মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ০৯১-১০৫

৯১ নং গান- তালঃ একতালা

পরম দয়াল আমার দীনবন্ধু হরি,

হীরামনকে করলে দয়া রাম রূপ ধারণ করি।

১।       পাপী তাপী উদ্ধারিতে, হরি এলো এ জগতে,

করল লীলা ভক্তের সাথে, ভক্তের মনোরঞ্জনকারী।

২।       ভক্তের অধীন নাম ভক্তাধীন, ভক্তের বোঝা বয় চিরদিন,

ভক্তের লাগি হয় দীনহীন, ভক্তের নাম হয় কাণ্ডারী।

৩।      হরিপাল সে জীবনের দায়, কেন্দেছিল গহন বাদায়,

তাইতে আমার দীন দয়াময়, প্রাণ বাঁচায় কাঁধে চড়ি।

৪।       কমল দাস বৈরাগী ছিল, কৃষ্ণ মূর্তি দেখতে পেল,

আমার গোলোকচাঁদকে দেখা দিল, চতুর্ভুজ রূপ ধরি।

৫।       হরিচাঁদের লীলা খেলায়, পাপী তাপী পার হয়ে যায়,

অধম বিনোদ বলে আমার বেলায়, রইল কেবল যমপুরী।

 

৯২ নং গান- তালঃ একতালা

হরি বিনে তরিবারে মন তোর উপায় নাই।

যা আছে তোর পুঁজিবাটা ঐ চরণে দেওয়া চাই।

১।       কোথা আলি মনা, জানিস কি তুই তার ঠিকানা,

সে বিনে তুই কুল পাবি না, কার জোরে করিস বড়াই।

২।       সে যে দীন দয়াময়, বিশ্ব চলে তার ইশারায়,

দীন থাকতে ভজ তার পায়, চরণ তলে দিবে ঠাই।

৩।      খেলবি কত মায়ার খেলা, চেয়ে দেখ তোর ডুবল বেলা,

তারে যদি তুই করিস হেলা, দিবি কার দোঁহাই।

৪।       পরাণ ভরে ডাকরে তারে, ভাসিয়ে দুটি আঁখি নীরে,

বিনোদ বলে কৃপা করে, পারে নিবে দয়াল সাই।

 

৯৩ নং গান- তালঃ ঠুংরী

হরি বল মন রসনা, সাধের জনম আর হবে না।

মানব জনম দুর্লভ জনম হেলায় খোয়াইও না।

১।       আশি লক্ষ জনম পরে, মানুষ জনম খানা,

কর্মফলে ঘুরতে হবে, কান্দিলে আর সারবে না।

২।       ত্রিশ লক্ষ বৃক্ষ জনম, নব লক্ষ মীন,

কত কষ্ট কত দুঃখ, তাও কি মনে পড়ে না।

৩।      দশ লক্ষ কৃমি জনম, কত দুঃখ যাতনা,

এগার লক্ষ পক্ষী জনম করে, গেছে দিন কানা।

৪।       বিশ লক্ষ পশু জনম, বিনোদের বর্ণনা,

তাহারই পড়ে মানব জনম, বৃথা জনম কাটাইও না।

 

৯৪ নং গান- তালঃ ঠুংরী

হে মোর হরিচাঁদ কি দিয়ে তোমারে বাসিব ভাল।

এ ভাঙ্গা মন্দিরে জ্বলে নাক প্রেমের আলো।

১।       জীবন কাননে ফুটে নাক ফুল,

কি দিয়ে পুজিব তব চরণ রাতুল।

ভাবিতে ভাবিতে গোনা দিন ফুরায়ে গেল।

২।       লালসায় জড়িত এ দেহ প্রাণ মন,

জ্বলিছে সদা কামনার হুতাশন।

গাইতে পারি নাক প্রভু তব গীতি মঙ্গল।

৩।      দীনের দিন ফুরাল এ দিন,

জীবন প্রদীপ হয়ে এলো ক্ষীণ।

আকাশেতে বাঁধিয়া বুক আর কত রবো বল।

৪।       বিনোদের মিনতি তব শ্রীচরণে,

দিও মোরে দেখা শেষের দিনে।

অন্য আশা নাই প্রাণের ঠাকুর দিও তব চরণ যুগল।

 

৯৫ নং গান- তালঃ একতাল

ভবে আমি বড় পাতকী, দয়াল, তোমার লাগি ঝরে না দুই আঁখি।

দয়াল হৃদ পিঞ্জিরায় হরি, কয় না আমার মন পাখী।

১।       কত জন্মের পুণ্যের ফলে হয়েছি মানুষ,

কর্মফলে ধরায় এসে হয়েছি বেহুঁশ।

এখন পথ হারায়ে কুপথে চলি, আমার উপায় হবে কি।

২।       সাধুর মুখের হরি কথা শুনি নাই একদিন,

পাপে ভরা জীর্ণ দেহ হয়ে এলো ক্ষীণ।

আমার ষড়রিপু দশ ইন্দ্রিয় হয়েছে বহির্মুখী।

৩।      কবে সাধুর সঙ্গ পাব তোমার করুণায়,

তাপিত অঙ্গ জুড়াইব ধুলি মাখা গায়।

আমার মানব জনম ধন্য হবে, (ভক্তের) চরণ ধুলি গাঁয় মাখি।

৪।       বিনোদ বলে তোমার কৃপা পাব কি জীবনে,

এক বিন্দু অশ্রুজল দিব ঐ চরণে।

সেদিন কি আর হবে আমার তোমার কৃপা পাব কি।

 

৯৬ নং গান- তালঃ রাণেটি

যারে পাখী যারে উড়ে অনন্ত সাগর পারে,

সকল ব্যাথা দূরে যাবে থাকবিরে আনন্দ পুরে।

১।       বন্ধ খাঁচায় রবি কতকাল,

দিনের শেষে ঘিরবে এসে দারুণ মায়াজাল,

শেষে সকালে তোর হবে অকাল, শিকলি কাটা হবে নারে।

২।       যে খাঁচায় তুই বসত করিলি,

নয় দরজা খাঁচাখানি ও তার সন্ধান না পালি,

শুধু প্যাচে প্যাচে ঘুরে মলি, আগম নিগম চিনলি নারে।

৩।      খাঁচার উপর সাইজি ডেকে কয়,

সে কথা তোর যায় না কানে ওরে দুরাশয়,

ও তুই ভুলেছিস বিষয় লালসায়, এ সুখে কুলাবে নারে।

৪।       গুরুর কাছে শিখে নে বুলি,

হাওয়া ভরে উড়ে চলরে দুই পাখা তুলি,

এ দীন বিনোদ বলে পরাণ খুলি, ডাকরে তারে প্রেমের সুরে।

 

৯৭ নং গান- তালঃ একতাল

যদি তুই ব্রজপুরে যাবি,

চেতন গুরুর সঙ্গ ধরে, পথের সন্ধান জেনে লবি।

১।       ব্রহ্মপুরে যাবার বেলায়, দেখতে পাবি রাস্তার গোঁড়ায়,

এক যোগিনী যোগ নিদ্রায়, তাহাকে জাগাবি।

যোগে যাগে যোগ সাধনে, উর্ধ আকর্ষিবি,

ও সে হাওয়ায় চড়ে রাস্তা ধরে, আস্তে আস্তে পথ চলবি।

২।       সেই রাস্তার প্যাচে প্যাচে ষড়বিংশ চক্র আছে,

দিবানিশি ঘুরিতেছে, চক্র ভেদ করিবি।

শেষে রাধা চক্র ভেদ করিয়ে, গন্তব্যে পৌছাবি,

এ দীন বিনোদ বলে তথায় গেলে, জন্ম মৃত্যুর ভয় এড়াবি।

 

৯৮ নং গান- তালঃ একতালা

কিবা জয় জয় হরিচাঁদ পতিত পাবন,

আরতি করে তোমার যত ভক্তগণ।

১।       কিবা ধূপ দিয়া সাজাইল সুন্দর ধূপতি,

উলু উলু ধ্বনি করে যতেক যুবতী।

২।       কিবা প্রদীপ জ্বালিল গন্ধে সুগন্ধ তৈলে,

জয়ধ্বনি দিচ্ছে সবে হরি হরি বলে।

৩।      কিবা শঙ্খ বাজে ঘণ্টা বাজে বাজে করতাল,

মধুর মৃদঙ্গ বাজে শুনিয়ে রসাল।

৪।       কিবা কংস কাশী বাজিতেছে সুমধুর স্বরে,

উঠিল মঙ্গল ধ্বনি শ্রীহরি মন্দিরে।

৫।       এ দীন বিনোদেরই নাই সাধন ভজন আরতি করিতে,

সাধের জনম চলে গেল কান্দিতে কান্দিতে।

 

৯৯ নং গান- তালঃ ঠুংরী

তোরা কে কে যাবি আয় শ্রীহরিচাঁদের মেলায়,

মিলছে মেলা প্রেমের খেলা দিবানিশি সবসময়।

১।       চাঁদের মেলা চাঁদের খেলা, জুটে কত ভক্ত চাঁদ,

হীরামন মহানন্দ, গোলকচাঁদ আর তারকচাঁদ।

তারা ভাবে মত্ত প্রেমে উন্মত্ত, কত ভাবের ভাব দেখায়।

২।       হরিচাঁদ চালান দিয়ে, বানায়েছে দোকানদার,

মহানন্দ প্রেম ভাণ্ডারী, গোলকচাঁদ প্রহরীর দ্বার।

তারকচন্দ্র ডঙ্কা মেরে, ঢেরা পিটায় সব জায়গায়।

৩।      উঠছে ধ্বনি প্রেম বারুণী, হয়ে সবে নির্বিকার,

ধনী মানী কর্মী জ্ঞানী, হয়ে গেল একাকার।

তথা গেলি রত্ন পাবি, ঘুচে যাবে পারের দায়।

৪।       বিনোদ বলে মন পাগলা, চান্দের মেলা দেখলি না,

অন্ধকারে ঘুরে মলি, পালি না তার ঠিকানা।

ও তুই ঘরে বসে রিপুর বশে, করে গেলি হায়রে হায়।

 

১০০ নং গান – তাল একতালা

বেলা থাকতে খেলা ছেড়ে ঘরে চলরে মন আমার

সন্ধ্যা হলে কি হবে উপায়,

অন্ধকারে পথ চলা তোর হবে বিষম দায়।

১।       আত্মভোলা হয়ে খেলা খেলেছিস আনমনে,

বাপের ধন তোর সাপে খেল গোপনে গোপনে।

পূবের বেলা পশ্চিমে গেল দিনের দিন দিনে

          অন্ধকার ঘনায়ে এক গোধূলি বেলায়।।

২।       দেশ হতে বিদেশে আলি ষোল আনা লয়ে,

          জুয়া খেলার দিন কাটালি তফিল ফুরায়ে।

          কি ধন লয়ে যাবি দেশে সব খোয়ালি রিপূর বশে

          কাঁদতে হবে দিনের শেষে গিয়ে পারঘাটায়।।

৩।      সময় থাকতে পথ ধরে চল আপন দেশে যেতে,

          ব্যাথার ব্যাথিত নাই তোর কেহ, যাবে না কেউ সাথে ।

          যেতে হবে একা একা ভাগ্যে যদি পাশ তাঁর দেখা

বিনোদ বলে শোনরে বোকা প্রাণ সঁপে দে তাহার পায়।।

 

১০১ নং গান --- তাল ঠুংরী

          ও আমার মন পিতামাতার চরণ ভজরে নয়ন জলে,

          মাতাপিতা জগতেরইই সার সে চরণ রলি ভুলে

      পিতৃ বীজ মাতৃ রসে অবুঝ মন জনম মিলে,

          প্রসব করিতে মাতা আমার কত কষ্ট পেয়েছিলে

      মায়ের বুকের সুধা খাওয়ায়ে তোমারে কত কষ্টে মানুষ করিছে,

          সেই মায়ের মনের ব্যাথা একদিন না বুঝিলে

      ধর্ম্ম অজিতে দেখি দুনিয়াতে তীর্থধামে যায় চলে,

          সকল তীর্থের সুফল ফলে মাতাপিতার চরণ তলে

      মাতাপিতা ত্যাজিয়া কোন কাজ করিলে,

          সেই কর্ম্মে হবে অধর্ম্ম বুঝবি সময় কালে

      মাতাপিতার দেহখানি তাও যতন না করিলে

          কার্ত্তিকরে তোর মানব জনম তাইতে গেল বিফলে

 

১০২ নং গান --- তাল ঠুংরী

          দেহ খাঁচায় অচিন পাখি হাওয়ায় আসে যায়,

সেত কারো পোষ মানে না এই দুনিয়ায়

      নব দরজা খাঁচায় আছে, কোন দরজা কোন খানে রয়েছে

          এবার সন্ধান জেনে গুরুর কাছে সাধন কর নিরালায়

      গুরুচাঁদ এই খাঁচা গড়ে, দিয়েছে তায় পাখী পুরে,

          ও তোর একদিন পাখী যাবে উড়ে না রবে খাঁচায়

      সপ্ত তালার খাঁচাখানি পাখীর তত্ত্ব জানে শূলপাণি,

          ও সে সাধন করে দিন রজনী নাম ধরল মৃতুঞ্জয়

      সোহম্ শব্দে পাখীর গতাগতি, তারে অহং কর দিবারাতি

          কার্ত্তিক রে তুই জগৎপতি পাবি সাধনায়

 

১০৩ নং গান ---- তাল একতালা

          হরিনামের তরী করে লওরে আমার অবুঝ মন,

          থাকবে না তোর ত্রিতাপ জ্বালা পাবিরে কৈবল্য ধন

      অজপার প্রণব ঘরে, রাখ তারে বাধ্য করে,

          চিত্ত বৃত্তির উজান ধারে, থাকবিরে তুই অনুক্ষণ

      নামে নিত্য প্রেম সঞ্চারে, গুরু বস্তু রাখে ধরে,

          দেখতে পাবি মূলাধারে, মূল শক্তির হলে চেতন

      সাত সমুদ্র তের নদী, তার ওধারে যাবি যদি,

          হাওয়া যায় নিরবধি, কর সে পথ অন্বেষণ

      বিনোদ বলে মনরে ভোলা, জপ হরিনামের মালা,

          অজপার করে মিশালা, জপরে মন সর্ব্বক্ষণ

 

১০৪ নং গান ----- তাল গড়খেমটা

          পাগোলের হাট বসেছে ওড়াকান্দি গাঁয়,

          তারা হরি নামে মত্ত হয়ে প্রেম সাগরে ঢেউ খেলায়

      আসল পাগল দয়াল হরিচাঁদ, বানায়ে মহাভাবের ফাঁদ,

          ভক্তগণের গলায় দিয়ে করেছে উন্মাদ,

          তারা হরিনামে পেয়ে আহ্লাদ, শূন্য ভরে উড়ে যায়

      এক পাগোল গোলকচাঁদ গোঁসাই, তার গুণের সীমা নাই,

          কলেরা তাড়ায়ে দিছে লীলামৃতে দেখতে পাই,

          ওসে হরিনামে করে বড়াই, গঙ্গাকে করে মাথায়

      এক পাগোল হীরামন বালা, ঘুচায়ে সংসারের জ্বালা,

          জলের উপর নেচে বেড়ায় হয়ে বিভোলা,

          ও সে ভাবাবেশে গিয়ে পাতলা, মরা গরু বাঁচায়ে দেয়

      এক পাগল তারকচাঁদ সরকার, কবিতে তাহার কত দর,

          কবির খোলায় এসে হরি বসে মাথার পর,

          লক্ষ্মীপাশায় কালী আবার, বাবা বলে শাখা নেয়

      এক পাগোল গোপাল সাধু হয়, দিব তাহার পরিচয়,

          হরিনামে দর্প করে বনের বাঘ ফিরায়,

          আবার হরিনামে মরা বাঁচায়, বিনা চাউলে ভাত রাঁধায়

      বিনোদ বলে বলব কত আর, পাগোলের সংখ্যা যে বিস্তর,

          শত শত পাগোল আছে এই দুনিয়া পর,

          আমার ইচ্ছা ছিল পাগল হবার, কেবল গোল্লায় গেছি কাম নেশায়

 

১০৫ নং গান --- তাল একতালা

          হরিনামের তরী খানি জোয়ার দিয়ে যায়,

          তোরা কে কে যাবি আয় ত্বরায়

          নৌকায় হাল ধরে গুরুচাঁদ আমার,বসে আছে হাল মাচায়

      তরীতে গোলকচন্দ্র হুহুংঙ্কার ছেড়ে,

          ভাবাবেশে মত্ত হয়ে হরিনাম করে,

          ওসে লম্ফ দিয়ে সদায় ফেরে, আগা নায় আর পাছা নায়

      তরীতে তারকচন্দ্র পাছা নায় বসে,

          দাঁড় ধরিয়ে টান মেরেছে মনের উল্লাসে,

          ওসে নয়ন জলে ভেসে ভেসে, হরিনামের সারি গায়

      গোপাল সাধু পেয়ে মধু নৌকায় উঠিয়ে,

          হরিনামের ডঙ্কা মেরে বেড়ায় নাচিয়ে,

          শেষে নামে প্রেমে মত্ত হয়ে, মরা দেহে পরাণ পায়

      আগা নৌকায় বৈঠা হাতে অশ্বিনী গোসাই,

          জল ভরা তাঁর আঁখি দুটি কেন্দে ছাড়ে হাই,

          ও সে দিয়ে হরিনামের দোহাই, প্রাণ পণে বৈঠা বায়

      বিনোদ বলে মহানন্দ পাগল হীরামন,

          নৌকার পরে স্থান পেয়েছে যত ভক্তগণ,

          এই অধমের নাই সাধন ভজন, বসে কাঁদে কিনারায়


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free