গান নংঃ ৫৬-৭৫
রাগিনী – কাহিনা
৫৬। তাল – ঝাপ
আমার প্রাণের দরদি হে এসে কর হে পার।
আমি অকুল ভবেদি নীরে হে,
তব বলে দিলেম সাঁতার।।
১। (বহে) তরঙ্গ এদিন রজনী, ভয়েতে কাঁপছে পরানী।
তুমি এসে হরি নিরাদ মনি হে, অকুল নীরে তরাও কিনার।।
২। ভাব দরিয়ার অতল বার, ঘোর তুফানে প্রাণে মরি।
(দিয়ে) অকুল নেয়ে পদতরি হে, শুনি পার কান্ডারির কান্ড অপার।
৩। বিপ্লব ঝটিকা জোরে, সঙ্গী সবে গেছে ছেড়ে।
আমায় এই সঙ্কটে কেবা ধরে হে, তুমি বিনে কে আছে আর।।
৪। ভবাদি দরিয়ার পারে, যেতে বাঞ্ছা নাই অন্তরে।
দীনাবলে সকাতরে হে, হরি গোসাই তরাও এবার।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-অরুণ ভেরি
৫৭। তাল-ঠুংরী
প্রেমভক্তি যার উপজে, তারে দয়া কিঞ্চিৎ সাজে।
যার দিনে দিনে মন প্রাণে, সদা জ্বলে হৃদয় মাঝে।।
১। গুরু অনুরাগী যে জন হয়,
তারে ছোঁয়না শমন বাঘে, বন বাঘের কি ভয়।
থাকে পাহাড় পর্ব্বত গিরি গুহায়, দুর্গম অরণ্য মাঝে।।
২। (যার) অনুরাগের অঙ্কুর বেড়ে যায়,
কাম, ক্রোধ, ষড় রিপু, হয় তার পরাজয়।
ও সে আহার নিদ্রা করি ত্যাজ্য,
দিন রজনী গরু ভজে।।
৩। (তার) নয় দ্বারে হয় পঁচিশজন দ্বারি,
দিবা নিশি বিশ্রাম নাই তার দিচ্ছে প্রহরী।
যিনি মহাপুরুষ হয় না বেহুস,
হুসের ঘরে থাকে মজে।।
৪। ভেবে তাই আদিত্য ডেকে কয়,
দীনবন্ধু হইসনে বেহুশ, ঘটবে বিষম দায়।
দয়াল হরি গোসাইর দয়া ভারি,
দয়া বিলায় যারে সাজে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-অরুণভেরি
৫৮। তাল-ঠুংরী
পাষান মন মনুরা লয় না পড়া
আমার সাধন ভজন হবে কেমনে।
সদা চেয়ে থাকে কু-পথ পানে,ম
সু-পথ সে চায়না কখনে।।
১। বুঝাই কখন ব্যক্ত কখন গোপনে,
বুঝালে বুঝ মানেনা সেই বিপুল বেইমানে।
আমি হায় কি করি, ভেবে মরি,
সাধন পথে যাই কেমনে।।
২। আমি পরেছি আজ ভীষণ সঙ্কটে,
সে দুষ্ট নয়নের পিছে, মনুরায় হাটে।
কেম্নে ফিরাই আঁখি, উপায় না দেখি,
হাকিনী পিছনে টানে।।
৩। আমার মন মনুরায় সাধন পথে গেলে,
দুষ্ট নয়ন অভি ভীষণ অগ্রেতে চলে।
তাইতে হয়না সাধন সঙ্গেতে মদন,
বিধতে চায় তার পঞ্চ বাণে।।
৪। আদিত্য কয় শুনরে মন,
হরি গোসাই করণ বিনে, হবেনা সাধন।
(এবার) দীনা বলে কি কৌশলে সাধন করি মন-প্রাণে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-মহশালা
৫৯। তাল-ঝুলুন
মজিলি কেন বৃথা রঙ্গে, ডাক হরি রস রঙ্গে।
সৎবাক্য সদ্ব্যবহারে, থাক রে মন মনোরঙ্গে।।
১। অসৎসঙ্গ ছেড়ে দিবি, থাকবি সদা সাধুর সঙ্গে।।
২। মুখে বল সত্য বাক্য নাম করিও হৃদয় ঐক্য।
মনকে কর সরল সূক্ষ্ম, পাবি মোক্ষ ধাম ত্রিভঙ্গে।।
৩। ভাই ভার্য্য বন্ধগুণে, কেউ যাবেনা তোমার সনে।
পালাবে সব ঘোর নিদানে, একা যাবি অগ্নির সঙ্গে।।
৪। আদিত্যের অমূল্য বুলি, দীবন্ধু যাসনে ভুলি।
হরি গোসাইর চরণ ধূলি, মাখবি সদা সর্ব্ব অঙ্গে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-বিরহাসী
৬০। তাল-ঠুংরী
প্রেম কাননে চলে যারে মন,
কাম্য বনে যেয়ে কেন হারাও পরমধন।
যাবি পৃপা দানে, প্রেম কাননে
শীতল হবে তাপিত জীবন।।
১। প্রেম কাননে কামব্যাঘ্রের হানা, লোভী কামুক কেউ যেওনা।
যিনি প্রেম উন্মাদিনী সত্যবাদী, বনে গেলে নাই তার মরণ।।
২। অমাবস্যা পূর্ণিমাতে, ব্যাঘ্র দায় মহা বেগেতে,
কাপে হুঙ্কার শুনে, সর্ব্বজনে, স্বর্গ মর্ত্ত পাতাল ভুবন।।
৩। অনুরাগের শিকল নিয়ে, জ্ঞানের অলো জ্বালাইয়ে।
পথ নিরখে দাঁড়া হুঁসে, পাবি সে ব্যাঘ্রের দরশন।।
৪। মহাবেগে ক্রোধ করি, আসবে ব্যাঘ্র গর্জ্জন করি।
তখন নাম মন্ত্রে দিস ধূলা পড়ি, শিকলে করিবি বন্ধন।।
৫। আদিত্য কয় প্রেম কাননে , দীনবন্ধু থাক সন্ধানে।
হরি গোসাইর কৃপাবানে, কাম ব্যাঘ্রকে কর নিধন।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-বিরহাসী
৬১। তাল-ঠুংরী
রাত্রি দিনে কায়োমনে ভজ আমার মন।
দেহ থাকতে চেতন হয়ে মগন, প্রানপনে করগে সাধন।।
১। গুরু ভজন করবি যদি, ছেঁড়ে দেরে ঐ বেদ বিধি।
জপ কর নাম নিরবধি, নির্ম্মল প্রেমে মিলে সেই ধন।।
২। বেদ বিধির পার হল যেইজন, তার হয়েছে সাধন ভজন।
ছয় রিপু করেছে দমন, জন্ম মৃত্যু হল নির্ব্বাণ।।
৩। মনপ্রাণ হৃদয় শুচি, নাম রসেতে রাখ রুচি।
নিও ঐ নাম সর্ব্বশুচি ঘুম যেও না থেক চেতন।।
৪। উগ্রচন্ডা পরিহসি, ঘুমের ঘরে করে চুরি।
(যে জন) ঢলে নিন্দ্রার কোলো পড়ি
দেখায় স্বপ্ন, হরে নেয় ধন।।
৫। আদিত্য কয় শুনরে দীনা, ভজন বিনে সাধন হয়না।
হরি গোসাইর উপাসনা, ভজনে হয় বাঞ্ছা পূরণ।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ভোজেশ্বরা
৬২। তাল-একতালা
হরি প্রেমের ঢেউ উঠেছে যার
তাতে স্বর্গ মর্ত্ত পাতাল ভূতল,
সাত তালের ভাঙ্গে কিনার।।
১। সাত তালে সাতটি ব্রহ্মান্ড, ডুবায়ে সব করল পন্ড,
যত কৃষি শস্য নাইরে ভাস্য, ডুবায়ে মৈল সবাকার।
আছে সাত সমুদ্র, নয়রে ক্ষুদ্র, সমুদ্রে ঢেউ উঠিলে অন্ধকার।।
২। সমুদ্রের কান্ড বিপরীত, সে ঢেউতে রয়না হিতাহিত,
কত হাঙ্গর কুন্তীর, সবে অস্থির ঢেউ লেগে হইল স্তন্তিুত।
যত প্রেমের মকর, ঢেউতে বিভোর,
তারা ঢেউ খেয়ে হয়েছে সার।।
৩। সাগরে ঢেউ উঠে যখন, আকাশ পাতাল খিলে তুফান,
তাতে মুক্তির ফারি মায়ার ভেরি, তলায়ে থাকে সর্ব্বক্ষণ।
ডুবায় অজ্ঞান পুরি, তুফান ভারি,
প্রেম ঢেউতে দেখা যায়না কূল কিনারা।
৪। ভেবে আদিত্য বলে, সে ঢেউ যখন উথলে,
ওরে দীনবন্ধু হইসনে বেহুস
সে প্রেম ঢেউ ধরিস কৌশলে।
দয়াল হরি গোসাইর দয়া বলে,
অধর চাঁদ অনিবার্য্য মিলবে তোর।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-অরুণভেরি
৬৩। তাল-ঠুংরী
শ্রীহরির কৃপা সাগরে আমার,
গেল না মন মাঝির তরী।
মাঝি চালায় তরী কৃপা সাগর,
সন্দীপ নদী নেয় ছয় দাঁড়ি।।
১। সন্দীপ নদীরএই বুঝি হয় রীতি,
তিন ধারাতে বসা তাতে, তিন মহামতি।
তাতে চুম্বক লোহা আছে স্থিতি,
(নিল) নায়ের লোহা আকর্ষণ করি।।
২। অবশেষে জোড়া খসে তায়,
নৌকা ধ্বংস অধ্বংস তাই কিছু নাহি রয়।
সন্দীপ নদীর স্রোতে, তুফানেতে, ছিঁড়ে গেল কাছি দড়ি।।
৩। (মাঝি) যদি যেত কৃপাসাগরে,
আশার নঙ্গর করে রতেম পূর্ণ মাল ভরে।
রইতেম প্রেমানন্দে বহর সঙ্গে, মরমে থাকিতেম মরি।।
৪। দীনা বলে সন্দীপ নদীতে,
হলেম সারা প্রাণে মরা, ছয় দাঁড়িয়ে মতে।
বল হরিগোসাই, উপায় কি তাই, মন মাঝি হয় পাজি ভারি।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
৬৪। তাল-খেম্টা
মন ভ্রমর শুন বলি তোরে
শ্রী হরি নাম ফুলের মধু খাও উদর ভরে।
খেলে জন্ম মৃত্যু হবে বারণ, ভব ব্যাধি যাবে দুরে।।
১। প্রভাতে খাইও মধু, বেলা কৈর না,
লাগলে পবন ভানুর কিরণ, মধু পাবানা।
ফুলে না পেলে মধু - হবা চদু,
ঘটবে জ্বালা হেলা করে।।
২। হরি বিলাস ফুল বাগানে, যত যত ফুল,
আছে পুরা মধু ভরা, সৌরভে আকুল।
যত অলিগনে রয় সেখানে, ঐ নাম মধু পান করে।।
৩। উড়ে উড়ে হরি নাম গুণ, গেয়ে হও বিভোর,
ফুলের মধু খাওরে শুধু, ও মন মধুকর।
তবে প্রেমানন্দে সুখে রবি, ক্ষুধা তৃষ্ণা যাবে দুরে।।
৪। আদিত্য তাই অলি হয়ে, ভ্রমিয়ে বেড়ায়,
মধুর আছে মন উল্লাসে, ফুলে ফুলে ধঅয়।
হরি গোসাই কয় মধু না পায়, দীনবন্ধুর কর্ম্ম ফেরে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-লম্পট
৬৫। তাল-খেম্টা
ঘুচবে তোর ভব যন্ত্রনা,
কল্প বৃক্ষ মূলে যেয়ে কর কামনা।
সবে প্রেমানন্দে নেচে গেয়ে, কর পূজা অর্চ্চনা।।
১। কল্প বৃক্ষে আছেন গুরু, পরম দয়াল,
যে ফল যে কল্পনা করে, মিলে তার সেই ফল।
জীবের ফ’রাতে কল্পনা ধরায়, এল হরি কেলেসোনা।।
২। বিবেক সিন্দুর, ভক্তি চন্দ্রন, দিয়ে বৃক্ষের গায়,
কামপাঠাকে বলি দিও, ঐ বৃক্ষের তলায়।
জ্বেলে জ্ঞানের বাতি কর স্তুতি, প্রেম স্বরে প্রার্থনা।।
৩। ভবে এসে হিংসা দ্বেশে, করলি কাল যাপন,
(মনের) ফেলে গরল হয়ে সরল, ভাবে হও মগন।
খেও ভাবের ঘরে প্রেমের মধু, গরল খেয়ে দৈরনা।।
৪। আদিত্য কয় গুন, কয় আত্মদান, ও দীনা নর্ব্বর
(তবে) কল্পতরু পরম দয়াল মিলবে এসে তোর।
হরি গোসাইর চরণ রাখিস্ স্মরণ, ভব বন্ধন রবেনা।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া
৬৬। তাল-ঠুংরী
হরি এই মিনতি চরণে, তোমারয় যেন ভুলিনা কখনে।
যখন দেখিতে চাই দেখা যেন পাই শান্তি হরি একসনে।।
১। জম্মে জম্মে কৃপা করে, সৎপথে রখিও মোরে।
তোমার নাম যেন রাখি অন্তরে, তিলেক না ভুলি কোন দি।ে।
২। সৎমতি সদ্ব্যবহারে, রেখ সৎসঙ্গের ভিতরে।
আমার কুমতি রাখিয়ে দূরে, স্থান দাও হরি চরণে।।
৩। (তুমি) পূর্ণচাঁদ ক্ষীরোদবিহারী, সর্ব্ববাঞ্ছা পূর্ণকারী।
নিয়ে প্রেম অনুরাগ হিরার ছুরি, নাশ কামরূপ বেইমানে।।
৪। (আমার) এহৃদি পর্ণ কুটিরে, পদার্পণ দেও কৃপা করে।
দীনার কলুষিত দেহ কর সুশীতল, শান্তি দানে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ফকিরি ধাওর্য়া
৬৭। তাল-ঠুংরী
দয়াল গুরুচাঁদ রে আমি কি করিতে যাব মম দেশে।
ঐ সব সকল অসার মায়ার সংসার, শৈলেম্ সে বিষয় বিষে।।
১। পেয়েছি মন চোরা হরি, মনে বড় আশা ভারি।
আমি আসন দিব হৃদয় পুরি, রাখব হৃদি আকাশে।।
২। বহুদিন পর দিয়ে দেখা, ছেড়ে যায় আজ প্রাণ সখা
আমি কেম্নে রাখি বাকা সখা , ভাবিতেছি তাই বসে।।
৩। চিরদিনের দাসী হয়ে, আছি যার ভরসায় চেয়ে,
সে যদি যায় নিদয় হয়ে, দেহ রাখি কার আশে।
৪। দীনবন্ধু দুঃখে বলে, এই কি ছিল মোর কপালে।
(আমি) হরি গোসাইর চরণ ভুলে, মত্ত রলেম কু-রসে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-অরুণভেরি
৬৮। তাল-ঠুংরী
কি দিয়ে পূজিব আমি, গুরু তোমার ঐ শ্রীচরণ।
আমার শক্তি ভক্তি সব নিয়ে যায়, দুষ্ট কু-মতির কু-পবন।।
১। যে ধনেতে তুমি হও খুসী,
সে ধন আমার নাই, কি তোমায় দিয়ে ভালবাসি।
হও এক মনেতে তুমি খুসী, তাও ত আমার হয়না কখন।।
২। (আমার) মন যদি দিতে চাই তব পায়,
সে মন আমার উড়ায়ে নেয়, কু-মতির হাওয়ায়।
আমি দিবানিশি ভাবি বসি, ভাবতে ভাবতে দিন অবসান।।
৩। এই ভবে চৌরাশি লক্ষ বার
জনম ধারন করে আমি, এলম বারে বার।
ভুলে কু-মতির সেই কু-চক্রেতে কোন জন্মে হয় না সাধন।।
ভেবে তাই আদিত্য ডেকে কয়,
মন প্রাণ সমর্পণ করগে, হরি গোসাইর পায়।
দীনা বলে কু-মতির ছলে, জন্মে জন্মে হল মরণ।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া
৬৯। তাল- ঠুংরী
আমি শান্তি না পাই হে গুরুচাঁদ
এ দেহ প্রেম শুন্য প্রাণে।
আমি চাই না শান্তি ঘুচাও ভ্রান্তি
যাতে নাম না ভুলি জীবনে।।
১। (মনে) তব নাম ভাবেনা কখন
কু-পথ পানে থাক মগন।
আমি কেমনে করিব সাধন,
সারা জনম যায় অকারণে।।
২। সদা যেন তব গুণ গাই
রিপুর বসে ভুলে না যাই।
গুরু ঐ চরণে এই ভিক্ষা চাই,
মত্ত থাকি যেন কীর্ত্তনে।।
৩। নাম নিতে মোর না হয় ধন্দ,
মন মনুয়ার ঘুচাও সন্দ।
আমার মনেতে চায় সতের সঙ্গ,
কু-মতি পিছে টানে।।
৪। প্রার্থনা হরি গোসাইর পায়
অন্তে মোর করিও উপায়।
গুরু ঐ নাম যেন কঠিন হৃদয়।
দীনা জপে যেন নিশিদিনে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া
৭০। তাল-ঠুংরী
দয়াল গুরু চাঁদ রে-
আমি প্রাণে মারা গেলাম রে এ দেশে।
আমি এ দেশ ছেড়ে বিদেশী হর,রবনা গৃহ-বাসে।।
১। এ দেশে ভূলিয়ে রঙ্গে, পয়মাল হলেম অসৎসঙ্গে।
দুষ্ট কুমতির কুরঙ্গে, ভুলে য়ায় মন হরিষে।।
২। এই যে সাধের দেহ খানি, ক্ষয় হতেছে দিন রজনী,
গুরু হৃদে দেও চরণ দুখানি, সারা জনম যার মোর কু-রসে।।
৩। কারে জানাই দু॥খের কথা, ব্যথিত আমি পাব কোথা।
গুরু এমন বান্ধব নাই মোর হেথা, সব হারালেম কর্ম্মদোষে।।
৪। দীনা কয় মোর এই বাসনা, হৃদে রাখব্ কেলে সোনা।
আমার সংসার বিষয় যাতনা, ঐ চিন্তে সকল নাশে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ভাটিয়অল
৭১। তাল-ঝাপ
প্রাণের ভাইরে আমার মাকে
বদন ভরে ডাকিও মা বইলে।
মায়ের প্রাণের দরদ বুঝবে এমন দরদী নাই ভুতলে।।
১। মাকে আমার মা বলিবার, তোমারা আছ সকলে।
আমি হই কু-পুত্র, অপবিত্র, জঘন্ন ভূমণ্ডলে।।
২। তোমরা মায়ের হও সু-পুত্র সবে রও মায়ের কোলে।
মায়ের কর যতœ, পাবে রতœ, আমার নাই ছার কপালে।।
৩। আমার শান্তি মায়ের করলে যতœ, শান্তি হয় অন্তিমকালে।
আমি সুকর্ম্মহীন, ভজনবিহীন, দেশে যাব কোন বলে।।
৪। দীন কয় বিদেশে, পাগল বেশে বেড়াই কু-পুত্র বৈলে।।
আমার বঞ্ছা হিয়ে, দেশে গিয়ে, রব মায়ের চরণ তলে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-উরুশেন
৭২। তাল-ঝাপ
মিছে মায়ার কান্না কাঁদলে কি হবে,
দেখ মন সব ফেলে যেতে হবে,
সময় থাকতে সম্বল নেও করি।
মন তোর সকল অসার মায়ার সংসার হে,
যত ভ্রাতা আর পুত্র নারী।।
১। মায়ার রাজ্যে বসত কর, মায়ার কান্ন কেঁদে মর,
হনি নামে ঝরে না বারি।
ঐ মায়ার রাজত্ব, মেয়ে, পুত্র হে,
হল কূহলিনী পায়ের বেড়ি।।
২। যে খেলঅ খেলিতে এলি, মায়ার ছলে ভুলে গেলি,
সে খেলা তোর পিছে রয় পড়ি।
কর মায়ার খেলঅ, ঘটবে জ্বালা হে,
যে দিন যাবিরে যমের বাড়ি।।
৩। পূর্ব্বের কথা ভুলে গিয়ে, মায়ার খেলায় মত্ত হয়ে,
স্থুলের কথা করলি রে চুরি।
বলছ সপ্ত মাসে, স্থুলের দেশে হে,
রলি সে কথা কেন ভূল করি।।
৪। সপ্ত মাসে মায়ের উদরে, এলি হরির সাথে সত্য ক’রে,
নাম নিবি তুই এ জনম ভরি।
হয়ে সত্য ভ্রষ্ট হলি নষ্ট হে,
এখন কু-পথে বেড়াও ঘুরি।।
৫। আদিত্য কয় বলি তোরে, গুরুর দেহ এমনি করে।
বৃথা কাজে দিলি ক্ষয় করি।
হরি গোসাই বলে, মায়ার ভুলে হে,
দীনা কাঁদলি দিন বিভাবরী।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ভোজেশ্বর
৭৩। তাল-একতালা
যদি তাড়াতে চাও কাম দ্রোনে।
গিয়ে রূপের দেশে, মন উল্লাসে,
যুদ্ধ কর তার সনে।।
১। সাদা ঠিক রেখ নয়ন, পলক দিওনা কখন,
রূপের ঘরে রূপ নেহারে, থাকিও চেতন।
যেমন চৌদ্দ বৎসর ছিল লক্ষণ,
অনিদ্রায় অনাহারে ভ্রমে বনে।।
২। দ্বাপরে যত যুদ্ধ হয়, সারথী শ্রী কৃষ্ণ সহায়
(কৃষ্ণের) কৃপাগুণে, সে অর্জ্জুনে, প্রাণে ভিক্ষা পায়।
তেম্নি করলে সহায়, হরির দয়ায়,
তবে জয়ী হবি কামদ্রোনের রণে।।
৩। কাম দ্রোন মহাযোদ্ধা হন, জ্ঞানধনুকে জুড়ে রূপের বাণ,
নামের হুঙ্কারেতে, শরাঘাতে, তাড়াও সে দুর্জ্জন।
অনুরাগের বসন কর ধারণ,
শ্রদ্ধা পত্র দেও গুরুর চরণে।।
৪। সেরূপ মহাযোদ্ধা সেজে, আরোহন কর মন গজে,
(ক্রোধ), লোভ, মোহ, সেনা সৈন্যে, রনে যাও সেজে।
বাজবে রনভেরি, হৃদয় পুরি, অগ্রসর হইও অতি সাবধানে।।
৫। আদিত্য বলে হও হুসিয়ার, দীনবন্ধুরে এবার
হরি গোসাইর দয়া বিনে, গতি নাইরে আর।
গুরুর আদেশ নিয়ে যুদ্ধে গিয়ে,
কামদ্রোণকে হটাও ঐ পঞ্চ বাণে।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-অরুণভেরি
৭৪। তাল-ঠুংরী
হরি প্রেম দিয়ে ডাকতে পারি না,
তাইতে কি দয়া হবে।
যত বোবা খঞ্জ পাগল অন্ধ তোমার সৃষ্টি বিশ্বজনা।।
১। যে জন প্রেম বারি দিতে পারে,
তারে কৃপা দর্শণ দিয়ে, নেও মুক্তি করে।
যার নাই প্রেম বারি, আঁখি ভরি, সে তোমার কি তৈয়ারী না।।
২। মন সাধে সৃষ্টি করে, এখন কেন ডুবাতেছ, অকূল সাগরে।
কেন করলে সৃজন, বিশ্ব ভূবন,
হরি নাম যেন তোমার ডুবেনা।।
৩। যেমন, ছায়া নিতে বৃক্ষতলে যায়,
ডাল পাতা ভাঙ্গিয়ে লোকে, তার উপরে রয়।
কত গোড়া কোপায়, শিকর উঠায়,
তাতে বৃক্ষের ক্রোধ হয় না।।
৪। তুমি কল্পতরু নামটি ধরে, কঠিন জোরে,
শিকড় করে আছ মৃত্তিকা পরে।
কল্পতরু নামে, এ অধমে কত দিতেছি ভৎর্সনা।।
৫। তাই বলে কি ক্রোধ ভরে,
করবে নাকি প্রাণে নষ্ট, অজ্ঞান ছেলেরে।
অজ অজ্ঞান ছেলে, কৃপা আপিলে,
দীনার কি ক্ষমা হবে না।।
লোকশিক্ষা
রাগিনী-ভাটিয়াল
৭৫। তাল-ঝাপ
আমি কেমনে করিব সাধন, এ দেহ প্রেমশূন্য প্রাণে।
আমার নাই ভাব ভক্তি, প্রেম শক্তি,
করি দুর্ভাবনা দিনে দিনে।।
১। অসৎ সঙ্গের ভিতরে পড়ে,
রঙ্গে ভঙ্গে কাল কাটালেম, বিষয় সংসারে।
আমার হয় না সাধন, কুÑছার জীবন,
জনম গেল অকারণে।।
২। আমি কর্ম্ম দোষী সাধন ভজন হীন,
তাইতে নাকি গুরু আমায়, করলে দীনহীন।
আমি কর্ম্ম যদি তরতেম ভাল,
থাকতেম গুরুর শ্রীচরণে।।
৩। দুর্ভাগ্য কি এই ছিল আমার,
বিধির কি দোষ দিব সকল, কর্ম্মেরি ব্যাপার।
কবে সাধরনের ধন, পাই দরশন, জুড়াইব দু’নয়নে।।
৪। সর্ব্ব ধন মোর বাটপড়ে দিয়ে,
অসময় হাহাকার করি, ভীরু সাজিয়ে।
দীনা বলে ভুমন্ডলে,
(জন্মিয়ে) মৃত্যু কেন হল না প্রাণে।।