গান নং ০৭৬-০৯০
৭৬ নং গান- তালঃ একতালা
ঘোর নিশিতে শয্যা হতে উঠিয়া, নিমাই কত কাতরে শুধায়,
জীব ত্বরাতে কাঙ্গাল বেশে সন্ন্যাসেতে যায়।
১। সজল নয়নে নিমাই কয়, প্রিয়ে বলি যে তোমায়,
চেয়ে দেখলে না আমায়।
জাগ জাগ বিষ্ণুপ্রিয়ে, তোমায় আমি ফাঁকি দিয়ে,
জন্মের মত হইলাম বিদায়।
২। শুন শুন ও প্রাণেশ্বরী, চললেম তোমাকে ছাড়ি,
ত্যেজে এ সোনার পুরী।
সন্ন্যাসেতে চললেম আমি, এবার চেয়ে দেখ তুমি,
দেখ তোমার পাখী তোমায় ছেড়ে যায়।
৩। যাবার বেলায় বলি তব ঠাই, প্রিয়ে তোমায় বলে যাই,
মায়ের ব্যাথিত কেহ নাই।
আমার জন্য শচী রাণী, হয় যদি রে পাগলিনী,
তুমি মা বলিয়া ডাকিও সদায়।
৪। অধম বিনোদ ভেবে কয়, নিমাই সন্ন্যাসেতে যায়,
আমার কি হবে উপায়।
পাতক আমি এ সংসারে, রয়েছি এ মায়ার ঘরে,
প্রভু অধম বলে কৃপা যেন হয়।
৭৭ নং গান- তালঃ ঠুংরী
হারে ও বনের পাখীরে, কে তোরে সাজায়ে দিছে,
হলুদ রং দিয়ে।
ও তোর রূপের ছটায় করলি পাগল বৌ কথা কও কয়ে।
১। সিঁদুর মাখা ঠোট দু খানি কাল মাথায় চুল,
গাছের ডালে উকি মেরে প্রাণ করে আকুল,
ও তোর ভাব দেখিয়ে হয়ে যায় ভুল, ঘোমটা যায় খুলিয়ে।
২। বসন্তের মলয় পবন পাতায় পাতায় দোলে,
ও তোর সুর লহরী কানে কানে কি যেন যায় বলে,
আবার খোকা হোক খোকা হোক বলে, গেলি আশার বাণী গেয়ে।
৩। বসন্তের আগমনে তোর এ ভাব উদয়,
ও তোর সুর শুনিয়ে বিরহিণী কাঁদে নিরালায়।
জ্বলে প্রেমের আগুন ভাঙ্গা হৃদয় প্রাণবন্ধু হারায়ে।
৪। বিনোদ বলে পাখীর গানে আকুল করে প্রাণ,
ধরা সতী নীরব হয়ে শোনে তারই গান।
তারে সোহাগ ভরে দিতেছে দান, কি যেন কি শুনায়ে।
৭৮ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
পাখী ডাকে রে কি যেন কার ইশারায়,
ভবে যার মধ্যে যা প্রকাশ করে, সেই সুরে সে সুর বাজায়।
১। ডাকছে কোকিল তমাল ডালে, বিরহিণীর প্রাণ উথলে,
সদা ভাসে নয়ন জলে, মিলনও আশায়।
২। বৌ কথা কও ডাকছে পাখী, নব বধূ ঘোমটা ঢাকি,
বারেক সে মারছে উকি, কে জান কি কয়।
৩। বৌ শস্য কোট পাখীর গানে কুলবধূ শস্য বানে,
কি যেন প্রাণের টানে, ডাকে ঠিক সময়।
৪। কুটুম আর পাখীর গানে কুমারী কন্যার প্রাণে,
নতুন এল ভাষা আনে, সে কোন অজানায়।
৫। ঠাকুর কৃষ্ণ তুই তুই বলে, ডাকছে পাখী গাছের ডালে,
কৃষ্ণ ভক্তের হৃদয় ভোলে, কৃষ্ণ প্রেমময়।
৬। ডাকছে পাখী শিব শিব করে, যা কর শিব তুমি মোরে,
এ দীন বিনোদ বলে পাখীর সুরে, আমারে কাঁদায়।
৭৯ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
গাছের ডালে উকি মেরে ডাকিস বারে বারে,
ও কোকিলা, বিরহিণীর ব্যাথা জাগাতে।
প্রাণ বঁধুয়া নাইরে দেশে তোমায় বুঝাতে।
১। তোর কুহু তানে কোকিল হানে পঞ্চবাণ,
প্রাণ বঁধুয়া নাইরে দেশে কে দিবে সন্ধান।
থাকবে যদি প্রাণের বন্ধু, উথলিয়ে প্রেমের সিন্ধু,
উজানে ধারাতে বিন্দু, অঙ্গ পরশেতে।
২। মনে প্রাণে যানে গুণে সাজাইত মেলা,
স্বরূপেতে রূপ মিশায়ে খেলাত মধুর রসের খেলা।
বুঝবি কি তুই বনের পাখী, শুধুই করবি ডাকাডাকি,
সে আমারে দিচ্ছে ফাঁকি, আমায় কাঁদায়।
৩। পাখা আছে বলে তোদের ঘটেনা বিরহ,
প্রাণ বঁধুয়া যায় রে যথা থাকিস সহ সহ।
বুঝ কি বিরহ ব্যাথা, বিরহিণীর মনের কথা,
এ দীন বিনোদ বলে জনম বৃথা, প্রিয়া না আসাতে।
৮০ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
কলিতে বার মিলায় তাই অঘাটায়,
শুনি আদাড়ের মার জটের মধ্যে, মহাকালীর উদয় হয়।
১। কত ঘাটে পথে বার মিলেছে, জলে কিংবা হিজল গাছে,
আবার মানুষের ঘাড়ে ব্যারাম দিচ্ছে, গাছা গিয়ে দেশ মাতায়।
রোগাভক্তি কলিকালে, তারা গিয়ে গাছার ডলে,
পুরুষ নারী সবে মিলে, গাছার ডলে মাতাম দেয়।
২। কলির কাণ্ড দেখলেম বসি, আগাছার ফল ধরে বেশী,
মূল ধরে তাই রাশি রাশি, খায় না সে ফল কোন তায়।
অমানুষের গায়ের জোরে, সইতে নারে সাধু নরে,
দেখা যায় তাই কিছু পরে, অনিবার্য ধর্মের জয়।
৩। বিনোদ বলে কলির খেলায়, সাধু জনার মন ভুলে যায়,
তাহার প্রমাণ কেষ্টপুর গায়, বাংলাদেশ কাঁপায়ে দেয়।
কত শত মিলিতেছে বার, প্রমাণ আছে হাজার হাজার,
দুই দিন পরে ছারেখার, খালি খাঁচা পড়ে রয়।
৮১ নং গান- তালঃ ঠুংরী
কি দারুণ মায়াজাল পেতেছে দয়াল
এই দুনিয়ার পরে রে।
১। (ও দয়াল রে) এড়াতে মায়াজাল, যতই হই সামাল,
জঞ্জাল ততই যায় বেড়ে রে।
ডাকিতে তোমায় পাই না সময়, দিন যায় শুধু অনাচারে।
২। (ও দয়াল রে) পুত্র কন্যারই মায়ায় ভুলিয়া রই,
তোমায় ভুল ভাঙ্গিব কেমন করে রে।
তব কৃপা হলে পরে, ভুল ভাঙ্গিতে পারে অধম বলে,
কৃপা কর মোরে।
৩। (ও দয়াল রে) সাজিয়া মায়ার মুটে, গেলাম ভূতের ব্যাগার খেটে,
খাটনি শোধাই কেমন করে রে।
কামাচারে হয়ে মত্ত, ছাড়াইনু পরমার্থ,
গুরুতত্ত্ব গেল ছারেখারে।
৪। (ও দয়াল রে) মনাবেগে কার্তিক বলে, ভাসিয়া নয়ন জলে,
সম্বল বিহীন রইলাম ভবের পরে।
তুমি দীনবন্ধু পার কর ভব সিন্ধু,
সম্বল বিহীন ডাকে যে তোমারে।
৮২ নং গান- তালঃ ঠুংরী
আপন ভুলিয়া রইলিরে মনা সং সাজিয়া সংসারে।
১। (ও মন রে) শুধু আমার আমার বলে, মায়ার ফাঁসী পরবি গলে,
আমি কার দেখলিনা বিচার করে রে।
যার ইশারায় ভবে আলি, তাহারে ভুলিয়ে রলি রে,
মজে রলি কুকাম চিন্তাপুরে।
২। পুত্র কন্যা বল যারে, ভেবে দেখ এই সংসারে,
ও পরিচয় দুদিনের তরে রে।
যে দিন ভব লীলা সাঙ্গ হবে, পুত্র কন্যা কোথায় রবে,
শশ্মান ঘাটে বিদায় দিবে তোরে রে।
৩। আছে দেহের মধ্যে পিতৃধন, মাতৃ স্বত্বার করে যতন,
কত ভাবে রাখিয়াছে ঘিরে রে।
সে ধন তুই না করলি যতন, কিসে তুই পাবি রতন,
অযতনে গেলি ছারেখারে।
৪। বিনোদ বলে শোনরে কার্তিক, পিতৃ ধনের হও গে সাত্ত্বিক,
যতন করে রাখ নিজের ঘরে রে।
সাধন করে রাখলে ঘরে, গুরু তোরে কৃপা করে,
নিয়ে যাবে ভব সিন্ধু পারে।
৮৩ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
অবুঝ মন আমার দিন থাকিতে মনের মানুষ ধর,
ধরলে পরে চেতন মানুষ, সন্ধান পাবি সু-রাস্তার।
১। আগম নিগম তত্ত্ব জেনে, থাক সদা যোগ সাধনে,
বিন্দু চলবে উজানে, ভয় রবে না ছয় জনার।
২। চালনে বিন্দু ধারণ করে, গেলে পরে সিদ্ধির ঘরে,
ও তার চৌদ্দ পোয়া দেহের পরে, বারামখানা হবে তার।
৩। গোঁসাই বিনোদ ডেকে বলে, কার্তিক পুড়ে মলি কামানলে,
থাকিয়া কামিনীর কোলে, পালিনা সময় সাধনার।
৮৪ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
সোনার ময়নারে এবার আমায় শুনাও কৃষ্ণ নাম,
আমি তোর মুখেতে নাম শুনিয়ে, তাপিত প্রাণ জুড়াইতাম।
১। প্রাণ বন্ধুকে হারাইয়া, কাঁদি আমি রইয়া গো,
আর কত দিন থাকি সইয়া, মণি হারা হইলাম।
২। কবে বন্ধুর দেখা পাব, পোড়া পরাণ জুড়াইব গো,
আমার হৃদ মাঝারে বসাইব, সেই না ব্রজের বাকা শ্যাম।
৩। প্রকৃতি হইলে ভবে, শ্যাম কালিয়া পতি পাবে গো
অধম কার্তিকের মন কাঁদবে কবে, বলে সেই না ব্রজধাম।
৮৫ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
ওরে আমার মনুয়া পাখী হরি গুণ গাও,
কু-কামনা সিন্ধু পারে, যদি তুমি যেতে চাও।
১। শোন বলিরে ও মন পাখী, অনিত্য ধনে হলি সুখী,
একবার মুদলে আঁখি সবই ফাঁকি, একবার ভেবে দেখ তাও।
২। বাঁধলি বাসা মায়াপুরে, ভাঙ্গবে বাসা দুদিন পরে,
যেতেই হবে এদেশ ছেড়ে, থাকতে সময় হুঁশিয়ার হও।
৩। আসিয়া এই দুনিয়ায়, তুই বসে রলি কিসের আশায়,
ভবে আসা যাওয়া যার ইচ্ছায়, তারই পদে শরণ লও।
৩। মদনা ব্যাধের পঞ্চ শরে, তোরে দিবানিশি বিদ্ধ করে,
থাক সদা দম বন্ধ ঘরে, যদি বাণ এড়াতে চাও।
৪। গুরু কল্পতরু মূলে, তুমি বাসা বাঁধ হরি বলে,
কার্তিক ধোয়াও নয়ন জলে, যদি পারে যেতে চাও।
৮৬ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
শিখলি নারে ও মন পাগলা, ইদুর মারার কল,
ও তোর চৌদ্দ পোয়া দেহ ঘরে, করে ইদুর চলাচল।
১। আছে ইদুর দেহ ঘরে, দেখ নাই দৃষ্টি করে,
নয় দরজার উকি মারে, বাঁধাল জঞ্জাল।
খাওয়াগে পঞ্চ রস ঔষধি করে, মরিবে ইদুর সকল।
২। গুরু পদে নাই তোর আস্থা, করলি নারে সেই ব্যবস্থা,
তোরে করল নাস্তা, খাস্তা, ওরে বেসামাল।
তোর পিতৃ ধন ধানের বস্তা, খেয়ে করল পয়মাল।
৩। গুরুর কাছে জেনে নীতি, উজানে চালাও রতি,
দ্বি-দলের পরে কর স্থিতি, ঘরে মাল হবে সামাল।
শেষে ঠিক হলে তোর প্রেম পিরীতি, রসে করবে টলমল।
৪। কৃষ্ণ প্রেম নয়কো সোজা, জ্ঞান থাকিতে যায় না বোঝা,
অজ্ঞানে হয় প্রেমের পূজা, অকামনায় ফলে ফল।
কার্তিক রে তুই হয়ে অজ্ঞান, কামনায় কাটালি কাল।
৮৭ নং গান- তালঃ ঠুংরী
জামালপুরের কাছারিতে ওরে মন ডাক পড়েছে।
তোর গোলা ঘরে তালা খোলা, রং মহলে জং ধরেছে।
১। মণিপুরে টাকশালা ছিল,
জালালপুরের পেয়াদা এসে সব লুটে নিল।
তোর ঘর বাড়ীতে আগুন দিল, তোর নিদ মহল পুড়ে গেছে।
২। বসে বসে ভাবছিল কি এখন,
আর কতদিন বাকী আছে ওরে বাছাধন।
তোরে জেলখানাতে পুরবে যখন, সেদিন তোর ঘনিয়েছে।
৩। জালালপুরের পেয়াদা যে কয়জন,
ধরে নিয়ে দিবে জেলে তারা এমনি বিচক্ষণ।
এ দীন বিনোদ বলে তারা ছয় জন, আমার সর্বস্ব হরে নিয়েছে।
৮৮ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
শোনরে মনা ভাই, গুরু বিনা গতি নাই,
তরিবার এ ঘোর পাথারে রে।
১। (ও মনরে) যদি মায়াজাল এড়াবি, সদা সাধুর সঙ্গ লবি,
হরিনাম লবি পরাণ ভরিয়া রে।
ও সেই নামের বলে পারে যাবি চলে,
ভব পারের ভাবনা থাকবে নারে।
২। (ও মনরে) যার ইশারায় ভবে আলি, তারে তুই ভুলে রলি,
মায়াময় এ ঘোর সংসারে রে।
মায়াময় সংসারে এসে, যারা তোরে ভালবাসে,
শেষের দিনে সঙ্গে যাবে নারে।
৩। (ও মনরে) আমার আমার ব;এ, আত্মতত্ত্ব গেলি ভুলে,
নিত্য বস্তু হারালি ভুল করে রে।
বিনোদ বলে মনা ভাই, আরত উপায় নাই,
গুরু বলে ডাকরে প্রেম সরে রে।
৮৯ নং গান- তালঃ গড়খেমটা
আজগুবি এক কূপের জলে, সাঁতার খেলে রসিক জন।
তারা আগম নিগম তত্ত্ব জেনে, ভেসে বেড়ায় অনুক্ষণ।
১। সে কুপে যত বেরসিক,
আর কত ডুবে মরে পথহারা পথিক।
কত তত্ত্ব জ্ঞানী হয়ে বিদিক, সেই কূপের জলে হয় পতন।
২। কত শত ডুবুরী এলো,
দম্ভ করে কূপের জলে ডুবিয়া মল।
তারা অতল তলে ডুবে গেল, ফিরে না এলো এখন।
৩। সুরসিক যে জনা ছিল,
সেই জলেতে স্নান করিয়া দ্বিগুণ ফল ফলে।
সে যে গুরুর কৃপায় তরে গেল, কেবল বিনোদের নাই সাধন।
৯০ নং গান- তালঃ প্রভাতী
কহ হরিচাঁদ লহ গুরুর নাম প্রভাতে জাগিয়া।
চরণে শরণ লহ, চিত্ত পটে ঐ রূপ আঁকিয়া।
১। মন প্রাণ খুলে, হরি গুরু বলে, ডাক তারে প্রাণ ভরিয়া।
প্রেমের সুরে, ডাক মন তাহারে, নয়নের জলে ভাসিয়া।
২। সে যে দীনবন্ধু, করুণার সিন্ধু, করুণা করিবে আসিয়া।
সপে দিয়ে দেহ মন, ডাক তারে অনুক্ষণ, সুখে জনম যাবে কাটিয়া।
৩। সত্য যুগের হরি, ত্রেতায় ধনুকধারী, দ্বাপরে নন্দের কালিয়া।
নদীয়ার গৌর হরি, ওড়াকান্দি অবতরী, যশোমন্ত নন্দন হইয়া।
৪। শান্তি মার জীবন ধন, ভকত হৃদি রঞ্জন, ডাকো তারে পরাণ খুলিয়া।
ওরে ভোলা মন, হরি গুরুর চরণ, হৃদয় রাখ ধরিয়া।
৫। মন তোর এ ভব সংসার, সকলি অসার, দেখ না মনে ভাবিয়া।
পুত্র পরিজন, কেহ নয় আপন, একা যেতে হবে ছাড়িয়া।
৬। যাহারই ইশারায়, এসেছ এ ধরায়, তারে কেন আছো ভুলিয়া।
দেখিতে ধুলাখেলা, ডুবিয়া যাবে বেলা, অন্ধকারে আসিবে ঘিরিয়া।
৭। প্রভাতে জাগিয়া, হরি গুরু ভাবিয়া, হরি নামে যাও মাতিয়া।
বিনোদ ভেবে কয়, পাবি না সময়, প্রাণ পাখী গেছে উড়িয়া।