মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নংঃ ১১১-১৩০

১১১নং তাল - গড়খেমটা
যে দিন গুরু কৃপা করেছে,
আমার ভ্রান্তি মসি; তম নিশি, সেই দিন সুপ্রভাত হয়েছে
আমার হৃদাকাশে চিদানন্দ, রবি উদয় হয়েছে।।
হেরে আনন্দ ভাষ্কর, ভয় পেয়ে ছয় রিপু তস্কর,
ভেবে তারা বিষম দুষ্কর, হারে পলায়ে গিয়াছে,
আমার হৃদ সরোজে, শান্তিময়ী পুষ্কর বিকাশ হয়েছে।।
পূর্ব্বাহ্ন কি সায়হ্ন, আমার সব ঘুচে হল মধ্যাহ্ন,
শ্রীগুরুর কৃপা ধন্য, সন্ধ্যাকে বন্ধ্যা করেছে,
তাইতে না পেলাম ঠিক, সন্ধ্যা আহ্নিক, আত্মা তম্ময় হয়েছে।।
পোহাল তমঃ নিশি, অনুরাগ এক সিংহ আমি,
চিত্ত গিরি শৃঙ্গে বসি, হারে সে হুষ্কার করতেছে,
আমার কাম ক্রোধরূপ, হস্তী শার্দ্দুল, ভয়ে পলায়ে গিছে।।
হেরে সেই রূপের আলো, নিরানন্দ উলুক লুকাইল,
জ্ঞান আত্মার মত্ততা গেল, জ্ঞান শূন্য বিরাগ এসেছে,
তারা আলোক পেয়ে, পুলক হয়ে দোহে নৃত্য করতেছে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, আমার হরি সূর্য্য হল উদয়;
কু-আশা কুতম লুকায়, জীবের আর ভাবনা কি আছে;
ভেবে অশ্বিনী কয় হরি বিনে, ভবে বন্ধু কে আছে।।
 
১১২নং তাল - আদ্দা
গুরু পতির বসে বামে
ও তোর এ দেহ দক্ষিণা দিয়ে, যেও না দক্ষিণাশ্রমে।।
গুরু সন্তোষ অন্তঃপুরে, বসে থাক মন জ্যোতির ঘরে,
তবে ঐহিকে পর পুরুষ তোরে, ছোবেনা মন কোনক্রমে।।
গুরু শাসন শাশুড়ীর পায়, ভক্তি রেখ রে মন সদায়;
তবে বধুভাব হইবে উদয়, থাকবিরে মন শান্তিধামে।।
গুরুচিন্তা শঙ্খ শাড়ী, সাধ করে মন ধারণ করি,
গুরুকৃপা শয্যায় শয়ন করি, মজে থাক মন গুরুর প্রেমে।।
গুরু প্রতি করলে রমণ, পুত্র হবে মনের মতন,
ও তোর অনুরাগ হইবে নন্দন, কন্যা হবে ভক্তি নামে।।
তারক চাঁদের বাক্য ধর, গুরু পতির কারণ কর,
স্বামী মহানন্দের দয়া বড়, অশ্বিনী কেন ডুবলি ভ্রমে।।
 
১১৩নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ প্রেমের আগুণ লাগল গায়
আমার হৃদ কাননে, আগুণ লেগে, ধর্ম্ম মন্দির দগ্ধ হয়।।
মন্দিরে পুণ্য ধন ছিল, ও তা পুড়ে ছাই হল,
আমার সাধন ভজন, গিল্টির গহনা, সব পুড়ে গেল;
আমার ঘৃণা আসন লজ্জা বসন গো,
এক কালে পুড়ে হল ভষ্মময়।।
অনলের সহায় মন পবন, প্রেম ঘৃত ঢালছে গুরু ধন,
আমার হিংসা নিন্দা, মহিষ গন্ডার, মল অগনণ,
ও সে কাম বাঘিনী ত্যজল জীবন গো
ক্রোধ গজ পুড়ে ধরনী লোটায়।।
কুলমান পড়সী যারা, দেশ ছেড়ে পলাল তারা,
আমার মুক্তিবাগে, আগুন লেগে, পুড়ে হয় সারা,
আমার যোগ নিদ্রা, বিমাতা ছিল গো,
অষ্টপাশ ছেড়ে মা, পালায়ে যায়।।
প্রতিষ্ঠা ভগিনী ছিল মোর, অনল দেখে সে করে সোর,
আমার প্রেমের আগুণ, নিবাইতে করল বহু জোর,
ও তার পূড়ে গেল, মান্য বাসর গো,
তাই দেখে বিবেক, ভাই নেচে বেড়ায়।।
অনলের তরঙ্গ দেখে, তারকচাঁদ বলেছে ডেকে,
ও তোর জীবন যৌবন আহুরি দে, কাজ কি প্রাণ রেখে;
গোঁসাই মহানন্দ, বলছে সুখে গো
অশ্বিনীর মহাযজ্ঞের সময় যায়।।
 
১১৪নং তাল-একতালা
করেছি মহাযজ্ঞের আয়োজন
লয়ে যজ্ঞেশ্বরী, এস হরি, ক্ষীরোদশায়ী নীরদবরণ।।
জ্বালিয়া বিচ্ছেদ হুতাশন, এ দেহ কাষ্ঠ সম্মিলন,
আমার হৃদয় ঘটে, চিত্তপটে দিয়াছি আসন,
আমার ভজন পূজন, অশ্ব দিব গো
আহুতি দিব এ জীবন যৌবন।।
করিব পুণ্যক্ষয় যজ্ঞ, ধর্ম্মকে করলেম উৎসর্গ,
পঞ্চবিধা ভূক্তি মুক্তি, দিব তায় অর্ঘ্য,
আমি বর্গফল, আমেশ্বর দিব গো,
এ যজ্ঞে দিব, প্রতিষ্ঠা চন্দন।।
এ যজ্ঞের শুন পরিণাম, সর্ব্বস্ব ত্যাগ সর্ব্বস্ব বাম,
নাহি স্বর্গ নাহি মর্ত্ত্য, ফলে নিষ্ফল কাম,
আমা লক্ষ্মী ভাগ্য যজ্ঞে দিব গো,
মনেতে করেছি এই আকিঞ্চণ।।
দশ দশা দশমী দিনে, রসে প্রেম গঙ্গা পুলিনে,
আমি মহাযজ্ঞ, সঙ্গ করিব, যোগাসনে,
যে দিন, ব্রহ্মরন্ধ্য যাবে ফেটে গো,
সেই দিন হবে যজ্ঞ সমাপন।।
স্বামী মহানন্দ কয়, এই দশা ঘটবে যে সময়,
আমার হরিচাঁদের শীতল কিরণ, লাগবে তখন গায়,
ওরে অশ্বিনী তুই হ নিরাশয় গো,
এ যজ্ঞের ফলে কি তোর প্রয়োজন।।
 
১১৫নং তাল-রাণেটী
(আমার) আর কবে ঘুচিবে গুরু, সাধন ভজন পৈশাচ বৃত্তি
আমার সুখাভিলাষ, হবে বিনাশ, গুরুপদে হবে আর্ত্তি।।
নিষ্কাম বৃক্ষের মূলেতে যাব (হারে) বিচ্ছেদ অগ্নিকুন্ড জ্বেলে বসিয়া রব
(আমি) চিন্তাভষ্ম গায় মাখিব, (ও গুরু আমি) কাঁদব বলে গুরুপতি।।
ধর্ম পূণ্য হবে বিসর্জন, কবে হবে গুরুপদে আত্ম সমর্পণ
আমার জ্ঞান পুত্রের হইবে মরণ, (ওরে) ঘটবে প্রেম অবলার রীতি।।
কবে আমার ঘুচবে শুচি বাই, অঘোর পন্থী হয়ে সদা কাঁদিয়া বেড়াই
(আমি) সন্ধ্যার মুখে মাখিয়া ছাই, (ও কবে) মধ্যাহ্নকে করব স্থিতি।।
কবে আমার ঘুচবে আমিত্ব, গুরুর পদে মন মজাইয়ে করিব নৃত্য
(আমি) হব গুরুর অনুগত, (আমার) জ্বলবে হৃদয় বিচ্ছেদ বাতি।।
দয়াল মহানন্দ আনন্দ রবি, কবে হৃদয় উদয় হবে (আমি) বসে তাই ভাবি
গোঁসাই তারকচাঁদ কয়, দেখতে পাবি (ওরে) অশ্বিনী হ’ ছন্নমতি।।
 
১১৬নং তাল-গড়খেমটা
আমায় কি সপ্ন দেখালে, গুরু স্বপ্ন দেখালে
আমার সর্ব্বস্ব ধন,করে হরণ, আজ আমার দেউলা নাম লেখায়ে দিলে।।
আমার দেহ জমি, রাজ্য ভূমি, বাকীর দায় নিলাম করিলে,
আমার বাস্তু বাড়ী, নিলে কাড়ি, আজ আমায় চিন্তা কান্থা গলায় দিলে।।
আমার সাধন ভজন, ভ্রাতা দুজন রাজ্য হতে তাড়িয়ে দিলে,
আমার পুণ্য অর্থ, ছিল যত, আজ হতে খাস বাজারে লুঠাইলে।।
আমার সুখ সুন্দরী, বিলাস নারী, ছিলাম যাহার মায়ায় ভুলে,
আমার দুঃখের ভরা, দেখে তারা, সেও আমাকে গেল ফেলে।।
আমার শুচি মাতা, আচার পিতা, চিরকাল যার ছিলাম কোলে,
আমার দশা দেখে, মনের দুঃখে, তারা আমায় ফেল্ল ঠেলে।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, অশ্বিনী তুই অবোধ ছেলে,
যারে মাতা ছাড়ে, পিতা ছাড়ে, অন্তিমে হরিচাঁদ তারে করে কোলে।।
 
১১৭নং তাল - একতালা
হরিচাঁদ দৃষ্টি ভূতে, ভুতে পেল যারে
কি অদ্ভূদ সেই ভূতের দৃষ্টিরে,
পঞ্চ ভূতের দফা সারে হারে কর্ম্ম সারে।।
নাই তার গুরু জনার ভয়, কণ প্রলাপ বাক্য কয়,
কখন হাসে কখন কাঁদে, কখন ধূলায় গড়ি যায়,
কখন বীরাচারে, হুঙ্কার ছাড়েরে,
কখন করুণ স্বরে রোদন করে, কত রোদন করে।।
নিরাশ্রয় ছাড়া ভিটায় রয়, নাই তার ঘৃণা লজ্জার ভয়,
আহার বিহার পরে, জীবের লাগে ভয়,
ও তার লস্ফ ঝম্প, দেখলে পরে,
কত গৃহবাসী গৃহ ছাড়ে, হারে গৃহ ছাড়ে।।
ভৈরবী ভৈরব রবে, কি যেন বলে কি ভেবে,
সে ভারতী বুঝতে শক্তি, ধরে কি সবে; ও তা বুঝলে,
পরে, কর্ম্ম সারে, অমনি দৃষ্টি ভূতে ধরে তারে, হারে ধরে তারে।।
দৃষ্টি রোগের নাহিকবিধান, আয়ুর্ব্বেদ খুজিলে নিদান,
তন্ত্রে মন্ত্রে সারে না রোগ, হল বৈদ্য হতজ্ঞান; কত ওঝা
বৈদ্য হল হদ্দ, দৃষ্টি রোগ না সারতে পারে, হারে সারতে পারে।।
সে রোগের রোগী হীরামণ, গোলোকচাঁদ মৃত্যুঞ্জয় লোচন,
যার হয়েছে দৃষ্টিরোগ, সে আর সারবে না কখন,
বলে গোঁসাই তারক, সে দৃষ্টিরোগ,
অশ্বিনী তোর ঘটল নারে, হারে ঘটল নারে।।
 
১১৮নং তাল - একতাল
হরি প্রেম মদের নেশা, নেশা যার লেগেছে
হয়ে মত্ত মাতাল, হালছে বেহাল, প্রেমের মদ খেয়ে,
সে মেতে গিছে, হারে মেতে গিছে।।
গাঁজা ভাং ধুতরায় কি করে, মুষ্টিযোগ দিলে যায় সেরে,
যার লেগেছে, প্রেমের নেশা, ও তার অনুক্ষণ বাড়ে,
ও সে নেশার ঝেঁকে প্রলাপ বকে, সাইজি বলে হাই ছাড়তেছে, শুধু হাই ছাড়তেছে।।
প্রেমের নেশার নাই বিরাম, তিলেক দন্ডে নাই আরাম,
কখন বলে হরেকৃষ্ণ, কখন বলে রাম, ও সে নেশার ভরে,
নৃত্য করে, নয়ন জলে ভাসিতেছে হারে ভাসিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে পাগল, ও সে কেটে ভবের গোল,
আর কোন বোল নাইরে মুখে, কেবল বলছে হরিবোল,
তার হরির নামে, লোমে লোমে সর্ব্ব অঙ্গ জ্বারিতেছে, হারে জ্বারিতেছে।।
প্রেমের নেশাতে অজ্ঞান, ধর্ম্ম পূণ্য দেয় না স্থান;
অষ্ট পাশের দফা সারা, বেদ বিধি মানবে কেন, ও তার
সন্ধ্যা আহ্নিক, নাই কোন ঠিক, মন মানুষে, মিশে গিছে হারে মিশে গিছে।।
স্বামী মহানন্দ কয়, প্রেমের মদ নিবি কে আয়,
শ্রীগুরুর আনন্দ মেলায়, প্রেমের মদ বিকায়,
বলে তারকচাঁদে, বিষয় মদে, অশ্বিনী ভুলে রয়েছে হারে পড়ে পেচে।।
 
১১৯নং তাল এক তালা
আমার জন্ম মৃত্যু দুট অশৌচ পল
তাইতে পূজা ব্রত, হল হত,
আমার বৈদিক ক্রিয়া বাদ পড়িল, হারে বাদ পড়িল।।
হরি প্রেমে রোগে আক্রমণ, আমায় করিল যখন,
ছিল অষ্ট পাশে, মা মহামায়া, ত্যজিল জীবন,
গুরু কৃপা ক্রমে, বিবেক নামে,
সেই দিনে এক পুত্র হল, হারে পুত্র হল।।
ঠেকেছি গুরুদশার দায়, ভাগ্যে কি যেন কি হয়,
শৌচ আচার ত্যাজল আমায়, লেম অশৌচী আশ্রয়,
আমায় সাজিয়ে বেহাল, পথের কাঙ্গাল, ভাবের উত্তরী,
এক গলায় দিল, হারে গলায় দিল।।
শ্রীহরিপদ পদ্ম গয়ায়, শ্রীগুরু পাঠলেন আমায়,
যোগ মায়া জননীর শ্রাদ্ধ করিবার আশায়,
আমার সব ঘুচায়ে মন মুড়ায়ে,
মত পোড়া আউল করিল, আউল করিল।।
কটিতে কটকৌপিন দিয়ে, অনুরাগ ডোর তায় পরায়ে,
নিহেতু এক শিক্ষা শিরে, দিল ঝুলায়ে,
আমায় ভক্তি তিলক ফোঁটা দিয়ে,
বিনা সূতের মালা দিল, হারে মালা দিল।।
মহানন্দের ভারতি, এই রূপে সেজে প্রকৃতি,
দিবা নিশি সেবা কর শ্রীগুরু পতি, অশ্বিনী তোর
কি দুর্গতি, গুরুর প্রতি রতি না হল, হারে মতি না হল।।
 
১২০নং তাল-কাশ্মিরী
কেউ যদি ঢেউ ধরতে পার, প্রেম সরোবরে।।
অখন্ড ব্রহ্মান্ড সে ঢেউ, চলে ভেদ করে।।
ঢেউ লেগেছে যার অন্তরে, সে কি ঘরে রইতে পারে,
ঝাঁপ দিয়ে সেই প্রেম সাগরে, আর ফিরে এলনা ঘরে।।
ঢেউ লেগে কেউ হয়েছে মাতাল, মাতাইল আকাশ পাতাল,
জয় করে সেই কাল মহাকাল, ঢেউ দিয়ে জগৎ পাগল করে।।
দুই এক জনার যোগ ভাগ্যে, পাগল হল সেই ঢেউ লেগে,
তনুজ্বলে অনুরাগে, প্রেমানন্দে নৃত্য করে।।
ঢেউ লেগে সেই গোলোক পাগল, মুখেতে নাই আর কোন রোল,
জয় হরিবোল গৌর হরিবোল, বলে সদায় হুঙ্কার ছাড়ে।।
মহানন্দ সেই ঢেউ ধরি, রেখেছে ঢেউ হৃদয় পুরী,
মাতাইল পুরুষ নারী, অশ্বিনী তুই মাতলি নারে।।
 
১২১নং তাল কাশ্মিরী
নিদান বন্ধু বটে, এই ভবের হাটে
নিদানে পড়িলে মনে কত ভাব উঠে।।
নিদান আমার বন্ধু ধরে যারে, ভোগ বিলাসের দফা সারে,
সুখ পৈশাচি তাড়িয়ে দূরে, দুঃখ সম্পত্তি দেয় গো জুঠে।।
সুখ পেলে মন রয় না বাটী, ধরতে চায় সে বিষের বাটি,
বোঝাই করে ময়লা মাটী, ডুবে মরে ভবের ঘাটে।।
দুঃখ ভার্য্যা তাপ রজকিনী, মনের ময়লা ঘুচান তিনি,
দন্ড সাবান জ্বালিয়া ধনি, মনকে কাচে শাসন পাটে।।
দীন বন্ধু হরি যিনি, নিদানেরই বন্ধু তিনি,
তত্ত্ব জেনে শূলপানি, সদায় সে শ্মশানে ছোটে।।
দয়াল মহানন্দ বলে, গুরু দন্ড না হইলে,
কিসে মনের ময়লা খোলে, অশ্বিনী তুই যাস না চটে।।
 
১২২নং তাল কাশ্নিরী
মন চল যাই বিদেশ ছেড়ে নিবৃত্তিপুরে
তথায় আছে শান্তি মা আমার, দেখ মন্দিরে।।
বিদেশে বাণিজ্য দিয়ে, মা আছেন পথ পানে চেয়ে,
ভুলে রলি কি সুখ পেয়ে, এদেশে তোর বন্ধু কেরে।।
হয়ে রলি মায়ার সেবক, খুলে ফেল মণি মজক,
দুদিন পরে দেখবি নরক, দেশে যাওয়া হবে নারে।।
এদেশে রয় দিশে হরি, দিক ভুলায়ে করে চুরি,
নৌকায় দিবে কুঠার মারি, আপন আপন বলিস যারে।।
ধন অনুরাগের বৈঠে বেয়ে চল প্রেমের হাটে,
নাও লাগাসনে ভবের ঘাটে, শুল্লুক জাহাজ যাচ্ছে বুড়ে।।
গুরুচাঁদ তাই করছে মানা, ভবের ঘাটে কেউ যেওনা,
অশ্বিনী তোর মন ভালনা, ডাকলে কেন শুননারে।।
 
১২৩নং তাল - কাশ্মিরী
মনে ভাবি কাঙ্গাল হব, বেহাল সাজিব
ছেড়া কান্থা করিয়া ধারণ, গাছতলায় যাব।।
মহামায়া মাতা যিনি, কাতর বাক্যে বলেন তিনি,
কোথায় যাওরে যাদুমণি, কোন প্রাণে তোরে বিদায় দিব।।
প্রবৃত্তি মহিষী এসে, বাঁধতে চায় সে ভোগ বিলাসে,
ভুলাতে চায় মায়া রসে, কেমনে তারে প্রবোধ দিব।।
লোভ মোহ পুত্র ছয়জন, বিনয়বাক্যে করে বারণ,
পুত্রের মায়া করে ছেদন, প্রানান্তে যেতে দিব।।
আমোদ আহলাদ প্রতিবেশী, যাত্রা ভঙ্গ করে আসি,
কি দুঃখে হও বিদেশবাসী, গৃহে তোর কি অভাব।।
পাগলচাঁদ কয় অনুরাগে, আর কতকাল মরবি ভুগে,
অশ্বিনী তুই এই সুযোগে, বাহির হ তোর সঙ্গে যাব।।
 
১২৪নং তাল -
আমি পিতৃমাতৃ হলেম ত্যাগী বিষয় বিরাগী
ঘরে বসে কাঁদিবে বিলাস, ভার্য্যা অভাগী।।
ত্যাগ করিলাম পুত্র কণ্যে, গৃহে থাকি যাহার জন্যে,
মন মতি হয়েছে হন্যে, কি যেন কি বস্তু লাগি।।
পিতা কাঁদলে করে হায় হায়, কঠিন পাষাণ বলি তোমায়,
বল ভবে কেউ কারো নয়, পাষাণে বুক বাঁধ রাখি।।
পাখী যত আছ ডালে, মা কাঁদিলে পুত্র বলে
তোমরা ডেক মা বোল বলে, প্রহরে প্রহরে জাগি
ভার্য্যা কাঁদলে চিকন স্বরে, কাল ভ্রমর কই তোমারে,
বুঝাইও গুণ গুণ স্বরে কেউ কারো নয় দুঃখের ভাগী।।
গুরুচাঁদের শাসন চোটে, ভব বন্ধন গিছে কেটে,
কাঁদতে হবে ঘাটে মাঠে, অশ্বিনী হও প্রেম বৈরাগী।।
 
১২৫নং তাল - কাশ্মিরী
এই দেখা ত শেষ দেখা ভাই, বালাই লয়ে যাই
এ ক্ষেপে দেখা পাই কি না পাই।।
দেখা হল কত শত, হয়না দেখা মনের মত;
মনের দুঃখ আর বলব কত, জন্মের মত বিদায় হতে চাই।।
যা হবার তা হয়ে গেল, ভবের খেলা সাঙ্গ হল;
বন্ধুবর্গে হরিবল, যার আমি ভাই তারে যেন পাই।।
 
১২৬
সমর্পিত দেহ মম আমিত্ব কি আর,
আমিত্ব স্বামীত্ব তুমি সর্ব্ব মূলাধার।।
মহাভাব ভাবিনীর বশে, মহাসাগর মহারসে,
দেহ তরী যাচ্ছে ভেসে, না পেলাম কিনার।।
তুমি নিত্য নবীন নেয়ে, এ তরীর কান্ডারী হয়ে,
প্রেম সাগরে বেড়াও বেয়ে, ওগো গুণধার।।
তব কৃপা-অনুযোগে, হরিণাম বাতাসের বেগে,
লছে তরী অনুরাগে, আনন্দ বাজার।।
গুরুর কৃপায় ঘুচলো ভ্রান্ত, আমি কান্তা, তুমি কান্ত,
পূর্বের মন যদি তাই জানত, থাকত না বিকার।।
স্বামি মহানন্দ বলে, মন প্রাণ না সপিঁলে,
কোথায় হরি পতি মেলে, অশ্বিনী বর্ব্বর
 
১২৭
বিপদ সুপদ মন , উভয় একাকার
নিরাশা দরিয়ার মাঝে, দিয়াছি সাঁতার।।
সুমতি কুমতি দুজন, দ্বন্ধ ঘুচে হল এক মন,
য়ে তারা প্রেমের ভাজন, ল নির্ব্বিকার।।
ভক্তির কণ্টক যে পঞ্চজন, প্রেমানলে হল দাহন,
তাই দেখে ছয়জন, কাঁদে অনিবার।।
প্রেমানুরাগ হব বলে, ভাসিতেছে নয়ন জলে,
ঝাঁপ দিতে চায় প্রেম সলিলে, অকুল পাথার।।
প্রেম উন্মত্ত হয়ে সবে, হুঙ্কার ছারে সিংহরবে,
প্রাণ দিয়ে সেই প্রাণ বল্লতে, কামনা কি আর।।
ডেকে বলে তারকচন্দ্র, মহানন্দের কি আনন্দ,
দেখলি না অশ্বিনী অন্ধ, আনন্দ অপার।।
 
১২৮
যারে নয়ন ধরগে তারে, যে রূপে প্রাণ নিল হরে,
দেখতে দেখতে নয়ন তারে, পলক দিতে যায় গো সরে।।
তুই নয়ন মোর বান্ধব ছিলি, তবে কেন পলক দিলি,
পলকে রূপ হারাইলি, আর কি দেখা পাব ফিরে।।
তুই নয়ন থাকতে প্রহরী, তবে কেন সেই চোরা হরি,
মন প্রাণ করে চুরি, আমায় যায় পাগোল করে।।
যে রূপেতে মন মজিলো, সেও যদি আজ ছেড়ে গেল,
এ জীবনে কাজ কি বল, কাজ কি এ ছার জীবন ধরে।।
মন প্রাণ দিলাম যারে, সেও যদি আজ না চায় ফিরে,
এ দুঃখ আর বলব কারে, ওই দুঃখে মোর বুক বিদরে।।
গোলকচাঁদের মনচোরা, হানন্দের মনোহরা,
ধরবি যদি অধর ধরা, অশ্বিনী থাক জীয়ন্তেরে।।
 
১২৯
হরি দয়াময় , করলে কি আমায়
তব বিচ্ছেদ জ্বরে , দহিছে হৃদয়।।
প্রেম দাহানলে, সদায় মরি জ্বলে
এই ছিল কপালে, করি কি উপায়।।
তব বিচ্ছেদ জ্বর, হইলো প্রবল
চিন্তা পথ্য তায়, কুপথ্য ঘটালো।।
স্বাত্বিক বিকারে, খেত বৃদ্ধি করে
হরি বিনে, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
বুঝতে নারি গতি, যেন সান্নিপাতি
দুরন্ত পিপাসা, না হয় নিবৃতি।।
দুর্ব্বৈদ্য আসিয়া, শিয়রে বসিয়া
এক বিন্দু বারি না দিল আমায়।।
অধৈর্য্য উলূর্ব্বান, নাহি কোন ঞ্জান
জলধর বিনে, জ্বলে যায় প্রাণ।।
জ্বরে তনু জ্বর, শুষ্ক ওষ্ঠাধার
নিরস রসনা, পিপাসায় প্রাণ যায়।।
তৃস্না-তন্দ্রা-নিদ্রা, মোহ কম্পকায়
স্বেদ অশ্রু পুলক, বিকারে প্রাণ যায়।।
হেন নাহি বন্ধু, হরি কৃপাসিন্ধু
এক বিন্দু বারি, এনে দেও আমায়।।
বলে মহানন্দ, হরি প্রেমসিন্ধু
অশ্বিনী তোর ভাগ্যে, ঘটলনা এক বিন্দু।।
গুরুচাঁদের পদ কররে সম্পদ,
তবে পাবি সে ধন শ্রীগুরুর কৃপায়।।
 
১৩০
হরি নামে পাপ খন্ডে, কহে কোন ভন্ড
হরিভক্ত এমনি শক্ত, চায়না সে বিধাতার ব্রহ্মাণ্ড।।
কার উচ্চারনে মাত্র, অষ্টাদশ সিদ্ধি হয় প্রাপ্ত
ভুক্তি মুক্তি দূরীভুত, লুক্কায়িত কর্মকান্ড।।
রিকার উচ্চারণ হলে, অনর্পিত প্রেম ফলে
মোক্ষ ফল সে ফেলায় ঠেলে, ধর্ম্ম তার কাছে হয় দণ্ড।।
হরিভক্ত সিংহ-শাবক, অন্তরে অনুরাগ পাবক,
নরের আর থাকেনা নরক, শরণ নিলে তিলেক দণ্ড।।
গঙ্গাস্নানে পাপ হত, গঙ্গাকে করে পবিত্র
পরশ মাত্র হরিভক্ত, সাধু হয় যত পাষন্ড।।
গোসাঁই তারকচাঁদের বাণী, শ্রবণ মাত্র হরি ধ্বনি
প্রাপ্ত হয় প্রেম আহলাদিনী, অবিশ্বাসী অশ্বিনী ভন্ড।।

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free