গান নংঃ ১৩১-১৫০
১৩১।
ভক্তিকে যে তুচ্ছ করে, মুক্তি করে শ্রেষ্ঠ
হরিণামে পাপ খন্ডে, ব্যাখ্যা করে সেই দুষ্ট।।
মাঘে প্রয়াগে করলে স্নান, কোটি কন্যা করলে দান,
সুমেরু সুবর্ন দান, নাম হতে অতি নিকৃষ্ট।।
ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বরে, নামের গুণ না বলতে পারে
হরিণামে কি ফল ধরে, কে তাহার নির্দিষ্ট।।
কোটীতীর্থ করলে ভ্রমন, কল্পন্তর করলে যোগ সাধন,
নামের তুল্য না হয় কখন, ভাগবতে বলে স্পষ্ট।।
সত্যভামা করি ব্রত, পেয়েছিল কিঞ্চিত তথ্য,
হরি হতে নাম মাহাত্ম্য, ওজনেতে হল শ্রেষ্ঠ।।
তারকচাঁদের এই ভারতী, হরিনামে হল আর্তী
ঘটিবে প্রেম মধুর রতি, অশ্বিনী তোর দুরদৃষ্টি।।
১৩২।
হরি প্রেম সাগরে বান ডেকেছে ভাই,
এবার ঘুচলোরে দেশের বালাই, গেলরে ভবের বালাই।।
যত কুল মান ছিল, অকুলেতে ডুবিলো,
অভিমানের পাহাড় ভেঙ্গে উথলি উঠিল।।
কত কুলজার কুল ভেসে গেল, গেলরে কুলের বড়াই।।
যত ভক্ত বেহাল, হয়ে প্রেমরসে মাতাল,
ব্রহ্ম তালে, রূদ্র তালে, কেউ ধরেছে তাল।।
মাতাইলো আকাশ পাতাল জগতে কেউ বাকী নাই।।
দেখে প্রেমের তরঙ্গ, ঘুচলো কাম কলির রঙ্গ,
হরি ভক্তের নফর হয়ে নাচে অনঙ্গ।
কলি বাঞ্চে সাধুর রঙ্গ, রাজ্যধনে কার্য়্য নাই।।
যত যাগ য্ঞ্জ ছিল, তাহা অযোগ্য হল,
হরিণাম সংর্কীতন মহাযঞ্জে , সবে মাতিল।
যাহা পঞ্চজনার বাঞ্চাছিল, পুরাতে ছিল।।
গোঁসাই তারকচন্দ্র কয়, হল হরিচাঁদ উদয়,
অশ্বিনী তোর কিসের শঙ্খা, গেল ভব ভয়।
দয়াল মহানন্দ আছে সহায়, তিনি সেই দয়াল নিতাই।।
১৩৩।
উত্তাল তরঙ্গ দরিয়ায়, ডুবদে’রে প্রেমের গোলায়,
এবার ঝাঁপ দেরে প্রেমের গোলায়।।
কলিযুগ ধন্য, জীবের ঘুচাতে দৈন্য,
ওড়াকান্দি অবতীর্ন, হরি চৈতন্য।
হরিণাম বিনে গতি নাই অন্য, পান কর নাম রসনায়।।
হরি প্রেম মদে হও রে বিভোর, নেশা ছুটবে নারে তোর,
হরিণামের গাঁজা খেয়ে, হও রে নেশাখোর।
মহাভাবে বিভোর হয়ে, ডুবে থাকরে সদায়।।
মহাভাবের মাতাল হও, সদায় হরি গুণ গাও,
সাধুর দোকানে, ভক্তি রতন কিনে লও
গুরু চিন্তা- চন্দন অঙ্গে মাখাও, সাধুর বাতাস লাগবে গায়।।
বড় সুযোগ পেয়েছ, কেন বসে রয়েছ,
হরি বলে বাহু তুলে, আনন্দে নাচ।
হরি ভক্তের কাছে প্রেম ধন যাচ, দিবে প্রেম তুলে হ্রদয়।।
দয়াল নিতাই চাঁদ যিনি, মহানন্দ চাঁদ তিনি,
সেই বুঝি নগরে এসে দেয় হরিধ্বনি।
এবার ডুবাইলো ধনী-মানী, অশ্বিনী ডুবল না তায়।।
১৩৪।
মনরে খেপা, খেপে যা এবার
আপন সেরে কামের ঘরে, অনুরাগের কপাট মার।
খেপ যদি খেপার মত, হ‘গে রূপের অনুগত
তেয়াগিয়া আত্ম-স্বার্থ, প্রেম পাথারে দেরে সাতাঁর।।
যদি হবি সুজন খেপা, ধারণ কর রূপের ছাপা,
গুরুর কাছে কর রে রফা, ভোগ বিলাসের দফা সার।।
ত্যাজ্য কর বেদের বিধি, ছেড়ে দিয়ে অষ্টসিদ্ধি,
বিবেক ভাইয়ের দিয়ে বৃদ্ধি, চল আনন্দ বাজার।।
এক খেপেছে গোলকচন্দ্র, আর খেপেছে মহানন্দ,
দিয়া হরি প্রেমানন্দ, খেপাল ত্রি-সংসার।।
তারকচন্দ্র ডেকে বলে, যে জন বাবার খেপা ছেলে
সদায় থাকে বাবার কোলে, বুঝলি না অশ্বিনী ছার।।
১৩৫।
সহজ অনুরাগে খেপেছে যে জন
হ‘য়ে আত্মহারা, পাগোলপারা, মানে না বিধির বন্ধন।।
বায়ু-পিত্ত-কফের নাড়ী, ঘুরছে মাথা চঞ্চল ভারী,
পোড়ায়ে সে মায়াপূরী, জ্বালিয়া প্রেমের হুতাশন।।
অন্তরে অনন্ত দাহ, জ্বলিতেছে অহরহ,
ঠিক যেন সেই খিপ্ত সিংহ, সাই বলে করছে গর্জন।।
হয়ে সেই রূপের আশ্রিত, ব্রহ্মা দস্যুর দৃষ্টির মত,
কাদিতেছে অবিরত, পলকহীন দুটি নয়ন।।
ঠিক যেন সেই পাগোলভোলা, ঘুচাইয়া ভবের জ্বালা,
প্রেমন্মোত্ত হরিবোলা, তার আর কিছুতে রয়না মন।।
মহানন্দ ডেকে বলে, সহজে কি মানুষ মেলে
অনূরাগী না হইলে, অশ্বিনীর নাই সে সাধন।।
১৩৬।
ভালবেসে গুণমণি এদশা করেছেন তিনি,
মন প্রাণ হরিয়ে নিয়ে, আমায় করলেন পাগোলিনী।।
আমায় বড় ভালোবেসে তাইতে রাখলো না বাসে,
দীন হীন দণ্ডীর বেসে, করল আমায় কাঙ্গালিনী।।
সে যাহারে ভালবাসে জাত কুল মান আগে নাশে,
সর্ব্ব ধন নিয়ে শেষে, করে মণি হারা ফনী।।
অসহ্য বিরহ আগুন মরমে জ্বলিছে দ্বিগুণ
কি বলিবো গুণমণির গুণ, করল আমায় বিরহিনী।।
ঘটায়েছে বিষম দশা, সদায় বাড়ে প্রেম পিপাসা
ছোটে না তার প্রেমের নেশা, কেঁদে বেড়ায় দিন-রজনী।।
মহানন্দের হৃদয়ের ধন, প্রেম ছাড়া সে রয়না কখন
অশ্বিনী করলি না যতন, কিসে পাবি রতন মণি।।
১৩৭।
অহৈতুকী কই ঘটলো অবলার ভাব,
মুক্তির আশে, আছ বসে, হল না সেই ভক্তি লাভ।।
ধর্ম্ম-পূন্য বোঝাই করি, সাজায়েছে মানব তরী,
যেতে চাও বৈকুন্ঠপুরী, করতেছ ধর্মের গৌরব।।
না পাহিলা নব অনুরাগ, মরমে লাগল না সে দাগ,
ঘটলো না বৈরাগ্য বিরাগ, পেলেম না সে মহাভাব।।
মহাভাব ভাবিনীর রসে, মহানন্দ বেড়ায় ভেসে
গোলকচন্দ্র সেই রূপ-রসে, করে হরি সিংহ রব।।
তারকচাঁদ সেই রসে মাখা, পেয়ে সে স্বরূপের দেখা,
অশ্বিনী তুই এমন বোকা, নিলি না সেই রুপের সৌরভ।।
১৩৮।
হরি তোমায় করি আর্শীবাদ,
এবার পুরুক তোমার মনোসাধ।
ওহে গুণনিধি, নিরবধি কর রাধার প্রেমাস্বাদ।।
আমার সুকৃতি যত, তোমায় অর্পিলাম নাথ,
ভক্তের সঙ্গে রসরঙ্গে হও প্রেমে মত্ত।
আমি বল্যানীর ঠাঁই এ ভিখা চাই, ঘুচুক তোমার সব প্রমাদ।।
তুমি মহাসুখে রও, মহারাসে রও,
কান্তিময় কদম্বডালে বাশরী বাজাও।
প্রেমানন্দে রাধার গুণগাও, পুরাও ব্রজবাসীর সাধ।।
প্রিয় রাখালগণ লয়ে, দেহ গোষ্ঠেতে গিয়ে,
চিত্ত সিংহাসনে বস মহারাজ হয়ে।
আমার হৃদপদ্মে পাদপদ্ম দিয়ে, কর শাসন সিংহনাদ।।
অন্তরঙ্গ সখীগণ, লয়ে শ্রী মধূসুদন,
সহস্রার কুঞ্জেতে গিয়ে, হও যুগল মিলন।
তোমার প্রেমময়ী রাইকে নিয়ে, কর আনন্দ আহলাদ।।
গুরুচাঁদের এই বাণী, তুই শোনরে অশ্বিনী,
হরিকে আর্শীবাদ করা প্রলাপ কাহিনী
ওরে তুচ্ছ মূঢ় মুখে উচ্চ কথা, ভজনে পড়বি বাদ।।
১৩৯।
হরিদাস খুজে পেলাম না ত্রিলোকে
হরিদাস পরিচয় দেওয়া, মিছেলোকে ভুল বকে।।
ভক্তের অধীন, নাম ভক্তাধীন, বলে তারে সব লোকে,
ও সে ভক্তের বোঝা বয়ে ফেরে, বিচারে দাস হবে কে।।
খুজে আগম নিগম, অনেক রকম, সাধন করে সাধকে
তারা মেরে মজা, পাপের বোঝা, উঠাইয়ে দেয় হরিকে।।
ধ্রুব প্রহ্লাদ, হয়ে অহলাদ, হরিবলে পুলকে,
তাদের বিপদের ভার, হরি আমার, ধারণ করে মস্তকে।।
অন্তরঙ্গ কি বহিরঙ্গ, ভুলোকে কি গোলোকে,
তারা সকলে হরিকে খাটায়, হরির খাটুনি খাটে কে।।
অশ্বিনী কয় দিন বয়ে যায়, জানাব কি তোমায়,
এবার জেনে শুনে যাহা কর, তোমা বিনে আর আছে কে।।
১৪০।
আমার এক চাকর আছে ভাই,
মনের ভাব জেনে সে কার্য্য করে, হারে এমন নফর দেখি নাই।
ও তার গুণের কথা, বলব কোথা, গুণের বলিহারী যাই।
যখন যাহা বাঞ্ছা করি, পলকে না হতে দেরী,
অমনি দেয় সে যোগার করি, হারে তার মান-অভিমান নাই।
সে কোথায় থাকে, কেউ না দেখে, তারে খুঁজে নারে পাই।।
যখনে ঘুমে থাকি, সে তখন দেয়গো চৌকী,
আমার সুখেতে সুখী, হা রে তার আত্মসুখ আর নাই।
আমার পিপাসার জল, ক্ষুধার অন্ন, মনে করিলে অমনি পাই।।
খাটনির বিরাম নাই মোটে, সে পাটনি হয়ে পারের ঘাটে,
পার করে দেয় নিষ্কপটে, হারে তার পারের মাশুল নাই।
আমার এই বাসনা রাত্রি দিন, মরি লয়ে তার বালাই।।
সে আমার এমনি ভৃত্য, কে জানে তার মাহাত্ম্য,
কিঞ্চিত জানিয়া তত্ত্ব, পাগোল হয় ভোলানাথ সাই।
ও সে ত্যাজে কাশি, শ্মশানবাসী, অঙ্গে মাখে চিতার ছাই।।
কখন শ্যাম, কখন শ্যামা, ত্রেতায় রাম অপার মহিমা,
ও রূপের তার নাই উপমা, ভারত পুরানে শুনতে পাই,
ও সে ওড়াকান্দি হরিচন্দ্র, নবদ্বীপ ছিল নিমাই।।
অশ্বিনী তুই ভ্রান্ত মনে, তারে চাকর বলিস কোন পরানে,
শঙ্কা নাই কি তোর মনে, চুপে থাক শ্রীগুরুর দোহাই
সে যে কোটি-ব্রহ্ম শিরোমণি রে, তার তুল্য দিতে নাই।।
১৪১।
হরি ভজব কি আর তোমায়,
ইচ্ছা হয় ও দয়াময়, ভজসে আমায়।
আমার বলতে যে ধন ছিল, সব দিয়াছি তোমায়,
আমি তোমার ধন তোমাকে দিয়ে, বসে আছি তোমার আশায়।।
ভক্তের অধীন, নাম ভক্তাধীন, বলে সবে তোমায়
(দয়াময় ও দয়াময়)
তুমি ভক্তের বাঞ্চা পূর্ন কর, আমি ঠেকাবনা সে দায়।।
এ দেহের ভার ঘুচাইতে, যদিচ দুঃখ হয়,
তোমার দুঃখ আমায় দিয়ে, তুমি সুখে থাক সদায়।।
ভক্তগণ ভক্তির গুণে, বেধেঁ তোমায় ঘুরায়,
আমি সে ধর্ম্মে দেই জলাঞ্জলি, যাতে তোমার শাস্তি না হয়।।
হরিচাঁদের প্রেম সাগরে, ভাসি শেলকার প্রায়,
দয়াল মহানন্দের এই বাসনা, অশ্বিনী যেন ডুবে রয়।।
১৪২।
চন্দ্র তূল্য অভিমন্যু পল রণে,
গিয়ে দ্রোণ বুহ্যমধ্যে নিগম না জেনে।।
মাতুল যাহার শ্রীকৃষ্ণ ধন, পিতা যাহার নর-নারায়ণ,
সহায় থাকতে আত্মস্বজন মল পরাণে।।
তত্ত্ব-নিগম না জানিলে, কি হয় গুরু সহায় বলে,
রক্ষা নাই তার কোন কালে, কাম-দ্রোণের বাণে।।
তত্ত্ব-নিগম জান আগে, জয় কর রিপু ছয় আগে,
কামদ্রোণকে হঠাও আগে, সূবুহ্য সন্ধানে।।
তত্ত্ব-নিগম যে জন জানে, টলে না কাম দ্রোণের বাণে,
যুগল মিলন নিশি দিনে, দেখে নয়নে।।
তারকচাঁদ কয় করে বিক্রম, শোন বলি অশ্বিনী অধম,
শিক্ষা দিব তত্ত্ব-নিগম, থাক চেতনে।।
১৪৩।
পঞ্চ-আত্মা পান্ডবের সহায় হও শ্রীহরি,
দূর্মতি দুষ্ট দুর্যোধন মম অরি
দেহ কুরুক্ষেত্র মাঝে, সেজে এল রণ সাজে,
সঙ্কট তরঙ্গ মাঝে ডুবে মরি।।
ধর্মাত্মারূপ ধর্ম্মসূত, সদায় তোমার অনুগত,
ডাকে অনুরাগ বৃকোদর কত, গর্জ্জন করি।
সুক্ষ রসরূপ বীর ধনঞ্জয়, ডাকে তোমায় দীন দয়াময়,
সারথীর বেশে হও উদয়, কৃপা করি।।
দম রসরূপ ডাকে নকুল, দম রস সহদেব আকুল,
এ বিপদে হও অনুকুল, বিপদ হারী।।
ভক্তিরস রূপ যাঞ্জসেনী, ডাকে তোমায় চিন্তামণি,
ভক্তি-বিহীন দ্বীন অশ্বিনী এস মুরারী।।
১৪৪।
আয়রে ও মন মত্ত করি,
আমরা দুজন হয়ে, সুজন গুরুর চরণ ধরি।।
সংসার কানন, করিয়া দলন, যথা গুরু, করি অন্বেষণ।
পেলে দরশন জুড়াবি জীবন, শেষে প্রেমানন্দে নৃত্য করি।।
সংসার কাননে আর কত দিন রব, যথা আছে গুরু তথা মোরা যাব,
চরণ ভজিব, প্রেমেতে মজিব, নেচে দেখব ঐ রূপ নয়ন ভরি।।
যদি গুরু তোরে করে আরোহণ, নিবে গুরু তোরে নিত্য বৃন্দাবন,
যথা শান্তি নিকেতন, শান্তি অনুখন, সেথা রাস কররে রাসবিহারী।।
মহারাসে গুরু হয়ে রসেশ্বর, রাসেশ্বরী লয়ে করে রাসবিহার
মহারাস হেরিব, মহরাস করিব, তথা মেতে রব প্রেমরস পান করি।।
গুরু মহানন্দ লয়ে প্রেমরস, প্রেমসুধা দিয়ে, করলেন জগত বশ,
অশ্বিনী নীরস নিলি না সে রস, তুই হলি না রাসের অধিকারী।।
১৪৫।
হাট কর মন সাধনগঞ্জ, মদনগঞ্জ যাস না ভুলে।
তবে প্রাপ্ত হবি সিদ্ধিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ যাবি চলে।।
মদনগঞ্জের এমনি অবিচার (হা রে) সে হাটে হয় কলি রাজার ছয় তশীলদার,
তারা ফাকি দিয়ে রং দেখায়ে ধন কেড়ে লয় লাভে মূলে।।
নারায়ণগঞ্জ গেলে আমার মন তার বামেতে লক্ষীগঞ্জ পাবি দরশন ,
কত যোগী ঋষি দিবানিশি কান্দে ঐ রূপ দেখব বলে।।
তার দক্ষিনে গোপালগঞ্জ রয় (হারে) তার বামেতে রাধাগঞ্জ কিবা শোভা পায়,
যে জন অটল মানুষ, প্রেমে বেহুঁশ, সেই মোকামে যায়গে চলে।।
সেই মোকামে যেতে যদি চাও (হারে) হরিণামের সাদা বাদাম টেনে এবার দাও,
হরির নামের গুনে ছারবে প্রেমবায়ু, চলবে তরী নামের বলে।।
সেই দুই মোকাম হয়ে একত্তর (হারে) ওড়াকান্দি করছে লীলা অতি চমৎকার,
গোঁসাই তারকচাঁদের বাঞ্চা এবার, অশ্বিনী তোর নাই কপালে।।
১৪৭।
সাধের এক ময়না পুষে ঘটলো যন্ত্রনা।
কত চাল ছোলা তার ঠোঙ্গায় দিলাম,
পাখী তোর ঘ্যাজ ঘ্যাজি বোল তাও গেল না।।
সাধ করে পুষেছি ময়না, তোরে সাজাবো বলে ভক্তিরণে গড়েছি গয়না,
পাখি শান্তি হরিচাঁদ বলে না, আমার এই খেঁদে আর প্রাণ বাঁচে না।।
শোন বলি ও ময়না পাখি, এবার হরি গুণ গানে আমায় কররে সুখী,
ও সেই কাল বিড়ালকে দিব ফাঁকি, তা হ‘লে ভবপারের ভয় আর রবে না।।
কত না সমাদর করে, কত চিনি সন্দেস মন্ডা মিঠা খাওয়ালাম তোরে,
ব‘লবি হরি কথা বদন ভরে, অন্তরে ছিল আমার এই বাসনা।।
রেখে মোর হৃদি পিঞ্জিরায়, কত দিবানিশি হরি কথা সুধালাম তোমায়,
পাখীর তাতে হল না ভাবের উদয়, চিরদিন রইলো মনে এই বেদনা।।
অশ্বিনী মনো দুঃখে কয়, পাখি হরি-গুরু বোল বোলে না করি কি উপায়,
ও সে বাহ্য কথা বলে সদায়, পাখি তোর জুঙ্গলী ভাষা ত্যাগ হল না।।
১৪৭।
শ্রীধাম ওড়াকান্দি চল যাই, এমন দিন আর হবে না রে ভাই
এল দয়া করি, দয়াল হরি, হেরে তাপিত প্রাণ জুড়াই।।
প্রভুর মনের অভিলাস, জগত করতে হরিদাস,
হরিচন্দ্র নামে এবার হ‘য়েছে প্রকাশ।
এবার পুরাতে ভক্তের অভিলাস, এল ক্ষীরোদের গোঁসাই।।
প্রভু বলছে বারে বারে, ক‘র সত্য অঙ্গিকার,
হরিনামটি বিনে জীবের গতি নাইরে আর,
হরি নাম ভিন্ন, গতি নাই অন্য, সাখি তিনকড়ি গোঁসাই।।
যত যোগী-ঋষিগণ, তারা ছেড়ে যোগ সাধন,
বৈষ্ণবের কুটি নাটি দিয়ে বির্সজন,
এবার প্রেমানন্দে করে কীর্ত্তন, হরিবলে ছাড়ে হাই।।
অন্য তন্ত্র মন্ত্র ধ্যান, ছাড় ধর্ম্ম কর্ম ঞ্জান,
প্রেমানন্দে কর হরির নামামৃত পান,
হরি প্রেম সাগরে উঠেছে বান, আনন্দের আর সীমা নাই।।
গোঁসাই মহানন্দ কয়, যে জন ওড়াকান্দি যায়,
গয়া কাশী দিবানিশি তারা দেখতে পায়,
গোঁসাই তারকচাঁদ কয় দিন বয়ে যায়, অশ্বিনী তোর ভাগ্যে নাই।।
১৪৮।
কৃপাসিন্ধু দীনবন্ধু হরি দয়াময়।
অনন্ত না পেয়ে অন্ত রে নাম রা’খলেন অনন্তময়।।
রসবতী শ্রীমতি রমন, প্রেম রসেতে তনু মাখা বাঁকা দু-নয়ন।
মুখে মৃদু হাসি, করে বাশি রে, মোহন চুড়া হেলছে বায়।।
ভক্ত চকোর মনোমোহন, ভক্ত বাঞ্চা কল্পতরু চারু-চন্দ্রানন,
বনমালা গলে দোলে দে‘খলে তাপিত প্রাণ জুরায়।।
ব্রহ্মার বাঞ্চিত সেই ধন, কলির শেষে বঙ্গদেশে ক‘রলেন বিতরণ।
পাষন্ড করিলেন দলন, জগত ভাসাও প্রেম বন্যায়।।
কলি জীবের বড় সৌভাগ্য, কলি যুগে প্রচারিল হরিনামযঞ্জ,
তারা তুচ্ছ করি চতুবর্গ প্রেম রসেতে মেতে যায়।।
গুরুচাঁদ সেই প্রেমের ভান্ডারী, গোঁসাই মহানন্দ তারকচন্দ্র বিতরণ কারী,
এবার দিচ্ছে জীবের করে ধরি, অশ্বিনী পেল না তার।।
১৪৯।
গুরু কি ধন চিনলি না মন মানব জনম যায় বিফলে।
ও তোর প্রেম অনুরাগ ভক্তি বিবেক, হলো না তা যাবার কালে।।
মন গুরুর সহযোগে, স্থুলের ঘর বাধ আগে,
প্রবর্তে অনুরাগে ফেলাও মনের কপাট খুলে,
এবার যে ঘুচাবে মনের আধার, ঠিক কর তায় গুরু বলে।।
গুরু ঠিক হলে পরে, গিয়ে সাধকের ঘরে,
এ দেহ সাধ তারে, সদয় হবে সাধন বলে,
হলে গুরু সদয় প্রেমের উদয়, দেখবি রে তোর হৃদ কমলে।।
গুরুমুখের পদ্মবাক্য, হৃদপদ্মে কর ঐক্য,
এ দেহ হবে সূক্ষ, কাজ কি তোর মোক্ষ ফলে,
গিয়ে সিদ্ধির ঘরে, পাবি তারে, অনন্ত সাগর মিলে।।
শ্রীগুরু অনন্তময়, অনন্ত অন্ত না পায়,
যাবি সে গুরুর কৃপায়, অনন্ত সাগরে চলে,
ও তোর কাম মহাকাম হবে বিরাম, দেখবি সে রূপ দ্বিদল দলে।।
বলে তারক রসনা, অশ্বিনী সে রস নে না,
যে রস তোর উপাসনা, গুরু দিল কর্ণমূলে,
ও তোর সাধনের ধন, মহানন্দ, প্রাণান্তে তুই যাসনে ভুলে।।
১৫০।
মনা ভাই আয় না রে যাই তীর্থ ভ্রমনে,
করব মনের মত তীর্থ ভ্রমন, তীর্থরাজ আছে গুরুর চরণে।।
তুমি আমি মিলিয়া দুজন, গয়া গঙ্গা তীর্থ কাশী করিব ভ্রমন,
আছে গুরুর পদে শ্রীবৃন্দাবন, সব তীর্থ বিরাজ করে সেখানে।।
শুনেছি শ্রীগুরুর মুখে, ওরে সাধুসঙ্গ মহাতীর্থ চল পুলকে,
তথায় তীর্থ লাখে দুই, প্রেম গঙ্গা ঢেউ খেলে রাত্রি দিনে।।
ধ্রুবময়ী গঙ্গা যাহার নাম, যেতে সাধুসঙ্গ মহাতীর্থ বাঞ্চা অবিরাম,
গেলে ভব ব্যাধি হবে আরাম, রূচি হবে নাম সুধা পানে।।
গুরু পদে আছে প্রেম তীর্থ, হরিচাঁদ দুলবে হৃদ আঙ্গিনে।।
ত্রিজগত করতে পবিত্র, আমার হরিচন্দ্র অবতীর্ন লয়ে প্রেমতীর্থ
বলে মহানন্দ জেনে তত্ত্ব, অশ্বিনী ঝাঁপ দে প্রেম গঙ্গাস্নানে।।