সমাজ সংস্কারক ও গুরুচাঁদ ঠাকুর
বাংলার লোকসমাজে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, “চ্যারাগের গোঁড়ায় অন্ধকার” যা সহজ বাংলায় “বাত্তির নীচে অন্ধকার”। এই বাতির নীচের অন্ধকার যে দূর করে সে তো সূর্য বা সূর্যের সাথে তুলনীয়। মানুষের জীবনে, জাতির জীবনে যে অন্ধকার তা যিনি দূর করেন তিনি হন সমাজ সংস্কারক। যিনি যত বেশি অন্ধকার দূর করতে পারেন, তিনি তত মহান সমাজ সংস্কারক। কিন্তু সকল সংস্কারকে মানুষ সমান মূল্য দিতে পারে না বা বিভিন্ন কারণে অনেক সংস্কারকে থাকতে হয় লোক চক্ষুর অন্তরালে। তেমনি একজন পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের সুযোগ্য পুত্র শ্রী শ্রী গুরচাঁদ ঠাকুর। যিনি অধিকার বঞ্চিত মানুষ তথা নমশূদ্র তথা দলিত শ্রেণির মানুষকে দিয়েছেন শিক্ষার অধিকার, প্রতিষ্ঠা করেছেন ধর্মের অধিকার সর্বপরি দিয়েছেন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার।
একসময় এই দলিত শ্রেণির ছিল না ধর্মের অধিকার। মন্দিরে প্রবেশ, পূজা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল তাদের জন্য। শাস্ত্র পাঠ তাদের জন্য ছিল অপরাধ, যে অপরাধের শাস্তি ছিল মারাত্মক। তাদেরকে চণ্ডাল নামে অভিহিত করা হত। শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর সেই অধিকার দিয়েছেন। আর গুরুচাঁদ ঠাকুর সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাদের চণ্ডালত্ব মোচন করেছেন।
মানুষের উন্নতভাবে ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক অধিকার দরকার তা হল শিক্ষা। একসময় ছিল শিক্ষা ছিল উচ্চবর্ণিয় বংশীয়দের একছত্র অধিকারে। ইতিহাসের অন্তরালে খুঁজে দেখুন তৎকালীন তথাকথিত সমাজসংস্কারকগণও এই দলিত শ্রেণিকে শিক্ষা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। যেমন বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ে শুধু উচ্চবর্ণের লোকের সন্তানেরা লেখাপড়া করতে পারত। কিন্তু শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর এই দলিত শ্রেণির মধ্যে দিয়েছেন শিক্ষার আলো। ওঢ়াকাঁদি প্রথম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যার চলা শুরু। তারপর এই দলিত শ্রেণির শিক্ষার জন্য অসংখ্য বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় করেছেন, যার ইতিহাস স্বয়ং ইতিহাসও জানে না। এখন এই দলিত শ্রেণির যারা শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে বড় হয়েছে, তারা নিজেরাও জানে না, তাদের শিক্ষার অধিকার কে এনে দিল। এই হতভাগ্য জাতির জন্য, শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর কি না করেছেন। অথচ তার নামটিই অধিকাংশ মানুষ জানে না।
হরিবোল হরিবোল হরিবোল