মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ০৩১-০৪৫

৩১ নং গান- তালঃ একতালা

মন পাখী তুই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসারে হরি বলে,

তুই বাজে কথায় দিন কাটালি, সাধের জনম যায়রে চলে।

১।       যার ইশারায় ভবে আলি, তাও দেখলি না ভেবে,

গোনা দিন ফুরায়ে গেলে, আর কি সময় হবে।

যে দিন শমন দুতে লয়ে যাবে, ছাড়বে নারে ধরবে চুলে।

২।       এই সাধের মানব খাঁচায় খেলছিস কত খেলা,

খোয়ালি তোর সাধের জনম করে অবহেলা।

শেষে হবে না তোর হরি বলা, আয়ু সূর্য ডুবে গেলে।

৩।      আপন হারা হয়ে শুধু করে গেলি ভুল,

কেমন করে পাবিরে তার চরণ রাতুল।

ও তুই ভুল করিয়া হারালি মূল, সে ভুল সারবে না আর কোন কালে।

৪।       বিনোদ বলে পাখীরে তুই কবে এমন হবি,

পরাণ ভরে মধুর নামটি আমাকে শোনাবি।

আমায় সাথের সাথী করে নিবি, যে দিন ভব পারে যাবি চলে।

 

৩২ নং গান- তালঃ একতালা

ভুল করেছি তোমায় ভুলে ওগো দয়াময়

                             সে ভুল ভেঙ্গে দাও আমায়

ভুলের দেশে চলছি ভেসে সে কোন অজানায়।

১।       তুমি হরি জগতের সার, সে জ্ঞান হল না আমার,

                             ভবে আমি দুরাচার।

মায়াময় সংসারে এসে, যারা আমায় ভালবাসে,

                             সে কেবল স্বার্থের বিনিময়।

২।       পরকে আমি আপন ভাবিয়া, দিলাম আত্ম বিলাইয়া,

                             শুধু মায়ায় ভুলিয়া।

তোমার দেওয়া পরম রতন, একদিনও করলেম না যতন,

                             সে রতন খোয়ালাম হেলায়।

৩।      হলেম আমি বড় অভাজন, আমার ফিরায়ে দেও মন,

                             করব তোমারই ভজন।

এ দীন বিনোদ কেঁদে বলে, দেখা দিও অন্তিম কালে,

                             দেখা দিও ভব পারঘাটায়।

 

৩৩ নং গান- তালঃ একতালা

হৃদয় পিঞ্জরে বসি মনুয়া পাখীরে মধুর হরিগুণ গাও।

ভয় ভাবনা যম যাতনা যদি মন এড়াও।

১।       শুন বলি ও মন পাখীয়া, তোমায় বোঝাই কি দিয়া,

                             সোনার খাঁচায় বসিয়া।

বিষয় বাসনায় ভুলি, ভুলে রলি হরি বুলি,

                             শুধু খাঁচায় বসে নিত্য খাবার খাও।

২।       সুখ বিলাসে আনন্দের মেলায়, সাধের জনম কেটে যায়,

                             বসে দেহ পিঞ্জিরায়।

ছেড়ে দিয়ে আলস্যতা, কহ কহ কৃষ্ণ কথা,

                             এবার যদি গুরুর চরণ পেতে চাও।

৩।      গুরুর নামে গাঁথিয়া মালা, জুড়াও এবার ভবের জ্বালা,

                             নিত্য জপ সেই মালা।

বিনোদ বলে ও মন পাখী, কোন দীন যেন দিবে ফাঁকি,

                             কোন দীন যেন পিঞ্জর ছেড়ে যাও।

 

৩৪ নং গান- তালঃ একতালা

গোনা দিন ফুরায়ে এলো, পরবাসে থাকবি কত কাল,

দেশের মানুষ দেশে যারে, কেটে দিয়ে মায়া জাল।

১।       এসেছ মন দূর দেশে, কি করবি দিনের শেষে, সেদিন হারাবি সম্বল।

ও তুই পারঘাটাতে কাঁদবি বসে, সেদিন বাঁধবে এসে মহাকাল।

২।       এ দেশে তোর নাই দরদী, সকলি তোর পথের বাদী, সকলই জঞ্জাল।

এখনও তোর সময় আছে, নিত্যের দেশে একবার চল।

৩।      বিনোদ বলে ও মন ভোলা, ছেড়ে দিয়ে মায়ার খেলা, হরির নাম কর সম্বল।

তুই নামের বলে যাবি চলে, প্রাপ্ত হবি মোক্ষ ফল।

 

৩৫ নং গান- তালঃ একতালা

জয় কর এক লক্ষ্য বাণে,

জয় কর নিরিখ ধর, ঐ কথা করিয়া মনে।

১।       কুণ্ডলিনী ধনুকখানি, ধররে সুসন্ধানে,

দিয়ে দমের দড়ি কড়াকড়ি, বাঁধরে ধনুকের গুণে।

২।       ষড়বিংশ চক্র ঘোরে মধ্যাহ্ন গগনে,

আছে তার উপরে পরমহংস, বিধ তারে ব্রহ্মবাণে।

৩।      অট্টহাসি করবে এসে দস্যু ছয়জন,

অধম বিনোদ বলে কভু ভুলে, চাসনারে তুই ওদের পানে।

 

৩৬ নং গান- তালঃ ঠুংরী

হারে ও পারের মাঝি রে, তুমি আর কত কাঁদাবে আমারে

আমি এ পারে বসে কাঁদি দয়াল, তুমি থাক ওপারে।

১।       জন্মাবধি মায়া নদী সম্মুখের পরে,

আমি ভাবি নিরবধি, এ মায়া নদী কেমন করে যাই পারে।

২।       তোমারই আদেশে আসিয়া বিদেশে,

                             ঘর বাঁধিলাম মায়াপুরে।

আমার এ ঘরে যা ছিল চোরেতে হরিল,

                             দেউল হয়ে বেড়াই ঘুরে।

৩।      ষোল আনা দিয়ে দিয়েছ পাঠায়ে,

                             ব্যাপারে করিবার তরে।

আমার ব্যাপার না হইল চালান ফুরাল,

                             ছয় জনার পাল্লায় পড়ে।

৪।       অসময় দেখিয়া গিয়াছে ছাড়িয়া,

                             আপন কইত যারা মোরে।

দয়াল তুমি বিনা আর কেহ নাই আমার,

                             বিনোদ ভাসে আঁখি নীরে।

 

৩৭ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

আপন ভেবে রইলি ভুলে মোহের ইশারায়।

যে পাষাণ মন আপন বলতে তোর যে কিছু নয়।

দুনিয়াতে দেখ না চেয়ে কে কতদিন রয়।

১।       পুত্র কন্যার মায়ায় ভুলে খেলবি কতকাল,

দিনের দিনে ঘিরে এলো, তোর দারুণ মায়া জাল।

আপন আপন বলিস যারে সে ত আপন নয়,

হবে শেষ কালে তোর যে জন আপন সে রল কোথায়।

২।       বিষয় পশার ঘর বাড়ী তোর দুদিনের তরে,

বেহুশ হয়ে রইলি ভুলে কি বলব তোরে।

বুঝলি নারে বেহুশারী, ও তোর দিন ফুরায়ে যায়,

দিনের শেষে অন্ধকারে করবি কিরে হায় হায়।

৩।      আপন ভেবে পরকে রে তুই করলি আত্মদান,

গুরুকে তুই চিনলি নারে ওরে মন পাষাণ।

বিনোদ বলে দিন থাকিতে ভজ গুরুর পায়,

সে যে নিদান সময় পারের বেলায় পার করিয়া দেয়।

 

৩৮ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

গুরুচাঁদ পাগলচাঁদ ভব নদী কেমনে হব পার,

কাম নদীতে বান ডাকিয়ে ছুটলরে ত্রিবেণীর ধার।

১।       নদীর তরঙ্গ ভারি, আতঙ্কে পরাণে মরি,

কেমন করে ধরি পাড়ি, না দেখি কিনার।

দাড়ি মাঝি যারা ছিল, তারা তরী ডুবাইল,

মাল খোলের মাল হরে নিল, উপায় ত দেখি না আর।

২।       নৌকায় আমার হয় ডাকাতি, এই ভাবে নিত্য রাতি,

সাথী নাই মোর পাড়াপড়শি, রক্ষা করবার।

একজনের আদেশ পেয়ে, দশজন চলে ধেয়ে,

কেমন করে থাকি সয়ে, মদন হয় দলের সরদার।

৩।      চলছে তরী ভাটির টানে, ভাসতে ভাসতে কাম তুফানে,

কেমন করে যাই উজানে, ওহে করুণা সাগর।

কার্তিকের জীর্ণ তরী, দয়াল গুরু এসে হও কাণ্ডারী,

কাম সাগরে ডুবল তরী, কলঙ্ক হবে তোমার।

 

৩৯ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ভাটির গাঙ্গে উজান বেয়ে সদা পাল উড়াইয়া,

ও মাঝিরে বেয়ে যাওরে সাধের তরী খান,

প্রেম সোহাগে ঢেউয়ের তালে হওরে আগুয়ান।

১।       ত্রিবেণীর ত্রিমোহনায় কাম কুম্ভীরের ভয়,

কপট সাধু যাচ্ছে মারা ত্রিবেণীর গোলায়।

সুকৌশলে যাওরে বেয়ে, হাঙ্গর কুম্ভীর দেখবে চেয়ে,

হয়ে তুমি সুজন নেয়ে জোরছে মার টান।

২।       নদী গর্ভে অতল তলে রতন পাওয়া যায়,

হাঙ্গর কুম্ভীর থাকলে সহায় রতন মেলে তার।

হাঙ্গর কুম্ভীর আছে যত, কর তোমার মনের মত,

তারা হয়ে তোমার অনুগত, দিবে তার সন্ধান।

৩।      নদীর বুকে বান ডাকিলে সামাল হয়ে রও,

দমকা হাওয়া পেয়ে যেন ডুবাস নে তোর নাও।

বিনোদ বলে ও মদন নেয়ে, গলুই পানে থাক চেয়ে,

দমকা হাওয়ার দম কষিয়া (কর) উর্ধে অভিযান।

 

৪০ নং গান- তালঃ একতাল

দেখরে নগরবাসীগণ, হরিচাঁদ গোষ্ঠের পথে যায়,

ও তার রূপের ছটায় ভুবন আলো, অঙ্গেতে বিদ্যুৎ খেলায়।

১।       মুখে মৃদুমন্দ হাসি, হাসিতে পড়িল খসি রে

                             পূর্ণ শশী এ ধরায়।

ও তার অঙ্গের সৌরভ ছুটে, অলি এসে পড়ে যায়।

২।       রেশম বরণ তনু, পিছনে চলেছে ধেনু রে,

                             দেখ কিবা শোভা তায়।

ও তার পিছনে ধায় রাখালগণে, হরি বলে বুক ভাসায়।

৩।      শুকশারী উড়িয়া এসে, ঠাকুরের স্কন্ধে বসে রে,

                             কেবল মুখ পানে চায়।

ও তারা কিচির মিচির শব্দ করে, মনের ভাব জানায়ে দেয়।

৪।       যেন বৃন্দাবনের প্রাণ কানু, চরাইতে যেত ধেনু রে,

                             সেই রূপ ভাবেরই উদয়।

সেই রূপ দেখলে পরে নয়ন ঝরে, গৃহে থাকা হবে দায়।

৫।       ব্রজনাথ বিশ্বনাথ সঙ্গে, চলে হরি পরম রঙ্গে রে,

                             উদয় বিলের কিনারায়।

এ দীন বিনোদ ভাসে নয়ন জলে, ঐ চরণ পাবার আশায়।

 

৪১ নং গান- তালঃ ঠুংরী

কাম থাকিতে প্রেম হবে না, কামের ঘরে মারগে চাবি।

থাকব না তোর ত্রিতাপ জ্বালা, প্রেম বাজারে চলে যাবি।

১।       ভক্তি আদি রজ্জু দিয়া, অনুরাগে বাঁধগে হিয়া,

শেষে বিবেককে চৈতন্য দিয়া, রাধাগঞ্জে উদয় হবি।

২।       জেনে লও সেই পঞ্চতত্ত্ব, সাধন কর অবিরত,

হলে সবার পদানত, শ্যাম জলধির দেখা পাবি।

৩।      এ দীন বিনোদ বলে রাগের কারণ, সহজে মেলে না কখন,

ও তুই ধরবি যদি মদনমোহন, বকের মতন স্বভাব নিবি।

 

৪২ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

ও আমার মন কর গে সাধন, আগম নিগম জেনে শুনে,

খাটি আগম নিগম না জানিলে, ছেঁচড়া কাজে কুল পাবি নে।

১।       দশ ইন্দ্রিয় পঞ্চবাণ, সাধনায় কর সমান,

স্বরূপে আদান প্রদান, যোজনা সমান সমানে করগে।

যুগল সাধন মনের মত, নিরখিরা উর্ধ পানে।

২।       নাদ বিন্দু সহযোগে, কলা বিন্দু সমভাগে,

কুণ্ডলিনী যোগে যোগে, পাঠাও নিত্য বৃন্দাবনে।

তথায় নিত্যের খেলা, নিত্যের মেলা, থাকবি রে আনন্দ মনে।

৩।      বিনোদ বলে যুগল সাধন, হয় যদি তার ঠিক ঠিক মতন,

রাধাকৃষ্ণের যুগল চরণ, দেখবিরে দুনয়নে।

তোর মানব জনম ধন্য হবে, যুগল মূর্তি দরশনে।

 

৪৩ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

যদি মন করবি সাধন গুপ্ত পাড়ায় আয়,

ও তুই সাধন করবি গোপন ঘরে, কেউ তাহা না জানতে পায়।

১।       কামধেনু করিয়া বন্ধন, দিয়া নিষ্কামের আতন,

ঘরের নয় দরজা বন্ধ করে করবিরে দোহন।

গাভি দোহন করবি, দুধ না নিবি, যেন জাগার বস্তু জাগায় যায়।

২।       ফুলের বৃক্ষ করিয়া রোপণ, ও তুই ছুসনারে কখন,

ফুল ফুটিলে গন্ধ নিবি, করিস নে চয়ন।

থাকবি ফুলের গন্ধে মহানন্দে, যেন মাথা দিস না হাড় কাটায়।

৩।      যদি কিনিস কামের ঘরের মাল, ও তুই করিস না গোলমাল,

মাল কিনবি তার দাম দিবি না, করিয়া কৌশল।

অধম বিনোদ বলে, উল্টো কলে পরম বস্তু চেনা যায়।

 

৪৪ নং গান- তালঃ গড়খেমটা

উল্টো কলে সাধন করে যারা,

উল্টাকে পাল্টা করে মূল ধরে নিচ্ছে তারা।

১।       সাধনের এমনি রীতি, সদারে হয় তার উর্ধগতি,

কাম নদীতে উজান রতি, হয় না মতি হারা।

যোগে যাগে যোগ সাধনে জীয়ন্তে হয়ে মরা।

জেনে নিগম তত্ত্ব প্রেম উন্মত্ত, নিত্য বস্তু হয় না হারা।

২।       ইড়াতে প্রবেশিয়ে, সুষন্মার মধ্য দিয়ে,

দ্বিদল পদ্ম ভেদ করিয়ে, ব্রহ্মের পরে চড়া।

বিনোদ বলে মুখের কথায় যায় না কিছু করা,

এমন গুরুতত্ত্ব পরমার্থ হবে না তা করণ ছাড়া।

 

৪৫ নং গান- তালঃ একতালা

থাকগে তুই অষ্টদশের পরে।

হয় যদি তোর নিম্নগতি উর্ধরেতা সাধন করে।

১।       কাম নদীতে বান ডাকিলে, ভাসগে রে প্রেম নদীর জলে,

দীনবন্ধু দয়াল বলে, থাকগে নিরিখ ধরে।

হুঁশিয়ার হয়ে থাকবে তুই হালির কাটা ধরে।

তোর তরী চলবে উজান বাকে, ভাটির বাকে রবে নারে।

২।       দেহ নদীর উজান বাকে, শ্বেতবর্ণের এক মানুষ থাকে,

অনুরাগে ধরগে তাকে, দিস না তারে ছেড়ে।

হবে যেই মানুষ তোর পরের মালিক চিনে চিনলি নারে।

অধম বিনোদ বলে কর্মফলে, পড়ে রইলি অন্ধকারে।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free