মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

আদিগীতিঃ ৬ষ্ঠ অংশ

গুরুচাঁদের অর্থদান

 

শ্রীহরির লীলা সাঙ্গে বিষাদিত ময়।

মহামারী দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাব হয়।।

অন্নাভাবে বহুলোক নানা দুঃখ পায়।

জীবন বাঁচাতে নারে করে হায় হায়।।

পুত্র কন্যা প্রাণে মরে বড়ই দুর্দশা।

অনেকেই ছেড়ে দিল জীবনের আশা।।

সবে ভাবে কি করিব নাহিক উপায়।

এই বার পুত্র কন্যা মরিবে নিশ্চয়।।

অতএব সবে মিলে বসি এক ঠাই।

বলে ভাই কি প্রকারে জীবন বাঁচাই।।

কেহ বলে শুন ভাই মম কথা লও।

ঠাকুরের নিকটেতে এ দুঃখ জানাও।।

কেহ বলে এই বাক্য শোভে না কখন।

কভু না পারিব তথা করিতে গমন।।

ঠাকুরের বিরুদ্ধেতে আছি সর্বক্ষণ।

না করিবে আমাদের সাহায্য কখন।।

অসম্ভব কথা কভু প্রাণে নাহি যায়।

নিশ্চয় মৃতে হবে জানিও সবায়।।

কেহ বলে জানাইব শশীবাবু পাশ।

নিশ্চয় পারেন তিনি পুরাতে এ আশ।।

ঠাকুরের জ্যেষ্ঠপুত্র অতি দয়াবান।

পরদুঃখে সে বাবুর কেঁদে উঠে প্রাণ।।

জানাইয়ে দেখি অগ্রে কিবা করে তিনি।

পরেতে করিব যাহা ভাল মনে গণি।।

এইমত পরামর্শ করিয়ে সবায়।

ঠাকুরের বাটী সবে হইল উদয়।।

শ্রীশশীবাবুর পদে করে নিবেদন।

সাহায্য না পেলে মোরা ত্যজিব জীবন।।

তিনি বলে আমি কিবা করিব এখন।

কি দিয়ে সাহায্য করি নাই হেন ধন।।

কেহ কেহ বলে মোরা গৃহেতে না যাব।

আপনার সম্মুখেতে জীবন ত্যজিব।।

এতেক বলিয়ে কেহ কাঁদিতে লাগিল।

মিষ্ট বাক্যে শশীবাবু সবাকে বলিল।।

স্থির হ’য়ে শুন এবে আমার বচন।

বাবার নিকটে গিয়ে কহ সর্বজন।।

আমি নহে এস্টেটের ধারি কোন ধার।

কেমনে নাশিব বল এ দুঃখ সবার।।

বাবা যদি দয়া করে পাইবা নিস্তার।

আমা দ্বারা এই কর্ম হ’বে না উদ্ধার।।

এমত নিষ্ঠুর বাণী শুনিয়ে তখন।

হতাশ প্রাণেতে তথা রহে সর্বজন।।

কেহ বলে নাহি পারি ঠাকুরে বলিতে।

বিদ্বেষী রয়েছি তাই শঙ্কা হয় চিতে।।

আপনার কৃপা বিনে নাহিক উপায়।

বিপদে করুণ রক্ষা ধরি ওই পায়।।

বাবু বলে সর্বজনা সুস্থ কর মন।

গৃহে গিয়ে কর এক সভা আয়োজন।।

ঠাকুরের ঠাই এসে ক’র নিমন্ত্রণ।

কৃপা করি যেতে হবে মোদের ভবন।।

আপনার সেবা দিতে করেছি মনন।

গ্রাহ্য করিবেন পিতা সেই নিমন্ত্রণ।।

ঠাকুর যাইবে সবে একত্রিত হ’বে।

তা হইলে তোমাদের অভীষ্ট পুরিবে।।

শুনিয়ে প্রবোধ বাণী সন্তুষ্ট হইল।

বড় আশা বুকে লয়ে গৃহেতে চলিল।।

গৃহে গিয়ে সেই কথা সবাকে জানায়।

সভা করিবার তরে করিলেন সায়।।

পাঠাইল ঠাকুরে করিতে নিমন্ত্রণ।

গ্রাহ্য করিলেন তাহা বিপদ ভঞ্জন।।

পরে গিয়ে মহাপ্রভু করেন ভোজন।

সহসা বসিল তথা সভা আয়োজন।।

সভায় বসিল পরে প্রভু গুরুচাঁদ।

জানাইল সবাকার প্রাণের বিষাদ।।

অন্নভাবে দুঃখ পাই আমরা সকলে।

আপনি কি সুখী হন আমরা মরিলে।।

চৌধুরীর বাটী এই সভা আয়োজন।

এক কথা সবে এসে করে নিবেদন।।

অর্থদান করি প্রভু বাঁচান এবার।

নইলে বলিবে কেবা দয়ালাবতার।।

চারিদিক হ’তে সবে করে সানুনয়।

আপনার কৃপা বিনে নাহিক উপায়।।

প্রভু বলে গুরুভার কেমনে বহিব।

অসাধ্য সাধন ইহা বহিতে নারিব।।

অন্যস্থান হ’তে অর্থ করহ যোগাড়।

তাই দিয়ে পুত্র কন্যা বাঁচাও সবার।।

শুনিয়ে নিষ্ঠুর বাণী ব্যথিত হইল।

প্রাণের দায়েতে সবে বলিতে লাগিল।।

অর্থ না করিলে দান অনর্থ ঘটা’ব।

আপনার সম্মুখেতে সবাই মরিব।।

এত শুনি মহাপ্রভু সকল বুঝিল।

কি করা কর্তব্য তাহা ভাবিতে লাগিল।।

কিছু পরে গুরুচাঁদ বলেন বচন।

সত্বরে শশীকে গিয়ে আন একজন।।

ঠাকুরের বাক্য শুনি পরম উল্লাসে।

উপনীত  হয় কেহ শশীবাবু পাশে।।

জানাইল ঠাকুরের দয়ার এ বাণী।

ব্যস্ত হ’য়ে শশীবাবু এলেন তখনি।।

মহাপ্রভু বলে শশী কি করি এখন।

আমার নিকট অর্থ চাহে সর্বজন।।

দুর্ভিক্ষের প্রাদুর্ভাবে বাঁচিতে না পারে।

সবে মিলে বারে বারে বলেছে কাতরে।।

কি করা কর্তব্য এবে দেখহ ভাবিয়া।

আমি কিছু নাহি পাই প্রাণেতে চিন্তিয়া।।

পিতার বাক্যেতে জ্যেষ্ঠ পুত্রের উত্তর।

করিতে হইবে পিতা সবাকে উদ্ধার।।

অন্নাভাবে যদি সবে জীবন ত্যজিবে।

দয়াময় বলে তবে কাহারা জানিবে।।

ঠাকুরের পুত্র মোর কে বলিবে আর।

আপনার বৃথা নাম দয়ালাবতার।।

নাম কীর্তি সুযশাদি এদের লইয়া।

সবারে বাঁচাতে হবে দয়া প্রকাশিয়া।।

শুনিয়ে পুত্রের বাণী আনন্দ অন্তরে।

অভয় প্রদান করিলেন সবাকারে।।

প্রভুর বাক্যেতে সবে আশ্বস্ত হইল।

মৃতদেহে যেন পুনর্জীবন লভিল।।

 

দরিদ্রতা মোচন

 

অতপরে দয়াময়                    লইয়ে নিজ তনয়

উপনীত আপন ভবন।

গ্রাম্য লোক যত ছিল      সবে হরষিত হ’ল

মৃতদেহে পাইল জীবন।।

ক্ষণ পরে সবে মিলি       সবে হ’য়ে কুতূহলী

অর্থ পাশে উপনীত হয়।

প্রভুর নিকটে গিয়ে        চরণে প্রণাম হ’য়ে

প্রভু মুখ পানে চেয়ে রয়।।

উপনীত সর্বজন            ভাবিছে মনে মন

কতক্ষণে এ অর্থ পাইব।

কখন বা গৃহে গিয়ে       তণ্ডুল কিনিয়ে নিয়ে

পুত্র কন্যা সবে খেতে দিব।।

এমত চিন্তিয়ে সবে        রহে বসি মৌনভাবে

গুরুচাঁদ দয়া প্রকাশিল।

অন্নাভাব ঘুচাইতে         স্বার্থকতা প্রকাশিতে

অর্থদান আরম্ভ করিল।।

অর্থদানে তিনজনে        সমাধিল দশাদিনে

অষ্টাদশ গ্রাম্য লোক নিল।

অর্পণ হ’ল অজস্র          ঊনবিংশতি সহস্র

গণনায় নির্ধার্য হইল।।

যার যে অভাব ছিল        সবে তাহা পুরাইল

নিয়ে ঠাকুরের দেয়া ধন।

শুনহে অপূর্ব ভাষা         দানিলেন শুধু পয়সা

গায়ে গায়ে ছিল সম্মিলন।।

যার ছিল পঞ্চশত         তার হ’ল উদবর্ত্ত

পাঁচ টাকা গণে দেখা গেল।

বহুদিনের এ ধন           গায়ে গায়ে সম্মিলন

প্রহার করিয়ে ছড়াইল।।

যার যাহা প্রয়োজন        মত নিল সেই ধন

সবাকার ঘুচায় অনর্থ।

কেহ বহুদিন পরে          অতীব আনন্দ ভরে

এনে দিল ঠাকুরের অর্থ।।

যার প্রয়োজন যাহা        সেজন লইয়ে তাহা

দিল আনি প্রভুর গোচরে।

যেবা যাহা গেল দিয়ে     ঠাকুর রাখিল নিয়ে

যতন করিয়ে তাহা ঘরে।।

এইমত মৃত প্রাণ                    বাঁচাইল গুরুচান

হেন বন্ধু কেবা আছে ভবে।

মায়াপাশে হ’য়ে বদ্ধ      চিনিতে হ’ল অসাধ্য

পরে শুধু সংসার গৌরবে।।

বিপদের বন্ধু যিনি         গুরুচাঁদ গুণমণি

বিপদ করিল নিবারণ।

ত্যজিয়ে সংসার নিত্য    দূরে রাখ আত্মস্বার্থ

শ্রীচরণে লওরে স্মরণ।।

 

শ্রীশশীভূষণ ঠাকুরের কলিকাতা গমন

 

বিদ্যাভ্যাস ক’রেছেন শ্রীশশীভূষণ।

বহুস্থানে ভ্রমিলেন চাকুরির কারণ।।

জাতিগত হিসাবেতে চাকুরি না পায়।

মনক্ষুন্নে গৃহে ফিরে এল পুনরায়।।

ঠাকুরের সকাশেতে সব নিবেদিল।

আবেগ ভরেতে বাণী কতই বলিল।।

বলে তাত বহু দুঃখ নানাস্থানে পাই।

চাকুরির হেতু আমি না পাইনু ঠাই।।

নমঃশূদ্র ব’লে কেহ নাহি করে গ্রাহ্য।

এ যাতনা মরমেতে বড়ই অসহ্য।।

কেন আমি জন্মিলাম নমঃশূদ্র কুলে।

কেন আমি হইলাম আপনার ছেলে।।

এই বাঁধা ভেঙ্গে যদি নাহি দেয়া যায়।

নিশ্চয় ছাড়িব আমি এ নশ্বর কায়।।

পুত্রের আবেগ বাণী শুনে গুরুচাঁদ।

অন্তরেতে পাইলেন পরম আহ্লাদ।।

প্রভু বলে পার যদি বাঁধা ভেঙ্গে দিতে।

বড়ই সন্তোষ আমি হইব তাহাতে।।

জাতি বাঁধা ভেঙ্গে দিতে দিলাম আদেশ।

কর্ম সাধি অগ্রগণ্য হও সর্বদেশ।।

তোমা যদি করে দয়া শ্রীহরি ঠাকুর।

সবা ঠাই সমাদর পাইবা প্রচুর।।

তোমা হ’তে যদি ইহা সুসম্পন্ন হয়।

তবে ত হইবে মম আনন্দ উদয়।।

পিতৃপদে শশীবাবু প্রণাম করিয়ে।

শ্রীহরি বলিয়ে উঠে অঙ্গ ঝাড়া দিয়ে।।

পদধূলি নিয়ে শিরে মন প্রফুল্লিত।

প্রভু বলে কলিকাতা যাও হে ত্বরিত।।

সেথায় পাইবে দেখা মানব রতন।

তার সনে এই কথা কর আলাপন।।

সে জন হইতে হবে বাসনা পূরণ।

অতএব স্বত্বরেতে করহ গমন।।

কলিকাতা উপনীত শ্রীশশীভূষণ।

সি.এস. মিড ডক্টর সনে দরশন।।

আপনার মনকথা জ্ঞাপন করিল।

সি.এস. ডক্টর মিড বাবুকে বলিল।।

বিস্তারিত সব কথা কহ বাছাধন।

কি দুঃখেতে পাও তুমি এহেন বেদন।।

শশীবাবু বলে মোরা নমঃশূদ্র জাতি।

ঠাকুর বলিয়া হয় মম বংশ খ্যাতি।।

পঞ্চবিংশ লক্ষ হয় গণনায় এবে।

বহুজন অশিক্ষিত শিক্ষার অভাবে।।

শুদ্ধ শান্ত সদাচারে কোন ত্রুটি নাই।

ব্রাহ্মণের যে পদ্ধতি আমাদের তাই।।

শুধু মাত্র অভাব যে আছে বিদ্যাধনে।

অন্য জাতি হ’তে নুন্য নহে ধনে জনে।।

সাব রেজিস্টার হ’তে আশা ছিল মনে।

দরখাস্ত করিয়াছি ম্যাজিস্ট্রেট স্থানে।।

অদ্যবধি তার কোন না পাই সংবাদ।

তাহাতে হৃদয় মাঝে বড়ই বিষাদ।।

এই হেতু আপনার সমীপে জানাই।

উপকৃত হ’ব বলে মনে আশা তাই।।

শুনিয়ে ডক্টর মিড শুধায় তখন।

জিজ্ঞাসি তোমার পাশে শুন বাছাধন।।

কিবা কর্ম করে তব স্বজাতির গণ।

কি প্রকারে করে তারা জীবন যাপন।।

কি ব্যবসা আছে তব জাতির মাঝারে।

কোন কোন নিয়মে জীবিকা রক্ষা করে।।

শশীবাবু বলে স্যার স্বজাতির মাঝে।

বহু সংখ্যা লোক সদা থাকে কৃষি কাজে।।

অল্প সংখ্যা ব্যবসাদি করে কোন মতে।

ধার্মিক বা নিষ্ঠাবান আছে শত শতে।।

ঈশ্বরের প্রতি হয় ভকতি প্রচুর।

হরিনাম করে তারা মধুর মধুর।।

বর্তমান কিছু লোক বিদ্যাভ্যাস করি।

নানাস্থানে ভ্রমিতেছে পাইতে চাকুরি।।

আপনার সানুগ্রহ পাইব ভাবিয়া।

মনদুঃখ বলিলাম সব বিস্তারিয়া।।

মিড বলে শুন বাপু কোন দেশে ঘর।

কহ দেখি বাছাধন কি নাম তোমার।।

শশীবাবু বলে বাস ফরিদপুরেতে।

ওঢ়াকাঁদি গ্রামে জন্ম ঠাকুর বংশেতে।।

মম নাম হয় স্যার শ্রীশশীভূষণ।

দ্বিজ নমঃশূদ্রকুলে জনম গ্রহণ।।

যদি অনুগ্রহ হয় চলুন এবার।

দেখাব শ্রীগুরুচাঁদ জনক আমার।।

মিড বলে যাব আমি সে ফরিদপুর।

সে স্থানে আসিবেন লাট বাহাদুর।।

তথা গিয়ে মম সনে করিও সাক্ষাৎ।

না পারিনু দিতে এ উত্তর হঠাৎ।।

যাহা হয় সেই দিন বলিব তোমায়।

চিন্তিয়ে দেখিব আমি আপন হৃদয়।।

মিডের সকাশে হেন পাইয়ে আশ্বাস।

আইলেন নিজ গৃহে মনেতে উল্লাস।।

পিতার সকাশে সব জ্ঞাপন করিল।

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।

 

চাকরি নির্ণয়

 

অতপর শুন সবে হ’য়ে এক মন।

যে ভাবে চাকরি প্রাপ্ত নমঃশূদ্রগণ।।

শ্রীশশীভূষণ করে পথ পরিষ্কার।

ভেঙ্গে দিল চাকরির অবরুদ্ধ দ্বার।।

শুনিলেন আসিবেন লাট বাহাদুর।

প্রফুল্লিত হ’য়ে চলে সে ফরিদপুর।।

ডাক্তার সি.এস. মিড করে অন্বেষণ।

ম্যাজিস্ট্রেট সনে হয় তথা দরশন।।

স্বীয় আবেদন তথা করিলেন ব্যক্ত।

তাহাতে সাহেব কিছু হলেন বিরক্ত।।

বলে তব এ চাকরি দিতে নারি আমি।

তোমার নিজের চেষ্টা কর গিয়ে তুমি।।

এমত নিষ্ঠুর বাণী করিয়ে শ্রবণ।

আপনার পূর্বকথা হইল স্মরণ।।

তথা হতে চলে যায় অতি ক্ষুন্নমনে।

পথি মধ্যে দরশন হ’ল মিড সনে।।

মিড বলে বল আমি এবে কি করিব।

তোমার চাকরি আমি কেমনে দানিব।।

এত শুনি শশীবাবু মর্মাহত চিতে।

কর্তব্য বুঝিতে নারি এলেন গৃহেতে।।

মৌনভাবে থাকে সদা চিন্তিত হৃদয়।

কি করা উচিৎ তাহা ভাবিয়ে না পায়।।

কিছুদিন পরে মিড ওঢ়াকাঁদি এল।

লঞ্চ হেরি শশীবাবু মনেতে চিন্তিল।।

মনে ভাবে এই বুঝি ম্যাজিস্ট্রেট এল।

ব্যস্ত হ’য়ে ভৃত্য ল’য়ে নৌকাতে চলিল।।

লঞ্চ মাঝে হেরিলেন মিডকে তখন।

মিডে নমস্কার করি ব’লেছে বচন।।

আমাদের ঘাটে যেতে হবে আপনার।

মিড বলে যাব আমি ভীষ্ম বাবু ঘর।।

ফিরিবার কালে তব এ কথা রাখিব।

এবে হাম তব বাক্য রাখিতে নারিব।।

এত বলি লঞ্চ গেল ভীষ্ম বাবু ঘাটে।

ক্ষণ পরে সেই লঞ্চ ফিরে এল বটে।।

মিড গিয়ে বসিলেন ঠাকুর নিকটে।

সম্মান লভিল মিড অতি অকপটে।।

ঠাকুরের পানে চাহি সে মিড তখন।

অনিমেষ নেত্রে করে রূপ দরশন।।

মনে ভাবে এই নর সামান্য ত নয়।

ক্ষণজন্মা হ’বে ইনি হেন মনে লয়।।

এত ভাবি ধর্মকথা করে আলাপন।

মধুর মধুর ভাব হইল তখন।।

পরাজয় মাগে মিড ঠাকুরের ঠাই।

বলে আমি হেন তত্ত্ব কভু শুনি নাই।।

আপনি যে ভাগবতবত্তা মহাজন।

আর এক কথা আমি করি নিবেদন।।

সম্মুখেতে হেরি এই কাহার মূরতি।

কেন বা এত যত্নেতে করেছেন স্থিতি।।

ঠাকুর বলেন মিড শুনহে বচন।

শারদীয় দুর্গামূর্তি মন্দিরে স্থাপন।।

মিড বলে এই পূজা করিলে কি হয়।

প্রভু বলে ধনে বংশে লক্ষ্মী বৃদ্ধি পায়।।

সর্ব দুঃখ দূরে যায় নিলে দুর্গা নাম।

সর্ব ক্রম সিদ্ধ হয় পুরে মনস্কাম।।

মিড বলে এত হেরি মূরতি মৃন্ময়।

ইহাকে পুজিলে জীবে কি বা ফল পায়।।

ঠাকুর বলেন কিসে জন্মিবে প্রত্যয়।

মিড বলে যদি এর মূরতি মৃন্ময়।।

জলধারা বহে দীখ দেবীর নয়নে।

পুজক ব্রাহ্মণ চণ্ডী পাঠে সযতনে।।

ঝর ঝর ঝরে বারি দেবীর নয়নে।

(লাইন জ্ঞাপ)

নেহারিয়ে সেই মিড হইল বিস্ময়।

ঠাকুরে নেহারি পুনঃ দেবী পানে চায়।।

কপট করিয়া মিড বলে কই কই।

ঠাকুর বলেন  সত্য  চেয়ে দেখ ওই।।

হৃদয়ের বেগ মিড থামাতে না পারে।

বিন্দু বিন্দু বারিধারা পড়ে বক্ষপরে।।

মিড বলে কে আপনি দেন পরিচয়।

প্রভু বলে আমি হরিচাঁদের তনয়।।

প্রভু সকাশে মিড পরাজিত হ’ল।

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।

 

চাকরি উপলক্ষ্যে মিডের বাণী

 

সেই মিড মহাজন         বলে কত সুবচন

বড় সুখী হইয়াছি আমি।

শশী মম ভ্রাতৃসম         নাহি তার ব্যতিক্রম

বুঝিনু আপনি বিশ্বস্বামী।।

এত বলি সকাতরে        বলে কথা ধীরে ধীরে

আপনার চরণে জানাই।

আমি হই রাজবংশ        খৃস্টকুলে অবতংস

আপনাকে জল দিতে চাই।।

শুনিয়ে মিডের বাণী       গুরুচাঁদ গুণমণি

বলে শুন তোমাকে শুধাই।

ইংরাজি পড়েছে শশী     জলে কি আর ভয় বাসি

প্রকারেতে শশী তব ভাই।।

শশী যদি জল দেয়        তাতে কি আর বাকী রয়

যত দিবে তত খেতে পারি।

জীবনান্ত হবে যবে         অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া করিবে

মুখেতে বলিবে হরি হরি।।

বেদমন্ত্র পাঠ করি          নিত্য নিত্য দিবে বারি

আমি কি  টা না খেয়ে সারিব।

একাদশ দিনে গিয়া       করিবেক বেদক্রিয়া

তা’তে কি উদ্ধার না হইব।।

শুনি ঠাকুরের বাণী        সেই মিড গুণমণি

বলে আমি মাগি পরিহার।

যত কথা বলিলাম         আঁখিতে না পারিলাম

বুঝিনু আপনি সর্বসার।।

শুনে আপনার ভাষ        হৃদে জাগে প্রেমোচ্ছাস

অন্ত্ররেতে পাই বড় শান্তি।

দেখিনু বিচার করি         আপনি ভুভারহারী

এতক্ষণে গেল মম ভ্রান্তি।।

শশীর চাকরি তরে        প্রাণপণ চেষ্টা করে

দেখে ল’ব করি অন্বেষণ।

আমার সঙ্গেতে এসে     চল শশী যাই তবে

চাকরি করিব নির্ধারণ।।

এমত শুনিয়া বাণী         গুরুচাঁদ গুণমণি

আপনার পুত্রকে শুধায়।

মিডের ভোজের তরে     ওহে শশী যত্ন করে

আয়োজন করহে ত্বরায়।।

শশীবাবু মৃদুস্বরে                    বলিলেন ধীরে ধীরে

আমি যাহা ক’রেছি যোগাড়।

লঞ্চেতে দিয়েছি সব      মিড হ’লে পরাভব

সে কারণ চিন্তিত অন্তর।।

অতপরে লঞ্চে গিয়ে      সে মিড হরিষ হ’য়ে

ভোজন করিল অতপর।

পুনঃ এসে প্রভু স্থানে     বসিলেন হর্ষ মনে

পুনরায় বলে বার বার।।

আসিবেন লাট তথা       শুনুন হে সে বারতা

বহুলোক হ’বে আগমন।

ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি    লোক যত সরকারী

একঠাই হইবে মিলন।।

তাদের নিকট হ’তে       জেনে ল,ব ভাল মতে

শেষে তাহা করিব বাহির।

করিলাম অঙ্গীকার        অন্যথা না হবে আর

চাকরি করিয়া দিব স্থির।।

এত বলি তথা হ’তে       চলে মিড হরষিতে

পুনঃ বন্দি প্রভুর চরণ।

ভেঙ্গে অবরুদ্ধ দ্বার        করিতে স্বকুলদ্ধার

ঠাকুরের একান্ত মনন।।

 

শশীবাবুর ফরিদপুরে গমন ও চাকরি প্রাপ্ত

 

অতঃপর চলে মিড সে ফরিদপুর।

লাট আগমন করে দুইদিন পরে।।

ফুলার নামেতে যিনি ছোট লাট হয়।

তিনিও তথায় এসে হইল উদয়।।

যথা কালে শশী বাবু করেন গমন।

অগ্রভাগে মিড সনে হ’ল দরশন।।

মিড বলে শুন শশী আমার বচন।

মানপত্র দিতে হবে শুন বাছাধন।।

তোমাদের দেশে যত নমশূদ্রগণ।

ভদ্রাভদ্র দেখি পত্র করহ প্রেরণ।।

ঠাকুরের কাছে তুমি সংবাদ জানাও।

আগামী কালেতে তুমি কলিকাতা যাও।।

স্বর্ণাক্ষরে ছাপি আন এ অভিনন্দন।

না করি বিলম্ব এবে করহ গমন।।

এত শুনি শশী বাবু হরিষ অন্তর।

আজ্ঞামতে কর্ম করে মিড বরাবর।।

হেরিয়ে অভিনন্দন মিড গুণমণি।

বলে শশী তুমি ধন্য তোমাকে বাখানি।।

এদিকে সংবাদ পত্র পাইয়ে ঠাকুর।

যত ভদ্র নমশূদ্র জুটিল প্রচুর।।

কুমুদ মল্লিক বাবু বালা শ্রীতারিণী।

জ্যোৎকুরাবাসী বাবু রাধানাথ যিনি।।

দারোগা মোহন লাল শ্রীচণ্ডী চরণ।

শ্রীচন্দ্র মল্লিক আদি ভদ্র ব্যক্তিগণ।।

এইমত বহু ভদ্র সঙ্গেতে গমন।

মিডের সংহতি করে লাট দরশন।।

সবে মিলে উপনীত লাট দরবারে।

বসিলেন সভামাঝে হরিষ অন্তরে।।

অভ্যর্থনা পত্র শশী লইয়া করেতে।

সভ্যস্থলে করে পাঠ আনন্দিত চিতে।।

সকলেই মন দিয়ে শুনি সেই পাঠ।

বড়ই সন্তোষ লাভ করে ছোট লাট।।

মিড পাশে জিজ্ঞাসেন লাট মহামতি।

বলুন এসব ভদ্র হয় কোন জাতি।।

লাটের সকাশে মিড বলে ধীরে ধীরে।

নমশূদ্র জাতি বলে ব্যকত সংসারে।।

ভদ্র নমশূদ্র মিষ্টভাষী সদা হয়।

রাজার হিতৈষী বড় ইহারা সবায়।।

ওঢ়াকাঁদি বাসী গুরুচাঁদের নন্দন।

শ্রীমানের নাম হয় শ্রীশশী ভূষণ।।

আপ্যায়িত হ’য়েছি এদের ব্যবহারে।

ঈশ্বরীয় শক্তি যে ইহার পিতা ধরে।।

ঠাকুর বলিয়া হয় তাহার আখ্যান।

রাজতুল্য ব্যক্তি তিনি মহা মান্যমান।।

সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম করেন পালন।

অগণিত ভক্তবৃন্দ করিনু শ্রবণ।।

তস্য জ্যেষ্ঠ পুত্র এই শ্রীশশী ভূষণ।

সাবরেজিস্টার হ’তে করে আবেদন।।

বহুদিন পূর্বে পিটিশন সে দিয়েছে।

উত্তর নাহিক পেয়ে ব্যথিত হ’য়েছে।।

কেন নাহি পায় তার সরল উত্তর।

চাকরি পাব না কেন একি ব্যবহার।।

আপনার কাছে হয় আমার প্রার্থনা।

পেতে পারে কিনা তাহা হোক বিবেচনা।।

মিডের বাক্যতে লাট সমর্থন কৈল।

ম্যাজিস্ট্রেট পানে চাহি বলিতে লাগিল।।

কোথা সেই পিটিশন আনহে খুঁজিয়ে।

আমার সম্মুখে এনে দেহ তা বুঝিয়ে।।

লাটাদেশে ম্যাজিস্ট্রেট লাইব্রেরী গিয়ে।

আপনি সবায় চিত্তে আনেন খুঁজিয়ে।।

চাকরি হল প্রাপ্ত মন ব্যাথা গেল।

শ্রীশশী বাবুকে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশিল।।

শুনহ শ্রীমান এবে আমার বচন।

রাজার সম্মান রাখিয়েছে বিলক্ষণ।।

ধন্য ধন্য তব পিতা তাদের বাখানি।

যাহার প্রীতিতে প্রীত লাট গুণমণি।।

লাট তাহে করিলেন তোমাকে প্রসাদ।

আমিও তোমার প্রতি করি আশীর্বাদ।।

নিঃসন্দেহে এ চাকরি কর বাছাধন।

নিজের সুবিধা জেনে লহ ত এখন।।

এইভাবে সেই ঠাই চাকরি লভিয়ে।

নিজ ঘরে আইলেন অতি হৃষ্ট হিয়ে।।

নিজ পিতৃদেব পদে প্রণাম করিল।

শুভ সমাচার যত সকল বলিল।।

শুনিয়ে প্রভুর মনে আনন্দ বাড়িল।

হরিগুরু প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।

মহাপ্রভুর নামে অযথা প্রবাদ

 

এইভাবে শশীবাবু চাকরি লভিল।

কিছুদিন পরে মিড ওঢ়াকাঁদি এল।।

প্রভু গুরুচাঁদ সনে বড়ই প্রণয়।

তাহে বহু নমশূদ্র চাকরি প্রাপ্ত হয়।।

বহু কথা কহে মিড ঠাকুরের সনে।

ঠাকুর করিতে বাধ্য সদা বাঞ্ছা মনে।।

প্রকারে কহেন কথা মিড মহামতি।

ঠাকুরের আশ্বাসেতে তুষ্ট মিড অতি।।

মিড ভাবে এই জাতি স্বজাতি করিব।

যাহা মাগে মম ঠাই সব পুরাইব।।

সেইভাবে আলোচনা করে অনুক্ষণ।

জানিতে পারিল ক্রমে বহু বহু জন।।

সামান্য জ্ঞানেতে সবে বুঝিতে না পারে।

ঠাকুর কাহাকে দিয়ে কোন কর্ম করে।।

অযথা প্রবাদ তাহে বলে কোন জন।

ঠাকুর খৃষ্টান হ’বে ভাবে মনে মন।।

মতুয়ার মাঝে কেহ করেছে সন্দেহ।

ঠাকুরের প্রতি সন্দ করে অহরহ।।

ওঢ়াকাঁদি যাতায়াত করে কোন জন।

ঠাকুরের প্রতি ভক্তি করে না তেমন।।

অজ্ঞান আঁধার পড়ি হাবু ডুবু খায়।

কেহ বলে লুপ্ত হবে ম’তো সম্প্রদায়।।

বহিরঙ্গ ভক্তদের ভক্তি না রহিল।

অন্তরঙ্গ ভক্ত সব অটল থাকিল।।

তারা কহে ঠাকুরের লীলা চমৎকার।

কি দিয়ে কি করিবেন বোঝে সাধ্য কার।।

দেশবাসী অনেকেই ভাবে মনে মন।

খৃষ্টান হইল বুঝি নমশূদ্রগণ।।

যদি কেহ ওঢ়াকাঁদি করে আগমন।

পথিমধ্যে কেহ তারে বলিত তখন।।

এবে ওঢ়াকাঁদি যাও কি লাগিয়ে।

তোমাদের কর্তা গেল খৃষ্টান হইয়ে।।

এইরূপ দেশ মধ্যে হ’ল জনরব।

অনেকের প্রাণমাঝে হয় নিরুৎসব।।

মূলমর্ম কেহ নহে হ’ন অবগত।

বাহিরের ভাব নিয়ে বলে মনমত।।

এবে শুন সর্বজন কারণ তাহার।

যেই হেতু অপবাদ হইল প্রচার।।

সত্য বটে মিড সনে বড়ই প্রণয়।

খৃষ্টান হইতে মিড বারে বারে কয়।।

প্রভু বলে বলিবার আছে এক কথা।

তব ঠাই বলিব হে প্রাণের বারতা।।

এই জাতি উচ্চস্তরে নিতে যে হইবে।

প্রাণপণে এই কর্ম নিশ্চয় করিবে।।

এত শুনি মিড বলে সাধিব নিশ্চয়।

যদি মোর ক্ষমতায় সংকুলান হয়।।

তাহার জন্যেতে আমি ত্রুটি না করিব।

যতনেতে প্রাণপণে চেষ্টায় থাকিব।।

ঠাকুর বলেন যদি পার করিবারে।

তব বাধ্য হব আমি জানিও অন্তরে।।

প্রভুর মনের বাঞ্ছা বুঝে সাধ্য কার।

সুকৌশলে  করে প্রভু পতিত উদ্ধার।।

গৃহস্থের যতগুলি কর্ম প্রয়োজন।

যে ভাবেতে এ সংসার রক্ষণ গঠন।।

শিষ্ট বা বিশিষ্ট হ’তে প্রয়োজন যাহা।

সর্বজীব হেতু তিনি দেখালেন তাহা।।

প্রতি মানবের পক্ষে যে কর্তব্য হয়।

স্বগুণেতে সর্বজনে করিয়া দেখায়।।

শিক্ষিত করিতে এই পন্থার উদ্ভব।

সুশিক্ষিত দেশবাসী করিবেন সব।।

এ উদ্দেশ্যে অন্তরেতে সতত ধারণা।

মিডের দ্বারায় হাই স্কুল স্থাপনা।।

এ ভাবেতে সবাকার করিতে মঙ্গল।

আবাদ করেন প্রভু অবিদ্যা জঙ্গল।।

মিডকে দিলেন স্থান করি সুমন্ত্রণা।

মিড সনে করে সদা সেই আলোচনা।।

তাহাতে অনেক লোক ভাবে মনে মন।

এ বেটাকে এই দেশে স্থান দিল কেন।।

তাকে নিয়ে এইভাবে থাকেন সদায়।

বুঝি আমাদের আর না র’বে উপায়।।

অতএব চল সবে যার যেবা শক্তি।

কাতর হইয়া পদে করিব মিনতি।।

একান্ত ভাবেতে যদি না শুনে বারণ।

পরেতে করিব মোরা বিহিত যেমন।।

ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীশশীভূষণ।

তার কর্ণে জানাইল সব বিবরণ।।

শুনিয়ে সবার বাণী বলে তখন।

মিছামিছি কেন সবে হও উচাটন।।

নিঃসংকোচে যাও সবে ঠাকুরের ঠাই।

বলিতে প্রাণের কথা কোন বাঁধা নাই।।

ব’লে কয়ে পাঠাইল ঠাকুর সদন।

ঠাকুরের ঠাই উপনীত সর্বজন।।

প্রকাশিয়া মন দুঃখ সকাতরে কয়।

অন্তরেতে মোরা সবে পাইয়াছি ভয়।।

অনুমানে বুঝি যাহা আপনার ভাব।

খৃষ্টধর্ম অবলম্বী হবে বুঝি সব।।

সেই হেতু মোরা বড় ব্যথিত হ’য়েছি।

নিরুপায় আমাদের তাহাই বুঝেছি।।

ঠাকুর বলে কেন পাও এত ভয়।

স্থির চিত্তে থাক সবে হইয়া নির্ভয়।।

আমার অন্তর বার্তা জান না কখন।

বহু কর্ম মিড দিয়ে করিব সাধন।।

পরম দয়াল মিড জান না তাহারে।

মনে মনে বড় শ্রদ্ধা করে সে আমারে।।

তোমাদের চির শুভ কল্পে ভালবাসি।

তোমাদের মঙ্গলার্থে দেখা দিল আসি।।

বহু কর্ম সমাধান করিব সে হ’তে।

কিছুদিন পরে সবে পারিবে বুঝিতে।।

তোমাদের এই দেশে হাই স্কুল নাই।

তারে দিয়ে আমি দেখ করিয়েছি তাই।।

তোমাদের মধ্যে কয়জন বিদ্যাবান।

বিদ্যা শিক্ষা করিতে না যায় অন্য স্থান।।

এবে দেখ অনেকেই পড়িতে পারিবে।

অল্প ব্যয় বিদ্যাশিক্ষা অনেকে করিবে।।

কেমন সুযোগ হ’ল বুঝে দেখ তাই।

মোরে নিয়ে তোমাদের কোন চিন্তা নাই।।

তোমাদের স্বার্থ হেতু পেতেছি কৌশল।

পরিণামে তোমাদের ফলিবে সুফল।।

আমি হই কোন জাতি দেখ বিচারিয়া।

ঠাকুর বংশেতে জন্ম নিয়েছি আসিয়া।।

ঠাকুর বলিতে সর্বজাতির ঈশ্বর।

তার ঠাই কে আপন কেবা হয় পর।।

অতএব জন্মিয়েছি তোমাদের তরে।

এই মত হইতেছে কথোপকথন।

হেন কালে মিড এসে দিল দরশন।।

ঠাকুরের প্রতি মিড বলেন বচন।

কি করা কর্তব্য হয় বলুন এখন।।

ঠাকুর বলেন মম বাক্য নহে আন।

জিজ্ঞাসি এ প্রশ্ন এবে মম পুত্র স্থান।।

ঠাকুর বলেন শশী কি করা এখন।

মিডের সনেতে আমি হব কি মিলন।।

আমি গেলে যদি তব জাতুদ্ধার হয়।

বল দেখি বাছাধন তাতে কিবা ভয়।।

একা গেলে যদি তব জাগে বহুজন।

কিবা দোষ হয় তাতে কহ বাছাধন।।

এতেক শুনিয়ে মিড কি যেন ভাবিল।

প্রভুকে সম্ভাষি পরে বলিতে লাগিল।।

একা আপনাকে যদি করিব খৃষ্টান।

আমা হ’তে হ’ল কই এদের কল্যাণ।।

দিয়েছি বচন এই জাতি জাগাইতে।

নীচ জনে নিব আমি উচ্চ  জায়গাতে।।

অতএব আমি এই জাতি জাগাইব।

একুলেতে কুল রবি কেন ডুবাইব।।

ঠাকুর আমার বড় জানেন কৌশল।

মিডকে জানিতে প্রভু করে নানা ছল।।

কে বুঝে তাহার তত্ত্ব কি দিয়ে কি করে।

সুমধুর খেলা পাতি দেখায় সবারে।।

ঠাকুর বলেন কেন বাঁধা দাও এবে।

মিড বলে মর্ম কথা শুনে নিন তবে।।

ব্রাহ্মণ শুদ্রাদি যত বিশিষ্ট আছয়।

বহু বহু বড় লোক এই দেশে রয়।।

কেবা আছে হেন ব্যক্তি এই চরাচরে।

তাহাদের সমকক্ষ কেবা হ’তে পারে।।

বহুকর্ম আছে মোর তাদের সনে।

তাহাদের সম্মুখীন হবে কোন জনে।।

আপনার তুল্য ব্যক্তি দিন এক জন।

তার দ্বারা করি নিব স্বকার্য সাধন।।

তারপরে আপনাকে করিব খৃষ্টান।

সেই ব্যক্তি হ’তে হ’বে এদের কল্যাণ।।

ধর্ম প্রচারিতে আমি করেছি ভ্রমণ।

না পারি করিতে কভু অন্যায় আচরণ।।

মম ধর্ম ভিত্তি জেনে কেহ যদি হয়।

তাতে আমি নিতে পারি প্রতিজ্ঞা আছয়।।

আপনাকে না লইব এই সে কারণ।

বলে ছলে করিব স্বজাতি বর্ধন।।

আদি অন্ত তত্ত্ব জেনে কেহ যদি হয়।

অবশ্য তাহারে আমি দানিব আশ্রয়।।

তা ব্যতীত অন্যজনে কভু না লইব।

চিরদিন হয় ইহা অন্তরের ভাব।।

বিশেষত এই জাতি সুবিশাল অতি।

আপনার অভাবেতে ঘটিবে দুর্গতি।।

নিপীড়িত আছে সবে বিদ্যার অভাবে।

চিরদিন আছে ডুবে অজ্ঞান অর্ণবে।।

অতএব এদের নিয়ে কি লাভ আমার।

বিদ্যাহীন দ্বারা কার্য না হয় উদ্ধার।।

অতএব জাতিকে শিক্ষা দান করি।

উন্নত শিখরে যদি তুলে নিতে পারি।।

তবেত হইবে মম এ কার্য সাধন।

নহেত গ্রহণ করা সব অকারণ।।

অতএব এ জাতিকে করুণ উদ্ধার।

হেন শক্তি অন্যে কভু নাহি ধরে আর।

আপনি বিহনে আর অন্যে না পারিবে।।

দৃঢ়রূপে অন্তরেতে দেখিয়েছি ভেবে।

এই সে কারণে আমি মাগি পরিহার।

স্বগুণেতে এই জাতি করুণ উদ্ধার।।

এত বলি সেই মিড বিদায় লইল।

মরম বৃত্তান্ত সবে বুঝিতে পারিল।।

যারা করেছিল এই অযথা প্রবাদ।

তারা কহে পদে করিয়েছি অপরাধ।।

ক্ষমা ভিক্ষা চাই পদে ওহে  দয়াময়।

কৃপা করি মো সবাকে রাখিবেন পায়।।

প্রভু বলে শান্ত হ’ইয়ে যাহ নিজ ঘরে।

আমি না যাইব কভু তোমাদের ছেড়ে।।

ক্রমেই বুঝিতে পাবে সব বিবরণ।

যার যার নিজ বাসে করহ গমন।।

এইভাবে মূল ধর্ম অনেকে জানিল।

বিচরণ কহে ইহা পরিণামে ভাল।।

(ইং ০৫.০২.১৯১০)

 

ঢাকা বিভাগের কমিশনার বাহাদুর ন্যাথান সাহেবের শ্রীধামে আগমন

 

একদা হইল দেশে বড় দুর্ঘটন।

স্থানে স্থানে অরাজকতার প্রদর্শন।।

তাহাতে হইল সরকারের এ আদেশ।

পিউনীটি পুলিশ বসিবেক সর্বদেশ।।

দেশবাসী কেন চলে আইন গর্হিত।

প্রতি গ্রামে হোক এই পুলিশ স্থাপিত।।

গোপালগঞ্জেতে এসে সে কমিশনার।

কোর্ট বসি করিলেন আইন প্রচার।।

তথা হ’তে শ্রীধামে করেন গমন।

সঙ্গে সঙ্গে আইলেন বহু বহু জন।।

ডিপুটি নবগোপাল এলেন সংহতি।

বড় সুচতুর তিনি বিচক্ষণ অতি।।

মিচটাক নামে এল ইংরাজের মেয়ে।

সুহাস্যবদনী তিনি উদিল আসিয়ে।।

সবে এল শ্রীধামেতে হরিষ অন্তরে।

হর্ষচিতে উপনীত ঠাকুর গোচরে।।

অভ্যর্থনা করে প্রভু অতি চমৎকার।

বস্ত্র আচ্ছাদিত হয় আসন সবার।।

তাহা হেরি’ কমিশনার অন্তরে বিস্ময়।

সামান্য মানব বলে প্রাণে না জুয়ায়।।

রাজোচিত ব্যবহার জানিল কেমনে।

নিজে ত আছেন বসি সামান্য আসনে।।

আমাকে আসন দিল টা হ’তে উত্তম।

নিশ্চয় হইবে ইনি ভাবে নরোত্তম।।

মম আগমন হেতু বিবিধ রাজন।

কেমনেতে এই ব্যক্তি কৈল আয়োজন।।

পল্লীগ্রামে করে বাস এই মহাজন।

অগ্রভাগে করিলেন মঙ্গলাচরণ।।

সুসজ্জিত করিয়েছে আপনার পুরী।

মাঙ্গলিক কর্ম মম স্বচক্ষে নেহারি।।

মম আগমন বার্তা জানিয়ে ঠাকুর।

আমার সম্মান হেতু কর্ম যে প্রচুর।।

এহেন উত্তম শিক্ষা পাইল কোথায়।

এইমত ভেবে তিনি হলেন বিস্ময়।।

এবে শুন যে ভাবে হ’ল আগমন।

সংক্ষেপেতে তাহা কিছু করিব বর্ণন।।

যখনে কমিশনার তারাইল ঘাটে।

শ্রুতমাত্র বহুলোক অতি দ্রুত ছোটে।।

কেহ কেহ করিলেন রাস্তার সজ্জিত।

কদলীর বৃক্ষ রোপে রাস্তার দু’ভিত।।

শ্রীযজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস বুদ্ধি বিচক্ষন।

সঙ্গেতে করিয়ে চলে লোক বহুজন।।

ঠাকুরের বহু ভক্ত সঙ্গেতে গমন।

পথ ঘাট সুসজ্জিত করে কোন জন।।

বিজয় নিশান রাখে রাস্তার দু’ভিতে।

সে তারাইল পর্যন্ত নিজধাম হ’তে।।

অনুমান পাঁচ মাইল হইবে তাহাতে।

পত পত শব্দ হয় সব পতাকাতে।।

বড়ই সৌন্দর্য ভাব শ্রীধামের পুরী।

কেহ বলে হল যেন বৈকুণ্ঠ নগরী।।

এমন মধুর সাজে হইল সাজন।

তারাইল ঘাটে বাজে বিবিধ বাজন।।

লোকারণ্যময় হ’ল তারাইল ঘাট।

রাজা দরশনে যথা প্রচার এ ঠাট।।

হেরিয়ে কমিশনার সুধায় তখন।

কোথা হ’তে এত লোক করে আগমন।।

রাজার মঙ্গল গায় প্রফুল্লিত প্রাণ।

রাজভক্ত হেরি নাই এদের সমান।।

কমিশনার জিজ্ঞাসে কোন ব্যক্তি ঠাই।

কাহা প্রেরিত লোক কত শুনি তাই।।

বাহাদুর সকাশেতে বলেছে সে জন।

ঠাকুরের আজ্ঞাক্রমে এল সর্বজন।।

তৃষিত চাতক সম আছে সর্বজন।

আপনার অভ্যর্থনা এই সে কারণ।।

আপ্যায়িত হ’য়ে কেন সে কমিশনার।

গুড গুড গুড বলি নামিল কিনার।।

সেইদিন তারাইল বঞ্চিল রজনী।

প্রভাতে হইল পুনঃ জয় জয় ধ্বনি।।

মুহুর্মুহু করে সবে জয় জয় জয়।

আনন্দে পূর্ণিত হ’য়ে পতাকা উড়ায়।।

পথিমধ্যে হল সবে আনন্দে মগন।

পদব্রজে চলে পল্লী করিতে দর্শন।।

বহুলোকে বাহাদুরে করিল স্যালুট।

বাহাদুর বলিলেন গুড গুড গুড।।

সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন অতি হর্ষান্তরে।

ম্যাজিস্ট্রেট আদি করি চলে যত নরে।।

স্কুল বাটীতে সেই মিচটাক চরণে।

কিছুকাল থাকিলেন কথোপকথনে।।

অত্যানন্দ ভরে সবে করে দরশন।

শ্রীধামেতে উপনীত ক্রমে সর্বজন।।

ঠাকুরের ধর্মকন্যা মিচটাক যিনি।

অগ্রভাগে ঠাকুরের পদে বন্দে তিনি।।

হেরিয়ে কমিশনার ঠাকুরে নমিল।

সঙ্গে সঙ্গে গুরুচাঁদ নমস্কার করিল।।

ম্যাজিস্ট্রেট আদি যত প্রভুকে প্রণামে।

সর্বলোক প্রভু পদ বন্দে ক্রমে ক্রমে।।

আগু হয়ে গুরুচাঁদ সম্মান দানিল।

তাহে যেন সর্বজনে বিস্মিত হইল।।

বাহাদুরে বসালেন ধরি স্বহস্তেতে।

যার যে সম্মান রক্ষা করে হর্ষচিতে।।

রাজনীতি ব্যবহার আনন্দে করিল।

পুনঃ বলে অদ্য মম সুপ্রভাত হ’ল।।

(লাইন জ্ঞাপ)

গৃহে বসি হ’ল মম সার্থক জীবন।

কোন শক্তি কিছু নাই দেখুন আমার।

কি দিয়া রাখিব আমি সম্মান রাজার।।

হীরামণি মাণিক্যাদি যোগ্য এ সম্মানে।

অন্যান্য রাজন্যবর্গ যথাযোগ্য দানে।।

আমাদের কিছু নাই করিতে কল্যাণ।

আইলেতে দূর্বা হয় ক্ষেতে হয় ধান।।

আমরা গরীব প্রজা আছি আপনার।

কৃপা করি নিন এই ক্ষুদ্র উপহার।।

এত যদি বলিলেন প্রভু দয়াময়।

নত শিরে বাহাদুর এগুয়ে দাঁড়ায়।।

মহাপ্রভু ধান্য দূর্বা করিলেন দান।

নেহারিয়ে সবাকার চমকিত প্রাণ।।

যতনেতে বাহাদুর করেন গ্রহণ।

ঠাকুরের পাদপদ্ম বন্দিল তখন।।

রাজকর্মচারীগণ সঙ্গে ছিল যারা।

নেহারিয়ে যেন সবে হয় জ্ঞান হারা।।

মনে ভাবে কেবা এই পুরুষ উত্তম।

বিশ্বের মাঝেতে যেন হয় নরোত্তম।।

এইভাবে কহে কত পুলিশের গণ।

ঠাকুরের পানে চেয়ে রহে সর্বজন।।

নীরব নিস্তব্ধ হ’য়ে রয়েছে সবাই।

বাহাদুর বলিতেছে শুনুন গোঁসাই।।

পিউনিটী পুলিশের হয়েছে বর্ণন।

প্রতি গ্রামে হবে এই পুলিশ স্থাপন।।

ঠাকুর বলেন ইহা সম্ভব না হয়।

হেন অরাজক কর্ম এদেশে কোথায়।।

পিউনিটী পুলিশের আইন যে সব।।

এ দেশেতে সেই সব অতি অসম্ভব।।

অতএব অন্য ঠাই যদি যোগ্য হয়।

আপনি সে দেখে শুনে রাখুন তথায়।।

এ দেশে নিরীহ যত নমশূদ্রগণ।

আইন বিরুদ্ধে তারা চলে না কখন।।

কৃষি কর্ম অনেকেই করে অনুক্ষণ।

কোনমতে করে তারা জীবন ধারণ।।

দাঙ্গা ও হাঙ্গামা কিংবা হত্যাকাণ্ড যাহা।

খুঁজিয়ে দেখিলে বড় না করে তাহা।।

এইমত বাক্যে বাহাদুর শান্ত হল।

প্রভুর কৃপায় মহা বিপদ ঘুচিল।।

অপরেতে ধর্ম কথা হ’ল আলাপন।

তাহে হ’ল বাহাদুর সন্তোষিত মন।।

দেশের মঙ্গল হেতু বলে দয়াময়।

সব কথা বুঝিলেন সেই মহোদয়।।

মৃদু ভাষে কহে কথা সে কমিশনার।

বিশ্ব বন্ধু আপনি হে বুঝিলাম সার।।

বুঝিয়াছি আপনার মঙ্গল সাধন।

আপনার স্বীয়বাঞ্ছা হউক পূরণ।।

অতএব মম প্রতি করুণ করুণা।

অবিলম্বে পুরাবেন প্রাণের কামনা।।

প্রভু বলে আপনি দেখিবেন সবে।

এ বংশেতে যারা যারা জনম লভিবে।।

এইভাবে বহু কথা আলোচনা হৈল।

শ্রীধামেতে বাহাদুর ফলাহার কৈল।।

সেইকালে এক কর্ম তথা হ’য়েছিল।

বৈঠকখানাতে যবে প্রবেশ করিল।।

দ্বারদেশে গুরুচাঁদ আপনি থাকিয়া।

বাহাদুর, ম্যাজিস্ট্রেটে নিলেন ধরিয়া।।

শ্রীনবগোপাল চাকি যাইতে উদ্যত।

তাহে বাঁধা গুরুচাঁদ করেন হঠাৎ।।

অপ্রতিভমনে করি ডিপুটি তখন।

ঠাকুরের প্রতি হন ক্রোধারিস্ট মন।।

মনে ভাবে অপ্রতিভ করিল আমায়।

ইহার উচিৎ কর্ম দেখাব তাহায়।।

প্রবেশ করিতে বাঁধা দিল কি কারণ।

কোথা পেল হেন শক্তি এ গুরুচরণ।।

অভিমান ভেঙ্গে দিব বলি বাহাদুরে।

স্পর্ধার অবসান হবে এতদিন পরে।।

মনে মনে অসন্তুষ্ট হইলেন অতি।

বাহিরেতে থেকে ক্রোধে ফেটে যায় ছাতি।।

ফলাহার অন্তে সেই বাহাদুর রায়।

পুনঃ এসে কাছারিতে বৈসে হৃষ্টকায়।।

বাহাদুর সমিভ্যরে বলেন তখন।

অপমান কৈল এই শ্রীগুরুচরণ।।

তার উচিৎ বিচার মাগি ওই পায়।

কিবা হেতু অপমান করিল আমায়।।

শুনিয়ে কমিশনার বলেন বচন।

কা’কে তুমি কি ভাবেতে কর সম্ভাষণ।।

কার সুবিচার তুমি মাগ মম ঠাই।

মানব আকারে যিনি ত্রিদেশের সায়ী।।

অপরাধ হল তব আমার বিচারে।

নিতে হবে পদধূলি সপ্তাহ অন্তরে।।

এই দণ্ড তব প্রতি আমার আদেশ।

না চিনে অমূল্য ধনে মিছে কর দ্বেষ।।

পরে সেই কথা কবে গুরুচাঁদ পরে।

করিলাম এই দণ্ড এই অপরাধে।।

সেই দণ্ড শিরোধার্য করিল গোপাল।

প্রাণেতে চনিল পরে বিশ্বের ভুপাল।।

বিচারে যে হুকুম পালে সযতনে।

সপ্তাহ অন্তর আসে শ্রীগুরু সদনে।।

ঠাকুর বলেন এস মাসের অন্তর।

লঘু পাপে গুরুদণ্ড হ’য়েছে তোমার।।

মাসান্তর এলে হবে শুন বাছাধন।

মম বাক্যে হবে তব পাপ বিমোচন।।

সেই অবধি নবগোপাল করে তাই।

ক্রমে অনুরাগ বাড়ে তুল্য দিতে নাই।।

নানাভাবে ঠাকুরের গুণ গায় সুখে।

নির্জনে বসিয়ে হরি গুণ গায় মুখে।।

এইভাবে শ্রীনবগোপাল পদ পেল।

হরিগুরুচাঁদ প্রতি হরি হরি বল।।

 

ধীরেন ব্যানার্জীর চাকরি ত্যাগ

 

এইভাবে কমিশনার শুভ আগমন।

সেই কথা আলোচনা করে বহুজন।।

অন্যান্য জাতির প্রাণে ভকতি জন্মিল।

কেহ এসে প্রভুপদে শরণ লইল।।

ফুকুরা নিবাসী এক কৌলীন্য ব্রাহ্মণ।

ধীরেণ ব্যানার্জ্জী নাম সর্ব সুলক্ষণ।।

পুলিশের কর্ম করে গোপালগঞ্জেতে।

এই দিন সে ধীরেণ ছিলেন সঙ্গেতে।।

এই সব দেখে শুনে বৈরাগ্য জন্মিল।

অতপর সেইজন চাকরি ত্যজিল।।

অন্তরে হইল তার ভাবের উদয়।

গুরুচাঁদ রূপ ছবি অংকিত হৃদয়।।

ক্রমেতে ভক্ত স্বভাব করিল ধারণ।

কিছুদিন অন্তে পরে অরুণ বসন।।

গৃহবাস ত্যাগ করি রহে পথে পথে।

সন্ন্যাসীর বেশধারী ত্রিশূল হস্ততে।।

এইভাবে শ্রীধীরেণ প্রমত্ত হইল।

শ্রীনবগোপাল শুনে আনন্দ লভিল।।

বহুজন পাশে তাহা করেন প্রকাশ।

গাহিতে প্রভুর গুণ অন্তরে উল্লাস।।

বলে আমি বহুদেশ করি পর্যটন।

নাহি দেখি কভু গুরুচাঁদের মতন।।

মনের মানুষ বটে প্রভু গুরুচাঁদ।

ভক্তিতে কমিশনার বন্দিল সে পদ।।

দেখে শুনে বুঝিলাম তিনি সর্বসার।

গুরুচাঁদ বিনে ভবে গতি নাই আর।।

মানব আকারে তিনি মানব আচারে।

ক’রেছে মধুর লীলা এসে এ সংসারে।।

এবে আমি অন্য কিছু প্রত্যয় না করি।

তিনি মম ভবার্ণবে পারের কাণ্ডারী।।

আমাকে ভুলাতে কেহ না পারে কখন।

বহু সাধু সন্ন্যাসী ক’রেছি দর্শন।।

আর যাহা হেরিলাম স্বচক্ষে আমার।

বুঝিলাম গুরুচাঁদ দয়ার আধার।।

ধীরেণের ভক্তিবলে চিনিছে তাহারে।

আশীর্বাদ করি আমি সানন্দ অন্তরে।।

দিন দিন যেন তার বাড়ে ভক্তিবল।

অবিলম্বে ল্ভে যেন সে পদকমল।।

ঐকান্তিক প্রাণে আমি করি আশীর্বাদ।

যেন সেই প্রাপ্ত হয় সে নির্বাণ পদ।।

আমার শক্তিতে না চিনিনু গুরুচাঁদে।

শ্রীগুরু কমিশনার চিনি সে প্রসাদে।।

গুরুচাঁদ পদে দেহ করি সমর্পণ।

যেন কেটে যায় মম এ ছার জীবন।।

যতদিন ছিল তিনি গোপালগঞ্জেতে।

মাসান্তে করিত দেখা প্রভুর সঙ্গেতে।।

বহুদিন পরে তিনি চাকরি ছাড়িল।

হরিগুরু প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।

 

ঠাকুরের সেন্সাসের কাগজ আনয়ন

 

একদা শ্রীগুরুচাঁদ ভাবে মনে মনে।

নমশূদ্রকুলে জন্ম নিয়েছি যখনে।।

একুল উদ্ধার করা একান্ত উচিৎ।

মিডের সাহায্য নিতে হইবে কিঞ্চিত।।

এ জাতির নাম লেখে চণ্ডাল বলিয়ে।

এ দুঃখ সহিতে নারী ফেটে যায় হিয়ে।।

মিথ্যা কথা লিখে কত হেয় ভেবে মনে।

নিশ্চেষ্ট থাকিয়ে ইহা সহিব কেমনে।।

জাতির কল্যাণ আমি সাধিব নিশ্চয়।

এত ভাবি মনে মনে চিন্তেন উপায়।।

হেন কালে আইলেন শ্রীবিধু চৌধুরী।

বসিলেন প্রভুপদে দণ্ডবৎ করি।।

ঠাকুরে বলেন বিধু করহ শ্রবণ।

এস মোরা এক কর্ম করিব সাধন।।

চণ্ডাল বলিয়ে দেখ এ জাতিকে লিখে।

কেন বল হীনভাবে নিম্নস্তরে রাখে।।

প্রকৃত ব্রাহ্মণ এই নমশূদ্র জাতি।

হীনভাবে নাহি শোভে কুৎসিত এ খ্যাতি।।

ঘুচাব এ মলিনত্ব বাসনা আমার।

মম সনে থেকে কর স্বজাতি উদ্ধার।।

বিধু বলে আপনি হে সর্ব মূলাধার।

পূর্ণ করুণ স্বইচ্ছা যাহা আপনার।।

কৃপা করে এসেছেন এ জাতির ঘরে।

জাতি উদ্ধারিতে মোরা আর পাব কারে।।

আপনি করুণাময় করুণ করুণা।

কল্যাণ করিতে যেবা করুণ ধারণা।।

তাহাতে কল্যাণ হ’বে জানি তা নিশ্চয়।

আপনার মত কেবা আছে দয়াময়।।

পতিত পাবন নাম আছে পূর্বাপর।।

স্বীয় নাম সার্থকতা রাখিতে যে হয়।

ভীতজনে প্রাণে প্রভু দানিয়ে অভয়।।

অদীনের বন্ধু নাম নিয়েছেন ভবে।

কাঙ্গালের সখা বলে ডাকে ভক্ত সবে।।

আমি আর কি বলিব যাহা আসে মনে।

সে বাঞ্ছা সাধিত নিজে করুণ আপনে।।

এইমত বলাবলি করে তথা বসি।

শ্রীচণ্ডী চরণ রায় উপজিল আসি।।

ঠাকুর বলেন শুন রায় মহাশয়।

মনে মনে আমি এক ক’রেছি আশায়।।

এ জাতিকে হেয়জ্ঞানে কুৎসিত ভাষায়।

সেন্সের কাগজে লিখে এক মহাশয়।।

চণ্ডাল বলিয়ে লিখে সেই মূঢ় জন।

কেমনেতে সহ্য কর দুঃসহ বেদন।।

মুছাতে হইবে এই দুঃখ সবাকার।

এস মোরা করি এক উপায় তাহার।।

শ্রীচণ্ডী চরণ রায় বলে সকাতর।

আপনি করুণাসিন্ধু সব অবতার।।

কৃপা করে এসেছেন এ জাতির ঘরে।

সাধিতে কল্যাণ আর মোরা পাব কা’রে।।

পতিত পাবন নাম বজায় রাখিতে।

জাতির উদ্ধার প্রভু হইবে করিতে।।

ঠাকুর বলে এক আছে সদুপায়।

সাহায্য করিবে দেখ মিড মহোদয়।।

চল এবে যাই মোরা তাহার সদন।

তাকে দিয়ে এই কর্ম করিব সাধন।।

অতএব তিন জন করিয়ে যুকতি।

মিডের সকাশে গিয়ে করেন উকতি।।

আমাদের এই কর্ম করিতে হইবে।

সেন্সেসের কাগজ সংশোধন করিবে।।

হীনভাবে বিদীর্ণ হয় সেই মনোদুঃখে।

আমরা ব্রাহ্মণ জাতি ছিলাম পূর্বেতে।

পবিত্র হ’য়েছি ত্যগি কোন কারণেতে।।

ব্রাহ্মণের রীতি নীতি কিংবা যে পদ্ধতি।

পালন করি যে তাহা থেকে শুদ্ধ মতি।।

পূজা করি পার্বণাদি শ্রদ্ধা শান্তি যাহা।

বেদোচিত নিয়মেতে পালিতেছি তাহা।।

ভগবত পুরাণাদি ধর্মশাস্ত্র যত।

কৃষ্ণতত্ত্ব ভক্তিতত্ত্ব আছে অবগত।।

কিসে হয় এই জাতি চণ্ডাল সমান।

শাস্ত্রের প্রমাণ কহি কর প্রণিধান।।

ত্রিশঙ্কু নামেতে রাজা সূর্যবংশে হয়।

চণ্ডালত্ব পেয়েছিল শাস্ত্রে ইহা কয়।।

হরিশ্চন্দ্র নামে হয় তাহার নন্দন।

চণ্ডালত্ব প্রাপ্ত হ’য়েছিল সেই জন।।

নিশাকালে শ্মশানেতে করিতেন বাস।

মড়ার করি লইত মৃতেরাত্মং পাশ।।

যোগাতে মড়ার খড়ি শাস্ত্রে ইহা লেখে।

এ জাতিকে লিখে তাই কোন কর্ম দেখে।।

অতএব সুবিচার মাগি তব ঠাই।

পাইলে আশ্বাস বাণী প্রাণে শান্তি পাই।।

মিড বলে এই কর্ম অতি মন্দ হয়।

সংশোধন করা তো সহজসাধ্য নয়।।

দার্জিলিংয়ে আছেন যিনি গ্রেড বাহাদুর।

সেন্সেসের কর্তৃত্ব তাহারি প্রচুর।।

শ্রীমহেশ ন্যায়রত্ন জাতি বর্ণ চারি।

জাতির নির্ণয় কার্য কল্পিত তাহারি।।

সেই জনা রাজার সে দ্বার পণ্ডিত।

বিদ্যাবলে হয় তার মানস মণ্ডিত।।

আচ্ছা আমি একবার দেখি চেষ্টা করি।

এই কার্য সংশোধিতে পারি কিনা পারি।।

নিশ্চিন্তে জইবে এবে গৃহে যান  চলি।

আর এক কথা আমি আপনাকে বলি।

অর্থ কিছু ব্যয় হ’বে এ কর্ম করিতে।।

ঠাকুর বলে দিব কিবা ক্ষতি তা’তে।।

অতপর সেই কর্ম সমাধা হইল।

বহু অর্থ ব্যয় করি কাগজ আনিল।।

দ্বিজ নমশূদ্র ব’লে লিখে এই জাতি।

মলিনত্ব দূরে গেল ঘুচিল অখ্যাতি।।

চণ্ডাল বলিয়ে কেহ না ডাক আর।

অনর্থ ঘটিবে যেন হইবে তাহার।।

শ্রীমহেশ ন্যায়রত্ন মূলার্থ জানিয়ে।

দ্বিজ নমঃশূদ্র বলে দিলেন লিখিয়ে।।

লেখা আছে যে গাহিবে যে জন শুনিবে।

কূলের কলঙ্ক তার কভু না রহিবে।।

যেই জন এই কর্মে সাহায্য করিবে।

সেইজন প্রাপ্ত ফল অবশ্য পাইবে।।

স্বজাতি উদ্ধার ইহা বড় ভাগ্য ফল।

অগ্রাহ্য করিলে সেই যাবে রসাতল।।

দ্বিজ নমঃশূদ্র জাতি  করিছে অমান্য।

চণ্ডাল জাতির মধ্যে সেইজন গণ্য।।

যদি কার দেখিবারে ইচ্ছা হয় প্রাণে।

কাগজ চাহিলে পাবে দেখিতে তখনে।।

যখনে আইলা তাহা গুরুচাঁদ স্থানে।

পড়িয়া শুনিয়ে তাহা নিল বহুজনে।।

কেহ বলে এই তত্ত্ব নাহি জানি কভু।

(লাইন জ্ঞাপ)

চিরদিন ঘোরাধারে ছিলাম ঘুমিয়ে।

নাহি জানি এই তত্ত্ব এ বংশে জন্মিয়ে।।

ধন্য ধন্য গুরুচাঁদ ধন্য হরিচাঁদ।

কৃপা করি করিলেন পতিত আবাদ।।

পতিত পাবন প্রভু নমঃশূদ্রকুলে।

কৃপা করি উচ্চস্তরে লইবেন তুলে।।

এই তম বহুজনে জানি বিবরণ।

ধন্য ধন্য মানিলেন আপন জীবন।।

কেহ কেহ ব্যয়ভার কিছু কিছু দিল।

যার যে শকতি এনে প্রভুকে অর্পিল।।

পাঠ করে অনেকে ঘুচান সন্দেহ।

গুরুচাঁদ সমীপেতে পাঠে কেহ কেহ।।

জেনে শুনে বহুজনে আনন্দিত মনে।

গৃহে গিয়ে যেচে যেচে বলে অন্য জনে।।

এইভাবে দেশ মধ্যে প্রকাশ হইল।

দ্বিজ নমঃশূদ্র বলে ঘোষণা করিল।।

অপভ্রংশ ভাবে আর বলিতে মো’দিকে।

আইনের ধারা মতে দণ্ড দিব তাকে।।

এইভাবে এই কর্ম সমাধা হইল।

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।

 


 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free