মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ৬১-৮০

এই কথা ঘরে ঘরে        নিশ্চয় বলিব জোরে

হাটেঘাটেমাঠে পথে সবারে বলিব

বলা যবে শেষ হয়         হে আমার দয়াময়

তোমার চরণে আসি আপনি মরিব।।

ওরে বাবা শোন কথা      মরা অতি তুচ্ছ কথা

মরণের ভয় আমি মোটে পাই নাই

দিবা রাত্রি ভয় মনে       যদি কোন মন্দ ক্ষণে

জীবনে বাঁচিয়া থেকে তোমা ভুলে যাই।।

সেই ভাবে এ জীবনে      বাঁচিয়া যেন মরিনে

এছাড়া চাহিনে কিছু তোমার চরণে

রাখ মার যাহা কর        আমি কি বলিব তার

তুমি প্রভু প্রাণেশ্বর হৃদয় আসনে।।

ভবানীর বাণী শুনি         ভবানীর শিরোমনি

বহু প্রীতি মনে বলে উভয়ে ডাকিয়া

মহাজন রীতি এই       এ সব বলিতে নেই

আমি বলিয়াছি তাই রাখিতে ঢাকিয়া।।

যখনে সময় হবে     তখনে জানিবে সবে

এ সময় এই সব বলে কার্য নাই

নিশি দেখ হল ভোর   দিকে দিকে ওঠে সোর

দোঁহে হেথা হতে যাও জাগিছে সবাই।।

হরি আজ্ঞা অনুসারে       দোঁহে গেল স্থানান্তরে

প্রভু হরিচাঁদ তবে উঠিয়া দাঁড়ায়

কি জানি কি মনে ভাবি পূর্ণতার পূর্ণ ছবি

মৃদু মৃদু হাসি প্রভু গৃহ মধ্যে যায়।।

ভবিষ্য আলেখ্য আঁকি     হরিচাঁদ কমলাখি

মহাপ্রভু গুরুচাঁদে আপনি দেখায়

সেই ছবি নিজ বুকে       গুরুচাঁদ রাখে ঢেকে

সময় বুঝিয়া প্রভু যে ছবি মেলা'।।

গুরুচাঁদ ইহ পরে           হরি আজ্ঞা অনুসারে

সংসারে প্রবেশ করে সাজিতে গৃহস্থ

ইহ পরে বিভা হয়         ব্রহ্মচর্য পালি রয়

পরে বংশ রক্ষা করে সংযমে প্রশস্ত।।

জ্যেষ্ঠ পুত্র জন্ম লয়       গুরুচাঁদ দয়াময়

কর্ম্ম ক্ষেত্রে অর্থ লাগি বানিজ্য করিল

গোপালের পদ স্মরি       সে কথা বর্ণনা করি

সাধু জনে সবে মিলি হরি হরি বল।।

 

অর্থ উপার্জন

 

বিলে ভরা জলাদেশ ওড়াকান্দী আদি

নিকটে নাহিক কোন স্রোতস্বতী নদী।।

শহর বন্দর দূরে যেতে কষ্ট-সাধ্য

পদ ব্রজে যাতায়াত বড়ই অসাধ্য।।

বর্ষমধ্যে বেশী ভাগ বিলে খালে জল

নৌকা যোগে যাতায়াত করেন সকল।।

নিত্য প্রয়োজন দ্রব্য মেলা বড় ভার

নৌকা যোগে আনে তাই দ্রব্যের সম্ভার।।

দেশ জাত ধান্য পাট সরিষা কলাই

নৌকায় চালানি হত করিয়া বোঝাই।।

এই ভাবে বহুজনে ধনাঢ্য হইল

ইহা দেখি গুরুচাঁদ অন্তরে ভাবিল।।

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃএই সত্য বাণী

আপন জীবনে আমি পালিব এখনি।।

আর এক কথা মোর মনেতে আসিল

মল্লকান্দী বাসী সবে যে কার্য করিল।।

দুর্ভিক্ষেতে অন্নাভাব সেই দেশে হয়

অনাহারে কতজন প্রাণে মারা যায়।।

অসহ্য ক্ষুধার জ্বালা সহিতে না পারি

দলে দলে দেশান্তরী হল নরনারী।।

যারা কেহ নিরুপায় রহিলেন পিছে

কোনক্রমে ভিক্ষা অন্নে রহিলেন বেঁচে।।

জল গণ্ড জমা জমি ধান্য নাহি হয়

পর গৃহে কার্য করি প্রাণে বেঁচে রয়।।

 

 

 

অসহ্য দুঃখের জ্বালা সহা বড় ভার

মনে চিন্তা করে সবে কিসে প্রতিকার।।

ওড়াকান্দী অবতীর্ণ দয়াল ঠাকুর

তার কাছে গেলে দুঃখ হতে পারে দূর।।

এত মনে করি তারা এল ওড়াকান্দী

পিতার চরণে পড়ি বলে কান্দি কান্দি।।

পীড়িতের ঘরে তুমি আনন্দ সদন

এজাতি হয়েছে ধন্য পেয়ে শ্রী চরণ।।

জানি মোরা দয়া গুণে মৃতে প্রাণ পায়

জ্যান্তে মরা আছি মোরা করহে উপায়।।

জলগণ্ড দেশে বাস অফলা পতিত

অনাহারে কাটে দিন নাহিক বিহিত।।

নিরাশায় আশা তুমি দীনের সহায়

দয়া করি কর প্রভু মোদের উপায়।।

ভক্তজনে ভক্তিগুণে তব দয়া পায়

ভক্তিহীন মোরা দীন অতি দুরাশয়।।

নিজগুণে দয়া তাই হবে গো করিতে

তুমি ধরা নাহি দিলে কে পারে ধরিতে।।

কি জানি কি পুণ্য ফলে তোমা হেন নিধি

দীন নমঃশূদ্র কুলে মিলিয়াছে বিধি।।

চরণ ভরসা করি আসিয়াছি মোরা

চরণ পরশে কাটদুঃখের পসরা।।

সবে মিলি কান্দি কান্দি এই কথা কয়

কান্না দেখি দয়া হল হরির হৃদয়।।

সকলে ডাকিয়া হরি কহিল বচন

আমি যাহা বলি তোরা সবে তাহা শোন।।

আজন্ম পতিত তোরা মূর্খ অতিশয়

মানব জীবন তত্ত্ব চিনিলিনা হায়।।

বড়ই অদ্ভুদ শুনি বন্ধা নাকি মাটি

মাটি মা যে দুগ্ধ দেয় চাষী হলে খাঁটি।।

অফলা নহেক মাটি তোরা যে অকর্মা

মাটি মা যে বসুমতী দানে পুণ্য ধর্মা।।

মন দিয়ে কৃষি কর পূজ মাটি মায়

মনে রেখ বেঁচে আছ মাটির কৃপায়।।

আর শুন বলি কথা লক্ষ্মী লভিবারে

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীমানিও অন্তরে।।

বসুমতি দিবে খাদ্য কথা মিথ্যা নয়

বাণিজ্য আসনে লক্ষ্মী সদা বসি রয়।।

না হলে লক্ষ্মীর কৃপা কোন গতি নাই

লক্ষ্মীর সহিতে রহে গোলক গোঁসাই।।

লক্ষ্মীর কৃপাতে বাড়ে ধন ধান্য শ্রী

ইহ জনমতে বল আর কাম্য কি।।

আর বলি শুন সবে বাণিজ্যের কথা

মূলধন নাহি ভেবে পেয়ে নাক ব্যাথা।।

নিজের মধ্যেতে দেখ আছে মূলধন

পরম সম্পদ তারে কহে পিতৃধন।।

পিতৃধন ভাঙ্গা যেন কভু নাহি পড়ে

আপনি আসিবে লক্ষ্মী তোমাদের ঘরে।।

এই মূলধন রাখ যতন করিয়া

এবে আমি যাহা বলি শুন মন দিয়া।।

শুন্য হস্তে যাবে সবে বন্দরের পরে

আমি যাহা বলি কর সরল অন্তরে।।

বিবিধ সামগ্রী কত আনিবে বন্দরে

কাঁচামাল বলি যাহা কহে পরস্পরে।।

সেই দ্রব্য যেই আনে তাহা হতে লয়ে

পাইকারী মতে লহ দরটি কাটিয়ে।।

সেই দ্রব্য নিজ হাতে খুচরা বেচিয়ে

লভ্যাংশ আপনি লহ নিশ্চিত হইয়ে।।

এই ভাবে দেখ হবে সংসার সচল

অতঃপর নৌকা যোগে আন সব মাল।।

এভাবে বাণিজ্য কর তোমরা সবাই

শ্রীলক্ষ্মী আসিবে ঘরে ইথে ভুল নাই।।

সত্য কথা কবে সদা এক দরে কিনে

এক দরে বেচ তাহা সঠিক ওজনে।।

 

 

দুষ্ট বুদ্ধি করি ঠিক ওজন না দিলে

বাণিজ্য হইবে ধ্বংস যাবে রসাতলে।।

দরাদরি জুয়াচুরি ছাড়িবে বিশেষ

এক দর এক কথা নাহি কোন ক্লেশ।।

আর কথা শুন সবে যাহা আমি বলি

সংসারকে ধর্ম ক্ষেত্র জানিবে সকলি।।

ধর্মের বাজার হেথা ধর্ম দণ্ড ধারী

ধর্ম পথে কর কর্ম ধর্ম আস্থা করি।।

এত যদি মম পিতা তাহা দিগে বলে

পিতাকে প্রণমি সবে ঘরে গেল চলে।।

মম পিতৃ বাক্য তারা পালিছে জীবনে

মল্লকান্দী উঠিতেছে উন্নতি সোপানে।।

আমার পিতার বাক্য আমি মান্য করি

বাণিজ্যে আনিব ঘরে মাতা ধনেশ্বরী।।

এত মনে ভাবি প্রভু করে আয়োজন

নৌকাদি সংগ্রহ করে বাণিজ্য কারণ।।

মল্লকান্দী বাসী সাধু গিরি কির্ত্তনীয়া

মনোভাব বলে তারে নিরালে বসিয়া।।

চৌধুরী শ্রী নীলকান্ত ওড়াকান্দী বাসী

তাঁর সাথে গুরুচাঁদে আসে মিশামিশি।।

উভয়ের সঙ্গে প্রভু পরামর্শ করি

বাণিজ্য করিতে প্রভু গড়াইল তরী।।

দাড়ী মাঝি মাল্লাগণে সংগ্রহ করিল

শ্রী গুরুচাঁদের তরী চালানেতে গেল।।

লভ্যাংশ ভাগে ভাগী জুটিল সকল

তিন চারি জনে মিশি করে একদল।।

নৌকার চালান যবে বিদেশেতে যাবে

পিতা আগে গুরুচাঁদ দাঁড়াইল তবে।।

মাল্লা মাঝি সবে আসি নিকটে দাঁড়ায়

বিনয় বচনে তবে গুরুচাঁদ কয়।।

আপনি কহিলা তাত বাণিজ্যেতে লক্ষ্মী

বাণিজ্য করিব আমি তুমি রহ সাক্ষী।।

তোমার চরণে জন্ম গঙ্গা ভাগীরথী

গঙ্গা বক্ষে যাবে তরী এ মোর ভারতী।।

তব পদ বাঞ্ছা করে লক্ষ্মী ধনেশ্বরী

মোর তরী পরে চলো নিজে কৃপা করি।।

শ্রীপদ পরশ যদি লাগে মোর নায়

নিশ্চয় উঠিবে লক্ষ্মী আমার নৌকায়।।

আমি কি বাণিজ্য করি সকলি তোমার

তোমার তরণী প্রভু মোরাও তোমার।।

তোমার তরণী তুমি দেহ যাত্রা করি

শ্রীহরির তরী যাবে বলিয়া শ্রীহরি।।

ছল ছল আঁখি জল জুড়ি দুই পাণি

শ্রীগুরু কহিছে কথা শুনে সর্ব প্রাণী।।

শ্রীহরি শুনিয়া তবে মধুময় কথা

আনন্দ অন্তরে চলে তরী বান্ধা যেথা।।

আপনি উঠিলা হরি তরণী উপরে

প্রেমানন্দে সবে মিলি হরিধ্বনি করে।।

শ্রীহরিচাঁদের জয়গাহে এই বোল

শঙ্খ শিঙ্গা-ডঙ্কা বাজে আর বাজে খোল।।

এক তরী ছাড়ি প্রভু অন্য নায় যায়

আনন্দে ভক্তে সবে কহে জয়-জয়।।

গলবস্ত্র গুরুচাঁদ তরী ধরে চলে

বক্ষ তাঁর ভেসে যায় নয়নের জলে।।

মহেশ বিশ্বাস নাম তালতলা গ্রাম

প্রধাণ বেপারী সেই এবে কহিলাম।।

নিজাম কান্দীর পরে আদি বাস ছিল

শ্রী হরির পদ পেয়ে নামে মত্ত হল।।

মহেশ নাচিয়া চলে সকলের আগে

প্রভু গুরুচাঁদ চলে তাঁর পুরোভাগে।।

নর্ত্তন কীর্ত্তন কত ভক্তগণে করে

তরী হইতে হরিচাঁদ নামিলেন তীরে।।

মাল্লা মাঝি ছিল যত ভূমে লুটি পরে

প্রণাম করিয়া উঠি রহে করোজোড়ে।।

 

 

মহেশে ডাকিয়া তবে হরিচাঁদ কয়

শুনহে মহেশ মোর বেপারী মশায়।।

মহেশ বেপারী নাম হল সেই হতে

শ্রীহরির মাঝি বলি ধন্য এ জগতে।।

এই মহেশের কীর্তি শুনিতে অপূর্ব

হরিলীলামৃতে আছে মহেশের পর্ব।।

বেপারী জীবনে কীর্তি যাহা শুনিয়াছি

ভক্ত পদে প্রণমিয়া তাই বলিতেছি।।

একত্রে শতেক নৌকা বেপারেতে যায়

সর্বাপেক্ষা বেশী লাভ মহেশের নায়।।

লোকসান দূরের কথা লাভ কিছু কম

কভু হয় নাই তার নায় একদম।।

এ হেন দেখিয়া তারে হরিচাঁদ কয়

মহেশের নায় যেন লক্ষ্মীবসে রয়।।

এ হেন বেপারী ছিল বিশ্বাস মহেশ

তাঁর গুণে বাধ্য রহে হরি হৃষিকেশ।।

পরম নৈষ্ঠিক ছিল মহেশ বিশ্বাস

নিষ্ঠা গুণে কাটে তার কর্ম বন্ধ ফাঁস।।

এবে শুন বলি এক মধুর ঘটনা

জলন্ত বিশ্বাসে তার না মিলে তুলনা।।

সেই মহেশেরে ডাকি বলে হরি দয়াময়

শুনহে মহেশ মোর মনে যাহা লয়।।

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মীঃবাক্য সত্য বটে

কেমন বাণিজ্যে এই বাক্য সত্য ঘটে।।

নারায়ণ রহে সদা লক্ষ্মীদেবী সাথ

লক্ষ্মীনারায়ণ রহে জুড়ি দুই হাত।।

ধর্মের আসনে বসে প্রভু নারায়ণ

ধর্মের বাণিজ্য হলে লক্ষ্মী দেয় ধন।।

এক দরে বেচাকেনা নাহি জুয়াচুরি

সাধু বলে এক কথা জানেনা চাতুরী।।

নিজ দ্রব্য মিথ্যা বলি না বলিও ভাল

যে দ্রব্যে যে গুণাগুণ বলিবে সকল।।

ওজনে মাপিবে ঠিক কম নাহি দিবে

এভাবে বাণিজ্য হলে ধন তাতে পাবে।।

প্রভুর মুখেতে শুনি এই কৃপা বাণী

প্রেমানন্দে সে মহেশ লোটায় ধরণী।।

কাঁদিয়া বলেছে নাথ এই ভিক্ষা চাই

পারি যেন তব বাক্য পালিতে সদাই।।

তোমার তরণী প্রভু তোমার চালান

তোমার ঘরণী লক্ষ্মী দিবে সব ধন।।

যাহা কর তুমি মোরা উপলক্ষ্য

তোমার আজ্ঞাতে চলে দেব যক্ষ রক্ষ।।

সকলি করত তুমি হরি গুণধাম

তুমি কর সব কাজ মোরা পাই নাম।।

এমন দয়াল হায় আর কোথা নাই

কিছু নাহি করি মোরা তবু সব পাই।।

এমনি নৈষ্ঠিক ছিল সেই মহা সাধু

অবিরত মত্ত পানে হরি নাম মধু।।

এবে শুন বলি তার মধুর চরিত্র

শ্রবণে কলুষ নাশ জীবন পবিত্র।।

নৌকার চালান হল ওড়াকান্দী বাড়ী

হরির তরণী সব চলে সারি সারি।।

দূরদেশে সবে যায় বাণিজ্য কারণে

মাঝে মাঝে ঘাটে আসে হিসাবাদি দানে।।

প্রতিবারে দেখা যায় মহেশের নায়

সর্বাপেক্ষা বেশি লাভ হয়েছে সদায়।।

একবার আগে ভাগে সব নৌকা এল

দৈবক্রমে মহেশের কিছু দেরী হল।।

সকল বেপারী আসে প্রভুর নিকটে

আপন হিসাব দেয় সবে নিষ্কপটে।।

অর্থপানে হরিচাঁদ ফিরিয়া না চায়

মহাপ্রভু গুরুচাঁদ সব বুঝি লয়।।

সহসা জিজ্ঞাসে হরি গুরুচাঁদ ঠাঁই

কে কত পেয়েছ টাকা বল দেখি তাই।।

 

 

আজ্ঞা মাত্র গুরুচাঁদ হিসাব কহিল

হিসাব শুনিয়া হরি হাসিয়া উঠিল।।

পরে বলে তোরা সবে কি কাজ করিস্

মহেশের সঙ্গে তোরা সকলে ঠকিস্।।

কি যে বেটা করে সেটা বোঝা বড় দায়

যতেক রাজ্যের টাকা (যেন) বাঁধে তার গায়।।

এই মাত্র কথা যবে বলিল শ্রী হরি

উপনীত শ্রীমহেশ বলে হরি হরি।।

মহেশ আসিয়া বন্দে শ্রীহরির চরণ

মহেশে দেখিয়া হরি বড় খুশি মন।।

ছলা করি বলে হরি মহেশের ঠাঁই

বলহে আমারে তুমি মহেশ গোঁসাই।।

কি যে কর কোথা থাক বোঝা বড় দায়

রাজ্য ভরা টাকা যেন চিনিছে তোমায়।।

এক সাথে সবে জুটি বেপারেতে যাও

সব হতে বেশী টাকা তুমি কিসে পাও।।

প্রভুর বচন শুনি মহেশ হাসিল

অন্তরে রাখিল ভক্তি রহস্যে কহিল।।

শুন হরি লাজে মরি তোমার বচন

মহেশ বেপারী নাকি হয়েছে এমন।।

বড়ই যোগ্যতা রাখে মহেশ বেপারী

দিবারাত্রি বলে সবে শুনে লাজে মরি।।

আমার মনের কথা বুঝিলনা কেহ

কিছুতে গেলনা তাই মনের সন্দেহ।।

মহেশের গায়ে বেঁধে টাকা যদি আসে

কেবা টাকা দেয় কেহ জানে কি এ দেশে।।

মহেশ এনেছে টাকা সবে ইহা কয়

যেই বেটা টাকা দেয় চিনে না তাঁহায়।।

মূল ছেড়ে ডাল নিয়ে করে ঝাঁকা ঝাকি

আসল ফেলিয়া সবে তুলে নেয় মেকি।।

টাকাত লক্ষ্মীর বাসা লক্ষ্মী যার দাসী

সেই বেটা ওড়াকান্দী আছে চুপে বসি।।

টাকাত সামান্য ধন সেই বেটা দিলে

লক্ষ্মীর বাঞ্ছিত ধন অনায়াসে মিলে।।

সে বেটার কথা কোন বেটা নাহি বলে

এই দুঃখে মহেশের বুক যায় জ্বলে।।

ওগো হরি শ্রীমুরারি এই ভিক্ষা চাই

সে বেটার কথা যেন ভুলে নাহি যাই।।

এত বলি শ্রীমহেশ ভূমেতে লোটায়

নয়নের জলে তার ধরা ভিজে যায়।।

শ্রীনাথ হরিচাঁদ বড় প্রীত মনে

সবারে ডাকিয়া বলে মধুর বচনে।।

দেখ সবে কোন ভাবে বহু লভ্য হয়

মহেশের মত হলে লাভ করা যায়।।

এই ভাবে গুরুচাঁদ বাণিজ্য করিল

বাণিজ্যের ফলে বহু ধন ঘরে এল।।

বয়স বিংশতি কালে বাণিজ্যে নামিল

দশ বর্ষকাল মধ্যে বহু লভ্য হল।।

বিভিন্ন বন্দরে করে তরণী চালান

যেথা যায় সেথা হয় বহু লাভবান।।

শ্রীগুরুচাঁদের নায় যেবা ভাগী হ

দারিদ্র ঘুচিল তাঁর ধন রত্ন পেল।।

বিদেশে নৌকার মাল চালানাদি করে

বড়ই ঝঞ্ঝাট তাতে বুঝিলা অন্তরে।।

মনে ভাবে স্থায়ী ভাবে কোন বন্দরেতে

নির্মাণ করিয়া গৃহ রহিবে তাহাতে।।

ইতি মধ্যে জন্মিয়াছে সুধন্য কুমার

বয়স তখন তার পঞ্চম বছর।।

বাণিজ্যে আনিয়া অর্থ প্রভু ভাবে মনে

গৃহাদি উন্নতি করি বিশেষ যতনে।।

আসাম হইতে আনে কাষ্ঠ মূল্যবান

টিনের ছাউনি গৃহ করিল নির্মাণ।।

ক্রমেই উন্নতি দেখি গুরুচাঁদ প্রতি

মহাপ্রভু হরিচাঁদ মনে হর্ষ অতি।।

 

গৃহে ধর্মে সুনিপুণ সংযত চরিত্র

বেশ ভূষা আচরণে সকলি পবিত্র।।

গম্ভীর বচন কহে চপলতা শূন্য

বাল, বৃদ্ধ, যুবা সবে তাঁরে করে মান্য।।

গুরুচাঁদ দরশনে ভকতে আনন্দ

তাহা দেখি হরিচাঁদে হয় প্রেমানন্দ।।

ধর্ম নীতি শাস্ত্রে গুরুচাঁদ দক্ষ

পিতৃ ধর্ম রক্ষিবারে একমাত্র লক্ষ্য।।

এই ভাবে গুরুচাঁদে দেখিয়া নয়নে

হরিচাঁদ যেতে চায় নিজ নিকেতনে।।

আপনার কর্ম ভার গুরুচাঁদে দিয়া

হরিচাঁদ যেতে চায় পৃথিবী ছাড়িয়া।।

উপযুক্ত সর্বোত্তম গুরুচাঁদ বটে

শক্তি তাই দিতে চায় শ্রীগুরু নিকটে।।

বাসাঘর করিবারে গুরুচাঁদ ভাবে

হরিচাঁদ ইচ্ছা করে তার আগে যাবে।।

বারশ চুরাশি সাল ফাল্গুন আসিল

উত্তর আয়নে হরি স্বদেহ ত্যাজিল।।

আপন শক্তি নাথ গুরুচাঁদে রাখে

সে শক্তি শ্রীগুরুচাঁদ ঐশ্বর্যেতে ঢাকে।।

হরি লীলামৃত গ্রন্থে তিরোভাব খণ্ডে

কবি রসরাজ লিখে মধুর প্রবন্ধে।।

কোন ভাবে হরিচাঁদ দেহ তেয়াগিল

কোন ভাবে তার শক্তি গুরুচাঁদে গেল।।

পূর্বাপর রাখিয়াছ গ্রন্থের সম্বন্ধ

সংক্ষেপে বর্ণিব কিছু সেই যে প্রবন্ধ।।

মতুয়া ভক্তের পদে কোটি দণ্ডবৎ

যাহাদের কৃপাগুণে পাপী হয় সৎ।।

গুরু গোপালের দয়া শিরোপরে ধরি

তরিতে সংসার-সিন্ধু বল হরি হরি।।

 

 

 

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাব ও শ্রী শ্রী গুরুচাঁদের শক্তি স্থিতি

 

জগতের হিত তরে        প্রভু নর দেহ ধরে

যুগে যুগে আসি করে জীবের কল্যাণ

আদর্শ যে ধরে তার       করুণার পারাবার

তাঁহাকে করি আঁধার হয় অধিষ্ঠান।।

লোক মুখে শুনি কথা  আছে তাতে যৌক্তিকতা

শক্তি নাকি যথা তথা, নারে রহিবারে

সিংহ দুগ্ধ মেটে ভাণ্ডে   রাখে যদি কোন ভণ্ডে

পাত্র ভাঙ্গি সেই দণ্ডে দুগ্ধ যায় পড়ে।।

স্বর্ণ পাত্র হলে পরে        সিংহ দুগ্ধ তাহা ভরে

কষ্ট নাহি রাখিবারে শুনি এই কথা

কোন সত্য কথাচ্ছলে     এই বাণী যায় বলে

গূঢ় অর্থ তার তলে আছে বটে গাঁথা।।

পাত্র গুণে শক্তি রয়        অপাত্রেতে নষ্ট হয়

তাই সাধু শাস্ত্রে কয় নিগূঢ় কাহিনী

সিংহ দুগ্ধ যাহে রয়       স্বর্ণ পাত্র সে নিশ্চয়

মেটে পাত্রে নাহি রয় মোরা তাই শুনি

ক্ষীরোদ বিহারী হরি      ল পূর্ণ লীলাকারী

এল সফলানগরী এই বঙ্গ দেশে

জানাতে গার্হস্থ্য ধর্ম       গৃহ ধর্ম সার মর্ম

একত্রিত জ্ঞান কর্ম ঋষি গৃহি বেশে।।

প্রথমে আবাদ কৈল        পাপ কলি নাশ হৈল

বদ্ধ জীব ধরা পৈল প্রেমের খেলায়

ক্ষেত্র হল সুপ্রস্তুত          দেখি যশোবন্ত সুত

গুরুচাঁদে অবধূত নিজে ডাকি লয়।।

মানব আচারে যাহা       পালন করিল তাহা

কত দয়া দেখ আহা জীবগণ প্রতি

আদর্শ মানব রূপে         গুরুচাঁদ বিশ্ব ভূপে

হেরিয়া নয়ন কূপে পায় মহাপ্রীতি।।

 

 

উত্তর সাধক তাঁরে        ইচ্ছিলেন করিবারে

এ ভাব জানি অন্তরে করে সেই মত

বুঝিয়া প্রভুর ভাব         গুরুচাঁদ মহাভাব

বাসনা ত্যজিয়া সবে পায় মনোরথ।।

বারশ চুরাশি সাল        মধুর বসন্ত কাল

ঘোর কুজ্ঝটিকা জাল বিদায় মাগিল

উত্তর আয়ন আসে        আলোকে বসুধা হাসে

মধুর ফুলের বাসে জগত ভরিল।।

সিংহাসন ছাড়ি হায়      শীত যেন চলি যায়

অভিষেকে রাজা হয়, নবীন বসন্ত

দেখি সেই রূপ প্রায় হরি দেহ ছাড়ি যায়

পশি গুরুচাঁদ কায় পূর্ণ শক্তিমন্ত।।

ভক্ত কান্দিয়া কয়         “বল প্রভু দয়াময়

তোমা বিনা কি উপায় হবে মোসবার

সূর্য বিনা যথাকাশ        যজ্ঞ বিনা পীতবাস

বায়ু ছাড়া যথাশ্বাস এমনি আকার।।

মনি হারা যথা ফণী       চক্ষু যথা হারা মণি

বল্লভ হারা রমণী প্রাণ হারা কায়া

তুমি বিনে হরি মনি       দিবসে হল যামিনী

এ যেন লতিকা ধ্বনি হারা বৃক্ষ ছায়া।।

মো' সবে ত্যজিবে যদি   এত প্রেম গুণনিধি

কেন তবে দেখাইলে ওহে গুণমণি

তোমা যদি হারা হই      কেমনে বা ঘরে রই

অসহ বিরহ-জ্বালা দিবস রজনী।।

দি প্রভু যেতে চাও       মোসবারে সঙ্গে লও

দারা পুত্র সব বৃথা তুমি যেথা নাই

পরাণ-পরাণ তুমি         অন্তরের অন্তর্যামী

পরাণ বিহনে ব্যাথা কোথায় জুড়াই।।

তাই বলি ওহে নাথ       সবাকারে লও সাথ

তব সঙ্গে রহি যদি কোন দুঃখ নাই

যখনে ত্যজিবে দেহ       আর না বাঁচিবে কেহ

বিচ্ছেদ বিরহ দাহে পুড়ে হবে ছাই।।

কত কথা পড়ে মনে       প্রতিদিন প্রতিক্ষণে

কতই করেছ দয়া কিছু না চাহিতে

সুখে দুখে সবা সনে       রয়েছে আপন জ্ঞানে

বুঝেছ বুকের ব্যাথা কিছু না কহিতে।।

এমন পরম বন্ধু           এমন করুণা সিন্ধু

হয় নাই হবে নারে কভু এ জগতে

মন জেনে বলে কথা    মুখ দেখে বোঝে ব্যাথা

মন চুরি করি লয় আঁখি পালটিতে।।

মোরা সবে ঘোর অন্ধ     তুমি যে পরমানন্দ

আনন্দ আলোকে প্রভু ধাঁধা দিলে কাটি

অকূল সাগর বুকে    মোসবারে বুকে রেখে

পরম আদরে নাথ পালিয়াছ খাঁটি।।

তুমি যদি ছেড়ে যাবে      বল আর কেবা ভবে

সম্পদে বিপদে নাথ রক্ষিবে সবারে

তোমা বিনে সবে মোরা   পড়ে রব জ্যান্তে মরা

দিন মণি হীন যেন গভীর আঁধারে।।

নিবেদন রাঙ্গা পায়       মোদেরে ঠেলনা পায়

তব পায় সবে পায় যাহা কিছু পায়

তুমি হরি কল্প বৃক্ষ        শোভে ফল লক্ষ লক্ষ

সর্ব্ব সিদ্ধি ফলদাতা তুমি রসময়।।

মোরা কিছু নাহি চাই     শুধু যে তোমারে চাই

আপন কেহ যে নাই তুমি বিনে ভবে

তুমি যদি যাবে ছেড়ে      প্রাণ সব নিবে কেড়ে

জ্বলিবে সকল হিয়া দুরন্ত বাড়বে।।

দয়া করি ফিরি চাও      কৃপা নিধি কথা কও

মোদের সহিতে রহ জগৎ জীবন

কিংবা কর এই কাজ     হান শিরে ঘোর বাজ

এক সঙ্গে হোক তবে সবার মরণ।।

যে দেশে নাহিক হরি   সেথা থেকে কিবা করি

শূন্য দিবা বিভাবরী শ্রী হরি বিহনে

প্রাণ যদি চলি যায়        শূন্য দেহে কিবা রয়

কিবা কাজ দিবে বল অন্ধের নয়নে।।

 

তোমাগত মোরা সবে তুমি বিনে কিবা হবে 
জল ছাড়া মীন প্রাণ বাঁচিবে কেমনে
দারা পুত্র পরিজন তুমি বিনে অকারণ 
সকলে ফেলিয়া আজি মিশিব চরণে।।
তুমি যাবে এই কথা শেল সম বাজে ব্যথা 
শক্তি শেল হতে হ'ল আঘাত কঠিন
যাবে যাও বাঁধা নাই মোরা সবে সাথে যাই 
চিরকাল আছি মোরা তোমার অধীন।।
তুমি হরি যেথা যাবে মো ' সবারে সঙ্গে নিবে 
এই নিবেদন পদে বিশেষে জানাই
একা তুমি নহ কভু মোরা পদে আছি প্রভু 
যেথা যাবে রাঙ্গা পদ সেই দেশে যাই।।
আর ভুলাওনা হরি মোরা কি বুঝিতে পারি 
কোন ছলে কোন খেলা খেলিছ জগতে
তুমি যে কে কেবা চিনে তব তত্ত্ব কেবা জানে 
অজানা অচেনা ধন নেমেছে ধরাতে।।
কোটী জন্ম ভাগ্য গুণে পাই তোমা হেন ধনে 
মন সাধে রাঙ্গা পদে পারিনি পূজিতে
তুমি যে পরম ধন শিবের অসাধ্য ধন 
তব স্তব করে দেব দেবীর সহিতে।।
যেই ভাগ্য গুণে মোরা পেয়েছি অধরে ধরা 
সেই ভাগ্য বলে মোরা রাখিব তোমাকে
তোমাকে রাখিব মোরা এযে শুধু গর্ব্ব করা 
তুমি রবে দয়া করে আপনি আজিকে।।
এই পদে নিবেদন যশোবন্ত প্রাণধন 
ভক্তের মুখ চাহি করহে করুণা
আমাদের কথা রাখ দয়া করে হেথা থাক 
মোদেরে ছাড়িয়া এবে প্রভুগো যেওনা।।
শুনিয়া দুঃখের বাণী দুঃখ হরা গুণমণি 
ভক্তে ডাকিয়া বলে শুন ভক্ত গণ!
ধরিয়া মানব দেহ বাঁচিয়া রহেনা কেহ 
বিধাতার এই নীতি না হবে লঙ্ঘন।।
অসম্ভব কথা এই দেহ ধরে মৃত্যু নেই 
মৃত্যুর অধীনে মাত্র জীব দেহ ধরে
মরণ পরম সত্য মৃত্যু বুকে এই তত্ত্ব 
অনিত্য সংসারে সব সৃষ্টির বিকারে।।
পিশাচী মায়ার ছলে জীব নিত্য থাকে ভূলে 
জনমে আনন্দ করে মরণের ভয়
মরণ পরশ মণি নিত্যের বসায় আনি 
জীবের জীবাত্ম মায়া সব ঘুচে যায়।।
বৃথা শোক কর সবে শোক দুঃখ এই ভবে 
সকলি মায়ার খেলা জানিবে সুধীর
মরণেরে কর পূজা হও সবে মহাতেজা 
মায়া ছেড়ে হও সবে মৃত্যুঞ্জয়ী বীর।।
মায়া রঙ্গ চোখে লেগে শোক দুঃখ বুকে জাগে 
মিথ্যা সব ধাঁধাঁ বাজি মায়ার ছলনা
আমি যবে ছেড়ে যাই তার মধ্যে সত্য নাই 
মায়ার কুহকে ভুলে ও কথা বলনা।।
মাটি দিয়ে দেহ গড়া মূল্য নাই এক কড়া 
মূল্য হীন মিথ্যা নিয়ে করো টানাটানি
দেহ মধ্যে যেবা রয় তাঁর নাহি হবে লয় 
তাঁর সাথে কর সবে সত্য জানাজানি।।
শুন সবে যাহা বলি আমি নাহি যাব চলি 
মায়ার খোলস দেহ মিলিবে মাটিতে
গুরুচাঁদ দেহে রবো হরিগুরুচাঁদ হবো 
গুরুচাঁদ মধ্যে মোরে পাইবে দেখিতে।।
যেই ভাবে মোরে মানো তাই গুরুচাঁদে জানো 
যাহা চাবে তাহা পাবে মনোনীত যত
গুরুচাঁদে রবে শক্তি তাঁহে সবে কর ভক্তি 
অনায়াসে পাবে মুক্তি দেবতা বাঞ্ছিত।।

( “ আমি নাহি ছেড়ে যাব জানিও বিশেষ
গুরুচাঁদ দেহে এই করিনু প্রবেশ।। “ )

শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত।।

 

মতুয়ার এই নীতি নিত্য পথে করে গতি 
অনিত্য সংসার চক্রে কিছু মান্য নাই
শান্তি নিয়ে তার খেলা শক্তিকে করিয়ে ভেলা 
শক্তি সিন্ধু মাঝে চলে মাতিয়া সবাই।।
শক্তি যেথা স্ব প্রকাশ মতুয়ার এ বিশ্বাস 
শক্তিময় প্রভু তার রহে তার মাঝে
আপনি নোয়ায় মাথা শকতি রয়েছে যেথা 
বীর্যের সাধক তারা কথা কিংবা কাজে।।
মতুয়া জানিবে প্রাণে নররূপে এইখানে 
মানুষের মাঝে তার প্রাণের ঠাকুর
মানুষে মিশিয়া রয় মানুষের রূপ লয় 
মানুষের সাথে লীলা বড়ই মধুর।।

মানুষে আসিয়া মানুষে মিশিয়া 
করিব মানুষ লীলে
সেইত সময় চিনিবে আমায় 
পুনঃশ্চ মানুষ হলে।।
------
শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

সেই মানুষেতে নিষ্ঠা হলাদিনী নামেতে শ্রেষ্ঠা 
প্রেমরূপা কহে তাঁরে শক্তিময়ী রাধা
দু'য়ে এক একে দুই পুরুষ প্রকৃতি দুই 
এক আত্মা বাটি দোহে করে আধা আধা।। 
দোঁহে দোহাকারে চাহে দোঁহে এক কথা কহে 
দোঁহে এক পূর্ণ করে নিষ্ঠা নামে সতী
মতুয়া জীবনে তাই দেব দেবী কেহ নাই 
প্রাণে প্রাণে টানাটানি চলে নিতি নিতি।।
সাযুজ্যাদি মুক্তি তিন মতুয়ার পক্ষে হীন 
বাৎসল্যাদি পঞ্চ রসে নহে তো ভিক্ষারী
মতুয়া চাহে না কারে সকলে চাহে তাহারে 
মতো ' ছুয়ে সবে ধন্য গুণে বলিহারী।।
কভু তারে ভাবে দাস কভু নিজে সাজে দাস 
প্রাণ ভরি কভু তারে করে আশির্বাদ
কভু ক্ষোভে কথা কয় কভু ধরণী লোটায় 
অসীম ভাবেতে ভাবে যত তার সাথ।।

আমার এক চাকর আছে ভাই,
মনের ভাব জেনে সে কর্ম্ম করে,
এমন নফর দেখি নাই
----
অশ্বিনী গোঁসাই

হরি তোমায় করি আশির্বাদ
এবার পুরুক তোমার মনোসাধ -----
-----
অশ্বিনী গোঁসাই

মিশিতে ঠাকুর সনে কোন কালে কোন দিনে 
চাহে না মতুয়া কভু ইহ পরকালে
ঠাকুর -- ঠাকুর রহে মতুয়া ঠাকুরে চাহে 
চিরকাল দুইজনে টানাটানি চলে।।
মতুয়া ঠাকুর চিনে তাঁর ভাব ভঙ্গি জানে 
তাই কায়া মাত্র নহে পরাণের হরি
যবে হরি কথা কয় প্রকাশ্যে বা নিরালায় 
মতুয়া তাঁহারে চিনে ফেলে অশ্রুবারি।।
মতুয়া জীবনে তাই হরি শূন্য কথা নাই 
তার হরি আছে সদা মানুষে মিশিয়া
সদা ফেরে তাঁরে খুঁজি এই ভাব সোজাসুজি
বিরহ অনল রাখে সজাগ করিয়া।।
মন মানুষের সাথে ঘাটে মাঠে কিংবা পথে 
যদি দেখা হয় তার সে পরমানন্দ
মতুয়া কাঁদিয়া কয় এই মোর রসময় 
আপনি লোটায় পদে নাহি রাখে দ্বন্দ্ব।।
মতুয়ার এই বাণী অনন্ত রসের খনি 
আসিয়াছে ধরাপরে নাহি যাবে ফিরি
সদা করে লুকাচুরি ঘর হতে ঘর ছাড়ি 
মোরা করি খোঁজাখুঁজি তাঁর পাছে ঘুরি।।

 

 

 

 

 

তাঁর মত কহে যেঁই তাঁর মত সহে যেঁই 
তাঁর মত দহে যেঁই তাঁরে জানি সেই
কায়া নাহি দেখি চোখে কায়া ফেলে দেখি তাঁকে 
তাঁরে নিয়ে নাচি কান্দি তাঁরে প্রাণ দেই।।
তাঁর বাণী তাঁর বাণী তাঁর বলে তাঁরে জানি 
তাই তাঁ'রে ভেবে মোরা তাঁর হই 
তাঁর মাঝে তাঁরে পাই আর কারে নাহি চাই 
তাঁকে নিয়ে মোরা তার কথা সদা কই।।
মোর ঠাকুর মরে না মোর ঠাকুর সরে না 
মোর ঠাকুর ভরে না সদা পূর্ণ রয়
তিনি পূর্ণানন্দ হরি মোরা তাকে ডাকি “পুরি “
আছে হরি রবে হরি নাহি হবে লয়।।

রাম হরি কৃষ্ণ হরি শ্রী গৌরাঙ্গ হরি
হরিচাঁদ আসল হরি পূর্ণানন্দ হরি।।

--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

মানুষেতে এই নিষ্ঠা মতুয়া শক্তির স্রষ্টা
অখণ্ড শক্তির কেন্দ্র মতুয়া হৃদয়
তাই মতুয়া নির্ভিক শৌর্যে বীর্যে যেন শিখ 
প্রেমে ভোলা খোলা প্রাণ শ্রী গৌরাঙ্গ প্রায়।।
এক জাতি এক প্রাণ সবে ডাকে হরিচাঁন 
একই তরঙ্গে ভাসে একই সাগরে
নাহি দেব - দেবী পূজা দীক্ষা শূন্য মহাতেজা 
একই মহা মন্ত্রে বলে সবে জাগরে।।
কিবা বেদ কিবা স্মৃতি কিবা শিক্ষা রীতি নীতি 
যা ' বলে ঠাকুর মোর সেই সর্ব্ব সার
নাহি চাহি মোক্ষ ধাম হাতে কাম মুখে নাম 
চরিত্র পবিত্র রাখা সাধনা সবার।।
দেহে বল প্রাণে বল নাহি চাহে ফলাফল 
পরম গুরুর ডাকে সবে দেয় সাড়া
নামে রুচি জীবে দয়া মানুষেতে নিষ্ঠা দিয়া 
অসীম বীর্যের তেজে দেহমন ঘেরা।।

জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা 
ইহা ভিন্ন যত ক্রিয়া সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।

--- শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত

ঈশ্বর আর সংসারে মিল এত দিন পরে 
মতুয়া জীবনে হ'ল পুর্ণ পরাকাষ্ঠা
গৃহস্থ সন্যাসী মিশি একাসনে রহে বসি 
এক ক্ষেত্রে মিলে সব ধর্ম্ম, কর্ম্ম, নিষ্ঠা।।
বেদাতীত এই ভাব কি রূপে হল সম্ভব 
তার ইতিহাস কহি শ্রী গুরু কৃপায়
আমি কহি কহি ভুল শ্রী গোপাল আদি মূল 
তাহা কহি সেই জানে যা' মোরে কহায়।।
দশ অবতার হয় হিন্দু শাস্ত্রে এই কয় 
মৎস্য,কু্র্ম্ম, আদি করিকরি বরাহ বামন
নৃসিংহ পরশুরাম, সঙ্কর্ষণ বলরাম
পরম - আরাম রাম জগত মোহন।।
বুদ্ধ, কল্কি, এই দশ অবতার স্বপ্রকাশ 
পুনঃ সাধু কহে অষ্টবিংশ অবতার
শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য গোরা কপিল আখিল জোড়া 
বেদব্যাস নামে মুনি মুনির কুমার।।
নানা তত্ত্ব সারোদ্ধার অষ্টবিংশ অবতার 
অসীম গুণের ধাতা অবতার সবে
বিচার করিলে মনে অবতার প্রতি জনে 
পূর্ণ গুণে পরিপূর্ণ সবে নাহি হবে।।
হরিতে ধরার ভার করিতে জীব উদ্ধার
যুগ অনুসারে আসে যুগ অবতার
যতটুকু প্রয়োজন সেই গুণে সে ওজন 
তাই নিয়ে নামে প্রভু ধরার উপর।।
অনন্ত জলাধি জলে ধরা ডোবে সীমাতলে 
মৎস্য রূপে প্রভু তাই ধরা উদ্ধারিল
বারি পরে জাগে ধরা কূর্ম্মরূপে পৃষ্ঠে ধরা 
কূর্ম্ম অবতারে প্রভু সে কর্ম্ম সাধিল।।

 

এই আদি যুগক্ষণে জীব নাহি কোনখানে 
জীবোদ্ধার ক্রিয়া তাই না হল প্রকাশ
অসুর শক্তির চাপে ধরা থরহরি কাঁপে 
জল তলে ডুবে ধরা হয়ে হতাশ্বাস।।
রাখিতে ধরার প্রাণ দুষ্টে দিতে দণ্ড দান 
দন্ত অস্ত্রে রিপু নাশি ধরাকে তুলিল
ধরা হল ভাসমান জীব হল অধিষ্ঠান 
দেবাসুর দ্বন্দ্বে ধরা ত্রাসিত হইল।।
জিতেন্দ্রিয় দেবগণ সত্য নীতি আলম্বন
পরমাত্মা তত্ত্বে মত্ত আছিল সবাই
অসাম্য আশ্রয় করি অসুর সাজিল অরি 
দেবশক্তি নষ্ট করে করিয়া বড়াই।।
ধরাকে রাখিতে শান্ত অসাম্য করিতে অন্ত 
অসুরে সংহার করে নৃসিংহ মূরতি
দৈত্যপুত্র সে প্রহ্লাদ সাম্য তত্ত্বে পেল সাধ 
সুরাসুর দ্বন্দ্ব নাশি পাইল পীরিতি।।
আদরিণী কন্যা ধরা তার ভার দূর করা 
অসম আসুর শক্তি হয় বিনাশিতে
ধরাভার হরা হয় রিপুকুল হয় ক্ষয় 
সমেস্থিত সাধুজন শান্তি পায় চিতে।।
যত জীব বৃদ্ধি পায় তাঁর কাজ বাড়ে তায় 
ভূভার হরণ পরে জীবের তারণ
সমেস্থিত সাধুজন রক্ষাপায় সর্ব্বক্ষণ
অসম অসুর যত করে বিনাশন।।
মহাবলী দৈত্য বলি অসম সাধনে বলী 
বলদর্পে ত্রাসে ধরা দেবতা লাঞ্ছিত
দেবতা কাঁদিয়া কয় অসুরের যন্ত্রণায় 
দেবশক্তি লুপ্তপ্রায় দৈত্য ভয়ে ভীত।।
বিপদ তারণ হরি মোরা সবে দুঃখে মরি 
কি উপায় হবে প্রভু তব কৃপা বিনে
আশুতুষে তুষি বলি সাজিয়াছে মহাবলী 
ভয়াকুল দেবকুল জীবনে বাঁচিনে।।
দেব ডাকে ঊভরায় ধরা ভারাক্রান্ত হয় 
তাই পুনঃ অবতারে হ'ল প্রয়োজন
ভূভার হরিতে হয় সাধুজনে রক্ষা পায় 
দুষ্টেরে নাশিতে তাই আসিল বামন।।
নরের আকার পায় তবু পূর্ণ নর নয় 
অপূর্ণ আকার দেখি বিভূতি প্রকাশ
আকারে সাজিল পূর্ণ ক্ষাত্র শক্তি করে চূর্ণ
ভৃগুরাম রূপে করে ক্ষত্রিয় বিনাশ।।
নর বসে ধরা পরে রাজ্যধন সৃষ্টি করে 
ক্ষেত্র পতি সাজি রহে ক্ষত্রিয় আখ্যান
ধনে আনে মদগর্ভ দ্বিতীয় অসুর পর্ব্ব 
অহং চূর্ণ করে প্রভু বীরত্বে প্রধান।।
এই সব অবতারে ভূভার হরণ করে 
আর করে সাধুজনে সতত রক্ষণ
জীবে কিছু নাহি চাহে রক্ষ মাং রক্ষ মাং কহে 
রসতত্ত্ব এতকাল না পেল শিক্ষণ।।
নাশে ত্রাস রিপু নাশ নাশে সে ধরায় ত্রাস
আশ্বাস সাধুতে পায় এই মাত্র নীতি
জীবে কিছু নাহি দান নিজে সব ভগবান 
জীবের কল্যাণ দিতে পরম পীরিতি।।
জীবে কিছু দিবে বলে জন্মিলেন রাজকুলে
মানব জীবন নীতি পালিল আপনে
পিতৃসত্য রক্ষিবারে রাজ্য ধন ত্যজ্য করে 
চতুর্দশ বর্ষ ধরি রহিলেন বনে।।
জানকি জননী সতী পতি ধ্যান পতি গতি 
নারীকুলে এই শিক্ষা দানিলা যতনে
ভ্রাতৃভক্ত সুলক্ষণ মানিলেন শ্রী লক্ষণ 
ব্রহ্মচারী ব্রতধারী অকপট মনে।।
জীব দান পেল এবে নাম করে উচ্চরবে 
পরব্রহ্ম সনাতন রাম নাম সুধা
নাম্মী গুণে নাম কয় নাম নিয়ে ফল পায় 
মিটাইতে চাহে সবে জীবনের ক্ষুধা।।

 

রাম নামে পাপ হরে রাম নাম যেবা করে 
মৃত্যু অন্ত্যে স্বর্গ প্রাপ্তি বৈকুন্ঠে গমন
ফলাশয় করে নাম ফলদাতা রাম নাম 
ফল দাতা নামে নাই প্রেমের লক্ষণ।।
রাজ ধর্ম্ম নর ধর্ম্ম সমাজ শাসন কর্ম্ম 
নিজের জীবনে প্রভু দেখাল আদর্শ
সত্য ধর্ম্ম পরচার নাহি হ 'ল এই বার 
অকলঙ্কা সীতা ছাড়ি প্রভু যে বিমর্ষ।।
সমাজ জীবন গড়ি জীবে করে আড়াআড়ি 
হিংসা, দ্বেষ ক্ষুদ্রতায় হল প্রর্দুভাব
জাতি হল জন্মগত মানুষের মান হ'
সাধু শূদ্রে মৃত্যু দণ্ড হলরে সম্ভব।।
দুঃখে বুক ফাটি যায় প্রভু রাম দয়াময় 
মরমের ব্যথা নিয়ে লীলা সম্বরিল
আপন জীবনে যাহা পালিলেন কেহ তাহা 
পালিল না জীবগণে কেহ না মানিল।।
প্রভু চিন্তা করে মনে দেখাইব জীবগণে 
আদর্শ “মানব “ জীব হতে পারে বটে
দ্বাপরে মথুরা পুরী অবতীর্ণ কৃষ্ণ হরি 
নাচিলেন বনমালী যমুনার তটে।।
পাণ্ডু রাজা পুণ্য বাণ নর রূপে অধিষ্ঠান 
তাঁর ঘরে পঞ্চ ভ্রাতা “পাণ্ডব “ ব্যাখ্যান
আদর্শ গৃহীর ধর্ম্ম দেখাইল সেই মর্ম্ম 
মাতা,পিতা, ভ্রাতা পুত্র স্বামীর সন্ধান।।
ক্ষাত্রগর্ব্ব নষ্ট করি সমতা আনতে হরি 
ব্রাহ্মণ, চণ্ডাল সবে সমযোগ দেয়
যেই দুষ্ট নাহি মানে কুরুক্ষেত্র মহারণে 
দুষ্টেরে নাশিতে প্রভু সবে করে ক্ষয়।।
পাপী আধার মাত্র ভিন্ন পথে পাপ সুত্র 
ভুল হ'ল পাপী ম'ল পাপ বেঁচে রয়
কুরুবংশ ধ্বংস হয় পাপ হয়ে নিরাশ্রয় 
যদু বংশে পূর্ণ রূপে হইল উদয়।। 
কৃষ্ণ হয় অবতার কিছুদূর অগ্রসর 
নাম ধর্ম্ম পরচার জগতে হইল
সাধক সন্যাসী যারা কৃষ্ণে নাহি মানে তারা 
গোপগোপী নীচ জনে সুধা রস পেল।।
সংসারে আবদ্ধ নর প্রেমে নহে তৎপর 
মোহ নাশি প্রেম দিতে এল শ্রী গৌরাঙ্গ
ঘর ছাড়ি কাঁদি কয় তোরা কে কে নিবি আয় 
অফুরন্ত প্রেম ধরে নামের তরঙ্গ।।
আদর্শ গৃহস্থ ধর্ম্ম কৃষ্ণ হতে সে মর্ম্ম
প্রেম ধর্ম্ম সর্ব্ব জনে কভু না কহিল
কেঁদে কয় গোরা রায় ঘরে কিছু নাহি হায় 
নাম মধ্যে যেই প্রেম সেইত আসল।।
সত্যে করি দুই ভাগ কহে দুই মহাভাগ 
দুই ভাগে হয়ে ভাগ জীবে দ্বন্দ্ব করে
পূর্ণ সত্য এক সাথে জীবগণে দেখাইতে 
হরিচাঁদ অবতীর্ণ সফলানগরে।।
গৃহাশ্রম করি মূল ভাঙ্গিলেন সব ভুল 
সর্ব্বনীতি গৃহস্থরে শিখাল যতনে
তাঁর ভক্ত মধ্যে তাই সর্ব্বনীতি গড়ে ভাই
সর্ব্বনীতি রহে মিশি ভক্তের জীবনে।।
হাতে কাম মুখে নাম প্রাণা রাম হরি নাম
দণ্ডে দণ্ডে করে ভক্তে প্রেমের নেশায়
কর্ম্ম করে বীর রাগে সর্ব্ব কর্ম্ম যোগে লাগে 
বালকের মত পুনঃ হাসি কথা কয়।।
কিবা নামে কিবা প্রেমে কিবা কর্ম্মে কি বিশ্রামে 
কোনগুণে হীন নহে মতুয়ার গণ
রামকৃষ্ণ যাহা করে তাহা আজি ঘরে ঘরে 
করিছে মতুয়া সবে পতিত তারণ।।
ধর্ম্ম কর্ম্ম সমন্বয় ইহ পূর্ব্বে নাহি হয় 
ওড়াকান্দী হরিচাঁদ তাহা যে করিল
পূর্ণ নীতি এই বার হইয়াছে পরচার 
জগত - তারণ মন্ত্র জগতে আনিল।।

মানুষ সবার শ্রেষ্ঠ ভেদাভেদ ইষ্ঠানিষ্ট
কর্ম্মগুণে মান পায় জন্ম গুণে নয়
যে জন মতুয়া হয় সেই এই কথা কয় 
জন্মগত জাতি কথা তারা নাহি কয়।।
পবিত্র চরিত্র যেই তার কোন তুল্য নেই
হোক না সে জন্মগত ক্ষুদ্র বা মহান
যেই হরি ভক্ত হয় ম 'তো পড়ে তার পায় 
তারে দেখি চোখে তার বহে প্রেমবান।।
অভক্ত আপন জন ম'তো দেয় বিসর্জ্জন
ভক্ত যারা তারা হয় পরম আত্মীয়
মন মানুষের খেলা করে যেবা সারা বেলা 
সেই সে পরম বন্ধু প্রিয় হতে প্রিয়।।
শয়নে ভোজনে কিবা কি রজনী কিবা দিবা
ভক্ত হয় মতুয়ার নয়নের মনি
প্রেম প্রীতি পরাকাষ্ঠা এই মানুষেতে নিষ্ঠা
মতুয়া জীবনে এই মূল মন্ত্র জানি।।
এই নিষ্ঠা মতুয়াকে কি ভাবে কেমনে রাখে 
কিছু মাত্র সেই কথা বলিবারে চাই
এমন মধুর ভাব অপূর্ব্ব ভ্রাতৃ স্বভাব
এতকাল ধর পরে কেহ দেখে নাই।।
মতুয়া চলিতে পথে কেশদাম নাচে মাথে
মনে মনে করে গান হরিচাঁদ গীতি
দ্বিতীয় মতুয়া যদি পথেতে মিলায় বিধি 
উভে দরশনে উভে হর্ষান্বিত অতি।।
নাহি কোন পরিচয় তবু দাদা বলি কয় 
ভূমি তলে গড়াগড়ি করে যে আনন্দে
বয়ান ভাসিয়া যায় আলিঙ্গন করি রয় 
প্রেমে জড়াজড়ি করি বুকে বুক বান্ধে।।
নাহি চেনে দেব দেবী ঘট, পট, কিংবা ছবি 
জানে মানে মনে প্রাণে শুধু হরিচাঁন্দে
সতী যথা পতি মানে নদী ধায় সিন্ধু পানে
শ্রী হরি বিরহে তারা মনে মনে কান্দে।।
যদি হরিচাঁন্দ কয় মরণের নাহি ভয় 
অগ্নি মাঝে প্রবেশিতে পারে যে মতুয়া 
মরণ দলিয়া পায় নেচে নেচে ম'তো ধায় 
যদি হরি আজ্ঞা দেয় ইঙ্গিত করিয়া।।
শঙ্কা শূন্য ভরা বুক শূর তেজে দীপ্ত মুখ 
এক মহামন্ত্র কন্ঠে জয় হরিচাঁদ
গৃহে বনে কি শ্মশানে দিবা কিম্বা রাত্রি ক্ষণে 
সমভাবে চলে ফিরে গণেনা প্রমাদ।।
নারী জাতি জানে মাতা সুদূরে নোয়ায়ে মাথা 
মাতৃজ্ঞানে আলাপন করে মিষ্ট ভাষে
মানামান সমজ্ঞান মতো শুধু দেখে প্রাণ
ডাকিলে সরল প্রাণে ম'তো সেথা বসে।।
পর দুঃখে দুঃখী যত শ্রী হরি চাঁন্দের ম'তো
নিঃস্বার্থ তাদের মত দেখা নাহি যায়
বিপদে পড়িলে কেহ ডাকিয়া করিলে স্নেহ
দয়াল মতুয়া চলে ছুটিয়া তথায়।।
কিবা দিবা বিভাবরী শুধু বলে হরি হরি
অবিরত অশ্রুবারি ফেলে তার লাগি
খেতে পেলে তবে খাই না দিলেও ক্ষতি নাই
শয্যা যদি নাহি মিলে তবে রাত্রি জাগি।।
না মাগে কোনই অর্থ নাহি চিনে কোন স্বার্থ
একমাত্র স্বার্থ শুধু পর উপকার
ছাড়ি গৃহ ছাড়ি জায়া দিয়ে মন প্রাণ কায়া 
বিপদ তারণ নাম করিছে প্রচার।।
শান্ত দান্ত কৃপাবন্ত মতুয়া পরম শান্ত 
উলঙ্গ শিশুর মত উলঙ্গ পরাণ
শান্ত সিন্ধু প্রায় স্থির ভাব কত সু গম্ভীর 
ভিন্ন চিত্র দেখা যায় অতীব মহান।।
সিন্ধু যদি ক্ষুদ্ধ হয় শান্ত ভাব দূরে যায় 
উত্তাল তরঙ্গ দল মত্ত হয়ে ছোটে
'তো যবে ক্ষেপে যায় কেবা তারে মেপে লয় 
মুহূর্তে প্রলয় কাণ্ড ধরা পরে ঘটে।।

 

দুই ক্ষণে এই ভাব দেখি মতুয়া স্বভাব 
নাম সংকীর্ত্তনে অন্য গুরু নিন্দা শুনে
বাড়বাগ্নি সম জলে মহাবেগে ছুটে চলে 
টল টল নড়ে ধরা মতুয়া নাচনে।।
কর্ম্ম ব্যাস্ত ঝরে ঘাম তবু মুখে হরি নাম 
দিব্যজ্যোতিঃ অনুপম মতুয়া বদনে
ঝর ঝর বারি ঝরে যবে হরিচাঁদ স্মরে 
বিরহি উথলি ওঠে মতুয়ার প্রাণে।।
যদি কোন অসজ্জন গুরুনিন্দা আলাপন
মতুয়া নিকটে করে অবহেলা ভরে
পরাণ ফাটিয়া যায় কে রক্ষিবে বল তায় 
বীর মূর্ত্তি ধরি ম'তো দণ্ড দান করে।।
জীবন মরণ বল মতুয়া জানে যে ভাল 
মৃত্যু হাতে ধরি করে পুতুলের খেলা
মন প্রাণ গুরু পদে মতুয়া রেখেছে বেঁধে
বাচন মরণ সব করে অবহেলা।।
এক মানুষেরে জানে সেই মানুষেরে মানে 
মনের মানুষ করি তারে রাখে প্রাণে
মন মানুষের ভাব তার কান্তি যে স্বভাব
যার মধ্যে দেখে ম'তো তারে তাই মানে।।
এই মানুষেতে নিষ্ঠা ম'তো ধর্ম্ম পরাকাষ্ঠা 
মনে প্রাণে ম'তো সব এই নীতি মানে
যত জীব হল সৃষ্ট নর তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ
সকল জীবের ইষ্ট করে নরগণে।।
মানুষে সাধনা করে চিৎ শক্তি রাখে ধরে 
আব্রহ্ম জুড়িয়া তাহা করে নিত্য খেলা
অন্যে জীবে নহে সাধ্য মানুষে করিল সাধ্য 
চিৎ শক্তি তাই বাধ্য আপনি হইলা।।
মানুষের মধ্যে তাই তাঁর শ্রেষ্ঠ রূপ পাই 
তার শক্তি নর মাঝে অধিক বিকাশ 
এই কৃপা নরে পেয়ে আছে জীব শ্রেষ্ঠ হয়ে 
তাই দেখি নর মাঝে তাহারই প্রকাশ।।
'তো এই সত্য জানে তাই মানুষেরে মানে
যেই মানুষেতে দেখে মনের মানুষ
সেই পদে সব দান ধন মান মন প্রাণ
'তো জানে সেই শ্রেষ্ঠ প্রধান পুরুষ।।
নর রূপে হরিচাঁদ করে পতিত আবাদ
দীন হীন উপেক্ষিত আছিল যাহারা
পিয়ে সে চাঁদের সুধা মিটাইল সব ক্ষুধা
ঢেলে দিল জীবনের দুঃখের পসরা।।
সর্ব্বাশ্রম এক সাথে পবিত্র প্রেমের সুতে
গাঁথি দিল হরিচাঁদ পূর্ণ অবতার
পূর্ব্বে যাহা ছিল ক্ষুণ্ণ এবারে করিল পূর্ণ
পূর্ণনন্দ পূর্ণ হরি শ্রী হরি আমার।।
নিষ্ঠা রাখি হরিচাঁদে সকল মতুয়া কাঁদে
ওহে প্রভু তুমি বিনে কি হবে উপায়
আমি নাহি যাব চলে বারে বারে হরি বলে
গুরুচাঁদ দেহে আমি রহিব নিশ্চয়।।
শ্রী হরির এই বাণী যতেক মতুয়া প্রাণী 
নত শিরে সবে মানি লইল মাথায়
শ্রী গুরু চরিত্র মাঝে সব দিনে সব কাজে 
কিসে সত্য হল বাণী দিব পরিচয়।।
এবে শুন বলি কথা অপূর্ব্ব মধুর গাঁথা 
শুনিলে সে সব কথা জীব ধন্য হয়
হরিচাঁদ তিরোধানে তার কিছু পূর্ব্বক্ষণে 
হরি অগ্রে গুরুচাঁদ হইল উদয়।।
কর জোরে করি রয় মুখে কথা না জুড়ায়
পিতৃ পদ দৃষ্টি রাখি বিনয় বচনে
বলে তাতঃ নিবেদন চাই চরণে শরণ 
পতিত তারণ তুমি এসেছ ভুবনে।।
অনাদির আদি তুমি ক্ষিরোদ বিহারী স্বামী
বড় কৃপা করি জীবে জগতে আসিলে
জীবগণে এত দিনে পায় নাই যেই দিনে 
তুমি এনে সযতনে জীবেরে তা দিলে।।

 

তব কথা কি বলিব কেমনে তোমা চিনিব
অজানা অচেনা ধন তুমি গুণাতীত
তব কথা যাহা কই তাহা বলা হয় কই 
অপূর্ণ সকলি কই বিরিঞ্চি বাঞ্ছিত।।
কত কৃপা মম পরে জন্ম দিলে তব ঘরে 
আপনার করি মোরে দেখ চিরদিন 
ভীত মনে দূরে থাকি তব লীলা খেলা দেখি 
জন্ম জন্ম তব পদে আছে মম ঋণ।।
মনে ভাবি এই কথা কোন কথা দিয়ে পিতা 
তোমরে তুষিব হেথা আমি অভাজন
এমন কি গুণ আছে যে গুণে আসিব কাছে 
কোন কথা দিয়ে পাব তোমা হেন ধন।।
এমন কি কথা জানি পা 'ব তোমা ' গুণমণি 
বাণী যেথা হারা বাণী তাঁরে কিবা কব
সকলি জানত তুমি অনাদি অনন্ত স্বামী
মূঢ় হতে মূঢ় আমি কিসে তোমা পাব।।
জীব লাগি নর ভাব ঘুচাতে সব অভাব 
অপরূপ মহাভাব ব্রহ্মা অগোচর
নর ভাবে কায়া ছাড়ি তুমিত ছাড়িবে হরি 
বল পিতঃ কিবা করি আমি অতঃপর।।
কোন ভাবে কোন পথে চলিব জীবন পথে 
ধর্ম্ম মানি কোন মতে পিতা তাই বল
তোমার ভকত যারা নামে গানে মাতোয়ারা 
কোন ভাবে এবে তারা চলিবে সকল।।
তব আশির্বাদ বিনে কিছু নাই এ জীবনে 
নিদ্রা কিম্বা জাগরণে তাহাই সম্বল
চাহি কোন আশীর্বাদ পূর্ণ ব্রহ্ম হরিচাঁদ 
তব মনে যাহা সাধ হউক সফল।।
উন্নত পাদপ তলে জীবে রহে দলে দলে 
ভয় অবহেলি চলে সহায়ের গুণে
ঝঞ্ঝা বায়ু শীতাতপে আশ্রয় করি পাদপে 
জীব কুল কাল যাপে' নিঃসন্দেহ মনে।।
বৃক্ষ যদি পড়ি যায় আশ্রয়ের শেষ হয় 
করে সবে হায় হায় হেরি অন্ধকার
তব অদর্শনে পিতা প্রাণে বাজে বড় ব্যাথা 
আমরা দাঁড়াব কোথা বল একবার।।
কাণ্ডারী বিহীন তরী অকূলে ডুবিয়া মরি 
তুমি যে কাণ্ডারী হরি যদি নাহি রবে
তোমা বিনে মরি প্রাণে স্থান নাহি কোন খানে 
কৃষ্ণ হারা বৃন্দাবন - তুল্য দশা হবে।।
তুমি হরি ইচ্ছা ময় কে রোধে তব ইচ্ছায়
তবু প্রাণে ইচ্ছা হয় করি নিবেদন
যেও না যেও না হরি প্রাণে মারি নর নারী 
সকলে তোমার হরি যাচে শ্রী চরণ।।
একান্ত ছাড়িবে যদি বল ওহে গুণনিধি 
চঞ্চল সংসার নদী লঙ্ঘিব কেমনে ?
মোর নাহি কোন শক্তি নাহি জ্ঞান নাহি ভক্তি 
কাতরে সকল উক্তি করিহে চরণে।।
উক্তি শুনি পুত্র মুখে শ্রী হরি চাহিয়া দেখে 
আপনি ডাকিয়া তারে কহিল বচন
মনে কিবা চিন্তা কর আমার বচন ধর 
তুমি কিছু নহ পর শ্রী গুরুচরণ।।
যাহা কিছু প্রয়োজন সকলি হবে স্মরণ 
যাহা কিছু কর মন সকলি মিলিবে
মম পিতা যশোবন্ত কহে মোরে যে বৃত্তান্ত
কহি তাহা আদ্যপান্ত শুন ভক্তি ভাবে।।
দেহত্যাগ পূর্ব্ব ভাগে সবে ডাকি তাঁর আগে 
মধুর বচনে বলে “শুন পুত্রগণ!
দেহধারী হলে পরে যেতে হয় পরপারে 
অলঙ্ঘ্য নিয়ম এই নিয়তির লিখন।।
মন মধ্যে বুঝি তাই আর বেশি দেরী নাই 
যাত্রা কালে বলি যাই পবিত্র কাহিনী
পাপ থাকে কোনখানে পাপে ধরে কোন জনে 
পাপে রক্ষা কোন গুণে বলিব এখনি।।।

 

আপন জীবন পথে এই নীতি রেখ ' সাথে 
শুভ ফল পাবে তাতে নাহি হবে আন
দুঃখ তাপ দূরে যাবে প্রেমানন্দে সুখে রবে
প্রাণ মধ্যে প্রাণারাম হবে অধিষ্ঠান।।
পাপ দূরে নাহি রয় পাপ জাগে নিজালয় 
নিজ ঘরে জীবচয় পাপে ডুবে মরে
নারী রূপে মায়াবিণী সাজিয়াছে আদরিণী 
তার ছলে ভুলে প্রাণী নিত্য পাপ করে।।
সদাচার বলে কারে সৎ আছে যে আচারে 
সৎ থাকে সদাচারে পবিত্র নিয়মে
ঋতুকাল ভিন্ন কালে নারী সঙ্গ যদি মিলে 
ব্যাভিচারী তারে বলে ধর্ম্মনীতি ক্রমে।।
মাতৃতুল্য পর নারী হৃদয়ে ধারনা করি 
জগতের নর -নারী পূজিবে অন্তরে
পর নারী সঙ্গ আশা করে যেই সর্বনাশা
ধন ধর্ম্ম আশা নির্ম্মুল সংসারে।।
দূরে থাক পর নারী নিজ নারী সঙ্গ করি 
হতে পারে ব্যভিচারী মানব সকল
ঋতুকালে নারী সঙ্গ মানিবে পবিত্র ধর্ম্ম
ইহা ভিন্ন সঙ্গ কর্ম্মে ফলে বিষফল।।
পবিত্র চরিত্র রাখি নর হয় মহাসুখি 
সদা থাকে কমলাখি হৃদয়ে তাহার
দিন মাত্র সঙ্গ করে সন্তান লভিতে পারে 
সেই ধন্য এ সংসারে পালি সদাচার।।
কিন্তু দেখ মহাভুল নরে নাহি জানে স্থুল 
নষ্ট করে আদি মূল মজে ব্যভিচারে
ভাবিয়া আপন দারা নিত্য ব্যভিচারে সারা 
নিজ নারী সঙ্গে যারা না মানে বিচারে।।
তা'তে বলি এই কথা পাপ নহে দূরে কোথা 
পাপ বাস করে হেথা আপনার ঘরে
আনায়াসে নারী মিলে আপনার গৃহ তলে 
নর পশু কুতূহলে মজে ব্যভিচারে।।
পর নারী পেতে আশা সময়েতে সে দুরাশা 
আপনার ঘরে বাসা পাপে ডাকি দেয়
সহজ পাপের খেলা মিলায় পাপের মেলা 
ঘরে পরে পাপ খেলা করিয়া বেড়ায়।।
পাপে নষ্ঠ গৃহ ধর্ম্ম নষ্ঠ জ্ঞান নষ্ঠ কর্ম্ম
নরে এই মূল মর্ম্ম জানে কদাচন
ব্যভিচার মহাপাপ ইহ হতে মনস্তাপ
জীবনের অভিশাপ না মিলে এমন।।
দূর হতে দূরে রহ আপনারে সামলাহ
মনে রাখ অহরহ পবিত্র আচার
কিবা ঘরে কিবা পরে ব্যভিচার হতে দূরে 
থাক সদা সদাচারে মানিয়া বিচার।।
ব্যভিচার যেই নর কিছুতে নাহি উদ্ধার
পূর্ব্ব পূরুষেতে তাঁরে করে অভিশাপ
সামাল সামাল তাই চরিত্র পবিত্র চাই 
ইহা হতে ধর্ম্ম নাই প্রবল প্রতাপ।।
আর কিবা বলি তোমা বিদ্যাদান, দয়া ক্ষমা 
হরি নাম ঘরে ঘরে করিবে প্রচার
পুত্র কন্যা বিদ্যাদানে রূপে শীলে কিংবা গুণে 
পালিবে সকল জনে না হয়ে কাতর।।
এত বলি হরিচাঁদ করিলেন দেহ ত্যাগ 
ভাগ্যবান মহাভাগ দেখিল স্বচক্ষে
নীলাভ উজ্জ্বল জ্যোতিঃ কোটি সূর্য সম ভাতি 
ছুটি গুরুচাঁদ প্রতি লাগে তার বক্ষে।।
শক্তি পেয়ে গুরুচন্দ্র শোভে যেন পূর্ণ চন্দ্র 
ধ্বনিল জীমূত মন্দ্র মহাকাশ কোলে
বিশ্ব কাঁপে থর থর নাচে যেন বিশ্বম্ভর 
নাচিল দিক অম্বর প্রেমানন্দ রোলে।।
হরি দেহ পরি রয় শক্তি নাহি হয় লয় 
অপূর্ণ পূরিয়া যায় পূর্ণানন্দ স্রোতে
নাহি দুঃখ নাহি শোক অন্তরে আসে পুলক
বিশ্ববাসী যত লোক লাগিল হাসিতে।।

 


হরি পুর্ণ গুরুচাঁদে ধরা নত শিরে বন্দে 
ভাবে দীন মহানন্দে বসে কিবা করি
শ্রী গুরু গোপাল চন্দ্র পেল সেই প্রেমানন্দ
সাধু পিয়ে মকরন্দ বলে হরি হরি।।

 

শ্রী শ্রী হরিচাঁদের তিরোভাবে 
ভক্ত মনোভাব প্রসঙ্গ

নর দেহ ছাড়ি হরিগুরুচাঁদে যায়
দেশ বাসী নর নারী করে হায় হায়।।
কেহ বলে ছেড়ে গেল সোনার মানুষ
বাঁচিয়া থাকিতে কেহ করি নাই হুষ।।
কেহ বলে 'অকস্মাৎ হল ইন্দ্র পাত
বিনা মেঘে শিরে হল দৃঢ় বজ্রাঘাত।।
কেহ বলে 'নমঃশূদ্র জাতি ডুবে গেল
আপদে বিপদে রক্ষা কে করিবে বল।।
আর জনে কহে “ভাই বড় দুঃখ মনে
হরি বিনা রোগে শোকে বাঁচিব কেমনে।।
মহাব্যাধি লয়ে এল শ্রী হরির ঠাঁই
শ্রী মুখের আজ্ঞা মাত্র ছাড়িত বালাই।।
কেহ বলে “ ভাই সবে শোন দিয়া মন
মহাপাপী সবে মোরা অতি অভাজন।।
তাই যদি নাহি হবে তবে বল দেখি
এমন সোনার হরি কেন দিল ফাঁকি।।
নারী গণে জনে জনে করে আলাপন
ওলো দিদি কেন মোর হল না মরণ।।
কত দিন দেখিয়াছি শ্রী হরি চাঁদেরে
রূপের ঝলকে হায় মন প্রাণ কাঁদেরে।।
দূর হতে মনহরা রূপ দেখিয়াছি
মন খুলে মনো কথা কিছু না বলেছি।।
আজি কালি করি দিদি বলা হল নারে
হরি চলে গেছে কথা আর বলি কারে।।
কোন লোকে বলে “ভাই,মোরা সবে অন্ধ
এত দিন মনে কত করিয়াছি সন্দ।।
অকথা কু কথা কত বলিয়াছি তাঁরে
হরি বিনে আজ দেখ যেন শূন্য ঘরে।।
থাকিতে মানুষ মোরা কেহ চিনি নাই
শান্তি পতি বিনে বল কোথা শান্তি পাই।।
হরি যবে ছিল বেঁচে করেছি বিদায়
অমূল্য পরশ মণি হারানু হেলায়।।
থাকিতে মানুষ বেঁচে কেহ নাহি চায়
ছেড়ে গেলে সবে মিলে করে হায় হায়।।
দিন মানে সূর্য জ্বলে আকাশের গায়
'
অসয্য অগ্নির কুণ্ড ' বলি লোকে কয়।।
সূর্য যবে ডুবে যায় কালো রাত্রি আসে
সেই কালে বিশ্ববাসী সূর্য ভাল বাসে।।
যুগে যুগে পলে পলে নরে করে ভুল
ফল খায় ডালে বসি নাহি চেনে মূল।।
রাম এল কৃষ্ণ এল এল গোরা রায়
নর - রূপ - ধারী হয়ে অবতীর্ণ হয়।।
মানুষের সাথে মিশি মানব আচারে
মানুষের খেলা খেলে থাকিয়া সংসারে।।
অন্ধ নরে মনে করে এই বুঝি মানুষ
বোঝে না'ক এ মানুষ নয় সে মানুষ।।
আপনার মত তারে সবে মনে করে
নিজ তুল্য মনে করে দেয় তাঁরে দূরে।।
নর রূপে নর সাথে করে নর খেলা
যারা জানে তারা দেখে সেত প্রেম লীলা।।
নর রূপ ছাড়ি যবে প্রভু ফাঁকি দেয়
নরে তবে বুঝে পরে করে হায় হায়।।
মনে ভাবে এই ভুল আর না করিব
এবারে আসিলে প্রভু ধরিয়া রাখিব।।
ছলা কলা লীলাময় পুনঃ নরাকারে
দেখা দেয় নর হয়ে আমাদের ঘরে।।

 

হয়ে সন্দ করে দ্বন্দ “এই কিরে সেই
তেমন মোহন রূপ এর দেখি কই?
চুল চিরে স্ববিচারে করে আনাগোনা
ভুল করে পুনঃ তাঁরে চিনিতে পারেনা।। 
সৃষ্টি মূলে আদি ভুল ব্রহ্মের বিকার
ভুলে ভরা সসাগরা জগৎ সংসার।।
যার ভুল কাটিয়াছে চোখে নাহি কালি
আব্রহ্ম তাহাতে ভরা দেখে যে সকলি।।
ভুলে তারে নাহি পায় ভুল ভুলে যায়
নর মধ্যে সেই দেখে হরি রসময়।।
সেই ত দেখেছে সত্য সোনার মানুষ
সেই মানুষের রসে হয়েছে বেহুঁশ।।
লীলা সাঙ্গ করিলেন প্রভু হরিচন্দ্র
'
সব বলে অস্ত গেল পূর্ণিমার চন্দ্র'।। 
জীব কালে যারা কভু দেখে নাই চাহি
তারাও কাঁদিয়া কহে কেন দেখি নাহি।।
ঘরে ঘরে জনে জনে করে আলাপন
হায় হায় কিবা হবে উপায় এখন।।
সবে বলে গুরুচাঁদে বলি “বড় কর্ত্তা
তাঁর কাছে মিলিবে কি সেই সব বার্ত্তা।।
কেহ বলে বড় কর্ত্তা বলে যারে ডাকি
হরিচাঁদ তারে কিছু দিয়া গেছে নাকি?
হরিচাঁদ পুত্র বটে তিনি মহাশয়
তবু বল মূল সম ডাল কভু হয়?
কেহ বলে “ শোন ভাই কথা বল ফাঁকা
আগুন কি রাখা যায় কাপড়েতে ঢাকা।।
হরিচাঁদ যদি কিছু দিয়া থাকে তাঁরে
ক্রমে পরিচয় পাবে তার ব্যবহারে।।
কেহ বলে “ওরে ভাই কিবা দিবে হরি
তাঁর শক্তি নিল সব ভক্তে লুট করি।।
হীরামনে দেখেছে ত জলে হেঁটে যায়
গোলক পাগল দেখ মহাশক্তি ময়।।
মৃত্যুন গোঁসাই ছিল, ছিল দশরথ 
টুণ্ডা প্রভু শ্রী লোচন গোঁসাই সাক্ষাৎ।।
আর যত ম'তো ছিল আরো আছে বেঁচে
সবে মিলে হ 'রি হতে শক্তি লুটে নিছে।।
বড় কর্ত্তা দেখ নাই সে ধার ধারে না
উনি যেন দিন রাত কি করে ভাবনা।।
বড় কর্ত্তা সেই শক্তি কোথা পাবে বল
মোট কথা হরি গেলে সব চলে গেল”।।
কেহ বলে 'ওরে ভাই বাজে বকো ' নারে
ফাঁকা ফাঁকা কথা বলে পরে ঠকোনারে।। 
সিংহে জন্ম দেয় সিংহ, বাঘে দেয় বাঘ।।
যেমন বাপের বেটা ধরে সেই রাগ
কিবা বল বড় কর্ত্তা কি শক্তি পেয়েছে।।
হরিচাঁদ তোমারে কি বলে কিছু গেছে?
পরমার্থ তত্ত্ব দেখ নহে ত সরল
বুদ্ধি দিয়ে তার শেষ কেবা পায় বল?
তোমার আমার ভাই কতটুকু জ্ঞান
তাহা ছাড়া ধর্ম্ম পথে মোরা যে অজ্ঞান।।
বাহির দেখিয়া কভু বিচার চলে না
না দেখি অন্তর, জ্ঞানী বচন বলে না।।
কথা শুনে আর জনে বলে ক্রোধ ভরে
জ্ঞানের কথা ত ভাই বলিলে প্রকারে।।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলিলে ত সব
পশু মধ্যে সত্য বটে নরে কি সম্ভব?
ঈশ্বর বিদ্যাসাগর শুনিয়াছি নাম
বিখ্যাত পণ্ডিত তিনি অতি গুণধাম।।
প্রাতঃস্মরণীয় বলি কহে নাম তাঁর
কেমন তাঁহার পুত্র বল একবার।।
সে সব ছাড়িয়া তবে ধর্ম্ম পথে কই
কৃষ্ণ পুত্র কেবা ছিল বল শুনে লই।।
মহারাজ যুধিষ্ঠির ধর্ম্ম অবতার
কেবা তাঁর পুত্র ছিল কেমন প্রকার?

 

বঙ্গ দেশে রাজা ছিল নাম সীতারাম
কেবা তার পুত্র ছিল কিবা তার নাম।।
প্রতাপ আদিত্য নাম হিন্দু রাজ চূরা
বিখ্যাত বসন্ত রায় ছিল তার খুড়া।।
প্রতাপের পুত্র কেবা জান নাকি তাই
যেমনি বাপ তেমনি বেটা কোথা পেল ভাই!
বড় ঘরে বড় ভাব যদি দাও ছেড়ে
এক ভাব সবখানে আছে দেশ জুড়ে।।
তাই ভেবে দুই কথা বলিয়াছি ভাই
বড়কর্ত্তা গুরুচাঁদে নিন্দা করি নাই।।
হাসিয়া বলিল তবে দ্বিতীয় সুধীর
সামান্য দুইটি কথা শোন বাক্য বীর।।
যেমনি বাপ তেমনি বেটা বলি নাই ভুল
ডালে ডালে ঘুরে তুমি দেখ নাই মূল।।
ধর্ম্ম ক্ষেত্রে রাজ বংশে গৃহস্থ-আশ্রমে
যেমনি বাপ তেমনি বেটা দেখ ক্রমে-ক্রমে।।
পরাশর মুনি পুত্র ব্যাস মহামুনি
তিনি এক অবতার শাস্ত্রের কাহীনি।।
তাঁর পুত্র শুকদেব গুণে সীমা নাই
অবিকারী মায়াত্যাগী সাধু শাস্ত্রে পাই।।
মুনি বংশে মুনি জন্মে অসংখ্য প্রমাণ
কশ্যপের ঘরে অবতার শ্রী বামন।।
ভৃগু পুত্র ভার্গব সে এক অবতার
ভরদ্বাজ - পুত্র দ্রোন বিদিত সংসার।।
মৃত্যুজয়ী অশ্বত্থামা পুত্র হল তার
বিশ্বামিত্র মহামুনি গাধীর কুমার।।
অর্জুনের পুত্র নাম অভিমন্যু বীর
গৌতমের পুত্র সতানন্দ ধর্ম্মে স্থির।।
সূর্য বংশ চন্দ্র বংশ বিখ্যাত ভারতে
বংশ পরিচয় আছে নানা গ্রন্থ মতে।।
অজ পুত্র দশরথ তার পুত্র রাম
রাম পুত্র লব কুশ বীর অনুপম।।
চন্দ্র বংশে যত ছিল মহারাজা গণ
গুণে শীলে হীন কেহ ছিল কি কখন?
নমঃশূদ্র কুলে দেখ হরি বংশ হতে
কোন বংশে নহে শ্রেষ্ঠ দেখ কোন মতে।।
যত যত রাজ বংশ আছে দেখ ভাই
বংশ মূলে মুনি ঋষি ইথে ভুল নাই।।
আমি শুনিয়াছি কথা হরি গেছে বলে
নমঃশূদ্র কুলে রাজা হবে কালে কালে।।
হরি বাক্য কভু নাহি হইবে লঙ্ঘন
হরি বংশে হবে রাজা নিয়তি লিখন।।
এই বংশে পূর্ব্বে পূর্ব্বে জন্মিল যাহারা
সাধু কি সন্যাসী সবে প্রেমে মাতোয়ারা।।
সজ্জনের সাধনাতে হরি এল বংশে
তাঁর বাক্য মিথ্যা নাহি হবে কোন অংশে।।
বড় কর্ত্তা কোন ভাবে চলে দেখ তাই
সকলের মধ্যে থেকে যেন তা'তে নাই।।
ইতর জনের মত কভু কোন দিন
বাক্য কিবা কার্যে তারে দেখিয়াছ হীন?
কোন দোষ কোন দিনে যারে স্পর্শে নাই 
তাঁর মধ্যে কিবা শক্তি বল দেখি ভাই।।
তা 'তে বলি হরি কারে কিবা দিয়া গেছে?
সেই তত্ত্ব পরচার হবে ক্রমে পিছে।।
সেই তত্ত্ব দিয়ে ভাই কোন কার্য নাই
তামাক সাজিয়া আন টেনে বাড়ি যাই।।
এই ভাবে ঘরে ঘরে চলে আলাপন
এবে শুন ভক্তগণে কি করে মনন।।
যেই দিন হরিচাঁদ লীলা সম্বরিল
তারক গোস্বামী বটে কাছে নাহি ছিল।।
বড়দিয়া বন্দরেতে কবি গান তরে
আছিলেন শ্রীতারক গানের আসরে।।
সারা রাত্রি গান করে সেই মহাশয়
অতি প্রাতেঃ কেহ আসি সংবাদ জানায়।।

 

নদী তটে আছে বটে শ্রী হরি ঠাকুর
তারকেরে দেখিবারে ইচ্ছা সে প্রভুর।।
শ্রুত মাত্র এই বাণী তারক সুজন
সভা ফেলি দ্রুত পদে করেন গমন।।
দূর হতে দেখে প্রভু আছে দাঁড়াইয়া
ভুবন মোহন রূপে আঁধার নাশিয়া।।
প্রেমে ভোর অশ্রু লোর বহিছে নয়নে
স্বেদ কম্প পুলকাশ্রু সাত্ত্বিক লক্ষণে।।
বৎস- হারা ধেনু যথা বৎসে দেখা পায়
অথবা তটিনি যথা সাগরেতে ধায়।।
সেই মত হরি প্রতি ছুটিছে তারক
হরি দরশনে প্রাণে অনন্ত পুলক।। 
বাহু প্রসারিয়া ছুটে আনন্দে মাতিয়া
মনে ভাবে বক্ষে হরি রাখে সাপুটীয়া।।
এই বুঝি হরি অঙ্গ ধরিলাম বুকে
মহোল্লাসে হস্ত বেড়ি ধরিল তাঁহাকে।।
কই কোথা কেহ নাই এ যে শূন্য বুক
বজ্রাহত প্রায় সাধু রহে হয়ে মূক।।
বড়ই আশ্চর্য লাগে সাধুর হৃদয়
কিবা হ'ল কি দেখিনু ভোজবাজী প্রায়।।
এই চোখে দেখিয়াছি এই বালু পরে
দাঁড়াইয়া ছিল হরি অপরূপ ধরে।।
জীবন্ত মূরতী ধারী নাহিক সন্দেহ
সেই রূপ হৃদি মধ্যে হেরি অহরহ।।
এই হরি কোথা গেল শূন্যে মিলাইয়া
কি ছল ছলিল প্রভু আমাকে ডাকিয়া।।
ভাবিতে ভাবিতে সাধু বালু ' পরে চায়
বালু পরে পদ চিহ্ন দেখিবারে পায়।।
পদ চিহ্ন হেরি তার দূরে গেল সন্দ
কেন্দে কয় “ হায় হায় মোর ভাগ্য মন্দ।।
বড়ই অভাগা আমি দৃষ্টি শক্তি নাই
পেয়ে ধন হারা ইহা কাহারে জানাই।।
কেন হেন দেখিলাম ভাবিছে তারক
বুঝি বা ছেড়েছে হরি এই মর্ত্ত লোক।।
ইতি উতি মনে ভাবি সেই মহাশয়
কাঁদিতে কাঁদিতে সাধু পড়িল ধরায়।।
ভক্তের দুঃখ হেরি শূন্য বাণী ভরে
দয়াময় হরিচাঁদ বলিল তাঁহারে।।
সত্য সত্য বুঝিয়াছ তারক রসনা
লীলা সাঙ্গ করিয়াছি তুমি তা জাননা।।
কায়া ছাড়িয়াছি বটে নহে তাহা ভুল
শক্তি আছে গুরুচাঁদে এই জান মূল।।
পরাজ্ঞানী তুমি জানি ভকত নিপুণ
বৃথা শোক কর সাধু ভাবিয়া বিগুণ।।
কাট মায়া ধাঁধাঁ ভক্ত দেখ দিব্য চোখে
গুরুচাঁদ কায়া মধ্যে পাইবে আমাকে”।।
এত বলি শূন্য বাণী হল অন্তর্দ্ধান
শোক সম্বরিয়া সাধু শেষ করে গান।।
গৃহে ফিরি তাড়াতাড়ি দেরি নাহি কৈল
ওড়াকান্দী শ্রী ধামেতে উপনীত হৈল।।
গুরুচাঁদে দেখি সাধু ফুকারিয়া কাঁন্দে
শ্রী তারকে দেখি ছলে বলে গুরুচান্দে।।
তারক হে! দেখ চাহি হরি গেছে ছাড়ি
কি কারণে তবে আর এস এই বাড়ি।।
তোমাদের সে ঠাকুর আর বেঁচে নাই
ছেড়ে গেছেন হরিচাঁদ ক্ষীরোদ গোঁসাই।।
আর কেন তবে সবে আস ওড়াকান্দী
কার গুণে রবে সবে প্রেমে হয়ে বন্ধি।।
আমিত সংসারী লোক সংসারে আবদ্ধ
কোন গুণে বলো সবে করিব বা বাধ্য।।
হরি গেছে আার ওড়াকান্দী কিছু নাই
খুঁজিয়া সে হরিচাঁদে লহরে সবাই।।
শ্রী গুরুর মুখে শুনি হেন খেদ বাণী
পদে পড়ে সে তারক লোটায় ধরণী।।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free