মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ১১~২০

গান নং- ১১
ভালবাসার এইত রে বিধান,
চোখের জ্বলে জীবন ভরে পায়রে প্রতিদান।
 
দ্বাপরেতে রাধা ছিল, কৃষ্ণে ভাল বেসেছিল, 
তাইত রে সে সারাজীবন, কৃষ্ণ বলে কেঁদেছিল।
তবুও কৃষ্ণে অনুরাগী, ভুলে মান অভিমান।
 
ভালবেসে বিষ্ণুপ্রিয়া, হিয়াতে শেল বান্ধিয়া, 
প্রভু পানে চেয়ে চেয়ে, আজীবন যায় কান্দিয়া।
যার জন্য বিরহ সৃষ্টি, তারে করে সর্বস্ব দান।
 
ছিল এক অশ্বিনী গোঁসাই, তার জীবনেতে পাই,
শান্তি হরির প্রেম বিরহে, সে জন কাঁদিছে সদাই।
এমন ভাল বেসেছিল, কোন চায়নি প্রতিদান।
 
আরেকজন গোলক পাগল, রাগাত্মিকা ভাবের মূল,
অকামনা ভাবের রীতি, কুল ছেড়ে পায় কুল।
হীরামন করেনি ভুল, হরিতে করে আত্মদান।
 
মল্লকান্দির জানকীদেবী, ভালবাসার প্রতিচ্ছবি, 
ওড়াকান্দি থেকে হরি, দেখাইল স্বরূপ ছবি।
বিনা সুতে গেঁথে মালা, হরির গলে করল দান।
 
তোমরা যদি ভালবাসো, নয়ন জলে বয়ন ভাস, 
নিজেরে করে অবলা, তার জন্য তারে ভালবাসো।
তারক চাঁদের হয়না দয়া, বৃন্দাবনের ঘটে আন।
 
গান নং- ১২
এসেছে প্রভাত দেখ ছড়িয়ে অরুণ আলো
জাগো, জাগোরে জগৎবাসী, আলস্য ত্যজিয়া হরি বল।
 
উঠে সব জঙলা পক্ষী, বসিয়া বৃক্ষ শাখে, নিজ নিজ ইষ্ট নাম গায়।
নিজ নিজ কর্মস্থলে, ছোটে সবে কুতুহলে, হাসিয়া হাসিয়া কথা কয়।
এখনো তুমি ঘুমিয়ে কেন, জেগে উঠে স্বকর্মে চল।
 
যত যত ভক্তবৃন্দ, পিয়ে সুধা মকরন্দ, 
হৃদয়ে ধরে মহানন্দ, হয়েছে হরিনামে মাতোয়ারা, 
একে একে হবে ভজ, সবে হরিচাঁদ আত্মজ,
স্মরণ কর সব অগ্রজ, হরিনামে আত্মহারা।
তাদের আশিস মাথায় নিয়ে, জীবনের গান গেয়ে চল।
 
যারা আজো আলস্য দোষে, নিদ্রাগত মোহ বশে, 
পড়িবে সে কাল রোষে, তখন কি হবে উপায়, 
তারক চাঁদ মহানন্দ, অশ্বিনীর বাধা ছন্দ, 
জগৎজীবে দেয় আনন্দ, মুঢ় জনে না বুঝিতে পায়।
বৃন্দাবন দীনদৈন্য, কপালে নাই ভক্তি বল।
 
গান নং- ১৩
আত্মশুদ্ধি না ঘটিলে যায় কি তারে পাওয়া।
মিছে কর ধোয়াধুয়ি, ফুরায় না তাই চাওয়া।
 
ভেবে কর বিচার, পানকৌড়ির আচার, 
সারাদিন স্নান করে, সে কি শুদ্ধাবতার? 
মনের গলদ মনে থাকে, স্নানে হয় উপরে ধোওয়া।
 
গঙ্গা জলে ডুব দিলে কি পবিত্র হয় জীব, 
তাহলে সব জীব হত দেখ নিত্য সদা শিব। 
গঙ্গা জলে ডুব দেয়া প্রতিজ্ঞা এক হয়,
পুনঃ যেন হেন কার্য আর কভু নাহি হয়, 
যাতে হয় পাপের উদয়।
যদি কর এমন কাজ, পুন না আসিবে পাপ, 
পুণ্য ফলে ভাল কাজে, পূর্ব পাপ যাবে খোয়া।
 
তীর্থ দর্শন করে কভু হয় না পুণ্য সঞ্চয়,
দর্শনে হয় ভাবের সৃষ্টি, ভাবেতে নিত্যের পরিচয়।
মনে যদি ভাব না আসে, বৃন্দাবনে কি কৃষ্ণ হাসে, 
ভাব হলে ভাবুক জনের ঘরে বহে বৃন্দাবনের হাওয়া।
 
মনে ভাব জাগাতে পরিবেশ বিশেষ প্রয়োজন, 
গুরু করে পরিবেশ সৃষ্টি, তাইতে লও শরণ।
মাটির কলসীর ঘষা লেগে, পাথরেও খাদ জাগে, 
তেমনি নিত্য অভ্যাস যোগে, ভাব করে আসা যাওয়া।
 
ভাল চিন্তা ভাল কাজ, সদা হরিনাম কীর্তন,
অন্য ভিন্ন চিন্তা যেন মনে না আসে কখন।
তারক চাঁদ তাই বলছে ডেকে, এক হরিতে বিশ্বাস রেখে, 
ডাক দিয়ে জাগাও নিজের বিবেকে, বৃন্দাবনের ফুরায় নারে চাওয়া।
 
গান নং- ১৪
মনরে, সাধন জান না।
সাধন করলে মিলত হরি, থাকত না ভব যন্ত্রণা।
 
যত ছিল অভাগার গণ, তাদের করতে পরিত্রাণ, 
অবতীর্ণ হলেন হরিচান, সবাই তার কর বন্দনা।
 
পতিত পাবন নাম ধরেছে, পতিত জনের তারণ করেছে, 
সবার দ্বারে দ্বারে তাই ঘুরেছে, একবার ভাব এই ভাবনা।
 
ত্যাগ করিয়ে সন্ন্যাস রীতি, সবার জন্য গার্হস্থ্য নীতি, 
চতুরাশ্রমের সংসার ভিত্তি, দিল সহজ সরল সাধনা।
 
কাজ কর হাতে হাতে, নাম কর মন ভাবনাতে, 
সৎচিন্তা তারই সাথে, সদা কর বিবেক চালনা।
 
লোক ঠকানো মিথ্যা আচরণ, মন মন্দিরে যেন পায় না আসন, 
কর্মবিহীন ধর্ম আচরণ, কখনো কেউ কর না।
 
সত্য বাক্য মুখে বল, সবাইকে বাসরে ভাল, 
দ্বাদশ আজ্ঞা মেনে চল, হরিনামে মেতে ওঠ না।
 
দশরথ গোলোক লোচন, পাগল মৃত্যুঞ্জয় হীরামন, 
তারকের মন করে হরণ, বৃন্দাবনের নাই সাধনা।
 
গান নং- ১৫
নিয়ে চল তার কাছে রে, যে করেছে হরি দরশন।
আমি নয়নেতে তারে হেরে, দেখব আমার হরি কেমন।
 
হরি আমার ভক্তরূপে, বেড়ায় ঘুরে চুপে চুপে, 
দেখতে চাইলে তাই স্বরূপে, ভক্তের কাছে কর গমন।
 
যে ধরেছে তারে ধর, স্বরূপ রূপে বাঞ্ছা কর, 
ভক্তিযুত করজোড়, ধরে থাক ঐ শ্রীচরণ।
 
ধরা মরা সাধন সোপান, কর সবে এই অনুমান, 
তার ও তাঁর নাই ব্যবধান, এক হরিতে মিলন বন্ধন।
 
সৃষ্টি রূপে স্রষ্টার বিরাজ, স্রষ্টার সেবায় সৃষ্টির কাজ, 
হওরে নিয়োজিত আজ, ভক্তির হবে অনুরণন।
 
বৃন্দাবন সাধন শূন্য, চেয়ে আছে কৃপা জন্য, 
তারক চাঁদ অগ্রগণ্য, করে লীলামৃত বরিষণ।
 
গান নং- ১৬
অকামনা প্রেম কর সাধনা।
অবলার ভাব করে সম্বল, একবার তারে ডেকে দেখ না।
 
প্রেমরূপ আহ্লাদিনী, রাই কিশোরী বিনোদিনী, 
কৃষ্ণ প্রেমে উদাসিনী, একবার সে ভাব ধর না।
 
পাপ পুণ্য জ্ঞান নাই, মুক্তি বাঞ্ছা তুচ্ছ তাই,
শ্রীপদ বাঞ্ছা করে সদাই, করে না অন্য ভাবনা।
 
মাধুর্যের দেশেতে বাস, ঐশ্বর্যে নাই অভিলাষ, 
ইষ্ট সুখে সুখাভিলাষ, দিবানিশি সেই কামনা।
 
পাগল বেশ পাগল স্বভাব, মনেতে নাই কোন অভাব,
সদাই চিন্তামণির ভাব, নাইরে তার বাহ্য ছলনা।
 
বিষয় বিষে ডুবে র'লি, আসল পথ ভুলে গেলি,
বৃন্দাবন নিঃসাধন হলি, তারক চাঁদে ভার দেনা।
 
গান নং- ১৭
সকলি সময়ে করে।
সময়েতে দুঃখ সৃজন, সময়েতে বিলোপ করে,
সময়েতে আনন্দ দেয়, সময়েতে সব নিবারে।
 
যে দুঃখ আজ করাল বিষম, সময় গেলে হয় প্রশমন,
সময় গেলে হয় গো মরণ, সময় এলে জন্ম ধরে।
 
কালের গতি ভীষণ বক্র, মাথায় ঘোরে জীবন চক্র,
ধরতে পারলে তারই সূত্র, আনন্দ তার জীবন ভরে।
 
কালের সঙ্গে যুদ্ধ করা, নিজের সাথে বোকামী করা, 
বৃথা কাজে শক্তি হরা, সারাজীবন রোদন করে।
 
জন্ম মৃত্যু জরা ব্যধি, কালের গুণে নিরবধি, 
ঘটে চলেছে আজ অবধি, গতি কেউ রুধিতে নারে।
 
কাল বলে কাল গেলে চলে, অনর্থ ঘটে তার কপালে,
কালে ধরিবে বিচার কালে, কে করিবে রক্ষা কারে।
 
কালরূপেতে সৃষ্টীশ্বর, সৃষ্টি করে অপরাপর,
কাল গুণেতে ধ্বংস সবার, কাল ঘুরিছে চরাচরে।
 
বৃন্দাবনের গেল কাল, হুশ হল না থাকতে সকাল,
ঘনিয়ে এলো রাত্রি কাল, কালচক্র মাথায় ঘোরে।
 
গান নং- ১৮
পাপ পুণ্য বলছো কারে, সে ত শুধু কর্মফল।
মিছে শুধু ঘুরে মরা, কাম-কামনার হলাহল।
 
কর্মফল এড়াইতে, সৃষ্টিতে কেউ নাহি পারে,
স্বয়ং ঈশ্বর কর্মফলে, করে দেখ চলাচল।
 
রাম রূপেতে বালী বধ, কৃষ্ণ করে তার শোধ,
কর্মফলে প্রতিরোধ, করতে নারে কোন ছল।
 
কৃষ্ণ হল রাধায় ঋণী, নিমাই কাঁদে দিনরজনী,
যাওয়া আসার এই সরণি, ভাঙ্গতে নাহি কোন বল।
 
কর্ম করলে ফলের উদয়, ভাবনাতে সুখ দুঃখ হয়,
যার কর্ম তারে ভোগায়, শুভাশুভ প্রতিফল।
 
ভাব যদি কর্মী তুমি, কর্মক্ষেত্র লীলাভূমী,
ঈশ্বরের ভৃত্য তুমি, তোমার কিসের ফলাফল।
 
আমার আমার করলে সদা, কর্মফলে রবে বাঁধা, 
তুমি যার কর্মও তার, আমিত্বে হয় ভোগ-দখল।
 
বৃন্দাবন এমন নির্বোধ, যায় না তার আমিত্ববোধ, 
ঈশ্বর নিলে প্রতিশোধ, কে দিবে তার প্রতিফল।
 
গান নং- ১৯
আমার স্বভাব ভিক্ষারীর,
ধন দানে কি দুর হবে রে, এ অভাব অভাবীর।
 
আমি, পেট চালাতে ভিক্ষা করি, মন্দির করতে ভিক্ষা করি,
ষোড়শোপচারে পূজা করি, পূজা লও হে এ পূজারীর।
 
বস্ত্র আমার ছিন্ন রাখি, লোকসমাজের দয়া দেখি,
পর অন্নে সদাই ভুকি, দোষ লবেন না এ বেচারীর।
 
লোক দেখানো কর্ম করি, সদাই যেন ব্যস্ত ভারি,
তবু না পারি দিনগুজারী, কেমন কপাল অভাগীর।
 
যেচে লোকে যা দেয় আমায়, দিনে দিনে অভাব বাড়ায়,
হাত পাতি তাই কি যন্ত্রণায়, জানে না এ বার্তা দুঃখীর।
 
ধর্ম কর্ম রসাতলে, যায় যাক তা পলে পলে,
আমি সুখী তলে তলে, আমি যে ভিক্ষারী বীর।
 
শোন বলি মানুষ ভাই, ভিক্ষাতে আর উদ্ধার নাই,
সৎপথে যা রোচে ভাই, তাহাতে মন কর স্থির।
 
গুরুচাদেঁর বিধান মতে, ভিক্ষা কর শিক্ষিত করতে, 
জীবিকার তরে থলি হাতে, নত কেউ কর না শির।
 
জানি বুঝি ভাল মত, তবু ভিক্ষা করি অবিরত,
বৃন্দাবনের জীবন ব্যহত, নাও পেল না অকুলে তীর।
 
গান নং- ২০
মন কাঁদে রে, স্বদেশের লাগি।
সুলভের বাণিজ্যে এসে, 
দুর্লভ বস্তু হারাইলেম, আমার মতো নাই অভাগী।
 
এ দেশ আমার কত ভাল, আপন বলে বাসে ভাল,
নিদান কালে সব ত্যজিল, আমায় করে চির বিবাগী।
 
কত শত আত্মীয় স্বজন, মোহে ফেলে ভুলালরে মন,
যাবার সময় এল যখন, করে গেল সর্বত্যাগী।
 
আমার, ভুল হয়েছে মূল সাধনে, ধর্ম কথার মর্ম না জেনে, 
সৎ কর্ম তাই বাঞ্ছা মনে, স্বরূপ সাধন অনুরাগী।
 
যাবার সময় হয়ে এল, পারের চিন্তা নাহি হল,
হরিনাম পথের সম্বল, হয়ে র'লেম চিন্তা রোগী।
 
তারক চাঁদের কৃপা গুণে, পেল যে নাম বৃন্দাবনে,
কর্মদোষে নাম করিস নে, হয়ে র'লি চরণ ত্যাগী।
 

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free