মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ২০১-২২০

নরাকারে ভূমণ্ডলে যত জন আছে
এক জাতিবলে মান্য পাবে মোর কাছে
।।
আমার পিতার ভক্ত আছে যত জন

এক জাতি বলে তারা হয়েছে গণ
।।
লোকাচারে তারা কেহ কায়স্থ ব্রাহ্মণ

মতুয়ারমধ্যে তাহা নাহি নিরূপণ
।।
নমঃশূদ্র, তেলী মালী, ব্রাহ্মণ, কায়স্থ

ইসলাম, বৈদ্য জাতি - রোগে সিদ্ধ-হস্ত
।।
মতুয়া সকলে এক, জাতি-ভেদ নাই

বিশেষতঃ কন্যা হলে নাহিক বালাই
।।
তুমি যদি কন্যা হলে আমি পুত্ৰ হ

যাদিবে আমাকে খেতে মনোসুখে খা
।।
এই ভাবে ভাবালাপ হল কতক্ষণ

আসন ছাড়িয়া মীড দাঁড়াল তখন
।।
মীড কহে শুন বলি ও হে বড় কৰ্ত্তা

অদ্য প্রাতেঃ হল মোর বড় শুভযাত্রা
।।
মনের সন্দেহ মোর সব ঘুচিয়াছে

গুটী কত কথা তাই বলি তব কাছে
।।
আমার জননী হল অতি সতী নারী

এদেশে এসেছি তাঁর আজ্ঞা শিরে ধরি
।।
বাল্যকাল হতে মোর মনের পিপাসা

খৃষ্ট-ধৰ্ম প্রচারিতে মনে বড় আশা
।।
দুঃখীর বেদনা দূর করিতে বাসনা

ডাক্তারী শিখিনু তাই হয়ে একমনা
।।
কোথা যাই কোথা যাইভাবি মনে মন!
হেনকালে ঘটে এক আশ্চর্য ঘটন
।।
একদা প্রভাত কালে মাতা ডাকি কয়

শুন মীড মোর বাক্য আসিয়া হেথায়
।।
বিচিত্র স্বপন এক আজ রজনীতে

ভাসিয়া উঠেছে মোর দুই আঁখি পাতে
।।
দেখিলাম একজন দিব্য-দেহধারী

মস্তকে সুদীর্ঘ কেশ যেন এক নারী
।।

দীর্ঘ শ্মশ্রু মুখে দেখি বুঝিলাম মনে
যীশু প্রায় দেখা যায় অঙ্গের গঠনে
।।
সেই মহাজন মোরে ডাক দিয়া কয়

শুনহে মীডের মাতা! মম অভিপ্রায়
।।
তব পুত্র মীড ইচ্ছা করিয়াছে মনে

করিবে দীনের সেবা পরম যতনে
।।
ডাক্তারী শিখেছে তাই করিয়া যতন

কোন দেশে যাবে এবে তাই ভাবে মন
।।
আমি বলি মীড়ে তুমি দেহ আজ্ঞা করি

অপার-ভারত-সিন্ধু দিয়া যাক পাড়ি
।।
ভারতবর্ষের মধ্যে আছে বঙ্গদেশ

তার মধ্যে আছে দুঃখী জানিও বিশেষ
।।
শিক্ষা-দীক্ষা-হীন তারা ধন-রত্ন নাই

কত কষ্টে কাটে কাল কি বলে বুঝাই
।।
দলিত-পীড়িত তারা আছে হীন হয়ে

অসহ্য জীনব-বোঝা স্বন্ধেতে বহিয়ে
।।
তার মধ্যে এক জাতি নমঃশূদ্র নাম

তাহাদের কাছে গেলে পূর্ণ মনস্কাম
।।
সেই ঘরে আছে এক পুরুষ মহান

তাঁর কাছে গেলে হবে সকল সন্ধান
।।
তাই বলি মীড তুমি বঙ্গদেশে যাও

দীন দুঃখী সেবা করে জীবন কাটাও
।।
সেই হতে মনে মনে করি আলোচনা

কোন খানে আছে মোর সে-সব নিশানা
।।
মাতৃবাক্যে এই দেশে আসিয়াছি বটে

কভু ধরা দেই নাই কাহার নিকটে
।।
তোমার আহ্বানে বটে এই দেশে আসি

সন্দ তবু হয় মনে ভাবি দিবানিশি
।।
তোমার স্বভাব দেখে শুনিয়া বচন

তলে তলে অগ্রসর হল মোর মন
।।
তথাপি সন্দেহ বীজ এড়াতে না পারি

করি’ ‘করিবলে কাজ ধরেও না ধরি
।।

কিন্তু যবে এই দিনে দিলে পরিচয়
আনন্দে নাচিল প্রাণ গভীর বিস্ময়
।।
মনে ভাবিলাম আমি এতদিন পরে

সন্দেহের নিরসন হল এই বারে
।।
তোমার বচন যদি সত্য নাহি হ

অবশ্য এ ওড়াকান্দী ছাড়িতাম দ্রুত
।।
বুঝিতাম এই কৰ্মক্ষেত্র নহে মোর

তুমি মোরে বাঁধিতেছ দিয়ে মাত্র ডোর
।।
এখানে সংশয় মোর হইয়াছে দূর

এতদিনে চিনিলাম আসল ঠাকুর
।।
অতঃপর আর মোর কোন কথা নাই

বহু নমস্কার আমি তোমারে জানাই
।।
তোমার জাতিকে আমি ধরিলাম হাতে

সৰ্ব্ব উপকার পাবে এরা আমাতে
।।
যে-জমি করেছ দান তাহার উপরে

করিব দ্বিরদ-হৰ্ম্ম্য মিশনের তরে
।।
তাহার নিকটে হবে উচ্চ বিদ্যালয়

আর চিন্তা করে দেখি কি কি করা যায়
।।
এত বলি মীড পুনঃ নমস্কার দিল

পত্নীসহ ততক্ষণে বিদায় হইল
।।
ডক্টর মীডের মনে ঘুচিল সংশয়

অন্ধ-দেহে আলো জ্বালে প্রভু দয়াময়
।।
এ সব ঘটনা দেখি ভকত সকল

কান্দিয়া লোটায় সবে চক্ষে বহে জল
।।
প্রভু ডাকি ভক্তগণে কহিল বচন

এ মোর বারতা আজি শুন সৰ্ব্বজন
।।
পতিত-পাবন লাগি এল মোর পিতা

তাঁর কার্য সাধিবারে করগো একতা
।।
শুধু গুণগান নহে ধরমের সার

তৎ-প্রীতি-কামহেতু কৰ্ম কর তাঁর
।।
পতিত-তারক পদে যদি থাকে ভক্তি

প্রাণ দিয়া কর সবে পতিতের মুক্তি
।।

পতিতে তরাতে যেই শক্তি প্রয়োজন
সেই পথে পিতা সবে করেছে গঠন
।।
এত কষ্টে যেই বৃক্ষ করেছে রোপন

অদ্য যদি তারা ফল না করে_ধারণ
।।
কত ব্যথা বুকে পিতা পাবে তার লাগি
।।
তাই বলি ঘুম হতে উঠ সবে জাগি

তোমাদের মুক্তি দিতে মীডে প্রয়োজন
।।
দেখ মীড উপনীত এদেশে এখন
।।
অবশ্য এ-সব তত্ত্ব নাহি বুঝে জাতি

কিন্তু ভক্ত যারা তারা হও মোর সাথী
।।
তোমরা চিনেছ সবে আমার পিতায়

তাই সবে ঠেকিয়াছ জাতি-তোলা-দায়
।।
চিরকাল একদল কাজ করে থাকে

ভোগ কালে ফল নিতে সবাকারে ডাকে
।।
কৰ্ম যারা নহে তারা তাহাতে দুঃখিত

চিরদিন করে তারা জগতের হিত
।।
তাহারাই চিরদিন রহে স্মরণীয়

তাহারাই জীবশ্রেষ্ঠ ধন্য-বরণীয়
।।
যুগে যুগে তাঁহাদের করম কাহিনী

কালের বুকেতে চলে অনন্ত-বাহিনী
।।
তাই বলি ভক্তগণ হও অগ্রসর

কৰ্ম কর কীৰ্ত্তি থাক হও হে অমর
।।
প্রভু মুখে শুনি বাক্য শ্ৰীদেবী চরণ

করজোড় করি করে এক নিবেদন
।।
যেই আজ্ঞা হবে প্রভু আপনার হতে

অবশ্য পালিব তাহা আনন্দ-সহিতে
।।
সব ভক্ত জনে জনে প্রতিজ্ঞা করিল!
দেখিয়া প্রভুর মনে মহানন্দ হ
।।
আনন্দে হাসিয়া প্ৰভু কহে পুনরায়

শুন সাধুগণ যাহা মোর অভি প্রায়
।।
মীডেরে রাখিয়া সাথে করিব সকল

তোমরা সকলে তাতে মোরে দিও বল
।।

তারক কান্দিয়া বলে দুৰ্ব্বলের বল!
সকল বলের বল তুমি মহাবল
।।
কিবা বল দিব বল আমরা দুর্ব্বল

বল দিব মোরা বল এই কোন ছল ?
ইচ্ছাময় তুমি প্রভু যাহা ইচছা কর

দয়া করে দাসগণে কৃপা-হস্তে ধর
।।
বিনয়ে তারক কহে এমত বচন

জয় গুরুচাঁদ ধ্বনি কহে ভক্তগণ
।।
পতিত তরাতে এল পতিত পাবন

কোন ভাবে করে কৰ্ম শুন সৰ্ব্বজন
।।

 

১৯০৭ খৃষ্টাব্দ বা নমঃশূদ্র জাগরণ

উঠে ধীরে সিংহ শিশু পৰ্ব্বত উপর,
শিলায় শিলায় রাখি পদ আপনার
।।

প্রস্তাবনা
জীবের মঙ্গল তরে আসে অবতার

কিন্তু কৰ্মরীতি দেখি এক সবাকার
।।
নরাকারে রামরূপে আদি অবতার

মানব-জীবন-নীতি করিল প্রচার
।।
অপূর্ণ তাহাতে যাহা রহে সেই বারে

কৃষ্ণরূপে পুরাইতে মনে বাঞ্ছা করে
।।
তাহাতে অপূর্ণ যাহা তাহা ক্রমে ক্রমে

ভিন্নরূপে পুরাইতে নামে ধরাধামে
।।
ইহার রূপক দেখি শিক্ষানীতি ক্ষেত্রে

প্রথম আরম্ভ শিক্ষা করে তাল পত্রে
।।
আদি বর্ণমালা যাহা শিখে পাঠশালে

শিক্ষার সমাপ্তি তথা সেই বর্ণ চলে
।।
আদি বর্ণমালা দিয়া বিবিধ প্রকারে

আপন মনের কথা প্রকাশিত করে
।।
সেই-নীতি পথে কার্য অবতারে করে

আদির স্বভাব কিন্তু ছাড়িতে না পারে
।।

তাই দেখি অবতার মানব আকারে
মানুষের মত তাঁর সব কৰ্ম করে
।।
অবশ্য যদ্যপি ইচ্ছা করে অবতার

সকলি করিতে পারে যে-ইচ্ছা তাঁহার
।।
কিন্তু মানবের পক্ষে আদর্শ তানয়

ক্ষুদ্র-শক্তি মানবের মনে লাগে ভয়
।।
তাই মানবের সাথে সুখে দুঃখে মিশি

অবতার করে কাজ ধরাধামে আসি
।।
তাই রাম বানরের সাহায্য চাহিল

দোষ-শূন্যা সীতাদেবী বনে প্রবেশিল
।।
তাই কুরুক্ষেত্র-রণে গাণ্ডীবী অৰ্জ্জুন

তাই হরধনু পরে রাম দিল গুণ
।।
তাই চৈতন্যের সাথে খোল করতাল

মূল-বৃক্ষ অবতার আর সবে ডাল
।।
এই অবতারে প্রভু মীডকে ধরিল

মীডকে ধরিয়া জাতি উদ্ধার করিল
।।
মীড ভাবে গুরুচাঁদে করিবে খৃষ্টান

ভাব জানি মনে মনে হাসে ভগবান
।।
মীড যত আগুহয়ে কথা-বার্ত্তা কয়

প্রভু বলে শোন মীড এ-সময় নয়
।।
পূৰ্ব্বেতে বলেছি তোমাসব বিবরণ

অগ্রভাগে নমঃশূদ্রে দেহ বিদ্যাধন
।।
বিদ্বান হইলে সবে তোমাকে চিনিবে

বুঝিয়া ধৰ্ম্মের তত্ত্ব খৃষ্টান হইবে
।।
প্রভুর বচনে মীড উত্তর না পায়

মনে ভাবে কোন ভাবে এঁরে ধরা যায়
।।
বিচার করিল মনে করিয়া যুকতি

নমঃশূদ্রে কিছুফল দেখাব সম্প্রতি
।।
উপকার পেলে সবে হবে মোর বশ্য

সেকালে খৃষ্টান আমি করিব অবশ্য
।।
এই যুক্তি মনে রাখি প্ৰভু প্রতি কয়

বড় কৰ্ত্তা! এক কথা মোর মনে হয়
।।

 

সংবাদ পত্রের দেখি অতি প্রয়োজন
সংবাদ পত্রিকা এবে করুন লিখন
।।
আপনার জাতি পক্ষে যত কথা আছে

পত্রিকা মুদ্রিত করি দেহ সবা কাছে
।।
এই ভাবে এ জাতির হবে পরিচয়

পত্রিকার দ্বারা কার্য বহুবিধ হয়
।।
সুসভ্য সমাজ যত আছে পৃথিবীতে

সংবাদ পত্রিকা লেখে নিজ-নিজ-মতে
।।
অবশ্য পত্রিকা তুমি করহে প্রকাশ

বহু উপকার হবে কর এ বিশ্বাস
।।
এইরূপ হইতেছে কথোপকথন

হেনকালে উপনীত তথা চারিজন
।।
রাধানাথ, ভীষ্মদেব, আর শ্রীমোহন

কুমুদ মল্লিক নামে বিখ্যাত ভুবন
।।
কিছু পরে উপনীত প্ৰভু জ্যেষ্ঠ পুত্র

শ্ৰীশশিভূষণ নাম পরম পবিত্র
।।
এবে শুন ইহাদের যেই পরিচয়

রাধানাথ মণ্ডল বাড়ী জ্যোৎকুরায়
।।
শ্ৰীমোহনলাল নামে বাক পুরা বাসী

ঠাকুরের কাছে যবে উপনীত আসি
।।
কুমুদ মল্লিক বাস খুলনা জিলায়

বি, , পাশ করি বাবু ঘুরিয়া বেড়ায়
।।
শিক্ষা লাভ করি সবে বহু দুঃখে ভোগে

চাকুরীর চেষ্টা সবে করে এক যোগে
।।
ইতি পূৰ্ব্বে শশীবাবু চাকুরী কারণে

করিল বিফল-চেষ্টা ভ্ৰমিনানা স্থানে
।।
নমঃশূদ্র জাতি বলি সবে ঘৃণা করে

কিসের চাকুরী দিবে বসায় অন্তরে
।।
বহু চেষ্টা করি বাবু বিফল হইয়া

পিতার নিকটে সব কহিল আসিয়া
।।
প্রভু বলে শশী দুঃখ না করিও আর

তোমাকে দিবেন হরি চাকুরী এবার
।।

যার সাহায্যেতে তুমি চাকুরী পাইবে
সেইজন আসিতেছে বুঝি অনুভবে
।।
তাই যবে মীড আসি দিল দরশন

প্রভু বলে শুন শশী এই সেই জন
।।
ইহ সনে তুমি সদা বন্ধুত্ব রাখিবে

নিশ্চয় জানিবে মীড মঙ্গল করিবে
।।
তদাবধি মীড সনে বাবুর পীরিতি

মীড তাঁরে মনে প্রাণে ভালবাসে অতি
।।
পরামর্শ দিল মীড শ্ৰীশশিভূষণে

দরখাস্ত কর শশী চাকুরী কারণে
।।
স্কুলে আছ থাক তাতে ক্ষতি নাই

চাকুরী কারণে কিন্তু চেষ্টা করা চাই
।।
মীড পরামর্শ মতে শ্ৰীশশিভূষণ

সাবরেজেষ্ট্রার জন্যে করে পিটিশন
।।
মাঝে মাঝে তত্ত্ব লয় গিয়া জেলাপরে

কিছু হয় নাইজেনে দুঃখে আসে ফিরে
।।
এই ভাবে গৃহে বসি চিন্তিত অন্তর

বিষম দুঃখের তাপে চিত্ত জর-জর
।।
হেন কালে উপনীত চারি মহাশয়

নিজ নিজ দুঃখ বার্ত্তা ঠাকুরে জানায়
।।
সবে বলে শুন প্রভু দুঃখের বারতা

মোরা সবে রাজ-কার্য নাহি পাই কোথা
।।
দ্বারে দ্বারে ঘুরি সবে হইলাম ব্যর্থ

অন্য জাতি সবে খুঁজে নিজ-নিজ-স্বার্থ
।।
আপনি জাতির কৰ্ত্তা সবে মোরা জানি

উপায় বলুন কিছু মোরা তাই শুনি
।।
এই সব কথা যদি তাহারা বলিল

প্রভু বলে দেখ মীড কি করি তাবল
।।
এই সব ছেলে যদি চাকুরী না পায়

লেখা পড়া কেহ নাহি করিবে হেথায়
।।
এদের ব্যবস্থা তুমি কর মহাশয়

এরা ধন্য হোক সবে তোমার কৃপায়
।।

প্রভুর বচনে মীড কহিতে লাগিল
শুন বড় কৰ্ত্তা মনে যে ভাব আসিল
।।
তব জ্যেষ্ঠ পুত্র যিনি শ্ৰীশশিভূষণ

দরখাস্ত করিয়াছে চাকুরী কারণ
।।
তাঁর জন্য বহু চেষ্টা করিতেছি আমি

দেখি কিবা করে তারে প্রভু অন্তর্যামী
।।
অন্য যারা আসিয়াছে তোমার কে হয় ?
মোর কাছে তুমি দেও সেই পরিচয়
।।
প্রভু বলে শুন মীড আমার বচন

এরা সবে পুত্র মোর শশীর মতন
।।
এ জাতির যে-যেখানে আছে যত ছেলে

সকলি আমার পুত্র বলি মন খুলে
।।
সকলের তরে চেষ্টা কর গিয়ে তুমি

সেই কার্যে মহাসুখী হব তবে আমি
।।
এতেক শুনিয়া মীড মানিল বিস্ময়

বাবুগণ প্রতিচাহি জিজ্ঞাসা করয়
।।
কোন কার্য কোন জনে করেছ মনন

আমার নিকটে সবে বলহে এখন
।।
রাধানাথ বলে স্যার জানাই তোমারে

কানুন গো হতে ইচ্ছা আমার অন্তরে
।।
মোহন বলিছে কথা করিয়া বিনয়

হইতে দারোগাবড় মনে ইচ্ছা হয়
।।
কুমুদ বিহারীবাবু কহে সর্ব্বশেষে

মোর ইচ্ছা বলি মীড আপনার পাশে
।।
এই জাতি মধ্যে নাহি উচ্চ পদধারী

ইচ্ছা হয় করি আমি ডেপুটী-চাকুরী
।।
সব কথা শুনি মীড বলিল তখন

বড়ই কঠিন কার্য শুন দিয়া মন
।।
তোমাদের জাতি-বাৰ্ত্তা রাজার গোচরে

কেহ কভু বলে নাই নিজে দয়া করে
।।
রাজ-ঘরে পরিচিত নহে এই জাতি

তার লাগি মনে আমি ভয় পাই অতি
।।

তথাপি করিব চেষ্টা আমি প্রাণপণে
যদি বড় কৰ্ত্তা শুধু মোর কথা শুনে
।।
রাজ-ঘরে পরিচিত যদি হতে হয়

নানা উপাদান লাগে বলিনু নিশ্চয়
।।
বড় কৰ্ত্তা যদি তাহা করেন স্বীকার

যথাসাধ্য চেষ্টা আমি করিব এবার
।।
বড়কৰ্ত্তা বিনে তাহা পূর্ণ নাহি হবে

বুঝিয়া বলুন কথা বড় কৰ্ত্তা এবে
।।
মীডের বচন শুনি মহা প্রভু কয়

কি কি কার্য প্রয়োজন বল মহাশয়
।।
যতই অসাধ্য হোক নাহি করি ভয়

শুধু যদি তাতে মোর জাতি ভাল হয়
।।
জাতির কারণে আমি করিলাম পণ

নিশ্চয় করিব আমি অসাধ্য-সাধন
।।
উনিশ শসাত সনে এ সব ঘটনা

নিজমুখে প্ৰভু যাহা করিল রটনা
।।
তের শত চৌদ্দ সনে বাংলা গণনায়

নমঃশূদ্র রাজকার্যে নিয়োজিত হয়
।।
সে সব ঘটনা পরে করিব লিখন

এবে শুন কিবা বলে মীড মহাজন
।।
মীড বলে বড়কর্ত্তা! শুন দিয়া মন

কি জন্য তোমার জাতি পতিত এমন
।।
এই দেশে উচ্চ বর্ণ হিন্দু যত আছে

শুন সবে কিবা বলে রাজশক্তি কাছে
।।
তোমার জাতির কথা বলে ঘৃণাভরে

সেই লাগি রাজ শক্তি চেনেনা তোমারে
।।
এইজন্য কর এবে পত্রিকা প্রচার

তাহলে তোমার জাতি পাবে উপকার
।।
আর বলি এই সব যুবকের দল

এই ভাবে ঘুরে ঘুরে নাহি কোন ফল
।।
দরখাস্ত কর সবে চাকুরী কারণে

দেখি চেষ্টা করে আমি থাকিয়া পিছনে
।।

ইতি মধ্যে এক কার্য কর মহাশয়
আসিবেন ছোট লাট তোমার জেলায়

যত সব নমঃশূদ্র একত্র হইয়া

সবে মিলি দেহ অভিনন্দন লিখিয়া
।।
তবেত তোমার জাতি হবে পরিচিত

সবে মিলি দেখা কর লাটের সহিত

ডক্টর মীডের মুখে শুনিয়া প্রস্তাব

ধন্য ধন্য করে প্রভু করি উচ্চরব

 

লাট সকাশে অভিনন্দন

বঙ্গভঙ্গ হল বাংলা দ্বিভাগ হইল

পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গ দুইভাগে গেল
।।
পূর্ববঙ্গ লাট হল স্যার লান্সলট

আবেদন করে সবে তাঁহার নিকট
।।
শ্ৰীশশিভূষণ ডাকি মীড কথা কয়

শুন শশী মানপত্র ছাপাইতে হয়
।।
কলিকাতা শহরেতে শীঘ্ৰ চলি যাও

ছাপাখানা হতে তুমি এ কার্য করাও
।।
মীডের বচনে বাবু কলিকাতা যায়

মানপত্র মুসাবিদা মীড করি দেয়
।।
ছাপাখানা কর্মচারী তাতে ধরে ভুল

ছাপা কার্যে পড়ে গেল বড় হুলুস্থুল
।।
মুসাবিদা সহ বাবু দেশেতে ফিরিল

আমূল সকল কথা মীডেরে বলিল
।।
শুনিয়া ডক্টর মীড ক্রোধিত অন্তর

বলে শশী বল তুমি এ কোন বিচার?
যাহা কিছু লিখিয়াছি তাতে ভুল নাই

নিশ্চয় করিয়া আমি বলি তব ঠাঁই
।।
হেন জন এই বঙ্গে নাহি কোনখানে

আমার লেখার পরে লেখনী যে টানে
।।

শীঘ্ৰ করি যাহ ফিরে ছাড় গণ্ডগোল।।
ছাপাখানা কর্মচারী বৃথা তুলে রোল
।।
বল তারে জোর করে ইথে ভুল নাই

যাহা আছে তাছাপুক মোরা যাহা চাই
।।
ছাপার যতেক মূল্য মোরা সব দিব

টাকা দিয়ে বাজে কথা কেন বা শুনব?”
মীডের বচনে বাবু মনে পেল বল

কলিকাতা গিয়ে কার্য করিল সফল
।।
মানপত্র ছাপাইয়া দেশে ফিরে গেল

এবে শুন মহা প্ৰভু কি কার্য করিল
।।
-------০-------
লাট দরবারে গমনের উদ্যোগ-পর্ব

আসিবেন ছোট লাট মহামতি ল্যান্সলট
ঘরে ঘরে প্রভু দিল বার্তা

শুনিয়া প্রভুর বাণী যত নমঃশূদ্র গুণী
ওড়াকান্দী সবে করে যাত্রা
।।
গোপীনাথপুর বাসী রূপে যেন পূর্ণশশী
পূর্ণচন্দ্র মল্লিক সুজন

বৈরাগী চণ্ডীচরণ প্রভু পদে নিষ্ঠা মন
ওড়াকান্দী করে আগমন
।।
শ্রীরাধা চরণ নাম বাস জোৎকুরা গ্রাম
বার্তা পেয়ে আসে ওড়াকান্দী

শ্ৰীমোহনলাল যিনি বাকপুরা বাসী তিনি
কাজ কর্মে জানে সব সন্ধী
।।
আসে ভীষ্মদেব দাস ওড়াকান্দী যার বাস
শ্ৰীবিধু চৌধুরী এল সাথে
।।
সবে একত্র হইল প্রভু সবাকে কহিল
মোর ইচ্ছা জান ভাল মতে
।।
জাতির উদ্ধার লাগি দিবা নিশি আছি জাগি
ইচ্ছা করি নিব ভাল পথে
।।
জাতি তরে স্বর্গ ত্যজি, ভ্ৰমি আমি মর্তে আজি
ইংরাজকে করি আমি সাথে
।।

 

 

মীড তাহে আছে সাথী, বিশেষ রাজার জাতি
আমাদিগেকরিবে সাহায্য

তাঁর পরামর্শ মতে, দেখা হবে লাট সাথে
এ সুযোগ নাহি কর ত্যজ্য
।।
শশী আনে মান পত্র, লেখা তাতে সব সূত্র
মীড যাহা করেছে রচন

এক সাথে চল সবে, জাতির উন্নতি হবে
এই বাক্য না হবে লঙ্ঘন
।।
প্রভু-মুখে শুনি বাণী, যতেক প্রধান গুণী
আনন্দেতে সবে দিল সায়

পরে করি দিন স্থির, প্রভু পদে নতশির
আপনার ঘরে সবে যায়
।।
পরামর্শ হল ঠিক, চালক হইবে মীড
লাটে সব বলিবার জন্যে

প্রভু যাবে বিধু যাবে, ভীষ্মদেব সঙ্গে রবে
দল মধ্যে এরা অগ্ৰগণ্যে
।।
শ্ৰীযুত শশীভূষণ, বালা তারিণীচরণ
রাধানাথ মোহন বিশ্বাস

মল্লিক পূর্ণচরণ, এই কয় মহাজন
এক সঙ্গে যাবে লাট পাশ
।।
কথাবার্তা ঠিক হয়, সবে আনন্দ হৃদয়
শুভদিন লাগি রহে চাহি

প্রভু কহে ভক্তগণে, “এই জাগে মোর মনে,
এর চেয়ে সুসংবাদ নাহি
।।
পতিত তরাবে বলে, এসেছিল এই কুলে
পতিত পাবন মোর পিতা

দিনে দিনে সাক্ষী তার, দেখিতেছি পরিষ্কার
মিথ্যা নাহি হবে তাঁর কথা
।।
তের শত চৌদ্দ সাল, সাধনাতে ফলে ফল
রাজশক্তি পেতে যায় জাতি

এ শুধু হরির কর্ম, কেহ নাহি বুঝে মর্ম
সেই দুঃখে দুঃখী আমি অতি
।।

এই যে জাগিবে প্রাণ, উন্নতির মহাবান
প্লাবিত করিবে সর্বদেশ

শুধু নমঃশুদ্র নয়, যারা যারা পিছে রয়
সকলের দুঃখ হবে শেষ
।।
লাটে মানপত্র দিলে, চিনিবেন সেই কালে
নমঃশূদ্র জাতি কারে কয়?
নমঃশূদ্রে চেনা হলে, চিনিবে পতিত দলে
এক সঙ্গে হবে পরিচয়
।।
এ যেন গাড়ীর খেলা, জোড়াবান্ধা দিয়ে তালা
ইঞ্জিন চলিছে অগ্রভাগে

ইঞ্জিন যে ঘাটে যায়, গাড়ী পাছে পাছে ধায়
ইঞ্জিনের ঘাটে গিয়ে লাগে
।।
ইঞ্জিনের ভাব নিয়ে, নমঃশূদ্র যাবে ধেয়ে
তারে ধরে তরিবে অপরে

হরি এল নমঃকুলে, তাই তারা আগে চলে
হরিচাঁদ সেই ইচ্ছা করে
।।
তাঁর ইচ্ছা ছিল যাহা, তোমরা পূরাবে তাহা
তোমাদের পরে সেই ভার

পিতার যে ইচ্ছা ছিল, সে ইচ্ছা পুরাতে বল
ভক্ত ছাড়া কেবা আছে আর?
এই ত আরম্ভ মাত্র, বিস্তৃত করম ক্ষেত্র
সম্মুখেতে আছে যে পড়িয়া

যাঁর ইচ্ছা ভাবি তাঁরে, ঝাঁপ দাও এ সায়ারে
হরিচান্দে কাণ্ডারী করিয়া
।।
যাব লাট দরবারে, ভক্ত সব ঘরে ঘরে
হরিচান্দে করিও স্মরণ

আমাদের এ যাত্রায়, যেন সর্ব শুভ হয়
জাতি যেন পায় জাগরণ
।।
বাক্যে যেন ক্ষরে মধু, যতেক মতুয়াসাধু
প্রেমানন্দে চক্ষে বহে জল

সবে ভাবে মনে মন, হেন মহারত্ন ধন
না চিনিয়া জনম বিফল
।।

পরম দয়াল সাজে, অন্ধ নমঃশূদ্র মাঝে
অমৃত বাটিয়া দিতে চায়

মোরা নাহি চিনিলাম, দূরে দূরে রহিলাম
তবু ডাকে আয়, আয়, আয়
।।
এ দয়ার তুল্য নাই, যত পাই তত চাই
যোগ্য নই তবু করি দাবী

তাতে নাহি করে রোষ, শুধু করে আপশোষ
বলে তোরা পাবি আরো পাবি
।।
তোদেরে তরাব বলে, আসিয়াছি এই কুলে
তাতে তোরা দয়া অধিকারী

তোদের সকলে ধরে, দিব দয়া জোর করে
স্বভাব ছাড়িতে কই পারি?
মেরেছিল জগামাধা, দিয়ে কলসীর কাঁধা
দয়া দিতে করি নাই বাঁধা

দয়া করা রীতি এই, যে জানে না তারে দেই
বিনামূল্যে প্রেম তাই সাধা
।।
এত ভাবি ভক্তবৃন্দে, ফুকারিয়া সবে কান্দে
ক্রোধে প্রভু বলে সব থাম

কান্দকান্দি নাহি চাই, কাজ ছাড়া কান্দা ছাই
অকেজো কান্দুনে সব নাম
।।
কান্দা কান্দি ঢলাঢলি, কতকাল করে এলি
কিবা ফল পেলি তাতে বল?
কর্ম ছেড়ে কান্দে যেই, তার ভাগে মুক্তি নেই
হবি নাকি বৈরাগীর দল?
সে যুগ গিয়াছে চলে, আমি বাপু যাঁর ছেলে
তাঁর ধর্মে জন্মে মহা বীর

ঢলোপ্রেমে হয়ে বাম,হাতে কাজ মুখে নাম
মহাবীর্যে তুলে দাঁড়া শির
।।
তাঁর ছিল এই কথা, এই কোন বাতুলতা?
নেড়া নেড়ী এল বুঝি ফিরে

করতে চাস তো হা, হা, নেড়া নেড়ী দলে যা,
সেই দলে কাঁদ গলা চিরে

চৈতন্য বালক ছিল, কেন্দে কেন্দে চলে গেল
কান্না তার বুঝিলনা কেহ

মনো দুঃখে সে গোঁসাই, ঘরে ফিরে আসে নাই
জলে ডুবে জুড়াইল দেহ
।।
নেড়া নেড়ী পরে যারা, ঢঙ করে সবে তারা
জনে জনে সেজেছে নিমাই

কাজ নাই কর্ম নাই, দ্বারে দ্বারে ঘোরে তাই
বলে মোরা বৈষ্ণব গোঁসাই
।।
কান্না দেখি সে দলের, এ কিরে গ্রহের ফের!
তোরা সবে কান্দিস কি বুঝে?
ফাঁক যদি রয় মূলে তা ঢাকবি কি কৌশলে
মাথা-ঢাকা যায় লেজ গুঁজে?
এ সব ভণ্ডামী ছাড়, ছেড়ে দে মনের আড়
শক্ত হোক বুকে যত হাড়

আগে কাজ পরে কান্না, ছেড়ে দে কান্নার ধনা
কাজ করে বাড় তোরা বাড়
।।
প্রেম সোজা কথা নয়, প্রেম মেলে সাধনায়
জল নাযে পাবি যথা তথা

পবিত্র হৃদয় পেলে, প্রেম থাকে সেই স্থলে
প্রেম চায় সত্য পবিত্রতা
।।
প্রেম যদি হত সস্তা, পুরে নিত বস্তা বস্তা
রাস্তা বান্ধা যেত প্রেম দিয়ে

সস্তা প্রেমে ভরেমন, দেখ গিয়ে কত জন
কুষ্ঠ ব্যাধি নিয়ে আছে শুয়ে
।।
কান্না শুধু নয় চোখে, কান্না থাকে যার বুকে
মুখে তার কথা নাহি ফুটে

মনে মনে টানে মন, সেই প্রেমে আকর্ষণ
টানে টানে মন চলে ছুটে
।।
সে বাপু সহজ নয়, দৈবাৎ কাহার হয়
কোটী মধ্যে গুটী মেলা ভার

প্রেমিকের যে লক্ষণ, আমি বলি তোরা শোন
তত্ত্ব মনে পড়িল আমার
।।

চৈতন্য প্রভুর দলে, রাজ্য রাজধানী ফেলে
দুই ভাই সাজিল ফকির

পূর্ব নাম ছেড়ে দিয়ে, রূপ সনাতন হয়ে
হরি বলে ছাড়িল জীগির
।।
সনাতন বৃন্দাবনে, মত্ত হরি নাম গানে
প্রভু আজ্ঞা মতে তথা রয়

দেহ থাকে বৃন্দাবনে, মন চলে প্ৰভু সনে
আরোপেতে রূপ দেখা পায়
।।
নাহি করে দাপদাপি, হরি বলে লুফালুফি
এক মনে জপে হরি নাম

এই ভাবে দিন যায়, হেন কালে বার্তা পায়
গেছে চলি গৌর গুণধাম
।।
সংবাদ শুনিয়া কানে, বসি রহে আনমনে
ভক্তগণে মানিল বিস্ময়

সবে ভাবে মনে মন, কান্দিল না সনাতন
এই নাকি ভক্ত পরিচয়?
কান্দিয়া আকুল যারা, কিছু কাল পরে তারা
ক্রমে ক্রমে শোক ভুলি গেল

এ দিকেতে সনাতন, যেন অবসন্ন মন
গ্রন্থ পাঠে মন ডুবাইল
।।
একদিন দ্বিপ্রহরে, গ্রন্থকে বহিয়া শিরে
বৃক্ষতলে বসে সনাতন

চারি ভিতে বসে ভক্ত, গ্রন্থ পাঠে অনুরক্ত
সনাতন করে উচ্চারণ
।।
নদীয়া বিদায় খণ্ড, মুড়িয়া আপন মুণ্ড
সন্ন্যাসী সাজিল গোরা রায়

কান্দে তাঁর শচীমাতা, বিষ্ণুপ্রিয়া শুনি কথা
বুক ফাটে কথা নাহি কয়
।।
শচী যে বিলাপ করে, তাহা পাঠ শেষ করে
বিষ্ণুপ্রিয়া প্রসঙ্গ আসিল

কি গভীর বেদনায়, বিষ্ণুপ্রিয়া দুঃখ সয়
পাঠ শুনি সকলি কান্দিল
।।

সনাতন নির্বিকার, পাঠে বাধা নাহি তাঁর
বারেক শিহরি মাত্র উঠে

দৈবের ঘটনে হায়, বৃক্ষ হতে এ সময়
পত্র এক শাখা হতে টুটে
।।
সনাতন পৃষ্ঠোপরে, পত্র আসি লুটিপড়ে
আশ্চর্য ঘটনা সবে দেখে

দপ্ করি অগ্নি জ্বলে, মুহূৰ্ত সময় কালে
পত্র পোড়ে জুলন্ত পাবকে
।।
ভক্ত সবে হতবাক, সনাতন বলে থাক্
আদ্যকার পাঠ শেষ হ

এতেক বলিয়া সাধু, গ্রন্থ শিরে করি শুধু
আপন কুটীর পানে গেল
।।
ঘটনা দেখিয়া চোখে, কথা কার নাহি মুখে
লজ্জিত হইল সবে মনে

স্তব্ধ রহিয়া পরে, সবে বলাবলি করে
মোরা নাহি চিনি সনাতনে
।।
প্রেমের আগুন সহে, মুখে কথা নাহি কহে
এত বড় ভক্ত কেহ নাই

আগুন রাখিয়া বুকে, অচঞ্চল রহে শোকে
পুড়ে পুড়ে দেহ হল ছাই
।।
প্রেমিকের যে লক্ষণ, জানিত সে সনাতন
যে কান্নায় নাহি ছিল জল
।।
বিরহ আগুন জুলে’, বাষ্প করে সব জলে
ছোট কান্না কেন্দে কিবা ফল ?
যদি প্রেম পেতে চাও, এই ভাব সবে নেও
ঢঙ করে কাঁদা নহে ভাল

মন কান্দে যে কান্নায়, ফল ফলে সে কান্নায়
চল সবে সেই পথে চল
।।
এতেক কহিয়া বাণী, গুরুচাঁদ গুণমণি
হায়! হায়! শব্দ করি উঠে

কি যেন কিবেদনায়, হায় হায় শব্দ কয়
ধ্বনি যেন কোথা যায় ছুটে
।।

বৈরাগী চণ্ডীচরণ, করজোড়ে নিবেদন
প্রভুর অগ্রেতে গিয়া করে

প্রভু যদি আজ্ঞা পাই, দরবারে যেতে চাই
এ বাসনা রয়েছে অন্তরে
।।
প্রভু বলে ভাল হ, চল মোর সঙ্গে চল
লাট সঙ্গে হবে পরিচয়

জাগিয়া উঠক জাতি, আমি তোমাদের সাথী
মনে নাহি কর কোন ভয়
।।
চণ্ডী কয় প্রেম সিন্ধু! সদা পাই বিন্দু বিন্দু
তাই কান্দি ঢঙ নাহি জানি

দয়াতে ডুবিয়া যাই, তাই কেন্দে ছাড়ি হাই
প্রেম ভক্তি কিছু নাহি চিনি
।।
ভক্ত হাতে ভক্তি ডোর, তাই ভক্ত মনোচোর
চুপ করে থাকে কথা নাহি কহে

কহে দীন মহানন্দ, গেল না চিত্তের সন্দ
প্রেম প্রাপ্তি হল না এ দেহে
।।

 

ফরিদপুরে লাট দরবার ও সর্বপ্রথম নমঃশূদ্র অভিনন্দন


দরবারে যেতে প্ৰভু করিলেন মন

মীডে ডাকি কহে প্রভু এহেন বচন
।।
শুনহে ডক্টর মীড আমি যাহা বলি

লাট দরবারে যেতে কোন বেশে চলি ?
মীড বলে বড় কর্তা! ঠিক বলিয়াছ

ধনে মানে এই দেশে তুমি শ্রেষ্ঠ আছ
।।
সেই মতে বেশ ভূষা লাগিবে তোমার

শীঘ্ৰ গতি কর তুমি জোগাড় তাহার
।।
তোমার প্রথম পুত্র শ্ৰীশশিভূষণ

অবিলম্বে কলিকাতা করুক গমন
।।
পোষাকের বার্তা তার জানা আছে ভাল

শীঘ্ৰ যাক এ দিকেতে দিন কাছে এল
।।

প্রভুজী ডাকিয়া বলে বড় বাবু ঠাঁই
আমার তদরবারী সজ্জা কিছু নাই
।।
এই ক্ষণে কলিকাতা তুমি চলি যাও

পোষাক কিনিয়া আন যাহা তুমি পাও
।।
পিতার বচনে বাবু আনন্দিত অতি

যাত্রা কৈল কলিকাতা অতি শীঘ্ৰ গতি
।।
যথা কালে কলিকাতা হল উপনীত

কিনিল পোষাক তাঁর যথা মনোনীত
।।
চোগা চাপকান কেনে সুন্দর পাগড়ী

কাল বর্ণ দীর্ঘ কোর্তা লাল বর্ণ ছড়ি
।।
মূল্যবান জুতা কেনে মোজা এক জোড়া

রাজ তুল্য পোষাকাদি সুন্দর চেহারা
।।
পোষাক কিনিয়া বাবু গৃহ পানে ধায়

দুই দিনে উপনীত আপন আলয়
।।
আপন পোষাক আর পিতার পোষাক

পোষাক দেখিয়া লোকে লেগে গেল তাক
।।
পাঁচ শত টাকা দিয়ে পোষাক কিনিল

পোষাক দেখিয়া মীড বিষ্মিত হইল
।।
মীড বলে বড় কর্তাতেছি আশ্চর্য

তব সম কেহ নাহি করে হেন কার্য
।।
পোষাক সম্পর্কে ছিল এই অনুমান

শতাবধি হতে পারে ব্যয়ের প্রমাণ
।।
এখনে আশ্চর্য হয়ে ভাবিতেছি মনে

রাজোচিত পোষাকাদি আনিলে কেমনে
।।
রাজা ভিন্ন কেবা চিনে পোষাক রাজার?
নিশ্চয় আছিলে তুমি রাজার কুমার
।।
রাজ ব্যবহার সব তুমি জান ভাল

রাজ বুদ্ধি বিনা ইহা সম্ভবে কি বল?
মোর মনে এই বলে দেখিলে তোমায়

লাট বাহাদুর হবে প্রীত অতিশয়
।।
শুনিয়া মীডের কথা প্ৰভু বলে হেসে

মীডরে গৌরব দিয়া কেহ মিষ্ট ভাষে
।।

 

শুন মীড কথা ঠিক রাজ বুদ্ধি বিনা
রাজ ব্যবহার কেহ জানিতে পারে না
।।
রাজ বুদ্ধি কোথা মেলে শোন বলি তাই

রাজ বংশধর হতে রাজ বুদ্ধি পাই
।।
রাজবংশ অবতংশ তুমি মহামতি

তব ঠাঁই পাইয়াছি রাজার পদ্ধতি
।।
আমরা দরিদ্র জাতি ধন ধান্য নাই

কাঙ্গালের ঘরে রাজ বুদ্ধি কোথা পাই
।।
শত ধন্যবাদ তাই দিতেছি তোমাকে

তোমার সাহায্যে আমি উঠাব জাতিকে
।।
প্রভুর বিনয়ে মীড লজ্জা পায় মনে

মনে ভাবে কোন বুদ্ধি খাটে না এখানে
।।
বুদ্ধি যাঁরে পূজা করে শক্তিপতি জেনে

মানবের বুদ্ধি তাঁরে হারাবে কেমনে?
এই রূপে ক্রমে ক্রমে দিন ঘনাইল

লাট দরবারে যেতে সময় আসিল
।।
দুই দিন অগ্রে মীড যাত্রা করি গেল

সাঙ্গ পাঙ্গ সহ যেতে প্রভুকে কহিল
।।
সবাকে সংবাদ দিল প্রভু দয়াময়

দিন মত ওড়াকান্দী সকলে উদয়
।।
চণ্ডী চলে পূর্ণ চলে চলে রাধানাথ

ভীষ্মদেব আর বিধু চলে সাথে সাথ
।।
শ্ৰীশশিভূষণ চলে সহিতে মোহন

চলিলেন সঙ্গে বালা তারিণীচরণ
।।
মহাজ্ঞানী যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস মহাশয়

প্রিয় ভক্ত বিচরণ সঙ্গে সঙ্গে যায়
।।
তারাইল হতে যায় খুলনা শহরে

গোপাল ডাক্তার নামে থাকে তথাকারে
।।
তার ঘরে বাস করি রাত্রি কাটাইল

প্রভাতে গাড়ীতে উঠি কলিকাতা গেল
।।
প্রসন্ন কুমার দাস চাঁদসী ডাক্তার

শ্ৰীশশিভূষণ হল জামাতা তাঁহার
।।

সমাদরে নিজ গৃহে প্রভুকে লইল
চর্ব চোষ্য লেহ্য পেয় আয়োজন কৈল
।।
পরম আনন্দে প্ৰভু রহে সেই বাড়ী

নমঃশূদ্র সবে তবে এল দেখা করি
।।
কুমুদ বিহারী বাবু মল্লিক উপাধি

ভ্রাতৃসহ কলিকাতা বাস নিরবধি
।।
মুকুন্দ বিহারী নামে মল্লিক সুজন

নমঃকুলে আদি মন্ত্ৰী হল সেই জন
।।
সে সময় মহাশয় বিদ্যাভ্যাস করে

প্রভু সঙ্গে দেখা করে তিন সহোদরে
।।
জাতির উন্নতি কথা বহুত হইল

আলাপন সাঙ্গ করি সবে গৃহে গেল
।।
অতুল বিহারী বাবু মুকুন্দের ভ্রাতা

তাঁর গুণে মুগ্ধ হন গুরু জ্ঞানদাতা
।।
ইচছা করে প্রভু তাঁরে করিতে বন্ধন

তার ফলে বিবাহাদি হল সংঘটন
।।
প্রভুর দ্বিতীয় পুত্র সুধন্য কুমার

নলিনী নামেতে এক কন্যা আছে তাঁর
।।
তার সঙ্গে অতুলের হল পরিণয়

ইচ্ছাময় ইচ্ছা করে ইচ্ছা পূর্ণ হয়
।।
তথা হতে পরদিনে সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে

ফরিদপুরেতে প্রভু উত্তরিল গিয়ে
।।
নামিয়া দেখিল প্রভু মীড দাঁড়াইয়া

প্রভুকে সম্মান করে হস্ত বাড়াইয়া
।।
অতঃপর তাঁর সাথে জেলা মধ্যে যায়

মীড বলে বড় কর্তা করেছি উপায়
।।
বহু কষ্টে ম্যাজিষ্ট্রেটে করিয়াছি রাজী

লাটের সহিতে দেখা হইবেক আজি
।।
সভামধ্যে মানপত্র তুমি দিবে লাটে

পরে এক সাথে যাব লাটের নিকটে
।।
সেইখানে তোমাদের যত কথা আছে

লাটেরে বুঝায়ে আমি বলিব তাপাছে
।।

মীডের মুখেতে শুনি এহেন বচন
প্রভু কহে ধন্য ধন্য তুমি মহাজন
।।
মীডের সঙ্গেতে তবে প্রভু দয়াময়

ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কামরায় যায়
।।
দেখিয়া প্রভুর রূপ ম্যাজিষ্ট্রেট কয়

বল মীড এই ব্যক্তি কোন মহাশয়?
রাজবংশে জন্ম বলি অনুমান করি?
সৰ্ব্বাঙ্গ জুড়িয়া এর শুভ চিহ্ন হেরি
।।
কহ কহ পরিচয় মীড মহাশয়

এর তুল্য ব্যক্তি কেহ নাহি এ জেলায়
।।
মীড বলে শুন তুমি জেলা অধিপতি

নমঃশূদ্র কুলে জন্ম মান্যবান অতি
।।
ওড়াকান্দী গ্রামে বাস জেলার দক্ষিণে

জাতি মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলি সবে এঁরে মানে
।।
এঁর পিতা ছিল এক মহৎ পুরুষ

শিষ্য তাঁর এই দেশে বহুৎ মানুষ
।।
রাজভক্ত এই ব্যক্তি অতিশয় সৎ

মহতের পুত্র ইনি নিজেও মহৎ
।।
সকল শুনিয়া তবে ম্যাজিষ্ট্রেট কয়

দয়া করি চেয়ারে বসুন মহাশয়
।।
চেয়ারে বসিল প্রভু কনক বরণ

তাঁর প্রতি ম্যাজিষ্ট্রেট চাহে ঘন ঘন
।।
কিছু পরে জিজ্ঞাসিল মীডের নিকট

শুন মীড বল মোরে করিও না হট্
।।
নমঃশূদ্র জাতি বলি দিলে পরিচয়

নমঃশূদ্র কোন জাতি বলত আমায়?”
শুনিয়া ডক্টর মীড ভাবে মনে মন

হেন কথা ম্যাজিষ্ট্রেট বলে কি কারণ?
নমঃশূদ্র বলেনাহি চেনে কোন জাতি

আমি তশুনিনি কভু এমত ভারতী
।।
কি ভাবে চিনাই এঁরে নমঃশূদ্র জাতি

এ সব ভাবিয়া মীড চিন্তান্বিত অতি
।।

হেন কালে প্ৰভু মোর মীডে ডাকি কয়
কি চিন্তা করিছ তুমি মীড মহাশয়?”
মীড বলে বড় কর্তা, পড়েছি চিন্তায়

সাহেব জানে না নমঃজাতি কারে কয়
।।
মনে ভাবি কোন ভাবে চিনাই ইহারে

সেই চিন্তা উঠিয়াছে তামার অন্তরে
।।
প্রভু বলে শুন মীড কোন চিন্তা নাই

নমঃশূদ্র জাতি দেখ কেমনে চিনাই
।।
এতেক বলিয়া প্ৰভু ম্যাজিষ্ট্রেটে কয়

আপনি বলুন দেখি সাহেব মশায়
।।
কোন কোন জাতি বাস করে এ জেলায়?
কোন জাতির কি কর্ম বল তা আমায়?
জেলার শাসন কর্তা আপনি যখন

আপনার জানা আছে সব বিবরণ
।।
সাহেব হাসিয়া বলে শুন মহাশয়

কোন কোন জাতি আছে আমার জেলায়
।।
ব্রাহ্মণ কায়স্থ বৈদ্য আর মুসলমান

তেলী মালী, জেলে আছে নানাবিধ স্থান
।।
কুম্ভকার বীরুজীবি কিছু কিছু আছে

আরেক জাতির কথা বলি আমি পাছে
।।
চণ্ডালবলিয়া সবে তাহাদিগেকয়

বহুসংখ্যা আছে তারা আমার জেলায়
।।
শক্তিশালী বটে তারা জানে লাঠি খেলা

কৃষিকর্ম করে খায় বিদ্যা করে হেলা
।।
শহরে বন্দরে তারা আসে কদাচিৎ

মোর সাথে নহে তারা বেশী পরিচিত
।।
এই ভাবে ম্যাজিষ্ট্রেট যখন বলিল

মীড বলে ঠিক ঠিক সব ঠিক হল!
প্রভু প্রতি চাহি বলে ধন্য মহাশয়

আপনার সুকৌশলে হল পরিচয়
।।
পুনরায় ম্যাজিষ্ট্রেটে মীড ডাকি কয়

এই জাতি নমঃশূদ্র চণ্ডাল ত নয়
।।

কি কারণে চণ্ডালবলিয়া তারে কও?
মূলতত্ত্ব জেলাপতি আমারে জানাও
।।
ম্যাজিষ্ট্রেট হাসি বলে পাদ্রী মহাশয়

আমরা কি জানি বল এরা যাজানায়
।।
তাই শুনি তাই জানি সেই ভাবে কই৷
যাবলে দেশের লোকে তাই করি সই
।।
আমার অধীন যত আছে কর্মচারী

তাহারা চণ্ডাল বলে আমি কিবা করি?
যেই ভাবে যেই জন দেয় পরিচয়

সেই ভাবে চিনি তারে কহিনু নিশ্চয়
।।
রিপোর্ট প্রকাশ যাহা তাহা ঠিক মানি
।।
তাহা ছাড়া অন্য কথা বল কিসে জানি?”
এই ভাবে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি কথা কয়

প্রভু প্রতি মীড তবে ধীরে ধীরে চায়
।।
অর্ন্তযামী বুঝি তবে মীডের অন্তর

বলে মীড অন্য কথা বলহ সত্বর
।।
সবিশেষ সমূদয় আমি তব কাছে

ক্রমে ক্রমে সব কথা বলিব যে পাছে
।।
সাহেবের কাছে যদি অন্য কথা থাকে

সেই সব কথা তুমি বলাও আমাকে
।।
মীড বলে ম্যাজিষ্ট্রেট শুন মহাশয়

লাটের নিকটে দাও এঁর পরিচয়
।।
ম্যাজিষ্ট্রট বলে মীড এই মহাজন

কি কি কার্য করিয়াছে করহ বর্ণন
।।
মীড বলে রাজ ভক্ত এই মহাশয়

রাজার বিরুদ্ধে কভু কথা নাহি কয়
।।
স্বদেশী আন্দোলনে বড়ই বিরোধী

রাজার মঙ্গল চিন্তা করে নিরবধি
।।
মহাধনবান ইনি দেশের প্রধান

পুত্র কন্যা যত আছে সকলি বিদ্বান
।।
এঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নাম শ্ৰীশশি ভূষণ

দরখাস্ত করিয়াছে চাকুরী কারণ
।।

সভ্য, শিষ্ট, শান্ত সবে ভদ্র ব্যবহার
বহু ভাবে উপকার করিছে আমার
।।
তোমার অধীন আছে কর্মচারী যত

ইহাদের প্রতি হিংসা করে আবিরত
।।
প্রকৃত বৃত্তান্ত তারা জানিতে না দেয়

তাই নাহি পাও তুমি সত্য পরিচয়
।।
এ জাতির মধ্যে আমি ঘুরি অবিরত

বিদ্যাবান লোক আমি দেখিয়াছি কত
।।
রাজ পরিচিত এরা না ছিল কখন

পতিত রয়েছে এরা শুধু সে কারণ
।।
আমি বলি রাজ কার্য এ জাতিকে দাও

সমদৃষ্টি রাখে রাজাএ নীতি দেখাও
।।
এ সব বৃত্তান্ত তুমি বিশেষ করিয়া

লাট সাহেবেরে দাও নিজে বুঝাইয়া
।।
আর শুন এই ব্যক্তি কোন ভাবে চলে

বহু লোকে মান্য এঁকে করে গুরু বলে
।।
তার মধ্যে শূদ্র বৈদ্য ব্রাহ্মণাদি আছে

গুরু বলে মান্য করে আসে এঁর কাছে
।।
অধিক বলিব কিবা কিছু মুসলমান

গুরু মান্য করি এঁরে দেখায় সম্মান
।।
আচার বিচার এঁর ব্রাহ্মণের মত

ইহাকে করিয়া লহ রাজ পরিচিত
।।
রাজ ভক্ত জাতি শুদ্ধ এই নমঃশূদ্র

এরা কেন পিছে পড়ি হয়ে রবে ক্ষুদ্র?”
মীড়ের বচন শুনি সেই ম্যাজিষ্ট্রেট

মনে মনে চিত্তা করে মাথা করি হেঁট
।।
মাঝে মাঝে প্রভু পতি নয়ন ঘুরায়

দেখিয়া প্রভুর রূপ স্তব্ধ হয়ে রয়
।।
এতকাল যে ধারণা ছিল তার মনে

প্রভুকে দেখিয়া দূর হইল তখনে
।।
রিপোর্ট লিখিয়া পরে কলম রাখিল

লাটেরে জানাবে সব মীডকে কহিল
।।

 

লাট সন্দর্শন ও অভিনন্দন প্রদান!

লাট দরবার বড়ই সুন্দর
পরিস্কার চারিধার

মঞ্চের উপর গালিচা সুন্দর
আসন তাহার পর
।।
আসনেরর পরে জ্বল জ্বল করে
আসন ঢাকনি বস্ত্র

দুই ধারে তার বিরাট আকার
প্রহরী ধরিয়া অস্ত্র
।।
কিছু দূরে তার মেঝের উপর
আসনের সারি সারি

মান্যগণ্য যাঁরা তদুপরি তাঁরা
বসিয়াছে চুপ করি
।।
মঞ্চের দক্ষিণে বিবিধ আসনে
উচ্চ কর্মচারী সবে

ফাইল আনিয়া সম্মুখে রাখিয়া
বসিল নীরব ভাবে
।।
দরবার ঘর চারিধারে তার
রক্ত বস্ত্র দিয়ে ঢাকা

বিবিধ বরণে সম্মুখে পিছনে
নানা রঙে ছবি আঁকা
।।
দেবদারু পত্র দিয়া যত্র তত্র
ফুলহার দিয়া তা

চারুচন্দ্ৰাতপ শোভার গৌরব
উৰ্দ্ধদেশে শোভা পায়
।।
ধনী, মানী, গুণী পেয়ে নিমন্ত্রণী
আসিয়াছে দরবারে

পরিচয় কিছু বলিতেছি পিছু
একে একে পরে পরে
।।

উজানীর রাজা অতি মহাতেজা
জমিদারী তাঁর বড়

ওলপুরে ঘর ধনী জমিদার
প্রজার শাসনে দড়
।।
খাঁ-পুর বসতি তেজবন্তি অতি
চৌধুরী উপাধিধারী

জাতি মুসলমান অতি ধনবান
বসিল আসনোপরি
।।
বৈদ্য জমিদার খান্দারেরপার
আসনে বসিল আসি

কাশীয়ানী ধাম শ্ৰীগিরিশ নাম
কথা কয় হাসি হাসি
।।
পত্নী নিয়ে সাথে ঢুকিল সভাতে
সুজন ডক্টর মীড

মঞ্চের বামেতে বসে আসনেতে
ঠিক রাজ পুরোহিত
।।
বাস হারোয়ায় অতি মহাশয়
চৌধুরী নবাব আলি

জিলা বোর্ডে তিনি সভাপতি জানি
বহুৎ প্রতাপশালী
।।
বহরপুরের গোস্বামী দিগের
নামকীর্তি বহু আছে

তার একজন আসন গ্রহণ
করিল সভার পাছে
।।
লাহিড়ী সান্ন্যাল আছে দুইদল
কোড়কদি গাঁয়ে ঘর

দুই ঘর হতে আসি এক সাথে
বসিল আসন পর
।।
বাস পদমদী নবাব উপাধি
জাতিতে মুসলমান

আসি দরবারে বেশভূষা পরে
আসন উপরে যান
।।

 

 

 

বাইশ রশির সাহা দানবীর
নামেতে রমেশচন্দ্র

এল দরবারে অতি ধীরে ধীরে
গমনে মৃদুল মন্দ্র
।।
ঢেউখালী বাসী জমিদার আসি
বসিল আসন পরে

যত মহাজন, সু-ধীর গমন,
প্রবেশ করিছে ঘরে
।।
উনসিয়া ঘর আগরতলার
দ্বার পণ্ডিত যে জন

এক সাথে তাঁর আসিল সত্বর
শ্যাম তর্কপঞ্চানন
।।
বাটিকামারীর পণ্ডিত সুধীর
রামচন্দ্র ভট্টাচার্য

ঘৃতকান্দী ঘর বসু গিরিধর
বহু দেশে সৎকার্য
।।
হবিগঞ্জ বাসী জমিদার আসি

আসনে বসিল জোরে

কবিরাজপুর উপাধি ঠাকুর
পশিলেন দরবারে
।।
কুণ্ডু পরিবার ডোমসার ঘর
অতি ধনবান তারা

কার্তিকপুর ঘর ধনী জমিদার
তালিকা হইল সারা
।।
যে যাঁর আসনে বসেএকমনে
হেনকালে গুরুচাঁদ

দরবার ঘরে পশিলেন ধীরে
সঙ্গে করি পারিষদ
।।
লাগিল চমক সভাশুদ্ধ লোক
এক দৃষ্টে রহে চাহি

মনে মনে কয় এ মর ধরায়
হেন রূপ দেখি নাহি
।।

কি দিব তুলনা তুলনা মিলে না
অপরূপ রূপরাশি

প্রভু অগ্রে যায় পিছে পিছে ধায়
কনক বরণ শশী
।।
যেন সুরপতি জয়ন্ত সংহতি
নামিল ধরার পরে

অথবা ফাল্গুনী রূপেতে বাখনি
অভিমন্যু সঙ্গে করে
।।
কিবা এ তুলনা শুধু আলোচনা
অতুলনে কিবা তুল

তুলনা রহিত রূপ গুণ জিত
তাঁহারে তুলনা ভুল
।।
সবে রহে চেয়ে অবাক বিস্ময়ে
বদনে না ফুটে বাণী

অকস্মাৎ মীড হইয়া ত্বরিত
প্রভুরে লইল টানি
।।
নির্দিষ্ট আসনে ক্রমে জনে জনে
বসাইল ধরি হাতে

সবার বিস্ময় আর বেড়ে যায়
পারে না কিছু বুঝিতে
।।
কাহারা ইহারা? রূপে আলো করা
রাজতুল্য পরিচ্ছদ

কোন দেশে ঘর? কোন বংশধর
কেমন ধন সম্পদ?
লাট দরবারে কে জিজ্ঞাসে কারে
তাই রহে চুপ করি

মনে মনে কয় এ ব্যক্তি নিশ্চয়
অলৌকিক শক্তিধারী
।।
এহেন সময় ম্যাজিষ্ট্রেট কয়
শুনুন সকলে কথা

লাট বাহাদুর নহে বহুদূর
এখনি আসিবে হেথা
।।


গৃহে প্রবেশিলে উঠিয়া সকলে
সম্ভ্রম দেখাবে তাঁরে!
আপন আসন করুন গ্রহণ
লাট বসিবার পরে
।।
এতেক কহিয়া ত্রস্ত ব্যস্ত হৈয়া
ম্যাজিষ্ট্রেট চলি যায়

কিছুকাল পরে পশে দরবারে
ছোট লাট মহোদয়
।।
লাটেরে দেখিয়া সবে দাঁড়াইয়া
সন্ত্রম দেখাল তাঁরে

মঞ্চপরে রাখা বসনেতে ঢাকা
বসিল আসনোপরে
।।
যে যাঁর আসনে বসে সেইক্ষণে
লাট চাহে সভা পানে

সম্মুখ আসনে ঠিক মধ্যখানে
দেখা পায় গুরুচানে
।।
লক্ষ তারা মাঝে অপরূপ সাজে
শোভে যেন পূর্ণচন্দ্র

দিব্য জ্যোতিঃ রাশি বাহিরিছে আসি
যেন রে বিজলী কেন্দ্ৰ!
নীরবে বসিয়া চাহিয়া চাহিয়া
লাট দেখে গুরুচান্দে

কি হল কি জানি গুরুচাঁদ মণি
কোন গুণে লাটে বান্ধে
।।
নীরব সে লাট স্তব্ধ সভাতট
নীরব সবার গেহ

কেন হেন হয় কেবা কারে কয়
বুঝিতে পারে না কেহ
।।
যাদু মন্ত্র বলে যেন সভাস্থলে
সকলে নীরবে রয়

মুহূর্ত সময় যাদু টুটি যায়
দরবার শুরু হয়
।।
বহু প্রতিষ্ঠান, করে মান দান
নিজ নিজ দাবী কয়

যার যার কথা, আপন বারতা
আপনার পরিচয়
।।
রজত মণ্ডিত পাত্র সুশোভিত
মান পত্র তাহে পুরি

পাঠ শেষ হলে দুই হস্ত তুলে
টেবিলে রাখিছে ধরি
।।
সর্ব পত্র শেষে অপরূপ বেশে
সাঙ্গ পাঙ্গ সঙ্গে করি

পতিত পাবন শ্ৰীগুরুচরণ
ভুবনরঞ্জন কারী
।।
দাঁড়াইলা এসে মৃদু মৃদু হেসে
কে জানে কিসের ছলে

মান পত্ৰখানি ধরিয়া আমনি
শশীকে ডাকিয়া বলে
।।
, “পড় মানপত্র মনে দ্বিধামাত্র
করিও না বাপধন!
হৃদিপদ্মে বেন্ধে প্রভু হরিচান্দে
ধীরে কর উচ্চারণ
।।
পিতার আজ্ঞায় প্রফুল্ল হৃদয়
মান পত্র হাতে করে

পড়িতেছে শশী যেন বাজে বাঁশী
করুণ কোমল স্বরে
।।
ভীষ্মদেব দাস না ছাড়ে নিঃশ্বাস
শ্ৰীবিধু আকুল প্রাণে

তারিণী দেখিল প্রভু পড়িগেল
শ্রীশশী দাঁড়ায়ে শোনে
।।
শ্রীরাধা চরণ আর যে মোহন
পাশাপাশি দুই জনে

তাহারা দেখিল অন্যকে পড়িল
শশী রহে আন মনে
।।

সভাজন শোনে গৃহ মধ্য খানে
অশরীরী এক বাণী

মীড শুনে তায় শশীর গলায়
এ সুর কভু না শুনি
।।
শ্ৰীবিধু দেখিল প্রভু যাবলিল
শশী করে তাই পাঠ

এক দৃষ্টে চেয়ে শুনিল বসিয়ে
বাঙলার ছোট লাট
।।
শুনিলেন লাট মনের কবাট
আপনি খুলিয়া যায়

রাজ প্রতিনিধি তাই নহে বিধি
আপনা সামলিরয়
।।
পাঠ শেষ হলে নিজ করে তুলে
মানপত্র প্রভু ধরে

চলি ধীরে ধীরে গিয়ে মঞ্চপরে
রাখিল টেবিল পরে
।।
ঢল, ঢল, ঢল শত শতদল
জিনিয়া বরণ আভা

ঘন মেঘ প্রায় দেহ জুড়ি রয়
রাজবেশ মনোলোভা
।।
সব হত বাকে সভাজন দেখে
লাট ও দেখিল সুখে

রূপের গৌরব গুণের সৌরভ
এক দেহে বন্ধী থাকে
।।
ক্ষণেক থাকিয়া আসিল নামিয়া
নয়ন মোহন ছবি

লাট ও দেখিল প্রভুজী হাসিল
নাচিল হৃদয় রবি
।।
সে দিন সভায় যে ছিল যথায়
কথা নাহি কেহ কয়

যেই খানে যান প্রভু ভগবান
সকলে সেদিকে চায়
।।

ভাবে সবে একি কেন দুটি আঁখি
ঘুরে ঘুরে দেখে তাঁরে

ভাবি দেখিব না কিন্তু যে পারি না
টেনে নেয় জোর করে
।।
বিস্ময়! বিস্ময়! অতীব বিস্ময়
সেই দরবারে হল

যদিও বিস্ময় তবু শক্তিময়
মহাশান্তি উপজিল
।।
মানপত্র পেয়ে নিজে দাঁড়াইয়ে
জবাব দিলেন লাট

যথা সদুত্তর দিলেন সত্বর
নিরুত্তর সভা পাট
।।
যে অভিনন্দন নমঃশূদ্র গণ
রচনা করিয়া দেয়

তাহার উল্লেখে লাট বলে ডেকে
সুখী আমি অতিশয়
।।
যে সব বিষয় তাতে লেখা রয়
তাহার ব্যবস্থা আমি

বিধির কৃপায় করিব নিশ্চয়
কিছুতে যাব না থামি
।।
ম্যাজিষ্ট্রেট সনে পরে আলাপনে
জানিব সকল তত্ত্ব

আমার শাসনে পাবে জনে জনে
আপন আপন স্বত্ব
।।
পরে কতক্ষণ করি আলাপন
মহামান্য ছোট লাট

বসিলা আসনে আনন্দিত মনে
দরশনে ফিট ফাট
।।
ভাঙ্গে দরবার তিন ঘণ্টা পর
বিদায় হইল সবে

মীড মহামতি গুরুচাঁদ প্রতি
কহিলা অনুচ্চ রবে
।।

শুন বড় কর্তা বড় শুভ যাত্রা
করিয়া আসিলে তুমি

রহ অপেক্ষায় লাট কামরায়
এখনে চলিব আমি
।।
তোমাদের কথা সব মনে গাঁথা
লাটরে খুলিয়া ক

বুঝেছি নিশ্চয় লাট সদাশয়
তাঁর হাতে ফল পাব
।।
আর যাহা যাহা ফিরে এসে তাহা
আলোচনা করা যাবে

লাট বাহাদুর জ্ঞানে সুচতুর
বুঝিয়াছে সব ভাবে
।।
এই কথা বলি মীড যায় চলি
প্রভুজী ফিরিয়া আসে

সঙ্গীজন সবে মহা উৎসবে
আনন্দ সাগরে ভাসে
।।
গভীর রজনী সুপ্ত জন প্রাণী
কেহ জেগে নাই কোথা

প্রভু জাগি রয় মীডের আশায়
মীড যে দিয়াছে কথা
।।
কিছুকাল পরে ভৃত্য সাথে করে
মীড আসি উপস্থিত

জাতিতে ইংরাজ যে কথা সে কাজ
ধন্য রাজ পুরোহিত
।।
আদরে মীডেরে আপনার ধারে
বসাল ভবানী পতি

মীড হাসি কয় শুন মহাশয়
শুভ সমাচার অতি
।।
বহুক্ষণ ধরি লাটের কাছারী
করিয়াছি আলাপন

দেখিয়া তোমায় লাটের হৃদয়
আনন্দেতে নিমগন
।।

আমার নিকট শুধাইল লাট
আদি অন্ত পরিচয়

সকল শুনিয়া বলিল হাসিয়া
অসম্ভব কিছু নয়
।।
এই বঙ্গদেশে লাট হয়ে এসে
বহু বাঙ্গালী সনে

হল পরিচয় গৃহে কি সভায়
সব আছে মোর মনে
।।
ইহার মতন মানুষ এমন
দেখি নাই কোন জন

এর দরশনে এই হয় মনে
প্রাণ করে আকর্ষণ
।।
যে জাতির ঘরে ইনি জন্ম ধরে
সে জাতি উদ্ধার হবে

ভবিষ্যৎবাণী বলিব এখনি
মন দিয়া শুন সবে
।।
নমঃশূদ্র জাতি আজি হীন অতি
বিদ্যা ঘরে নাহি বলে

বিদ্বান হইলে আমি যাই বলে
কে রাখিবে তারে ঠেলে?
ঠাকুরের ঠাঁই তুমি বল তাই
আমি নাহি করি ভেদ

যত প্রজা রয় সমদৃষ্টি পায়
রাখিব না কার খেদ
।।
পরের বারতা চাকুরীর কথা
কহিলাম ধীরে ধীরে

সাবরেজিষ্ট্রার হইবে সত্বর
শশী কিছুদিন পরে
।।
কুমুদ মোহন তারিণীচরণ
চাকুরী পাইবে সবে

সে রাধাচরণ কিসে ক্ষুন্নমন
বাদ নাহি সেও রবে
।।

শুনি সমাচার দয়াল আমার
আনন্দে মাতিয়া কয়

ধন্য তুমি মীড রাজ পুরোহিত
ধন্য ধন্য মহাশয়
।।
নমঃশূদ্র বন্ধু তুমি গুণ সিন্ধু
পরম বান্ধব হলে

যে ক্ষণে বান্ধিলে আমি কোন কালে
নাহি যাব তাহা ভুলে
।।
বহু আলাপন করে দুই জন
বিদায় মাগিল শেষে

প্রভু মীডে কয় শুন মহাশয়
প্রভাতে চলিব দেশে
।।
পোহাল রজনী প্রভু গুণমণি
সবারে ডাকিয়া কয়

শুন সঙ্গিগণ মোদের এখন
স্বদেশে চলিতে হয়
।।
মীড রাত্রি কালে যাহা কিছু বলে
প্রভু নাহি বলে কারে

করিলে প্রকাশ হতে পারে নাশ
তাহাতে গোপন করে
।।
সাঙ্গ পাঙ্গ লয়ে উত্তরিল গিয়ে
স্বদেশে জগত পতি

এহেন প্রকারে লাট দরবারে
পতিতেরে দিল গতি
।।
ল জাগরণ নমঃশূদ্র গণ
রাজকার্য পায় বঙ্গে

শুন সমাচার পরের ব্যাপার
কি করে মীডের সঙ্গে?

 

 

 

 

 

নমঃশূদ্র সুহৃদ’ প্রকাশ

ফরিদপুরেতে হল লাট দরশন

তার কিছু পূৰ্ব্বে মীড বলিল বচন
।।
সংবাদ পত্রিকাযাতে প্রচারিত হয়

সেই পরামর্শ মীড প্রভুরে জানায়
।।
সেই আলোচনা পূৰ্ব্বে লেখা হইয়াছে

পরবর্তী কথা কিছু বলিতেছি পাছে
।।
প্রভুর কনিষ্ঠ পুত্র নামেতে সুরেন্দ্র

রূপবান গুণবান যেন পূর্ণ চন্দ্র
।।
বার শপচানব্বই সালে জন্ম নিল

ওড়াকান্দী হাই স্কুল পাঠ সাঙ্গ হ
।।
উনিশ শবার অব্দে প্রবেশিকা পাশ

তার পূৰ্ব্বে করিলেন পত্রিকা প্রকাশ
।।
ডক্টর মীডের কথা প্রভু মান্য করে

পত্রিকা বাহির করি দিল ঘরে ঘরে
।।
আদিত্য চৌধুরী নাম ওড়াকান্দী বাসী

সম্পাদক হন তিনি আনন্দেতে আসি
।।
কৰ্ম্মাধ্যক্ষ সাজিলেন সুরেন্দ্র ঠাকুর

স্বত্বাধিকারীর নাম হইল প্রভুর
।।
জ্ঞানগর্ভ নীতি কত হইল প্রচার

নমঃশূদ্র জাতি শিখে আচার বিচার
।।
ঘরে ঘরে বন্ধু রূপে যেত পত্ৰখানি

তাতে নাম নমঃশূদ্র সুহৃদবাখানি
।।
বিংশ বর্ষ বয়ঃক্রম শ্ৰীসুরেন্দ্ৰ নাথ

পত্রিকা চালনে ছিল অতি সিদ্ধ-হাত
।।
নিরলস জ্ঞানবান কৰ্ম্মাধ্যক্ষ রূপে

স্বজাতির সেবা করে অতি চুপে চুপে
।।
কোন স্থানে কোন দিনে জাগিলে সংশয়

শ্ৰীশশিভূষণ ঠাঁই তাহা পুঁছি লয়
।।
ষষ্ঠ বর্ষ এই ভাবে চলিল পত্রিকা

নমঃশূদ্র জাগরণে হল কথা লেখা
।।

দেখিয়া ডক্টর মীড আনন্দিত অতি
বহু ব্যাখ্যা করিলেন সুরেন্দ্রের প্রতি
।।
চণ্ডালবলিয়া দিত নমঃশূদ্রে গালি

করিলেন চেষ্টা প্ৰভু মুছিতে সে কালী
।।
সে বৃত্তাস্ত আদ্যোপান্ত বলিব পশ্চাতে

এবে বলি পত্রিকাটি কি করিল তাতে ?
বহু আন্দোলন করে সে পত্রিকা খানি

জনে জনে জানাইল দুঃখের কাহিনী
।।
কি ভাবে ঘুচিল দুঃখ কে দুঃখ ঘুচায় ?
ঘরে ঘরে পত্রিকাটি সে বাৰ্ত্ত জানায়
।।
গালি গেল নমঃশূদ্র হইল নিৰ্মল

মুছে ফেলে নমঃশূদ্র নয়নের জল
।।
মেঘ-মুক্ত-রবি সম হাসিতে লাগিল

হেন কালে বিনা মেঘে বজ্রাঘাত হল
।।
অকালে সুরেন্দ্রনাথ পর পারে যায়

নমঃশূদ্র জাতি সবে করে হায় হায়
।।
প্রাণ চলি গেলে দেহ চলিবে কেমনে ?
নমঃশূদ্র সুহৃদবন্ধ হল এতদিনে
।।
------0---------

 

ওড়াকান্দী হাইস্কুল স্থাপন ও প্রস্তাবনা

লাট দরবার হতে ফিরি দয়াময়

মীডেরে ডাকিয়া তবে ধীরে ধীরে কয়
।।
শুন মীড যাহা হিত বলি তব ঠাঁই

এই গ্রামে হাইস্কুল এবে আমি চাই
।।
লাট যাহা তব ঠাঁই বলিয়াছে কথা

তাহা ভিন্ন গতি মোরা নাহি পাব কোথা
।।
প্রাণ যায় যাক চলে তাতে ভয় নাই

বিদ্যা চাই, বিদ্যা চাই, বিদ্যা মাত্র চাই
।।
বিদ্যা ধৰ্ম, বিদ্যা কৰ্ম, বিদ্যা সৰ্ব্বসার

বিদ্যা বিনা এ জাতির নাহিক উদ্ধার
।।

তাই বলি অবিলম্বে স্কুল করে দাও
যে ভাবে তোমার ইচ্ছা সে ভাবে চালাও
।।
মোট কথা হাইস্কুল করহ এখন

বিনা স্কুল জান স্থূল শান্ত নহে মন
।।
গুরুচাঁদ মুখে শুনি এতেক বচন

মীড বলে বড় কৰ্ত্তা করি নিবেদন
।।
হাইস্কুল করিবারে মোর ইচ্ছা আছে

আপনার শক্তি কিন্তু চাই মোর পাছে
।।
প্রভু বলে মীড আমি বলি তব ঠাঁই

কাজ কর আছি পিছে কোন চিন্তা নাই
।।
দেশবাসী সবে ডাকি প্রভু বলে কথা

শুন দেশবাসী সবে না কর অন্যথা
।।
ওড়াকান্দী হাইস্কুল হইবে করিতে

কিছু কিছু অর্থ সবে দাও হৃষ্ট চিতে
।।
প্রভুর কথায় সবে সম্মত হইল

দৈবের নির্ব্বন্ধে এক ঘটনা ঘটিল
।।
------0------

গোপালপুর দাঙ্গা ও নমঃশূদ্রের বিপদ

গোপালপুরেতে হল দুরন্ত ঘটনা

দাঙ্গা হাঙ্গামাতে লোক হারায় চেতনা
।।
মুসলমানের সাথে নমঃশূদ্র ভাই

করিল বিষম দাঙ্গা তুল্য দিতে নাই
।।
সেই গ্রামে অত্যাচারী কিছু মুসলমান

অকারণে নমঃশূদ্রে করে অপমান
।।
যাক জান থাক মানকরে অঙ্গীকার

প্রতিকারে নমঃশূদ্র বদ্ধ পরিকর
।।
এইমতে দুই দলে হল মারামারি

খুন হল লোক মারা গেল জন চারি
।।
আগে ভাগে মুসলিমে দরখাস্ত করে

সংবাদ জানায় সব পুলিশ গোচরে
।।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free