণে, সবাই আনন্দ মনে,
ভোজকর্ম সমাধা করিল।
যত ছিল ভদ্র ব্যক্তি, বার বার করে উক্তি,
প্রেমভরে হরি হরি বল।।
পুনরায় সভা আয়োজন
রামাগণ সর্বজন আনন্দিত মন।
ভোজ কর্ম সমাপিল ক্রমে সর্বজন।।
অল্প অল্প দ্রব্য যাহা রন্ধনীয় ছিল।
বহুলোক খেয়ে তাহা ফুরাতে নারিল।।
হেরিয়ে বিস্মিত হ’ল বাবু রাধানাথ।
বলিলেন জল দিয়ে রাখ এই ভাত।।
প্রভুর আশ্চর্য লিলা বুঝিতে না পারি।
কা’কে দিয়ে কিবা খেলা খেলে মোর হরি।।
অতঃপর রাধানাথ আকুল পরাণে।
পতিত হইল গিয়ে প্রভুর চরণে।।
রাধানাথ কেঁদে বলে মহাপ্রভু ঠাই।
আপনাকে চিনিবার মম শক্তি নাই।।
আপনি অনাথ বন্ধু সর্ব সারাৎসার।
ওঢ়াকান্দি অবতীর্ণ দয়ার আধার।।
কৃপা করি শ্রীচরণে স্থান দিন মোরে।
আপনি সে সর্ব সার এ তিন সংসারে।।
এইমত স্তুতিবাদ করে রাধানাথ।
করুণা করিয়ে মোরে করুণাত্মসাৎ।।
প্রভু বলে এবে শুন ওহে বাছাধন।
এখনেতে কর পুন সভা আয়োজন।।
শুনি আয়োজন করে প্রভু আজ্ঞামতে।
অগুরুচন্দন ছড়া দিয়ে চারিভিতে।।
উত্তম আসন দিল সভার মাঝারে।
ফরাস চাঁদর পাতি দিল তদুপরে।।
ফুলহার করি তথা প্রভুকে সাজায়।
অপরূপ ফুল সাজে সাজে দয়াময়।।
চন্দন তুলসী দিয়ে পুজিল চরণ।
আতর কুম্কুম অঙ্গে করেছে লেপন।।
হইল প্রভুর শোভা অতি মনোহর।
ভ্রমর ভ্রমরী তথা গুঞ্জে অনিবার।।
মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন।
মৃদুভাবে ফুল্লদল কম্পে ঘনে ঘন।।
রূপ সুধা করে পান প্রাণেতে উল্লাস।
ফুল হ’তে বাহিরায় অপর্যাপ্ত বাস।।
অঙ্গঘ্রাণ পেয়ে সবে মাতিয়ে উঠিল।
প্রেমের পাথারে সবে ভাসিয়ে চলিল।।
মহাপ্রভু বলে সবে শান্ত কর মন।
সভার কর্তব্য এবে কর আলাপন।।
শুনিয়ে প্রভুর বাণী সবে শান্ত হ’ল।
জাতিয় উন্নতি কথা কহিতে লাগিল।।
চারি যুগে এই জাতি কেবা চিনিয়েছে।
নীচ জাতি বলে সবে অবজ্ঞা ক’রিছে।।
নমশূদ্র জাতি ছিল আঁধারে পড়িয়ে।
কেহ কোনদিন তাহা না দেখি বুঝিয়ে।।
গুরুচাঁদ হেরি এই জাতির দুর্গতি।
অকাতরে জ্বেলে দিল জ্ঞানালোক ভাতি।।
না চিনিয়ে সেই ধনে করি অহংকার।
হিংসা নিয়ে করি সদা জাতির বিচার।।
অন্যান্য জাতির হিংসা বহি মস্তকেতে।
না জানিয়ে মূল তত্ত্ব যাই অধপথে।।
মহাপতন হতে যে করিল উদ্ধার।
বারেকের তরে চিন্তা না করি তাহার।।
এইভাবে আত্মগ্লানি অনেক করিল।
সভাস্থ সকলে শুনে অবাক হইল।।
সবে বলে হেন ধন আর না পাইব।
জনমের মত পদে দেহ বিকাইব।।
এমত বলিয়ে মাগে সবে পরিহার।
জনমে জনমে দেখা দিও সর্ব সার।।
তুমি বিনে কেহ নাই তরাইতে বন্ধু।
অপার জলধি পার কর কৃপসিন্ধু।।
এইভাবে স্তুতিবাদ করিল অনেকে।
সভাসাংগ করিলেন মনের পুলকে।।
পুনরায় চলে প্রভু রাধানাথ সনে।
আনন্দে চলিল যত নিজ সঙ্গীগণে।।
হেনকালে এল তথা মোহিনী ডাক্তার।
প্রভু পদে প্রণমিল ভকতি অন্তর।।
বিনয় বাক্যেতে বলে প্রভুর সদন।
যেতে হবে ওহে প্রভু ল’য়ে সঙ্গীগণ।।
প্রভু বলে মোরা হই অষ্টাদশ জন।
সবে মিলি তব বাসা করিব গমন।।
প্রভু বাক্য শ্রবণেতে আনন্দ উদয়।
বলে অদ্যকার নিশি থাকুন হেথায়।।
কল্যপ্রাতে এসে আমি লইব সবাকে।
এইটুকু সময় প্রভু দিবেন আমাকে।।
মোহিনীর বাক্যে প্রভু সন্তুষ্ট হইল।
প্রণমিয়ে সে মোহিনী বিদায় মাগিল।।
প্রভু সনে সর্বজনে বঞ্চিল রজনী।
হরি-গুরুচাঁদ প্রীতে করে হরিধ্বনি।।
ডাক্তার মোহিনী বাবুর বাসায় মহাপ্রভুর গমন
প্রাতঃকালে এল তথা মোহিনী ডাক্তার।
হেরিয়ে সবার হ’ল হরিষ অন্তর।।
অষ্টাদশ খানা পাল্কী সঙ্গেতে করিয়ে।
অষ্টাদশ জনে তাহে লইল তুলিয়ে।।
অবিলম্বে মোহিনীর বাসাতে উদয়।
হুলুধ্বনি করিলেন বধূ আর মায়।।
মোহিনীর নারী হয় সুচারু বদনী।
শ্রীতারিণী ডাক্তারের প্রাণের নন্দিনী।।
ঠাকুরে হেরিয়ে হ’ল আনন্দে অধিরা।
অবিরত দু’নয়নে বহে প্রেম ধারা।।
অতি সুপবিত্র হয় মোহিনীর মাতা।
ভক্তিভরে প্রভু পদে নোয়াইল মাথা।।
প্রভু কহে মোহিনী আমাকে বেঁধেছে।
সে কারণে বন্দি আমি মোহিনীর কাছে।।
এইমত বলে প্রভু মোহিনীর মাকে।
শুনে মোহিনীর মাতা ভাসে প্রেম সুখে।।
হরি কথা কহে প্রভু ভকতের সনে।
বহুক্ষণ কেটে যায় আনন্দিত মনে।।
প্রেমের পাথারে সব খেলেছে সাঁতার।
বিন্দু বিন্দু নয়নেতে বহে প্রেম ধার।।
এদিকেতে শ্রীমোহিনী পরম যতনে।
বাজার করিয়ে নানাবিধ দ্রব্য আনে।।
অপরেতে মহাপ্রভু করে ফলাহার।
পরেতে প্রসাদ নিল অন্য সবে আর।।
কিছুক্ষণ থাকে হরি কথা আলাপনে।
সবে মিলি শুনে তাহা আনন্দিত মনে।।
মোহিনীর মাতা গিয়ে রন্ধন করিল।
উপাদেয় খাদ্য কত স্বঘৃত মিশাল।।
পরেতে মোহিনী বলে স্নান করিবারে।
প্রভু অঙ্গে তৈল মাখে হরিষ অন্তরে।।
আপনি ঢালিছে বাড়ি সেই সে মোহিনী।
স্নান অন্তে পরাইল নব বস্ত্র আনি।।
ক্রমে ক্রমে স্নান কার্য সমাধা করিল।
সানন্দে সকলে তথা ভোজ সমাধিল।।
বিশ্রামান্তে মোহিনীকে বলেন বচন।
এখনে বিদায় মোরে দেহ বাছাধন।।
এতেক শুনিয়ে সবে সজল নয়নে।
ভক্তিভরে প্রণমিল প্রভুর চরণে।।
বিনীত ভাবেতে কহে গদগদ স্বরে।
আপন তনয় সম রাখিবেন মোরে।।
দাস যোগ্য নহে কভু না জানি সাধন।
কৃপা করি দিতে হবে যুগল চরণ।।
এমত বিনয় বাক্য করে উচ্চারণ।
বিন্দু বিন্দু বারিধারা হ’তেছে পতন।।
মিষ্ট বাক্যে মহাপ্রভু সান্তনা করিল।
সঙ্গীগণ সহ পরে বিদায় মাগিল।।
আপন আবাসে হরি এল দয়াময়।
কবি কহে হরি বল দিন বয়ে যায়।।
লাট দরবারে মহাপ্রভুর ফরিদপুরে আগমন
একদা ফরিদপুরে বড় লাট এল।
লাটের কাছারী হ’বে ঘোষণা হইল।।
সেউ উপলক্ষ্যে প্রভু পেয়ে নিমন্ত্রণ।
ভক্তগণ সঙ্গে চলে আনন্দিত মন।।
প্রভুর সহিত চলে শ্রীপতি প্রসন্ন।
চলে যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস মহামান্য।।
ভীষ্ম বাবু আর বিধু চৌধুরী সুজন।
প্রভু সঙ্গে চলে কৃষ্ণদাস বিচরণ।।
বিচরণ কহে বাণী যেতে নাহি পারি।
বড়ই অভাব মোর এখনে কি করি।।
প্রভু বলে তোর সব করিব পূরণ।
মম সঙ্গে চল যাই ওহে বিচরণ।।
প্রভু বাক্যে মনে মনে আনন্দ লভিল।
অদ্য হ’তে বুঝি মোর বিপদ ঘুচিল।।
প্রভু বাক্যে হবে মোর দূর সে অভাব।
মহেশ ব্যাপারী বুঝিলেন সেউ ভাব।।
বলে ওহে বিচরণ প্রভু সনে যাও।
ভাব রক্ষা করি বাপ অভাব ঘুচাও।।
মহেশের প্রতি প্রভু বলেন বচন।
বিচরণের যে অভাব করিও পূরণ।।
মহেশ ব’লেছে প্রভু বাঞ্ছা আপনার।
কৃপা হ’লে হবে ভাব অভাব কি ছার।।
এইমত বলে কয়ে তরী আরোহিল।
প্রভু সঙ্গে মনোরঙ্গে বাহিয়া চলিল।।
পথি মধ্যে নানা কথা আলোচনা হয়।
বিচরণ বাহে তরী আনন্দ হৃদয়।।
অবিলম্বে শহরেতে উদয় হইল।
নানা দেশী সুসজ্জিত তরণী আইল।।
লাট আগমনে সবে প্রফুল্লিত মনে।
এল যত বড়লোক তরী আরোহণে।।
সে সব তরীর পার্শ্বে তরণী বাঁধিল।
অপূর্ব ঘটনা এক তথায় হইল।।
জনৈক উকিল সুত জাতিতে ব্রাহ্মণ।
শুন সবে বলি এবে তাঁর বিবরণ।।
নাম ধাম নাহি জানি থাকে শহরেতে।
দৈবযোগে ব্যাধি হয় তাহার দেহেতে।।
উদরে প্লীহা যকৃত বড়ই বেড়েছে।
দিন দিন সে বালক দুর্বল হ’য়েছে।।
মন দুঃখে সে বালক ভাসে আঁখিজলে।
বাঁচিব না ভেবে তার হৃদি যায় জ্বলে।।
দৈবযোগে একদিন নিশি অবসান।
অপরূপ রুপে এক দেখিনু স্বপন।।
যেন প্রভু গুরুচাঁদ বসিয়ে শিয়রে।
বালকের প্রতি বাণী বলে ধীরে ধীরে।।
শুনরে বালক তোর কোন ভয় নাই।
আমি যাহা বলি এবে কর গিয়ে তাই।।
বাজার হইতে আন বোয়াইল মাছ।
ভাল মত পচাইবি রেখে গৃহ মাঝ।।
সেই পচা মৎস্য রান্না করিয়ে খাইবি।
তা হ’লে এ ব্যাধি হ’তে আরোগ্য পাইবি।।
প্রাতে উঠি জানাইল পিতার সদনে।
বাজার হইতে মৎস্য আনাইল কিনে।।
সেই মৎস্য পচা করে যেদিন খাইল।
সে হইতে ব্যাধি আরোগ্য হইল।।
প্রভুর তরণী যবে হইল উদয়।
পিতার নিকট সেই বালক শুধায়।।
ওই নৌকা মাঝে মম ঠাকুর এসেছে।
ওহে পিতা চল যাই ঠাকুরের কাছে।।
বড়ই উতলা হয় হেরিতে ঠাকুরে।
পুত্র আজ্ঞা অনুবর্তী চলিল সত্বরে।।
প্রভুর তরণী হেরি বালক বলেছে।
এই নৌকা মাঝে মোর ঠাকুর ব’সেছে।।
এত শুনি নিকটেতে উদয় হইল।
পিতাপুত্রে প্রভুপদে প্রণাম করিল।।
প্রভু বলে কি করিলে তুমি যে ব্রাহ্মণ।
মম পদে প্রণিপাত কর কি কারণ।।
জাতিত্ব গৌরব কেন কর পরিহার।
কহ শুনি কেন কর হেন ব্যবহার।।
ব’লেছে উকিল বাবু করিয়ে মিনতি।
আপনি হে জাতিশ্বর অগতির গতি।।
জাতি মান কুলশীল ত্যজিয়ে সকল।
সম্বল করেছি মাত্র ওপদ যুগল।।
বালকের প্রাণ রক্ষা যে দিন হয়েছে।
জাতি কুল যাহা কিছু সকল গিয়েছে।।
চিনিতে শকতি নহে ছিল যে আমার।
পুত্রের কারণ দেখা পাই আপনার।।
এতেক বলয়ে চোখে বহে অশ্রুধার।
শ্রুতমাত্রে সবে হ’ল বিস্ময় অন্তর।।
পূর্বাপর যে বৃত্তান্ত সকল বলিল।
শুনিয়ে সবার প্রাণে আনন্দ বাড়িল।।
অসম্ভব ক্রিয়া যত প্রভুতে সম্ভব।
কে বুঝিবে বিশ্ব মাঝে করে কোন ভাব।।
ভাবের ভাবুক হ’লে বুঝে সেইজন।
কিছু না বুঝিতে পারি আমি অভাজন।।
এইমত আশ্চর্য খেলা প্রকাশ করিল।
গুরুচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
প্রভুর মিডের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কথোপকথন ও নিজালয়ে গমন
অতপর সবে মিলি তীরেতে নামিল।
পথি মধ্যে মিড সনে সাক্ষাৎ হইল।।
দোঁহার দর্শনে দোঁহে আনন্দিত মন।
অপরেতে নানা কথা করে আলাপন।।
কি ভাবে করিতে হবে লাট দরশন।
দোঁহে মিলি সেই কথা করে আলাপন।।
তথা হ’তো মহাপ্রভু করেন গমন।
কুমুদ মল্লিক স্থানে উপনীত হন।।
প্রভুকে নেহারি সেই মল্লিক সুজন।
ভক্তিভরে প্রভু পদে বন্দিল তখন।।
বসিতে আসন দিয়ে বলে সকাতরে।
কৃতার্থ হইনু এবে আপনাকে হেরে।।
পরশু দিবসে হবে সভা আয়োজন।
সবার শিখিতে হবে রাজ সম্ভাষণ।।
শুনিয়ে সন্তুষ্ট হ’ল প্রভু সে বাক্যেতে।
দুই দিন থাকি শিক্ষা করে যতনেতে।।
অতপর হল তথা সভা আয়োজন।
অতীব বিচিত্র শোভা না যায় বর্ণন।।
বড় বড় মহারথি করে আগমন।
ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি পুলিশের গণ।।
মিড সাহেব সে স্থানে আছে অধিষ্ঠান।
অন্যান্য বহুত লোক করে আগমন।।
যথাযোগ্য স্থানে সবে ব’সেছে সভায়।
সে সভায় উপনীত প্রভু দয়াময়।।
নানা কথা সবে মিলি করে আলোচন।
কি দিয়ে করিবে সবে লাট সম্ভাষণ।।
বড় লাট র’য়েছেন আপন জাহাজে।
কি করা কর্তব্য তাহা নাহি পায় বুঝে।।
ম্যাজিস্ট্রেট প্রভু প্রতি বলেন বচন।
কিবা হয় আপনার করিতে মনন।।
প্রভু বলে মানপত্র দানিয়ে লাটেরে।
মনে হয় সম্ভাষণ করি সমাদরে।।
ম্যাজিস্ট্রেট বলে তবে শুনুন বচন।
লাট প্রতি মানপত্র হবে না এখন।।
দানিলে ডিপুটেশন বাড়িবে সম্মান।
পদ্মার মাঝেতে সবে করুণ প্রয়াণ।
লাটের জাহাজে গিয়ে করিবেন দান।
সন্তুষ্ট হ’বেন লাট বাড়িবে সম্মান।।
এইভাবে আলোচনা করিয়ে সভায়।
সভা সাংগ করে সবে হরিষ হৃদয়।।
জাহাজে যাইতে প্রভু করেন মনন।
পদ্মার তরঙ্গ দেখে ভীত হয় মন।।
ম্যাজিস্ট্রেট বলিলেন আমার লঞ্চেতে।
চলুন হে শ্রীঠাকুর আমার সঙ্গেতে।।
শুনে ম্যাজিস্ট্রেট বাণী সন্তুষ্ট হইল।
ম্যাজিস্ট্রেট সনে প্রভু লঞ্চেতে চলিল।।
যখনেতে জাহাজের নিকটে পৌছিল।
অতি সমাদরে লাট প্রভুকে তুলিল।।
ডিপুটি মুনসেফগণ যতজন ছিল।
নেহারিয়ে হেন কর্ম বিস্ময় মানিল।।
মনে ভাবে কেবা এই মানব প্রধান।
লাট কেন হেন ভাবে করেন সম্মান।।
বসাইল শ্রীপ্রভুকে আসন উপরে।
লাটকে বসায়ে প্রভু বসিলেন পরে।।
তাহে লাট অত্যাধিক আনন্দ পাইল।
ডক্টর সি.এস. মিড পশ্চাতে বসিল।।
গণনায় অষ্টজন সাহেব তথায়।
মিড পার্শ্বে বসিলেন হরিষ হৃদয়।।
পরে মিড সসম্ভ্রমে বলেন বচন।
লাট প্রতি সমাদরে করে সম্ভাষণ।।
ঠাকুরের প্রতি কিছু করিব বর্ণন।
অনুগ্রহ করি সবে করুণ শ্রবণ।।
পঞ্চবিংশ নমশূদ্র লক্ষ যে গণন।
তা সবার মধ্যে ইনি অগ্রগণ্য হন।।
সবাকার নেতা হন ঠাকুর উপাধি।
বহুশিস্য শাখা হয় নাহিক অবধি।।
ঈশ্বরের শক্তি কত করেন প্রকাশ।
ধর্ম কথা আলাপনে বড়ই অভ্যাস।।
ধর্মের মাহাত্ম জানে বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ।
প্রভুত্ববরণ করি নিয়েছি শরণ।।
এইভাবে গুণগীতি মিডের বচন।
অষ্ট সাহেবেতে তাহা করেন লিখন।।
জানাবেন রাজ স্থানে আছে এক প্রজা।
গুরুচাঁদ নামে তিনি হন মজাতেজা।।
নমকুলে মধ্যে হয় নেতা সবাকার।
রাজ ভক্ত মহামান্য পরম উদার।।
নমশূদ্র কুলে জন্ম ব্রাহ্মণ সমান।
ব্রহ্ম নীতি সে পদ্ধতি বিনে নহে আন।।
শুনিয়ে মিডের মুখে অপূর্ব কাহিনী।
সম্মান সূচক মাল্য অর্পিলেন তিনি।।
হাতে ধরাধরি করে আনন্দ হৃদয়।
রাজোচিত সে সম্মান সবাকে দেখায়।।
অতঃপর সে কাছারী সমাপ্ত করিয়ে।
উঠিলেন সর্বজন অতি হৃষ্ট হ’য়ে।।
হেনকালে ছোট লঞ্চ অতি বেগে ভরে।
সবে এসে হর্ষচিতে নামিলেন তীরে।।
এসে দেখে শ্রীশ্রীপতি তথায় না আছে।
জিজ্ঞাসা করেন সে বিচরণ কাছে।।
কোথা গেল শীঘ্র তারে আন অন্বেষীয়ে।
কোথা গেল যেতে দিলি একেলা ছাড়িয়ে।।
বলিতে বলিতে তথা এলেন শ্রীপতি।
সবে মিলি তথা হ’তে চলিল সম্প্রতি।।
ডিপুটি কুমুদ মল্লিক যে মহাশয়।
অনুক্ষণ গুরুচাঁদ সঙ্গে সঙ্গে রয়।।
অতঃপর তাহার বাসাতে উপনীত।
বসিলেন সবে মিলি হ’য়ে হরষিত।।
লুচি পুরি মণ্ডা সবে করে আয়োজন।
চব্য চোষ্য লেহ্য পেয় দ্রব্য অগণন।।
অতঃপর সবে মিলি করে ফলাহার।
অন্ন ভোজ করে সবে আনন্দ অপার।।
বিশ্রামান্তে মহাপ্রভু মাগিল বিদায়।
মনোল্লাসে সে কুমুদ প্রণমিল পায়।।
সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন অতি হর্ষচিতে।
নানা কথা আলোচনা করিলেন পথে।।
নিজ তরী পরে প্রভু আরোহণ কৈল।
ক্রমে সর্বজন গিয়ে নৌকায় বসিল।।
প্রভু বলে অত্যাশ্চর্য ভাবের কাহিনী।
প্রহরেক মাত্র আছে নভে দিনমণি।।
বিচরণ প্রতি বলে শুন বাছাধন।
ওড়াকান্দী পৌছিবারে পারিবি কখন।।
বিচরণ কহে প্রভু দয়া যদি হয়।
পৌছিব মেজো বাবুর ভোজান্ত সময়।।
হরি বলে বিচরণ বাহিল তরণী।
হইল অপূর্ব ভাব মধুর কাহিনী।।
অতি বেগে চলে তরী বড়ই আশ্চর্য।
কেহ না বুঝিতে পারে তাহার মাধুর্য।।
কেবা এসে বাহে তরী বোঝা নাহি যায়।
পলক মধ্যেতে যেন বহুদূর ধায়।।
অসম্ভব কর্ম এক হেরে বিচরণ।
বড়ই অদ্ভুত তাহা না যায় বর্ণন।।
অসম্ভব দেখে জ্ঞানী প্রকাশ না করে।
শুনিলে সন্দেহ বাড়ে লোকের অন্তরে।।
হেন কর্ম হ’ল সেই রজনী যোগেতে।
কেবা যেন বাহে তরী ত্বরিত বেগেতে।।
অবিলম্বে শ্রীধামেতে হইল উদয়।
নেহারিয়ে সর্বজন মাগিল বিস্ময়।।
ঠাকুর সুধন্য যিনি ভোজ সমাপিয়ে।
মুখ প্রক্ষালন করে বাহিরে বসিয়ে।।
হেনকালে সবে গিয়ে বাটীতে পৌছিল।
হইল উদ্ভুত কর্ম হরি হরি বল।।
মহাপ্রভু কর্তৃক বিচরণের অর্থ দান
বহু আলোচনা হ’ল সে কথা লইয়া।
শ্রান্তি দূর করে সে সব কথা শুনিয়া।।
প্রাতঃকালে গাত্রোত্থান ব’লে হরি হরি।
প্রভু মোর বসিলেন আসিয়ে কাছারী।।
বিদায় লইতে যায় তথা বিচরণ।
ভক্তিভরে বন্দিলেন প্রভুর চরণ।।
বড়ই অভাব গ্রস্থ সেই বিচরণ।
কোন ভাবে করে মাত্র জীবন ধারণ।।
প্রভুর হইল কৃপা তাহার উপর।
ঘুচাতে ভক্তের দুঃখ দয়ার আধার।।
অর্থদান করিবারে একান্ত মনন।
বারো আনা মুদ্রা ধরি ব’লেছে বচন।।
এই মুদ্রা নিয়ে তুমি লবণ বদলাও।
মূলধন রেখ ঠিক মম কথা লও।।
সমূলেতে ধ্বংস যেন না হয় কখন।
দৈন্য দশা ঘুচে যাবে শোন বাছাধন।।
বিচরণ ভাবে কেন এ অর্থ লইব।
কৃপা হ’লে কত অর্থ কত স্থানে পাইব।।
এত ভাবি বলে আমি নিব না এ অর্থ।
রাখিতে নারিলে হবে বিষম অনর্থ।।
প্রভু বলে আরে বোকা নিলে হত ভাল।
এই অর্থে পরমার্থ হইতে মঙ্গল।।
তবু নাহি হয় ইচ্ছা প্রভু অসন্তোষ।
কি করিব আমি তোর কপালের দোষ।।
এত শুনিই যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস বলেছে।
শোন এবে বিচরণ বলি তোর কাছে।।
তোর আজা মহাশয় কৃষ্ণপুরে বাস।
মাত্র এক পয়সা নীল হ’তে প্রভু পাশ।।
সে হতে হইল টার বিপুল সম্পত্তি।
কোঠা বাড়ী দিতে তাঁর হইল শকতি।।
এত শুনি বিচরণ হস্ত পাতি নিল।
বারুণী পেয়েছি বলে নাচিয়ে উঠিল।।
পরেতে প্রণাম করি প্রভুর চরণে।
প্রেমানন্দে উপনীত আপন ভবনে।।
সেই অর্থ দিয়ে সে লবণ বদলায়।
ক্রমে ঘুচে দৈন্য দশা প্রভুর কৃপায়।।
এইভাবে ক্রমে ক্রমে সম্পত্তি বাড়িল।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ প্রতি হরি হরি বল।।