মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ০৪৬-০৬০

৪৬ নং গান- তালঃ একতালা

চল যাই মন ঢাকারই শহরে,

ঢাকা যাবি প্রাণ জুড়াবি ঢাকেশ্বরী পূজা করে।

১।       দম সাহায্যে ঢাকা যাবি, তবে তার সন্ধান পাবি,

কামকে জয় করে নিবি, অষ্টদশের পরে।

ঢাকেশ্বরীর দেখা পাবি, চতুর্দলের পরে,

দিয়ে প্রেমাসক্তি করে ভক্তি, থাকবিরে তুই রূপ নেহারে।

২।       সেই মন্দিরের কাছে, দুইটি দ্বার খোলা আছে,

দুই দ্বারে তিন কর্ম চলছে, বোঝা অনুসারে।

একের খাটে এক রাখিয়ে, থাকবে নিরিখ ধরে,

এমন যুগল মিলন অসাধ্য ধন, সাধন কর কর্মের জোরে।

৩।      সেই মন্দিরের চুড়ার পরে, পরমহংস বিরাজ করে,

সপ্ত তালায় ঘোরে ফেরে, জগত আলো করে।

বিনোদ বলে পরমহংস যায় না যেন উড়ে,

হংস গেলে উড়ে পাবি নারে, খুঁজলে সারা জনম ধরে।

 

৪৭ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

আমার দয়াল গুরুচাঁদ, আর কতদিন ভাটির গাঙ্গে বাইবো তরী খান।

কুমতির কুমন্ত্রণায় তরী হল যে খান খান।

১।       কুল ছাড়িয়া মাঝ দরিয়ায় যখন আসিলাম,

ছয় বোম্বাটের পাল্লায় পড়ে প্রাণে মরিলাম।

আমি যাব উজান বাকে বেয়ে তরী খান,

মাল্লা মাঝি যারাই ছিল উল্টা মারে টান।

২।       গুরু তোমার কৃপা হলে অসম্ভব কিছু নয়,

তোমারই বাঁশরীর তানে, যমুনার জল উজান বয়।

তোমারই সুনির্মল কৃপায় ফুটাও কালা কান,

একটি বার শুনাও আমায় ঐ না বাঁশীর গান।

৩।      বিনোদ বলে ঐ বাঁশীর সুর যে জন শুনিয়াছে,

মানুষ নামে খাতায়, নাম তার উসুল হইয়াছে।

আমি কার্তিক সেই সুর শুনবার আশে পেতে রইল কান,

একটি বার শোনাও তোমার ঐ না বাঁশীর গান।

 

৪৮ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

বুঝি প্রাণ হারাই মদনের রণে,

বল গুরু বাণ এড়াইব কোন সন্ধানে।

১।       যে দিন আসলেম দুনিয়াতে, রণ বাঁধল মদনের সাথে,

আমার দুঃখের বোঝা নিজের মাথে, কেউ রইল না আমার সনে।

২।       আর আছে এক কুহকিনী, কুহক দেখায় সেই যোগিনী,

ও তার নামে যেমন কাজে তেমনি, ভেলকি খেলায় জীবন পণে।

৩।      একা আমি সেই রণে, ঘিরল তারা ষোল জনে,

সেদিন বেঁধেছিল অভিমুন্যে, তাই হল আমার জীবনে।

৪।       কার্তিক বলে হে নারায়ণ, রণস্থলে দাও দরশন,

তুমি বলে বিপদ বারণ, অন্তিমে রেখ চরণে।

 

৪৯ নং গান- তালঃ একতালা

যাসনে রে তুই পদ্মা নদীর পারে,

গেলে সেই নদীর ধারে, পড়বি ফ্যারে, ঝুল সামলাতে পারবি নারে।

১।       সেই জলে এক কুম্ভীর আছে বিকট মূর্তি ধরে,

তার নাম কামিনী, মায়াবিনী, এক ছোবলে কর্ম সারে।

২।       ছয়জন দস্যু বিরাজ করে সেই নদীর তীরে,

তোরে ফাঁকি দিয়ে, পথ ভুলায়ে, সর্বস্ব ধন নিবে কেড়ে।

৩।      সেই নদীর তরঙ্গ উঠে হুহুঙ্কার করে,

অধম বিনোদ বলে, সেই জলে, নাও ডুবিলে উপায় নাইরে।

 

৫০ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

(ও মন) ঘোড়া তোর ঘোড়া দেখি মুখ নাড়ায়,

চাল, ছোলা সব করল সারা, আরও কি যে খাবার চায়।

১।       ও তুই আনন্দেতে হয়ে বিভোর, ঘোড়ার মুখে লাগালি ডোর,

তবু তারা করতেছে জোর, গোলার মাল খাবার আশায়।

ছয়টি ঘোড়া বিষম তেজী, তার মধ্যে হয় একটি পাজি,

যা ছিল তোর পুঁজি পাজি, সেই দিকে সে মুখ বাড়ায়।

২।       ঘোড়ায় যখন ডাকে তোরে, অমনি ছড়িস ঘোড়ার পরে,

এ পৃথিবী ভ্রমণ করে, আসিস চোখের নিমিসায়।

বিনোদ বলে মনরে ফ্যারা, ঘোড়ায় তোরে করবে সারা,

হয়ে যাবে দফা সারা, যদি গোলায় মুখ ডাবায়।

 

৫১ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ভোলারে পাগলারে সাধন কি মুখের কথায় হয়,

বামন হলে হাত বাড়ালে চন্দ্র কি আর ধরা যায়।

১।       কথায় কি আর সে ধন মেলে, কাজের কাজী না হইলে,

জাগায় বসে মুখ বাড়ালে, তাতে কি আর হয়।

বকউল্লা আছে কত, এ জগতে কত শত,

যারা আছে কর্মে রত, দেখলে তাদের চেনা যায়।

২।       চন্দ্রলোকে যদি যাবি, চেতন গুরু সঙ্গে নিবি,

পথের সন্ধান জেনে লবি, সূক্ষ্ম সুধারায়।

হাওয়ার রকেট সৃষ্টি করে, দমকলের এক ইঞ্জিন গড়ে,

মহাশূন্যে যাবি উড়ে, লাগবি গিয়ে চাঁদের গায়।

৩।      চাঁদের গায়ে সরোবরে, দুইটি হংস বিরাজ করে,

হংস দুইটি খাবি ধরে, যাবে জন্ম-মৃত্যু ভয়

বিনোদ বলে মনরে আমার, সাধন কি তুই পাবিরে আর,

আসা যাওয়া হয় বারে বার, সাধের জনম চলে যায়।

 

৫২ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ও মন ভোলা তোর টোলা রাখিস খবরদার।

ও সে মদনা চোরা উকি মারে, টোলার দিকে লক্ষ্য তার।

১।       তোর টোলার মধ্যে রত্ন পোরা, না বুঝে তুই হলি হারা,

ফাঁকতালে সেই মদনা চোরা, চুরি করে অনিবার।

রিপুর বসে আপন ভুলে, দিলিরে তোর টোলা খুলে,

সব গেল তোর গোলমালে, বুঝলি না তুই কি ব্যাপার।

২।       করে ঠক বাজারে কেনাবেচা, ব্যাপার থাক আসল বাঁচে না,

বুঝলি নারে ও দিনকানা, কেন দেখিস অন্ধকার।

কি ব্যাপারে ভবে আলি, তার বা তুই কি করিলি,

মহাজনের দেনা হলি, কি জবাব দিবি তাহার।

৩।      বিনোদ বলে ও মন ভোলা, দেখবি যদি ভবের খেলা,

হরিচাঁদের প্রেমের মেলা, সেখানে তুই কর কারবার।

হরিচাঁদের প্রেমের বাজারে, চোরের ভয় আর থাকে নারে,

হবে দুনা ব্যাপারে সেই বাজারে, হওগে প্রেমের দোকানদার।

 

৫৩ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

(ও মন) কানা তোর খানায় পড়তে আটক নাই।

পথ থুয়ে আপথে গেলে সহজে তোর লাগবে ঘাই।

১।       শোন বলিরে ও মন কানা, সে খানা তোর আছে জানা,

বারে বারে করছি মানা, শুনেও না শুনিস তাই।

রিপুর বশে খানায় পড়ি, যাবিরে চিৎ গড়াগড়ি,

শেষে করতে হবে মোড়ামুড়ি, উঠতে তোর সাধ্য নাই।

২।       আসা যাওয়া এ জগতে, নয়টি খানা সেই পথে,

আটটি তার কোন মতে, একটিতে পাবি না ঠাই।

মাপতে গিয়ে সেই খানার জল, যোগী ঋষি যায় রসাতল,

বিনোদ বলে আর কত কাল, ঘুরে মরবি কানা ভাই।

 

৫৪ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

দোকানী তোর দোকান রাখিস খবরদার,

রং বেরং এর মালামাল তোর, ষোল জন তার খরিদ্দার।

১।       মহাজনে দিল চালান, ভবের হাটে না তুই হুঁশিয়ার।

খরিদ্দারের মন জোগাতে, সায় দিলি তার সাথে সাথে,

মাল গেল তোর ঘাটে পথে, লাগ ভেলকি চমৎকার।

২।       করলি দোকানে তুই বেচাকেনা, ভুল হল তোর দেনা পাওনা,

হিসাব করে তা দেখলি না, লোকসান কি বা হয় ব্যাপার।

করে শুধু আনাগোনা, কাচের দরে বেচলি সোনা,

বিনোদ বলে কুল পাবি না, (থাকতে) ঘরের বারি ইজারদার।

 

৫৫ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ও মন মাঝিরে, ও মন বন্ধুরে, তোর কি আর মন্দ বলা যায়।

তোর কাজের বেলায় নব ঠন্‌ ঠন্‌ কথার বেলায় অতিশয়।

১।       দেখে তোর ন্যাপতে ছালামত, আমার মাথায় ওঠে বাত,

ছোট হয়ে মেরে ফেললি তুই, মহাপুরুষের জাত।

তোর নামে যেমন কাজে তেমন, তা জানে তোর রাঙ্গা মায়।

২।       ছিল তোর দুইটি রমণী, তারা দুটি দিকে টানি,

হেচকা টানে মচকাইল সাধের পিঞ্জরাখানি।

অধম বিনোদ বলে, তোর কপালে কি যেন শেষ হয়।

 

৫৬ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

যদি তুই মাছ ধরতে যাবি,

সুরসিক জেলে হয়ে ত্রিবেণীতে জাল ফেলবি।

১।       ত্রিবিণায় তিনটি নদী, বহিতেছে নিরবধি,

ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবাদি, তথায় দেখতে পাবি।

যমুনাতে উজান ধারে জাল টেনে উঠাবি,

সেই তিন নদীতে তিনটি মৎস্য, একটিকে তুই ধরে খাবি।

২।       সেই মৎস্য যে খেয়েছে, তার মত আর কেবা আছে,

জন্ম মৃত্যু এড়ায়েছে, তার কাছে তুই যাবি।

মনের কথা প্রাণের ব্যাথা, তার কাছে জানাবি,

এ দীন বিনোদ বলে, কল কৌশলে, মাছ ধরা কল শিখে লবি।

 

৫৭ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

জনম ভরে করছ ত নাম সংকীর্তন,

মূলের ঘরে ভুল ফেলায়ে ডাকছ তারে অকারণ।

১।       শুধু নামে যদি হরি মিলত, সব জীবে তার দেখা পেত,

যোগী ঋষি আছে কত, করত না কঠোর সাধন।

মুখে বলত হরি হরি, মূলের ঘরে যায় তোর চুরি,

মিছে কেবল ভক্তি ধরি, দেখাচ্ছ সাধুর করণ।

২।       ভেবেছিস কি দিন রজনী, ধন হরি নেয় কাল ফণী,

বুঝলি নারে যাদুমণি, কেন যে হারালি ধন।

ফণীর মাথায় মণি আছে, তা দেখে তুই উঠলি নেচে,

হাত দিলি তুই লেজের পাছে, সাধে কি তোর হয় মরণ

৩।      হরির নামেতে যে প্রেম উথলে, ধারণ বস্তু না থাকলে,

ঢলুয়া প্রেম তারে বলে, কাম নদীতে হয় পতন।

(গোঁসাই) পঞ্চানন কয়, শোনরে বিনোদ, তত্ত্বজ্ঞানে হলি নির্বোধ,

কামের ঘরে করে আমোদ, হারালি পরম রতন।

 

৫৮ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ডাকলে যদি তারে অমনি পাওয়া যায়,

তা’ হলে মিলিত হরি, ঘাটে পথে সব জায়গায়।

১।       পূজা পার্বণ বেদাচারে, কত ভাবে ডাকছ তারে,

দেখা দিল কয় জনারে, দেখ চেয়ে দুনিয়ায়।

ভোগাদি নৈবেদ্য যত, পড়ে থাকে তেমনি মত,

ফলমুলাদি আছে কত, তা দেখি সব মানুষে খায়।

২।       মানুষের মধ্যে মানুষ আছে, সন্ধান করে লওগে খুঁজে,

না গেলে সে প্রেম সমাজে, খুঁজে পাওয়া ভীষণ দায়।

ছেড়ে দিয়ে সেই অনুমান, সাধন কর এই বর্তমান,

কর গুরুকে গোবিন্দ জ্ঞান, প্রেম ভক্তি হবে উদয়।

৩।      বিনোদ বলে মাতাপিতার, চরণ পূজা কর এবার,

পূজা হবে সব দেবতার, বেদ শাস্ত্রে তাহা কয়।

পিতৃশক্তি কর ধারণ, মাতৃ শক্তির বাড়াও কিরণ,

লাগবে না তোর ভজন পূজন, ঘুচবে ভব পারের দায়।

 

৫৯ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ভাণ্ড খুলে পণ্ড করলি গোলমালে।

চাওয়ার আগে পাওয়ার দিয়ে দেনা হলি শেষ কালে।

১।       তোর ভাণ্ডে ছিল পরম রতন, একদিনও না করলি যতন,

বিলায়ে দিলি মনের মতন, দিন কাটালি প্যাঁচালে।

ভাবলি শুধু দিবানিশি, এইভাবে দিন যাবে বসি,

করলি ছাগল বিয়তি মহিষ মানসী, অকাল হল সকালে।

২।       চিনলি না অমূল্য নিধি, ডেকে ডেকে আনলি ব্যাধি,

ভুগে মলি নিরবধি, পাও ফেলায়ে বেতালে।

আসলে তোর নাইরে কিছু, যম কিঙ্করে ঘুরছে পিছু,

যে দিন তুই করবি মাথা উঁচু, রশি দিবে তোর গলে।

৩।      আর কত দিন থাকবি তবে, দেখলি না তুই একদিন ভেবে,

অসার সংসার পড়ে রবে, কি আছে তোর কপালে।

বিনোদ বলে মনরে ভোলা, খেললি শুধু মায়ার খেলা,

মূলের ঘরে করে হেলা, ভুলে রলি মাকালে।

 

৬০ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

গুরুজী আজব খেলা দেখলেম দুনিয়ায়,

সে খেলা দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছের প্রায়।

১।       এক বেটির তিনখানি চরণ, ও তা উর্ধে নিরূপণ,

তার উপরে খেলা করে দেবতা তিন জন।

ও তার একজনে ভ্রুকুটি দিয়ে, কথা কয় সে পাঁচ মাথায়।

২।       বেটির খেলা বড়ই চমৎকার, সে খেলা বোঝে সাধ্য কার,

ছেলে মেয়ে ধরে ধরে করতেছে প্রহার।

বেটির তেজের মাথা আগুনে জ্বলে, বদনে ব্রহ্মাণ্ড নাচায়।

৩।      বেটির স্বামীর খবর নাই, ও সে সদা ছাড়ে হাই,

গণ্ডা পাঁচ ছয় ছেলে মেয়ে, দেখে এলেম তাই।

এ দীন বিনোদ বলে হে দরদী, এ তত্ত্ব শুনতে পেলে প্রাণ জুড়ায়।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free