মহা-মহাপ্রভুর নবম আজ্ঞাঃ (গদ্য)
মহা-মহাপ্রভুর নবম আজ্ঞাঃ
হাতে কাম মুখে নাম করিবে।
"নামময় এ ব্রহ্মাণ্ড নামে কর রতি।
ভক্তি, মুক্তি, শক্তি করে নামেতে বসতি।।"
নামে নিষ্ঠা ভক্তি করাই (মতুয়ার) ভক্তের প্রকৃত লক্ষণ। দিবারাত্রি নামোন্মত্ত আর অনুক্ষণ কর্মে নির্লিপ্ত না, অহোরাত্র হাতে কাম আর মুখে নাম। মতুয়া শব্দের প্রকৃত অর্থ নামে প্রেমে মাতোয়ারা বা নামে মত্ত মাতাল। "পাশরিতে নারে গুণ, গুণ দিবানিশি গায়" আর সতত কর্মে নির্লিপ্ত। মহা-মহাপ্রভু শ্রীশ্রী হরিচাদেঁর আজ্ঞা কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য দ্বারা জাগতিক উন্নতি লাভ কর। আর নাম কর। সেই জন্যই ব্রহ্মচর্য, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস ও গার্হস্থ্য এই চতুরাশ্রম ধর্ম মধ্যে গার্হস্থ্য ধর্ম প্রশস্ত। ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা কর্ম কর, ধন উপার্জন কর, নিজে ভোগ কর, ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থী, সন্ন্যাসীকে ভিক্ষা বা আতিথ্য সৎকারের জন্য কিছু দান কর, গৃহে থাকিয়া ঐ সকল ফল লাভ হইবে। প্রবাদ আছে 'ভ্রমিয়া বার আর গৃহে থেকে তের'। ঐশ্বর্যের আবরণে মাধুর্য ঢাকিয়া রাখ, ইহাই প্রকৃত (মতুয়া) কর্মীর কর্ম। আরও শ্রীহরির নাম পরায়ণ হও। মহা-মহাপ্রভু শ্রীশ্রী হরিচাদেঁর রূপ আন্তরিক দর্শন, পরম ইষ্ট শ্রীশ্রীগুরু রূপ আন্তরিক দর্শন, তিলার্ধ অবকাশ নাই। নাম রূপ হরি শয়নে, স্বপনে, জাগরণে সঙ্গে সঙ্গে বিরাজ করিয়া থাকেন।
যেই নাম সেই হরি ভজ নিষ্ঠা করি।
নামের সহিতে আছেন আপনি শ্রীহরি।।
সাক্ষী নামোন্মত্ত পাগল চূড়ামণি বদন গোঁসাই
শয়নে স্বপনে কিম্বা মলমূত্র ত্যাগে।
উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম যার মুখে জাগে।।
তিনি কোন বাক্য বলিবার পূর্বে হরিনাম উচ্চারণ করিতেন। ঘুমের ঘোরে নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে হরিনাম করিতেন। মলমূত্র ত্যাগকালে হরিনাম করিতেন। প্রশ্বাস ত্যাগকালে পঞ্চাশৎবার হরিনাম করিতেন। নাম করিতে করিতে অচৈতন্য হয়। নাম করিতে করিতে মহাব্যাধি মুক্ত হয়। নাম করিতে করিতে মহাভাবের উদয় হয়। নাম করিতে করিতে রেচক পুরক কুম্ভকের ক্রিয়া সমাধান হয়। সে নাম কি? যাহার যাহার উপাস্য দেবতার নাম। মতুয়াদের পক্ষে হরিনাম। যে যাহার মন হরে সেই তাহার হরি। রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রীগৌরাঙ্গ হরি। নাম অক্ষয়, অব্যয় ও প্রেমময়। নাম প্রেমময় তাহার প্রমাণ কি? এক নিঃশ্বাসে একশত আট বার নাম করিয়া পরীক্ষা কর, আপনাআপনি প্রমাণ পাইবে। আসন্ন মৃত্যুরোগী লইয়া এক রাত্রি হরিনাম সংকীর্তন কর, রোগ নিশ্চয়ই আরোগ্য হইবে। আহার করিতে করিতে উদর পূর্ণ হইলে যেমন কাহাকেও বুঝাইয়া দিতে হয় না যে তোমার উদর পূর্ণ হইয়াছে তুমি আর খাইওনা, আপনাআপনি ভোজন নিবৃত্ত হয়। তেমনি হরিনাম আপনাআপনি আত্মাকে এক অপূর্ব বিবেক শান্তি দান করে। সে সুখ অন্যের বুদ্ধির অগম্য, অর্থাৎ নিজেই আত্মানন্দ উপভোগ করে। তাহা কাহারও বুঝাইয়া দিতে হয় না।