মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

তৃতীয় অংশ

জজের পুত্র লাভ তারকের কৃপালাভ
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়ে করিল গমন।
পথে যেতে সেই মতি ভাবে মনে মন।।
জজের কাছেতে শুনে তারকের কথা।
হৃদয় জাগিল তার বিরহের ব্যাথা।।
তারক তারক বলে ছাড়িতেছে হাই।
দয়ার সাগর মোর তারক গোঁসাই।।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পা যাহার কৃপায়।
এহেন দরদী আমি পাইব কোথায়।।
মনে ভাবে আর আমি গৃহেতে না যাব।
জনমের মত আমি দাস হয়ে রব।।
ভাবে গদ গদ চিত্ত চলেছেন পথে।
জলে ভরা আখি দুটি লাগিল হাটিতে।।
তারকের ছবি খানি হৃদয় ধরিয়া।
নয়নের জলে বক্ষ যেতেছে ভাসিয়া।।
ভাবা বেশে সেই জয়পুর গিয়া।
তারকের পদে পড়ে কহিছে কান্দিয়া।
শুন শুন শুন বাবা চরণে জানাই।
গৃহে যেতে কহিও না ধর্মের দোহাই।।
জীবনে আমি আর গৃহে নাহি যাব।
চরণের দাস হয়ে তব গৃহে রব।।
জীবন পেয়েছি আমি তোমার স্মরণে।
কৃপা করে ওগো বাবা রাখিও চরণে।।
জীবনে ওগো বাবা অন্য আশা নাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
এই ভাবে সেই মতি কান্দিতে লাগিল।
তাই দেখে তারকের দয়া উপজিল।।
তারক কহিছে মতি শুন বাছাধন
ভক্তি পথে থাকে যেন সদা তব মন।।
মুখে কর হরি নাম হাতে কর কাম।
মানব জীবনে হয় শেষ পরিনাম।।
মম গৃহে থেকে তুমি সত্য কথা কও।
মুখে হরি হরি বলে জীবন কাটাও।।
তাই শুনে সেই মতি তথায় রহিল।
ওদেকে জজের ঘরে পুত্র জনমিল।।
পুত্র কোলে করে সেই জজের রমনী।
তারক তারক বলে কান্দে সেই ধনী।।
উদ্দেশ্য তারক পদে প্রণাম জানায়।
আনন্দেতে আত্মহারা জজের হৃদয়।।
জজ বাবু মনে মনে তারকে স্মরিয়া।
তারকের গুণগান বেড়ায় গাহিয়া।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
দিনে দিনে সেই পুত্র বাড়িতে লাগিল।।
ছয় মাস পরে সেই জজের রমনী।
জজের পাশেতে বসে কহিল তখনি।।
তারক চাঁদের বরে পেয়েছি তনয়।
জননী হয়েছি আমি তাহার কৃপায়।।
পুত্রধন লয়ে যাই তারকের বাড়ী।
আশীর্বাদ দিবে তিনি বলে হরি হরি।।
তাই শুনে জজ বাবু কহিল তখন।
কল্য প্রাতে চল মোরা করিব গমন।।
তাই শুনে সেই নারী আনন্দে মাতিয়া।
সারা নিশিগত হয় তারকে ভাবিয়া।।
পরদিন ভোর বেলা করিল গমন।
পুত্র কোলে করে চলে আনন্দিত মন।।
তারকের গুণগান করিতে করিতে।
আনন্দেতে আত্মহারা লাগিল হাটিতে।।
সন্ধ্যার অগ্রেতে গিয়ে হইল উদয়।
সেই মতি বসে আছে দেখিবার পায়।।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেয়ে যেই দিন এল।
সেই দিন হতে মতি দাঁড়ি না কাটিল।।
তারক চাঁদের প্রায় দেখিবার পায়।
বসে বসে সেই মতি হরিগুণ গায়।।
মতির কোলেতে সেই পুত্র ধন দিয়ে।
দুই জনে কান্দিতেছে চরণে পড়িয়ে।।
তাই দেখে সেই মতি ভাবিল হৃদয়।
জজ বাবু চেনে নাই করি কি উপায়।।
কেন্দে কেন্দে সেই মতি কহিল তখন।
শুন শুন জজ বাবু আমার বচন।।
আমি তব সেই মতি তোমাকে জানাই।
ভেবেছ কি আমি সেই তারক গোঁসাই।।
তাই বলে জজ বাবু মতিকে কহিল।
ফাঁসি থেকে মুক্তি পেলে আমি জানি ভাল।।
তুমি যদি নাহি যেতে আমার কোর্টেতে।
আমাদের ঘরে পুত্র হইত কি মতে।।
আগে তুমি মম পুত্রে কর কৃপা দান।
আগে আশীর্বাদ কর ওহে মতিমান।।
তাই শুনে সেই মতি কান্দিতে লাগিল।
নয়নের জলে বক্ষ প্লাবিত হইল।।
সেই ছেলে বুকে ধরে তারকে স্মরিয়া।
আশীর্বাদ দেয় তারে কান্দিয়া কান্দিয়া।।
হেনকালে সে তারক আসিল তথায়।
জজ বাবু পড়িলেন তারকের পায়।।
পুত্র কোলে করে সেই জজের রমণী
নয়নের জলে ভেসে কহিতেছে বাণী।।
ওগো বাবা বলি তোমা আমার বচন।
তোমার কৃপায় পাই এই পুত্র ধন।।
কৃপাকর ওগো বাবা চরণে জানাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
এত বলি পুত্র দিয়ে তারকের কোলে।
চরণে পড়িয়া সতী ভাসে আখি জলে।।
তাই দেখি তারকের ঝরে আখি জল।
আধ আধ ভাসা দিয়ে বলে হরিবল।।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয়ে ধরিয়া।
শিশু মুখে চুমু দেয় আনন্দ পাইয়া।।
দয়ার সাগর মোর তারক সুজন।
আশীর্বাদ দিয়ে সবে দেয় প্রেমধন।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
তারকের ছবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশী নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরিবল ভাই।।
 
মধুসূধন সরকারের উপাখ্যান
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া হৃদয়।
লিখিতে কলম ধরি করিনু আশায়।।
তারক চাঁদের কথা বরিব বর্ণন।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক শুন দিয়া মন।।
কবিগান করে তিনি দেশ দেশান্তর।
হরিচাঁদ গুণগান করেন প্রচার।।
একদিন চলিলেন রাঙ্গা মাটি গায়।
দল বল সহ সেথা হলেন উদয়।।
বিপক্ষের সরকার ছিল এক জন।
কুটিশ্বরী বাড়ী নাম শ্রীমধুসূদন।।
জাতিতে পরামানিক ছিল পরিচয়।
তারকের সংগে গান করে মহাশয়।।
মনে মনে ভাবিতেছে সে মধুসূদন
কাড়ারের সঙ্গে গান করিব এখন।।
জাতির ভাত কভু খাওয়া না যায়।
পরশ করিলে হয় পাপ সু-নিশ্চয়।।
ইতি উতি কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
জাতি হিংসা অন্তরে জাগিয়া উঠিল।।
কবির খোলায় বসে কত নিন্দা করে।
বাহাদুরি নিতে চায় কবির আসরে।।
তাহা শুনি সে তারক আসরেতে যায়।
শাস্ত্রে মাধ্যমে তারে কত যে বুঝায়।।
তাহাতেও তার মনে বিকার রহিল।
বিধাতার বিধি যাহা কে খণ্ডাবে বল।।
গান শেষে সব দল বিদায় হইল।
যার যার বাড়ী সবে গমন করিল।।
পর দিন গৃহে গিয়ে সে মধুসূদন
ইতি উতি কত কিছু ভাবে মনে মন।।
পেট ব্যাথা দেখা দিল সেই দিন হতে।
জুড়ায় না সেই ব্যাথা কোন ঔষুধেতে।।
ডাক্‌তার কবিরাজ দেখাইল কত।
দিন দিন সেই ব্যাথা বাড়ে অবিরত।।
আজ মরে কাল মরে অস্থিচর্ম সার।
মনে মনে ভাবে সদা আমি দুরাচার।।
একদিন স্বপনেতে দেখিতে পাইল।
হরিচাঁদ এসে তারে কহিতে লাগিল।।
শুন ওরে বাছাধন বলি আজ তোরে।
গুরু করে এস গিয়ে সেই তারকেরে।।
তারকের নিন্দা করে হল তোর ভোগ।
তারকের সনে গিয়ে কর যোগাযোগ।।
আমার ভক্তের নিন্দা করে যেই জন।
এই মত ভোগ তার হয় সর্বক্ষণ।।
তারকের বাড়ী গিয়ে খাও তার ভাত।
হেন কালে নিদ্রা ভঙ্গ হল অকস্মাৎ।।
মনে মনে কত যে কি ভাবিতে লাগিল।
নয়নের জলে বক্ষ প্লাবিত হইল।।
একি আজি দেখিলাম ঘুমের ঘরেতে।
অপূর্ব মুরতীখানি দেখিনু চোখেতে।।
আজানু লম্বিত ভূজ চৌরাশি কপাল।
স্বপনে দিলেন দেখা পরম দয়াল।।
আমি অতি মূঢ়মতি না জানি সাধন।
দয়াময় হরি আজ দিল দরশন।।
ধন্য ধন্য শ্রী তারক হরিচাঁদ ভক্ত।
হরিচাঁদ গুণনিধি তব অনুগত।।
হরিচাঁদে বাঁধিয়াছ ভক্তি গুণ দিয়া।
আমার জনম ধন্য তোমাকে নিন্দিয়া।।
এই ভাবে নিশি জাগি কান্দিতে লাগিল।
হেন কালে দিনমণি উদয় হইল।।
প্রভাত হইল দেখি সে মধুসূদন
কারে কিছু না বলিয়া করিল গমন।।
বাড়ী থেকে যাত্রা করে পদ্মডাঙ্গা এল।
হেনকালে দীননাথ দেথিতে পাইল।।
দীননাথ বলে ভাই এত ভোর বেলা।
এই বেশে চলিয়াছ কোথায় একলা।।
দীননাথের সঙ্গেতে ভালবাসা ছিল।
সকল মনের কথা তাহাকে কহিল।।
যাব আমি জয়পুর তারকের বাড়ী।
যাত্রা করিয়াছি আমি বলে হরি হরি।।
দীননাথ বলে ভাই আমিও যাইব।
তারকেরে গুরু করি পদে লুটাইব।।
বহুদিন এই কথা জাগে সর্বক্ষণ
যাব যাব মনে ভাবি হয়না কখন।।
যখন পেয়েছি ভাই তব দরশন
আর না করিব দেরি করিব গমন।।
এই ভাবে দুই জনে কথপোকথন।
হেনকালে আসিলেন আর এক জন।।
শ্রীহরি ভজন নাম পদ্মডাঙ্গা বাড়ী।
শুনিয়া সকল কথা ফেলে অশ্রুবারি।।
বলে আমি তোমাদের সঙ্গেতে যাইব।
তারকের কাছে গিয়ে বাসনা পুরাব।।
তিন জনে এক আত্মা নাহি ভিন্ন ভাব।
বহু দিন হতে এই তিনের স্বভাব।।
হরিবোলে তিন জনে করিল গমন।
ভাবে গদ গদ চিত্ত ঝরে দুনয়ন।।
পথে যেতে কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
সন্ধ্যা বেলা জয়পুর উপনীত হল।।
তারকের পদে পড়ে কান্দিতে লাগিল।
তোমাকে নিন্দিয়া মোর হেন দশা হল।।
তারক দেখিয়া বলে হে মধুসূদন
এহেন দীনতা তুমি হলে কি কারণ।।
মধু কহে যে গোঁসাই শুন সমাচার।
আচম্বিত পেট ব্যাথা হইল আমার।।
ওষুধ খাইয়া কোন না হল উপায়।
বেদনায় দিবারাত্রি করি হায় হায়।।
একদিন স্বপনেতে হরিচাঁদ কয়।
তারকে নিন্দিয়া তোর হেন দশা হয়।।
আমার ভক্তের নিন্দা করে যেই জন।
হেন দশা হয় তার শুন বাছাধন।।
মুক্তি যদি পেতে চাও তার কাছে যাও।
তারকেরে গুরু করি তার ভাত খাও।।
তাই বলি ওহে গুরু করি প্রণিপাত
দয়া করে অধমেরে খেতে দাও ভাত।।
তারক বলেছে আমি কিছুই না জানি।
যার কাজ সেই করে হরি গুণমণি।।
আমি মাত্র নিমিত্তের ভাগি শুধু হই।
তার কৃপা পেয়ে আমি জগতে রই।।
হরিচাঁদ লীলা খেলা কে বুঝিতে পারে।
বলিতে বলিতে তারকের অশ্রু ঝরে।।
মহাভাব উথলিল এমন সময়।
তারকের পদে সবে গড়াগড়ি যায়।।
তারক বলেছে সবে সুস্থ কর মন।
ভাত রান্না করা আছে কর হে ভোজন।।
হেন বাক্য শ্রীতারক যখন বলিল।
মায়ের চরণে গিয়ে প্রসাদ মাগিল।।
হাসি মুখে ঠাকুরাণী দিলেন প্রসাদ
কাচাঁ লঙ্কা পান্তা ভাত মধুর আস্বাদ।।
ভাত খেয়ে কহিতেছে সে মধুসূদন
পেট ব্যাথা দুরে গেছে ধন্য জীবন।।
ভালবেসে তিনজন রাত্রি কাটাইল।
তারকেরে গুরু করি দেশেতে চলিল।।
যাই বার কালে সবে কেন্দে কেন্দে কয়।
তব শ্রীচরণ বিনে দাড়াব কোথায়।।
এই দেহ মন প্রাণ সকল তোমার।
যাহা ইচ্ছা তাহা কর তুমি গুরু সার।।
তব ভাত খেয়ে গুরু করিয়াছি মোরা।
ভাগ্যে যেন কিবা আছে মনে জাগে সাড়া।।
তারক বলেছে ভাগ্য সু-প্রসন্ন হল।
মতুয়া হয়েছ এবে হরি হরি বল।।
তারকের পদধুলি মস্তকে করিয়া।
তিন জনে আসিলেন দেশেতে চলিয়া।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবি খানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা ডুবে গেল।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
 
গুরু শিষ্য অভেদ
মধু আর দীননাথ শ্রীহরি ভজন।
হরি বোলে হইল যবে এই তিন জন।।
তারকেরে গুরু করি খেল তার ভাত।
তিনজনে জয়পুর করে যাতায়াত।।
তাই শুনে গ্রাম্য লোকে কহিতে লাগিল।
কাড়ারের ভাত খেয়ে জাতি মান গেল।।
গ্রামবাসী যত লোক বসি এক ঠাই।
তিন জনে ডাকি আনি কহি সবাই।।
বে-জাতির ভাত কেন খেলে তিন জন।
সামাজিক প্রথা কেন করিলে বর্জন।।
মধু কহে জোড় হাতে সবার স্বাক্ষাতে।
গুরু প্রসাদ খেলে ক্ষতি কি তাহাতে।।
তিনজন গুরু করি খাইলাম অন্ন।
ইহাতে কি হইয়াছি এতই জঘন্য।।
জাতি হিংসা দলাদলি মোটেই কর না।
জাতি হিংসা করে মোর এহেন যাতনা।।
তাই শুনি গ্রাম্য লোক রুষিয়া উঠিল।
যাহা আসে তাহা মুখে কহিতে লাগিল।।
একজনে বলে ভাই সবাকে জানাই।
ইহাদের সঙ্গে কোন মেলামেশা নাই।।
এক ঘরে করে রেখ এই তিন জনে।
সামাজিকতা করিব না ইহাদের সনে।।
তাহা শুনি গ্রাম্য লোক করিলেন তাই।
তিন জন বাদ জানিল সবাই।।
তাই শুনে তিন জন জয়পুর যায়।
তারকের কাছে গিয়ে এসব জানায়।।
তারক বলেছে বাছা মন ঠিক চাই।
হরিচাঁদের কৃপায় কোন চিন্তা নাই।।
গুরুর আদেশ বাণী শুনিয়া কর্ণেতে
তুষ্ট হয়ে তিন জন আসিল বাটিতে।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে যায়।
সমাজের মধ্যে তারা স্থান নাহি পায়।।
দৈব যোগে একদিন ঝড় বযে যায়।
প্রলয় ঝড়েতে সব গ্রাম উজাড়য়।।
মধুসুদনের এক বড় এক ঘর ছিল।
সেই ঝড়ে ঘরখানি মাটিতে পড়িল।
কি করিবে কোথা যাব ভাবিয়া না পায়।
ঘর উঠাইবে বলে গ্রামেতে জানায়।।
গ্রামের লোক বলে মোরা পারিব না।
ঘর উঠাইয়া লহ সেই তিন জনা।।
গালাগালি দিয়ে সবে এই কথা কয়।
দেখি তোর কোন বাবা ঘর তুলে দেয়।।
কথা শুনিয়া মধু পদ্মডাঙ্গা যায়।
দীননাথ আর হরি ভজনে জানায়।।
ঘর পরে গেছে ভাই কি হবে উপায়।
গ্রামবাসী সব লোকে বলেছে আমায়।।
গালাগালি দিয়ে বলে মোরা পারিব না।
ঘর উঠাইয়া লহ সেই তিন জনা।।
তাহা শুনে দীননাথ কহিতে লাগিল।
তিনজনে ঘর ধরে উঠাইব চল।।
এই বলি তিনজন করিল গমন।
ঘরের নিকটে গিয়ে দিল দরশন।।
ঘুটিপুতি আড়াগুলি সকল বাঁধিল
তারক তারক বলে কান্দিতে লাগিল।।
যেই চাল উঠাইতে লাগে বিশজন।
তারকে স্মরণ করি ধরিল তখন।।
তিন জনে চাল ধরি উঠাইয়া দিল।
কিছুদূর উঠে চাল নামিতে লাগিল।।
তিন জনে চাল ধরি ঠেলিছে উপরে।
তবু সেই চাল খানি নিচে সরে পড়ে।।
ওদিকেতে জয়পুর তার গোঁসাই
ছটফট করিতেছে মন সুস্থ নাই।।
চারিদিকে বসে আছে দোঁহারের গণ
তার মধ্যে বসে আছে সূর্য্য নারায়ণ।।
অমনি তারক চন্দ্র উঠে দাড়াইল।
উপরের চাল ধরি ঠেলিতে লাগিল।।
তাহা দেখি কহিতেছে সূর্য্য নারায়ণ
ঘর ধরি ঠেল তুমি কিসের কারণ।।
তারক কহিছে আমি সহিতে না পারি।
আমাকে ডেকেছে মধু থেকে ঝুটিশ্বরী।।
প্রচন্ড ঝড়েতে তার ঘর পড়ে গেছে।
ঘর উঠাইবে বলে আমাকে ডেকেছে।।
মধু আর দীননাথ শ্রীহরি ভজন।
স্বকাতরে ডাকিতেছে করিয়া স্মরণ।।
মনপ্রাণ সপে দিয়ে ডাকিতেছে তারা।
সেই জন্য প্রাণে মোর জাগিতেছে সাড়া।।
এত বলি শ্রীতারক মৌন হয়ে রয়।
মহাভাব উথলিয়া বক্ষ ভেসে যায়।।
তাই দেখে মনে ভাবে সূর্য্য নারায়ণ
ঝুটশ্বরী যাবে বলে করিলেন মন।।
পর দিন চলিলেন কাঙ্গালীকে নিয়ে।
দুইজনে পথে চরে শ্রীহরি স্মরিয়ে।।
পথে যেতে কত কিছু ভাবিতে লাগিল।
সন্ধ্যা বেলা ঝুটিশ্বরী উপনীত হল।।
দুজনারে দেখে মধু আনন্দ হৃদয়।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে আসনে বসায়।।
স্বভক্তি প্রণাম করি জিজ্ঞাসে তখন।
বল ভাই কোথা হতে তব আগমন।।
সূর্য্য নারায়ণ বলে বলি তব ঠাই।
জয়পুর হতে মোরা এসেছিরে ভাই।।
দুটি কথা জিজ্ঞাসিব বলহে এখন।
ঝড় হয়ে ঘর কবে ঘটন।।
সেই ঘর কবে তুমি উঠাইলে ভাই।
কহ কহ কহ ভাই পরাণ জুড়াই।।
মধু কহে গত কাল ঘর তুলিলাম।
তিন জনে ঘর তুলি য়ে গুরু নাম।।
তারকের নাম য়ে তুলি এই ঘর।
তারক তারক বলে কান্দিছে অন্তর।।
সেই হতে মন পাখি জয়পুর গেছে।
জয়পুর যাব বলে মনে জাগিতেছে।।
তাই শুনে কেন্দে বলে সূর্য্যনারায়ণ
মধুকে ধরিয়া শেষে করে আলিঙ্গন।।
শুন শুন শুন মধু তোমাকে জানাই।
বাড়ী বসে ঘর ঠেলে তারক গোঁসাই।।
কেন্দুয়ার বিল পাশে যখনেতে গেল।
দযার সাগর মোর কহিতে লাগিল।।
শুন শুন ওগো সর্প বলিয়ে তোমায়।
বিল মধ্যে চলে যাও নাহি কোন ভয়।।
এই বিলে আছে কত বড় বড় ধাপ।
সেই খানে আছে তব স্বজাতির সাপ।।
ভয় নাই চলে যাও সুখে কর বাস।
সাপুড়িয়া ধরিবে না দিলাম আশ্বাস।।
এই বাক্য শ্রী তারক যখন বলিল।
সাপের চোখের জল দিগুণ বাড়িল।।
মনে মনে ভাবে সর্প আর কোথা যাব।
হেন সঙ্গ আমি আর কোথা গিয়া পাব।।
আমার জীবন ধন্য হেন সঙ্গ পেয়ে।
তাই ভেবে মুখ পানে রহিলেন চেয়ে।।
তাই দেখে শ্রী তারক ভাবে মনে মন।
যাদবেরে ডেকে ডেকে কহিল তখন।।
দুই জনে সাপ ধরে ছাড়াইয়া দাও।
ভয় নাই ছাড়াইয়া জঙ্গলে ফেলাও।।
তাই শুন দুই জন সর্পকে ধরিল।
ধরে নিয়ে সেই সাপ জঙ্গলে ফেলিল।।
জঙ্গলে পড়িয়া সর্প ভাবে মনে মন।
তীর বেগে ছুটে গিয়ে ধরিল চরণ।।
তারকের দুটি পদ জড়াযে ধরিল।
ফণা বিস্তারিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
তাই দেখে সে যাদব কহিল তখন।
শুন বাবা বলি তোমা আমার বচন।।
ভাষাহীন সর্প জাতি কান্দিয়া বুঝায়।
তোমার চরণে সাপ কি যেন কি চায়।।
তাই শুনে তারকের দয়া উপজিল।
মস্তকেতে হস্ত দিয়া কহিতে লাগিল।।
এরপর জন্মে তুমি মনুষ্য হইবে।
হরি ভক্ত হয়ে সদা হরি গুণ গাবে।।
এই বাক্য যখনেতে তারক বলিল।
চরণ ছাড়িয়া সর্প প্রণাম করিল।।
প্রণাম করিয়া সর্প জঙ্গলেতে যায়।
বিনোদ কহিছে হরি বল রসনায়।।
হেনকালে উপনীত সেই তিনজন।
অগ্র ভাগে চলিতেছে তারক সুজন।।
বৃক্ষতলে যখনেতে উপনীত হল।
বৃক্ষমূলে থেকে সর্প দেখিতে পাইল।।
সর্প রাজ মনে ভাবে এইত সময়।
লাফ দিয়ে পড়িলেন তারকের গায়।।
বুকে পিঠে জড়াইয়া গলেতে জড়ায়।
ফণা বিস্তারিয়া শেষে মুখ পানে চায়।।
তারক ভাবিছে মনে একি হল দায়।
সর্পের চোখের জল দেখিবার পায়।।
তাই দেখে তারকের দয়া উপজিল।
সর্পের মাথায় হাত বুলাতে লাগিল।।
বলে শুন ওগো সর্প বলিয়ে তোমায়।
তোমাকে অভয় দিনু নাহি কোন ভয়।।
এদিকেতে সাপুড়িয়া তারা দুইজন।
সর্পটিকে ধরে নিতে আসিল তখন।।
তাই দেখে শ্রীতারক করিতেছে মানা।
কোন মতে এই সর্প দিতে পারব না।।
তাই শুনি সে যাদব গর্জিয়া উঠিল।
সাপুড়িয়াগণে ধরে গলা ধক্কা দিল।।
ধাক্কা মেরে তাহাদের দেয় তাড়াইয়া।
মার খেয়ে দুই জন গেলেন চলিয়া।।
তারপর চেয়ে দেখে যাদব দুজন।
সাপের আশ্চর্য্য লীলা করি দরশন।।
অমনি সে দুই জন চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা ঠেলিও না পায়।
মানুষ হইয়া মোরা চিনি না তোমায়।।
ভাষাহীন সর্প আজি তোমাকে চিনিল।
তোমার পরশ পেয়ে প্রেমেতে ভাসিল।।
এই ভাবে দুই জন করিছে ক্রন্দন।
তাহাদের ধরে তোলে তারক সুজন।।
তার পর কয় জন করিল গমন।
প্রেমে গদ গদ চিত্ত ঝরে দুনয়ন।।
তারকের গলদেশে সাপ ঝুলিতেছে।
সাপের জনম ধন্য আনন্দে ভেসেছে।।
তারক জিজ্ঞাসা করে যাদবের ঠাই।
তোমারা কেমন আছ বল শুনি ভাই।।
যাদব বলেছে গুরু তোমার কৃপায়।
সকলে কুশলে আছে আনন্দ হৃদয়।।
তারক বলেছে শুন আমার বচন।
আমার সঙ্গেতে চল তোমারা দুজন।।
কাতলী গ্রামেতে যাব করিয়াছি মন।
সেই গ্রামে বাস করে ভক্ত নিবারণ।।
হরিচাঁদ গুরুচাঁদে সদা তার মতি।
তথায় যাইতে হবে চল শীঘ্রগতি।।
যাদব মল্লিক বলে শুন দিয়া মন।
এই খানে করিয়াছি সেবা আয়োজন।।
তারক বলেছে তুমি শীঘ্র দাও খেতে।
হেথা হতে বহু পথ হইবে যাইতে।।
ব্যাস্ত হয়ে সবে মিলে করিয়া ভোজন।
তথা হতে তিন জন করিল গমন।।
হরিচাঁদ গুণকথা বলিতে বলিতে।
ভাবে গদ গদ চিত্ত লাগিল হাটিতে।।
খুলনা জেলা আছে মোল্লাহাট থানা।
গাওনা সে বড় গ্রাম সকলের জানা।।
তাহার উত্তর পাশে এক ভিটা আছে।
সাপুড়িয়া এসে তথা সাপ ধরিতেছে।।
বহু সাপ ধরে তারা হাড়িতে পুরিল।
বড় এক সাপ শেষে ছুটিয়া পালাল।।
রাস্তার পাশে এক বড় গাছ ছিল।
সে গাছের মূলে গিয়ে ঝুলিতে লাগিল।।
সাপুড়িয়া দুই জনে গাছে উঠিয়াছে।
সাপ ধরিবারে তারা তাড়া করিয়াছে।।
সর্প রাজ ভাবিতেছে উপায় কি করি।
মনে মনে ডাকিতেছে তোমায় শ্রী হরি।।
বিপদে আজি মোরে রক্ষা কর তুমি।
ভাষাহীন অপরাধী সর্প জাতি আমি।।
কিবা কর্ম ফলে আমি হইয়াছি সাপ।
মনে হয় পূর্ব জন্মে করিয়াছি পাপ।।
বিপদে পড়িয়া ডাকি ওগো দয়াময়।
রক্ষা কর আমি করে আসিয়া হেথায়।।
তাহা শুনি সেই মধু ধুলাতে লুটায়।
কাঙ্গালী পড়িল গিয়ে সে মধুর পায়।।
মধুর চোখের জলে ধরা ভেসে যায়।
পরিবার সহ এসে পড়িল ধরায়।।
এই ভাবে সবে মিলে কান্দিতে লাগিল।
বহুক্ষণ পরে শেষে প্রেম সম্বরিল।।
সূর্য্য নারায়ণ আর কাঙ্গালীকে লয়ে।
ভোজন করায় শেষে কান্দিয়ে কান্দিয়ে।।
সেই হতে সেই মধু প্রেমিক হইল।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
তারকর প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
 
তারক চাঁদ সর্প কথা
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া অন্তরে।
আশ্চর্য্য ঘটনা এক জানাব সবারে।।
জয়পুর বাস করে কবি রসরাজ।
হরিভক্ত বলে যানে ভক্তের সমাজ।।
একদিন শ্রী তারক পদুমা চলিল।
যাদবের বাড়ী গিয়ে উপনীত হল।।
পদুমায় হরিভক্ত ছিল যত জন।
একে একে সবে এসে দিল দরশন।।
সকলে তারক পদে প্রণাম করিল।
যাদব মল্লিক এসে চরণে পড়িল।।
ভক্তি গদ গদ চিত্ত ঝরে দুনয়ন
যাদবের নারী এসে ধোয়াল চরণ।।
বসিতে আসন দিল উত্তরের ঘরে।
ধূপ ধুনা দিয়ে শেষে গাড় ভক্তি করে।।
উলুধ্বনি হরিধ্বনি করে সবে মিলে।
হরিভক্ত সঙ্গ পেয়ে ভাসে আখি জলে।।
ভক্তিভরে তারকের সেবা করাইল।
হরিকথা রসরঙ্গে তথায় বঞ্চিল।।
লোহারগাতী বাড়ী যাদব চন্দ্র ঢালী।
তারকের প্রিয় শিষ্য জানিত সকলি।।
সংবাদ পাইয়া তিনি পদুমা আসিল।
তারকের পদে এসে প্রণাম করিল।।
 
তারকের কাতলী গমন আশ্চয্য লীলা
সর্পকে করিয়া মুক্তি চলে তিন জন।
ধীরে ধীরে করিলেন কাতলী গমন।।
ভাবে গদ গদ চিত্ত চলেছেন পথে।
উপনীত হল গিয়া কাতলী গ্রামেতে।।
দেখিয়া সে নিবারণ চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
পরিবার সহ এসে প্রণমিল পায়।
চরণ ধোয়ায়ে শেষে আসনে বসায়।।
নিবারণ বলে গুরু তব আগমনে।
জীবন ধন্য হল তোমা দরশনে।।
নিবারণের চোখেতে বারি ধারা বয়।
তাই দেখে কয় ভাই চরণে লুটায়।।
জেষ্ঠ্য শ্রী মহেশ চন্দ্র মেঝ নিবারণ।
তৃতীয় সে ধনঞ্জয় বিশ্বাস সুজন।।
সবার কনিষ্ঠ হয় নামেতে পেয়ারী।
তারকেরে ভালবেসে বলে হরি হরি।।
তারকেরে ভক্তি করি সেবা করাইল।
হরিকথা রসরঙ্গে তথায় বঞ্চিল।।
পরদিন ভোর বেলা করিয়া ভোজন।
এসে শেষে চারিজন করিল গমন।।
নিবারণ সঙ্গে চলে যাদব দুজন।
খাড়িয়া গ্রামেতে গিয়ে দিল দরশন।।
খাড়িয়ায় নিবারণ তাফালী নামেতে।
হরিবাসর করিল তাহার বাটিতে।।
তারকের আগমন শুনিয়া সকলে।
আসিলেন কত ভক্ত হরি হরি বলে।।
কাছে কাছে হরিভক্ত যত জন ছিল।
তারকের কথা শুনি সকলে আসিল।।
মাটিয়ার গাতী গ্রামে সাধু মৃতুঞ্জয়।
তারকের প্রিয় শিষ্য সরল হৃদয়।।
তিনি আসিলেন শুনে তারকের কথা।
তারকের পদে এসে নোয়াইল মাথা।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা চরণে জানাই।
মোর মত অভাজন জগতে নাই।।
তব চরণে বাবা করি নিবেদন।
মহোৎসব করিবারে হইয়াছে মন।।
তুমি বাবা দিন ধার্য্য করিয়া যে দিবে।
ভক্তগণ সঙ্গে করি উৎসব করিবে।।
তাই শুনে শ্রী তারক কহিল তখন।
ভাল কাজ করিবার হয় যদি মন।।
সাত দিন পরে যেই বুধবার হবে।
সেই দিন সাধু সেবা করিতে হইবে।।
তাই শুনি মৃত্যুঞ্জয় আনন্দ পাইল।
তারকের পদে পরি প্রণাম করিল।।
তাই শুনে ভক্ত গনে হরিধ্বনি দেয়।
কীর্তনে মাতিল সবে আনন্দ হৃদয়।।
হরিনামে মাতোয়ারা হল ভক্তগণ
সারা নিশি হল তথা নাম সংকীর্তন।।
নিবারণ পড়িলেন তারকের পায়।
পরিবার সহ এসে গড়াগড়ি যায়।।
কেহ কেহ কান্দিতেছে হরি হরি বলি।
কেহ কেহ নচিতেছে দুই বাহু তুলি।।
বহু পরে প্রেম নিধি হল শেষে ক্ষান্ত।
হরি হরি বলে সবে হইলেন শান্ত।।
তারপর সবে মিলে পান্থা সেবা করি।
এক ঠাই বসিলেন বলে হরি হরি।।
কত জনে দরবার করিল আসিয়া।
তারকরে পদে পড়ে কহিছে কান্দিয়া।।
আমাদের ঘরে গিয়ে পদধুলী দাও।
অধমের মনবাঞ্ছা তুমি যে পুরাও।।
এই ভাবে কত জনে কত কি কহিল।
সবাকার ঘরে ঘর ঘুরিতে লাগিল।।
এই ভাবে পাঁচদিন গত হয়ে গেল।
কাতলী হইতে এক সংবাদ আসিল।।
নিবারণে বাড়ী যেতে সংবাদ পাঠায়।
নিবারণ জানাইল তারকের পায়।।
ধান কাটা বাঁধিয়াছে আমি বাড়ী যাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
তারক বলেছে গৃহে চলে যাও তুমি।
মাটিয়ায় গাতী গ্রামে চলে যাব আমি।।
সেই খানে মৃত্যুঞ্জয় সাধু সেবা দিবে।
পার যদি তুমি বাছা সেখানে আসিবে।।
নিবারণ চলে গেল দুঃখ করি মনে।
সংসারের কর্ম করে গুরু চিন্তা প্রাণে।।
তারপর শ্রী তারক করিল গমন।
মাটিয়ার গাতী গ্রামে পৌছাল তখন।।
দুই দিন পরে সেথা সাধু সেবা হবে।
দুই তিন দিন সেথা তারক থাকিবে।।
মৃত্যুঞ্জয় করিতেছে তার আয়োজন।
আশে পাশে যত গ্রাম হল নিমন্ত্রণ।।
এই ভাবে দুই দিন গত হয়ে গেল।।
বুধবার উৎসব আরম্ভ হইল।।
ওদিকেতে নিবারণ গৃহেতে বসিয়া।
বড় ভাই মহেশেরে কহিছে কান্দিয়া।।
বুধবার যেতে হবে মাটিয়ার গাতী।
সেখানে যাইতে মোরে দিবে অনুমতি।।
মহেশ বলেছে ভাই তাহা না হইবে।
ধান কাটা না হইলে কেমনেতে যাবে।।
বারে বারে আমি ভাই করিতেছে মানা।
কোন মতে সেইখানে যেতে পারিবে না।।
তাই শুনে নিবারণ ভাবে মনে মেন।
গুরুর আদেশ আমি পালিব কেমনে।।
এদিকেতে বড় ভাই করিতেছে মানা।
কেমনে যাইব সেথা করে আনাগোনা।।
এক বিঘা জমি মাত্র ধান্য রহিয়াছে।
কেমনে কাটিব ধান মনেতে ভেবেছে।।
সন্ধ্যা বেলা মনে মেন ভাবিতে লাগিল।
তারকের ছবিখানি হৃদয় জাগিল।।
পূর্ণিমার রাত্রি পেয়ে ভাবিল তখন।
কাস্তে হাতে নৌকা বেয়ে করিল গমন।।
কারে কিছু না বলিয়া ধান্য ভূমে গেল।
তারক তারক বলে কান্দিতে লাগিল।।
জলে ভার আখি দুটি কাস্তে নিয়ে হাতে।
নৌকা পরে বসে ধান লাগিল কাটিতে।।
রাত্রি বেলা ভোজনেতে সকলে বসিল।
নিবারণে না দেখিয়া মহেশ কহিল।।
নিবারণ কোথা গেল বল শুনি তাই।
সকলে কহিল মোরা কেহ দেখি নাই।।
ক্রোধভরে সে মহেশ কহিল তখন।
মোর কথা নাহি শুনে সেই নিবারণ।।
কয় দিন সাধু গিরি করিয়া আসিল।
আজ বুঝি পালাইয়া উৎসবে গেল।।
এই বার বাড়ি এলে শুন সবে ভাই।
পৃথক করিয়া দিব মোর ইচ্ছা তাই।।
এই ভাবে কত কথা মহেশ কহিল।
তারপর সবে মিলে শয়ন করিল।।
ভোর বেলা সে মহেশ জাগিয়া তখন
বাড়ীর প্রাঙ্গনে এসে করে নিরীক্ষণ।।
তথা হতে সে জমিতে দেখিবারে পায়।
নিবারণ কাটে ধান বসিয়া নৌকায়।।
আর এক জন ধান কাটে সে নৌকায়।
আধ আধ অন্ধকারে চেনা নাহি যায়।।
তাই দেখে সে মহেশ আর নৌকা নিয়ে।
ধীরে ধীরে চলিলেন তরী খানি বেয়ে।।
কিছু দুর গিয়ে দেখে আশ্চর্য্য ঘটনা।
নৌকা পরে ধান কাটে তারক রসনা।।
শ্রী তারক নিবারণ কাটিতেছে ধান।
তাই দেখে সে মহেশ ভাবে মনে মন।।
কত কিছু মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
ধীরে ধীরে তরী খানি বাহিয়া চলিল।।
নিকটেতে গিয়ে দেখে আর কেউ নাই।
একা সেই নিবারণ ধান কাটে তাই।।
সকল জমির ধান কাটা হয়ে গেছে।
তাই দেখে সে মহেশ কান্দিয়া বলেছে।।
শুন ভাই নিবারণ তোমাকে জানাই।
মোর মত অভাজন জগতে নাই।।
এত বলি নিবারণে বুকেতে ধরিয়া।
জলে ভরা আখি দুটি কহিছে কান্দিয়া।।
তব নায় ধান কাটে তারক রসনা।
তোমা আমি কোন দিন কাজে কহিব না।।
চল ভাই গৃহে যাই বলি কি আর।
তারকের পদে গিয়ে মাগি পরিহার।।
তাই শুনে নিবারণ চরণে পড়িল।
মহেশের পদধরি কান্দিতে লাগিল।।
তার পর দুই ভাই কান্দিয়া কান্দিয়া।
নৌকা বেয়ে আসিলেন গৃহেতে চলিয়া।।
গৃত হতে দুই ভাই করিল গমন।
ভাবে গত গত চিত্ত ঝরে দুনয়ন।।
মাটিয়ায় গাতী চলে ভাই দুই জন।
চক্ষু জলে বক্ষ ভাসে আনন্দিত মন।।
মৃত্যুঞ্চয় ভবনেতে সংকীর্তন হয়।
চারিদিকে হরিভক্ত হরিগুণ গায়।।
তার মধ্যে বসে আছে তারক গোঁসাই
হেনকালে উপনীত হল দুটি ভাই।।
তারকের পদে পড়ে কান্দিতে লাগিল।
তাই দেখে শ্রীতারক বলিয়া উঠিল।।
শুন বলি নিবারণ বলি তব ঠাই।
হাতে মোর ঠোষা চেয়ে দেখ তাই।।
সারা নিশি ধান কেটে হাতে পল ঠোষা।
কিবা দিয়ে বুঝাইব নাহি মোর ভাষা।।
তাই দেখে সে মহেশ গড়াগড়ি যায়।
তারকের পদ ধরি কেন্দে কেন্দে কয়।।
ক্ষম বাবা অপরাধ অধম বলিয়া।
আজ হতে নিবারণে দিলাম সপিয়া।।
আজ হতে কয় ভাই সংসারে খাটিব
নিবারণে কোন দিন কাজে না বলিব।।
তাই শুনে নিবারণ কেন্দে কেন্দে কয়।
মহেশের পদে পড়ে গড়াগড়ি যায়।।
তুমি মোর জেষ্ঠ্য ভাই পিতৃতুল্য হও।
করিয়াছি অপরাধ ক্ষমা করে দাও।।
তারপর তারকের পদধরি কয়।
তোমার চরণ বিনে দাঁড়াব কোথায়।।
তোমার চরণে বাবা এই ভিক্ষা চাই।।
জনমে জনমে যেন ভুলিয়া না যাই।।
সেই খানে হরিভক্ত যত জন ছিল।
তারকের পদে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।
সবাকার নয়নেতে বারি ধারা বয়।
প্রেমের তরঙ্গে সবে ভাসিয়া বেড়ায়।।
তাই দেখে মনে মনে ভাবে মৃত্যুঞ্জয়।
পরিবারসহ এসে পড়িল ধারায়।।
প্রেমের তরঙ্গ ওঠে আকাশ ভেদিয়া।।
তার মধ্যে ভক্তগণে বেড়ায় ভাসিয়া।।
নারী কি পুরুষ তার নাহি ভেদ জ্ঞান।
প্রেমের পাথারে সবে ভাসিয়া বেড়ান।।
হরি হরি হরি বলে যত ভক্তগণ
লেখা দিয়া কি বুঝাব আমি অভাজন।।
বহু পরে প্রেমনিধি হইলেন ক্ষান্ত।
হরি হরি হরি বলে সবে হল শান্ত।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
তারকের ছাবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ওরে মন বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
 
উভয় সংকট
লোহারগাতী বাড়ী যাদব চন্দ্র ঢালী।
তারকের প্রিয় ভক্ত জানিত সকলি।।
গুরুপদে ভক্তি করি হরিগুণ গায়।
মাঝে মাঝে সে যাদব ওড়াকন্দি যায়।।
গুরুচাঁদ চরণেতে প্রণাম করিয়া।
ছল ছল আখি দুটি কহিত কান্দিয়া।।
ওগো বাবা গুরুচাঁদ চরণে জানাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
তাই শুনে গুরুচাঁদ কহিত তখন।
শুনরে যাদব তুমি আমার বচন।।
আমার বাবার ভক্ত ভালবাসে যেই।
প্রাণভরে সব কিছু আমি তারে দেই।।
যাও বাছা গৃহে চলে কোন চিন্তা নাই।
এই ভাবে ভক্তি পথে মন খাটি চাই।।
তাই শুনে সে যাদব গৃহেতে আসিত।
হাতে কাম মুখে নাম সংসার করিত।।
একদিন সে যাদব ভাবে মনে মন।
তারকেরে গৃহে এনে করাব ভোজন।।
বিলে আছে কই মাছ আনিব ধরিয়া।
গুরু সেবা করাইব সেই মাছ দিয়া।।
তাই ভেবে সে যাদব প্রভাতে জাগিয়া।
বিল মধ্যে চলিলেন পোলা হাতে নিয়া।।
পোলা দিয়া কই মাছ ধরিতে লাগিল।
বড় বড় কই মাছ অনেক ধরিল।।
তিন কুড়ি কই মাছ গণনায় হল।
তাই নিয়ে সে যাদব গৃহেতে আসিল।।
তাহার নারীকে ডেকে কহিল তখন।
ভাল ভাবে এই মাছ কর হে যতন।।
বড় বড় কই মাছ বাছিয়া বাছিয়া।
অন্য পাত্রে রাখ তুমি যতন করিয়া।।
গুরুসেবা করাইব মনেতে ভেবেছি।
তাই ভেবে এই মাছ ধরিয়া এনেছি।।
যেই দিন মম গৃহে আসিবে গোঁসাই
এই মাছ দিয়া সেবা করাইব তাই।।
তাই শুনে তার নারী তাহাই করিল।
প্রধান প্রধান কই বারটি হইল।।
অন্য এক হাড়ী মধ্যে তাতে জল দিয়া।
সাবধানে রাখিলেন যতন করিয়া।।
মনে মনে সে যাদব তারকে ভাবিয়া।
আশা পথ পানে থাকে সতত ভাবিয়া।।
কবে মোর মনবাঞ্ছা হইবে পূরণ
এই মাছ কবে এসে করিবে ভোজন।।
এই ভাবে পাঁচ দিন গত হয়ে গেল।
যাদবের নারী সেই আরোপে দেখিল।।
পদুমায় আসিয়াছে তারক গোঁসাই
তথা হতে আসিতেছে দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে সেই নারী ভাবে মনে মন।
আমাদের মনবাঞ্ছা হইবে পূরণ।।
ব্যস্ত হয়ে করিতেছে পাক আয়োজন।
সেই মাছ কুটিতেছে আনন্দিত মন।।
হেনকালে যে যাদব কোথা হতে এল।
সেই মাছ কুটিতেছে দেখিতে পাইল।।
ক্রোধভরে গালাগালি করিয়া কহিল।
গোঁসাইকে খাওয়াইব মনে আশা ছিল।।
নিজে খাবি বলে তুই মাছ কাটিলি।
আমার মনের আশা পুরাতে না দিলি।।
এত বলি সে যাদব জষ্টি নিয়ে হাতে।
প্রহার করেছে তার নারীর পৃষ্ঠেতে।।
প্রহার করি কত গালাগালি দিয়ে।
স্নান করিতেছে গিয়ে নদীতে নামিয়ে।।
মা খেয়ে সে নারী কিছু না ভাবিল।
কেন্দে কেন্দে সে নারী রন্ধন করিল।।
কাঙ্গালীকে সঙ্গে করি তারক গোঁসাই
হেনকালে উপনীত দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে সে নারী চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা বলি তব ঠাই।
মোর মত অভাগিনী জগতে নাই।।
করিয়াছি অপরাধ ক্ষমা কর মোরে।
চরণ ধরিয়া বাবা বলি যে তোমারে।।
তাই দেখে তারকের চোখে আসে জল।
আধ আধ ভাষা দিয়া বলে হরি বল।।
তারক বলেছে মাগো কান্দ কি কারণ
বড় খুধা লাগিয়াছে করিব ভোজন।।
তাহা শুনে সেই নারী চরণ ধোয়ায়ে।
বসিতে দিলেন সেথা আসন পাতিয়ে।।
স্নান করি সে যাদব গৃহ পানে ধায়।
দুর থেকে তারকেরে দেখিবারে পায়।।
তার নারী তারকের পদে পড়ে কান্দে।
তাই দেখে সে যাদব পড়িল বিপদে।।
কি যেন ভাবিয়া শেষে পালাইয়া গেল।
অন্য বাড়ী গিয়ে এক ঘরে লুকাইল।।
তারকের আজ্ঞা পেয়ে সে নারী তখন।
ছল ছল আখি দুটি করিল রন্ধন।।
রন্ধন করিয়া সতী করি আয়োজন।
তারকের পদে গিয়ে কহিল তখন।।
সেবা করিবারে বাবা করিয়াছি ঠাই।
তোমাকে করাতে সেবা কোন ভক্তি নাই।।
তাই শুনি শ্রীতারক কহিল তখন।
কাঙ্গালীকে ডেকে বলে মধুর বচন।।
শুন শুন কাঙ্গালী বলি যে তোমায়।
যাদবেরে ডেকে আন গেল সে কোথায়।।
তাই শুনে সে কাঙ্গালী করিল গমন।
প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে করে অন্বেষণ।।
যে ঘরেতে সে যাদব লুকাইয়া ছিল।
তথা হতে যাদবেরে খুঁজিয়া আনিল।।
অপরাধী মনে ভাবি যাদব তখন।
ছল ছল আখি দুটি ঝরে দুনয়ন।।
তারকের নিকটেতে যখন আসিল।
অমনি তারক চন্দ্র উঠিয়া দাঁড়াইল।।
পৃষ্ঠদেশ দেখাইয়া বলিল তখন।
মম পৃষ্ঠে চেয়ে দেখ ওরে বাছাধন।।
মাকে তুমি করিয়াছ দারুণ প্রহার।
হরিচাঁদ রাখিয়াছে মম পৃষ্ঠ পর।।
তাই দেখে সে যাদব চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো বাবা চরণে জানাই।
এই জন্যে আমি কোন বেদনা না পাই।।
হেন বাক্য যখনেতে যাদব শুনিল।
নারীর চরণে পড়ে কান্দিতে লাগিল।।
করিয়াছি অপরাধ তোমাকে জানাই।
তোমা হেন নারী যেন জম্মে জম্মে পাই।।
তাই দেখে শ্রীতারক সবাকে সান্তাল
শান্ত হয়ে দুই জনে সেবা করাইল।।
গুরুসেবা করি তারা আনন্দে মাতিল।
কান্দিয়া বিনোদ বলে হরি হরি বল।।
 
তারকচাঁদের পানসী তরী
 
খড়িয়া গ্রামেতে ছিল নিবারণ নাম।
তারকের শিষ্য সেই ভক্ত গুণধাম।।
একদিন তারকের পদ ধরি কয়।
শুন বাবা বলি তোমা কি হবে উপায়।।
অভাবের তাড়নায় কি করিব আমি।
কি করিলে ভাল হবে বলে দাও তুমি।।
তাই শুনে শ্রী তারক কহিল তখন।
শুন তুমি নিবারণ আমার বচন।।
ধানের ব্যাবসা তুমি কর মহাশয়।
হাটে হাটে কেনা বেচা করিও সদায়।।
তাহাতেই যাহা কিছু লভ্য তব হবে।
সংসারের আয় ব্যয় তাহাতে চলিবে।।
এতি বলি এক টাকা তার হাতে দিল।
টাকা দিয়া তার হাতে কহিতে লাগিল।।
ব্যাবসায় পুজি আমি দিলাম তোমায়।
এক দরে কেনা বেচা করিও সদায়।।
তাই শুনি নিবারণ চরণে পড়িল।
চরণ ধরিয়া শেষে কহিতে লাগিল।।
শুন বাবা বলি তোমা মরমের কথা।
তোমার চরণ বিনে দাড়াইব কোথা।।
যে দিনেতে তব পায় শরণ নিয়েছি।
তোমার স্বরূপ আমি হৃদয় একেছি।।
এক নিবেদন বাবা চরণে জানাই।
অন্তিম কালেতে যেন শ্রীচরণ পাই।।
তারক বলেছে বাছা মন ঠিক চাই।
হরিচান্দের কৃপায় কোন চিন্তা নাই।।
তাই শুনে নিবারণ গৃহেতে আসিল।
তারকের কথা নিয়ে ব্যবসা করিল।।
তারকের নাম নিয়ে প্রতি হাটে যায়।
ধানে ব্যবসা করে আনন্দ হৃদয়।।
চতুর্গুণ লভ্য হয় তারকের বরে।
ঘরে ফেরে নিবারণ প্রফুল্ল অন্তরে।।
এই ভাবে হাটে হাটে ব্যবসা করিত।
তারক তারক বলে সদায় ডাকিত।।
ধরে জনে পরিপূর্ণ ক্রমেতে হইল।
তারপর জমি জমা কত যে রাখিল।।
মাঝে মাঝে নিবারণ জয়পুর যায়।
তারকের পদে গিয়ে সকল জানায়।।
তাই দেখে শ্রী তারক আশির্বাদ করে।
আশির্বাদ লয়ে শিরে ফিরে আসে ঘরে।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
একদিনি নিবারণ শুনিতে পাইল।।
লীলা সাঙ্গ করেছেন তারক গোঁসাই
তাই শুনে নিবারণ কেন্দে ছাড়ে হাই।।
গড়াগড়ি যায় শেষে মাটিতে পড়িয়া।
কেন বাবা চলে গেলে জগত ছাড়িয়া।।
প্রাণের পুতুল তুমি চরণে জানাই।
তোমা হেন দরদিয়া কোথা গিয়ে পাই।।
পাগলের মত প্রায় বেড়ায় ঘুরিয়া।
তারক তারক বলে বেড়ায় কান্দিয়া।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
শান্ত হয়ে তারপরে ভাবিতে লাগিল।।
তারকের নাম নিয়ে তরণী গঠিব।
ধানের ব্যবসা আমি তাহাতে করিব।।
সুন্দরীর কাঠ দিয়ে তরণী গঠিল।
আগা নায় তারকের নাম লিখে দিল।।
পাঁচ হাত মুখে হল সে তরণী খানি।
নাম হল তারকের পানসী তরণী।।
তারপর নিবারণ নৌকা সাজাইয়া।
তারক চাঁদের নাম মানত করিয়া।।
কয়জন ভাগি নিয়ে নৌকা সাবাইল।
শুভ দিন বুধবার তরী খুলে দিল।।
তারকের নাম নিয়ে তরণী বাহিয়া।
চালনা বন্দরে ধান কিনিলেন গিয়া।।
তারপর শেষে এসে করিত বিক্রয়।
টে হাটে বিক্রি করে বহু লভ্য পায়।।
এই ভাবে নিবারণ ব্যবসা করিত।
তারক চান্দের নাম অন্তরে জপিত।।
একদিন ধান কিনে দেশেতে আসিল।
মন প্রতি দুই টাকা বাজার কমিল।।
তাই দেখে নিবারণ মনেতে ভাবিয়া।
তারক তারক বলে বেড়ায় কান্দিয়া।।
একদিন নিশি যোগে স্বপনে দেখিল।
তারক শিয়রে বসে কহিতে লাগিল।।
শুন শুন নিবারণ বলি যে তোমারে।
ধান বিক্রি কর তুমি এক মাস পরে।।
এই কথা বলে তিনি অদৃশ্য হইল।
নিদ্রা ভেঙ্গে নিবারণ ভাবিতে লাগিল।।
ভাগীদের জানাইল স্বপনের কথা।
তাই শুনে ভাগীগণ হল নিরবতা।।
ঘাটেতে তরণী বেধে সবে গৃহে গেল।
হাটে হাটে কেনা বেচা বন্ধ করে দিল।।
নৌকা খানি ঘাটে বাধা কেহ নাহি রয়।
তাই জেনে এক চোর ভাবিল হৃদয়।।
কিছু ধান চুরি করে আনিব রাত্রিরে।
তাই ভেবে সেই চোর লাগিল ঘুরিতে।।
সন্ধ্যা হতে সেই চোর ঘোরা ফেরা করে।
নৌকার নিকটে গেল দশটার পরে।।
দেখিলেন নৌকা পরে বসি একজন।
হুকা সেবা করিতেছে হয়ে একমন।।
তাই দেখে সেই চোর জিজ্ঞাসে তাহারে।
কেবা তুমি হুকা খাও বসে নৌকা পরে।।
তাহা শুনে কহিলেন নৌকা পরে যেই।
যার নৌকা বসে বসে হুকা খায় সেই।।
তাই শুনে সেই চোর পিছাইয়া এল।
নিবারণের বাড়ীতে আসিয়া দেখিল।।
নিবারণ পাকঘর ভাত খাইতেছে।
তাই দেখে সেই চোর মনেতে ভেবেছে।।
নৌকার মালিক যেই গৃহেতে রহিল।
নৌকা পরে কেবা সেই তামাক খাইল।।
ইতি উতি কত কিছু মনেতে ভাবিয়ে।
নৌকার নিকটে গেল দিশেহারা হয়ে।।
নৌকা পরে ছিল যেই জিজ্ঞাসিল তারে।
তব নাম কিবা হয় কহ আজ মোরে।।
নৌকা পরে যেবা ছিল কহিল তখন।
তারক আমার নাম শুন বাছাধন।।
তাই শুনে সেই চোর পিছাইয়া এল।
মালিকের কাছে গিয়ে সকল বলিল।।
ধান চুরি করিবারে তব নায় যাই।
নৌকায় পাহারা দেয় তারক গোঁসাই।।
এত বলি নিবারণে কহিতে লাগিল।
কেন্দে কেন্দে সেই চোর চরণে পড়িল।।
নিবারণ ব্যাস্ত হয়ে চোরকে ধরিয়া।
নৌকার নিকটে যায় কান্দিয়া কান্দিয়া।।
দেখিলেন নৌকা পরে আর কেহ নাই।
কল্কিতে আগুণ আছে দেখিলেন তাই।।
তাই দেখে দুই জনে গড়াগড়ি যায়।
তারক তারক বলে কান্দে দুজনায়।।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা ডুবে গেল।
তারকের প্রীতে সবে হরি হরি বল।।

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free