পূর্ব ইতিহাস গীতিঃ ২য় অংশ
বারুণী পূর্ব দিনে অভিসার বারুণী
প্রভুর সকাশে যত ম’তো বৈসে
বারুণীর পূর্বদিনে।
যেই যাহা পারে ভকতি অন্তরে
চেষ্টিতে সে আয়োজন।।
কেহ এক মন কেহ মনে মন
দশ বিশ মন কেহ।
যে রূপ যে পারে আয়োজন করে
হৃদেতে বিপুলোৎসাহ।।
দূরবর্তী যত আসিবেন ভক্ত
বিশ্রাম লভিবে তারা।
দরশন পা’ব হৃদয় জুড়া’ব
জুড়াইব আঁখিতারা।।
মতুয়া আসিলে মতুয়া বসিলে
আসিবেন হরিধন।
ভক্তি পুষ্পাঞ্জলি হ’য়ে কুতূহলী
দিলে পাব প্রেমধন।।
যদি ম’তোগণ করেন ভোজন
অভাব নাহিক র’বে।
পুরুষানুক্রমে মত্ত হরি নামে
চিরকাল সুখে যাবে।।
মতুয়া সেবায় সেবে দয়াময়
বহুত প্রমাণ রয়।
ভক্তে দিলে পায় ভক্তে খেলে খায়
নহে উপবাসী যায়।।
এই সে কারণে মতুয়ার গণে
সেবা দিতে করে মন।
শক্তি অনুসারে আয়োজন করে
যাহার যেমন মন।।
থাকে পথ পানে তৃষিত নয়নে
মতুয়া আসে নাকি।
না আইলে ম’তো হয় মর্মাহত
যেন ধন প্রাণ পাখী।।
এমত করিয়ে পথ নিরখিয়ে
আসিলে মতুয়াগণে।
প্রেমানন্দ ভরে অভ্যর্থনা করে
প্রফুল্লিত হয় মনে।।
ভক্তি যুক্ত চিতে ম’তোগণ প্রীতে
হয় অতি যত্নবান।
করে সমাদর হরিষ অন্তর
সুস্থ হয় ম’তো প্রাণ।।
(এক লাইন জ্ঞাপ)
বসি ম’তোগণে প্রফুল্ল জীবনে
শান্তি দূর করে তথা।।
কেহ বা শয়নে কেহ মত্ত গানে
মেতে হরিপ্রেম রসে।
সুস্থ করে দেহ মনেতে উৎসাহ
আনন্দ সাগরে ভাসে।।
ধরিয়ে সুতান করে গুণগান
হরি হরি বলে মুখে।
এমত করিয়ে প্রেমেতে মাতিয়ে
ভাসে প্রেমানন্দ সুখে।।
সারা নিশি থেকে মেতে প্রেম সুখে
সুস্থ করে নিজ প্রাণ।
জাগিয়ে প্রভাতে হরষিত চিতে
পুনঃ করে নাম গান।।
এই মত সেবে ম’তোগণ সবে
বারুণীর পূর্বদিনে।
তাদের বারুণী করে চিন্তামণি
শান্তি দিতে ম’তোগণে।।
যাইতে শ্রীধামে করে হরি নাম
পথিমধ্যে নানা স্থানে।
কাঁদিয়ে ভারতী কহে ম’তো প্রতি
কৃপা কর দীনহীনে।।
মম বাসে গিয়ে পদধূলি দিয়ে
কৃতার্থ করহ মোরে।
এমত করিয়ে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে
ম’তোগণে নেয় ঘরে।।
যেই দ্রব্য থাকে পরম পুলকে
বাহির করিয়ে এনে।
খই চিনি দধি চিড়া মুড়ি আদি
মেখে দেয় জনে জনে।।
এই মত সবে প্রেম উৎসবে
ম’তোগণে করে সেবা।
নাহি অভিমান করে সম্প্রদান
যার দ্রব্য থাকে যেবা।।
বারুণীর দিনে বহু বহু জনে
এই মত করে ভক্তি।
সকাতরে অতি করেছে মিনতি
চাহি ম’তোগণ প্রতি।।
প্রতি বৎসরেতে এমত ভাবেতে
পদছায়া দিও ভাই।
বাড়ি ঘর যত দারা কন্যা সুত
কিংবা সহোদর ভাই।।
তোমাদের হয় দিও পদাশ্রয়
আমাকেও দিও তাই।
না জানি ভজন না জানি পূজন
ভক্তিধন মম নাই।।
আহা কি মধুর মধুর মধুর
হরিচাঁদ লীলা রস
বসিয়ে শ্রীধামে সুনির্মল প্রেমে
বিশ্ব করিলেন বশ।।
কোন দূর দেশে ম’তোগণ বৈসে
দেখা মাত্র এক হয়।
একান্ন একান্ন নহে ভেদ ভিন্ন
মধুর সম্বন্ধ রয়।।
নাহি জানা শুনা তবু যেন চেনা
রয়েছে জীবন ভরি।
দরশন মাত্রে অলক্ষিত সূত্রে
বেঁধে লয় করে ধরি।।
আনন্দ মেলায় যে চলে হেথায়
সেই পায় মহাযত্ন।
না করি বিচার করে সমাদর
জ্ঞান করে মহারত্ন।।
চোর কি ডাকাত নাহি দৃকপাত
সবাকে সমান ভাবে।
করিয়ে যতন করায় ভোজন
মত্ত হয়ে প্রেম ভাবে।।
আনন্দ মেলায় অত্যাশ্চর্য্যময়
মধুর পিরীতি হয়।
নাহি জাতিভেদ অভিন্ন অভেদ
মহালীলা মধুময়।।
সবা ঠাই শুনি বারুণী বারুণী
এসেছে নাকি হে ভাই।
গৃহ কর্ম ছাড়ি বলি হরি হরি
বারুণীতে চল যাই।।
এমত বারুণী ব্যাপিত অবনী
হ’য়েছে প্রেমের মেলা।
চল ওঢ়াকাঁদি প্রভুপদ বন্দী
খেলিব আনন্দ খেলা।।
মোরা দীনহীন হ’বে প্রেমাধীন
পাইব মতুয়া সঙ্গ।
হেরিব তাহারে যেবা নিবে পরে
পুলকিত হবে অঙ্গ।।
এনে প্রেমধন জীবের কারণ
নামের তরণী পুরি।
ওঢ়াকাঁদি ধাম করিয়ে মোকাম
দিল বিতরণ করি।।
চল মনামার আনন্দ বাজার
পারে যেতে থাকে সাধ।
সময় থাকিতে চলিও ত্বরিতে
ভজ গুরুচাঁদ পদ।।
শ্রীআনন্দ মেলা পাগলের খেলা
হেরিবারে সে আনন্দ।
শ্রীতারক দাঁড়ী ভক্তি নিক্তি ধরি
মুচ্ছিদ যে মহানন্দ।।
কি সুখ পাইয়ে রহিলি বসিয়ে
হরিপ্রেমে হলি বাম।
করি মহানন্দ স্বামী মহানন্দ
ভাসাইল ধরাধাম।।
ওরে মনা ভাই আর বেলা নাই
ডুবু ডুবু আয়ু রবি।
বেলা অবসানে গেলে সেই স্থানে
কেমনে সে ধন পাবি।।
আসিলে যামিনী নামের তরণী
আর না মিলিবে তরী।
কুল না পাইবে কাঁদিতে হইবে
আসিতে হইবে ফিরি।।
নাহি পাবে দিন ঘটিবে দুর্দিন
সময় থাকতে চল।
ত্যজিয়ে অনিত্য ভজ বস্তু নিত্য
প্রেমানন্দ হরি বল।।
গুরুচাঁদ বিনে এ তিন ভুবনে
পারে নিতে কেহ নাই।
মজিয়ে শ্রীপদে মনের আহ্লাদে
হরি হরি বল ভাই।।
দেব গণ এসে প্রভুর সকাশে
স্থান মাগে সকাতরে।
মোরা যত দেব শ্রীধামেতে রব
রাখিবেন কৃপা করে।।
ক্রীতদাস হ’ব চরণ সেবিব
বারুণী রক্ষিব মোরা।
বলে হরি হরি সাজিব প্রহরী
করিব এমত ধারা।।
স্বেচ্ছা সেবকেরা না বুঝিবে তারা
মোদের মিলন ভিন্ন।
তাদের হৃদয় পশিয়ে সবায়
হৃদয় করিবে ধন্য।।
বুঝিতে নারিবে স্বগণ ভাবিয়ে
রহিব তাদের সনে।
চিনিতে নারিবে নিজজন ভেবে
অন্তরঙ্গ ভক্তগণে।।
পর দার গণে মাতৃসম জ্ঞানে
যে জন হেরিবে চোখে।
(লাইন জ্ঞাপ)
ওহে দয়াময় দিব পদাশ্রয়
আশ্রিত দেবতাগণে।
আপনি হেথায় আমরা কোথায়
রহিব এই ভুবনে।।
তব ভক্ত যথা মোরা রব তথা
শুনিব মধুর নাম।
আপনি দয়াল মোরা যে কাঙ্গাল
তব প্রেম হ’য়ে বাম।।
যদ্যপি অমর দুঃখ দুর্নিবার
পাইতেছি অহর্নিশি।
নিজ ক্রীতদাস ব’লে পীতবাস
বেঁধে রাখ নিশিদিশি।।
এমত বিনয় দেবতা নিচয়
আশ্রয় মাগিল পদে।
হরি হরি বল শুভোদিনোদিল
ভজ ভজ গুরুচাঁদে।।
ভবি বারুণী বা শ্রীধামে শ্রীহরি মন্দির
এদানির ভক্তগণ শুন সর্বজন।
পৌরাণিক ইতিহাস অপূর্ব কথন।।
শোভনা নামেতে ভক্তা মোল্লাকাঁদি বাস।
অধিক্ষণ থাকিতেন মহাপ্রভু পাশ।।
একদিন নিশিকালে প্রভু হরিচাঁদ।
মিলায় ভাবী বারুণী মনেতে আহ্লাদ।।
মিলেছে চাঁদের মেলা অতি চমৎকার।
শ্রীধামেতে হ’ল এক আনন্দবাজার।।
ভাগ্যগুণে সে শোভনা করে দরশন।
ধেয়ে এল গুরুচাঁদ যেথায় শয়ন।।
গুরুচাঁদ উমাকান্ত ভাই দুইজনে।
শোভনা জাগায় দোঁহে আনন্দিত মনে।।
একবার ছুটে এসে জাগিয়ে দু’ভাই।
মিলেছে আনন্দমেলা তুল্য দিতে নাই।।
স্থানে স্থানে বসিয়েছে দোকানী পশারী।
মেলা দরশনে এল বহু নরনারী।।
এস এস একবার কর দরশন।
হয় নাই হেন লীলা না হবে কখন।।
ত্রস্তচিত্তে দুই ভাই জাগিয়ে তখন।
ধেয়ে গিয়ে সেই মেলা করে দরশন।।
অপরূপ সেই মেলা বর্ণনা অতীত।
গুরুচাঁদ দেখিলেন হইয়ে স্তম্ভিত।।
নানা স্থানে খেলোয়াড়ে খেলে নানা খেলা।
কোথা বা কীর্তন করে যত হরিবোলা।।
জয় ঢাক শিংগা ঝাঁজ বাজে করতাল।
বাজিতেছে নানা বাদ্য ভৈরবী বেতাল।।
ঘোড় দৌড় হয় তাহা হেরি জাতিশ্বর।
মনে মনে হইতেছে বিস্মিত অন্তর।।
আর দেখে আছে যেন শ্রীহরি মন্দির।
বিচিত্র সৌন্দর্য হেরে হইয়ে সুস্থির।।
অনন্ত শয্যায় আছে ক্ষীরোদ বিহারী।
লক্ষ্মীমাতা পদপ্রান্তে মধুর মাধুরী।।
নানাবর্ণ মূর্তি তার মাঝে সুশোভিত।
নেহারিয়ে গুরুচাঁদ হলেন বিস্মিত।।
গুরুচাঁদ মনে মনে চিন্তে অনুক্ষণ।
আমার করিতে হবে এসব স্থাপন।।
পরক্ষণে সেই মেলা অন্তরিত হ’ল।
গুরুচাঁদ সেই ভাবে হৃদয় অংকিল।।
সেইভাবে এ মন্দির করেন স্থাপন।
সেই কথা শুনে এবে যত ভক্তগণ।।
ক্ষীরোদ বিহারী মূর্তি অনন্ত শয্যায়।
ধবল বরণ রূপ অতি শোভাময়।।
ঝলমল করে রূপ কিবা মনোহর।
লক্ষ্মীমাতা পদ প্রান্তে মরি কি বাহার।।
দরশন মাত্রে হয় ভক্তির উদয়।
প্রেমময় ছবিখানি কিবা জ্যোতির্ময়।।
অপরূপ সে মাধুরী নয়নে না ধরে।
বিচিত্র ভাবেতে শোভে শ্রীহরি মন্দিরে।।
আর কত দেবমূর্তি তথা বিদ্যমান।
হেরিলে সবার হয় সুশীতল প্রাণ।।
সেবক মতুয়াগণ নিত্য সেবা করে।
সেবাকালে সেবকের চোখে জল ঝরে।।
ধন্য এই কলিকাল লীলা চমৎকার।
দেবের অসাধ্য হয় কোথা লাগে নর।।
জীবহিতে করে এই অপরূপ কাণ্ড।
ওঢ়াকাঁদি প্রকাশিত অমৃতের ভাণ্ড।।
যত যত মতুয়ারা আইসে শ্রীধাম।
মন্দিরে বাসনা করি পূর্ণ মনস্কাম।।
যেবা যেই ব্যাধিগ্রস্থ হয় যে ভাবেতে।
ব্যাধি দায় আসে গুরুচাঁদের কাছেতে।।
রোগের ব্যবস্থা দিয়ে বলে গুরুচাঁদ।
মন্দিরে বাসনা কর ঘুচিবে বিষাদ।।
শ্রীহরি মন্দিরে বাবা আছে বর্তমান।
ক্ষীরোদের পূর্ণমূর্তি তথা অধিষ্ঠান।।
মন্দিরের প্রাপ্ত হ’তে লহ গিয়ে ধূলী।
রোগীর গাত্রেতে মেখ ব’লে হরি বুলি।।
পাঁচসিকা জরিমানা প্রভু ঠাই দিয়ে।
মানসা করয় হরি মন্দিরেতে গিয়ে।।
বিপুল ভাবেতে কেহ কান্নাকাটি করে।
উপজিলে প্রেম ভক্তি ব্যাধি যায় সেরে।।
এভাবে প্রভুর বাক্য করিয়ে পালন।
রোগমুক্ত হইতেছে বহুজনে জন।।
কেহ বা মানসী করে দিব আমি চিনি।
সোয়াসের সোয়া পোয়া কেহ দেয় আনি।।
যার যেই মন সেই দেয় মনমত।
তাহে হয় আমদানী চিনি অপ্রমিত।।
সব চেয়ে আমদানী বারুণী দিনেতে।
দশ বিশ মন হয় সবে দিতে দিতে।।
বহুলোক সেই স্থানে করে হরিনাম।
ভক্তিভরে মন্দিরেতে করিয়ে প্রণাম।।
মূল কথা যার হয় ভক্তির উদয়।
একান্ত ভাবেতে কৃপা করে দয়াময়।।
মুহূর্তেতে ব্যাধিমুক্ত হয় সেই জনা।
অগ্রভাগে সেই জন দেয় জরিমানা।।
গৃহে থেকে যদি কেহ করেন মানসা।
অচিরাৎ সে জনার পূর্ণ হয় আশা।।
মন্দির মাহাত্ম হয় বর্ণনা অতীত।
বিচরণ প্রকাশ করিল কথঞ্চিত।।
শ্রীমৎ গোপাল বিশ্বাসের বাটী দোলপূর্ণিমায় প্রভুর আগমন
শুন শুন ভক্তগণ অপূর্ব কাহিনী।
ইহার নিগুঢ় তত্ত্ব কিছু নাই জানি।।
তথাপি বাসনা চিতে ইহা লিখিবার।
যাহা লিখে গুরুচাঁদ ব্রহ্ম পরাৎপর।।
শোনা যায় শব্দ মাত্র এ অশোক পূজা।
কোন দেশে অগ্রভাগে কে করিল পূজা।।
জ্ঞান প্রদায়িনী মাতা দেবী সরস্বতী।
তার ঠাই শুনিলাম মধুর ভারতী।।
অশোক বনেতে সীতা ছিলেন যখন।
ধরাধামে এই পূজা প্রচার তখন।।
রাবণের চেড়ী যত রক্ষিত সীতার।
রাবণের বাক্যে মাকে করেন প্রহার।।
ত্রিজটা রাক্ষসী হয় সবার প্রাচীন।
তাহার অধীনে থাকে যত চেড়ী জন।।
রাবণ যখন নাহি আসিত তথায়।
(লাইন জ্ঞাপ)
নানা পুষ্প দিয়ে তারা পুঁজে সীতারাম।।
সীতা বলে কোন পুষ্পে নাহি লয় মন।
সদা চাই কোথা মম রাজীবলোচন।।
রাম বিনে নাহি জানি জীবনে মরণে।
শান্তি নাই হয় প্রাণ তোদের বচনে।।
কিংবা তোদের এ পূজায় আমি তুষ্ট নই।
রাম অদর্শনে আমি সদা দগ্ধ হই।।
চেড়ীগণ ক্ষণে ক্ষণে বুঝাইত হিত।
রাবণ আইলে কার্য করে বিপরীত।।
ক্ষণে ক্ষণে দুঃখ হেরি জগত মাতার।
মরমেতে দুঃখ বড় হইল সবার।।
সেই কালে পুষ্প আনি যত চেড়ীগণ।
ভক্তিভরে পূজা করে সীতার চরণ।।
হা রাম বলিয়ে সীতা পড়িত আছাড়ী।
ধরাধরি করিয়া তুলিত যত চেড়ী।।
রামশোকে মুক্ত বেণী থাকিত সীতার।
ফ্যাচরা চুলে বলিয়া ব্যাখ্যায়ে তাহার।।
রাক্ষসীরা সেই বোল বলিত তখন।
অদ্যপিও সেই বোল ব্যাকত ভুবন।।
এ্যাছরা মাগীলো তোর ফ্যাচরা এ চুল।
তোর তরে এনেছি যে লোহাগড়া ফুল।।
কিন্তু এর মর্ম অর্থ কেহ নহে জানে।
শুধুমাত্র শোনা যায় কথিত বচনে।।
এইভাবে করিত পূজা যত চেড়ীগণ।
আর কহি শুন এক প্রবোধ বচন।।
প্রথমত এই পূজা না করিত তারা।
তাহারা সর্বদা দিত সীতাকে পাহারা।।
আর কর্ম ছিল মাত্র জানকীর প্রতি।
রাবণে ভজিত দিত নানা ভাবে যুক্তি।।
বলিত অযোগ্য বাণী যা নহে সম্ভবে।
সরমা জানিয়ে তাহা বলিতেন সবে।।
কি কর গো চেড়ীগণ কা’কে কি বুঝাও।
কর্মদোষে নিজ মাথা সবে মিলি খাও।।
জগত জননী সীতা গোলক বাসিনী।
রামের ঘরণী রূপে জনক নন্দিনী।।
শতেক রাবণ নহে দাস যোগ্য তাঁর।
আপনি শ্রীরামচন্দ্র ব্রহ্ম পরাৎপর।।
নিস্তার পাইতে সাধ থাকে যদি চিতে।
ফুল বিল্বদল দিয়ে পূজা কর সীতে।।
সরমার বাক্য শুনি যত চেড়ীগণ।
ভক্তিভরে করে পূজা সীতার চরণ।।
সে অবধি চেড়ীগণ পূজিল সীতায়।
সেই হ’তে এই পূজা ব্যক্ত এ ধরায়।।
রাবণের চেড়ীগণ করে এই পূজা।
সন্তুষ্ট হ’লেন তাহে দেবী দশভুজা।।
সে সব লিখিতে গেলে পুঁথি বেড়ে যায়।
সংক্ষেপে লিখিব যা’তে পুঁথি না বাড়য়।।
সে অবধি সীতা দেবী পাইল বিরাম।
ত্রিশিরা চেড়ীকে ল’য়ে জপে রাম নাম।।
ত্রিশিরা করিত পূজা একান্ত মনেতে।
ক্ষণে ক্ষণে রামরূপ হেরে স্বপনেতে।।
কাঁদিয়ে ত্রিশিরা চেড়ী সীতা প্রতি কয়।
কৃপা কি করিবে মোর রাম দয়াময়।।
সীতা দেবী প্রবোধিয়ে বলিত বচন।
রাম ‘সনে তোকে আমি ক’রাব মিলন।।
পুনরায় অবতার হবে যখনেতে।
বৃন্দাবন করিবেন মম সঙ্গী সাথে।।
তুই গিয়ে কুব্জা হ’য়ে রবি মথুরাতে।
সুদাম মালীর ঘরে তনয়া রূপেতে।।
ধনুর্ভংগ যজ্ঞে যাবে প্রভু কৃষ্ণধন।
হেনকালে তব আশা হইবে পূরণ।।
অশোক বনেতে তুই করিলি যে পূজা।
দ্বাপরে হইবি তুই নামেতে কুব্জা।।
সে অবধি এই পূজা হ’ল অধিষ্ঠান।
বাল্মীকের রামায়ণে রয়েছে প্রমাণ।।
বসন্তের কালে পূজা ধরাতে প্রচার।
এ পূজার ফল প্রাপ্ত শুন সরোদ্ধার।।
অনুঢ়া বালিকাগণে এই পূজা করে।
মনোমত স্বামী পায় সীতাদেবী বরে।।
মহামায়া তুষ্ট তাকে এ পূজার তরে।
বাসন্তিক রোগ হ’তে তিনি রক্ষা করে।।
এবে শুন যাহা হয় পাটকেল বাড়ী।
ম’তোগণে করে লীলা মধুর মাধুরী।।
নিবাসী গান্দিয়াসুর শ্রীদুর্গা চরণ।
মহোৎসব করিবারে করিলেন মন।।
ওঢ়াকাঁদি ভাবাশ্রিত ম’তো সম্প্রদায়।
ম’তোগণে নিম্নত্রিল আছে যে ধরায়।।
মহোৎসব পূর্বদিনে মতুয়ার গণ।
একে একে সবে মিলে হইল মিলন।।
স্বামী মহানন্দ আর তারক রসনা।
অক্ষয় ঠাকুর সঙ্গে চলে বহুজনা।।
নিবাসী কেশবপুর ভক্ত হরিপাল।
শ্রীনবীন বসু আর মদন মণ্ডল।।
নিবাসী বড় বাড়িয়া শ্রীরাই চরণ।
গঙ্গাচর্ণা বাসী ভক্ত এল বহুজন।।
শ্রীকার্ত্তিক বৈরাগী প্রেমিক সুজন।
আইলেন সঙ্গে করি আপন নন্দন।।
কোটিশ্বর বিশ্বাস সে বাশুড়িয়ে ঘর।
সঙ্গে আইল নব কুমার সরকার।।
শ্রীঅঙ্কুর রন্ধ হয় মতুয়া সুজন।
বহু ম’তো সঙ্গে তিনি করেন গমন।।
শ্রীবিপিন সাধু এল বলে হরি হরি।
মধুমতী নামিনী ভক্তা এল সঙ্গে করি।।
শ্রীগিরি বাগজা এল শ্রীবিধু মল্লিক।
পঞ্চানন চক্রবর্তী কালিয়া নিবাসী।
আইলেন হরিপাল নিবাসী কুন্দসী।।
শ্রীযজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস শ্রীকুঞ্জ বিশ্বাস।
অনুক্ষণ থাকিতেন মহাপ্রভু পাশ।।
নারিকেলবাড়ী বাসী মতুয়ার দল।
আইলেন প্রবল বেগে ব’লে হরিবল।।
তালতলা বাসী ভক্ত মতুয়ার গণ।
পাগলের দলে সবে হইল মিলন।
ঘোনাপাড়া সুরগ্রাম সে বারখদিয়া।
মতুয়ারগণ সবে মিলিল আসিয়া।।
সিঙ্গাগ্রাম বাসী ভক্ত চলে সর্বজন।
রাউৎখামার বাসী এল ম’তোগণ।।
কৃষ্ণপুর ঘোষলকাঁদি বাসী যত জন।
বালা তীর্থমণিসহ এল সর্বজন।।
হরিবর সরকার মহিমা চরণ।
মহেশ ঠাকুর ভক্ত তরণী সুজন।।
এইমত বহুভক্ত নাম ল’ব কত।
ক্রমে ক্রমে অগণিত ভক্ত সমবেত।।
পাটকেল হয় বাড়ী গোপাল বিশ্বাস।
সব ম’তো সেই গৃহে পরম উল্লাস।।
নাম গান বহুক্ষণ হইল তথায়।
ভীমনাদে হুহুঙ্কার কেহ বা করয়।।
গোপাল বিশ্বাস বলে ম’তোগণ প্রতি।
সবাকার পদে মোর আছয় মিনতি।।
সামাজিক লোক যত দলবদ্ধ হ’য়ে।
পরামর্শ করে তারা বিরোধী সাজিয়ে।।
ম’তোগণে নাহি দিবে সে বাটী যাইতে।
তাড়াইয়ে দিবে ম’তো এদেশ হইতে।।
(লাইন জ্ঞাপ)
কিসের বা হরিধ্বনি শুধু গণ্ডগোল।।
উপযুক্ত শাস্তি দিব মতুয়ার গণে।
জাতিনাশাগণে বধ করিব জীবনে।।
এ দেশে না পাবে ঠাই জাতিনাশাগণ।
বিতাড়িত কর সবে করিয়ে শাসন।।
মেয়ে পুরুষেরা কেন একদলে মিশি।
হৈ হৈ করে কেন বল সারা নিশি।।
জাতিকুল মজাইল যত দুষ্টগণে।
অসহ্য এসব জ্বালা না সহে পরাণে।।
বিরোধীরা এই মতো পরামর্শ করি।
ঠাই ঠাই লাঠি ঠেঙ্গা রাখে ভুরি ভুরি।।
রক্তাক্ত করিয়ে দিবে ম’তোগণ দেহ।
নিশ্চয় শাসিবে তারা নাহিক সন্দেহ।।
এইমত পরামর্শ করেছে সকল।
কি করা কর্তব্য তাহা বলহে পাগল।।
স্বামী মহানন্দ বলে তাহে কিবা ভয়।
মা’র খেয়ে নাম দেব ভাগ্যে যাহা হয়।।
মাধা হ’তে নহে শ্রেষ্ঠ বিরোধীর গণ।
নাম অস্ত্রে করে নিব পাষণ্ড দলন।।
কিবা শক্তি ধরিয়েছে এই যুগে নরে।
ম’তোদের গতিরোধ পারে করিবারে।।
নাম গান কর সবে বিপুল বিক্রমে।
ক্ষান্ত নাহি দিও সবে আজি কোনক্রমে।।
কেহ কিছু না পারিবে করিতে মোদের।
মিছিমিছি ভয় নাহি করিস তাদের।।
মহানন্দ বাক্য শুনি মতুয়ার গণ।
বিপুল বিক্রমে করে নাম সংকীর্তন।।
হাসে কাঁদে নাচে আর বলে হরি হরি।
অনুরাগভরে নাচে বাহু উর্দ্ধ করি।।
কেহ কীর্তনের মাঝে মারিছে উলম্ফ।
মনে হয় অদ্য যেন হয় ভূমিকম্প।।
পাষণ্ডীরা মনে মনে করিল ধারণ।
এই বাটী ম’তোদের আসিতে দিব না।
যে কোন প্রকারে হ’ক বাঁধা দিতে হ’বে।
নিশি ভরি সাবধান হ’য়ে থাক সবে।।
ক্রমান্বয়ে নিশিভোর হইল যখন।
পূজা করিবার চলে বালিকার গণ।।
দেবীর নিকট ডালা ফুলেতে সজ্জিত।
গাহিছে পূজার গীতি সবে মনোনীত।।
চিন্তামণি শ্রীসাবিত্রী আর কালীতারা।
শ্রীসরলা ধনমণি প্রভাতী ও তারা।।
অই অষ্ট বালিকার করে অন্য রীতি।
গাহিছে এ ছড়ার গীত সুমধুর অতি।।
হেনকালে ম’তোগণ হরি হরি বলে।
বাটীর বাহির ক্রমে ক্রমে সকলে।।
স্বামী মহানন্দ আর রসনা তারক।
অগ্রভাগে চলে দোঁহে হৃদয় পুলক।।
বাটীর বাহির হয়ে দেখিবারে পায়।
দোঁহাকার হৃদে হয় ভাবের উদয়।।
বেদীর চৌদিকে ঘিরে বলে হরি হরি।
তারকের দু’নয়নে ঝরে প্রেমবারি।।
ক্রমে সব ম’তোগণ উদিল তথায়।
হরি হরি হরি বলি নাচে উভরায়।।
বেদীর উপরে শোভে বৃক্ষডাল পোতা।
পূর্ব দিনের ফুল কিছু আছে যে গাঁথা।।
স্বামী মহানন্দ সেই ফুল হাতে করি।
তারকের প্রতি বলে শুন সহচরী।।
সখীগণ তুলে ফুল করিয়ে যতন।
মনসুখে কর পূজা মদনমোহন।।
কৃষ্ণ বিনে নাহি জানে জীবন মরণে।
এ ফুল দানিব তাঁর রাতুল চরণে।।
অক্ষয় ঠাকুর এসে ধরে সেই ফুল।
বলে সখী কেন তুমি কহ এত ভুল।।
ব্রজে ছিল তোর সেই প্রাণ বনমালী।
হরিচাঁদ রূপে ওঢ়াকাঁদি করে কেলী।।
আসিয়াছে সেই মানুষ তোদের সহিতে।
চেয়ে দেখ বসিয়েছে বেদীর পরেতে।।
বলিতে বলিতে হয় মহাভাবোদয়।
ভূমিতে পড়িল সবে ক’রে হায় হায়।।
বালিকার গণ সব দিল হুলুধ্বনি।
পুনঃ পুনঃ হুলুধ্বনি দিল তীর্থমণি।।
স্বামী মহানন্দ সেই পুষ্প হাতে করি।
বেদীর উপর দিল ব’লে হরি হরি।।
কাড়াকাড়ি করি ফুল অনেকেই দিল।
মহাবেগে প্রেমবন্যা বহিয়ে চলিল।।
গোপাল বিশ্বাস ছিল বারান্দায় বসি।
আঁখিজলে যাইতেছে বক্ষঃস্থল ভাসি।।
হেনকালে মহানন্দ পাগল আসিয়ে।
হস্ত ধরি গোপালেরে লইল টানিয়ে।।
বেদীর নিকট গিয়ে পড়ে দোঁহে মিলি।
মতুয়ারগণ সবে মাখে পদধূলী।।
অব্যক্ত এ মহাভাব যায় না বর্ণনা।
হরি বলে পড়ে ঢলি তারক রসনা।।
অক্ষয় ঠাকুর পড়ে আর হরিবর।
মহাঝড় উথলিল পড়ে সর্বজন।
মহাবাতে পড়ে কত কদলীর বন।।
গড়াগড়ি ছড়াছড়ি পুষ্প ফেলাফেলি।
ভাবে মগ্ন হ’য়ে সবে করে প্রেমকেলী।।
মুহুর্মুহু হরিধ্বনি আর হুলুধ্বনি।
সে ধ্বনিতে হয় যেন কম্পিত মেদিনী।।
এইমত হ’ল তথা প্রেমের উচ্ছাস।
পাষণ্ডীর গণেরা সবে গণিল তরাস।।
শুধুমাত্র বাক্যছটা সবাকার হয়।
কিন্তু সবে অন্তরেতে পেল মহাভয়।।
এদিকেতে সবে আছে প্রেমেতে মগন।
স্বামী মহানন্দ উঠে দাঁড়ায় তখন।।
মহাভাবময় হৃদি আরক্ত লোচন।
তারকের প্রতি চাহি ব’লেছে বচন।।
আগু হয় ধাও সবে পাষণ্ড দলিতে।
নামাস্ত্র পশিয়ে দিব মেরুদণ্ড ভিতে।।
এত বলি হুঙ্কারিয়ে ছুটিল পাগল।
পিছে পিছে ধায় যত মতুয়ার দল।।
ঘোর রবে হরিনাম করিতে করিতে।
বাটী পরে উঠিলেন মহাবিক্রমেতে।।
ভীমনাদে গর্জে যত মতুয়ার গণ।
পাষণ্ড দলিতে এল শ্রীহরির গণ।।
পাষণ্ডীরা যেন সবে নিস্তব্ধ হইল।
বৈরীভাব তাহাদের লুক্কায়িত হ’ল।।
যা’কে পায় মহানন্দ ধরি দেন কোল।
বলে বাবা একবার বোল হরি বোল।।
সে জন বলিয়ে হরি পড়ে পদতলে।
কেহ কেহ হরি ব’লে ভাসে আঁখিজলে।।
মহাভাব প্রেমবন্যা বহে খরতর।
উথলিয়ে উঠিয়েছে প্রেম সরোবর।।
পাষণ্ডীর গণ সব ভাসিয়ে চলিল।
কেহ কেহ বলে ভাই এবা কি ঘটিল।।
কোথা গেল আস্ফলন কোথা বা বড়াই।
হরিবোল বিনে আর অন্য বোল নাই।।
কেহ বলে কতবার ব’লেছে এমত।
সবাকার দর্প অদ্য হ’য়ে গেল হত।।
কেহ বলে দূরে গেল পাষণ্ডীর জ্বালা।
পাগল করিল আজ সব হরিবোলা।।
ম’তোদের সনে মিশি বলে হরিবোল।
প্রেম সরোবরে উঠে হিল্লোল কল্লোল।।
কেহ গিয়ে ধরিলেন পাগলের পায়।
বলে প্রভু পদে স্থান দাও হে আমায়।।
না জানিয়ে মূল মর্ম অনেক নিন্দেছি।
ওই পদে অপরাধী আমরা হ’য়েছি।।
ওই পদে দাস হ’য়ে রহিব সবাই।
অপরাধ ক্ষমা কর শুনহ গোঁসাই।।
পাষণ্ডীর গণ সবে বলে এই মত।
সবাকার জলধারা বহে অবিরত।।
হেরিয়ে মতুয়াগণ বলে হরি হরি।
কেহ বা নেচেছে ক্ষণে উর্দ্ধবাহু করি।।
কেহ কেহ বীর দাপে মারিতেছে লম্ফ।
মনে হয় অদ্য যেন হয় ভূমিকম্প।।
পাষণ্ডীর দশা হেরি ম’তোর উল্লাস।
সংকীর্তন মাঝে বহে প্রেমের বাতাস।।
ঘোর রবে হইতেছে নাম সংকীর্তন।
শুন্যে থেকে হরিবলে যত দেবগণ।।
পাষণ্ড দলন হেরি ম’তোর আনন্দ।
লম্ফ দিয়ে ফেরে সদা স্বামী মহানন্দ।।
নরনারী যত ছিল বাল্য বৃদ্ধ আদি।
ভূমেতে পড়িল যত নাহিক অবধি।।
মহাবাতে পড়ে যথা কদলীর বন।
সেই মত পুনঃ পুনঃ হ’তেছে পতন।।
উত্তাল তরঙ্গ বহে প্রেম সরোবরে।
যে যেখানে আছে হরি বলে উচ্চৈঃস্বরে।।
ঘাটে পথে যেখানে যে ক’রেছে যে কাম।
সবাকার মুখেতে মধুর হরিনাম।।
নামময় সর্ব ঠাই হ’ল সেই স্থান।
এইমত বহিতেছে প্রেমের তুফান।।
প্রায় দিন গত হয় নাম সংকীর্তনে।
রন্ধন করিল সবে অতীব যতনে।।
অপরাহ্ণ কালে সবে নাম ক্ষান্ত করি।
ভোজনে বসিল সবে ব’লে হরি হরি।।
হরিধ্বনি করি কেহ ভোজন করয়।
কেহ প্রেমানন্দে ভীর দিল উভরায়।।
জয় জয় শ্রী শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি জয়।
জয় জয় হরিগুরুচাঁদ জয় জয়।।
জয় জয় মহানন্দ পাগলের জয়।
পাষণ্ড দলন করে ব’লে জয় জয়।।
জয় শ্রীতারক চন্দ্র হরিপাল জয়।
জয় জয় শ্রীধামের ভক্তগণ জয়।।
সবাকার পদে যেন মম মতি রয়।
(লাইন জ্ঞাপ)
জয় জয় ম’তোগণ প্রেম মহাজন।
হরিনাম অস্ত্রে করে পাষণ্ড দলন।।
পাষণ্ড দলন তথা এভাবে হইল।
হরিগুরু প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।
তালতলা খাল হ’তে প্রভুর টাকা আদায়
এবে শুন অত্যাশ্চর্য কাণ্ড এক হয়।
করিলেন মহাপ্রভু সে তালতলায়।।
তালতলা করে বাস প্রহ্লাদ বিশ্বাস।
সামাজিক লোক সেই সুখে করে বাস।।
মাতৃশ্রাদ্ধ উপলক্ষে দিতে নিমন্ত্রণ।
বিপুল ভাবেতে সব করে আয়োজন।।
সেই স্থানে নিতে বাঞ্ছা ভকতের প্রাণে।
তালতলা বাসী ভক্ত এল চারিজনে।।
নিত্যানন্দ বিশ্বাস শ্রীযাদব বিশ্বাস।
আর এল বিচরণ শ্রীপূর্ণ বিশ্বাস।।
ঠাকুরের অন্তরঙ্গ ভক্ত চারিজন।
প্রভুপদে প্রণমিল ভক্তিযুক্ত মন।।
সবে মিলে সবিনয়ে নিবেদন কৈল।
মহাপ্রভু গুরুচাঁদ সবাকে বলিল।।
সেন্সের কাগজানিতে খরচা লেগেছে।
দ্বিজ নমশূদ্র জাতি তাহাতে লিখেছে।।
পার যদি সেই টাকা করিতে অর্পণ।
তবে তোমাদের সনে করিব গমন।।
প্রভুর বাক্যেতে সবে স্বীকার করিল।
ভক্তগণ সঙ্গে প্রভু তালতলা এল।।
উপনীত শ্রীযাদব বিশ্বাস ভবনে।
প্রহ্লাদ বিশ্বাস তাহা শুনিল শ্রবণে।।
প্রভুর চরণ বন্দী কহে মৃদু ভাষে।
কৃপা করি যেতে হবে অধীনের বাসে।।
কৃপা করি মহাপ্রভু স্বীকার করিল।
ভক্তগণ সঙ্গে প্রভু তথায় চলিল।।
কানাই বিশ্বাস হয় এই বংশধর।
সেই বাটী মহাপ্রভু করে আগুসার।।
ভকত মণ্ডলী সবে উপনীত হ’ল।
সেবা অন্তে মহাপ্রভু সভায় চলিল।।
হ’য়েছে বিচিত্র শোভা লোক সঙ্ঘটন।
তার মাঝে মহাপ্রভু করেন গমন।।
উত্তম আসন পরে বৈসে দয়াময়।
নক্ষত্র মণ্ডলে পূর্ণ চাঁদের উদয়।।
দেবগণ মধ্যে যথা শোভিত দেবেন্দ্র।
সভামাঝে ততোধিক শোভে গুরুচন্দ্র।।
সেন্সর কাগজে হেতু আলোচনা হয়।
দিগম্বর কীর্তনিয়া পড়িয়া শুনায়।।
আর বলে এই টাকা দিতে এবে হয়।
আমাদের লাগি প্রভু এসব করয়।।
সুপ্রভাত হয়েছে অন্ধকার নিশি।
কৃপা ক’রে করে দূর সব তামমসী।।
বিস্তারিয়ে সব কথা সভাতে জানায়।
নমকুল করে ধন্য প্রভু দয়াময়।।
এইভাবে আলোচনা করে বহুজনে।
কিছু টাকা নাহি দিল পরামর্শ শুনে।।
মহাপ্রভু সভা ছাড়ি নৌকায় চলিল।
মতুয়ারগণ তাহে প্রমাদ গণিল।।
পদে ধরি আনিলেন গদাই বিশ্বাস।
বসাইল যত্ন করি আপন আবাস।।
প্রহ্লাদের প্রতি বলে টাকা দিতে হয়।
স্বজাতি উদ্ধার কল্পে চাহে দয়াময়।।
এই অর্থ দিলে তব হবে পরমার্থ।
যদি নাহি দাও তবে ঘটিবে অনর্থ।।
এত শুনি পঞ্চটঙ্কা প্রভুকে অর্পিল।
এই টাকা মহাপ্রভু হস্তে না লইল।।
টাকা ফেলি মহাপ্রভু নৌকাতে পশিয়ে।
তালতলা খাল প্রতি বলেছে রুষিয়ে।।
টাকা ফেলা ওরে খাল যদি ভাল চাস।
নহে অদ্য হ’তে তোর হ’বে সর্বনাশ।।
টাকা দিলে এই ঘাট পবিত্র করিব।
নহে হ’বে এই ঘাট কলঙ্কিত তব।।
যেইজন তোর বারি পরশ করিবে।
চিরদিন সেই নর অপবিত্র র’বে।।
টাকা দিলে যেইজন করিবেক স্নান।
অনায়াসে হ’বে তার সর্বত্র কল্যাণ।।
এইমত উচ্চ বাক্য বলি বার বার।
খালের জলেতে প্রভু করেন প্রহার।।
দু’কুল হইল তাহে লোকারণ্যময়।
তুফান উঠিয়ে তাহে কুল ভেঙ্গে যায়।।
বিষম তরঙ্গ বেড়ে কুল ভেঙ্গে চলে।
হুহু শব্দ শুনা যায় ত্রাসিত সকলে।।
প্রলয়কালেতে যথা ঘটে বিপরীত।
সেইমত কুল ভাঙ্গে সবে চমকিত।।
বিপক্ষের গণ সবে গণিল হুতাশ।
নাহি আর টিটকারি নাহি উপহাস।।
মহেশ ব্যাপারী বলে ও রূপচাঁদ।
টাকা এনে বাপধন ঘুচাও প্রমাদ।।
প্রসন্নকে সঙ্গে করি রূপচাঁদ ধায়।
ম’তোদের গৃহ হ’তে সে টাকা যোগায়।।
অবশিষ্ট যাহা ছিল দেখিয়ে মহেশ।
স্নেহভরে রূপচাঁদ করিল আদেশ।।
অবশিষ্ট টাকা এনে দাও বাপ তুমি।
জেনে রেখ তব টাকা যোগাইব আমি।।
এত শুনি রূপচাঁদ নিজ গৃহ হ’তে।
আনিয়ে দিলেন টাকা অতি হৃষ্ট চিতে।।
সেই টাকা প্রভু পদে করিল অর্পণ।
তরঙ্গ থামিল চেয়ে দেখে সর্বজন।।
প্রভু বলে কর্মফল খণ্ডন না যায়।
যে যাহা করিবে তাহা ফলিবে নিশ্চয়।।
অদ্য হ’তে ঘাট তুই হইলি পবিত্র।
যে জন করিবে স্নান ঘুচিবে কলত্র।।
আর বলি ধন্য হলি এই টাকা দানে।
গঙ্গাস্নান সম ফল ফলিবে এখানে।।
প্রভু বাক্যে ম’তোদের আনন্দ বাড়িল।
পাষণ্ডীর শিরে যেন বজর পড়িল।।
অজ্ঞান আঁধারে ডুবে রবে যারা যারা।
এই তত্ত্ব বুঝিতে না পারিবে তাহারা।।
এ বড় মধুর লীলা অপূর্ব কৌতুক।
যে বুঝিবে সেইজন পাবে মহাসুখ।।
এইভাবে তালতলা খালে টাকা দিল।
হরি-গুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল।।