গান নংঃ ৯৬-১১৫
রাগিনী-বিরহাসী
৯৬। তাল -ঠুংরী
সাধু বৈলে দাও মোরে
জানিনা সে তত্ত্ব, “কোথায়” কে বসত করে।
দেহ কোথায় স্থিতি, সেই ভারতী, বলে দাও সব দয়াকরে।।
১। কোথায় থাকে হর পার্ব্বতী, গঙ্গা, যমুনা সরস্বতী।
ভগবান কোন পদ্মে স্থিতি, পুরুষ না প্রকৃতি আকারে।।
২। পৃথিবীর বসতি কোথায়, দেহ স্থিতি কোন পদ্মে হয়।
(সাড়ে) চব্বিশ চন্দ্র কোথায় বা রয়,
কোন বীজে এই দেহ ধরে।।
৩। নীল পদ্মটি থাকে কোথায়, জিহ্বায় কার বসিত আশ্রয়
(বল) সেই বারতা সাধু আমায়, শুনিবার বাঞ্ছা অন্তরে।।
৪। দীনা বলে তত্তব গুণে, আদিত্যের ঐ দয়াগুণে।
হরি গোসাইর শ্রী চরণে, থাকব জন্ম জন্মান্তরে।।
রাগিনী-বিরহাসী
৯৭। তাল-ঠুংরী
আমি বলবো কিরে আর
তত্ত্ব বিনে যায়না কখন, মনেরি বিকার।
দেহ নবরত্ব না করলি যত্ন,অযত্নে ধন হারালি তোর।।
১। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, আরও আছে হর পার্ব্বতী।
দ্বিদলে করেন বসতি, ত্রিবেণরি জল বয়ে নিরন্তর।।
২। ভগবান সে না হয় মানুষ, না হয় প্রকৃতি বা পুরুষ।।
আত্মা রূপে হৃদ পম্মে রয় বেহুশ
কখন সাকার হয় নিরাকার।।
৩। পৃথিবীর ঐ দ্বাদশ পদ্মে, এ দেহ স্থিতি তার মধ্যে।
(সাড়ে) চব্বিশ চন্দ্র হস্ত পদে, গন্ডস্থল, বক্ষ ভ্রু পর।।
৪। গুহ্যমূলে চর্তুদ্দলে, স্থিতি হয় জীব মূলাদারে।
রাগবাদিনী জিহ্বা পরে, বিরাজ করে সে অনিবার।।
৫। আবেগ খায় আর আবেগ রান্ধে, নাভিমূলে, দশম দলপদ্মে।
হংস রূপে বিহার করে, সে নীল পদ্ম ঐ সরবর।।
৬। আদিত্য কয় তত্ত্ব ছাড়া, মিলেনা সে অধর ধরা।
হরি গোসাইর করণ করা, দীনা করগে এই কর্ম্ম সার।।
সৃষ্টি তত্ত্ব
রাগিনী-উরুশেন
৯৮। তাল-ঝাপ
হরি প্রথম পূর্ন মূলাধার-
তাহার উর্দ্ধবাগে কেউ নাই আর
হরি হইতে সৃস্টি সবাকার।
ছিল পূর্বে অন্ধকার, বিশ্ব স্থলা করা হে,
ছিলেন জ্যোতির্ন্ময় রূপ নিরাকার।
১। গোলক বীহারি হরি, স্বীয় হেদ দু- ভাগ করি,
হয় প্রকৃতি পুরুষ আকার।
দক্ষিণেতে পুরুষ বামে নারী হে-
দোহে আনন্দিত হয় অপার।।
২। সৃষ্টি করিবার তরে, বীর্য্যদান করিলে তারে,
গর্ভে ধরে শত মন্বন্তর।
শেষে ডিম্বাকারে প্রসব করে হে
হয় প্রকান্ড স্বত্ত্ব বর্ণ ধর।।
৩। লজ্জান্বিতা হয়ে সতী, জলে নিক্ষেপিলা অতি
জলে ডিম্ব ফাটিল তৎপর।
হল বিরাট রূপী, জগৎ ব্যাপী হে,
থাকে বহুকাল জলশয্যা পর।
৪। শেষে রাম, কৃষ্ণ, গৌর লীলা করি,
জন্মেন সফলা নগরী, হলে যশবন্তেরি কুমার
সাঙ্গ-পাঙ্গ সঙ্গে পরম রঙ্গে হে,
নিলেন হরিচাঁদ রূপ অবতার।।
৫। বলব কি আর পূর্বের ঘটন, শুনরে দীনা অভাজন,
সাকার ভজন-গুরুর চরণ সার।
হরি গোসাই বলে, অন্ধকারে হে,
জীবে ঘুরে মরে নিরন্তর।।
সৃষ্টি তত্ত্ব
রাগিনী-উরুশেন
৯৯। তাল-ঝাপ
প্রথম হরি পরম ব্রহ্ম জ্যোতির্ন্ময়,
তিনির গোলকেতে স্থিতি হয়,
তার অংশ রূপ বিরাট কলেবর।
হইল রাম, কৃষ্ণ, গৌর, দারুব্রহ্ম হে
লীলা ওড়াকান্দী চমৎকার।।
১। সত্য যুগে বিরাট রূপী, ছিলে তুমি -----
লোম কুপে অনন্ত ভূবন যার।
বহুকাল অবস্থান রও ভাসমান হে,
পরে সৃষ্টি করলে সৃষ্টিধর।।
২। পঞ্চভুতের দেহগড়ে, দিলে এই জীব সৃষ্টি করে,
মায়ায় ভুলে নাম লয় না তোমার।
সে সব দুষ্কৃতি পরায়ণগণে হে,
কর যুগে যুগে তাই উদ্ধার।।
৩। প্রলয় কালে এই ভুত সবাই,
তোমারই ত্রিগুনাত্মীকায়, প্রকৃতিতে লীন হয়ে যায়।
পুনঃ সৃষ্টিকালে, ভুমন্ডলে হে, তুমি সৃষ্টি কর সবাকার।
৪। ধর্ম সংস্থাপনের তরে, রক্ষা হেতু সাধুদেরে,
পুনঃ লীলা কর বারে বার।
দীনা বলে এবার, কর উদ্ধার হে,
আমি পাতকি জগৎ মাঝার।।
তত্ত্বগীতি
রাগিনী-খেবেন্ডা
১০০। তাল-বিষম একাতাল
এমন প্রশ্ন কোথা পেলে ভাই।
তাহা বল তুমি মম ঠাঁই।।
১। বেড়াও দেশ বিদেশে, মনের হরিশে,
মানুষকে ঠকায়ে ফির, ঐ প্রশ্নের রসে।
নাই তোর গুরুর প্রতি, নিস্ঠা রতি,
হরি নামের গন্ধ নাই।।
২। কাজের কাজে নাই মতি, সদা কু-কর্মে গতি,
জনম ভরি হলনা তোর গুরুতে আর্থী।
শুধু বাঘের মত ভঙ্গি অতি,
ভিতরে ময়লা বোঝাই।।
৩। ঐ সব প্রশ্ন ছেড়ে দেও, মুখে হরি গুণ গাও,
প্রেমের মদে মত্ত হয়ে মহানন্দে রও।
দেহের কপটতা সব খুলে দেও,
প্রশ্নেতে সার বন্তু নাই।।
৪। আদিত্য কয় অতি দুঃখে, দীনা আছ কি সুখে
কু-কথায় বিজ্ঞমানহইলি, নাম তোর নাই মুখে
হরি গোসাই বলে সময় গেলে,
তরাইবে কোন গোসাই।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-জয় জিয়ালাই
১০১। তাল-কহরাবা
শুন বলিরে মন-
প্রণালীতে কুল পাবিনা কর যেয়ে সাধন।
ভাইরে এক পিতার সন্তান হয়ে, দ্বেষা-দ্বেষী কি কারণ।।
১। স্বরূপ প্রণালী, জিজ্ঞাসিলি, আশ্রয় পাত্রের কথা
না জানিলি সাধন পথের, কোন জায়গায় মাথা।
আরও কয় শাখা, কোন পরিবার, এ সবে কি প্রয়োজন।
২। ধরে সৎগুরু কল্প তরু, রিপু কর বারণ
অনায়াসে শান্তিপুরে করিবি গমন।
মিছে তর্ক দিলে, কি ফল ফলে,
লোককে ঠকাও অকারন।।
৩। নানা কথা জিজ্ঞাসিয়ে, কি কাজ হবে বল,
সাধন ভজন না করিলে, যাবি রসাতল।
ভাইরে তর্ক ছাড়, রাজি কর,
আপন দেহের মালিক জন।।
৪। ভাইরে তোর গুরু, আমার গুরু, একই ভগবান,
তবে আবার কেন কর, দ্বিতীয় গেয়ান।
গুরুর ভক্ত মহৎ, হও দন্ডবৎ
দেখে তাদের বেশ ভুষণ।।
৫। ভাব ভক্তি, প্রেম শক্তি, সদা রেখ মন,
হিংসা নিন্দা গুরু পদে, সব করগে অর্পণ।
ভাইরে ভক্ত দেখলে ভক্তি করে,
সেবা কর ভক্তের চরণ।।
৬। হরি গোসাই বলে এবার, গুরু কর সার,
গুরু বিনে ত্রিভুবনে, বন্ধু নাহি আর।
বোকা দীনারে তুই কৃপা সিন্ধুর,
নাম করিসনে অস্মরণ।।
রাগিনী-উল্টাকেশী
১০২। তাল-গড়খেমটা
সাধন করবি কি তুই মলে,
ভজন করবি কি তুই মলে।
গুরু ধরার সময় হয়না,
ওজর দেও কাজ আছে বলে।।
১। (ভাবছ) মন্ত্র যেদিন নিব, বন্ধু বান্ধব খাওয়াইব,
যোগাড় যন্ত্র বহুত লব, নাম নিব বাড়ী গুরু এলে।
তোর ওজর যায় না, সময় হয়না, এই ভাবে দিন চলে
আজ নিবি কাল নিবি মন্ত্র,
আশায় আশায় দিন খুয়ালে।।
২। আয়ু যদি ঘাষ বৎসর হয়,
ওজরে সেই দিন কেটে যায়,
কাছে আসে অন্তিম সময়, মনে কয় গুরু কোথা মিলে।
নাম না নিলেম, কি করিলেম, বয়সের সময় কালে,
এমন সুধা থুইয়ে গরল খেলেম, জনম গেল মায়ার ছলে।।
৩। (যেমন) গরু অমর ঔষধ চিনে, আগে সে ভাবে মনে
খাব ঔষধ মৃত্যু দিনে, আশায় তাই রাখে খাব বলে।
জিহ্বা লেহায় মরণ সময়, কোথায় ঔষধ রলে,
তখন হায় হায় করে, যায় সে মরে,
ঔষধ পায়না কোন কালে।।
৪। আয়ু হেতার ঠিক দেওয়া, সেই দিনে হবে যাওয়া,
গুরু কেন না ধরিয়া, কু-কর্ম্মে মজ রসাতলে।
হবেনা তোর সাধন করা, গণার দিন ফুরালে,
যদি গণার দিনের একদিন কমে
সেই দিন পাবি কোথা গেলে
৫। আদিত্য বলে এবার, গুরুর চরণ কর সার,
এসব অনিত্য সংসার, মিছে কেন মর আমার বলে।
বোকা দীনবন্ধু গুরু ছাড়া রলি দস্যুর দলে,
তোর দস্যু আত্মা ঠেলে দে রে,
হরি গোসাইর চরণ তলে।।
রাগিনী-উল্টাকেশী
১০৩। তাল-গড়খেম্টা
প্রেমিক গুরু ধর চিনে, প্রেমিক গুরু ধর চিনে।
অপ্রেমিকের সঙ্গ নিলে সাধন হয় না কোন দিনে।।
১। শাস্ত্র, শ্লোক বক্তা হলে, বক বক করে সদা চলে
তারে গুরু করতে হলে, অধর ধরা শক্তি মিলবে কেনে।
তার বক বকি সার, ভিতর উসার, সারবস্তু না চিনে
ও তার ঠিক নাইরে দিল, নষ্ট হয় বিল, কানা বকের আগমনে।।
২। অধর ধরেছে যেই জন, বক বকি নাই তার কখন,
ছয় রিপু করিয়ে দমন, প্রেমে সে মগন রাত্রি দিনে।
পাগল ধারা মাতোয়ারা, ধারা বয় নয়নে,
তিনি প্রেম কান্থা করিয়ে ধারণ, নাম জপে সে মনে প্রাণে।।
৩। প্রেমিকের এই নশানা, সৎমতি, সংকল্পনা,
তরায় দিয়ে উপাসনা, যাহাতে উদ্ধার হয় জীবগণে।
অধর চাঁদকে যে ধরেছে, ধরগে সেই জনে,
তবে অধর মানুষ পাবি ধরা, ঐ মানুষের দয়া গুণে।।
৪। আদিত্য বলে দুঃখে, ভুলিসনে বক বকির বকে,
সদগুরু ধর সুখে, উদ্ধার হবি তার পরশনে।
ওরে দীনা মুর্খ পিতৃধন সূক্ষ্ম পতন দিনে দিনে,
প্রেমিক হরি গোসাইর স্বভাব নিয়ে,
হুসের ঘরে থাক চেতনে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-উল্টাকেশী
১০৪। তাল-গড়খেম্টা
গুরু জেনে কেন ধরনা,
গুরু চিনে কেন ধরনা।
মন গুরু হয় সর্বশ্রেষ্ঠ পরের কথায় ভুলিও না
১। কেহ করে এই প্রবঞ্চ, মাতা পিতার গুরু বংশ,
নাম না নিলে হরি ধ্বংশ, গুরুত্যাগী কেউ তোকে ছোবেনা।
ঐ কথা ভাই বাজে কথা, তাতে মন দিও না
কুল গুরু না ধরিলে, কখন গুরু ত্যাগী হয় না।।
২। কুল গুরু বংশ ধরে, বোবা পাগল হলে পরে,
তবে নাকি গুরু করে, কেমনে শিখিবি সাধনা।
নিজে না জানিলে, ধর্ম্ম শিকাতে পারেনা,
এমত সিদ্ধান্ত, গীতায়, ভাগবতে আছে নিশানা।।
৩। যার কাছে চলে যায় মন, গুরু করে পুজ চরণ।
তাঁরে ভুলিও না কখন, জ্ঞান ক’র পূর্ণ কেলে সোনা,
ভাব ভক্তি ধন, প্রেমিক যে জন, গুরু হয় সেই জনা,
প্রেমিক গুরু ধর, করণ ধর, হরিনাম সদা জপনা।।
৪। কলিতে নাই দীক্ষা শিক্ষা, ভুলে যাও অন্য সব কল্পনা,
হরে নাম কেবলম্ কলৌ নাস্তব্য অন্যথা,
মনের ঘুচাও ময়লা, মন দুদিলা কুটিনাটি কু-ভাবনা।।
৫। বলব কি ভ্রান্ত নরগণে, দীক্ষা নেয় না ব্রাহ্মণ বিনে,
যজ্ঞসূত না দেখলে নয়নে, কঠিন দেহে ভক্তি জম্মেনা।
আদিত্য কয় ব্রাহ্মণ যে হয়, ব্রহ্ম থাকে জানা,
হরি গোসাইর বাণী, অক্ষয় জানি, দীনবন্ধু ছাড়িও না।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
১০৫। তাল-খেম্টা
চিনিয়ে সদ গুরু কে ধর
উচ্চ কুলের গুরু ধরলে কেমনে হবি পার।
তারা জাতির গৌরব নিয়ে চলে
চায় না শিস্য তরাবার।।
১। গুরুর কাছে উচ্চ নীচ, ভিন্ন জাতি নাই,
(যেমন) সর্ব্বজীবকে সমজ্ঞানে, নাম দিয়ে করবেন উদ্ধার।।
২। গুরু শিষ্য একই আত্মা, পিতা পুত্রের ভাব,
তার বিতরে দেখরে ভাই দ্বিথীয় স্বভাব।
তারা নীচ বলে ঘৃণার ছলে, ছোঁয়না ভারি অহঙ্কার।।
৩। ও দুষ্ট মন তোরে কই গুণ, ব্রাহ্মণ বল কাকে
ব্রহ্ম জানাইতে ব্রাহ্মণ শাস্ত্রনে দেখে।
কেবল দ্বিজ দেখলে ভক্তির উদয়,
ভক্তি নাই অন্য জাতির উপর।।
৪। আদিত্য কয় বলি তোমায় শুনে নাও এবার,
দিনে দিনে সাধন বিনে দিন হতেছে পার।
হরি গোসাইর বচন, দীনা দুর্জ্জন,
জানিয়ে সদ্ গুরু ধর।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-উল্টাকেশী
১০৬। তাল-গড়খেম্টা
এবার বেদ বিধি দাও ছেড়ে,
এবার বেদ বিধি দাও ছেড়ে।
ও তুই বেদ বিধি জড়িয়ে রলি, হরি পাবি কেমন করে।।
১। দেখ বেদ বিধির উপর, হরিধন রয় নিরন্তর,
হও যদি বেদ বিধি পার, তাহলে পারিবে তাহারে।
ময়লা বাঁধে মনে, বেদ বিধানে ময়লা নাহি ছাড়ে,
যদি হরি পেতে আশা কর, রাগের ঘরে থাক মরে।।
২। যেমন ঐ সমুদ্রেতে, এনে বালু তুফানেতে,
নিদারুন চর ফেলে তাতে, তেম্নিরূপ বেদ বিধিতে করে।
(লোকের)মনের ভ্রান্ত, বেদবিধান্ত মতে কার্য্য করে,
ঐ বেদের বিধান না না হইলে মনের ময়লা যায় না দুরে।।
৩। দেহ গুরুকে দিয়ে খাস প্রজা থাক হয়ে,
খাসমহলে নাম লেখাইয়ে, থাক সেই খাস মালিকের ঘরে।
এবার হরি নামের মাজন সদা, রেখ অন্তপুরে,
কাটবে দেহের ময়লা, মন দোদিলা, কোটি জন্ম জন্মান্তরে।।
৪। ডেকে বলে আদত্য, হইল বেদ বিধি যত,
তাতে নাই রে সার পদার্থ, হরি নামে সর্ব্ব পাপ হরে।
হরি গোসাই বলে, গয়া গেলে, পিন্ডে কি পাপ যায় রে,
ভেবে দেখ নাম সূক্ষ, দীনা মূর্খ, নামে কোটি কুল তরে।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
১০৭। তাল-খেমটা
ক্রোধের বাধ্য থেক নারে ভাই
ক্রোধে ঘটায় মহাপ্রলয়, মান্য গণ্য নাই।
ভাইরে ববে এসে ক্রোধের বশে,
নিয়ে রলি সব বালাই।।
১। ক্রোধ অর্থাৎ রাগ বলে, বিপদ সে ঘটায়,
আত্ম-হত্যা, নরহত্যা ক্রোধ দ্বারা হয়।
(সোনার) রাজ্য পুড়ে, শ্নশান করে,
স্ব চক্ষেতে দেখতে পাই।।
২। কারাগার বাস অর্থ বিনাশ, গুরু ভক্তি নাশ।
এই সব ব্যাপার হল তাহার, ক্রোধী ব্যক্তির যশ।
আছে এম্নি রীতি, ক্রোধী ব্যক্তি,
তাদের শত্রুর অভাব নাই।।
৩। ক্রোধ উত্থাপন হইলে, সদজ্ঞান থাকেনা;
আপনকে পর করতে পারে, এই তার নিশানা।
তিনি আপনি আপনার শত্রু, শত্রু হয় তার আপন ভাই ।।
৪। আদিত্যের আশ, ক্রোধেরই বশ, দীনা হয়োনা;
সতত সাবধানে থেক, ভুলে যেয়ো না।
হরি গোসাইর বচন, ক্রোধ দুর্জ্জন, ভক্তির দেশে দিও ঠাঁই।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
১০৮। তাল-খেমটা
জগৎকে প্রেম কর এবার
না করলে প্রেম কোন জনম, কুল পাবেনা আর।
ভাইরে নিজকে যেমন ভালবাস, তেমনি ভাল বাস পর।।
১। হিন্দু খৃষ্টান, আর মুসলামান, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি,
(ধর্ম্ম) অবলম্বি বর্ণ হিংসা করনা অতি।
ভাইরে লোক দেখে তায়, জাতির নির্ণয়,
করার সাধ্য নাই তাহার।।
২। (কোন) মুচিকে দেখে ব্রাহ্মণ অনুমান করা হয়,
(আবার) ব্রাহ্মণ দেখে নিকৃষ্ট জাতি অনুমান হয়।
যখন পরিচয় হয় হেন সময়, অবিশ্বাস হয় তার উপর।।
৩। যে মুচিকে দ্বিজ ভ্রম হইয়াছিল,
তখনে তার প্রতি ঘৃণা আপনি আসিল।
যাকে অপছন্দ হয়ে ছিল, দ্বিজ শুনে ভক্তি অপার।।
৪। এই ভ্রান্তি দুর কর গিয়ে, ওরে পাষাণ মন,
সর্ব্ব জীবে সম জ্ঞান, রেখ সর্ব্বক্ষণ।
তবে জগৎকে প্রেম করা হবে, গুরুবৈ জানবি না আর।।
৫। সর্ব্ব জীব ইশ্বরের সন্তান, এক ভাই সবাকার,
শান্ত্রে পাওয়া যায় সিদ্ধান্ত, ব্যাক্ত চরাচর।
ভাইরে এক ভিন্ন দ্বিতীয় নাস্তি, জ্ঞান করিও অনিবার।।
৬। উচ্চ বাচ্য জাতিভেদ, করিও না ভাই,
জাতিভেদ মহাপাপ বলে, প্রমানেতে পাই।
শুধু একই পিতার সন্তান হয়ে,
ভাই ভাই বিরোধের সঞ্চার।।
৭। জাতি হিংসায় এ দুনিয়ায় গেল রসাতল,
ছেড়ে দেও সব, হিংসা গৌরব, মনেরি গরল।
করে জগৎকে প্রেম, দীনা অধম,
আগম নিগম সাধন কর।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
১০৯। তাল-খেম্টা
হেরিয়ে মানুষের যত কর্ম্ম কারখানা।
এ সে ঘোর কলিতে দুষ্কর্ম্মেতে, কত পায় দুঃখ যাতনা।।
১। মাতা পিতার গুণে পুত্রের, শান্তি অশান্তি,
স্বাস্থ্য চেহারা কিম্বা, শরীরের কান্তি।
কারও অতুল সম্পদ, কেহর যায় বাদ,
কারু জনম ভরি দেনা।।
২। হলে মাতা পিতা অশিক্ষিত, নিজ সন্তানেরে,
ক্রোধতরে অভিমাপ দেয়, সামান্যের তরে।
তাতে ব্যধি যুক্ত, মেয়ে পুত্র, দুঃখ যাতনা ঘুচেনা।।
৩। ভাগ্যক্রমে পুত্রের ঘরে, যদি সন্তান হয়,
কর্ম্ম অক্ষম করে দুষ্কাম, ব্যাধিগ্রস্ত রয়।
পেয়ে খেতে কষ্ট, অসন্তুষ্ট, হরিনাম মুখে আসে না।।
৪। এই ভাবে তার পূর্ব্ব পুরুষ, হীন হইয়ে রয়,
(শাপে) অর্থের অভাব, কু স্বভাব,
আর ব্যাধি নাহি যায়।
করে কম্ম মন্দ অসৎ সঙ্গ, দিবা নিশি কুভাবনা।।
৫। সুশিক্ষিত অতি জ্ঞানী, মাতা পিতা হলে,
অভিশাপ দেয় না কখনে, বহুকষ্ট পেলে।
তারা ভাবে মনে, ক্ষুদ্র জ্ঞানে, বলে মন্দ রাগ হব না।।
৬। (আদিত্য) বলে রিপুর ছলে, জ্ঞান হারাইও না,
হরি গোসাইর রণ নিয়ে কর সাধনা।
বোকা দীনবন্ধু সাধন বন্ধু, গুমানে হারাইওনা।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-উল্টাকেশী
১১০। তাল-গড় খেম্টা
কি গান গাব কেবা শুনে
কি গান গাব কেবা শুনে।
লোকে কু-কর্ম কু-কথা নিয়ে, মত্ত থাকে রাত্রিদিনে।।
১। কেহ গুরুর বাক্য ধরে, সদ্ভাবেতে থাকলে পরে,
নিন্দুকে তার নিন্দা করে, থাকে আর কলঙ্কের সন্ধানে।
অন্তরেতে ঐ ভাবনা থাকে সর্ব্বক্ষণে,
তাদের নাই মন সুহ্ম দেহ রুক্ষ, সদা ভন্ডামি রয় মনে।
২। সাধুর বেশ ভুষণ দেখিলে,
নিন্দুক যায় তার নিন্দার ছলে,
সাধুর সঙ্গে কথা বলে, পূর্ণ অহঙ্কার নিয়ে প্রাণে।
বলে কটু বাক্যে সে অকথ্য ঐ দুষ্ট বেইমানে,
এই ভাবে দস্যুত্ব করে, ঘুরে বেড়ায় গায়ের গুমানে।।
৩। মন ভাঙ্গায়ে সাধুজনার, পাঠায়ে দেয় কুমতির ঘর,
সাঁতারিয়ে অকূল পাথার, মারা যায় নিদারুন তুফানে।
তাহার সাধন ভজন হয়না কখন, দুষ্ট কলির টানে,
শেষে সারা জীবন, যায় অকারন, গুরুর করণ সাধন বিনে।।
৪। আদিত্য কয় বলি তোরে, দিন খুয়ালি জুলুম করে,
যাবি যেদিন যমের ঘরে, কি জবাব দিবি তারি সনে।
তখন কোথা রবে হিংসা গৌরব শমনের শাসনে,
হরি গোসাই বলে, গৌরব ফেলে, দীনা ঐ নাম বল বদনে।।
লোক শিক্ষা
১১১। তাল গড় খেমটা
কোন প্রশ্নয়ালা গানে শুধু লোক মজায়েছ
তোর ভাব, প্রেম, সঙ্গে নাই সম্বন্ধ,
কেবল দর্পে কাল কাটায়েছ।।
১। লোক ঠকাতে প্রশ্নের গান শুনাও,
দুষ্ট মুখে পরম সুখে, সুনাম নিয়ে যাও।
মন খোলসা নও, গরল ধরে খাও,
প্রশ্নে গান সব গেয়ে গেয়ে,
আমার মন জহুরী চেতায়েছ।।
২। ভাব দেখায়ে রঙ্গের মোসন দেও,
বাঘের সম গর্জ্জন মেরে, দুই চক্ষু পাকাও।
দেহে সরলতা নও, ময়লা ভরে লও,
যত সতের প্রাণে কষ্ট দিতে
সেই হেতু ভবে জন্ম নিয়েছ।।
৩। লোক ভুলাতে ভাবেরই গান গাও,
গুরুর করণ সাধন ভজন, সে পথে না যাও।
ও তোর শুষ্ক কাষ্ঠের নাও, মাঝে মাঝে বাও,
যদি শমন ঘোলায়, ডুবায় সে নাও
এড়াতে সন্ধান কি তার করেছ।।
৪। হরি গোসাই বলে হুসিয়ারী,
সরল রাস্তায় না হাঁটিলে, কষ্ট হয় ভারী।
(নইলে) কেন মিলবে সেই শ্রীহরি,
দীনা তুই ভজনে বাদ পড়েছ।।
লোক শিক্ষা
১১২। তাল-একতালা
হয় না কথায় কাবু মাষ্টার বাবুম, বিদ্যার গৌরবে।
বিদ্যা কামাই করে তর্ক ভরে, লোক ঠকায় হিংসা রবে।।
১। কেবল তর্কেরি বাহার, মান্য নাই গুরু জনার,
বলে যথা কুৎসিত কথা, মাতা-পিতার পর।
হইল বুড়া বুড়ি দোষী ভারী, স্ত্রীর মান্য রয় ভবে।।
২। অষ্ট শক্তি মাতা-পিতার, দেহ গঠন তাতে সবার,
বিদ্যার জোরে মা বাবারে, বলে কটুত্তর।
দিয়ে প্রাণে কষ্ট, শাপ ভ্রষ্ট, হয় পূর্ব্বাপুরুষ সবে।।
৩। বাবুর গলে মালা নাই, শুধু লুঙ্গি পরা চাই,
ধর্ম্ম পূণ্য হইল শূন্য, মান্য গন্য নাই।
হরি ভক্তের পায়, মাথা না নোয়ায়,
ভাব ভক্তি প্রেম অভাবে।।
৪। মাষ্টার কথায় কাতর নয়, হরি ভক্ত দেখলে তায়
তর্ক ভরে জব্দ করে, কু নিরে ডুবায়।
ডুবে সাধু জনা সাধন বিনা, ভব কূপ বৌরবে
৫। দীনবন্ধুর এই বাণী, পাপের ভার সয়না মেদিনী
পাপের ভরে বসুন্ধরে, শস্যের হয় হানি
এখন খেতে কষ্ট, ব্যাধি গ্রস্থ, হয়ে থাকে এই ভাবে।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-জয় জিয়ালই
১১৩। তাল-কাহারবা
কর্ম্মে করিস নারে ভুল
ঐ দেখ সব চেয়ে কর্ম্ম শ্রেষ্ঠ কর্ম্ম সর্বমুল।
যদি করলে কর্ম্ম মিলে ধর্ম্ম, কর্ম্ম বিনে, নাইরে কুল।।
১। কর্ম্ম বলে সকল ফলে, স্বর্গ কি নরক,
কর্ম্মে হয় অসাধ্য ব্যাধি, নিতান্ত দুভোগ।
কেহ কর্ম্ম গুনে যায় গোলকে,
কর্ম্মে পায় অকূলের কূল।।
২। রাজা অন্বরিসের ছেলের, দশ বৎসর আয়ূ ছিল
কর্ম্ম গুণে অযুত বৎসর, আয়ূ সে পেল।
গেল যম দন্ড কর্ম্ম বন্ধন, আনন্দ হৃদয় আকুল।।
৩। (ঐ দেখ) মুনি ছিল বিশ্বামিত্র, গাধির নন্দন,
মেনকার সঙ্গে তাঁহার, হইল মিলন।
তাইতে জন্মে কন্যঅ শকুন্তলা, কুরু পান্ডবের আদিমুল।।
৪। এই মত দেখ চেয়ে, কর্ম্মেরি বিহন,
(অধম) দীনবন্ধু পড়ে রল, না হল সাধন।
দয়াল হরি গোসাই, উপায় কি তাই,
পেলেম না চরণের ধূলা।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-কেলেংড়া
১১৪। তাল ঠুংরী
হরি বল মন দূরে যাবে কাল শমন
জীবের পরম ধন এল বহু যুগ পর।
ঐ দেখ হরি বিনে, কলির জীবের, গতি নাইরে আর।।
১। সত্য ত্রেতা দ্বাপরেরতে, এ নাম ছিল গোপনেতে,
জীবের পরম ভাগ্যেতে, করিল প্রচার।
মনে প্রানে ঐক্য করে, এনাম নেরে বদন ভরে,
অনায়াসে যাবি তরে, শঙ্কা নাইরে আর।।
২। ছেড়ে দে তাস, পাশা, দাবা, তন্ত্র-মন্ত্র কর জপা,
কলিতে হরিনাম জপা, অন্য কথা নাই।
৩। হরি মানব কুলে আসিয়ে যশবস্তু সূত হয়ে,
জন্ম নিল সফলা ডাঙায়।
গোসাই রাম কান্তের বরে, অন্নপূর্ণা মাতার ঘরে,
এল পূর্ণ শক্তি ধরে, করতে জীব উদ্ধার।।
৪। ভেবে হরি গোসাই কয়, হরি এল এ ধরায়
হরির তরী ধর রে সবাই।
শুনরে বোকা দীনবন্ধু, ডাকলি না অনাথের বন্ধু,
কেমন করে ভবসিন্ধু, হয়ে যাবি পার।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী-ঝাঝিট
১১৫। তাল-কাওয়ালি
হরি জীবের জন্য অবতীর্ণ সফলা গ্রামে আসিয়া।
তিনি অনর্পিত ধন করে বিতরণ, আপনি হরি যাচিয়া।।
১। মায়ের কড়ার শুধিবে বলে,
বুদ্ধ তপস্যারি ফলে, এল নিচু হইয়া
কারু জাতির গৌরব রবে নারে, যারে একচাবি হইয়া।।
২। গৌরলীলা সাঙ্গ করি,
শ্রীনিবাস রূপ ধরি, গোপন লীলা করিয়া।
করে শেষ লীলা ঐ ঈশান কোনে, পূর্ণ শক্তি ধরিয়া।।
৩। পতিত পান নামটি ধরি এল উড়িয়া নগরী,
পতিতের লাগিয়া।
হবে পতিতি আবাদ ছাড় বিবাদ,
লও হরি বল মাত মাতিয়া।।
৪। হরি গোসাইর এই সুবচন,
দীবন্ধু এই পরম ধন, দিসনারে তুই চাড়িয়া।
এবার দিন থাকিতে শ্রীহরির নাম, নেওনা বদন ভরিয়া।।