মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নংঃ ৭১-৯০

৭১নং তাল -গড়খেমটা
গুরু তত্ত্ব কয়ে ভারি গোঁসাই সেজেছ
গুরু কি ধন চিনলিনা মন, সে রসে তুমি নি তাই মজেছ।।
 
লোক সমাজে হরি কথা কও, বাবার ঠাকুর হয়েরে মন, পায়স অন্ন খাও
তার নি উমান পাও, সাধু নাম কোলাও, হরি নামটি দিয়া জগৎ মাতাও,
মনা ভাই, তুমি নি তায় মেতেছ।।
 
দোষ-লুকায়ে গুণের কথা কও; হয়ে করণ বিহীন, আপনি প্রবীণ জগতে জানাও,
ঘাটে নৌকা বাও, প্রতিষ্ঠা বাড়াও, হারে চোরের নৌকায় সাধুর নিশান,
আমার মন টেনে কেনে দিয়াছ
 
লোক ভুলাতে হরিকথা কও, অন্তরেতে দুষ্ট, মুখে মিস্ট কথা কও;
কাজের কাজি নও, কপট সাধু হও, গুরু তত্ত্ব পরমার্থ,
না জেনে, গুরুর ভূষণ পরেছ।।
 
আর ভাব দেখায়ে ভাবের কথা কও; সিংহের মত ভঙ্গি দিয়ে অনুরাগ দেখাও,
প্রেমের প্রেমিক নও, ঢলুয়া প্রেম দেখাও, যে দিন শমন এসে, বাঁধবে কসে,
এড়াতে সম্বল কি তার করেছ
 
তারকচাঁদ কয় ছাড় জাহিরী, সুক্ষ পথে না থাকিলে মিলবে কি হরি,
দেখনা বিচারী, চাড় জুয়াচুরি, অশ্বিনী তুই ব্যভিচারী,
আপন কর্ম্মদোষে হয়েছ।।
 
৭২নং তাল - ঠুংরী
আমি গুরু বৈমুখ হয়ে রলেম ভাই, এ মুখ কেউ দেখ না
এ পোড়া মুখ দেখলে পরে ও তার দুঃখ আর যাবে না।।
 
হরি বৈমুখ হলে পরে, গুরু গোঁসাই রাখতে পারে, বিচার অনুসারে
গুরু বৈমুখ হলে পরে, তারে কেউ রাখতে পারে না।।
 
গুরু গোঁসাইর দয়া ছিল, কর্ম্মদোষে নিদয় হল, শেষে বিদায় দিল,
ভবকুপে ফেলে দিল, আমায় কেউ ডেকে সুধায় না।।
 
বন্ধু বান্ধব ছিল যারা, আমার বিপদ দেখে পালায় তারা ভেবে হলেম সারা
তবিল ভেঙ্গে গেলাম মারা, আমার মন মতি ভাল না।।
 
গুরু গোঁসাই দয়া করে আমায় পাঠাইল প্রেম বাজারে, লোভে এলেম ফিরে
এমন সুধা মধু ত্যজ্য করে, এসে খেলেম গরল পানা।।
 
মহানন্দ বলছে দুঃখে, এমন অপরূপ রূপ দেখে চক্ষে, মজলি ঐহিক সুখে
অশ্বিনী তোর নাইরে রক্ষে, আমার গুরু চন্দ্র বিনা।।
 
৭৩নং তাল আদ্দা
হুজুরে পড়েছি ধরা আমারে কেউ ছুসনে তোরা
আমার বাতাস লাগলে পরে, পাবিনা আর কুল কিনারা।।
 
আইন জেনে আইন লঙ্ঘি, লোককে দেখাই সাধুর ভঙ্গি;
কেউ হইনা আমার সঙ্গী, জানে প্রাণে যাবি মারা।।
 
পিতা মাতার পুণ্যের জোরে, গিয়েছিলাম প্রেম বাজারে;
কর্ম্মদোষে এলম ফিরে, চিনলেম না সেই প্রেমের ধারা।।
 
স্বার্থলোভে তত্ত্ব হারাই, সদাই করি অর্থের বড়াই;
ষড়রিপুর স্ফুর্ত্তি বাড়াই, ঐ দুঃখেতে হলেম সারা।।
 
কি দোষ দিব বিধাতারে, সকলই স্বকর্ম্মে করে;
ঝিকে শিকায় বৌটী মেরে, জানতে পারে ভাবুক যারা।।
 
গুরুচাঁদের মধুর বাণী, কর্ম্মগুণে হয় রাজরাণী;
কর্ম্মদোষে হয় বারাণী, স্বাক্ষী তার অশ্বিনী ফেরা।।
 
৭৪নং তাল - একতালা
কত গুণের হরি আমার, গুণের বলিহারি
হরি বিনে রাত্রি দিনে, জুরিয়া ঝুরিয়া মরি।।
সত্ত্ব রজঃ তম গুণ, দিবানিশি গায় গুণ;
গুণেতে হয়ে নিপুণ, বৈষ্ণবী শঙ্করী।।
যার গুণে সেই দিনমণি, অন্ধকার হরেন তিনি
সুশীতল চন্দ্র যিনি, গঙ্গা পেল, শীতল বারি।।
যার গুণেতে জগৎ বন্দী, অনাদি না পেল সন্ধী,
বিধানে না পেয়ে বিধি, হলেন ব্রহ্মচারী।।
যার গুণে সেই মহানন্দ, বিতরিল প্রেমানন্দ,
অশ্বিনী তোর যায় না সন্দ, বিষয়ে বিষ পান করি।।
 
৭৫নং তাল - একতালা
তত্ত্ব জ্ঞানে মত্ত হয়ে, নিত্য বস্তু জান
অনিত্য সংসারে রে মন, সং সেজে তুই রৈলি কেন।।
অনিত্য সংসার ছাড়, নিত্যধন অন্বেষণ কর;
মন মানুষে দিয়া ভার, বিবেক আর অনুরাগ আন।।
অনুরাগের এমনি ধারা, মনকে করে মাতোয়ারা;
করিয়া সে পাগল পারা, প্রেমামৃত করায় পান।।
দান করিলে প্রেমামৃত, মন মাতঙ্গের হয় সামর্থ্য;
দলিয়া সংসার অনিত্য, মন মানুষের পায় সন্ধান।।
বিবেক বন্ধুর এমনি রীতি, মনকে করে ছন্নমতি;
ঘুচায়ে সে বাহ্য স্মৃতি, প্রেমানন্দ করে দান।।
প্রেমানন্দ উদয় হলে, মহানন্দ গুরু মিলে;
অশ্বিনী তোর এইকপালে, সে আনন্দ ঘটবে কেন।।
 
৭৬নং তাল - ঠুংরী
কেনরে শ্রী গুরুর পদে কি বিষাদে, এ দেহের ভার দিব
আমি যেমন মানুষ তেমনি হবে, গুরুকে কেন দায় ঠেকাব।।
মনে মম এই সাধ, শ্রীগুরুর শ্রীকমল পদ;
কমলার সু সম্পদ, মূলে থেকে নিরখিব।।
যে চরণে চন্দন দিতে, শঙ্কা হয় গোপীর চিত্তে;
সে চরণে আমা হতে, কেনরে বেদান লাগাব।।
গুরু আমার থাকুক সুখে, আমি যেন কাঁদি দুঃখে;
কাঙ্গাল বেশে করব ভিক্ষে, গুরুর গুণ গেয়ে বেড়াব।।
গুরু আমার পবিত্র ময়, অপবিত্র মম হৃদয়;
দিবানিধি ভাবি সদায়, কেন সরলে গরল মিশাব।।
দয়াল গুরু মহানন্দ, পদে প্রেম মকরন্দ,
পান করলিনা তার একবিন্দু, অশ্বিনী তোর নাই সে ভাব।।
 
৭৭নং তাল - একতাল
এ পাপ দেহ গুরু পদে কেন করব দান
আমার দান দিবার এক বস্তু আছে, নেও যদি করি সম্প্রদান।।
প্রেম ভক্তি ধর্ম্ম পুণ্য, রেখেছি নাথ তোমার জন্য;
আমি মেঙ্গে খাব হয়ে দৈন্য মনে করেছি এই বিধান।।
সুখ শান্তি তোমায় দিয়ে, অধর্ম্ম অশান্তি লয়ে,
আমি থাকব মহাপাপী হয়ে, তবু না দেহ করিব দান।।
পবিত্রময় তব অঙ্গ, বহিতেছে প্রেম তরঙ্গ;
আমি কেন করব সে ভাব ভঙ্গ, এ দেহ পাপেতে পাষাণ।।
নারকী হইয়া রব, তবু না পদ পরশিব;
আমি যেমন ব্যক্তি তেমনি রব, ও পদে নিতে চাই না স্থান।।
মহানন্দের বাক্য লয়ে, দুঃখের পাষাণ বক্ষে দিয়ে;
অশ্বিনী থাক চাতক হয়ে, করিস না অন্য বারি পান।।
 
৭৮নং তাল -ঠুংরী
স্বার্থ ত্যাগী অনুরাগী হওরে মন
নিস্বার্থ নগরে যাবি, পাবি রূপের দরশন।।
নিস্বার্থ নগরে যাবি, কত যে আনন্দ পাবি;
প্রেমানন্দে সুখে রবি, মিলবে গুরু পরম ধন
স্বার্থময় সংসারে এসে, মত্ত হলি অর্থের বশে;
মায়া পিশাচী এসে, স্বহস্তে করল বন্ধন
দেখে শুনে হয় না জ্ঞান, করছ অভিমান সুরাপান;
প্রতিষ্ঠা শুকরের বিষ্ঠা, দিবা নিশি করছ ভক্ষণ
পুন্য মুক্তি ভোগ অভিলাষ, ছাড়রে কামিনীর কুরস;
অতি সরস নাম সুধা রস, সদায় করো আস্বদন।।
মহানন্দ উচৈঃস্বরে, ডেকে বলে অশ্বিনীরে,
এমন প্রেম ভক্তি রস নিলিনারে, ভবে আলি অকারণ।।
 
৭৯নং তাল - গড়খেমটা
যদি শান্তি ধামে যাবি, নিস্বার্থ গুরুতত্ত্ব, পরমার্থ অর্থ পাবি
প্রবৃত্তি মহিষী তারে নির্ব্বাসন করিবি-
নিবৃত্তি মহিষীর সঙ্গে, পরম রঙ্গে কাল কাটাবি।।
নিত্য ধন বল যারে, রয়েছে শান্তি পুরে;
শান্তি মা, গেলে দেখা পাবি
সে যে শান্তি মায়ের সাধনের ধন, প্রাণ সঁপে তায় দিবি;
এক মন দিলে, সে ধন মিলে প্রেমানন্দে সুখে রবি।।
সুজন মন উজান বেয়ে, শান্তিপুর চল ধেয়ে,
ত্রিবেণী এড়াইয়ে প্রেমের জোয়ার পাবি,
শ্রদ্ধা পাল অনুরাগ মাস্তুল, বাদাম টেনে দিবি;
যুতের হালির কাঁটা ঠিক রাখিয়া, শান্তিপুরে নাও লাগাবি।।
মাধুর্য্য ভক্ত যে জন, শান্তিপুরের মহাজন,
বিলাচ্ছে অমূল্য ধন, আয় তোরা কে নিবি
পবিত্রময় দেহ হলে, সেই সে প্রাপ্ত হবি;
অপবিত্র দেহ হলে, সঞ্চিত ধনে বঞ্চিত হবি।।
শান্তিপুর ভাবের পাগল, প্রেমরসে হয়ে বিভোল;
করতেছে প্রেমের কল্লোল, দেখলে পাগল হবি।।
হরি বলে বাহুতুলে, সেই দলে মিশিবি,
যেই পাগলের সঙ্গ নিলে, তাপিত অঙ্গ জুড়াইবি।।
পাগলের শিরোমণি, হরিচাঁদ গুণ মণি
শান্তিপুর দিন রজনী, উদয় অক্ষয় রবি
গোঁসাই গোলোকচন্দ্র মহানন্দ সেই পাগলে ভাবি;
অশ্বিনী তোর চিত্ত সন্দ, একে কালে সব ঘুচাইবি।।
 
৮০নং তাল - আদ্দা
প্রেম নগরে বাঁধগে বাসা
প্রেমিকেরই সঙ্গ নিলে ছুটবে না তোর প্রেমের নেশা।।
প্রেমিক রাজার রাজ্যে যাবি, প্রেম প্রতিমা দেখতে পাবি;
আনন্দেতে সুখে রবি, ঘুচবে না তোর প্রেম পিপাসা।।
প্রেমের পোস্তায় প্রেমের পুরী, প্রেমের শয্যায় শয়ন করি;
প্রেমিক গুরুর সঙ্গ করি, করগে রে মন প্রেম তামাসা।।
মিলাইয়া প্রেমের মেলা, দোলাইয়া প্রেমের দোলা;
খেলবি রে মন প্রেমের কেলা, পাতিয়া সেই প্রেমের পাশা।।
দাঁড়িয়ে সেই প্রেমের তীরে, স্নান কর মন প্রেম সাগরে;
প্রেমের দোকান প্রেমের খনি, প্রেমিক মতুয়ার এই ব্যবসা।।
প্রেমিক মহানন্দ বলে, হরি প্রেম কি কথায় মিলে;
প্রেমিক তারক ডেকে বলে, অশ্বিনী প্রেম ভক্তিনাশা।।
 
৮১নং তাল - আদ্দা
মন কাঁদে মন মানুষ বলে
বিষম বিরহানলে, মনের আগুণ দিগুণ জ্বলে।।
মন মানে না ধর্ম্মের শাসন, পুণ্য মুক্তি তুচ্ছ দুজন;
দেখতে চায় মন মানুষ রতন, বয়ান ভাসে নয়ন জলে।।
রুদ্র আগুন সইতে পারি, ব্রহ্ম আগুন তুচ্ছ করি;
বিচ্ছেদ আগুন সইতে নারি, প্রাণে মরি জ্বলে জ্বলে।।
মনের মানুষ মনোচোরা, মন না দিলে যায় না ধরা;
মনের মানুষ ধরবি তোরা, ডুব দিগে তার রূপ সলিলে।।
মনের মানুষ পাবার লাগি, গোলোকচাঁদ হল বিরাগী;
হীরামন হয় সর্ব্বত্যাগী, প্রেমসাগরে সাঁতার খেলে।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, মনের মানুষ হরিচন্দ্র;
অশ্বিনী তুই অজ্ঞানান্ধ, দেখলিনা রূপ নয়ন মেলে।।
 
৮২নং তাল - একতাল
আমার হরিচাঁদের রূপের কিরণ লেগেছে যার গায়
ও তার রসে তনু ডগমগরে, ভাবে তনু ডগমগ, দেখলে চেনা যায়।।
রূপ নেহারী ভক্ত যে জন হয়;
ও তার চিত্ত চকোর হয়ে বিভোর চাঁদের সুধা খায়
হয়ে অনুরাগী সর্ব্বত্যাগীরে, সুধাপানে মত্ত হয়।।
গগন চাঁদে জগৎ আলো হয়,
আমার হরিচাঁদের কিরণেতে, মনের আঁধার যায়
অগণিত রবি শশি, উদয় হরিচাঁদের পায়।।
কি কব সেই রূপের মাধুরী,
নয়ন পথে ছিদ্র পেয়ে, মন করে চুরি
আমার সর্ব্বস্ব ধন, করে হরণ, নয়ন পথে ঝলক দেয়।।
যার লেগেছে সে চাঁদের কিরণ
দিবানিশি চাঁদের সুধা করে আস্বাদন
ও সে প্রেমানন্দে হয়ে মগন ধুলায় গড়াগড়ি যায়।।
গোলোকচাঁদ সেই চাঁদের রূপ হেরে,
ও তার হৃদয় আলোক, হয়ে পুলক পলক না মারে
মহানন্দের বাণী শোন অশ্বিনী, তোর দরশনের সময় যায়।।
 
৮৩নং তাল - একতালা
দয়াময় দীনবন্ধু হরি;
কত দয়া করছ দয়ার বলিহারী
তুমি আমার লাগিয়া হে,
ক্ষুধার অন্ন হয়ে, পিপাসা হলে পিয়াও বারি।।
কত সুমিষ্ট সুপক্ক হে,
ফল লক্ষ লক্ষ, আমা লাগি রাখছ বৃক্ষোপরি
কত চিনি সন্দেশ মিঠা, পায়স অন্ন পিঠা,
খাওয়াইতেছ আমায় অখিল পুরি।।
তুমি আমার কারণে হে,
বিবিধ বসনে শয়নে দিতেছ শয্যা করি
আমি যখন ঘুমে থাকি, মুদে দুট আঁখি,
তুমি এস তখন হও প্রহরী।।
কত বিদ্যা বুদ্ধি দানে হে,
সর্ব্বত্র সম্মানে, করেছ আমায় মান্য মান ভারি,
আমায় দাসদাসী দিয়ে, গোঁসাইজি বানায়ে;
করে দিলে তায় আজ্ঞাকারী।।
তুমি আমারে তুষিতে হে,
সুখ শান্তি দিতে, দিয়েছ দারা কুমার কুমারী
দিলে ঘর বাড়ী জমি, সুখের নাইক কমি,
অশেষ সুখ ভুঞ্জালে হরি।।
দয়াল মহানন্দ বলে হে;
প্রেমানন্দ মিলে অনুরাগী হলে ফকিরি,
গোঁসাই তারকচন্দ্র সুধায়, অশ্বিনী তুই সদায়,
হরি বলে হে প্রেমভিখারী।।
 
৮৪নং তাল - আড়া
হরি পরাণ পুতুল আমার পরাণ পুতুল
নয়নের মণি হরি, জীবন জাতি কুল।।
বসন ভুষণ হরি, হরি আমার হস্তের চুড়ি;
হরি আমার শঙ্খ শাড়ী, হরি কর্ণের দুল।।
হরি পতি হরি গতি, হরি আমার রতি মতি;
হরি আমার দিবারাতি, হরি নাকের ফুল।।
হরি মাতা হরি পিতা, হরি গুরু জ্ঞান দাতা;
হরি আমার পুত্র ভ্রাতা, হরি অনুকুল।।
হরি ধ্যান হরি জ্ঞান, হরি আমার কুল মান,
হরি আমার ধন প্রাণ, হরি সর্ব্বমূল।।
হরি আমার মহানন্দ, হরি আমার তারকচন্দ্র,
হরি বিনা নিরানন্দ, অশ্বিনী আকুল।।
 
৮৫নং তাল - আড়া
গুরুর কাছে হুকুম নিয়ে, কাম রতির রণে দে হানা
শুন না শুন না কারুর মানা।।
নিস্কাম রথে আরোহণ করি, শম তম অশ্ব যুড়ি;
ধৈর্য্য ধনুক করে ধরি, সহজ বাণ কর যোজনা।।
কামের সহায় কলি রাজা, ষড়রিপু তাহার প্রজা;
জীবাত্মাকে দিচ্ছে সাজা, লুট করে নেয় উপাসনা।।
ক্রোধ কলির সেনাপতি, দয়া মায়া নাই এক রতি,
সুমতির ঘটায় কুমতি, এক জোটে আছে ছয় জনা।।
হরি নামের ডঙ্কা মারি, অনুরাগের ত্রিশূল ধরি;
তত্ত্বমসি তরবারি, ধারণ করলে ভয় রবে না।।
দয়াল মহানন্দ বলে, গুরু পদে প্রাণ সপিলে;
শঙ্কা নাই তোর কোন কালে, অশ্বিনী কেন বুঝ না।।
 
৮৬নং তাল - গড় খেমটা
উঠল ভাবসাগরে প্রেমের তুফান
চলগে ডুবে মরি স্বার্থ বল ছাড়ি।।
যদি মরতে পার মরার মত হয়ে রূপের অনুগত;
ত্যাজিয়া সংসার অনিত্য, ভ্রান্ত মায়া ছাড়ি;
তবে পাবি রতন, মনের মতন, অপরূপ রূপের মাধুরী।।
ডুব দিয়ে যেনা ছাড়ে উস, ঢেউ লেগে সে হয়েছে বেহুঁশ;
পেয়েছে সে মনের মানুষ, তারে কই ডুবারী;
এবার জাগলে পরে পাবা না রে, অধরে ধর সন্ধান করি।।
প্রেম লহরে রত্নাকরে, কাল মাণিক বিরাজ করে;
ধরতে হবে নিরিখ ধরে, ছেড়ে সব জাহিরী;
হয়ে বেহাল, পথের কাঙ্গাল, মন মাতাল হওগে প্রেম ভিখারী।।
পান কর প্রেম সুধাসিন্ধু, সই রেখে তোর নাদবিন্দু;
ইন্দু মাঝে বিরাজ করে, কিশোর কিশোরী;
হলে প্রেমে আর্ত্তি, যুগল মূর্ত্তি, আনন্দে দেখবি নয়ন ভরি।।
প্রেমসাগরের অতল বারি, মহানন্দের ডুবল তরী;
তারক চাঁদ কয় ডুবে মরি, বলে হরি হরি;
অশ্বিনী কেন বসে রলি, অলসেতে দিন কাটালি
এ সময় সয়নারে আর দেরী।।
 
৮৭নং তাল - গড় খেমটা
মন চোরা দুঃখ পাশরা দেখবি যদি তারে
নিত্য ধাম আনন্দ নগরে, চল যাই উজান মেরে
সে অন্তরঙ্গ ভক্তের সঙ্গে, বিরাজ করে পরম রঙ্গে,
সাঁতার খেলে প্রেম তরঙ্গে, পুলক অন্তরে;
সে যে প্রেমের বাধ্য ভবারাধ্য, মরিস্ কেন তপ তপস্যা করে।।
যোগী ঋষি দিবানিশি, তত্ত্ব জ্ঞানী তত্ত্বমসি;
সাধন করে বনে বসি, থাকি অনাহারে;
তবু পায়না দেখা, বাঁকা সখা, যতদিন প্রেম নাহি সঞ্চারে।।
প্রেমানুগা হও মন আগে, ডাকরে তারে অনুরাগে;
কাজ কিরে তোর যোগে যাগে, সাধ্য সাধন করে;
ছেড়ে সাধন ভজন পৈশাচ বৃত্তি, বসে থাক নিবৃত্তি আগারে।।
ধন্য করি যুগ ধন্য, জীবকে হইয়ে সুপ্রসন্ন;
জন্ম নিল শ্রীচৈতন্য, যশোমন্তের ঘরে;
এবার নিহেতু প্রেম দিবার জন্য, এসেছে মানব দেহ ধরে।।
ওড়াকান্দী নিত্য ধামে, মত্ত আছে সহজ প্রেমে;
গেলে পরে ভাগ্যক্রমে, দেখবি সে অধরে;
গোঁসাই গুরুচাঁদের দয়া বিনে, অশ্বিনী দেখবি কেমন করে।।
 
৮৮নং তাল - ঠুংরী
পথ ছাড়রে ছজন বাদী
আমি দেখতে যাই হরি গুণনিধি।।
পথে দিয়ে বিষয় কাঁটা বসে আছে ছয় বেটা;
একেত সংসারের লেটা, ঐ দুঃখেতে বসে কাঁদি।।
হরি দরশনে যাব, যাস যদি আয় সঙ্গে নিব;
প্রেমানন্দে সুখে রব, দেখব ঐ রূপ নিরবধি।।
তুইত আমার মিত্র ছিলি, তবে কেন শত্রু হলি;
করিস না আর জোরামালী, ভাল এবার চাওরে যদি।।
হরি প্রেমের প্রেমিক হব, প্রেম সুধা লুটে খাব;
যম বেটাকে ফাঁকি দিব, সে সুখের আর নাই অবধি।।
মহানন্দের দয়া হলে, দীনবন্ধু হরি মিলে;
অশ্বিনী তোর এই কপালে, ঘটবে কি অনাদির আদি।।
 
৮৯নং তাল - ঠুংরী
কে বলেরে রিপু ছয় জন
এরা গুরু সেবার মূল মহাজন।।
কামকে লাগাও গুরু সেবায়, ক্রোধ ভক্ত দ্বেষী জনায়
লোভ সাধু সঙ্গে সদায়, করুক হরি নাম সংকীর্ত্তণ।।
মোহ রূপ দরশনে, মত্ত থাকুক নিশি দিনে;
মত্ত হরি গুণ গানে, করুক সদা প্রেম আস্বাদন।।
মাৎসর্য্য মত্ত মাতঙ্গ, মহাভাবে দোলাক অঙ্গ;
যার গুণে হয় প্রেম তরঙ্গ, শীতল করে তাপিত জীবন।।
দেহ চালায় এই ছয় জনে, নিবে নিত্য বৃন্দাবনে;
দেখাইবে হরি ধনে, শঙ্করের সাধনেরই ধন।।
গুরু পদে মতি রাখ, সদয় সাবধানে থাক;
অশ্বিনী তোর নাই বিপাক, পাবি হরির যুগল চরণ।।
 
৯০নং তাল - গড় খেমটা
যে জন রক্ষা করে পিতৃধন,
সেই সে ভবে বাপের বেটা বিচক্ষণ।।
পিতৃধন না করে যতন, ও সে অধ্যেপ্যতে অভাজন।।
পিতৃধনের উপরে, হরিধন বিরাজ করে,
লয়ে রাসেশ্বরী, রাসবিহারী মহারাস করে,
যে জন অটল মানুষ, প্রেমে বেহুঁশ সেই করে রূপ দরশন।।
পিতৃধন রাখা বড় দায়, কইতে লাগে ভয়;
চুম্বক লোহার আকর্ষনে নার লোহা খসায়;
তেমনি মায়াবিনী চুম্বক লোহায়, পিতৃধন করে হরণ।।
নিষ্কাম সুখ বড় আনন্দ, তাতে নাই কামের গন্ধ;
যে জন ভবে করেছে সেই মদনকে বন্ধ,
ও তার হৃদয় দোলে প্রেমানন্দ, নিরানন্দ নাই কখন।।
ও যার গুরুতে আর্ত্তি, ও তার খন্ড রতি;
দিবানিশি দেখতে পায় সে, রসরাজ মূর্ত্তি;
সে প্রাপ্ত হয়ে প্রেম পিরীতি যুগল সেবার মহাজন।।
গোঁসাই তারকচন্দ্র কয়, যে জন উর্দ্ধরেতা রয়,
কাম গন্ধহীন প্রেম পিরীতি, সেই সে প্রাপ্ত হয়,
ওরে অশ্বিনী মোহিনীয় মায়ায়, কাম কুপে হলি পতন।।

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free