গান নংঃ ১-১০
বন্দনা-
১।
ভজরে আমার মন, ভজ প্রভু হরিচন্দ্র
যারে ভজিলে আনন্দ হবে, দূরে যাবে নিরানন্দ।
ভজ রামকান্ত যশোমন্ত, হইয়া একান্ত।।
যশোমন্ত সুত আমার প্রভু হরিচন্দ্র।
ভজ কৃষ্ণদাস, বৈষ্ণবদাস, গৌরীদাস স্বরূপচন্দ্র।।
(জয় জয় বন্দ ও আমার মন)
ভজ বিশ্বনাথ, ব্রজনাথ, আরো নাটুচন্দ্র।
ভজ মনোসাধে গুরুচাঁদে হয়ে শুদ্ধশান্ত।।
ভজ শশীভূষণ, শ্রীসুধন্য, উপেন্দ্র, সুরেন্দ্র।
ভজ গোলকচাঁদ, বদনচাঁদ, দয়াল মহানন্দ।।
ভজ হীরামন, শ্রীলোচন, ক্ষেপা-রামচন্দ্র।
ভজ দশরথ, রাম ভরত মতুয়া গোবিন্দ।।
ভজ স্বরূপরায়, মৃত্যুঞ্জয়, গোঁসাই তারকচন্দ্র।
ভজ হরিপাল, রসিকলাল, আর মঙ্গলচন্দ্র।
ভজ উমাচরণ, সূর্যনারায়ণ, কীর্ত্তনীয়া গোলকচন্দ্র।
ভজ দয়ারাম, ফেলারাম, আরো কুশইচন্দ্র।।
ভজ চির কুমার, ডক্টর শ্রীভগবতীচন্দ্র।
ভজরে প্রেমানন্দে প্রাণের ঠাকুর শ্রীপতিচন্দ্র।
ভজ রামধন, রামতনু, চূড়ামণি, বুদ্ধিমন্ত।
ভজ রামকুমার, অক্ষয় ঠাকুর, বসু নবীনচন্দ্র।।
ভজ রামসুন্দর কোটীশ্বর, বালা ঈশ্বরচন্দ্র।
ভজ রামচাঁদ, নেহালচাঁদ, সাধু মহেশচন্দ্র।।
ভজ রাইচরণ, রামমোহন আরো গোলকচন্দ্র।
ভজ লালচাঁদ, জয়চাঁদ, আরো গোলকচন্দ্র।।
ভজ তপস্বীরাম, ভজরাম, আরো আড়ঙ্গচন্দ্র।।
ভজ কমলদার মূলিরাম, করুণা আনন্দ।
ভজ করজোড়ে বিনয় করে হরিচাঁদের ভক্তবৃন্দ।
যেই যেই দেশে আছে হরিচাঁদের ভক্তবৃন্দ।
হয়েছে হবেন যত, হরিচাঁদের ভক্তবৃন্দ।।
২।
জয় জগদ্বন্ধু করুণাসিন্ধু যশোমন্ত নন্দন হরি।
কলির শেষেতে, কলুষ নাশিতে উদয় সফলানগরী।।
ভূ-ভার হরণ, পতিত পাবন, ভূবন রঞ্জনকারী।
পতিত তারিতে, আইলা মহীতে, সাঙ্গোপাঙ্গ সঙ্গে করি।।
ত্রিতাপ হারক, দুরিত বারক, দুরন্ত কৃতান্তবারী।
দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, শরণাগত হিতকারী।।
রেশম বরণ, অঙ্গের কিরণ, একান্বরধারী।
আজানুলন্বিত, বাহু সুবলিত, বাক্য মধুর মাধুরী।।
সুদীর্ঘ কেশ, মনোহর বেশ, দীন, হীন বেশধারী।
আকর্ণ-লোচন, অরুণ বরণ, হেরিয়া ঝুরিয়া মরি।।
বয়স তরুণ, দেখিতে নবীন, ভব-ভয়-ভঞ্জনকারী।
হীরক-উজ্জ্বল, দন্ত সুনির্ম্মল, খগপতি জিনি নাসা হেরি।।
ভকত-চকোর, সুধাপানে বিভোর, হরিচাঁদরূপ নেহারী।
গোলক পুলক, হৃদয় আলোক, হরিচাঁদরূপ হৃদে ধরি।।
হীরামন মন, করিলে মোহন, রামরূপ ধারণ করি।
সঁপিয়া জীবন, ত্যজিয়া ভুবন, বীর-করুণ-রস-বিহারী।।
হরি প্রেমসিন্ধু, পিয়ে তারকচন্দ্র, ছলছল নয়ন বারি।
পিয়ে মকরন্দ, প্রেমে মহানন্দ, ঘরে ঘরে প্রেম বিতরি।।
ভকত রঞ্জন, বিপদ ভঞ্জন তমঃসন্দ নাশকারী।
দীন হীন অশ্বিনী, দিবস রজনী, হরিচাঁদ প্রেম ভিখারী।।
৩ নং সংগীত
প্রাণমতি শুকশারী পোহাল শর্বরী, শ্রীহরি মঙ্গল গাও হে।
শ্রীহরি মঙ্গল গাও হে, প্রেমানন্দে মাতিয়া রও হে।।
হৃদি নিধুবনে, শান্তি মায়ের সনে, শ্রীহরিচাঁদকে জাগাও হে।
যুগল মিলন করি, যুগল নয়ন ভরি হরিরূপ রসে ডুবে রও হে।।
নিশি হল ভোর রসনা ভ্রমর, গুণ্ গুণ্ স্বরে গুণ গাওহে।
হরি পদ পঙ্কজে, সতত থাক মজে, হরি পদরজে গড়ি দাও হে।।
হরিরূপ আলোকে, মনের পুলকে, নিরানন্দ উলুকে তাড়াও হে।
হইয়া চৈতন্য, এ দেহ কর ধন্য, সাধুসঙ্গ বাতাস লাগাও হে।।
নিশি প্রভাত সময়ে, প্রেমানন্দ হৃদয়, পুলকে পূর্ণিত হও হে।
অলস ত্যজিয়া, হরিপদে মজিয়া, হরিচাঁদ প্রভাতি গাও হে।।
হরিপদপল্লব, দেবের দুর্ল্লভ, কায়মনে শরণ লও হে।
শয়নে স্বপনে, জাগরণে বদনে নাম মধুপানে মত্ত হও হে।।
তারক মহানন্দ, গোঁসাই গোলকচন্দ্র, প্রেমধন যাচে জীব লওহে।
হেন দয়াল ভবে, আর কি খুঁজিয়া পাবে, চরণে শরণ লও হে।।
শ্রীগুরুচাঁদ বলে, নিশি প্রভাতকালে, অলসে অবস কেন হও হে।।
(অলস) অশ্বিনী অধম, ত্যজিয়া মায়াঘুম বসিয়া হরিগুণ গাঁওহে।।
৪ নং সংগীত
গাওহে প্রভাতি গীতি, শ্রীহরি মঙ্গলরে।
শ্রীহরির বামেতে শোভে, শান্তি ঠাকুরাণীরে।।
হৃদি বৃন্দাবন মাঝে হরি রসরাজে জাগাওরে।
আলস্য এ নিদ্রা, হরিপদে মন লাগাওরে।।
রেশম বরণ তনু কোটী ভানু জিনিরে।
পৃষ্ঠে দোলে দীর্ঘ বেণী, জিনি কাদম্বিনীরে।।
আকর্ণ লোচন বাঁকা, অধরে সুধা মাখারে।
মনোহর জোড়াভুরু, রামধনু বাকারে।।
খগচঞ্চু জিনি নাসা, প্রেমামৃত ভাষারে।
আজানুলম্বিত বাহু, কামুকের কাম নাশারে।।
প্রেম কান্তি শান্তিদেবীর, ভাবকান্তি মাখারে।।
ভাবুক হৃদিরঞ্জন, কিবা ভঙ্গি বাঁকারে।।
কৃপাঙ্কুর কল্পতরু, প্রেম ফল দাতারে।
অকামনা প্রেম ভক্তি, আতরে বিতরে।।
গোলক পুলক চিত্ত, হরি প্রেমাশ্রিতরে।
হীরামন মনোহরা, ভক্তমন পুতরে।।
শ্রীগুরুচাঁদের বাণী, প্রভাতে জীব জাগরে।
দীন হীন অশ্বিনী দৈন্য (হরি) পদরজ মাঙ্গরে।।
৫ নং সংগীত
জয় হরি শ্রীহরিচাঁদের জয়।
জয় যশোমন্ত, রামকান্ত, অন্নপূর্ণা মাতার জয়;
জয় শ্রীকৃষ্ণদাস, জয় শ্রীবৈষ্ণবদাস গৌরীদাসের জয়।
জয় স্বরূপচন্দ্র বিশ্বনাথ, ব্রজ নাটুর জয় জয়।।
জয় শ্রীগুরুচাঁদ হৃদয় আকাশে চাঁদ, হও এসে উদয়।
দিয়া পদারবিন্দ কৃপাসিদ্ধ, কৃপা কর কৃপাময়।।
জয় শ্রীগোলকচাঁদ জয় শ্রীবদনচাঁদ রাম ভরতের জয়।
জয় লোচনচন্দ্র শ্রীগোবিন্দ হীরামনের জয় জয়।।
জয় শ্রীদশরথ, হরিচাঁদের ভক্ত, মৃত্যুঞ্জয়ের জয়।
জয় তারকচন্দ্র, মহানন্দ, রামচরণ ক্ষেপার জয় জয়।।
শ্রীহরি ভক্তগণ, বন্দি সবার চরণ, আনন্দ হৃদয়।
এবার দয়া করি, দয়াল হরি, রেখ মোরে রাঙ্গা পায়।।
৬ নং সংগীত
আনন্দে লওরে মধুর হরিনাম,
হরিনাম সুধাপানে, প্রেম তুফানে ঢেউ খেলাও মন অবিশ্রাম
হরিনামের তুল্য দিতে, কি আছে অবনীতে, হরি হতে বড় হরিনাম।
ও নাম ব্রহ্মা জপে চতুর্মুখে, শিব জপেছে অবিরাম।।
হরির নাম সুধা সিন্ধু পান করলে তার একবিন্দু তাহলে পুরে মনস্কাম।
নামে পুলকে গোলকে যাবি, দেখতে পাবি রাধাশ্যাম।।
ছিল নাম অনর্পীত, কলিতে সমর্পিত করিলেন গৌর গুণধাম।
নামে জগাই মাধাই তরে গেল, প্রান্ত হল মোক্ষধাম।
হরিনাম মহৌষধি, পান কর নিরবধি, ভব ব্যাধি হইবে আরাম।
নামে দান করিবে প্রেমানন্দ, এ দেহ হবে নিধাম।।
নামেতে মহানন্দ, মেতেছে তারকচন্দ্র, প্রেমরসে ভাসায় ধরাধাম।
একবার অশ্বিনীর মন হরিবল মধুর নামে হসনা বাম।।
৭ নং সংগীত
প্রেম অনুরাগ ভক্তি বিবেক করলে আশ্রয়।
তোর কামরিপু, হবে পরাজয়, প্রাণ সপেদে গুরুর পায়।
অনুরাগ সিংহ রবে, পালাবে রিপু সবে, মহাভাব হবেরে উদয়।
হরিচাঁদের ছবি, দেখতে পাবি, রূপ দেখে প্রাণ হয় তন্ময়
বিবেকের সঙ্গ নিলে, বাহ্যজ্ঞান যাবে চলে, হরিবলে কাঁদবিরে সদায়।
প্রেমে তনু ডগমগ, দেখবি জগৎ হরিময়।।
ভক্তি বশ হলে পরে, ধরতে পারবি অধরে, অনন্ত যার অন্ত নাহি পায়।
ও সে ভক্তি বলে হরি মিলে, ফলের আশা দুরে যায়।।
হলে প্রেমের আশ্রিত, এ দেহ হবে নিত্য, নিত্যরূপ দেখবিরে সদায়।
হবে দেহ জমি ব্রজ ভূমি, থাকবিরে যুগল সেবায়।।
গোলকচাঁদ মহানন্দ, দিতেছে প্রেমানন্দ, তারকচাঁদ যোগাল দিচ্ছে তায়।
অশ্বিনী তোর কিসের সন্দ, গুরুচাঁদ আছে সহায়।।
৮ নং সংগীত
হৃদয় যন্ত্রে হরিনাম মন্ত্রে পুরিয়া সুতান।
সত্ত্ব-রজ-তমঃ তিন তারে গাওরে গুণ গান।।
স্থুলেতে মূল তাল ঠিক রেখে, প্রবর্তে নাম লওরে সূখে;
সাধরে সাধকে তাকে, এই তরে তোর ডাকার বিধান।।
সিদ্ধে গিয়ে মাতাম দিয়ে, যাওরে মত্ত মাতাল হয়ে;
প্রেম সাগরে জোয়ার দিয়ে, কর হরি নামামৃত পান।।
অজ্ঞান যাবে স্বজ্ঞান যাবে, বাহ্যজ্ঞান সব পড়িয়া রবে।
এই দশা তোর যখন হবে, চিদানন্দে উড়িবে নিশান।।
গোলোকচাঁদ সেই গানে মেতে, চাঁদের মালা হৃদয় গেঁথে।
সাজায়ে যশোমন্তের সুতে, সার করল হরি পুতুল নাচান।।
মহানন্দ যে গান শিখে, হরিচাঁদের পুতুল দেখে।
দিবা নিশি হৃদয়ে রেখে, ঘরে ঘরে যাচিয়া বেড়ান।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র, অশ্বিনী তোর কর্মমন্দ।
কল্পতরু গুরুচন্দ্র, সে ছায়ায় তুই নিলি না স্থান।।
৯ নং সংগীত
নমঃ গুরুচন্দ্র নমঃ তমঃ বিমোচন;
আমার চিত্তগুহার অন্ধকার কর উদগীরণ
নমঃশূদ্র কুলোদ্ভব, তুমি ভবাদি বান্ধব;
তোমার সৌরভে জগত মাতিলে ঘুচিল রৌরব।
তুমি জ্ঞানদাতা, জগতপিতা পতিতে কর পাবন।।
কোটি চন্দ্র দিবাকর, উদিত চরণে তোমার
দিবানিশি দিচ্ছে ঝলক ঘুচল অন্ধকার।
আমায় দিয়ে আলোক, কর পুলক, ভূলোকে গোলকের ধন।।
ক্ষুদ্র নমঃশূদ্রগণ, তাদের অজ্ঞান ভঞ্জন;
দিব্য জ্ঞান করিয়া দান-করিলে ব্রাহ্মণ।
হরি নাম ধর্ম করি বিতরণ, পাষন্ড করলে দলন।।
দিয়ে পিতৃধর্মে মন, করলে প্রতিজ্ঞা পূরণ;
নমঃকূল কলঙ্করাশি করিলে হরণ,
এবার গার্হস্থ্য প্রশস্ত জগতে করলে অপর্ণ।।
আমার হৃদয় আকাশে, গুরুচাঁদ উদয় হও এসে;
তোমার রূপমাধুরী, নয়ন ভরি দেখব হরিষে।
মূঢ় অশ্বিনী কয়, দীন দয়াময়, দাও আমারে শ্রীচরণ।।
১০ নং সংগীত
কর নামামৃত পান, কর হরি নামামৃত পান।
নামে রুচি হলে নামে করবে প্রেম দান।।
নামামৃত পান করিলে, সুনির্মল প্রেমফলে,
একেকালে ও আমার মন জুড়াবে পরাণ।।
যেই নাম সেই হরি, ভজরে মন নিষ্ঠাকরি,
নামের সহিত হরি, আছেন অধিষ্ঠান।।
হরিনামের মর্ম জানি, পাগল হল শূলপাণি,
বীণা যন্ত্রে নারদমুনি, করে গুণ গান।।
পতি মম মহানন্দ, গতি মম গোলোকচন্দ্র,
জ্ঞান মম তারকচন্দ্র, গুরুচন্দ্র ধ্যান।।
প্রাণ মন হরিচন্দ্র, পদে প্রেম মকরন্দ,
পান করলি না তার এক বিন্দু অশ্বিনী অজ্ঞান।।