মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ১~১০

গান নং- ১
যে মাটিতে দাড়িয়ে বৃক্ষ, তারে করে অস্বীকার।
বৃক্ষ লয়ে কাড়াকাড়ি, ডালপালা কর অধিকার।
 
ওই পাতাটি পোকায় খাওয়া, ওটি এই বৃক্ষের নয়।
ওই ডালটি ছায়া দিল, ডালটি আমার হয় পরিচয়।
যেটা ভাল সেইটা নিয়ে দ্বন্দ্ব করি আমার আমার।
 
মূল রয়েছে মাটির বক্ষে, সেথায় কর অনুসন্ধান।
বৃক্ষ মূলে জল সিঞ্চন, ডালপালাতে সঞ্চারে প্রাণ।
তাই বলি ভাই আমাতে আর আমি নাই
তবুও আমার আমার বলে কাদিয়ে বেড়াই।
বৃন্দাবনের এই বেদনা, বুঝিতে কেউ পারে না,
নির্ভারেতে সপিল যে, দুঃখ ব্যথা পাপভার।
 
গান নং- ২
ও, দয়াময়! দয়া কর।
(মোর) সুখ-দুঃখ হরণ করে, কৃপার ভাজন কর।
 
এ দেহ পল্লবে, জীবন বল্লভ, প্রেমসুধা বারি ঢালো।
শীতল হউক, তাপিত পরাণ, ঘুচাও আঁধার কালো।
এদেহ মাঝে বৈরী যারা, তার প্রতি দণ্ড ধর।
 
তোমারে ভুলিয়ে, কত কাল গেল, পাইতে বাসনা জাগে,
কি বাসনা তব, বুঝিয়ে না পাই, অন্তর পুরোভাগে।
তোমার বাসনা মত, তুমি যা করার তা কর।
 
যা হয় হোক তা, ভাবিনে তা বলে, শ্রীচরণে রেখ মোরে, 
করম ধরম, সব সমর্পণ, করিব আজ তোমারে।
বৃন্দাবন ভাগ্য হত, না বোঝে সংসার সার।
 
গান নং- ৩
কলির কল্মুষ নাশিবারে অন্ধকারে চন্দ্রদয়।
নাম-প্রেমের বন্যা উঠে, ডুবু তরী ভেসে রয়।
 
মারণ অসি ছেড়ে দিয়ে, নামাস্ত্রে দলন করে,
হিংসা বৃক্ষের গোড়া কেটে, প্রেমতে জড়িয়ে ধরে।
পরের জন্য কেঁদে ফেরে, মুখে হাসি ভাবময়।
 
শ্রীরাধিকার প্রেমের ধারা, নিয়ে এল গৌর হরি,
(রাধার) ভাবকান্তি বিলাস ধরে, কেঁদে ভাসায় ব্রজপুরী।
বিষ্ণুপ্রিয়ার চোখে জল, কাঁদিয়ে গেল শচী মায়।
 
নিয়ে সন্ন্যাসীর বৈভব, ত্যাগ করিয়ে গার্হস্থ্য ধর্ম,
জগবাসীকে পাগল করে, না জানালো সংসার মর্ম।
(এবার) উদ্ধারিতে সংসার জীবে, ওড়াকান্দি হল উদয়।
 
সত্যবাক্য, পবিত্রতা, আর সচ্চরিত্র সবার,
এক নারী, এক পুরুষ, ব্রহ্মচারী গণ্য ধরাপর।
পর নারী মাতৃ তুল্য, পর পতি স্পর্শ না করয়।
 
রাগাত্মিকা রাগধর্ম, বৃন্দাবনে গোপীর ভজন,
অকামনা প্রেম বাঞ্ছা করে, ইষ্ট প্রতি সুখ আকিঞ্চন।
ওড়াকান্দির পাগল যারা, সেই প্রেমেতে মত্ত রয়।
 
তৃণাদপী শ্লোকের বুঝে মর্ম, পাগল বেশে বেড়ায় ঘুরে,
মনেতে যদি মন মিলে, বক্ষে বক্ষ জড়িয়ে ধরে।
পর হিতে কর্ম যাচে, মান-অপমানে নাহি ভয়।
 
হরি প্রেমের বন্যা উঠে, পূর্ববঙ্গ ভাসাইল, 
বন্যা জলে বাতাস লেগে, পাপীতাপী ডুবায়ে নিল।
প্রেম সুধা মকরন্দ, বিলাইল হরিশ্চন্দ্র, 
তারক চাঁদের কৃপা বিনে, বৃন্দাবন বঞ্চিত রয়।
 
গান নং- ৪
সংশয় থাকলে পাবি নারে, পথের সন্ধান,
লক্ষ্য ঠিক কর স্থির, নিরিখ ধরে হও আগুয়ান।
 
ভাবছ তুমি চলছ সঠিক পথে, 
চলতে গিয়ে দো-মনা হয় কি মতে,
চেনা পথে হয় কিরে ভুল, চেনা নয় তা শুধুই অনুমান।
 
চেনা পথে চলতে যদি বাঁধা আসে, 
পথচ্যুত হবে না তুমি দৃঢ় বিশ্বাসে,
পথ-বিপথের দ্বন্দ্বে ভুগবে, যদি না জান সঠিক সন্ধান।
 
যে জন জানে গন্তব্যের খবর,
পথ ভুলার কোন নাই অবসর,
বৃন্দাবনের পথ বিচ্যুতি, ঘটায় কেবল দুর ব্যবধান।
 
গান নং- ৫
এ কেমন সমাজ বিধি এল ভাই,
টাকাওয়ালার কদর বেশী, কর্মী-জ্ঞানীর খবর নাই।
 
টাকা দিলে অপরাধীর হয় না কোন পাপ,
ঘুষখোর কিংবা খুনি, অনায়াসে পায় মাপ।
টাকা না থাকলে পরে, আইনের প্যাঁচে পড়ে, গরীবের আর রক্ষা নাই।
 
টাকায় করে মান নির্ধারণ, টাকায় করে আসন বন্টন, 
আমজনতা সবাই গায়, গায় টাকাওয়ালার জয়গান।
দামী দামী বসন ভুষণ, চরিত্র তোমার করে নির্ধারণ, সরলতার কোন মূল্য নাই।
 
টাকায় করে আপনকে পর, টাকায় করে পরকে আপন,
টাকার গরমে গরম যারা, তারা সবাই আত্মীয়স্বজন।
সততার মূল্য মেনে, যারা চলে সারাজীবনে, সুখ ভাগ্য তাদের নাই।
 
কে কত টাকা করল দান, তার তত পুণ্যের পরিমাণ,
টাকা দিলে ভালো লোক, সমাজের সে মহাজন।
টাকার উৎস করে সন্ধান, কেউ করে না কোন দান, বেশী পেলে বেশী খাই।
 
চাওয়া পাওয়ার নাই গণনা, ভবিষ্যতেকে দিতে সান্তনা, 
সবাই করি অপকর্ম, দুর্নীতির আনাগোনা।
বৃন্দাবনের এই ধারণা, ভালো থাকার মানে হয় না, বিবেককে কি করে বোঝাই।
 
গান নং- ৬
জাগো, জাগোরে নমশূদ্র জাতি।
তোমরা যদি না জাগো, কে জ্বালাবে এই আঁধার ঘরে বাতি।
 
শত্রু তোমার চারিপাশে, শত্রু তোমার ঘরে বাইরে,
সমাজবিধি শত্রু তোমার, শত্রু হল আপন ভাইরে।
সূক্ষ্ম দৃষ্টি বিচার জ্ঞানে, বুঝতে হবে তাহার মানে,
ভাল মন্দ মনে মনে, বিচার কর দিবারাতি।
 
বন্ধু বেশে শত্রু আসে, মিষ্ট মিষ্ট রসাভাষে,
সে যেন পরম বন্ধু, নিত্য নিত্য তোমায় তোষে।
মিষ্টি কথায় যদি ভোল, হবে তবে সর্বনাশ,
তুমি করবে নিশ্চিন্তে বাস, হরে লবে তোমার খ্যাতি।
 
ভিন্ন মতের ভিন্ন ধারা, একমতে না আসে তারা, 
যুক্তি দেখায় কত শত, নিজের মতকে বড় করা।
সত্য মতের ধার ধারে না, হেয় করতে কাউকে ছাড়ে না,
মতের সাথে মত না মিললে, মারতে পারে মাথায় লাথি।
 
ছেড়ে দিয়ে তর্ক আলাপন, এক হরিতে সব সমর্পণ, 
যে যা বলে বলুক তারা, মতুয়াদর্শে হওরে মগন।
শিক্ষা দীক্ষায় হয়ে দক্ষ, নমঃজাতির মান রক্ষ, 
বৃন্দাবনের বিদরে বক্ষ, আসে নারে শুভ তিথি।
 
গান নং- ৭
চিরদিন এমনই হয়।
অচেনাকে চিনে ফিরি, চেনা মানুষ অচেনা রয়।
 
সাধ্য সাধন করে কত, করিতে চাই মনের মত,
দু'দিন পরে ভুল ভাঙ্গেরে, যা ভেবেছি তা নয়।
 
দাবী কর চেন যারে, কতটুকু জান তারে,
অসীম জানা সসীম করে রে, মনেতে দুঃখেরই সঞ্চয়।
 
মানুষ চেনা নয়ত সোজা, অসময়ে যায়গো বোঝা, 
সেজন তোর নয় আপনাররে, যার মন বিষময়।
 
যদি মানুষ চিনতে চাও, সূক্ষ্ম দৃষ্টি চালান দাও, 
নিজের মনে থাকলে গলদ, অন্যরে কি চেনা যায়।
 
জান আপন ভাবধারা, নিজেরে নিজে চিনতে পারা, 
নিজের চলন বলন বোঝরে, জগৎ তবে হয় চেনাময়।
 
না চিনে আপন জনে, বৃন্দাবন রয় অরণ্যে, 
বসুধৈব কুটুম্বকম, হওরে সেই ভাবময়।
 
গান নং- ৮
সখীরে, রূপের হাটের বেচাকেনা, করবি যদি চল।
স্বরূপ রূপের হাট মিলেছে, ওড়াকান্দি চল।
মুখে হরি হরি বলে, মত্ত দুই বাহু তুলে,
সবাই মিলে নেচে গেয়ে, বিজয় নিশান উড়িয়ে চল।
 
শ্রীহরিচাঁদের রূপের কিরণ, নয়ন কোণে যার লেগেছে,
আত্মরূপ ভুলে সেই, প্রেমরূপে মেতে উঠেছে।
তারা, জেনে তত্ত্ব আছে মত্ত, (করে) রূপের হাটে চলাচল।
 
রূপের এক ছটা লেগে, হীরামনের মন হরিল,
সংসারে তাই দিয়ে মাত্রা, পাগল রূপের বেশ ধরিল।
মৃত্যুঞ্জয়, দশরথ, গোলক, তাই নাম করেছে সম্বল।
 
ব্রজনাথ পেয়ে হরি, ত্যাগ করিল গুরুর বাড়ি, 
গুরু শিষ্যের জারিজুরি, জানাইল বরাবরি।
বিশ্বনাথের প্রাণ হরিল, নাটুয়ার নাই কোন ছল।
 
যারা গেল ওড়াকান্দি, হরিচাঁদে নিল বান্ধি, 
অশ্বিনীর হরি সঙ্গীত শুনে, মতুয়া রয় নিরিখ বান্ধি।
তারক চাঁদের কৃপা বর্ষে, তবু বৃন্দাবনের নাই মনোবল।
 
গান নং- ৯
হরি এল, হরি এল, হরি এল
আঁধার ঘরে জ্বেলে আলো, অন্নপূর্ণা মায়ের কোলে এল।
আনন্দে জগৎ ভাসিল, পথহারা পথের দিশা পেল।
 
ক্ষীরোদসাগরের কুলে, অনন্ত শয়নে ছিলে, 
বন্দীজনের করুণ ডাকে, নয়ন জলে ঘুম ভাঙ্গিলে।
তাই হরিদাস রূপে হরি, হরিচাঁদ নামে শিক্ষা দিল।
 
অস্পৃশ্যতার আতুর ঘরে, তোমায় রেখেছিল বন্দি করে, 
বাপে ছেলে অশুদ্ধ হয়, ছোঁয়াছুঁয়ি লাগলে পরে।
তুমি ভেঙ্গে দিলে বন্দিদশা, দীনজনে মুক্তি পেল।
 
জাত গৌরবের ছায়াতলে, তোমায় আমায় নীচে ফেলে,
নিয়ে যারা উচ্চ আসন, কপট ব্রহ্মত্ব জ্ঞান ধরিলে।
তাদের করতে প্রতিরোধ, মতুয়া ভিন্ন সম্প্রদায় হল।
 
হরিনামের হুঙ্কার দিয়ে, লাল সাদার নিশান নিয়ে,
দলে দলে তাই ত চলে, দাবী জানায় ওড়াকান্দি গিয়ে।
পতিতের ঘরে এসে, পতিত পাবন নাম হইল।
 
দিয়ে ধর্মে অধিকার, কর্মক্ষেত্রে চারণ সবার,
ইহকাল আর পরকাল, কর্মগুণে হবে বিচার।
সত্যবাক্য পবিত্রতা, জীবনের মূল মন্ত্র হল।
 
হীরামন, দশরথ, অশ্বিনী আর যত গোঁসাই,
নামে প্রেমে মত্ত হয়ে হরি বলে ছাড়ে হাই।
বৃন্দাবনের দিন বিফলে গেল, তারক চাঁদের দয়া নাহি পেল।
 
গান নং- ১০
তোমারে না আপন ভাবি।
তুমি যা দিয়েছো সবই আপন, ধন ঐশ্বর্য মনের মতন, 
শুধু তোমারে না করলেম যতন, আমার বসল পাটে জীবন রবি।
 
তোমার দেওয়া দেহ ভূমে, আমি জমিদার,
তোমার গড়া বাণিজ্যেতে, করি কারবার।
আমি, কেবল বলি আমার আমার, দিন গেল তাই ভাবনা ভাবি।
 
তুমি দিলে অতুল মান, তাই তোমারে করি অপমান, 
ব্যর্থ হলে কোন কাজে, তোমার 'পরে করি অভিমান।
সুখ শয়নে আমার আমার, দুঃখ পেলে তোমায় ভাবি।
 
জগতের সবই তোমার, তোমার সব করে অধিকার, 
দিবানিশি প্রয়াস করি, শান্তিতে নিজে চলিবার।
এই আমিত্ববোধ তোমারই দান, তাই তোমার না আঁকি ছবি।
 
তুমি খেড়ুয়া আমরা পুতুল, ভুল শুদ্ধ তোমার অনুকুল, 
আমিত্ব আর স্বামীত্ব বোধ, সব আমাদের বুঝার ভুল।
অন্ধকারে তাকিয়ে থাকি, জ্বলে যদি জীবন রবি।
 
অগ্রগণ্য যারা ছিল, তারা সবে পথ দেখাইল, 
ভুল করে সেই পথেতে, চরণ আমার না চলিল।
তারক চাঁদ তাই বলছে, বৃন্দাবন তুই নীরব হবি।
 

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free