গান নংঃ ১-১৫
শ্রীশ্রী হরির ভাব সংকীর্ত্তন
উৎসর্গ
এই সঙ্গীতাবলী
মহা প্রভু শ্রীশ্রী হরিচাঁদের
শ্রীশ্রীহরি গুরুচাঁদের
শ্রীশ্রী চরণার বিন্দে
উৎসর্গীকৃত
ও
সমর্পিত
হইল।
-গ্রন্থকার
শ্রী দীনবন্ধু ঠাকুর
শ্রীশ্রী হরিগুরু-চাঁদ মতুয়া মিশন
স্বত্ত্বাধিকারী - পদ্মনাভ ঠাকুর (বাংলাদেশ)
- কৃত্তিবাস ঠাকুর (ভারত)
প্রকাশকাল - মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশী; বারুনীমেলা
৮ই চৈত্র; সন-১৪১৭
অগতির গতি পূর্ণ ব্রহ্ম শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের পাদ পদ্ম ভরসা করিয়া বহুদিন অপ্রকাশিত “শ্রীশ্রীহরির ভাব সংকীর্ত্তন” গীতিমালা খানি পুনঃরায় মুদ্রিত করা হইল। এই সংস্করণে গ্রন্থাকারের পান্ডুলিপিতে পাওয়া কয়েক খানি নতুন গান সন্নিবেশিত করা হইল। এই গীতমালা খানি ঠাকুরের ভক্ত প্রাণের কিছু ঘাটতি প্রশমিত হইলে এই চেষ্টা সার্থক মনে করিব।
ইতি
কৃর্ত্তিবাস ঠাকুর
সূচনা
গুরুদেব শ্রীযুক্ত হরি গোস্বামী। তাঁহার আদেশে এবং দয়া-গুনে এই সঙ্গীতাবলী রচনা করা হয়। গুরুদেব একদিন ১৩৪২ সালে ১০ই ফাল্গুন বুধবার তারিখে বরিশাল জেলার বাধুরপুর গ্রামে নিকুঞ্জ বিহারী মতুয়ার বাড়ীতে বসে অনুকূল পন্ডিত কে বলেছিলেন “অনুকূল, তোমার বিদ্যা ও জ্ঞানশক্তি আছে, তুমি তো গান তৈয়ার করতে পার। তুমি গান তৈয়ার করিবা। এখনই একটি গান তৈয়ার করে আমাকে শুনাও।” তদুত্তরে তিনি কাগজ ও কলম লয়ে বসিলেন। এই কথা যখন উত্থাপন হয় সেই সময় সেই বিছানায় দীনবন্ধু বসা ছিল। শ্রী গোস্বামীর ঐ শ্রীমুখের বাক্য শুনে দীনবন্ধু গুন গুন রবে তান ধরে শ্রীহরির নাম-পদ রচনা করিতেছিলেন। ঐ সুরের সঙ্গে সঙ্গে অমনি বোল উঠতে লাগল। সেই গান শুনে শ্রীগোস্বামী হেসে উঠে বললেন “দীনবন্ধু গান তৈয়ার করতে অনুকুলকে বললাম, সেই গান কি তৈয়ার করলি তুই? তবে আজ হতে তুই গান তৈয়ার কর।” সেই দিন হতে শ্রীশ্রীহরি ঠাকুরের নামপদ গান তৈয়ার করতে আরম্ভ হয়।
এ দিকে অনুকূল পন্ডিত একটা গান বেঁধে তার সুর করতে না পেরে গান রচনা করিতে খান্ত করিল। তার দ্বারা গান রচনা হল না। তৎপর ১৩৫১ সালে শ্রীযুক্ত শ্রীপতি প্রসন্ন ঠাকুর বরিশাল জিলার কাঁঠালিয়া দীনবন্ধুর সেই গান শুনে বলিলেন “দীনবন্ধু তোমার গানে আমি অতি সন্তুষ্ট হয়েছি, কিন্তু যাহাতে এই নাম জগতে প্রচার হয় তা করাই তোমার উচিৎ। নামেই মনের অন্ধকার ঘুঁচে। তাতেই জীবের মুক্তি; দীনবন্ধু এই কাজে কখনো আলস্য করিও না।” সে কথার উপর দীনবন্ধু বলিলেন, “ বাবা আমি বিদ্যা, বুদ্ধিহীন অতি জঘন্য দুর্ভাগা; আমার দ্বারা কি হবে।” তদুত্তরে ঠাকুর বলিলেন দীনবন্ধু গুরুর প্রতি ভক্তি রাখিস্, গুরুই দেহের মালিক, গুরুই সর্বস্ত, গুরুর প্রতি ভক্তি মতি রাখিলে সর্ব্ব কর্ম্মে সুফল ফলে। হরি হরি।’
২১শে কার্ত্তিক, ১৩৫৮ সাল। -গ্রন্থাকার।
দীনবন্ধু ঠাকুর বরিশাল জেলায় বাউফল থানা অন্তর্গত ঘুচরাকাঠি গ্রামে ১৩১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম কালীচরণ ঠাকুর ও তার মাতা আদ্যা দেবী।
সন্ধ্যা আরতি
রাগিনী শানিরা
১. তাল - একতালা
ডুবল দিনমণি এল রজনী
দিবা অবসানে সন্ধ্যায় কর, হরিনামের ধ্বনি।
ও তাঁর নামের বলে, পাষাণ গলেরে, উজান বহে তরঙ্গিণী।।
শ্রীহরির চরণ আমি, করজোরে বন্দি,
জন্ম সফলা নগরী, বসত করে ওড়াকান্দী।
ও তাঁর রূপে জগৎ আলো করে রে’ অন্নপূর্ণা তার জননী।।
আমি কৃষ্ণদাসের চরণ বন্দি, বন্দি বৈষ্ণব দাসের পায়,
গৌরিদাস স্বরূপদাস বন্দি, বন্দি কাতর হৃদয়।
দয়াল গুরুচাঁদের চরণ বন্দিরে, বন্দি সত্যভামার শিরোমণি।
শ্রী শশী সুধন্য চাঁদের, বন্দি শ্রীচরণে
উপেন্দ্র, সুরেন্দ্র বন্দি, বন্দি অতি যতনে।
আমি বন্দি কায়মনে, শ্রীপতির চরণে, বন্দি মঞ্জুলিকার পা দু’খানি।।
বিশ্বনাথের চরণ বন্দি, বন্দি ব্রজনাথের পাও,
ব্রজনাটুর চরণ বন্দি, আমায় ঐ চরণে নেও।
আমি মাতা পিতার চরণ মন্দিরে, হয়ে আমি দীন দুঃখিনী।।
তার পরে বন্দনা করি, দশরথ গোস্বামী,
মৃত্যুঞ্জয়ের চরণ বন্দি যাহার, ভক্তি বাধ্য অন্তর্য্যামী।
আমি বদন গোসাইর চরণ’ বন্দিরে,
হরিনাম বিনে নাই অন্য বাণী।।
গোলক চাঁদের চরণ বন্দি, বন্দি হীরামণের পায়,
লোচন গোসাইর চরণ বন্দি, বন্দি শ্রীহরির দয়ায়।
গোসাই তারক চাঁদের চরণ বন্দিরে,
হরি লীলামৃত লিখিলেন যিনি।।
আমি তা’পরে বন্দনা করি, হরি গোসাইর শ্রীচরণ,
জীবন অন্তকালে যেন, করি ঐ রূপ দরশন।
মাতা হরিদাসীর চরণ বন্দিরে,
হরি গোসাই যার হৃদয় মণি।।
আমি এই সকল গোসাইর চরণে, করি যে মিনতি,
ভক্তি শূণ্য দীন দৈন্য, আমার কি হবে গতি।
অধম দীন দৈন্য, হৃদয় মাঝে সদায়, হরি হেরি যেন মুরতি খানি।।
সরস্বতীর স্তুতি
রাগিনী - ঝিঝিমারী
২। তাল-একতালা
মম কঠিন হৃদে মাগো হও অবস্থান।।
হও অবস্থান হও অবস্থান।।
১। হরি গোসাইয়ের দয়াগুনে, মাগিতেছি কায়মনে মা।
শ্রীহরি মা শান্তি দেবীর, বন্দী যুগল চরণ।।
২। গুরুচাঁদের কৃপা ডুরি, গলে দেও দয়ার মাধুরী মা।
এ অধমের সর্ব্ববাঞ্ছা করগো মা পূরণ।
৩। করি পদে এই মিনতি, এস কণ্ঠে সরস্বতী মা।
আমার নাহি শক্তি’ ভাব ভক্তি, নাহি আর্থীধন।।
৪। প্রথমে বন্দিলেম চরণ, পটরে বন্দী রূপের কিরণ মা।
(তব) রূপে গুনে ছড়াইল, এ তিন ভুবন।।
৫। পদযুগে সোনার নুপুর, বাদ্য হয় তার রুন ঝুনু মা।
রক্তজবা পদে দিয়ে করিয়াছ সাজন।
৬। জলপদ্ম রয় বাহু যুগে, মুক্তামালা গলে সাজে মা।
গজমতি হার গলে চূড়া শিরে ধারণ।।
৭। শ্বেতমাতা সরস্বতী, তব পদে করি স্তুতি মা।
তুমি বাগদেবী কণ্ঠেশ্বরী, ভুতলে মান্যবান।।
৮। কৃপাকর কৃপাময়ী, সে কৃপাতে ধন্য হই মা।
তুমি বীনাপাণি কণ্ঠধ্বনি, যোগাও মধুর বলি মা।
জগতে মা সে বোল আমার হয় যেন অখন্ডন।।
১০। জগৎ জোড়া নামটি তোমার চরণেতে দিয়েছি ভর মা
এই দীন হীন সন্তানে দেখ, দিয়ে দুটো নয়ন।।
১১। এই ভিক্ষা মা তব পদে, দয়া ধূলি দেও মোর হৃদে মা।
অধম দীনবন্ধুর সর্ব্ব কর্ম্মে রাখিও মা স্মরণ।।
আসর
রাগিনী জয় জিয়া লই
৩। তাল - কাহারবা
হরি এস আসরে,
বসিবার আসন রেখেছি হৃদয় মন্দিরে।
হরি হৃদ আসনের মালিক তুমি, এস যুগল রূপ ধরে।।
১। সাদা আসন মন ফুলে, সাজায়ে রেখেছি,
তুমি আসরে আসিলে আনন্দে নাচি।
আসরে হয়ে উদয়, আনন্দময়, আনন্দে রাখ মোরে।।
২। ভক্তের বাঞ্ছা পূর্ণকর, যশবন্তের নন্দন
শান্তি মায়ে সঙ্গে লয়ে, কর আগমন।
তুমি ক্ষীরোদের ধন মধুসূদন শ্রীচরণ, দেও আমারে।।
৩। পতিত পাবন নামটি তুমি করেছ ধারণ।
হৃদয় আসরেতে হরি কর পদার্পন।
তুমি আসরে আসিবে বলে বসেছি আশা করে।।
৪। (অধম) দীনবন্ধুর মন বাঞ্ছা, রয়েছে ভারি
ফুল চন্দন তুলসী পদে, দিব বিরাগ ভরি।
হরি গোসাইর দয়ায়, বাঞ্ছা হৃদয়
অঞ্জলি দিব তোমারে।।
ছত্রিশ নামাবলী
রাগিনী-জয় জিয়া লই
হরি বিপদ ভঞ্জন শ্যাম গুনমনি।।
জয় জগৎপতি হরিচাঁদ জয় জয়।।
যার নামে রূপে দীপ্ত হল বিশ্বময়।।
জয় শ্রীকৃষ্ণ দাস জয় বৈষ্ণব দাস।
জয় গৌরিদাস পূর্ণ কর অভিলাষ।।
জয় শ্রীস্বরূপ চন্দ্র জয় পঞ্চভ্রাতা।
যশবন্ত অন্নপূর্ণা হয় পিতা মাতা।।
জয় জয় গুরুচাঁদ শ্রীশশী সুধন্য।
আকুল পরানে গাগি উপেন্দ্র সুরেন্দ্র।।
অন্নপূর্ণা শান্তিদেবী জয় সত্যভামা।
সর্ব্ব জন্মের অপরাধ মোরে কর ক্ষমা।।
জয় ভগবতী ঠাকুরের জয় জয়।
ভিক্ষা দাও পদে মতি সদা যেন রয়।।
শ্রীপতি ঠাকুর মাতা মঞ্জুলিকা জয়।
জম্মে জন্মে কৃপা দৃষ্টি দিও হে আমায়।।
প্রমথ সম্মথ দয়া কর নিজ গুনে।
শান্তি হরি দেখা দেও হৃদি কুঞ্জবনে।।
জয় জয় মাতা পিতার চরণে প্রণাম।
কৃপা করি ঘুচাইও সর্ব্ব মনস্কাম।।
জয় শ্রীগোলক চন্দ্র জয় শ্রীবদন।
দশরথ মৃত্যুঞ্জয় ভক্ত প্রাণ ধন।।
জয় শ্রী তারক চন্দ্র জয় চিন্তামনি।
মম হৃদে দেও সদা ভাব তরঙ্গিনী।।
জয় জয় হীরামন জয় শ্রীলোচন।
ওড়াকান্দী লীলা ধন্য যাদের কারণ।।
জয় নাটু জয় ব্রজ বিশ্বনাথ জয়।
জয় মহানন্দ সর্ব্ব হরিভক্তের জয়।।
জয় শ্রীহরি গোসাই হরিদাসী জয়।
কলুষিত দেহ রাখ যুগল ছায়ায়।।
এ নামাবলী যে জন নিশী ভোরে লবে।
সারাদিন কুশলে যাবে অন্তে মুক্তি পাবে।
হরি হরি বল মন চৈতন্য হইয়া।
দেখ হিসাবের দিন আসিছে এগুয়া।।
দীনা বলে পদতলে দাও হরি ঠাঁই।
তুমি বিনে ত্রিভুবনে মোর কেহ নাই।।
প্রভাতী
রাগিনী-করুণমারী
৫। তাল-গড়খেম্টা
জয় জয় শান্তি হরিচাঁন
নিশী প্রভাতকালে বল শান্তি হরিচাঁন।
পুলক অন্তরে, নিশী ভোরে, নামে হও গমন।।
১। যত আছে জগতবাসী, শুন দিয়া মন।
বিভা ভোর হল হরি বল, আপন ভবন।।
২। মল্লকান্দী গিয়ে হরি, ভক্ত রঞ্জন।
মত্ত হয়ে সদা করে, হরি ভক্ত রঞ্জন।
মত্ত হয়ে সদা করে, হরি নাম কীর্ত্তণ।।
৩। প্রেমে অঙ্গ পুলকিত, নরনারীগণ।
দু নয়নে প্রেম ধারা, বহে সর্বক্ষণ।।
৪। চৈতন্য হয়ে সবে, ভাবে মনে মন।
কেহ বলে প্রভুসেবার, কর আয়োজন।
৫। শ্রীহরির স্নান লাগি, হইল মনন।
কুন্তু কাখে মনসুখে; সতীর আগমন।।
৬। কাশীশ্বরী সতী, আরও সঙ্গে যত জন।
পিছে পিছে চলে যায় মুখে গুনগান।।
৭। কাশীশ্বরী অতি ভারি, হরি পরায়ণ।
জল ভরিতে গিয়ে করে, ঐ রূপ দরর্শন।।
৮। কলসী ভরিতে সবে, করিল গমন।
গেলেন চলিয়া যথা, যশবন্তের নন্দন।।
৯। আসন পাতি কাশী সতী, বসায় হরিচাঁন।
হরির অঙ্গে তৈল মাখি, করাইল স্নান।।
১০। জানকী মন ফুলেতে, সাজায় হরিধন।
হৃদয় মন্দিরে ঐ রূপ, করিয়ে স্থাপন।।
১১। (এই) নিশী প্রভাত কালে ঘুমে, থেকনা কখন।
চৈতন্য হইয়ে কর, নামের মধু পান।।
১২। হরি গোসাই হরিদাসীর, পদে রেখ মন।
নাম গুন গেয়ে করগে দীনা, পাপ বিমোচন।।
৬। চৌত্রিশ পদবলী
হরি ভজলেম না তোমায় আমি,
জম্মিয়া ধরায়।
ক = করুণ ত্রন্দনে হরি ডেকেছি তোমায়।
খ = খালাস করহ, বড় জ্বালা মা উদরে।।
গ = গর্ভেতে পঞ্চম মাসে থেকে অগ্নিকুন্ডে।
ঘ = ঘোরতর এভাবে ডাকিনু হেট মুন্ডে।।
ঙ = উদ্ধার করিতে জ্বালা; এলে দয়াময়।
চ = চিরদিন ডাকিব, বলেছি সে সময়ে।।
ছ = ছদ্মবেশে একবার নিলে সপ্ত মাসে।
জ = জমিয়া ওয়ানা বলি ভুলে রঙ্গরসে।।
ঝ = ঝলমল পূর্ণ শশী দয়ার সাগর।
ঞ = একান্বর রূপরাশী ভুলেছি এবার।।
ট = টলমল রঙ্গরসে দেখি এ ব্রহ্মান্ড।
ঠ = ঠেকে মহামায়ার হাতে সত্য করি পন্ড।।
ড = ডুবিয়া রয়েছি আমি ভবকূপ নীরে।
ঢ = ঢলিয়া পরেছি ভব সংসার সাগরে।।
ণ = নবরঙ্গ মঞ্চ মাঝে ভাসিয়ে বেগাই।
ত = তরাইতে তরী নিয়ে এস হে গোসাই।।
থ = স্থাব জঙ্গমে তুমি সর্ব্বময় হরি।
দ = দয়া যদি হয় দয়া, কর দয়া করি।।
ধ = ধরাধামে সবেরে করহ তুমি দয়া।
ন = নহে দয়ার যোগ্য আমি নাহি সাজে দয়া।।
প = পবিত্র চরিত্র যেন, জন্মাবধি রাখি।
ফ = ফিরে না এ আঁখি যেন তব রূপে রাখি।।
ব = বশীভূত থাকি যেন তব রূপ সনে।
ভ = ভজন সাধন যাতে করি প্রাণপনে।।
ম = মনবাঞ্ছা পূর্ণ কর শ্রীমধুসুদন।
য = যনমে তোমার নাম না ভুলি কখন।।
র = রয়-তে রজনী গতে রবি হৃদাকাশে।
ল = লয়-তে রাধিকা শক্তি বসিয়াছে কাছে।।
ব = বয়-তে বসন্তকালে বসুমতি হাসি।
শ = শয়-তে শরৎকাল দাড়াইল আসি।
ষ = ষয়-তে সুমতি হয় যাহার সহায়।
স = সয়-তে সরল হয় তাহার হৃদয়।।
হ = হয় তে হরিনাম সে করে দিবারাতি।
ক্ষ = ক্ষীরোদে বিহারী এসে হয় তার সাথী।।
দীনাবলে পদতলে রাখ হরি মোরে।
পূনঃ পাঠাইও না হরি মায়ার সংসারে।।
তব পদ পাশে যেন থাকি দিবা রাতি।
দাস করি রাখ পদে হেরিব মূরতী।।
চৌত্রিশ পদাবলি সমাপন হ ইল।
প্রেমে ভাসি জগৎবাসি হরি হরি বল।।
ভোর গোষ্ঠ
রাগিনী - হেলারী
৬। তাল - ঝাপ
উঠরে যশবন্ত লাল,
গগনে হয়েছে বেলা।
ঐ দেখ, যত আছে ধেনু বৎস
কেঁদে কেঁদে হয় উতলা।।
১। তুই আয়রে ভাই প্রাণের হরি, আর তো সহে না দেরি,
রত্নডাঙায় করব গোষ্ঠ লীলা।
এবার তোকে নিয়ে, গোষ্ঠে গিয়ে,
মিলাইব প্রেমের মেলা।।
২। তোকে নিয়ে গোষ্ঠে যাব, রাখালরাজা সাজাইব
মনবাঞ্ছা পুরাব এ বেলা।
তোকে না হেরিলে একই বেলা, গোষ্ঠে যেতে ঘটে জ্বালা।।
৩। গোষ্ঠে ধেনু লয়ে কর খেলা, আজ কেন হল বেলা,
গোষ্ঠ খেলার মনে কেন নাই।
হরি গোষ্ঠে চল বেলা হল,
গলে দিব ফুলের মালা।।
৪। হরি গোসাইর শ্রীচরণে, বাঞ্ছা করি মন প্রাণে,
ঐরূপ যেন হেরি দু নয়নে।
বোকা দীনবন্ধু কয়, রত্নডাঙায়,
রূপ দেখায়ে মন, কর ভোলা।।
ফিরা গোষ্ঠ
রাগিনী - হেলারী
৭। তাল - ঝাপ
বেলা গেল হরি ঘরে চল
আর কত খেলিবি খেলা।
রত্নডাঙার বিলে সব রাখালে
করে ছিলে কতই লীলা।।
১। শুন হরি শুন মনি, অন্নপূর্ণ মাতা যিনি
কাঁদে সদা হরিচাঁদ বলিয়া।
হরি ঘরে চল যাই, খেলায় কার্য্য নাই
চেয়ে দেখ গেল বেলা।।
২। (মায়ের) নয়ন জলে বয়ান ভাসে, যারে দেখে আপন পাশে,
ডেকে বলে আয় হরি কোলে।
মায়ের নাই কোন ঠিক, হয়ে বিদিক,
দিক হারায়ে হয় চঞ্চলা।।
৩। (তোমায়) না হেরিলে গুণমনি, মা হয় যেন পাগলিনী,
সাঙ্গ কর এবে গোষ্ঠ খেলা।
ধেনু বৎস যত একত্রিত, করে চল থাকতে বেলা।।
৪। (অধম) দীনবন্ধুর বিনয় বচন, হরি গোসাইব ঐ শ্রীচরণ
হয় যেন মোর ভবপারের ভেলা।
হৃদি বৃন্দাবনে করুনাদানে, দিও শ্রীচরণ ধূলা।।
শ্রীহরি গোসাইর স্মৃতি গীতি।।
রাগিনী - দ্রুতা রঙ্গ
৮। তাল - ঝাপ
হরিচাঁদের অপার কীর্ত্তি বুঝিতে না পারি।
১। নামে মৃতদেহে জীবন পায়, অন্ধ নয়ন দূরে যায়,
প্রেমানন্দে বলে হরি হরি।
নামে বোবায় ধরেছে তান, মধুর হরি গুণ গান,
পাপী তাপী যেতেছে সব তরি।।
২। আছে কাঁঠালিয়ার হরি গোসাই, তার কীর্ত্তির অন্ত নাই,
চাঁদেশ্বরে পাঠায় গুরুচাঁদ।
কত বাঘ সম্মুখে আয়, নামের গুনে সব পালায়,
গোসাই বদনে বলে হরি।
৩। আছে আরও কত কীর্ত্তি তার, বিবাহের পর,
ঘুমে ছিল শ্বশুরের ঘরে।
ও তাঁর পরীক্ষার জন্য হরি, জাতি সর্প দিলেন ছাড়ি
বাহুতে পেচায়ে থাকে ধরি।।
৪। গোসাই সজাগ হয়ে বসিয়া, সর্ব হস্তে দেখিয়া,
ঝাঁকি দিয়ে ফেলাল সম্মুখে।
সর্ব ফনা ধরে চেয়ে রলে, গোসাই বলে যাও চলে,
তাহা শুনে সাপ যায় ত্বরা করি।।
৫। গোসাই জালিয়ার টেকেতে যায়, কত কীর্ত্তি সেখানে রয়
সেই কীর্ত্তি বলিতে না পারি।
অধম দীনবন্ধু কয়, পরে রব রাঙা পায়
যাহা করে দয়াল শ্রীহরি।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী - দেবগিরি
৯। তাল –ঠুংরী
গুরুবলে প্রাণে কাঁদে না কি করি উপায়।
মরলেম রিপুর বসে রঙ্গরসে,
দমন কর রিপু সমুদয়।।
১। অন্তরালে থাক তুমি, সদা লুকায়ে,
ডাকলে পরে হওনা চেতন, থাক ঘুমায়ে।
গুরু কি নাম ধরে ডাকলে পরে, চেতন হয়ে হইবা সদয়।।
২। কি নাম ধরে ডাকব আমি, নামটি না জানি
কোন নামেতে হবা চেতন, বল সে বাণী
তোমার না জানিলেম স্তুতি বাণী
কুবাণীতে মত্ত রই সদায়।।
৩। দয়াময় নামটি শুনি, এ বিশ্বমাঝার
ব্যাক্ত রলে ভূমন্ডলে, যতই চরাচর।
তোমার নামের জোরে, পাপী তরে,
আমায় কেন হইলা নিদয়।।
৪। আর কোন ধন, হে গুরুধন, আমি নাহি চাই,
দেহ অন্তিমকালে, চরণ তলে আমায় দিও ঠাঁই
গুরু তুমি বিনে দীনহীনে, কে ঘুচাবে ভব পারের ভয়।।
৫। দীনা বলে রিপুর ছলে, হলেম ভজন হীন
কুকর্ম্মেতে অসার চিন্তে, গেল রাতি ্রদিন
দয়াল হরি গোসাই, এই ভিক্ষা চাই
অন্তে যেন থাকি রাতুল পায়।।
লোক শিক্ষা
রাগিনী – মঞ্জরাসাই
১০। তাল – ঠুংরী
তুমি সদয় হইলা জীবের প্রতি হরি দয়াময়।
আমি ঘোর পাতকী, উদ্ধারের বাকী,
হরি আর কতদিন রয়।।
১। বড় বিপুল ভরসায়, হরি ডাকি হে তোমায়,
শুনিয়ে কেন তাই শুননা ওহে দয়াময়।
তুমি অর্ন্তয্যামী জগৎস্বামী, কেন আমায় হইলা নিদয়।।
২। তুমি তরাবে বলে, হরি জগতে এলে
আমি অধম ঘোর পাতকী এ ভুমন্ডলে।
(দেও) দুঃখ যত অবিরত অপরাধ ঘুচে যেন যায়।।
৩। তব পদে প্রণিপাত সর্ব্ব জম্মের অপরাধ,
ঘুচাও হরি এই জম্মেতে, রয়না যেন পাপ।
আমি অপরাধী দুঃখের ভাগী, দুঃখ মোচন কর সমুদয়।।
৪। অধম দীনা ভেবে কয়, আমি ঠেকে রলেম দায়,
সব অপরাধ ঘুচাইয়ে নেও হরি গোসাইব পায়।
তুমি পার কান্ডারী দয়াল হরি, ঘুচাও ভবপারের ভয়।।
রাগিনী - ভাটিয়ালী
১১। তাল - কাহারবা
গুরু আমার প্রতি নিদয়া কেনে।
আমার প্রতি তোমার দয়া, কবে হবে ভাবি মনে।।
১। তুমি আত্মা অন্তর্য্যামী, শান্তি মায়ের শিরমনি রেশম সুন্দর।
আমি তব দয়ায় হে দয়াময়, মিনতি করি তব চরণে।।।
২। শুনি তব দয়ার নাই তুলনা, আমার ভাগ্যে কেন হল না, ওহে দয়াময়।
দিয়ে পদ ছাড়য়া কর দয়া, অন্তিমে হেরি যেন নয়নে।।
৩। গুরুচাঁদের দয়া বলে, হরি গোসাইর তরুতলে, থাকি যেন সদায়।
দীনার এই বাঞ্ছা হৃদয়, অন্য বাঞ্ছা নাই মনে।।
রাগিনী - উরয়ালী
১২। তাল - একতাফা
আমি পড়েছি অকুল পাথারে এখন উপায় কি করি।
আমার কর্ম্ম দোষে ব খোয়ালেম, না পেলে চরণ তরী।।
১। পাপেতে ভরেছি ভরা, পাই না আমি কুল কিনারা, নদীর তরঙ্গ ভারী।
তাতে কু-পবনের হাওয়া লেগে, উথলে তুফান ভারি।।
২। একে আমার জীর্ণ তরী, কু-পবনের প্রবল ভারি, আমি উপায় কি করি।
আর ছয়জন দাঁড়ি, যুক্তি করি, ঘোলার দিকে নেয় তরী।।
৩। হাইল ধরিয়ে আছি বসে, নদীর কিনার পাবার আছে, হাইলে মানেনা বারি।
দয়াল গুরুচাঁদ মোর, কর উপায়, সে যে ভব কান্ডারী।।
৪। দীনা বলে হরি গোসাই, রক্ষার মালিক আর কেহ নাই, ডুবল এ মানব তরী।
তুমি এ বিপদে, কর দয়া, নহে ডুবিয়া মরি।
রাগিনী - শিন্দারাহা
১৩। তাল- কাওয়ালী
গুরুর প্রতি না হলে মতি, কেমনে যাবি হরি ধাম।
যদি হতো মতি গুরুর প্রতি, তবে তোর পুরে যেত মনষ্কাম।।
১। যদি করতে পার গুরুর করণ, পাবি হরির যুগল চরণ।
ছয় রিপু করিয়ে দমন, মনে প্রাণে জপ নাম।।
২। গুরুর করণ ভারি কড়া, করলে জিয়ন্তে হয় মরা।
তা হরে দেয় সে ধরা, সেই শ্রীহরি মনোরম।।
৩। যে জন প্রেম নগরে যেতে পারে, কাম গন্ধ তার রইতে নারে
তার প্রেমের অঙ্কুর বেড়ে পড়ে, প্রেমানন্দে করে আরাম।।
৪। কর গুরুচাঁদের করণ, ধরে হরি গোসাইর চরণ।
দীনবন্ধুর কর্ম্ম বন্ধন, কাটলে মিলবে শান্তি শ্যাম।।
রাগিনী - করুনভান্ডারা
১৪। তাল - কাওয়ালী
তোমরা বৈলরে - বৈল হরির কাছে রে।
বৈল তোমার একটি পাপী আছে রে,
হারে আছে এ জগৎ মাঝারে রে।।
১। এ পাপীর কি গতি হবে, বল দয়া করি,
পাপে পরিপূর্ণ হল, পাপে হল ভারি।
আমি এ পাপ লয়ে, কোথায় যাব রে,
হারে আমি বুঝিতে না পারিবে।।
২। মোর বান্ধব নাই কোন দেশে, কার কাছেতে বলি
বলতে আমি যার কাচে যাই, সে দেয় মনে কালি।
আমি কোথায় গিয়ে প্রাণ জুড়াব রে,
হারে আমি না পাই সুখের ডালিরে।।
৩। বটবৃক্ষের তলে গেরাম, ছায়া পাবার আশে,
পত্র ছেড়ে রৌদ্র লাগে, আপন কর্ম্ম দোষে।
আমি, শান্তির আশে যাই যে দেশে রে,
হারে আমার দ্বিগুন হয় অশান্তিরে
৪। দীনা বলে কবে আমি, যাব ওড়াকান্দী,
দুনয়ন জুড়াবো হেরে, হরি গুণ নিধি
সদা ঐ রূপ দেখবো প্রাণ জুড়াবো রে
হারে তবে ঘুচবে আশা নদীরে।।
রাগিনী - উরয়ালী
১৫। তাল - এতাফা
তোরা কে কে যাবি, ওড়াকান্দী ত্বরায় চলে আয়রে আয়
দেখবি যাওয়া মাত্র দেহ পাত্র অনায়াসে গলে যায়।।
১। ওড়াকান্দী দেখে কান্ড, মনেতে লেগেছে ধন্দ মরি হায়রে।
জীবের ঘুচল সন্দ, কর্ম্ম বন্ধন, আর কি জীবের আছে ভয়।।
২। হরি এল ওড়াকান্দী যশবন্ত রাখলেন বাঁধি
আয় কে দেখবি আয়।
৩। রূপ হেরিয়ে যোগী ঋষি, সন্ধ্যা আহ্নিক ত্যাজে বসি আছে সর্বদায়।
তারা তন্ত্র মন্ত্র, ছেড়ে দিয়ে হরি নামে মত্ত হয়।।
৪। সেই রূপ রসে হরি গোসাই, দিবা নিশি মগ্ন সদাই হরি নাম গুন গায়।
বোকা দীনবন্ধু কয়, ঐ রূপের ঘায়
মোর প্রাণ যেন গলে যায়।