গান নংঃ ১৬-৩৫
রাগীনি - কেলেংরাণী
১৬। তাল - ঠুংরি
দয়াল হরি হে – আমি ডাকি অসীম কাতরে।
হরি মনোবাঞ্ছা কর পূরণ, এই আকিঞ্চন মোর অন্তরে।।
১। এই বাসনা মনে ভারি, তোমায় যেন ডাকতে পারি।
আমায় জম্মে জন্মে কৃপা করি, রেখ কৃপা সাগরে।।
যা ইচ্ছা তাই কর হরি, তাতে চিন্তা নাহি করি।
আমার কাটে যেন মায়া বেড়ী, পাপ ঘুচায়ে নেও আমারে।
৩। দুঃখ যত অবিরত, দেও হে দুঃখ, মনের মত।
(তোমার) চরণ সেবার যোগ্য মত, করে রেখ আমারে।।
৪। তুমি যে পাতকীর বন্ধু, তরাও আমায় ভবসিন্ধু।
দেহ অন্তিম কালে কৃপাসিন্ধু, চরণে স্থান দেও আমারে।।
৫। অধম দীনার এই আকিঞ্চন, কুকর্ম্মে হয়েছি পতন।
হরি কর আমার পাপ বিমোচন,
শ্রীচরণ দেও হৃদ মাঝারে।।
রাগীনি – আনারা
১৭। তাল - গড়খেম্টা
এল কলির শেসে জীব তরাতে
ওড়াকান্দী হরিচাঁদ আমার।
তোরা এই মধুর নাম নিলে পরে।
অনায়াসে হয়ে যাবি পাড়।।
১। দুঃখী তাপি উদ্ধারিতে, এল হরি এ জগতে,
ডাকার মত না ডাকিলে, দয়া হবে না।
অকুলে ভবকান্ডারী, ডাকিলে, দয়া হবে না।
অকুলে ভবকান্ডারী, ডাকলে পাবি পদতরি,
সবার বিপদ মোচনকারী, ভব নদী করে নেয় পাড়।।
২। বেলা থাকতে ধর পাড়ি, বদনে বলিয়ে হরি,
অনায়াসে উঠবে পারি, ভয় রবে না আর।
এ দুঃখ ভব সাগরে, যদি ডাকতে পার তারে,
দয়াল মাঝি হলে রাজি, পার করতে বিলম্ব নাই তার।।
৩। আপনি সাজায়ে তরী, হরিচাঁদ কর কান্ডারি,
সাধু মহাজন বহর ধরি, প্রেমতারে লাগাইও ডুরি,
অনুরাগের দাড় মারি, ভবনদীর ধর কিনার।।
৪। দয়াল হরি গোসাই বলে, দীনারে তুই এই সকালে,
সারি গেয়ে হরি বলে, হয়ে যাবে পার।
ভবনদীর তুফান ভারি, উচ্চ স্বরে বল হরি,
তবে পারে যাবি ত্বরা করি, হরিনাম ভুলনারে আর।।
রাগিনী - ফকিরী ধাওয়া
১৮। তাল –ঠুংরি
আমি ঘুরে বেড়াই দেশ বিদেশে
কোথায় গিয়ে হরিচাঁদ পাবরে।
আমি হরির আশে, দেশ বিদেশে,
সদা বেড়াই ঘুরে ঘুরে।।
১। হরি আমার প্রাণের বড়ি, না দেখিলে জ্বলে মরি।
আমি কেমন করে, ধৈর্য্য ধরি, দিন রজনী প্রাণ পোড়ে।।
২। থাকে হরি যেই দেশে, যাব বলে সেই দেশে।
আমার যাওর্য়া হয় না, কর্ম্মদোষে, কুমতি রাখে ঘিরে।।
৩। বের হব হরিচাঁদ বলে, যা থাকে আমার কপালে।
আমি চরণের দাস, হয়ে রব, যদি দেখা পাই তারে।।
৪। কাতরে কয় দীনা বোকা, দেশবিদেশে ঘুরি একা।
আমি তবু হরি’র পাইনে দেখা, (আমি) উপায় কি করিব রে।।
রাগিনী-গোপীছোড়া
১৯। তাল-ঠুংরী
তোরা আয় কে যাবি হরিচাঁদের প্রেমের বাজারে।
তোরা গেলে পড়ে দেখতে পাবি, কত মাল আছে থরে থরে।
১। সম্পূর্ণ মাল রক্ষা করে, রেখ মালের কোঠা ভরে রে
এবার হুসিয়ার থেক দিবা রাত্রে, মাল যেন নেয়না চোরে।
২। সেই বাজারে আছে চোরা, নিয়ে যায় মাল সব হরিয়া রে।
চোরাবাতি জ্বেলে করে চুরি, জিলা আর মোকাম ধরে।।
৩। সেই মালের উপরথরে, সোর মানুষ বিরাজ করে রে।
ও তার রূপে ভুবন আলো করে, দেখলে জীবের মন হরে।।
৪। বাজারে সেই অটল মানুষ, সদা থাকে প্রেমে বেহুস রে।
ও সে সদা থাকে প্রেমের ঘরে, প্রেমানন্দে বাস করে।।
৫। হরি গোসাইর মধুর বচন, বোকা দীনা তোরে কই শুনরে।
যদি পেতে চাও সেই মানুষ রতন, গুরুর চরণ থাক ধরে।।
রাগিনী-আনারা
২০। তাল-গড়খেম্টা
কেন ঘুরে বেড়াও অন্ধকারে
বিরাগ ভরে ডাক তারে।
ডাক দিয়ে ভক্তি পাবি মুক্তি, ভক্তি বিনে পায়না তারে।।
১। মুখে বল হরি হরি, কাজে কর জুয়াচুরি,
কেম্নে পাবি সেই শ্রীহরি, ঐ ভাব রসনা।
হও কেন বাক্য ভ্রষ্ট, গুরুর বাক্য কর নষ্ট,
হরি পাওয়া ভারি কষ্ট, নামে রুচি হলনারে।।
২। যদি করতে পার প্রেমভক্তি, হরিপদে হবে আর্থী,
না থাকিলে প্রেমভক্তি, তারে পাবেনা।
চায়না তোদের টাকাকড়ি, চায়না তোমার জমিদারি,
চায় সে শুধু ভক্তি ডুরি, ভক্তি বিনা চায় না কারে।।
৩। যদি দেখ টাকাকড়ি, ঘরেতে সুন্দরী নারী,
সে সব শুধু দিন দুই চারি, চেয়ে দেখনা।
ভেবে দেখ ঐ হৃদমন্দিরে, চোরা আছে সিং দুয়ারে,
সব ধন তোর নিবে হরে, মাল কোঠা ভাঙ্গিয়ে জোরে।।
৪। হরি গোসাই বলে একান্ত দীনারে তুই হসনে ভ্রান্ত,
করিয়ে মন সূক্ষ্ম শান্ত, হরি বলে ডাক।
ঘুচাইলে মনের ময়লা, দূরে যাবে শমন জ্বালা,
ভবপারে যাবার বেলা, কোন কষ্ট হবেনা রে।
রাগিনী-ভাটিয়াল
২১। তাল- ঝাপ
আমার কর্ম্ম দোষে সব খুয়ালেম
না পেলেম সেই অধর ধরা।
আমি যদি করতেম গুরুর করণ
তবে অধর চাঁদের পেতাম ধরা।।
১। কু-সঙ্গিনীর বাতাস লেগে গায়,
হা-হুতাশে জীবন গেল, কি করি উপায়।
আমার নাই কোন বল, মনে গরল,
চিন্তানলে হলেম সারা।।
২। কু-সঙ্গিনীর কু-চক্রে পড়ে,
সারাজীবন গেল আমার দুষ্কর্ম্ম ফেরে।
মরলেম্ অসৎসঙ্গ কু-আচারে, কু-মতি চতুপার্শ ঘেরা।
৩। হরিচাঁদের প্রেমেরই বাতাস,
আমার গায়ে লাগলনা, করি সদা পরিহাস।
হলাম অকাল কুষ্মান্ড, সকল পন্ড,
ভজন পূজন নাই মোর করা।।
৪। যদি প্রেমের বাতাস এক দিন লাগত গায়
তাপিত অঙ্গ গলে যেত, সেই বাতাসের গায়।
দীনার কাতর বাণী, দিন রজনী;
হরি জীয়ন্তে দেও আমায় ধরা।।
রাগিনী সিন্ধুনী
২২। তাল লোফা
গুরু বিপদ কালে রৈলা কোথায়।
আমি মায়া পিশাচি, মায়া দুর কর আসি,
নহে এ পিশাচির কি উপায়।।
১। আমার নাই ভক্তি বল, আমার নাই নয়নে জল,
নিজদাস বলিয়ে গুরু, ঘুচাও মনের খল।
গুরু তুমি না হলে, গতি নাই ভুমন্ডলে,
তোমার শ্রীচরণ দেও মোর হৃদয়।।
২। আমি অতি অভাজন, তোমার না জানি সাধন,
দিবানিধি দেখা দেও হে, শ্রীমধূসূদন।
আমার মনের বাসনা, ওহে কেলেসোনা,
ভব-জ্বালা যেন ঘুচে যায়।
৩। আমার মনের অভিলাষ, তব পদে হব দাস,
নয়ন জলে ধোয়াব চরণ, মনের এই আঁশ।
আমি অতি দীনহীন, পদে রেখ চিরদিন,
বসে আছি ঐ চরণ আশায়।।
৪। দয়াল হরি গোসাই, তুমি বিনে গতি নাই,
আমার মনের বেদনা, গুরু কেন দেখা দেও না,
তুমি আমায় কেন হইলা নিদয়।
রাগিনী - ভেরি
২৩। তাল - গড়খেমটা
হরি লীলা বুঝতে নারে
হরি লীলা বুঝতে নারে।।
দস্যু হয়ে যে জন থাকে, উদ্ধার করে নেয় তাহারে।।
১। যে জন হরিনাম করে সার, দুঃখ যাতনার সীমা নাই তার,
দস্যুকে করে নেয় পার, এইত হরির খেলা।
দুঃখী-জনার দুঃখ বুঝিবে, এমন লক্ষ্য নাই তার,
তারে মনের মত দুঃখ দিয়ে, ভাসায়ে দেয় দুঃখ সাগরে।।
২। (রাজা) হরিশ্চন্দ্র ধার্ম্মিক ছিল, ভার্য্যা পুত্র দান বিকাইল,
রাজ্য ছেড়ে যেতে হল, কত হয় লাঞ্ছনা।
পুত্র মরল সর্পাঘাতে, মায়ের সাক্ষাতে,
দুঃখে শৈব্যা রাণী, কাঁদে তিনি,
(রাজা) হরিশ্চন্দ্র দেখা দেও আমারে।।
৩। নরসিংহ অবতারে, হিরণ্যকশিপুরে,
অষ্ট হস্তে বিনাশ করে, উরুতে রাখিয়ে।
প্রহ্লাদ থাকে করজোড়ে, সম্মুখে দাড়ায়ে,
মুখে হরেকৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, নয়নেতে অশ্রু ঝরে।।
৪। ধ্রুব প্রহ্নাদ ছিল ভক্ত, দুঃখ দিল অতি শক্ত,
সেই কথা বলিব কত, এ ভীষণ ব্যাপার।
হরি গোসাইর মধুর বাণী, শুনরে দীনা দুরাচার,
তোর দস্যু আত্মা কেটে, অনায়াসে যাবি তৈরে।।
রাগিনী - ভজনা
২৪। তাল - ঝাপ
কি ধনে পূজিব গুরু আমার সে ধন নাই রে।
তিনি হবে যে ধনেতে খুশি, সে ধন আমার নাই রে।।
১। গুরু দিল গোল আনা, করলেম না ঐ উপাসনা।
আমার গুরু রতি ঠিক হলনা, জনম বৃথায় গেল রে।।
২। গুরু আমার বলতে আছে যে ধন,
দিতে পারলেম না গুরু ধন।
আমায় শিকায়ে লও সে ভাব রতন,
পাই শ্রীচরণ কেমন করে।।
৩। বলে বোকা দীনবন্ধু, হরি গোসাইর দয়াবিন্দু।
আমি পেলেম না তার একবিন্দু কি উপায় মোর হবে রে।।
রাগিনী - ভাটিয়াল
২৫। তাল - ঝাপ
হরি কবে তোমায় চাবে আমার এ পাপ পরানে।
আমি পাপ অনলে মলেম জ্বলে সারা হলেম্ এ জীবনে।।
১। পেয়ে তোমার শান্তি সুখের ঘর,
অন্ধকারে রলেম পড়ে সদা মোর অহঙ্কার।
রলেমত হিংসানলে, তোমায় ভুলে
তোমার নামটি, নাই মোর মনে।।
২। আমি হয়ে রলেম মায়ার আবদ্ধ,
তোমায় আমি ছেড়ে রলেম, সংসারেরর মধ্য।।
কবে সংসার জ্বালা, হবে ত্যাজ্য,
কবে রব তোমার ঐ চরণে।।
৩। দিয়ে আমায় ভাব, ভক্তি, জ্ঞান
হরি আমার ষড়রিপু, করহে দমন।
আমার এ পাষান মন, কর দলন,
(যেন) তোমায় না ভুলি কখনো।।
৪। দীনবন্ধু কাতর প্রাণে কয়,
হরি আমায় চরণ তলে, রাখিও সদায়।।
করি মায়ার সংসার, হে শুনধর
দেখি অন্ধকার দু’নয়েনে।।
রাগিনী - ভাটিয়াল
২৬। তাল - ঝাপ
তুই ভেবে দেখ ঐ হরি বিনে,
বন্ধু নাই আর এ সংসারে
হরি তোর হইল সর্ব্বস্ব, জীবন যৌবন দে তাহারে।।
১। হরি হইল সর্ব্ব মূলাধার,
ব্যক্ত আছে ত্রিসংসারে, যতই চরাচর।
এবার সময় গেল হরি বল।
দিন থাকতে নেও বদন ভরে।।
২। আগে মদনের ঘর বাঁধগে এটে,
হরি বলে বাহু তুলে, যাও প্রেমের হাটে।
সদা ডাক তারে বিরাগ ভরে,
শক্তি দিয়ে ভক্তি ডোরে।।
৩। কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎসর্য্য,
ছয় রিপুকে করলে বাধ্য, হবেরে কার্য্য।
তবে প্রেমানন্দে কাল কাটাবি,
থাকবি সদা প্রেমনগরে।।
৪। তুই থাক যেয়ে প্রেমেরি বাজার,
প্রেমদাতা হরিকে তুই দেখবি রে এবার।
হরি গোসাই কয় এবার হরি কর সার
দীনবন্ধু বলি তোরে।।
রাগিনী - পানতুফাণি
২৭। তাল - লোফা
এবার ভাবনা ভাব অন্তরে গুরু বলে।
তবে প্রেমের গুরু কল্পতরু, পাবিরে তুই প্রেম দিলে।।
১। ভক্তি প্রেমের গুরু মধুসূদন, ডাকতে পারলে পায় তার চরণ।
ও সে বসত করে সপ্ত তালায়, সে দ্দিলল পদ্মমূলে।।
২। আছে ষস্ট রথী, পঞ্চ সখা, যুদ্ধস্থলে পায় তার দেখা।
যে জন করতে পারে করণ যুদ্ধ, হরিধামে যায় সে চলে।।
৩। জানে কামদ্রোণ রাজা, ভীষণ যুদ্ধ, শরাঘাতে করে জব্দ।
পারবি না ঠিক থাকিতে কোন মতে,
কাম দ্রোনের বাণ ভীষণ চলে।
৪। অর্জ্জুন যেমন ছিল যোদ্ধা, যুদ্ধে পায় দৌপদী সাধ্যা।
তেমনি তার মত হইলে যোদ্ধা, জয়ী হবি সেই রণস্থলে।।
৫। দীনবন্ধু ভ্রান্ত মনে, যুদ্ধ করবি কোন সন্ধ্যানে
(সন্ধান) জেনে হরি গোসাইর স্থানে,
যুদ্ধে যাবি তারই বলে।।
রাগিনী - শিন্দীয়ারা
২৮। তাল - ঠুংরী
হরিচাঁদের চরণ ছাড়া কেন আমি হলেম ভাই।
আমি হরি বিনে মনোব্যাথা, কার কাছে যেয়ে জানাই।।
১। আমি কত অপরাধি, পাইনে দেখা গুণনিধি।
সে ভাবনা নিরবধি, কি দিয়ে মোর প্রাণ জুড়াই।।
২। (আমার) পিতার সু-পুত্র হও যারা, ওড়াকান্দী যা ভাই তোরা।
আমি হই ভক্তিহীন কর্ম্ম ছাড়া, কি শুনেতে তারে পাই।।
৩। আমার খবর বলিস তোরা, তারে বিনে গেলাম মারা।
এইবার যেন দেয় সে ধরা, সে বিনে মোর বান্ধব নাই।।
৪। হরি গোসাইর কৃপা জোরে, (রব) হরিচাঁদ কৃপা নগরে।
আমি আর যেন আসি ফিরে, দীনার অন্য আশা নাই।।
রাগিনী - উরয়ালিকা
২৯। তাল - একতাফা
এ বিপদে কোথায় ওহে হরিচাঁন।
নদীর ঘোলায় পড়ি ডাকি হরি, শ্রীচরণে দেও হে স্থান।।
১। মাল ভরিয়ে দিলেম পাড়ি, কাম নদীর ঐ পাকে পড়ি, বল কি উপায়।
নদীর তরঙ্গ ভারি ডুবে তরী, এ দেহ হয় অবসান।।
২। বিপদে পড়িয়ে ডাকি, বিপদ ভঞ্জন কমল আঁখি, হও সদয়।
তোমার দয়া বিনে এ তুফানে, সারা হল আমার প্রাণ।।
৩। পড়েছি অকুল পাথারে, রক্ষা কর অধমেরে অসময়।
হরি আমি অতি মূঢ় মতি না জানি পারের সন্ধান।।
৪। গুরুচাঁদের কৃপা ডুরি, নৌকায় দিয়ে বন্ধি করি, উঠাও কিনারায়।।
হরি গোসাই করে এই সদুপায়, দীনার রক্ষ দেহ প্রাণ।
রাগিনী - ভজনা
৩০। তাল - ঝাপ
হরি এল ওড়াকান্দী
নামে জগৎ মাতালরে।
নামে জগৎ মাতালরে - নামে জগৎ মাতালরে।।
১। নামে প্রেমে বোঝাই করি, ছেড়ে দিল নামের তরী।
তোরা এই নাম নিবি বদন ভরি,, মনেরি পুলকে রে।।
২। ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, তাঁতি-সবে এক ভাই একই জাতি।
জাতির গৌরব ছাড়ি বল হরি, নামে যাও মাতিয়ারে।।
৩। ঘুচাও সবে মনের ভ্রান্ত, এই হরি নাম সূক্ষ্মশান্ত।
হল চারি যুগের মহামন্ত্র (হরি) নাম সংকীর্ত্তণ রে।।
৪। (হরি) নামেতে যার ভব-ব্যাধি, পান কর নাম নিরবধি।
ঐ দেখ নাম বিনে এ তিন ভুবনে, বন্ধু কেহ নাই রে।।
৫। নাম বিলায় সেই হরি গোসাই, বলে নাম ভিন্ন গতিনাই।
এমন শুভদিন আর পাবিনা তাই, দীনবন্ধু বলি তোরে।।
রাগিনী - হেলারি
৩১। তাল - ঝাপ
হরিচাঁদ আমার মনের দুঃখ
মনের রল আশা পূর্ণ হইলনা।
আমার মনের দুঃখ মনে রল, আশা পুর্ণ কেন হল না।।
১। দুঃখে জনম গেল, মনের দুঃখ মনে রল
পেলেম না তব শ্রীচরণ।
অমি যদি পেতেম, হৃদয়ে লইতেম,
পুরাইতেম মন বাসনা।।
২। (শুনি) নামে গুনে রাং হয় সোনা, হরি তোমার এই মহিমা
আমার প্রতি কেন দয়া হয়না।
আমার ভব বন্ধন কর খন্ডন, রাতুল চরণ হৃদয়ে দেও না।।
৩। আমার মনে এই আকিঞ্চন, হরি তোমার যুগল চরণ,
পুজিব বিরলে বসিয়।
পুজিব অতি যতনে, আকুল প্রাণে, ভক্তি চন্দন দিব বাসনা।।
৪। দীনার মনে এই বারতা, হরি গোসাই ভরসা,
তুমি বিনে আর প্রত্যাশা নাই।
গুরু তোমারি করণে, বাঁচি না তাড়নে,
বিপদে স্থান কেন পাইনা।।
রাগিনী - বেহুন
৩২। তাল - গরখেম্টা
আমায় কি বেশে সাজালে হরি
আমায় কি বেশে সাজালে হরি
আমি দেশ বিদেশে ভ্রমণ করি,
করলে আমায় দীন ভিখালী।।
১। আমার মন প্রাণ হল হুতাশী, গৃহ ছেড়ে হই বিদেশী,
বেড়াইতেছি কেউ নাই সাথী, এ তিন ভুবনে।
দুঃখ দিলে মনের মত, আরও দুঃখ দিবে কত।
এখন হওয়াও তোমার অনুগত, চাইনা বিষয় টাকাকড়ি।।
২। হৃদয়ের দেবতা তুমি, তুমি আত্মা অন্তর্যয্যামী,
তুমি জগৎ পিতা স্বামী, আমি কভু জানলেম না
তুমি জনম ভরে পালন করে, রাখলে এই ঘোর সংসারে,
মনের যায়না ময়লা করি হেলা, হৃদয়ে দেও হে প্রেম তোমারি।।
৩। (আমায়) দুঃখ দিলে, পেয়ে কষ্ট, ডাকি তোমায় হয়ে তুষ্ট,
ডাকেতে হয়ে সন্তুষ্ট, সুখে করাও বাস।
সুখ পেলে মনের এই গতি, হরিপদে রয় না মতি,
দীনা এবার করগে স্তুতি, হরি গোসাইর পদে পড়ি।।
রাগিনী - মঞ্জারাসাই
৩৩। তাল - ঠুংরী
বহু যুগ পরে এল দয়াল হরিচাঁন
হরি এসে ভবে, সর্ব্বজীবে, রক্ষা কর প্রাণ।
১। তুই দেখ ভেবে মনে, এ তিন ভুবনে,
এমন পরম বান্ধব নাই আর, হরি বিনে।
একবার ডাক তারে, প্রেম ভরে,
তবে পাবি পরিত্রাণ।।
২। রাজা অম্বরিসের ছেলে, আয়ু দশ বৎসর ছিল,
অযুত বৎসর আয়ু পেল, হরি নামের বলে।
লয়ে প্রজাগনে প্রাণ - প্রণে,
করে হরিনাম গান।
৩। তার এক বৎসর পরে, হরি দেখা দেয় তারে,
যম অধিকার ঘুচে গেল, হরির দয়া জোরে।
ঘুচায় কর্ম্ম বন্ধন, সেই হরি ধন,
হরি রাখে ভক্তের প্রান।।
৪। যুগে যুগে অবতার, করে জীবেরি উদ্ধার,
প্রেম-ভক্তি-ধন রসিক যে জন, তারে করে পার।
মুখে বলে হরি, নাই তার দেরি
হরি ঘুচায় তার নিদান।।
৫। হরি গোসাই কয় এবার, মিছে এ সংসার,
করগে দেহ ভুমি আবাদ, জ্ঞানে অস্ত্র ধর।
দীনা হরির প্রতি, রাখিস মতি,
হরি করবে প্রেম দান।।
রাগিনী - মনহরাসাই
৩৪। তাল - আদ্ধা
হরি বলে করলি নারে ভক্তি স্তুতি
অন্তমকালে কি হবে তোর গতি।
হরিনাম পরম ধন, চিনলি না মন।
অসার রাজ্যে করলি বসতি।।
১। মনরে হরি তোরে করে দয়া, নিদানে দেয় পদ চাড়া,
যা চাও তাই দেয়, তোরে যোগাড় করি।
তুই যার বলেতে হইলি বলি,
তার কাছে করলি না মিনতি।
২। মন'রে রঙ্গের খেলা হলে ভঙ্গ, চলে যাবে সাঙ্গ পাঙ্গ,
আপন বলতে, কেউ না রবে ভবে।
তুই রঙ্গে ভঙ্গে রলি আনন্দে, হরিনামে হল না মতি।।
৩। মন রে - গুরু দিল ঘোল আনা, ব্যাপার থাক হলি দেনা,
কুহকিনী নিল সকল হরে।
তুই ভুলে রলি সব খুয়ালি,
দেখ না জ্বেলে জ্ঞানের বাতি।।
৪। মন রে - হরি গোসাই বলে দীনবন্ধু, পার হবি তুই ভবসিন্ধু,
পারের কড়ি রাখলিনা তোর সাথে।
তুই পারের বেলা কাঁদড়ি একেলা
কেউ হবে না সঙ্গের সাথী।।
রাগিনী- বিরহাসি
৩৫। তাল-ঠুংরী
পাষান মনরে-
গুরু তোর নিকটে থাকে চোখের আড়ালে
তোর গুরুর প্রতি, নাই রে মতি,
গতি কি তোর অন্তিম কালে।।
১। গুরুর পদে মন মজায়ে, থাকরে মন চাতক হয়ে।
যে দিন হবে বর্ষন পাবি দর্শন, শান্তিপুরে যাবি চলে।।
২। রিপুর বশে থাকে যে জন, ধন-প্রান তার করে হরণ।
কাম রূপেতে দিয়ে নয়ন, কাম নগরে থাকে ভুলে।।
৩। যাহার আছে গুরু ভক্তি, সে করে গুরুকে ার্থী।
(সদা) জ্বেলে দুট জ্ঞানের বাতি, পাহারা দেয় রূপ নেহালে।।
৪। গুরু যদি পেতে চাও মন, বে-হালের বেশ কর ধারন।
পর অনুরাগের বসন, গড়ি দেও ঐ ভক্তি ধূলে।।
৫। হরি গোসাই কয় এই বচন, দীনবন্ধু করগে সাধন।
তাহলে তোর নাইরে মরন, থাকিসনে আর রিপুর দলে।।