গান নংঃ ১৫১-১৬৩ (শেষ)
১৫১।
প্রেম শূন্য জীর্ন দেহ কিবা প্রয়োজন।
যার নাই ভক্তিরতন প্রেমাস্বাদনে, অকালে কালের মুখে হয় পতন।।
প্রেম ভক্তি শক্তি আছে যার, ও সে সাধনের ধন মদনমোহন বন্দী আছে তার।
যেমন ছায়া ফেরে কায়ার পিছে, সেই মত অনুগত হরিধন।।
সাথী তার ব্রজ রাখালগণ, যাদের ভক্তি গুণে উচ্ছিস্ট ফল খেলেন কৃষ্ণধন,
বাল্য খেলার ছলে সব রাখলেন, শ্রীকৃষ্ণের স্কন্ধে করলেন আরোহণ
প্রেম ভক্তি এমনি বলবান, তুচ্ছ রজ্জু আনি নন্দরানী বাধঁলেন ভগবান,
আছে নন্দরাজা আরেক প্রমাণ, যার বাধা মস্তকে বয় নীলরতন।।
আরেক প্রমাণ আছে ভাগবতে, হরি ভক্তি গুণে সারথী হয় অর্জ্জুণের রথে,
ও সে অশ্বরজ্জু ধরে হাতে, যুদ্ধেতে রথ চালায় মধুসূদন।।
আনন্দে মহানন্দ কয়, ও প্রেমভক্তি ধন বিকাইতেছে শ্রীগুরুর মেলায়,
অশ্বিনী তুই দীন দুরাশয়, মন দিয়া কিনলি না ভক্তি রতন।।
১৫২।
আমার নিদান দেখে ফেলে গেলি রে,
কোথায় লুকালি হরিচাঁদ পরাণ পুতলি।
কাঙ্গালের ধন, দুখ নিবারণ, দুঃখীর পরাণ জুড়ালী,
ও তুই কোন বিচারে আমার শিরে, দিলি ক্যান দুঃখের ডালি।।
ভক্তের অধীন নাম ভক্তাধীন, দয়াময় নাম ধরিলী,
আমি ভক্তি শূন্য দীন দৈন্য আমায় ক্যান নিদয় হলি।
দীনবন্ধু ভবসিন্ধু তরাতে নাবিক হলি,
আমার নাইকো কড়ি, দীন ভিখারী কুলে বসে কান্দালি।।
কাউকে রাজা কাউকে প্রজা কাউকে কাঙ্গাল সাজালি,
ও কারুর বুকের মানিক কেড়ে নিয়ে দুখ সাগরে ভাসালি।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র অশ্বিনী তোরে বলি,
এমন প্রেমের বাজার ভেঙ্গে গেল, ও তুই কার আশায় বসে রলি।।
১৫৩।
আর কত কাঁদাবি আমায় ওহে গুরুধন,
এবার বিনোদ বেশে দাড়াও এ সে, দেখে লই জন্মের মতন।।
তুমি আমার সাধনের ধন, দুখপাশরা নয়নতারা, অমূল্য রতন,
আমার আর কোন ধন নাই দরদী, পূজি কেবল ঐ চরণ।।
আমার মনে এই আকিঞ্চন, হৃদকমলে বসাইয়ে পূজিব চরণ,
আমার অনুরাগ তুলসী দিব, দিব শ্রদ্ধা রস চন্দন।।
এই ভবে এলেম কত বার, কতবার গত হল ভজলাম না এক বার,
আমার এই বার যদি যায় বিফলে, ভবে বেঁচে আর কি প্রয়োজন।।
তোমায় যদি পেয়েছি একবার, প্রাণান্তে ছাড়বোনা তোমায় প্রতিজ্ঞা আমার।
গুরু তুমি যদি ছাড় আমায়, আমি ছাড়বোনা কখন।।
কেঁদে বলে অশ্বিনী, কাতরে করুণা কর হে চিন্তামণি,
তোমার দীন দয়াময় নামটি শুনি, ঐ ভরসায় নিলাম স্মরণ।।
১৫৪।
তোমাকে বাসিব ভাল এই ভিক্ষা চাই।
আমায় বাস বা না বাস ভাল, তাতে দুঃখ নাই।।
এই ভাবনা ভাবি রাত্রি দিন, তুমি হইও গহীন গঙ্গা আমি হইব মীন,
তোমার রূপ সাগরে ডুবে রব, জাগিব বাসনা নাই।।
তুমি গুরু হইও শালগ্রাম, তুলসী হইয়া পদে থাকবো গুণধান,
তোমার যুগল চরণ বক্ষে রেখে, যেন আমি মেগে খাই।।
কর্ম পাকে হই যদি ফণী, তুমি গুরু হইও আমার মস্তকের মণি,
তোমায় দিবানিশি রাখবো শিরে, ভবে তোমার মত কেউ নাই।।
তুমি আমার পরাণ পুতলি, তোমার শ্রীপাদ পদ্মে হয়ে অলি, যেন প্রেম মধু খাই।।
করুণস্বরে অশ্বিনী বলে, দীন হীন কাঙ্গাল বলে ফেলনা ঠেলে,
গুরু তুমি আমায় উপেক্ষিলে, ভবে দিব আমি কার দোহাই।।
১৫৫।
ওগো শ্রীধাম মন্দিরে উচ্চৈঃস্বরে করে সংকীর্ত্তন।
ওগো ভক্তের সঙ্গে মন রঙ্গে প্রেম রসেতে হয় মগন।।
হরিচাঁদের রূপ দর্শনে ধারা বহে দুনয়নে,
শিবনেত্র কোন জনে কেহবা ধরায় পতন।
কেহ বা পড়ছে ঢলে কেহবা ধরে তোলে,
মুখে হরি হরি বলে ভেসে যায় গোঁসাই হীরামন।
কেহবা হরি নাম সুধায় তবু না হয় জ্ঞানের উদয়,
বাহ্যজ্ঞান নাইকো হৃদয় মহাভাবে অচেতন।
স্বেদ অশ্রূ প্রলাপ লম্ফ খনেক হতেছে কম্প,
খনেক করে বীর দম্ভ সঙ্গে রঙ্গে নাচে শমন
ওগো মহানন্দের প্রেম হিল্লোলে প্রেম সিন্ধুর জল উজান চলে,
আনন্দে প্রেম সলিলে সাঁতরি খেলে ভক্তগণ।
দয়াল গুরুচাঁদ গোঁসাই ভবে এমন আর দেখি নাই,
গেল রে শমনের বড়াই, ভবে এল গোলকের ধন।
গোলকচাঁদে হুঙ্কারে অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ড নড়ে,
তুফান উঠলো মটকা ফুড়ে ডুবল সব পাষন্ডেরগণ।
কেউ করে হরিধ্বনি কেউ করে উলূধ্বনি,
শুনিয়া সেই মহাধ্বনি, তরাসে পলায় শমন।
হরিচাঁদের প্রেম-সাগরে তারকচাঁদ দাড়িয়ে তীরে,
ডেকে কয় উচ্চৈঃস্বরে ডুবল গোঁসাই হীরামন
গোলকচাঁদ সাঁতার খেলে মহানন্দ ডেকে বলে,
অশ্বিনী তুই রলি ভুলে ডুবলি না জন্মের মতন।।
১৫৬।
তোরে বলব কি; মায়া তেতুল গাছে
কোন সাহসে বাসা বেধে রলি।।
ঐ দেখ কাল ব্যাধে শর হানিল, তবু না তোর হুঁশ হল,
(পাখিরে) এই সময় মন উড়ে চল, নৈলে প্রাণ হারালি।।
গুরুকল্প-তরুমূলে বাসাঁ বাধ হরি বলে, (পাখিরে)
তবে শঙ্কা নাই তোর কোন কালে, কালের ভয় এড়ালি।।
ত্রিবেনী এক অছে, যাস না রে সেই নদীর কাছে,
তথায় মদনা চোরা ফাঁদ পেঁতেছে, বাঁধবে অমনি গেলি।।
প্রেম সাগরে নিস্কাম চরে, বেড়াও রে আনন্দ ভরে,
তথায় চড়া করা নীহার ধরে, ঘুচবে মনরে কালি।
আমার গুরু-গোঁসাইর পোষা পাখী, হৃদয় পিঞ্জরে থাকি,
এবার অশ্বিনী মন কর সুখী, বলে হরি বুলি।।
১৫৭।
রতি মতি রেখো গুরু পতির পায়,
অচল নিষ্ঠা রতি গুরুর প্রতি রাখবে মনুরায়।।
চিন্তা কর গুরু পতি, ঘটিবে অবলার রীতি, দিবা রাতি থাক সাধনায়।
করলে গুরুর সঙ্গে প্রেম-পিরীতি, হবে মহা ভাবোদয়,
গুরু পতি করলে সঙ্গ, জুড়াবে তাপিত অঙ্গ অনন্ত হবে পরাজয়।।
শেষে প্রাপ্ত হবি প্রেমানন্দ, থাকবি আনন্দে সদায়,
গরু পতি করলে দয়া, অষ্টপাশে মহাময়া পাশ ছেড়ে হইবে বিদায়।
সেই শান্তিপুরে জ্যোতির ঘরে, থাকবিরে যুগল সেবায়।।
জিহ্বা লিঙ্গ কর্ন যোনি, গুরু শিষ্য সুযোগ জানি, মধুর রতি করবে সে সময়।
শেষে মহামন্ত্র বীর্য্য দানে, হবে নিস্কাম পুত্রদোয়।।
গুরু বাক্য ঐক্য ধরি, ছেড়ে দাও ব্যাভিচারী, অশ্বিনী বলি যে তোমায়।
স্বামী মহানন্দ প্রাণপতি, তোর প্রতি আছে সদায়।।
১৫৮।
অকুল ভবধি তীরে হরি দয়াময়
ভক্তিবিহীন দীনেরও দীন পার করে দিচ্ছে হেলায়।
কলি যুগ ধন্য, যে যুগেতে অবতীর্ন,
হলেন হরি শ্রী চৈতন্য, কলির জীবের ভাগ্যোদয়।।
সাঙ্গ-পাঙ্গো লয়ে সঙ্গে, এলেন হরি পরম রঙ্গে,
জগত ভাসায় প্রেম-তরঙ্গে, আতঙ্কে যমদুত পালায়।।
অনর্পিত যেই হরি নাম, পুরাতে জীবের মনস্কাম,
ভবব্যাধি করতে আরাম, নামৌষধি জীবকে বিলায়।।
পূর্ন কুম্ভ, নিত্যানন্দ, এবে এল মহানন্দ,
নামের সহিত প্রেমানন্দ, তাই দিয়ে জগত মাতায়।।
তারকচাঁদ কয় উচ্চৈঃস্বরে, এমন দিন আর হবে নারে,
এমন দয়াল পাবি না রে, অশ্বিনী তোর সময় যায়।।
১৫৯।
ভব নদীর ভাব না জেনে ধর না পাড়ি,
থাক সামাল সামাল মন ব্যাপারী।
নদীর ত্রিবীনায় তুফান ভারী।।
যে নদীর তরঙ্গ দেখে, কত যোগী ঋষি ভাবছে বসি, কিনারায় থেকে।
তারা চেয়ে আছে উর্দ্ধমুখে, (বলে) পার কর দয়াল হরি।।
যত সব সায়ারের নেয়ে, নদীর ভাব না জেনে বাদাম টেনে যেতেছে বেয়ে।
নদীর দখিন বাকের গোলায় গিয়ে, সাধ করে ডুবাচ্ছে সাধের তরী।।
প্রতি মাসে ছোটে সে নদীর বান, কত ধনীর ভরা যাচ্ছে তারা থাকবে সাবধান।
এবার গুরুর কাছে জান সন্ধান, ভব পারে যাবার ফিকিরী।
যার আছে গুরু কৃপাবল, সেই সে কেবল জানতে পারে কোন খানে কোন জল।
তার তরী যায় না রসাতলে, ও যার গুরু আছে কান্ডারী।।
তারকচাঁদ বারে বারে কয়, কে কে যাবি ভব পারে সময় বয়ে যায়।
এবার অশ্বিনী ভুলিল মায়ায়, আমি ঐ দুঃখে ঝুরে মরি।।
১৬০।
গুরু তত্ত্ব পরমার্থ কামাই যদি করতে চাও।
অন্তরে মাধুর্য্য রেখে এৗশ্বর্য্যরে ঢাকনি দাও।।
তিন পয়সার সুসার নাই তোর, লাখপতি নাম চেতাও।
ভাবের সঙ্গে নেই দেখা শুনা, মিছে কেবল ভাব দেখাও।।
করো না ধর্ম্মের আড়ম্বর, মান প্রতিষ্ঠা তাড়িয়ে দাও।
রেখে দেও ময়লা মাটি, ময়লা খাটি, ঘুচাইয়া সাচ্চা হও।।
সাধুর ভানে লুকিয়ে কেনে, বাবার ঠাকুর হতে চাও।
যে দিন নিকাশ লবে, দেখনা ভেবে, কেন পরকাল হারাও।।
পেয়েছ মনুষ্য জনম, এ হতে আর কি ধন চাও।।
হয়ে হরিবোলা, হ্রদয় খোলা, প্রেমানন্দে ডুবিয়া রও।।
মহানন্দের পদারবিন্দে, মন প্রাণ সপিঁয়া দাও।
অশ্বিনী তোর কিসের শঙ্কা, ডঙ্কা মেরে পারে যাও।।
১৬১।
তুমি যে সুখ পেয়ে ভুলেছ রে মন এ তোর মরার পন্থা।
বাঁচতে যদি চাও রে ও মন, ধারণ কর চিন্তা কান্থা।।
মরণ আছে অনেক রকম, বিচার করলে হয় তারতম্য, জানা যায় সে নিয়ম।
দুটি মরণ উত্তম অধম, আছে করলি না সে চিন্তা।।
অধম মরার এই প্রণালী, আছে খড়গ হাতে কাম আর কলি, দিচ্ছে নরবলী।
বলি লয় সে মায়া কলি, ও সে জীবের জীবন হন্তা।
অধম মরা যে জন মরে, জন্মের মত ছারেখারে, যায় সে একবার।
প্রাণ হারায় সে ঘোর দুস্তরে, দংশে সর্পিনী বিষ-দন্তা।
উত্তম মরার দশটি লখন, দশম দশায় হলে পতন, সে হয় প্রেমের মরণ।
প্রেমের মরা যে জন মরে, প্রাপ্ত হয় সে হরি-কান্তা।।
শ্রীগুরুচাঁদেরই বচন, ভবে প্রেমের মরা মরে যে জন, সে পায় অখন্ড জীবন।
দেখে কোটি ব্রহ্মার পতন, আশ্রয় করে অঘোর পন্থা।।
১৬২।
আমায় কি সাপে কামড়ালো সখী,
সখী আমায় কি সাপে কামড়ালো ।
তার বিষে তনু জ্বর জ্বর জীবন জ্বলে গেল।।
কাল বরণ সাপ লো সখী, দেখতে বড় ভাল।
তার চাউনিতে কর্ম্মসারা পাগোল করে নিল।।
কদম্বেরই মূলে সাপ লো ফণা ধরে ছিলো।
আমি কি খনে জল আনতে গেলাম মরমে দংশিল।।
কোন বা দেশে ছিল রে এ সাপ, কোন বিধি গড়িল।
অবলা বধিতে সাপ বৃন্দাবনে এল।।
ওঝা বৈদ্য মানে না সাপ, উপায় কি তায় বল।
সাপ সবারে এরায়ে এসে আমাকে দংশিল।
কাল সাপ ধরব বলে শিব সাপুরে হল।
সাপ ধরব ধরব বলে ঘরের বাহির হল।।
এ সাপে কামরাবে যাকে তার তো কপাল ভালো।
এবার বিষয় ভুজঙ্গ বিষে অশ্বিনীর প্রাণ গেল।।
সন্ধ্যা আরতি
১৬৩।
জয় যশোমন্তের তনয়, জয় জগদীশ।
জয় জয় জগদীশ হরি জয় জগদীশ।।
সাঝেঁর বাতি দাওহে সবে, গোরস তৈলে।
আরতি কর হরিচাঁদের ভক্ত মিলে।।
অনলে সুগন্ধি ধূপে ধূপতি জ্বালিয়ে।
চরণে তুলসী দাও হে চন্দন মাখিয়ে।।
অমল কমল ফুলে সাজায়েছ ডালা।
কমলা সেবিত পদ সেবনে কমলা।।
ব্যজনে ময়ুরপূচ্ছ আর তাল পত্র
সুরমা রমণীগণে ব্যজনে শ্রীপাত্র।।
শঙ্খবাজে ঘন্টাবাজে, বাজে করতাল।
মধুর মৃদঙ্গ বাজে, শুনিতে রসাল।।
দিবাকর, শশধর, দিবাকর সূত।
শঙ্কর, শঙ্করী নাচে দেখিতে অদ্ভুত।।
মৃত্যুঞ্জয়, দশরথ নাচে, নাচে হীরামন।
প্রেমে ভরা মাতোয়ারা হয়ে মহানন্দ
ভনে তারকচন্দ্র দাসে আরতী কাহিনী।
আরতি ইতি ভক্ত গণ কর হরিধ্বনি।।
ভজ হরি কও হরি লও হরির নাম।
হা রে হা রে হা রে হরিশ্চন্দ্র গুণধাম।।
(প্রভু সবেরে করিলে দয়া, আমায় কেন বাম)
হা রে হা রে হা রে গুরুচন্দ্র গুণধাম।।
হা রে হা রে হা রে গোলকচন্দ্র গুণধাম।
হা রে (৩) মৃত্যুঞ্জয় গুণধাম
হা রে (৩) দশরথ গুণধাম
হা রে (৩) হীরামন গুণধাম
হা রে (৩) মহানন্দ গুণধাম
হা রে (৩) হরিভক্ত গুণধাম।।