মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নংঃ ৯১-১১০

৯১নং তাল - একতাল
ধন্যরে যুগ পুষ্পন্ত কলিকাল
মানব দেহ ধরি দয়াল হরি হল যশোমন্ত দুলাল;
শ্রীধাম ওড়াকান্দি হরি, হল পরকাশ;
পাপ তাপ দুরে গেল, তিমির বিনাশ
ভকত চকোর যারা সুধাপানে মাতোয়ারা,
পেয়ে প্রেম সুধারস, জগৎ হইল বশ,
প্রেমানন্দে বাড়ায়ে উল্লাস (হায় গো)
পূরলরে মনের অভিলাষ, ফিরলরে চাঁদের কপাল।।
অনর্পিত চরিং চিরাৎ, যে ধন বাকী ছিল,
এই না দয়াল অবতারে, সে ধন বিলাইল,
কেউ না বাকী রল, প্রেম সুধা সবে পেল;
যারে দেখে আপন কাছে, করে ধরে প্রেম যাচে;
এমন দয়াল আর কি ভবে আছে (হায় গো)
জীবের কর্ম বন্ধ গেল ঘুচে, এলরে পরম দয়াল।।
নাম সিন্ধু করি মন্থন, হরি গুণ মণি,
উঠাইল প্রেম সুধা সুরস নবনী,
লয়ে সব ভক্তগণ করে প্রেম বিতরণ,
ব্রহ্মার বাঞ্চিত ধন, পেয়ে নাচে সর্ব্বজন,
অনুদিন বাড়ে অনুরাগ (হায় গো)
প্রেমে তনু ডগমগ হলরে মত্ত মাতাল।।
নদীয়ার চন্দ্র হরি, নদীয়া ছাড়িয়ে;
পুনরায় হল উদয়, ভক্তগণ লয়ে;
ভক্ত গণ লয়ে সাথে, কলুষ নাশিতে;
নব রসের গোরা, প্রেম রসে মাতোয়ারা,
দুনয়নে বনে প্রেমধারা (হায় গো)
ও সেই ব্রজ গোপীর মনোচোরা, এলরে সেই নন্দদুলাল।।
হরি প্রেমের আমার তারক মহানন্দ;
অকাতরে বিলাইতেছে, হরি প্রেমানন্দ;
উদিত হরিচন্দ্র, ঘুচিল তমঃসন্দ;
প্রেমানন্দ বাড়িল, নিরানন্দ ছাড়িল,
প্রেমানন্দে ধুলায় গড়ি যায় (হায় গো)
হরি প্রেমধন পেল সবায়, পেলনা অশ্বিনী কাঙ্গাল।।
 
৯২নং তাল - একতালা
দয়া করি এস হরি দয়াময়
প্রিয় ভক্তের সঙ্গে, রসে রঙ্গে, এস হৃদি আঙ্গিনায়।।
এই বাসনা রাত্রি দিনে, বসায়ে আঙ্গিনে,
শ্রদ্ধারস, সচন্দন, দিব ঐ চরণে,
তাই বা হবে কেন, নাহি মম ভক্তি ধন,
মনে মম এই সাধ, কমলা সেবিত পদ
মনোসাথে হেরিব নয়নে, (হায় গো)
এই বাসনা রাত্রি দিনে প্রাণ সপে দিব ঐ পায়।।
ভক্ত বৃন্দ সঙ্গে লয়ে, কীর্ত্তনরূপ হরি,
প্রেমানন্দে, কর কীর্ত্তন, অমি শ্রবণ করি,
প্রেমানন্দে ভাসিব, হাসিব, কাঁদিব,
প্রেম সাগরে অতল নীরে, ডুব দিব বিরাগভাবে;
পুনঃ ফিরে না আসিব, ঘরে (হায় গো)
দেখব ওরূপ নয়ন ভরে, বাসনা মম হৃদয়।।
উচ্চৈঃস্বরে কর কীর্ত্তন, খোল করতাল লয়ে,
আমার মন পাষন্ড, হবে দলন, সে ধ্বনি শুনিয়ে,
শুনে মধুর হরিনাম, পুরাবো মনোষ্কাম;
শুনে হরি সিংহ রব, পলাইবে রিপু সব,
সিংহ ডরে যেন করী ধায়, (হায় গো)
কাম রিপু হবে পরাজয়, কি করবে রবির তনয়।।
হৃদি আকাশ ঈশাণ কোনে, হও এসে উদিত
অনুক্ষণ বরিষণ কর প্রেমামৃত,
মন মতি চকোর, সুধা পিয়ে বিভোর,
পিয়ে মতি চকোর, সুধা পিয়ে বিভোর,
পিয়ে হরি প্রেম সুধা ঘুচাইবে ভব ক্ষুধা,
মায়া হবে বিসর্জন (হায় গো)
দেখিব ও রূপ ভুবন মোহন, মোহন চুড়া হেলবে বায়।।
গোলোকচন্দ্র, তারকচন্দ্র, প্রেমিক মহানন্দ,
অন্তরঙ্গ ভক্ত লয়ে, করে প্রেমানন্দ,
প্রেমানন্দ আসিবে, নিরানন্দ নাশিবে,
কলির কলুষ দাগ, যাবে দশ ইন্দ্র যাগ,
অনুরাগে ছাড়, হুহুঙ্কার (হায় গো)
অশ্বিনী তোর মনের বিকার ঘুচবে শ্রীগুরুর কৃপায়।।
 
৯৩নং তাল - কাওয়ালী
মান অপমান যাহার সমান, তার মত আর মানী কে;
শুভ অশুভ সমজ্ঞান, তার তুল্য নাই ত্রিলোকে।।
তৃণ হতে সুনীচেন, তার কাছে নাই অভিমান;
প্রাপ্ত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান, ভাসে প্রেম পুলকে।।
তরুরেব সহিষ্ণুতা, অমানীণ মান দাতা;
সদায় বলে হরিকথা, অন্য বলি নাই মুখে।।
সুখে দুঃখে সদায় খুশী, ভুক্তি মুক্তি হয় তার দাসী;
ধর্ম পূণ্য দিবানিশি স্থান দিতে চায় মস্তকে।।
তাতে না হয় বশীভুত, মহা ভাবেতে উম্মত্ত;
জীবকে দিতে গুরুতত্ব, ভ্রমণ করে ভুলোকে।।
নিজের হেতু নাইক মোটে, জীবের জন্য ভবের হাটে;
হয়ে জীবের পারের মুটে, জীবকে পাঠায় গোলোকে।।
মহানন্দ হয়ে দৈন্য, কেঁদে ফিরে জীবের জন্য;
অশ্বিনী তুই ভক্তি শূন্য, মত্ত হলি ঐহিকে।।
 
৯৪নং তাল - একতাল
কি মধুর নাম আনলেন হরি, জীবের ভাগ্যক্রমে;
নামে জগৎ মাতিল, বাকী নাহি রল, মধুর হরিনামে।।
এ যে অনর্পিত নাম, হরি গুণধাম, অর্পিলেন ধরাধামে;
করতে পাষন্ড দলন, যশোমন্ত নন্দন, মজাল রাধা প্রেমে।।
পিয়ে হরিনাম সুধা, গেল ভব ক্ষুধা, পাষন্ড হৃদয় রমে;
আহা না কর বিরাম, শুধু হরিনাম লওরে দমে দমে।।
নাম ব্রহ্মার বাঞ্চিত, তুলনা রহিত, অবর্ণিত বেদাগমে,,
এবার নামের কল্লোলে, প্রেমের হিল্লোলে, ঢেউ উঠেছে ব্যোমে
নামে প্রেম সুধা ক্ষরে, জপরে অধরে, জারিবে লোমে লোমে;
এ নাম অতি সুমধুর, মধুর মধুর, আপার মহিমে।।
এ যে দয়াল অবতার, হরিচাঁদ আমার প্রেম বিলায় অধেম;
মূঢ় অশ্বিনী যে কয়, দেখা দাও আমায়, রাইকে লয়ে বামে।।
 
৯৫নং তাল - একতালা
হারে ও তম দূর হলো, হরিচাঁদের আগমনে
যত ভকত চকোর প্রেমেতে বিভোর মত্ত সুধা পানে।।
এ চাঁদ অতি সুনির্ম্মল, বড় সুশীতল, হেরিলে নয়নে
করে প্রেমে মাতোয়ারা, দুনয়নে ধারা, বহে রাত্রি দিনে।।
এ চাঁদ করলে দরশন, কিম্বা পরশন যে করে যখনে
ও তার কল মান রাশি, অমনি পড়ে খসি, দাসী হয় চরণ।।
এ চাঁদ কাউরে নহে বাম সবার মনষ্কাম, পুরায় নিজগুণে।।
ও চাঁদ কাউরে নহে বাম সবার মনষ্কাম, পুরায় নিজগুণে।।
এ চাঁদ হইয়ে সদয়, ভূতলে উদয়, যশোমন্তের ভবনে
এ চাঁদ অনাদির আদি, গেলে ওড়াকান্দি, দেখবি বর্তমানে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, হরিচাঁদ উদয়, জীবের ভাগ্য গুণে
যাবে তম সন্দ তোর, অশ্বিনী বর্ব্বর, হরিচাঁদের কিরণে।।
 
৯৬নং তাল - ঠুংরী
বাঁকা সখা হরি হে, দেখা দিয়ে প্রাণ রাখ
আমি জঙ্গলে জঙ্গলে, ফিরি কাঙ্গাল পানে চেয়ে দেখ।।
না দেখিলে প্রাণে মরি, বিচ্ছেদ জ্বালা সইতে নারি;
তবে জ্বালা সহিতে পারি; তুমি যদি সুখে থাক।।
তুমি আমার গুণমণি, মন ভুলানো তনুখানি;
তাইতে ওরূপ দিন রজনী, দেখতে চায় মোর মন চাতক।।
ভকত চাতক যত, তব রূপের অনগত;
যে হয় তোমার মনের মত, দিবানিশি তার হৃদয়ে থাক।।
গোলোকচাঁদ সেই রূপ দেখি, পালটীতে নারে আঁখি;
ভক্তের হৃদয় সদায় থাকি, ঘুচালে ভক্তের দুঃখ।।
মহানন্দ হেরে সে রূপ, জন্মের মত দিয়াছে ডুব;
অশ্বিনী দেখলি না সে রূপ, ঘুচল না সংসারের পাক।।
 
৯৭নং তাল - গড়খেমটা
মরি তাই ভেবে মোর, আর কি সে দিন হবে
যখন বাল্যকালে, মায়ের কোলে, ছিলাম সুনির্ম্মল স্বভাবে।।
পিতামাতা তুষত আমায় আনন্দ উৎসবে,
আমি কান্না নিলে, কর্ণমূলে, হরির নাম শুনাইত মধুর রবে।।
মেরেছি ধরেছি কত, চঞ্চল স্বভাবে
তবু নাইক কষ্ট, সদায় তুষ্ট কত রস খাওয়াইত মিষ্ট ভেবে।।
গেছে বয়স বেড়ে, সে ভাব ছেড়ে যৌবনের প্রভাবে;
পেয়ে পুত্র দারা, সে ভাব হারা, ডুবেছি সংসার রৌরবে।।
গুরুর তবিল না হল মিল, গণে দেখি এবে;
আমি হুজুরে কি জবাব দিব, যখন এসে হিসাব লবে।।
মহানন্দের বাণী, শোন অশ্বিনী, মরিস না আর লোভে;
তোর স্বভাব গেলে, অভাব যাবে, পড়ে থাকগে গুরুচাঁদকে ভেবে।।
 
৯৮নং তাল-গড়খেমটা
এ মহাদেশে, তার হরির অভাব কিসে।।
ও যার চরিত্র পবিত্র হৃদয়, সদা প্রেমানন্দে ভাসে।।
জলে হরি স্থলে হরি হৃদয় বাসে;
ওরে অনলে অনিলে হরি, হরিরূপ রসে গেছে মিশে।।
যার হরিকথা হৃদয় গাঁথা, তার তুলনা কিসে;
ও সে হরিকথা কইতে কইতে, নয়ন জলে বয়ন ভাসে।।
হরিনামামৃত অবিরত পান করে যে বসে;
হয়ে নামে রুচি সর্ব্ব শুচি, নেচে বেড়ায় বেহাল বেশে।।
হয়ে নামে নিপুন, নিদ্রা মৈথুন তাড়িয়াছে দ্বেষ দিসে;
হয়ে পাগল পারা, মতোয়ারা, একবার কাঁদে একবার হাসে
মহানন্দ, পাগল ছন্দ, প্রেম দিয়ে কাম নাশে;
অশ্বিনী তুই রইলি ভুলে, হলি প্রেম ঘটলনা তোর কর্ম্মদোষে।।
 
৯৯নং তাল ঠুংরী
বড় ভাব লাগায়ে গেলি মনে
প্রেমে তনু ডগমগ ধারা বহে দুনয়নে রে।।
তোর ভাবনা ভেবে মরি, ধৈর্য্য হতে নাহি পারি;
কি করিতে কি না করি, ভাবি নিশি দিনে (রে)।।
তোর ভাবনা বক্রগতি, মানুষ করে ছন্নমর্তি;
তার হৃদয় জ্বলে বিষের বাতি, প্রবোধ নাহি মানে রে।।
ভাবনা রোগ হলে বৃদ্ধি কি করিবে মহাঔষধি;
ভাবনা রোগের নাইক বিধি, আয়ুর্ব্বেদ নিদানে রে।।
 
১০০নং তাল - আড়া
আপন বলিতে আমার, কেউ হলনা ভবে
যারে এত ভালবাসি, সেও ডুবায় গৌরবে।।
যার সুখের আশে, আশাময় আকাশে, চাঁদ ধরব বলে উঠিলাম হরিষে
সেও করিয়া ছল, দিল রসাতল, পরিণামে কি হবে।।
যাহার জন্যতে ক্ষুধা তৃষ্ণা শীতে; অর্থ সঞ্চয় করি সে দুঃখ নাশিতে,
সেও হয়ে বৈমুখ, দিল অশেষ দুঃখ, এখন মরি ভেবে।।
সাধু সঙ্গে নাহি হল সৎ অন্তর, অসৎ সঙ্গে হল সদায় বিহার,
যে আনিল মোরে, এ ভব সংসারে; তারে গণিনা গৌরবে।।
দীনবন্ধু হরি সকরুণ স্বরে সুধা করে লয়ে ডাকিল আমারে;
নাহি চহিলাম ফিরে, করমেরই ফেরে অকুলে মরিলাম ডুবে।।
দয়াল মহানন্দ, প্রেম সুধা লয়ে, ঐ যে চলে গেল যাচিয়ে যাচিয়ে,
তাহে না ভজিলাম, গরলে মজিলাম, অশ্বিনী মরিল লোভে।।
 
১০১নং তাল - ঠুংরী
দেহ পবিত্রময় হলে হৃদয়, সেই দেহে হয় ভাবের উদয়
অপবিত্র দেহ হলে, তার দেখলে মহাভাব লুকায়।।
ভাবগ্রাহি জনার্দ্দন, ভাবুক জনে কয়,
ভাবের ভাবুক যারা, জানে তারা,
ভাব ছাড়া হরি নাহি রয়, ইহা সাধু শান্ত্রে কয়।।
সদানন্দ হরি আমার ভাবুকের হৃদয়,
যোগী হৃদয় নচ নচ বৈকুণ্ঠ আলয়, হরি ভক্তের কাছে রয়।।
ভাবিলে ভাবুকের দেহে কত ভাব উদয়,
ভাব যোগ্য দেহ হলে, শেষে হরিচাঁদকে পাওয়া যায় ইহা কভু মিথ্যা নয়।।
ভাবের পাগল, প্রেমে বিভোল, আনন্দ হৃদয়,
ও সে প্রেমানন্দে সাঁতার খেলে, ধুলায় গড়ি যায়, কত কেঁদে বুক ভাসায়।।
প্রেমের পাগল মহানন্দ প্রেমধন বিলায়,
জগৎ ভরি পেল সে প্রেম, একবিন্দু অশ্বিনী না পায়, ও তার কঠিন হৃদয়।।
 
১০২নং তাল - ঠুংরী
হরি তোমারই তুলনা তুমি
কোন গুণে কার সনে, হরি তুলনা করিব আমি।।
সোনা, চুনি মণি, পরশ পাথর জানি, তব রূপ সনে, কিসে বল গণি,
তুমি শুন্যময়, অন্ত কেবা পায়, অন্তময় অন্তর্য্যামি।।
ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, তুমি সবার পূজ্য তোমার লাগিয়া সব করি তাজ্য,
দেব মৃত্যুঞ্জয়, হয়ে নিরাশ্রয়, তোমারই আশায় বেড়ায় ভ্রমি।।
অনাদির আদি, তুমি গুণনিধি, বেদ বেদাঙ্গ বিধাতার বিধি,
তুমি গুণাকর, গুণের সাগর, স্থাবর জঙ্গম ভূমি।।
লক্ষ্মী দাসী যার, ভান্ডারী কুবের, অনন্ত গুণময় শিরোমণি শিবের,
বিপদ ভঞ্জন, শ্রীমধুসুদন, জগৎ রঞ্জন জগৎ স্বামী।।
প্রেম সম্বন্ধে বলে মহানন্দে, ব্রহ্মা শিব যারে, করযোড়ে বন্দে,
তুল্য নাহি যার, মহিমা অপার, অশ্বিনী কীটস্য কীট কৃমি।।
 
১০৩ নং তাল - কারফা
তার রুপের কথা গুণের কথা বলা ভুল
তার কি গুণ কব, কি বর্ণিব, অনাদি যার পায় না মূল।।
তার রুপের কথা, বলব কোথা, চাঁদ সূর্য্য নয় সমতুল;
ও তার অবর্ণিত রূপ রাশি, রূপ সাগরের নাহি কূল।।
তার গুণের কাছে, কি গুণ আছে, সেই গুণেতে দিব তুল;
সেত গুণাতীত, গুণমণি, যার গুণে জগৎ আকুল।।
অনন্ত না পেল অন্ত, মহিমা ভেবে এক ধূল,
ও সে বর্ণশ্বেরী বর্ণেহারী, সমর্পিল জাতিকুল।।
ও তার রূপ গুণের শেষ, না পেয়ে শেষ পাতালাতে করল স্থুল
ও তার নাম মাহাত্ম্য ব্রহ্মার সুত, জানতে গিয়ে নামাককুল।।
বলে স্বামী মহানন্দ, অশ্বিনী তুই-হ আউল;
ও তুই কি সুখ পেয়ে ভুলৈ রলি, দেখে ভবের শিমুল ফুল
 
১০৪ নং তাল - গড়খেমটা
গুরু পুণ্য ফাঁসি গলায় দিলে ধর্মবেড়ী পায়
লয়ে তত্ত্বমসি দাঁড়াও আসি যাতে মোর মুক্তির বন্ধন কেটে যায়।।
ভুক্তি মুক্তি দুই চাপড়াশী, আমায় ভোগবিলাসে অষ্টপাশে বাঁধতে চায় আসি,
তাই দেখে চিন্ত মহিষী, নয়ন জলেতে বয়ান ভেসে যায়।।
নিবৃত্তি নামেতে ভগিনী, আমার বন্ধন দেখে, মন দুঃখে হয় বিষাদিনী,
আমার শান্তিময়ী জননী যিনি, ঐ দুঃখে পাষাণে বুক বেঁধে রয়।।
গুরুকৃপা সত্যের কাছারী, হয়ে শশব্যস্ত, এই দরখাস্ত করি হুজুরী,
যেন স্বর্গ জেল এড়াতে পারি, নিবেদন করি গুরুর রাঙ্গা পায়।।
বিবেক নামেতে ভাই আমার, আপীল করতে প্রেম বিলাতে হলেন অগ্রসর,
রেখে অনুরাগ ভক্তি জুড়িদার, শ্রদ্ধা অর্থব্যয় করল এ মামলায়।।
তারকচাঁদ কেঁদে কেঁদে কয়, এই মানসা ওড়াকান্দী, হরিচাঁদের পায়,
অশ্বিনী যদি খালাস হয়, চির দাস করে দিব রাঙ্গা পায়।।
 
১০৫ নং তাল - গড়খেমটা
তুমি নাই রুপে কানাই, তোমায়ে পলকে হারাই
আড়ালে লুকায়ে রলি, খুজে নারে পাই, কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাই।।
তুইরে আমার চক্ষের মণি, বক্ষের ধন দুঃখ হানি,
মরিরে মোর গুণমণি, লয়ে তোর বালাই
আমারে কাঁদালে দুঃখে, তুমি যদি থাক সুখে,
দুঃখের বোঝা দাও আমাকে, বহিয়া বেড়াই।।
সুখময় সুখের নিধি, সুখে থাক নিরবধি,
আমি দুঃখে যদি, তাতে ক্ষতি নাই।।
ভুক্তি মুক্তি সুখ শান্তি, তাতে সুখ নাই এক ক্রান্তি,
তুমি যাতে থাক শান্তি, তার মত সুখ নাই।।
তারকচাঁদ ডেকে বলে, অশ্বিনী তুই অবোধ ছেলে,
যত্ন বিনে রত্ন মিলে, কভু শুনি নাই।।
 
১০৬ নং তাল - কারফা
চলরে স্বদলে সেই ভজন বাদীর রণস্থলে
এ রণে না জয়ী হইলে, পড়বিরে বিষম গোলমালে।।
কর রণের ষড়যন্ত্র, শুদ্ধ রেখ হৃদয় যন্ত্র,
ছেড়ে অন্য তন্ত্রমন্ত্র (হরি) নামের কামান লওরে তুলে।।
শ্রদ্ধা রথে কর রথী, বিবেক বন্ধ সেনাপতি;
মন পবন কর সারথি, চলরে রথ তালে তালে।।
রণে পাঠাও মন মাতঙ্গ, রণে যেন দেয় না ভঙ্গ,
বিপক্ষের সেনা অনঙ্গম, যেন তার রণে পড়েনা ঢলে।।
অনুরাগকে পাঠাও রণে, যুদ্ধ করুক ক্রোধের সনে;
বিনাশ করুক সহজ বাণে, মঙ্কা যায় সেই ক্রোধ মলে।।
লোভ মোহ মদ মাৎসর্য্য, তারে মারুক ধৈর্য্য সহ্য,
হবে দেহে সিংহ বীর্য্য, গুরুর পদে প্রাণ সঁপিলে।।
অশ্বিনী তোর কিসের সন্দ, সহায় গুরু মহানন্দ,
শক্তি দিচ্ছে গোলোকচন্দ্র, যার হুঙ্কারে পাষাণ গলে।।
 
১০৭ নং তাল - গড়খেমটা
বাম করে ধর ভাবের গোবর্দ্ধন
আমার অজ্ঞান ইন্দ্রের ঝড়ি বৃষ্টি ঘুচাও হে মধুসূদন।।
জীবাত্মা ব্রহ্মার ভ্রান্তি দূর কর হে কাঙ্গালের ঠাকুর,
আমার মুক্তিরূপ জমাল বৃক্ষ করহে সংচুর;
আমার হৃদ কদম্ব তরুমূলে গো, প্রেম রাধার সঙ্গে হও যুগল মিলন।।
মাৎসর্য্যরূপ কংশ যে অসুর, ক্রোধরূপ তৃণাবর্ত্তাসুর,
আমার লোভ মোহ, অঘা বকা নাশ কর ঠাকুর,
আমার কাম কালীয় কর দমন গো, হিংসা রূপ পুতনা কর নিধন।।
জ্ঞান মিশ্রানন্দালয়ে যাও, আনন্দে নন্দের বাঁধা বও,
আমার মতি যশোমতীর কোলে গোপাল বেশে রও,
তুমি বাৎসল্য রস নবনী খাও গো, সঙ্গেতে লয়ে সখ্য রাখালগণ।।
আত্মারাম রূপ বলায়ের সনে যাও মোদের সাধন তাল বনে,
আমার মদান্ধকার বৃষাসুরকে বধ কর প্রাণে,
নববিধ ভক্তি ধেনুগণে গো, আনন্দে চরাও হৃদি বৃন্দাবন।।
হরিচাঁদ রূপে অবতার করিলে কলির জীব নিস্তার,
মহানন্দ রূপে গুরু নিলে দেহের ভার,
গোঁসাই তারকচাঁদের বাঞ্ছা এবার গো অশ্বিনী পায় যেন যুগল চরণ।।
 
১০৮ নং তাল - গড়খেমটা
জগৎ পাগল করতে পাগল এল পাগল হরিচাঁদ
পাগলে পাগল করে পাতিয়া প্রেমের ফাঁদ।।
পাগলে পাগলের মেলা, হতেছে পাগলের খেলা,
সহজ পাগল হরিচাঁদ মোর নিশরিকালা,
ও তার করণ ধারী, নির্ব্বিকারী, মত্ত পাগল গোলোকচাঁদ।।
সেই ফাঁদে বেঁধে হীরামণ, দশরথ মৃত্যুঞ্জয় লোচন,
পাগল হল সর্ব্বস্বধন, দিয়া বিসর্জ্জন,
পাগল মহানন্দ, তারকচন্দ্র, আর এক পাগল বদনচাঁদ।।
জুটে সব ভাবের পাগল, প্রেমরসে হল বিভোল,
পুরুষ নারী করল পাগল, বলে হরিবোল,
লয়ে পাগল সবায়, ষোলকলায় ওড়াকান্দি পূর্ণচাঁদ।।
শুনে পাগলের হুঙ্কার, নাচে ঐ পাগল দিগম্বর,
মিলেছে পাগলের মেলা, আনন্দ অপার,
জীবের শঙ্কা গেল, হরিবল পারের কর্ত্তা পাগলচাঁদ।।
নিলে সেই পাগলের সঙ্গ, উঠবে তোর প্রেমতরঙ্গ,
তালে তালে নাচবেরে মন, মত্ত মাতঙ্গ;
অশ্বিনীর জুড়াবে অঙ্গ, ডেকে বলে তারকচাঁদ।।
 
১০৯ নং তাল - একতালা
হরি প্রেম বন্যা এসে ভেসে যায়
আমার জ্ঞান মার্গ, চতুর্ব্বর্গ ধর্ম্ম পূণ্য হল ক্ষয়।।
হরিনাম পবন ডেকেছে, সাগরে তুফান চেতেছে,
যত অভিমানী কর্ম্মী জ্ঞানীর, নৌকা ডুবেছে,
তারা কুল পাব কুল পাব বলে গো,
হরি প্রেম পাথারে সাঁতার খেলায়
মহাভাব মেঘেরই উদয়, অনুরাগ দেওয়অ গর্জ্জে তায়,
নব রসের বৃষ্টি হয়ে, ধরা ভেসে যায়,
হল নাম সংকীর্ত্তন শিলা বর্ষণ গো
মন্ত্র বীজ শস্যাদি হইল লয়।।
যত সব ফলাফল ছিল, মূল সহ ভাসাইয়া নিল,
আমার মুক্তি তরুর মূলে ভেঙ্গে বন্যায় ডুবাল,
যত বৈদিক ক্রিয়া, গেল ধুয়ে গো
তাই দেখে চিত্রগুপ্ত অবাক হয়।।
প্রেম বন্যা প্লাবিত হয়ে, ত্রিভূবন গেল তলাইয়ে,
গোঁসাই মহানন্দ, তারকচন্দ্র, যায় জোয়ার দিয়ে,
গোঁসাই গোলোকচন্দ্র মকর হয়ে গো,
হুক্কারে কাম কুম্ভীর তাড়িয়ে দেয়।।
হরিচাঁদের ভক্ত যত, দেখে সেই প্রেম বন্যার স্রোত,
পরমহংস হয়ে কেলী করে, হয়ে উন্মত্ত,
গোঁসাই মহানন্দ বলছে ডেকে গো,
অশ্বিনী ডুব দেরে প্রেমের গোলায়।।
 
১১০ নং তাল - একতালা
হরি প্রেম সাগরে বান ডেকেছে, ঘটেছে মহা প্রলয়
হয়ে, নামের পূবন, উঠল তুফান, ভীষণ প্রলয় হয়েছেরে।।
সত্য ক্রেতা দ্বাপরেতে, যে প্রলয় না ছিল,
এবার কলির শেষে, হরিচাঁদ এসে সেই প্রলয় ঘটালরে।।
আইল প্রেমেরই বন্যা, বীজ মন্ত্র নাশ হল
এবার তা দেখিয়া, পঞ্চ জনার আনন্দ বাড়িল রে।।
যে দিন শ্রীধাম ওড়াকান্দি, হরিচাঁদ উদয় হল;
জীবের চিত্ত সন্দ, কম্ম বন্ধ, সকল ঘুচে গেলরে।।
ওড়াকান্দির প্রেমের বন্যায় তরঙ্গ বাড়িল,
ও সে নারিকেল বাড়ী ডুবু ডুব, জয়পুর ভেসে গেলরে।।
প্রেমের বন্যায় পাক পড়িয়া, উথলে উঠিল,
গোঁসাই দশরথ লোচন, গোলোক হীরামন, মৃত্যুঞ্জয় ঝাঁপ দিলরে।।
অভিমানী কর্ম্মী জ্ঞানী, যারা বাকী ছিল,
এবার প্রেম সাগরের ঢেউ লাগিয়ো, তারা সব ডুবিল।।
ডেকে বলে মহানন্দ, কি আনন্দ হল;
এবার অশ্বিনী বিহনে প্রেমে জগৎ মাতিল।।

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free