সভাগীতিঃ ২য় অংশ
খুলনার সভায় মহাপ্রভুর গমন
হইবে বিরাট সভা খুলনা শহরে।
নিমন্ত্রণ পাঠাইল প্রভুর গোচরে।।
চলিলেন গুরুচাঁদ সঙ্গে ভক্তগণ।
বিশ্বাস শ্রীযজ্ঞেশ্বর সঙ্গেতে গমন।।
শ্রীবিপিনচন্দ্র বালা শ্রীষষ্টিচরণ।
মাধবেন্দ্র চলে আর চলে বিচরণ।।
বাটী হ’তে তারাইল করিয়ে গমন।
সেই স্থানে সেই নিশি করেন যাপন।।
প্রভাতে চলেন প্রভু খালিয়া গ্রামেতে।
তথায় আছেন ভক্ত শ্রীরাই নামেতে।।
ভক্তগণ করে তথা নাম সংকীর্তন।
তাহাতে রায়ের হয় প্রফুল্লিত মন।।
সেই গৃহে করিলেন ভোজ সমাপন।
তথা হ’তে বড়দিয়া করেন গমন।।
তথা হ’তে ষ্টীমারে করি আরোহণ।
খুলনা ঘাটেতে গিয়ে পৌছিল যখন।।
খুলনা শহরে যত স্কুলের বালক।
আইল ঘাটেতে তারা হইয়ে পুলক।।
কোন ছাত্র আসিয়াছে কলিকাতা হ’তে।
বরিশাল হ’তে কেহ এল আনন্দেতে।।
ষ্টীমারে উঠিল বহু দিয়ে জয় জয়।
তীরে থেকে কেহ কেহ নিশান উড়ায়।।
উভয় স্থানেতে করে জয় জয় জয়।
ষ্টীমার ঘাটেতে হ’ল লোকারণ্য ময়।।
সারেং হেরিয়া তাহা বিস্ময় মানিল।
চমকিত হ’ল যত প্যাচেঞ্জার ছিল।।
বিস্ময় হইয়ে কেহ করে জয় জয়।
কেহ বা অবাক হয়ে দাঁড়াইয়া রয়।।
শহরেতে লোক সব যেন টলমল।
উৎসাহে আইল ধেয়ে সবে কুতূহল।।
বারনারী বহুজন আইল সেখানে।
মহানন্দে হুলুধ্বনি করে কোন জনে।।
বহুজন অভ্যর্থনা করেন প্রভুকে।
নামিলেন তীর পরে মনের পুলকে।।
শ্রীরাইচরণ বাবু মোক্তার সেজন।
বাগেরহাটেতে বাসা এল সেইক্ষণ।।
সভা উপলক্ষ্যে তিনি খুলনা আসিল।
অভ্যর্থনা হেতু প্রভু পদে প্রণমিল।।
ডাক্তার শ্রীসীতানাথ তস্য ভ্রাতুষ্পুত্র।
ব্যারিস্টারী করে পাশ বড় সুপবিত্র।।
বহু অভ্যর্থনা করি প্রভুকে লইল।
আসিয়ে ভদ্র মণ্ডলী প্রণাম করিল।।
মটর যোগেতে চলে প্রভু দয়াময়।
বহুলোক মটরের সঙ্গে সঙ্গে ধায়।।
থেকে থেকে অনেকেই করে জয় জয়।
খুলনা শহর যেন জয়নাদময়।।
দক্ষিণ দেশের ভক্ত এল বহুজন।
শ্রীগোপাল সাধু সঙ্গে লোক অগণন।।
নাহি তার লেখাজোখা কে করে গণন।
পশ্চিম অঞ্চল বাসী এল বহুজন।।
নিবারণ চন্দ্র সাধু গোসাই রমণী।
বহু ভক্ত সঙ্গে এল করি হরিধ্বনি।।
অতপর গুরুচাঁদ হরিষ হৃদয়।
নামিল সুরেশচন্দ্র বাবুর বাসায়।।
ভক্তিভরে গুরুচাঁদ নিলেন ধরিয়ে।
আনন্দাশ্রু বহে তার বয়ান বাহিয়ে।।
উত্তম আসনে বৈসে প্রভু গুরুচন্দ্র।
ভকত মণ্ডলী বৈসে হৃদয় আনন্দ।।
অধিকাংশ ভক্ত থাকে নৌকার মাঝারে।
প্রধান ভকত যত প্রভুর গোচরে।।
ভদ্র ব্যক্তি কেহ কেহ প্রভুর সকাশে।
বসিলেন তারা সবে পরম উল্লাসে।।
মিষ্টভাষে সবাকারে তোষে গুরুচন্দ্র।
শ্রবণেতে তা সবার বাড়িল আনন্দ।।
এইভাবে কিছুকাল অতীত হইল।
ক্রমে বহুজন নিজ গন্তব্যে চলিল।।
কতিপয় লোক সহ তথা অবস্থান।
নানা কথা আলোচনা করে গুরুচাঁদ।।
অতপরে প্রভু মোর করে ফলাহার।
অন্নভোজ করে সবে হরিষ অন্তরে।।
ক্রমে সবে ভোজ কর্ম সমাধা করিল।
শয্যাপরে বসি কেহ বিশ্রাম লভিল।।
সীতানাথ বাবু আর শ্রীরাই চরণ।
ভদ্র নমশূদ্রগণ একত্র মিলন।।
যে স্থানে আছে সবে উপবেশন হল।
উপনীত হ’ন তথা মিলিয়ে সকল।।
সবে মিলি এই যুক্তি করিলেন সায়।
গুরুচাঁদ সভাপতি হ’লেন তথায়।।
কেহ অসঙ্গত কেহ কহে অসঙ্গত।
এক বিজ্ঞ ব্যক্তি তাহে না হয় সম্মত।।
ঠাকুর বলিয়ে মোরা প্রণমিও পায়।
তথাপিও সভাপতি যুক্ত যুক্তি নয়।।
এতেক শুনিয়ে পরে খণ্ড সভা করি।
নীরদ বিহারী বাবু বলেন নির্ধারি।।
নীরদ বাবুর খাড়া সম্বলেতে ঘর।
রত্নগর্ভা নাম হয় যাহার মাতার।।
সেই ব্যক্তি সভা পাশে বলেন বচন।
সভাপতি যোগ্য প্রভু কি কারণে নন।।
ক’জনার পিতা ভবে হয় বিদ্যমান।
ক’জনার পিতা বল আছে জ্ঞানবান।।
পিতার কৃপায় মোরা বিদ্যাবান হই।
সে পিতাকে কোন জ্ঞানে বিদ্যাহীন কই।।
যে পিতার গায়ের রক্ত জল করিয়েছে।
বহু কষ্টে আমাদিগে মানুষ ক’রেছে।।
কত না প্রার্থনা করে ঈশ্বরের কাছে।
তাঁকে বলি বিদ্যাহীন বিদ্যা যে দিয়েছে।।
পিতার কৃপায় বাড়ে বিদ্যার গৌরব।
পিতার কৃপায় বাড়ে অতুল বৈভব।।
এত কভু নাহি হয় পুত্রের কর্তব্য।
পিতার অমান্য হ’লে নরকে গন্তব্য।।
এ বাক্য শ্রবণে কা’রো হয় জ্ঞানোদয়।
প্রভু হবে সভাপতি নিদ্ধার্য করয়।।
তথাপিও অসম্মত কাহার থাকিল।
সে কারণ খণ্ড সভা তিনবার হ’ল।।
একই সম্মত যবে হ’ল সবাকার।
সভাপতি সাজিলেন দয়ার আধার।।
অপরে বিরাট সভা হ’ল আয়োজন।
বিচিত্র ভাবেতে হয় সে সভা রচন।।
বর্ণনা অতীত শোভা ক’রেছে নির্মাণ।
বহুলোক সে সভায় করে আগুয়ান।।
সভাপতি হইলেন প্রভু গুরুচাঁদ।
নক্ষত্র মণ্ডলে যথা শোভে পূর্ণচাঁদ।।
অপরূপ শোভা তাহে ধারণ করিল।
যথাযোগ্য স্থানে সবে আসন লভিল।।
ডিপুটি ইনস্পেক্টর এস.ডি.ও. আদি।
উকিল মহুরি বহু বসিল ইত্যাদি।।
কুম্কুম চন্দন কেহ প্রভু অঙ্গে দিল।
নানাবর্ণ ফুল হার গলেতে পরা’ল।।
তাহাতে হইল এক অপরূপ শোভা।
প্রভুর মূরতিখানি অতি মনোলোভা।।
হাসি হাসি মুখ শশী দেখিতে সুন্দর।
মম মুগ্ধকর ছবি মরি কি বাহার।।
শ্রীঅঙ্গ রেখেছে ঢাকি বস্ত্র আচ্ছাদনে।
তবু যেন করে মুগ্ধ অঙ্গের কিরণে।।
হেন রুপে কেহ করে প্রভুকে দর্শন।
রূপ নিরখিয়ে কেহ ভাবে মনে মন।।
প্রথমে যে মনে মনে গর্ব করেছিল।
ওই রূপ নিরখিয়ে অবাক হইল।।
মনেই উদয় ভাব মনেতে লুকায়।
হেন ভাবে কিছুকাল গত হ’য়ে যায়।।
তথায় হইল এক অপূর্ব ঘটন।
সভার বাহির দেশে ছিল বিচরণ।।
ছটফট করে প্রাণ ঢুকিতে নারিয়ে।
হেনকালে এক ব্যক্তি উদিল আসিয়ে।।
শ্রীবিষ্ণু চরণ নাম ঝুংগসিয়া ঘর।
পঞ্চায়তি কার্য করে দুইটি বৎসর।।
কোন কারণেতে তার ত্রুটি পড়িয়েছে।
জরিমানা ধার্য হ’ল জেল হ’বে পিছে।।
ছ’মাস হইবে জেল নির্দিষ্ট হ’য়েছে।
হুকুম হইতে মাত্র বাকী রহিয়েছে।।
অতি ব্যাকুলিত ভাবে ক’রেছে রোদন।
কেমনে হইবে মুক্ত ভাবে মনে মন।।
হেনকালে একজন বলে তাঁরে আসি।
মহাদেব শিকদার কালীয়া নিবাসী।।
বলিছে বিষ্ণুর প্রতি শুন মহাশয়।
ওই দিকে ঘুরিতেছে এক মহোদয়।।
বল গিয়ে তার ঠাই সভক্তি অন্তরে।
কৃপা হ’লে জেল হতে এড়াইতে পারে।।
এতেক শুনিয়ে বিষ্ণু তাহাই করিল।
দ্রুত গিয়ে পাগলের পদে প্রণমিল।।
বলেছে আপন বার্তা হইয়ে কাতর।
পঞ্চায়তি কার্য মোরা হ’ল হস্তান্তর।।
দুষ্ট লোক জুঠে যত দরখাস্ত করে।
জরিমানা হ’ল ধার্য জেল হবে পরে।।
অদ্য মোর হবে জ্জেল হুকুম যে বাকী।
কৃপা করি বল হে উপায় হ’বে কি।।
কেমনেতে এই জেল মুক্ত হ’তে পারি।
বিপদে পড়েছি বড় বল কৃপা করি।।
কাঁদিছে আকুল হ’য়ে সে বিষ্ণুচরণ।
মিষ্ট বাক্যে তাঁর প্রতি কহে বিচরণ।।
সোয়া পাঁচ আনা যদি মোরে দিতে পার।
প্রভুর কৃপায় তুমি পাইবে নিস্তার।।
তোমার বিপক্ষে আর কেহ না রহিবে।
কাছারিতে দেখ গিয়ে খালাস পাইবে।।
বলা মাত্র দিল তাহা পাগলের পদে।
সবিনয় কহে কথা অতি মনখেদে।।
দ্রুত পদে কাছারিতে করিল গমন।
দেখা মাত্র সে হাকিম বলেছে বচন।।
অন্য ঠাই যেতে মোর আদেশ হ’য়েছে।
আর না করিও হেন মনে রেখ পিছে।।
পুনরায় হেন কর্ম যদ্যপি করিবে।
বিনা প্রমাণেতে তব মিয়াদ হইবে।।
এবে আমি সভাস্থলে করিব গমন।
আমার এ বাক্য বাপু রাখিও স্মরণ।।
এত বলি সে হাকিম কাছারি ত্যজিল।
বিষ্ণু পেল জেল মুক্তি হরি হরি বল।।
এদিকেতে সভামাঝে আলোচ্য বিষয়।
বক্তব্য করেন যত ভদ্র মহোদয়।।
দেশ সুশৃঙ্খল আর সমাজ উন্নতি।
আলোচনা করিলেন সব মহারথী।।
এইভাবে সেই সভা সমাপ্ত হইল।
সভা ভঙ্গে মহাপ্রভু আনন্দে চলিল।।
গোপাল মজুমদার প্রভুকে লইল।
সেই স্থানে মহাপ্রভু ভোজ সমাধিল।।
রজনী বঞ্চিত তথা প্রভাত সময়।
ষ্টীমার যোগেতে এলেন নিজালয়।।
অতঃপর ভক্তগণ বিদায় মাগিল।
কবি কহে গেল রবি হরি হরি বল।।
গোপালগঞ্জে রাজমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে মহাপ্রভুর আগমন
গোপালগঞ্জেতে হয় মহাকুমা স্থিতি।
আসিবেন রাজমন্ত্রী বুদেধ বৃহস্পতি।।
উপযুক্ত হয় কিনা এই স্থান বটে।
মহাকুমা শোভে কিনা এই নদী তটে।।
হেরিবারে সেই স্থান এল মন্ত্রীবর।
সুরচিত যে জাহাজ ধবল আকার।।
ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনার আইল তথায়।
পুলিশ সাহেব আদি অনেকে উদয়।।
নদীর মাঝেতে এসে জাহাজ থামিল।
জাহাজ প্রভায় নদী করে ঝলমল।।
নানাবিধ ভাবে সেই জাহাজ সজ্জিত।
স্থানে স্থানে করে শোভা চিহ্ন আরোপিত।।
ফুলের উদ্যান শোভে জাহাজের মাঝে।
বিচিত্র ভাবেতে শোভে মনোহর সাজে।।
স্থানে স্থানে নানা মূর্তি অংকিত রয়েছে।
যোদ্ধাবেশে কত ছবি দাঁড়াইয়ে আছে।।
নানাবিধ অস্ত্রশস্ত্র আর সৈন্যগণ।
অতর্কিত ভাবে যেন আছে সর্বজন।।
হেন জাহাজেতে এল রাজমন্ত্রীবর।
সঙ্গে দুই সেনাপতি পরম সুন্দর।।
কোষমুক্ত তরবারি করে ঝলমল।
সাধারণে দরশনে হৃদয় বিকল।।
যখনেতে মন্ত্রীবর হলেন উদয়।
চারিদিকে পড়িতেছে শুধু জয় জয়।।
নানাবিধ বাদ্য বাজে উৎসাহ বাজনা।
মন্ত্রীবর এল বলে পড়িল বঞ্চনা।।
মহা কোলাহলময়ী বাদ্যের নিনাদ।
মন্ত্রী আগমনে হ’ল পরম আহ্লাদ।।
সুসজ্জিত সর্বস্থান অতি চমৎকার।
সর্বদাই ঘাট পথ করে পরিষ্কার।।
বিজয় নিশান রাখে রাস্তা দুই ভীতে।
প্রহরীগণ সবাই রহে অতর্কিতে।।
অপরূপ ভাবে সব করেছে সজ্জিত।
নানা স্থানে নানাভাবে করি সুসজ্জিত।।
অপরেতে মন্ত্রীবর নামিলেন তীরে।
জয় জয় ধ্বনি সবে করে উচ্চৈঃস্বরে।।
পাবলিক স্কুল হ’ল সভা যোগ্য স্থান।
নানাভাবে সেই গৃহ করেছে নির্মাণ।।
দেবদারু পত্র সব কাগজে কাটিয়ে।
সিংহদ্বার রাখিয়েছে সজ্জিত করিয়ে।।
সভাস্থল করিয়েছে বিচিত্র সাজন।
নানাবিধ কারুকার্য করে সুশোভন।।
বিচিত্র ভাবেতে করি নানাবিধ মূর্তি।
ক’রেছে রচিত কত মনে হয় স্ফূর্তি।।
যার যাহা ক্ষমতায় সঙ্কুলান হয়।
নানাভাবে করি কার্য রেখেছে সভায়।।
পশুপক্ষী স্থানে অংকিত করেছে।
অগণিত দেবমূর্তি যতনে এঁকেছে।।
বিচিত্র ভাবেতে সবা হ’ল সভাময়।
দেবতার সভা ব’লে যেন মনে হয়।।
রাজমন্ত্রী সনে প্রভু উপনীত তথি।
সঙ্গে সঙ্গে রহিয়েছে দুই সেনাপতি।।
যখনেতে দুই প্রভু হ’লেন উদয়।
চারিদিক হ’তে শুধু করে জয় জয়।।
জয় শ্রীপঞ্চম জয় জয় মন্ত্রীবর।
জয় জয় গুরুচাঁদ মানুষ অবতার।।
এইভাবে মুহুর্মুহু করে জয় নাদ।
জয় সেনাপতি ব’লে পরম আহ্লাদ।।
উত্তম আসনেতে পরে মন্ত্রীরা বৈসে।
গুরুচাঁদ বসিলেন মন্ত্রীবর পাশে।।
অপরেতে বসিলেন দুই সেনাপতি।
শ্রেষ্ঠ রাজ কর্মচারীগণ বৈসে তথি।।
ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি পুলিশের গণ।
বসিলেন সভাস্থল হরষিত মন।।
উকিল মোক্তার কিংবা মুহুরী যতেক।
হৃষ্ট মনে সভাস্থলে বসিল প্রত্যেক।।
ভদ্র ব্যক্তিগণ কিংবা অন্য অন্য জন।
বহুলোক বৈসে তথা হরষিত মন।।
রাজমন্ত্রী সঙ্গে চলে প্রভু গুরুচাঁদ।
শ্রীপতি চলিল সঙ্গে পরম আহ্লাদ।।
হেরিয়ে সবার প্রাণে লাগে চমৎকার।
বড়ই অমিয় ভাব করে মন্ত্রীবর।।
সামান্য মানব নহে এই গুরুচাঁদ।
তাই করে রাজমন্ত্রী এহেন প্রসাদ।।
এত লোক বিদ্যমান আছে এই স্থান।
সব হ’তে প্রাপ্ত কেন হয় এত মান।।
তাহাতে বুঝিতে পারি নহেত সামান্য।
মন্ত্রীবর হ’তে হেন তাই পায় মান্য।।
কেবা হয় এ মানুষ কোন দেশে বাস।
বহুলোক পিছে ধায় সবাই উল্লাস।।
কেহ বলে মম ঠাই করুণ শ্রবণ।
হরিচাঁদ সুত গুরুচাঁদ মহাত্মন।।
এ মানুষ কভু ভাই সামান্য না হয়।
স্বীয় নামে সর্বস্থানে হ’ন পরিচয়।।
বহুলোক মাতিয়েছে স্বজাতি বিজাতি।
তারা কহে গুরুচাঁদ অগতির গতি।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ নামে ব্যাধি সারে।
যাতে বৃদ্ধি সেই রোগ খেতে দেয় তারে।।
বড়ই আশ্চর্য ভাব না যায় বর্ণনে।
কেহ ব্যাধি করে মুক্ত নাম সংকীর্তনে।।
বহুলোক মাতিয়েছে হরিচাঁদ নামে।
শ্রীগুরুচাঁদের হয় আপন মহিমে।।
মুখের কথায় শুধু ব্যাধি করে মুক্ত।
হরি-গুরুচাঁদ নামে হইয়ে আসক্ত।।
বিভিন্ন জেলার বহুলোক মাতিয়েছে।
মাঝে মাঝে আসে সবে ঠাকুরের কাছে।।
এইভাবে বহু কথা আলোচনা হয়।
শুনিয়ে অনেক লোক মানিল বিস্ময়।।
পশ্চাৎ অনুসরণ করিলেন সবে।
মন্ত্রীবর গুরুচাঁদ চলেন উৎসবে।।
মন্ত্রীবর চলিলেন আপন তরীতে।
নিজ তরী পরে প্রভু বৈসে হর্ষচিতে।।
হেনকালে এল তথা বাজীকর গণ।
নানাভাবে নানাবাজী ক’রেছে রচন।।
হাওই পানজবাজী ক’রেছে রচন।
হাওই পানজবাজী অসংখ্য এনেছে।
দিনমণি সূর্যমণি নানা বর্ণ আছে।।
ঘট বাজী কর্ম বাজী কে করে গণন।
তারা বাজী বিদ্ধিপাল না যায় বর্ণন।।
সন্ধ্যাকালে আরম্ভিল সে বাজী ছুড়িতে।
বহুলোক আমদানী সে রংগ দেখিতে।।
দেখিতে আশ্চর্য বটে অতি মনোহর।
বাজীর আলোক হয় দিনের আকার।।
কোন বাজী বেগ ভরে আকাশে উড়িয়ে।
বায়ুর সাহায্যে বাজী চলেছে ধাইয়ে।।
কৌতূহল দৃষ্টি করে ধরি বহুক্ষণ।
বহুলোক হর্ষচিতে করিল গমন।।
এইভাবে বাজী ছোড়া সমাপ্ত হইল।
আপন আবাসে সবে আনন্দে চলিল।।
কেহ বলে শুভ শুভ অদ্যকার দিন।
হেরিলাম মন্ত্রীবরে অতি শুভদিন।।
এইরূপে সর্বজনে আনন্দ লভিল।
গুরুচাঁদ নিজ বাসে উদয় হইল।।
ভক্তগণ প্রভু ঠাই মাগিল বিদায়।
কবি কহে হরি বল দিন ব’য়ে যায়।।
গোপীনাথপুরে সভা
ভক্তগণ সনে প্রভু পরম হরিষে।
করে নানাবিধ লীলা পরম উল্লাসে।।
রাজসিক তামসিক সমাজ উন্নতি।
জীবের মঙ্গল হেতু করে নানা গতি।।
ঐশ্বর্য প্রকাশ করে মাধুর্য গোপনে।
মাধুর্য প্রাচুর্য লীলা প্রেম আস্বাদনে।।
ভক্ত সনে করে সদা প্রেম আলাপন।
রাজনীতি সমাজাদি জাতিত্ব বর্ধন।।
গৃহধর্ম প্রকাশিয়ে শিক্ষা দেন জীবে।
তার মাঝে করে লীলা মাধুর্যের ভাবে।।
ভব ব্যাধি আদি ব্যাধি করে প্রতিকার।
এ হেন দয়াল ভবে না মিলিবে আর।।
ঐশ্বর্যের আবরণে মাধুর্যের অঙ্গ।
ভক্ত সনে প্রেম লীলা করে নানা রংগ।।
একদা হইল সভা গোপীনাথপুরে।
চলিলেন প্রভু মোর হরিষ অন্তরে।।
আনন্দে চলিল মিড প্রভুর সংহতি।
খ্রিস্টান অক্ষয় বাবু চলিলেন তথি।।
শ্রীযজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস আর বহুজন।
প্রভু সনে চলে সবে হরষিত মন।।
স্কুলেতে হয়েছে সেই সভা আয়োজন।
মনোনীত করি সভা করেছে রচন।।
তাহাতে সুন্দর সভা হ’ল স্কুলেতে।
ভদ্রব্যক্তি এসেছেণ বহু গ্রাম হ’তে।।
সে সভায় গুরুচাঁদ হলেন উদয়।
সে সভায় গুরুচাঁদ সঙ্গে সঙ্গে রয়।।
গোপীনাথপুরবাসী ভদ্র সম্প্রদায়।
আনন্দে পূর্ণিত হ’ল পেয়ে দয়াময়।।
বহু ভাবে অভ্যর্থনা পরম কৌতুকে।
(এক লাইন জ্ঞাপ)
ক্রমে বহুলোক তথা সমাগম হ’ল।
হরি-গুরুচাঁদ প্রতি হরিধ্বনি দিল।।
সভাপতি করিলেন প্রভু গুরুচাদে।
অভ্যর্থনা করিলেন যত পারিষদে।।
আনিয়ে ফুলের হার কোন ছাত্রে আসি।
অর্পিলেন প্রভু গলে পরম উল্লাসী।।
ক্রমে সব ছাত্রবৃন্দ করিল বন্দন।
ছাত্রগণে ধন্যবাদ করে সর্বজন।।
প্রভুর নিকট বৈসে মিড বাহাদুর।
মনে মনে ধন্যবাদ ক’রেছে প্রচুর।।
ঠাকুরের লীলা কভু না পারি বুঝিতে।
ক্রমেই বাসনা বাড়ে রূপ নেহারিতে।।
হেন ভাব কোন দিন না দেখি না শুনি।
হেরিলে শীতল হয় বিদগ্ধ পরাণী।।
যত হেরি তত বাঞ্ছা মিটে নাই স্বাদ।
মন প্রাণ করে মুগ্ধ প্রভু গুরুচাঁদ।।
তাপিতাংগ স্নিগ্ধ হয় পদ পরশেতে।
ভক্তিভাব জাগে হৃদে বাক্য শ্রবণেতে।।
সঙ্গেতে ভ্রমিলে হয় ভাবের উদয়।
পদ রেণু প্রাপ্ত হ’লে পাপ দূরে যায়।।
নাম নিলে যম ভয় হয় নিবারণ।
ধন্য ধন্য গুরুচাঁদ পতিত পাবন।।
এরূপে মনের মধ্যে করে আলোচনা।
অন্তর্যামী জানিলেন এসব কল্পনা।।
ডক্টর সি. এস. মিড আছেন বসিয়ে।
সম্মান না করে কেহ মিডকে চাহিয়ে।।
হেরিয়ে প্রভুর মনে দুঃখ উপজিল।
অপরূপ কর্ম এক তথায় করিল।।
দ্বৈতরূপ ধরিলেন বালকের বেশ।
অতীব চাঁচর বেশ মস্তকে সুকেশ।।
অতি মনোহর বেশ আসিয়ে তথায়।
ফুল হার পরাইল মিডের গলায়।।
সাজায়ে সাহেবে পুনঃ অন্তর্হিত হ’ল।
কোথা লুকাইল তাহা কেহ না জানিল।।
এহেন অপূর্ব ভাবে সাহেব সাজিল।
অনেকেই মনে মনে অসন্তোষ হ’ল।।
শ্রীপূর্ণ চন্দ্র মল্লিক মহামান্যবর।
সভাস্থলে বসেছেন হরিষ অন্তর।।
হেনকালে বলিতেছে সেই মহাশয়।
মিডের গলেতে মালা শোভা নাহি পায়।।
এইভাবে নানা কথা আলোচনা হ’ল।
মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে সভা সমাপ্ত করিল।।
তথা হ’তে যান প্রভু সে সূচী ডাঙ্গায়।
জানকী মাঝির ঘরে হলেন উদয়।।
বহু কথা আলোচনা তথায় হইল।
সভাসদগণন তাহে সম্মত করিল।।
ডাক্তার হৃদয় নাথ মাঝি বংশধর।
শুনিয়ে সকল কথা দুঃখিত অন্তর।।
বলে আমি পুনঃ সভা করিব নিশ্চয়।
মিডকে সম্মান ডান করিব সভায়।।
যদ্যপি সে ভিন্ন জাতি তথাপি আশ্রিত।
তাহে এল ঠাকুরের সঙ্গে সভ্যভিত।।
তাহে কটু বলে যদি ঠাকুরকে বলা হয়।
জ্ঞানীর পক্ষেতে ইহা যুক্তিযুক্ত নয়।।
এ দেশেতে আসিয়েছে আমাদের হিত।
তাকে নিন্দা করা কভু না হয় উচিৎ।।
আশ্রিত জনাকে যদি কহে কটুভাষ।
জ্ঞানী জনা শুনে তাহে করে উপহাস।।
আশ্রিত জনায় যেবা করে অত্যাচার।
মহাপাপী দুরাচার যায় ছারেখার।।
পুনঃ কর সভা মোরা সম্মান দানিব।
সবাকারে দিয়ে মানপত্র সমর্পিব।।
এত বলি সর্বজনে সুস্থির করিল।
নিশিযোগে গোপীনাথপুরেতে পৌছিল।।
শ্রীপূর্ণ মল্লিক পাশে হইয়ে উদয়।
নানা কথা আলোচনা করেন তথায়।।
ভাঙ্গিয়ে তাহার ভ্রম এলেন গৃহেতে।
পুনঃ সভা আয়োজন করেন প্রভাতে।।
স্নান করি সবে মিলি ভোজন করিল।
পুনঃ গোপীনাথপুর সকলে চলিল।।
পুনরায় সভা করি বৈসে সর্বজন।
ডাক্তার হৃদয় নাথ বলেন বচন।।
কল্য নাকি অপ্রভিত করেছে সাহেবে।
সেই কথা সভ্যস্থানে বলিতেছি এবে।।
অদ্য মোরা সেই মিডে সম্মান দানিব।
বল এবে যদি কারো থাকে কোন ভাব।।
যাহার প্রাণেতে যাহা বল দোষ নাই।
আরো এক কথা বলি সর্বজন ঠাই।।
সেই কথা সবে মিলে কর প্রণিধান।
সভায় রাখিব অদ্য মিডের সম্মান।।
শুনিয়ে সে কথা সবে সম্মত করিল।
পরেতে মিডের গলে মাল্যদান কৈল।।
শিক্ষার সম্বন্ধে দাবী জানায় তাহাকে।
সুমধুর বাক্য মিড শুধায় সবাকে।।
সাধ্যমত চেষ্টা আমি করিব তাহাতে।
ঠাকুরের কৃপা যদি বর্তে এ দেহেতে।।
আমার সহায় মাত্র এই সে ঠাকুর।
যার গুণাবলী হয় মধুর মধুর।।
ঠাকুরের কৃপা যদি থাকে মমোপরি।
অসাধ্য সাধন আমি করিবারে পারি।।
তোমাদের কুলে ইনি ওঢ়াকান্দি গাঁয়।
যাহা কিছু করি শুধু তাহার কৃপায়।।
এ দেশেতে কেহ নাহি জানিত আমায়।
কৃপা করি গুরুচাঁদ দিলেন আশ্রয়।।
আশ্রয়দাতা যে জন পিতৃতুল্য ব্যক্তি।
তার গুণ বর্ণিবারে নাই মম শক্তি।।
নমশূদ্র কুলোদ্ভব মানব রতন।
পুত্র সম রাখে মোরে জানি অনুক্ষণ।।
আমাকে আশ্রয় দিয়ে শুনে অপবাদ।
তথাপিও কোন দিন না গণে প্রমাদ।।
এ হেন বান্ধব আমি খুঁজিয়ে না পাই।
চিরঋণী হইয়াছি ঠাকুরের ঠাই।।
স্নেহপাশে বন্দী মোরে ক’রেছেন তিনি।
অযোগ্য বন্দিতে তার চরণ দু’খানি।।
সভা বিদ্যমান আমি সম্মান পেয়েছি।
সবাকারে ধন্যবাদ সতত দিতেছি।।
এমত বলিতে হয় ভক্তির উদয়।
সর্বলোকে শুনে যেন হইল বিস্ময়।।
কেহ কেহ প্রভু পানে চাহে অনিবার।
কারো চক্ষে বহিতেছে প্রেম অশ্রুধার।।
সেই দিন হ’তে কেহ মতুয়া হইল।
গুরুচাঁদ পদে দেহ মন বিকাইল।।
হেন ভাবে সেই সভা গোপীনাথপুর।
তাহাতে সম্মান মিড পাইল প্রচুর।।
সভাসাংগ মহাপ্রভু করেন ভোজন।
অপরেতে চলি যান আপন ভবন।।
আনন্দেতে সেই মিড আবাসে চলিল।
হরি-গুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।
গোপালগঞ্জে লাট দরবারে মহাপ্রভুর গমন
একদা গোপালগঞ্জে লাট আগমন।
তথা হ’তে প্রভু ঠাই এল নিমন্ত্রণ।।
আপনার সাঙ্গপাঙ্গ করিতে সংহতি।
লাট দরশন আশে চলিলেন তথি।।
শ্রীরাসবিহারী ভক্ত জগবন্ধু দাস।
সঙ্গে চলে পণ্ডিত শ্রীগঙ্গাধর বিশ্বাস।।
পণ্ডিত শ্রীশশীবাবু আর ষষ্ঠীচন্দ্র।
শ্রীকেদারী মিস্ত্রি চলে আর মাধবেন্দ্র।।
শ্রীবিপিন চন্দ্র বালা আর বিচরণ।
প্রভুর সঙ্গেতে চলে হরষিত মন।।
নানা স্থান হ’তে এল বহু ভক্তগণ।
লেখাজোখা নাই তার কে করে গণন।।
শ্রীযাদব চন্দ্র ঢালী যাদব মল্লিক।
পরম হরিভক্ত প্রভু প্রাণাধিক।।
শ্রীগোপাল চন্দ্র এলেন তথায়।
সঙ্গে করি বহু ভক্ত আনন্দ হৃদয়।।
কলিকাতা হতে এল বাবু ভগবতী।
ঠাকুর দাদার সঙ্গে মিলিত সম্প্রতি।।
ঠাকুরের ঠাই এল লোক অগণন।
বহু লোকে এসে করে ঠাকুরে দর্শন।।
বিদেশীর লোক যত না চিনে তাহারা।
ভাবে হেরে মনে মনে হয় আত্মহারা।।
কেবা এই মহাত্মন না জানি কখন।
তাহার সকাশে কেন লোক অগণন।।
দোকান পশারী কত বৈসে নদী তটে।
অগণিত ভক্ত তরী বাঁধিয়েছে ঘাটে।।
ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনার লঞ্চেতে চড়িয়ে।
ঘুরে ঘুরে নদী মাঝে বেড়ান ভ্রমিয়ে।।
পুলিশ সাহেব ভ্রমে মনের আনন্দে।
তীর থেকে দরশন করে নর বৃন্দে।।
হেনকালে লাট এসে উদয় হইল।
চারিদিকে জয় নাদ সঘনে পড়িল।।
ধবল আকার সেই লাটের তরণী।
ঝলমল করিতেছে বড়ই বাখানী।।
বহু সৈন্য অস্ত্রে শস্ত্রে আছে সুসজ্জিত।
প্রহরীগণ যত আছে সতর্কিত।।
উৎসাহ বিবিধ বাদ্য কর্ণে লাগে তালি।
রণভেরী জয়ভেরী বাজে কুতূহলী।।
রাস্তাঘাট পরিষ্কার উত্তম রূপেতে।
বিচিত্র ক’রেছে সাজ না পারি বর্ণিতে।।
পাবলিক স্কুলে হয় সভ্যার নির্ণয়।
বিচিত্র ভাবেতে শোভে বর্ণনা না যায়।।
বিস্তারি লিখিতে গেলে গ্রন্থ বেড়ে যায়।
সংক্ষেপে লিখিব যাতে পুথি না বাড়ায়।।
ঝলমল করিতেছে বিচিত্র সাজন।
কত মূর্তি কত ভাবে ক’রেছে রচন।।
অপরেতে এল লাট লঞ্চেতে চড়িয়া।
নিজ সেনাপতিদ্বয় সঙ্গেতে করিয়া।।
মুক্ত অসি করে নিয়ে দুই সেনাপতি।
চ’লেছে লাটের সনে হ’য়ে হৃষ্টমতি।।
ঝলমল করে অসি ধবল বরণ।
করিয়েছে সেননীর শ্রীকর শোভন।।
অগ্রে বা পিছনে রহে দুই সেনাপতি।
মধ্যস্থিত রহিয়াছে লাট মহামতি।।
ম্যাজিস্ট্রেট কমিশনার সঙ্গেতে গমন।
পিছে পিছে চলি যায় লোক অগণন।।
চতুর্দিক হতে সবে করে জয় জয়।
ডাক্তারখানাতে গিয়ে হলেন উদয়।।
রাজোচিত সম্মানাদি অনেক ক’রেছে।
লাট মহামতি আশীর্বাদ দানিয়েছে।।
তথা থেকে ক্ষণকাল করেন গমন।
পরে গিয়ে লাইব্রেরী করেন দর্শন।।
উত্তম আসন পরি হইলেন স্থিতি।
দুই পার্শ্বে বসিলেন দুই সেনাপতি।।
যথাযোগ্য আসনেতে বৈসেন তখনে।
ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি কর্মচারীগণে।।
উকিল মোক্তার কত কে করে গণন।
একে একে বৈসে সবে যার যথা মন।।
অপরে বসিল যত জমিদার গণ।
ক্রমাগত বৈসে যত ভদ্র ব্যক্তিগণ।।
অন্যান্য অনেক লোক আইল সভায়।
ঢাকা হ’তে এল মিয়া গণির তনয়।।
বহুলোক সনে তিনি করে অধিষ্ঠান।
তা’র মাঝে ছোট লাট বঙ্গবাসী প্রাণ।।
খুলনা শহর কিংবা যশোহর বাসী।
একে একে সভ্যস্থলে উপনীত আসি।।
সভা আলোকিত করি বসিল সকল।
তার মাঝে ছোট লাট যেন আখণ্ডল।।
নক্ষত্র মণ্ডলে যথা চন্দ্র শোভা করে।
হইল তেমতি শোভা সভার মাঝারে।।
দরশনে সবাকার আনন্দ হৃদয়।
ছোট লাট প্রাণে প্রাণে অত্যানন্দ ময়।।
এভাবেতে সেই সভা রঞ্জিত হইল।
লাট আগমনে সবে হরি হরি বল।।
মহাপ্রভুর সভাস্থলে গমন
এবে প্রভু গুরুচাঁদ, সঙ্গে নিয়ে পারিষদ,
পরিচ্ছদ পরিয়ে অঙ্গেতে।
ছোট লাট দরশনে, যাইতে আনন্দ মনে,
চলিলেন হরষিত চিতে।।
ভক্তগণ ল’য়ে সঙ্গে, চলিল পরম রঙ্গে,
পিছে চলে ভক্ত অগণন।
বহুলোক নিরখিয়ে, ব’লেছে বিস্মিত হ’য়ে,
কেবা বল এই মহাত্মন।।
কেহ বলে গুরুচাঁদ, সঙ্গে ভক্ত পারিষদ,
ওঢ়াকান্দি বসতি আশ্রম।
যত নমশূদ্র জাতি, ইনি সবাকার পতি,
এ মানুষ পুরুষ উত্তম।।
লাট ছিল সভা মাঝে, হেরে গুরুচাঁদ রাজে,
হইলেন বিস্মিত অন্তর।
জিজ্ঞাসিছে সবাঠাই, সবে মোরে ব্বল ভাই,
কেবা হয় এই নরবর।।
মহান পুরুষ ইনি, মনে হেন অনুমানি,
কোন দেশে করেন বসতি।
এত লোক পিছে ধায়, হইয়েছি সবিস্ময়,
কিবা তার মহান শকতি।।
মম পানে না চাহিয়ে, এত লোক চলে ধেয়ে,
এই কর্ম বড় চমৎকৃত।
কেবা এই শ্রেষ্ঠ নর, হয় কোন বংশধর,
ভেবে তাহা না পাই কিঞ্চিত।।
মনে মনে বহুক্ষণ, ভাবে লাট মহাত্মন,
ভেবে কিছু না বুঝে কারণ।
গুরুচাঁদ মনোল্লাসে, সভাগৃহ দ্বারদেশে,
উপনীত নিয়ে বহুজন।।
সসম্ভ্রমে দ্বারীগণ, দ্বার ছাড়ি ততক্ষণ,
প্রভু রূপ করে দরশন।
(লাইন জ্ঞাপ)
হেরে সবে সুললিত, সবে হয় পুলকিত,
কেহ কেহ উঠিয়ে দাঁড়ায়।
উত্তম আসন দান, তুষিলেন গুরুচানে,
সে আসনে বৈসে দয়াময়।।
অপরেতে সর্বজন, হ’য়ে অতি হৃষ্ট মন,
আলোচনা কত ভাবে করে।
বহুভাবে বহু কথা, করেছেন বক্তৃতা,
আবদার লাটের গোচরে।।
প্রাণের আবেগ যাহা, একে একে বলি তাহা,
আপনা আপনি সুস্থ হ’ল।
লাট মুখ নিরখিয়ে, আশাপথ পানে চেয়ে,
মনে ভাবে আমার মঙ্গল।।
চাকরি প্রার্থনা
সভায় বসিয়ে মোর প্রভু দয়াময়।
লাট সনে আলোচনা নানা কথা কয়।।
মহাকুমা সম্বন্ধীয় কত কথা বলে।
জেলখানা অফিসাদি শোভে এই স্কুলে।।
সুন্দর বন্দর বটে এই নদী তটে।
মহাকুমা যোগ্য স্থান হেথা হয় বটে।।
লাইব্রেরী কিংবা হয় সে ডাক্তারখানা।
হইয়েছে মনোনীত আর হয় থানা।।
একে একে সর্বস্থানে দরশন করি।
হইয়াছে মনোনীত বলেন বিস্তারি।।
অতএব শুন সবে হ’য়ে একমন।
সভাস্থলে আছে বসি গণির নন্দন।।
মহাধনবান তিনি মহাজ্ঞানবান।
লাট সনে কহে কথা সেই মতিমান।।
আমার বহুত সংখ্যা লোক এই দেশে।
(লাইন জ্ঞাপ)
চাকরী পাইতে পারে জাতি বরাবর।।
এই ভাবে সভা মাঝে হইল বক্তব্য।
মহাপ্রভু চিন্তা করে আপন কর্তব্য।।
সভাস্থানে না কহিবে মরমের ব্যাথা।
লঞ্চে গিয়ে জানাইবে চাকরীর কথা।।
আর এক কথা তথা হ’ল নিরূপণ।
এ স্থানে ডিপুটি এক আসিবেন নতুন।।
এই কথা এস-ডি-ও বলে প্রভুর ঠাই।
লাট স্থানে বলিবেন শুনুন গোঁসাই।।
মহাপ্রভু বলে মোর বিদ্যাজ্ঞান নাই।
কেমনে বলিব আমি মনে ভাবি তাই।।
তিনি কেন মম বাক্য করিবেন গ্রাহ্য।
প্রস্তাব করিলে তিনি বলিবেক বাহ্য।।
আপনি বলুন গিয়ে লাটের নিকটে।
আপনি বলিলে হবে উপযুক্ত বটে।।
এত শুনি এস-ডি-ও বলে প্রভু পাশ।
শুনি আপনার বাণী মনে আসে হাস।।
আপনার অসম্ভব ভবে কিছু নাই।
বিদ্যা বুদ্ধি পরাজিত আপনার ঠাই।।
প্রভুই বলিবে কথা প্রত্যেকে বলিল।
অগত্যা গুরুচাঁদ স্বীকার করিল।
অতপর ছোট লাট স্মরিয়ে রাজায়।
সভাসাঙ্গ করিলেন সানন্দ হৃদয়।।
নদীতটে চলিলেন লাট মহামতি।
ভক্ত সঙ্গে চলিলেন অগতির গতি।।
অপরেতে লাট যায় নিজ জাহাজেতে।
ভক্তসনে চলে প্রভু অতি আনন্দেতে।।
ম্যাজিস্ট্রেট লইলেন প্রভুকে তুলিয়ে।
রাজোজিত সে সম্মান প্রভুকে করিয়ে।।
উত্তম আসন পরে বসিলেন প্রভু।
ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি লাট বঙ্গ বিভু।।
লাটের নিকটে বৈসে প্রভু দয়াময়।
লাটের সন্নিধানে কথা মৃদুস্বরে কয়।।
মম নিবেদন এবে করুণ শ্রবণ।
নতুন ডেপুটি নাকি হবে আগমন।।
উপযুক্ত সৎ ব্যক্তি দিবেন হেথায়।
সুশৃঙ্খল রূপে যাতে দেশ রক্ষা হয়।।
রাজার সূক্ষ্ম আইন পা’লে অবিরত।
এই স্থানে পাঠাইবেন এহেন মহৎ।।
প্রজাগণ হেরে যথা আপন নন্দন।
সুবিচারে হ’বে বাধা দেশবাসী গণ।।
এই মত সদালাপ শুনে মহামতি।
বড়ই সন্তোষ হ’ন ঠাকুরের প্রতি।।
লাট বলে নাহি দিব কভু দুরজনে।
এই স্থানে পাঠাইব সৎ মহাজনে।।
আপনার মনোভাব বুঝিতে পেরেছি।
আপনি মহান ব্যক্তি অন্তরে জেনেছি।।
সর্বজীবে সম দয়া আপনার হয়।
অনুভবে বুঝিলাম ঈশ্বরের প্রায়।।
আপনি এ পূর্ববঙ্গে পরম উদার।
রাজার মঙ্গল বাঞ্ছা সদা আপনার।।
সুশৃঙ্খল ভাবে যদি রহে প্রজাগণ।
রাজার মঙ্গল তারা গাহে সর্বজন।।
অতপর আপনার অনুমতি ক্রমে।
ব্রাহ্মণ ডিপুটি দিব এই মহাকুমে।।
ধন্য ধন্য আপনি এ পূর্ববঙ্গবাসী।
অমিয় বচনে যেন কত সুধারাশী।।
ঈশ্বরীয় ভাব কত হ’তেছে প্রকাশ।
অনুক্ষণ গাহে শুনি আপনার যশঃ।।
মনে হয় আপনার শক্তি অপ্রমিত।
দরশনে কেন যেন মন প্রফুল্লিত।।
এইভাবে নানা কথা আলোচনা হয়।
অমৃতের ধারা যেন তাহে বরিষয়।।
অপরেতে মহাপ্রভু মাগিল বিদায়।
আপনার তরী পরে হ’লেন উদয়।।
হেরে সবাকার হ’ল আনন্দ হৃদয়।
লাট স্থানে মহাপ্রভু সুসম্মান পায়।।
ক্রমে সব ভক্তগণ প্রভুর সকাশে।
বিদায় মাগিয়ে সবে চলে নিজবাসে।।
কেহ কেহ থাকিলেন প্রভুর সঙ্গেতে।
হরিদাসপুরে সবে চলেন রঙ্গেতে।।
শ্রীকর্ণ মালীর গৃহে হ’লেন উদয়।
হেরে সবাকার হ’ল আনন্দ হৃদয়।।
শ্রীকর্ণ মালীর ভ্রাতা শ্রীগুরুচরণ।
ব্যস্ত চিতে করিলেন বসিতে আসন।।
প্রণমিয়ে প্রভু ঠাই বলেন বচন।
আপনার এই গৃহে হ’য়েছে রন্ধন।।
প্রভু বলে তা হইলে বড় ভাল হয়।
সত্বরে করহ ঠাই বসুক সবাই।।
ক্ষুধায় কাতর দেখ হ’য়েছে সবাই।
সত্বরে করাও সেবা শুন বাপ ভাই।।
এত শুনি আহারের ঠাই করা হ’ল।
এক সঙ্গে ম’তোগণ সকলে বসিল।।
হ’ল দশ-বিশজন লোকের রন্ধন।
বহুলোক হেরে হয় সবিস্ময় মন।।
কেঁদে গিয়ে প্রভু ঠাই করে নিবেদন।
জাতি কুল যাবে অদ্য জন্মের মতন।।
প্রভু বলে কোন ভয় নাহিক তোমার।
যাহাই করেছ ভোজ হবে সবাকার।।
ঠাকুরে ভাবিয়ে তুমি থাকিহ পড়িয়ে।
কোন ভয় নাই বাপ ধৈর্য কর হিয়ে।।
অপরেতে সবাকার হইল ভোজন।
ত্রুটি না পড়িল কারো কহে সর্বজন।।
শতাধিক লোক বসি ভোজন করিল।
কে বুঝিবে কেবা এসে এসব কুলা’ল।।
তাহা হেরি অন্য লোক মানিল বিস্ময়।
কেহ বলে হেন কর্ম প্রাণে না জুয়ায়।।
এমত বলিয়ে সবে করে কানাকানি।
এ হেন আশ্চর্য কাণ্ড না দেখি না শুনি।।
অপরেতে প্রভু মোর ভক্তগণ সনে।
তরী পরে চলিলেন আনন্দিত মনে।।
বাহিল প্রভুর ত্রিই ব’লে হরি হরি।
তালতলা উপনীত আকুল কাণ্ডারী।।
সব ভক্তের গৃহে করিয়ে ভ্রমণ।
ক্রমে উপনীত হয় আপন ভবন।।
অপরূপ ভাবেতে প্রভুর লীলাতত্ত্ব।
কবি কহে সাধ্য কার বুঝিতে মাহাত্ম।।
রামচরণ পোদ্দারের বাটী সভা উপলক্ষে মহাপ্রভুর গমন
বড়বেড়েবাসী রামচরণ পোদ্দার।
বিদ্যাবন্ত লক্ষ্মীবন্ত শান্ত দান্ত নর।।
হইবে বিরাট সভা বাটীতে তাহার।
নিমন্ত্রণ পেল তাহে বহু ভদ্রবর।।
সেই সভা উপলক্ষে প্রভুর গমন।
মিড আদি সঙ্গে করি বহু ভক্তগণ।।
গুরুচাঁদ প্রভু যবে হ’লেন উদয়।
চারিদিক হ’তে সবে করে জয় জয়।।
ভক্তিভরে গুরুচাঁদ বরণ করিল।
সসভ্রমে সঙ্গীগণে সাদরে লইল।।
বহু অভ্যর্থনা করে ঠাকুরের প্রতি।
প্রভু গুরুচাঁদ তথা হ’ন সভাপতি।।
উত্তম রূপেতে হয় সভার সৃজন।
নানা রূপে হ’ল সেই সভা সুশোভন।।
সে দেব সভ্য সব তুল্য রচনা তাহার।
সভা মাঝে বসিলেন বহু ভদ্রবর।।
সেই সভা মাঝে গুরুচাঁদ সভাপতি।
অঙ্গ হ’তে বাহিরায় সুনির্মল ভাতি।।
ম্যাজিস্ট্রেট ইট্কোড মিড আদি করি।
বৈসে ভদ্র নমশূদ্র সবে সারি সারি।।
কোন কোন দ্বিজ সুত ব’সেছে সভায়।
সবে মিলে অনিমেষে প্রভু পানে চায়।।
প্রভুর কণ্ঠেতে দোলে শ্বেত পুস্পহার।
তার মাঝে লাল নীল শোভে মনোহর।।
অগণিত লোক এসে করে নিরীক্ষণ।
সে রূপ নেহারী হয় প্রফুল্লিত মন।
পুলিশ সাহেব ছিল সভার মাঝারে।
প্রভু রূপ নিরখিয়ে ভাবয় অন্তরে।।
যেই দিন হয় দেখা গোপালগঞ্জেতে।
লাট করে সম্ভাষণ অতি আনন্দেতে।।
এই সেই নরশ্রেষ্ঠ এহেন হেথায়।
সভা আলোকিত করি ব’সেছে সভায়।।
ম্যাজিস্ট্রেট ব’সেছে প্রভুর নিকটে।
তাহা দেখি সব লোকে আসিল নিকটে।।
প্রভু সনে কহে কথা মধুর মধুর।
নমশূদ্র কুল যেন হ’লো ভরপুর।।
ভদ্র নমশূদ্রগণ সমাদর করে।
ফুল হার করে দান সভার মাঝারে।।
অগ্রভাগে ওই গলে করিয়ে অর্পণ।
আমা সবাকারে দেয় আনন্দিত মন।।
তাই হেরি সবাকার প্রফুল্লিত মন।
সভ্যস্থল ঝিকিমিকি করে অনুক্ষণ।।
সুপ্রকাশ ঠাকুরের শ্রীঅঙ্গ কিরণ।
পদ্মরাগ মণি সম উজ্জ্বল বরণ।।
এইভাবে মনে মনে করেন চিন্তন।
সেই ভাবে অনেকেই করে দরশন।।
সভাকার মনে যেন জাগিল কি ভাব।
দেখিতে দেখিতে সভা হইল নীরব।।
কেন হয় হেন ভাব বুঝিতে না পারি।
কেহ বলে একি হল না পাই বিচারী।।
সভায় এসেছি মোরা বক্তৃতা শুনিতে।
কেন সভাস্থলে সবে আছে নীরবেতে।।
ইতি উতি কহে কত বাহিরে দাঁড়িয়ে।
এক স্থানে হ’তে অন্যস্থানে কহে গিয়ে।।
অন্তর্যামী গুরুচাঁদ জানিয়ে কারণ।
সভাজন প্রতি চাহি বলেন বচন।।
সভার আলোচ্য যাহা হোক উত্থাপন।
নীরবেতে কেন সব সভাসদগণ।।
শুনিয়ে প্রভুর বাণী ভদ্র ব্যক্তিগণ।
একে একে আলোচনা করেন তখন।।
অমুক ব্যক্তির বাক্য করেন শ্রবণ।
সভার আলোচ্য সভা করিবে বর্ণন।।
বলা মাত্র প্রভু ঠাই করিয়ে মিনতি।
গ্রহণ করেন শ্রীপ্রভুর অনুমতি।।
অপরেতে রাখি সেই সভার সম্মান।
আলোচ্য বিষয় কহে সভা বিদ্যমান।।
রাজার উদ্দেশ্যে বহু করিল বর্ণন।
শুনে প্রফুল্লিত যত সাহাবের গণ।।
বক্তৃতা করিলেন তা যাহা ধার্য ছিল।
একে একে বহুজন বক্তৃতা করিল।।
শ্রবণে সভার হ’ল আনন্দিত মন।
হেনকালে গুরুচাঁদ বলেন বচন।।
সভার সম্মান রক্ষা করি দয়াময়।
অগ্রভাবে সবাকারে করেন বিস্ময়।।
পরে কহে শুন সবে আমার ভারতি।
ডক্টর সি.এস. মিড এই মহামতি।।
করিতেছে আমাদের অশেষ কল্যাণ।
তার কিছু বলিব এ সভা বিদ্যমান।।
তাহার সাহায্যে যাতে নমশূদ্রগণ।
দ্বিজ নমশূদ্র জাতি হইল বর্ণন।।
এই তত্ত্ব জানিবার যদি ইচ্ছা হয়।
ওড়াকান্দি গেলে তাহা দেখাব নিশ্চয়।।
দেখে শুনে জেনে এস ইহার কারণ।
সেন্সের কাগজ মাঝে আছে নিরূপণ।।
বহু পরিশ্রম করে মিড মহাশয়।
আমার বচন গ্রাহ্য করেন সদায়।।
অতএব শুন সবে আমার বচন।
তাকে দাও মানপত্র মম নিবেদন।।
প্রভুর বচন সবে গ্রহণ করিল।
সভাস্থলে মানপত্র মিডকে অর্পিল।।
সভায় উঠিল সেই মিড মহামতি।
অগ্রভাগে নিয়ে মহাপ্রভুরানুমতি।।
শিক্ষা সম্বন্ধীয় বাণী বলেন বিস্তার।
সে প্রকারে সর্বজীবে উঠে উচ্চতর।।
সভা ঠাই কেমনেতে সম্মান পাইবে।
বিশিষ্ট সমাজে গিয়ে আসন লভিবে।।
অপরেতে কহে কথা গদগদ ভাষে।
দেহ যেন ডগমগ প্রেমের উচ্ছ্বাসে।।
গুরুচাঁদ সর্বময় সর্ব শক্তিমান।
এল ব্রহ্ম পরাৎপর ভকতের প্রাণ।।
এমত মিডের বাণী করিয়ে শ্রবণ।
করতালি দিল সবে আনন্দিত মন।।
পুনঃ কহে শুন যত নমশূদ্রগণ।
নমশূদ্র কুলে এই জাতির জীবন।।
জাতি জাগরণ করে আমি করি নাই।
এই দেহ সম্মিলন ক্ষীরোদের সায়ী।।
আপনি করিয়ে কর্ম জগতে শিখায়।
উপলক্ষ্যে যারে তারে রাখে সে সময়।।
বহুদিন বহুদেশ ক’রেছি ভ্রমণ।
এ হেন পরম বন্ধু না মেলে কখন।।
এসেছেন ত্বরাইতে কলি জীবগণে।
স্থান ভিক্ষা মাগি সদ্য রাতুল চরণে।।
এইভাবে সেই মিড বক্তৃতা করিল।
শুনিয়ে সাহেবগণ বিস্ময় মানিল।।
কেহ বলে জাতিশ্বর কাঙ্গালের সখা।
কলিজীব উদ্ধারিতে এসে দিল দেখা।।
দীনের বান্ধব ইনি জানিলাম তাই।
অকুল কাণ্ডারী আর অন্য কেহ নাই।।
এইভাবে বহুক্ষণ আলোচনা হ’ল।
হরিধ্বনি দিয়ে সভা সমাপ্ত করিল।।
কেহ কেহ প্রভু পদে করিয়ে প্রণাম।
আনন্দে চলিয়ে যায় আপনার ধাম।।
তখনেতে মহাপ্রভু সভা সাঙ্গ করি।
সাহেবের গণ সহ বৈসেন কাছারী।।
কোন কোন ভদ্র ব্যক্তি বসিল তথায়।
প্রভু সঙ্গীগণ বৈসে আনন্দ হৃদয়।।
তথা বসি ধর্ম কথা করে আলোচনা।
মহাভাব উদ্দীপন অতীত বর্ণনা।।
প্রেম সিন্ধু উথলিল বাক্যের প্রবন্ধে।
কেহ কেহ হরি ব’লে অনুক্ষণ কাঁদে।।
কাহারো বা অবিশ্রান্ত ঝরে অশ্রুজল।
প্রেমের কল্লোল উঠে হইয়া প্রবল।।
সে ঢেউ লাগিল গিয়ে পুরীর মাঝেতে।
বড়ই অদ্ভুত লীলা কে পারে বুঝিতে।।
প্রেমের সাগরে মত্ত পুরবাসীগণে।
অবারিত প্রেমধার সবার নয়নে।।
বাল্য বৃদ্ধ নরনারী যেখানে যে ছিল।
প্রেমের পাথারে সবে ভাসিয়ে চলিল।।
রামাগণে কেহ কহে প্রলাপ কাহিনী।
ওগো দিদি এসেছে কি হরিগুণ মণি।।
কি যেন কি বলে তারা বোঝা নাহি যায়।
থেকে থেকে সবে তারা করে হায় হায়।।
বর্ণনা অতীত ভাব বুঝিতে না পারি।
অনেকেই পড়ে ঢলি আপনা পাশরি।।
রান্না ঘরে মেয়ে লোক নাহি একজন।
চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় দ্রব্য নানাবিধ।
ঘৃত পক্ক ডাল ডালনা ব্যঞ্জন ইত্যাদি।।
অম্বল মিষ্টান্ন কত রাখে ভারে ভারে।
বুঝিতে শকতি নাই নিখিল সংসারে।।
সম্বিত পাইয়ে কোন নারী যায় ঘরে।
তবু নাহি জানে রান্না কেবা এসে করে।।
হেনকালে প্রেম বন্যা তরঙ্গ থামিল।
ব্যস্ত হ’য়ে কেহ কেহ রান্না ঘরে গেল।।
গিয়ে দেখে সব দ্রব্য রাখে সারি সারি।
রান্না সমাপিয়ে যেন গেছে কোন নারী।।
বিস্মিত হইয়া সেই মেয়েদিগে কয়।
রান্না কে করিলি ভাই কহত আমায়।।
একে একে সব ধনী জানিলেক তাই।
অস্বীকার করি বলে কি কহিস ভাই।।
কেবা এসে এর মাঝে রান্না করে গেল।
মেয়েরা মেয়েরা শুধু করে গণ্ডগোল।।
ক্রমে ক্রমে সেই কথা প্রকাশ হইল।
সর্বজন শুনে তাহা বিস্ময় মানিল।।
নানাজনে নানা কথা নানাভাবে বলে।
নির্ধার্য করিতে নারে ভাসে আখি জলে।।
নারীগণ মধ্যে হ’তে বলে একজন।
এবে আমি বুঝিয়েছি সব বিবরণ।।
সত্বরে জানাও গিয়ে হ’য়েছে রন্ধন।।
ঠাকুরে আসিয়ে এবে করুক ভোজন।
এদিকেতে সাহেবেরা বিদায় লইয়ে।
গন্তব্য স্থানেতে সবে গেলেন চলিয়ে।।
অতপর সর্বজন সুস্থির হইল।
হরি-গুরু প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।
মহাপ্রভুর সেবা
এদিকে পোদ্দার বাটি, হয় অতি পরিপাটী,
সেই গৃহে প্রভুর ভোজন।
সঙ্গীগণ সবে মিলি, মনে হ’য়ে কুতূহলী,
পশ্চাতেতে করিল গমন।।
অন্তঃপুরে গিয়ে পরে, বসিলে আসনাপরে,
রামাগণে দিল হুলুধ্বনি।
নানাবিধ দ্রব্য যত, তাহা বা বর্ণিব কত,
যোগাইল কোন কোন ধ্বনি।।
অন্যান্য যতেক ছিল, সবে ভোজন সমাপিল,
আনন্দেতে বলে হরি হরি।
মহাপ্রভু সন্নিধানে, বসিলে আনন্দ মনে,
তাম্বুলাদি কেহ পান করে।।
কেহ কেহ মনব্যথা, কেহ কেহ হরিকথা,
যার যাহা কহে সেই মত।
কেহ চলে নিজ ঘরে, কেহ চলে সমিভ্যরে,
সবে মাত্র হ’য়ে আনন্দিত।।
মহাপ্রভু মিড সনে, চ’লেছে আনন্দ মনে,
হেনকালে শ্রীরামচরণ।
বলিছে বিনয় ক’রে, পদতলে রাখ মোরে,
তুমি প্রভু ভকত মোহন।।
আগমন নিজগুণে, তাই এলে বহুজনে,
ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি যত।
তাহে হই আমি ধন্য, ঘর দ্বার পুরী ধন্য,
ধন্য মোর প্রতিবাসী যত।।
আমি আর কব কত, হয়ে এই পদাশ্রিত,
পারি যেন থাকিতে সংসারে।
এই ভিক্ষা দয়াময়, স্থান দিয়ে রাঙ্গা পায়,
রাখিবেন ভজনহীনেরে।।
উদিয়ে এ বঙ্গদেশে, জাতিবর্ণ নির্বিশেষে,
নীচজন করিতে উদ্ধার।
আপনি পরম ব্রহ্ম, জানাইতে সূক্ষ্ম ধর্ম,
ওড়াকান্দি মানুষবতার।।
আপনার ভক্তগণে, সবে গায় নিশিদিনে,
মহাপ্রভু এল শ্রীধামেতে।
শুনিয়ে মধুর ভাষ, হৃদয়ে বাড়ে উল্লাস,
নিশিদিনে জাগে তাই চিতে।।
এই মত কহে বাণী, নয়নেতে তরঙ্গিণী,
ধারা সম বহে অশ্রুধার।
কি যেন কি জাগে চিতে, কহে কথা নানা মতে,
বাহ্যজ্ঞান নাহি যেন তার।।
প্রভু তার ভাব হেরে, শুধায় মধুর স্বরে,
তাহে তিনি সুস্থির হইল।
অতঃপর ভক্তসনে, প্রভু আনন্দিত মনে,
তরী পরে আরোহণ কৈল।।
ভক্তগণ করি সঙ্গে, হরিকথা রসরঙ্গে,
চলিলেন গৃহ অভিমুখে।
ভকতের গণ যত, সবে হ’য়ে ভাবাশ্রিত,
অবিরত ভাসে প্রেম সুখে।।
এই রূপে করে লীলা, খেলিয়ে মধুর খেলা,
নিজ লীলা করেন প্রকাশ।
কেঁদে কহে বিচরণ, হৃদে করে বিচরণ,
পূর্ণ কর নিজ অভিলাষ।।