গান নং ১২১-১৩৫
১২১ নং গান
হাতে কর গৃহকর্ম, মনে মুখ বল হরি বুলি।
শুধু পরের ভাবনা ভেবে ভেবে রে নিজের কথা গেলি ভুলি।।
১। কত বার এসেছিল ভবে, নাই তার ঠিকানা,
কাঁচ ভেবে কাঞ্চন বিকালি ওরে দীন কানা।
শুধু করে গেলি আনা গোনা রে, মানব জনম হলো তোর খালি থলি।।
২। মোহ গর্ভে ডুবে রলি মন রিপুর তাড়নায়,
নিজের রতন পরকে দিলি ওরে দূরাশয়।
তোরে ঘিরেছে মায়ার কুয়াশায় রে, চোখ থাকিতে অন্ধ হলি।।
৩। দিনের দিনে দিন ফুরাবে আসবে আঁধার রাতি,
যারা তোরে ভাল বাসে কেউ হবে না সাথী।
সেদিন নাম বিনে আর নাইরে গতি রে, দিন পাবিনা দিন হারালি।।
৪। বিনোদ বলে ও ভোলা মন দিন ফুরায় যায়,
দিনের শেষে অন্ধকারে করবিরে হায় হায়।
সেদিন হরিচাঁদ বিনে নাই তোর উপায় রে, কেন বিষয় ভোগে ভুলে রলি।।
১২২ নং গান
ধীরে ধীরে বাও হরিচাঁদ তোমার নামের তরী,
পিছনে পড়িয়া আমার হয়ে গেছে দেরী।
আমার এ জনম বিফলে গেল, তোমায় ভুলিয়ে দয়াল হরি।।
১। সকাল বেলা যারা তোমার ঘাটে গিয়াছে ,
তোমার নৌকায় পার হয়ে তারা পরপার গিছে।
আমি আছি সবার পিছে, আমার নাইকো পারের কড়ি।।
২। বহু দুরে পড়ে গেছি, দয়াল পথ বড় ভীষণ,
হু হু শব্দে জ্বলিতেছে কামনায় হুতাসন।
আমার আতঙ্কে কাঁপিছে পরাণ, বল উপায় কিবা করি।।
৩। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার মায়ামোহের জাল,
এড়াইতে না পারিয়া দয়াল হয়েছি দুর্বল।
এখন তোমার কৃপা বিনে দয়াল, আমার বিপদ ভারী।।
৪। বিনোদ বলে আজ কাল বলে ডুবে গেল বেলা।
অন্ধকারে ঘুরে মরি আমি যে একেলা।
আমার জুড়ায় না এই ত্ৰিতাপ জ্বালা, বিনে তোমার চরণ তরী
১২৩ নং গান -তাল ঠুংরী
ওগো বিশ্ব পতি অগতির গতি মিনতী তব পায়।
তুমি অধম তারণ পতিত পাবন হৃদয় রঞ্জন প্রেমময়।।
১। সন্ধ্যার আধারে রয়েছি বসে,
কি করি উপায় হারায়েছি দিসে।
তুমি পারের কাণ্ডারী লয়ে পারের তরী পার কর অভাগায়।।
২। খেলিতে মায়ার খেলা রয়েছিভুলিয়া,
কখন যে বেলা গিয়াছে ডুবিয়া।
আমার হাতে নাই কড়ি, উপায় কি করি, বল বল দয়াময়।।
৩। সাথের সাথী যারা কেহ নাই কাছে,
তুমি ছাড়া দয়াল আর কেবা আছে।
এ দীন বিনোদ কেঁদে কয়, ও গো প্ৰেমময় করুণা কর আজ আমায়।।
১২৪ নং গান
ও গো প্ৰেমময় তাপিত হৃদয় জুড়াও আসিয়া।
আমার তুষিত পরাণ করহে শীতল প্রেমবারি সিঞ্চিয়া।।
১। তাপিত দহনে আশারই বাসর গিয়াছে পুড়িয়া,
দারুণ বিরহ ব্যাথা জুড়াইব কোথা, স্থান নাহি পাই খুঁজিয়া।।
২। সংসারে এসে রিপুর বসে, রয়েছি তোমায় ভুলিয়া।
আমার সংসার বন্ধন করহে মোচন, কৃপাময় কৃপা করিয়া।।
৩। আসিবার কালে তুমি যা দিলে সকলি ফেলেছি হারিয়া।
এখন শুন্য হাতে কান্দি পথে পথে দেউলিয়া সাজিয়া।।
৪। আজ কাল বলে দিন যায় চলে, বেলা যায় ডুবিয়া।
এ দীন বিনোদ কেঁদে কয় ও গো প্ৰেমময় শ্ৰীপদে লও তুলিয়া ।
১২৫ নং গান – ঠুংরী
যার খেলা সে খেলে যায় মন তোর ভাবনায় কি ফল হয়।
ব্ৰহ্মা সূত্র ধরে নাচাইতেছে, যে ভাবে সে নাচায় কাচায়।।
১। যার তরণী তাহার নদী, বেয়ে যায়রে নিরবধি।
তুই কেবল মন জন্মাবধি, আমার আমার ভাবিস হৃদয়।।
২। বৃক্ষ আদি তরুলতা , তার ইশারাতে ঝরে পাতা।
মানুষের মধ্যে কয় সে কথা, তার খেলার কি ভাবে বোঝা যায়।
৩। বিনোদ বলে যায় না জানা, তাঁর দেওয়া মানব ছবি খানা
কি আশ্চৰ্য্য দুনিয়াময়।।
১২৬ নং গান- তাল ঠুংরী
সকলইত তুমি কর দয়াল উপলক্ষ আমি মাত্র।
আমি ভাবি আমি করি, তোমার হাতে থাকে সূত্র।।
১। কি আশ্চৰ্য্য তোমার খেলা, কেউ রাজা কারুর কাঁধে ঝোলা।
কেউ তোমার ভাবে আত্মভোলা, সকলে তোমার খেলার পাত্র।।
২। কেউ বাস করে দালানাতে, কেউ রয়েছে গাছতলাতে।
কেউ খেতেছে দুধে ভাতে, কারুর ভাগ্যে গাছের পত্র।।
৩। বিনোদ বলে হে প্ৰেমময় তোমার খেলা লতায় পাতায়।
কেউ রয়েছে সুখের শয্যায়, কারু দুঃখে ঝরে নেত্র।।
১২৭ নং গান – তাল ঠুংরী
যে ভাবেতে রাখছি সেই ভাবেতে হব শান্তি।
আমি যেন তোমায় ভুলে না যাই, মন যেন মোহ হয় না ভ্ৰান্তি।।
১। জানি তুমি বিশ্বস্বামী সকলই’ত কর তুমি।
কেন আমি আমার আমি, ভক্তি সাধন নাই এক ক্রান্তি।।
২। মনে ভাবি তোমার হবো, তোমার গুণ গেয়ে বেড়াব।
সে ভাব আমি কবে পাব, কর আমার অঘোর পন্থি।।
৩। বিনোদ বলে হে প্ৰেমময়, তোমার খেলা লতায় পাতায়।
থাকে নামের ধ্বনি আমার হৃদয়, নাম নিতে হইনা ক্লান্তি।।
১২৮ নং গান – তাল ঠুংরী
কি খেলা খেলাইছ দয়াল তোমার খেলার নাই তুলনা।
তুমি আকাশ ভরে ফুটাইছ ফুল কেবা করে তার গণনা।।
১। বৃক্ষ আদি লতায় উপর, রং ভেঙ্গেছ কি চমৎকার।
অঘাধ জলে খেলছে সাতার, রং বেরংগের মাছের পোনা।।
২। বিশ্ব ভরা তোমার খেলা, সাগর বুকে ঢেউয়ের দোলা।
বিজ্ঞানীরা করে মেলা চাঁদে গিয়ে দিচ্ছে হানা।।
৩। তোমার নামের গান গাহিয়া পাখিরা সব যায় উড়িয়া।
তোমার খেলার ভাব দেখিয়া, বিনোদ করে আনা গোনা।।
১২৯ নং গান - ঠুংরী
যাঁর মন কান্দে মন মানুষ বলে, সে কি ঘরে রইতে পারে।
ও তার জীবন মরণ সমান কথা, শুধুই দুটি আঁখি ঝরে।।
১। মন গিয়ে মন মানবের সাথে, বিশুদ্ধ প্রেমের ভাবেতে
ও সে কেন্দে বেড়ায় পথে পথে, বেহাল বেশে বেড়ায় ঘুরে।।
২। চায়না স্বৰ্গ, চায়না মর্ত্ত্ সদায়ে তার ভাব উন্মত্ত্ব।
ও সে হয়ে রূপের অনুগত, সদায় থাকে রূপ নেহারে।।
৩। তাঁর প্রেমের সঙ্গে লেনা দেনা, সুখ দুঃখের ধার ধারে না।
বিনোদ বলে সে ভাব জানা, আমার ভাগ্যে হলো নারে।।
১৩০ নং গান- ঠুংরী
মানুষ খোঁজ মানুষ ভজ ওরে আমার অবুঝ মন।
মানুষের মেলা মানবের খেলা, মানুষ হয় পরম রতন।।
১। মানুষ সত্য এ সংসারে, দেখতে পাবি প্রেম বাজারে।
মানুষ হয় সবার উপরে, বিশ্বস্রস্টার এই লিখন।।
২। সেই মানুষের সঙ্গ নিলে, ত্রিতাপ জ্বালা যায়গো দূরে।
প্ৰেমানন্দে হৃদয় দোলে, কেটে যায় মায়ার বাঁধন।
৩। বিনোদ বলে শোনরে মনা, ভক্তি বিনে কিছুই হয় না।
ভক্তি ভরে করা সাধনা, পাবিরে সাধনের ধন।।
১৩১ নং গান - ঠুংরী
মানুষ হতে সাধ ছিল বড়, হলো না তা কৰ্ম্মদোষে।
মানুষ হতে যে ধন ছিল, সব খোয়ালাম রিপুর বসে।।
১। চরিত্র নাই সুপবিত্র তাইতে পিতার হই কুপুত্ৰ।
আমি তাইতে সবার ঘৃণার পাত্র, ঘুরে বেড়াই দেশ বিদেশে।।
২। মাতা পিতার সাধন জোরে, এসেছি। এই ভবের পরে।
তাদের সেবা করলেম নারে, কি করিলাম ভাবে এসে।।
৩। যার ইশারায় ভাবে এলাম, তার ভাবনা না করিলাম।
মানুষ হতে বাদ সাধিলাম বিনোদ কাঁদে বসে বসে।।
১৩২ নং গান- তাল ঠুংরী
কত ছবি এঁকেছ দিয়াল বিশ্ব খাতার পাতায় পাতায়।
আমি ভাবতে গিয়ে সব ভুলে যাই, সাবাস তোমায় শিল্প কলায়।।
১। জলে মৎস্য ডাঙ্গায় পশু, মায়ের কোলে খেলছে শিশু।
গাছে ঝোলে আম্র লিচু, পাখি নাচে শাখায় শাখায়।।
২। কত রংয়ের এঁকেছে ফুল, তার’ই গন্ধে ভ্ৰমর ব্যাকুল।
কত ভক্ত জনা হয়ে আকুল, সে ফুল দিচ্ছে তোমার পায়।।
৩। আকাশে একেছ ছবি, গ্রহ তারাশশী রবি।
তোমার ইচ্ছায় হয় গো সব’ই, বিনোদ ভাবে বসে নিরালায়।
১৩৩ নং গান - তাল ঠুংরী
কোন কলে গড়াইছে বিজ্ঞান ট্যাণ্ডেস্টার টেলিভিশন।
হাওয়া ভরে কথা ধরে কাছে পেল সন্ধান।।
১। ধন্য কলি যুগ ধন্য বিজ্ঞানীরা জগত মান্য।
এরাই দেশের অগ্রগণ্য, করে মহাশূণ্য অভিযান।।
২। কম্পিউটারে কাজ করছে , চন্দ্রলোকে কল ঘুরছে।
ছায়া করে পাঠাইতেছে, সারা বিশ্বে বর্তমান।।
৩। চন্দ্ৰলোকে বিজ্ঞানীরা জয় করে এসেছে তারা।
বিনোদ বলে দফসারা, বুড়ীর কোন নাই সন্ধান।।
১৩৪ নং গান - তাল গড়খেমটা
কলিতে ধন্য জ্ঞানী মানুষে।
বিজ্ঞানে করেছে অজ্ঞান কি আশ্চৰ্য্য এ বিশ্বে।।
১। হাওয়া ভরে চলছে মানুষ গ্রহ থেকে গ্রহান্তর,
রকেট যানে ঘুরে বেড়ায় দেখতে লাগে চমৎকার।
পাতালপুরে রেলের গাড়ী,মহা-শূন্য বসত বাড়ী,
স্কাই-লাভে করে দেরী, ছুটে যায় চাঁদের দেশে।।
২। হাওয়া ভরে বিশ্বের খবর ঘরে বসে শোনা যায়,
ট্যাণ্ডেষ্টারে কথা ধরে টিভির মধ্যে দেখা যায়।
ঢাকা থেকে বলছে কথা, ঘরে বসে দেখতে পাই তা,
ধন্যরে বিজ্ঞানীর মাথা, তাই দেখি বসে বসে।।
৩। জলের থেকে আলো ধরে ঘরে ঘরে জ্বেলে দেয়,
সূৰ্য্যের থেকে রশ্মি ধরে বিজ্ঞানীরা ভাত রাধায়।
অটমেটিক ঘড়ির কাটায়, সময় মত সময় জানায়,
আত্মা ধরে কথা বলায় তাই শুনে হারাই দিশে।।
৪। বিজ্ঞানীদের আবিস্কার ভয়াবহ দুনিয়ায়,
করে যেন মারণ অস্ত্ৰে বিশ্ব বাসী ধ্বংস হয়।
বিনোদ বলে বিশ্বের বুকে, বিজ্ঞানীরা থাকুক সুখে,
এ বিশ্বের সকল লোকে , রয় যেন ভাই মিলে মিশে।।
১৩৫ নং গান- তাল ঠুংরী
ভোলা মন পাগোল রে সাধের জনম হলোরে মাটি।
এই ভবের খেলা খেলতে এসে, করলি কত ভুল ত্রুটি।।
১। যাদের সঙ্গে খেলছিস খেলা আপন আপন ভাবিয়া,
তাঁরা একদিন ফাঁকি দিয়া যাবে ছাড়িয়া।
কাঁদবি শেষে আকুল হইয়া, সেদিন হাতে রবে খালি ঘটি।।
২। আত্মতত্ত্ব না বুঝে হলি বেসামাল,
রিপূর বশে হারা হলি নিজের ঘরের মাল।
শেষে কালের টানে হবি বিকল, সার হবে বাঁশের লাঠি।।
৩। দিনের দিন দিন ফুরাবে হবে অন্ধকার।
এদীন বিনোদ বলে মনরে আমার, সেদিন ঘোর হবে আঁখি দুটি।