গান নংঃ ৩৬-৫৫
রাগিনী-জয়জয়ন্তী
৩৬। তাল - ঝাপ
হরি তুমি দাও পদাশ্রয়-শান্তি মায়ে লয়ে বামে।
হরি ঘুচাও আমার নিরানন্দ, আনন্দ দাও হৃদয়ধামে।।
১। হরি হে-যুগল পদ্ম মধুর আছে, আমি আছি সেই উদ্দেশে,
পান করিব ঐ রূপ রসে বসে।
আমি ভ্রমর হয়ে, শদু খেয়ে, পরাইব মনষ্কামে।।
২। হরি হে-ফুল ফোটে বনেতে, জগৎ মাতে সৌরভেতে,
আকুল হয়ে গঞ্জরা গুঞ্জরে।
যত গঞ্জরা, যায় উদয় পূর্ণ করি,
ক্ষুধা হলে ডালে ভ্রমে।।
৩। হরি হে- (আমার) যুগল নয়ন পদ্ম পাশে,
সবাইব মন উল্লাসে, মধু পানে আশা পূর্ণ হবে।
আমি লব অঞ্চল পাতি, চাব না কুল মান জাতি, মধু খাব দমে দমে।।
৪। হরিহে-কাহর প্রানে দীনা বলে, যুগল পদ্ম তরুমুলে,
রেখ হরি আমায় অধম বলে।
দয়াল হরি গোসাই, আমায় দিও ঠাই
যুগল যেন পাই শান্তি শ্যামে।।
রাগিনী-ভাটিয়াল
৩৭। তাল-ঝাপ
ও মন মাঝিরে আমি কেন
এলম তোমার বৃথা কাষ্ঠের নায়।
তোমার নৌকায় উঠি, চলছি ভাটি,
ছয় জন দাঁড়ি বাধ্য নয়।।
১। জান্তেম যদি নিরবধি, নৌকার বাইন খসিয়ে যায়
আমি বাইনে বাইনে দিতেম কালি,
আলকাত্রা গাব দিতেম তায়।।
২। যদি যত্ন করতেম নৌকা আমি, মাল সব যেত নয়।
যদি দু’নয়ন প্রহরি রেখে মালের, পাহারা দিতেম সদায়।।
৩। নৌকার মাল কোঠাত্বে পাহারা দিতে আমার ভুল পড়িয়ে যায়।
তাতে ছয়জন দাঁড়ি, করে চুরি, মাল সকল হরিয়ে নেয়।
৪। যত্ন ছাড়া ডুবল ভরা, দেখলেম না চাহিয়া।
(দীনা) বলে রক্ষা নাই, দয়াল হরি গোসাই
চরণে স্থান দাও আমায়।।
রাগিনী-লম্পট
৩৮। তাল-খেম্টা
এই কি ছিল তোমার মনে বুঝিতে নারি।
তুমি মনের মত দুঃখ দিয়ে, ঘুরাতেছ বিদেশ ভরি।।
১। তোমার নাম গুন গেয়ে গেয়ে, বেড়াতেছি ঘুরি।
আমার সঙ্গের সাথী আর কেহ নাই, মনে বড় দুঃখ ভারী।।
২। বহুদিন ভ্রমিয়ে শেষে, কামপুরেতে পড়ি।
আছে সেই গ্রামে এক দস্যু বিপ্র প্রাণে কষ্ট দিচ্ছে ভারি।।
৩। বহু কথা জিজ্ঞাসিল, বলিতে না পারি।
বলে কটু বক্য ক্রোধ ঐক্য, চুপ করে রই ধৈর্য্য ধরি।।
৪। পাঠালে তুমি অর্ন্তযামী, এলেম একা পাড়ি।
আমার মনের কথা সকল জান, তবে কেন বিপাকে পড়ি।।
৫। হরি গোসাই বলে এবার, ছাড় জুয়াচুরি।
তবে পাবি দেখা বাঁকা সখা, দীনা কেন বেড়াও ঘুরি।।
রাগিনী-জয় জিয়ালই
৩৯। তাল-কহরাবা
মন তুই গুরু চিনে ধর
গুরুর চরণ অমূল্য ধন, সাধন যেয়ে কর।
মন তুই গুরু চিনে না ধরিলে, কেমনে হবি ভব পার।।
১। গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরু মহেশ্বর,
গুরু করলে মনুষ্য জ্ঞান, সাধন হয়না তার।
মনরে গুরুর করণ, অসীম তারন,
করতে পারলে হবি তার।।
২। সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়, পুরুষ যেই জন,
গুরু তারে করে দয়া, দিয়ে শ্রীচরণ।
সদা তাঁর ভাবনা ভাবে যে জন,
বিপদ না থাকে তার।।
৩। (ধরলে) অধর ধরা, হওগে মরা, যদি তারে চাও,
দেহ তরী ছেড়ে দিয়, হরি গুণ গাও।
হরি নামের গুণে উঠবে পারি, ভক্তি বাদাম টেনে ধর।।
৪। হরি গোসাই বলে দীনা, গুণন বলি এবার,
পারে যেতে ভয় করিস নে, গুরু করগে সার।
বেলা দন্ড চারি বোঝাই ভারী, দেখা যায়না কূল কিনায়।।
রাগিনী - ভাটিয়াল
৪০। তাল-ঝাপ
সবে বলরে দারুন বিধি
আমায় কেন নয়ন দিয়াছে।
নয়ন রঙ্গরসে সদা ভাসে, রূপের ঘর ফেলে পিছে।।
১। রঙ্গে ভঙ্গে সেই আনন্দে নয়ন, সর্ব্বদায় আছে।
নয়ন ফিরাতে চাই নাহি ফিরে, কু-রসের ভাবে নাচে।।
২। কেমনে নয়ন ফিরাব সন্ধান, পাব কার কাছে।
আমি পড়েছি দায়, মন চলে যায়, দুষ্ট নয়নের পিছে।।
৩। রূপ নিরখি রয় না আঁখি কেন, বিরূপ হয়েছে।
থাকে মায়াপুরে, কুপথ জুড়ে, মায়োয় জড়ি আছে।।
৪। আমায় মন দিয়াছে, নয়ন দিয়াছে বিধি, সৎকর্ম্ম করিতে।
আমি তাই না, করি, জনম, ভরি, দুষ্কর্ম্মে মন রয়েছে।।
৫। আমার এ দুষ্ট মন, আর দু’নয়ন আমি পারিনা ফিরাতে।
এবার কর্ম্ম দোষে, রিপুর বসে, দীনার জনম যায় মিছে।।
রাগিনী-পানতুফানি
৪১। তাল-লোফা
মন তুই দেখনা চেয়ে নয়ন দিয়ে
কেউ নয় আপন।।
মিছে আমার আমার ভেবে মর,
পরকাল কেন ভাবনা মন।।
১। ঐ দেখ ভ্রাতা পুত্র ঘরের নারী, নিদান কালে যার যার তারী
মায়ার ধাঁধাঁ দিন দুই চারি, নিশির স্বপনের মতন।।
২। ভাব ধরে খেল ভাবের খেলা, ঘুচবেরে তোর ভব-জ্বালা।
হরি নামে হওরে ভোলা, অন্তিমে ছোবে না শমন।।
৩। মন প্রাণ দিয়ে তারে, নিরন্তর ভাব অন্তরে।
দয়াল হরি দয়া করে, প্রাণ অন্তে দিবে শ্রীচরণ।।
৪। হরি গোসাইর বাক্য ধরি, বদন ভরে বল হরি।
দীনারে তুই দেখ বিচারি, হরি বিনে কি আছে ধন।।
রাগিনী -জয় জিয়ালাই
৪২। তাল-কহরাবা
পাষণ মনা ভাই
এই সংসার সাগরের আর, কুল কিনারা নাই।
মন তুই কেমন করে, যাবি পারে,
কান্ডারি চিনে লও ভাই।।
১। সাগর মাছে, বৃথা কাজে, থাক অকারন,
কাম কুন্তীরে ধরে খাবে, না রবে জীবন।
আছে হা করা, মুল্লুক জোড়া, হাহাকার করে সদাই।।
২। অনুরাগের ভরে, ডঙ্কা মেরে, কাম কুন্তীর তাছাড়,
মহাভাবের তরী নিয়ে, সাগর মাঝে রও।
এবার প্রেমানন্দে ঢেউ খেল মন, সাগরের ভয় কিছুই নাই।
৩। রসিক যে জন, সেই নদীর গোন, জেনে তরী বায়
হরি নামের সারি গেয়ে, তরী বেয়ে যায়।
তারা থাকতে বেলা ধরে নালা, আনন্দের আর সীমা নাই।।
৪। (যে জন) কামুক মানুষ, চলে বেহুশ, ধনপ্রাণ হত হয়,
ও তার সর্ব্বস্ব ধন, করে হরণ, কিছুই নাহি রয়।
হরি গোসাই কয় এবার দীনারে তোর,
পারের উপায় কর না তাই।
রাগিনী - উরুশেন
৪৩। তাল-ঝাপ
হরি আমার সাধন হল কৈ
সদা কু-কর্ম্মেতে মত্ত রই
তোমায় স্মরণ নিলেম না একদিন।
স্মরণ যদি নিতেম, তোমায় পেতেম হে,
আমার মন হত তোমার অধীন।।
১। যখন মাতৃ গর্ভে ছিলেম, করুণ স্বরে স্মরণ নিলেম,
দিলে দেখা সপ্ত মাসের দিন।
তখন বল্লেম হরি, কষ্ট ভারি হে,
হরি ঘুচাও আমার এ দুর্নিদন।।
২। অন্ধকুপে কারাগারে, কেন রেখে দিলে মোরে,
যাতনা মোর হইল প্রবীন।
অমি কড়ার নিলেম, বলে ছিলেম হে,
তোমার নামটি নিব চিরদিন।।
৩। ভুমিষ্ট হইলেম যখন, ভুলে গেলেম সে সব কখন,
মুখে মন দিল মাতৃস্তন।
ওয়ানা বলে হই আপন স্বাধীন।
৪। মরলে নেয় শ্মশানে বেঁধে, সত্য ভ্রষ্ট অপরাধে,
সেই জন্যেতে মুখ পোড়ায় সেই দিন।
হরি গোসাই বলে, রলি ভুলেরে দীনা নাম নিতে হলি কঠিন।
রাগিনী-উরুশেন
৪৪। তাল-ঝাপ
হরি তোমার ডাকতে যেন পারি চিরদিন
ভুলে যাইনে যেন কোদনি
এই মিনতি চরণে তোমার।
হরিনাম সিন্ধু-অম্বুতে ডুইবে হে,
যেন থাকে পাষান মন আমার।।
১। ভারত ভুমে এসে আমি, পেয়ে তোমার সংসার ভুমি,
হয়ে আছি কর্ম্ম দুরাচার।
আমি সৎকর্ম্ম করিতেম যদি হে,
হরি থাকিতেম হয়ে তোমার।।
২। (আমার) সু মতিকে শক্তি দিও, কু মতিকে তাড়াইও
কু-মতি সে বারি দুরাচার।
ও সে রং দেখায়ে, নেয় ভুলায়ে হে,
সেত সু-পথের ধারে না ধার।।
৩। (যেন) সদা করি নামের ধ্বনি, আর না বলি অন্য বাণী।
দিবানিধি ঐ নাম করি সার।
আমার হৃদয় ধামে, দমে দমে হে,
হরিনামটি জপি আনিবার।।
৪। হরি গোসাইর পদে মতি, থাকে যেন দিবারাতি,
খন্ড রতি হয়না যেন আর।
দীনবন্ধু বলে, দিন ফুরালে হে, হরি গতি কি হবে আমার।।
রাগিনী - লম্পট
৪৫। ভাল - খেমটা
হরিনাম হৃদয় জপে যার
সে যায় শেষে অনায়াসে ভবসিন্ধু পার।
হরি কৃপাসিন্ধু অনাথ বন্ধু, অসময় সে করে পার।।
১। (এল) নামের তরী, বোঝাই করি, হরি কর্ণধার ,
প্রেমভক্তি ধন, রসিক যে জন, তারে করে পার।
তিনি ধনী-মানী পার করে না,
পার করে নেয়, এক মন যার।।
২। বিনা মূল্যে পার করে সে, পারের মাশুল নাই,
বশে ঘাটে, নিষ্কপটে, ডাক ক্ষীরোদসাই।
এবার মন প্রাণ খুলে, হরি বলে।
ঘাট মাঝিকে বাধ্য কর।।
৩। (নৌকায়) ভাবের মাস্তুল, প্রেমের বৈঠা, ভক্তির গুণ দড়ি,
শ্রদ্ধা কাষ্ঠের তরী নিয়ে, এলেন শ্রীহরি।
মনের ছাড়লে কপট, ঘুচবে সঙ্কট, পারে যাবি অনিবার।।
৪। হরি গোসাই বলে গুন, এই বানী আমার,
(যে জন) ডাকে তারে, নেয় সে পারে, না করে বিচার।
ওরে দীনা বোকা, সুযোগ পাকা, ছাড়লে পাবি নারে আর।।
রাগিনী-উরুশেন
৪৬। তাল- ঝাপ
আমার এই ভাবে কি যাবে চিরদিন
অমি বসে ভাবি রাত্রি দিন
বল গুরু গতি কি আমার।
মরি কু-চিন্তাতে অশান্তিতে হে,
গুরু শান্তি কর শান্তিধর।।
১। দুষ্কৃতী স্বভাবের দোষে, দুঃখে যাতনা ভোগি এসে
শান্তির ডালি পেলেম না এবার।
আমার দুষ্কৃতী বিনাশ করিয়ে হে,
গুরু সুকৃতি দেও হৃদ মাঝার।।
২। কুহকিনীর মায়ায় পড়ি, কু-পথে বেড়ালেম ঘুরি,
তোমায় গুরু ডাকলেম না একবার।
এখন ডাকার মত শক্তি দিও হে,
গুরু ডাকি যেন অনিবার।।
৩। কৃপা বারি সিঞ্চনেতে, শীতলতা দাও প্রাণেতে,
কৃপা বিনে মরণ হয় আমার।
গুরু তুমি বিনে দীনহীনে হে,
আমার আর কোন নাই পারাপার।।
৪। ভেবে অধীন দীনা বলে, গুরু কেন ভবে পাঠাইলে,
সাধন ভজন না হল আমার।
আমি জনম ভরি দুরাচারি হে,
হরি গোসাইর বাণী করলেম না সার।
রাগিনী-উরুশেন
৪৭। তাল-ঝাপ
যে জন হরি ভক্ত হরি পরায়ন
হরি নামে ঝরে দু’নয়ন - তার কি ভবে ভাবনা আছে।
ও তার অনুরাগের তনুখানি হে, সারা দিবা নিশি জ্বলতেছে।।
১। তিনি ভাব নদীতে ঝাপ দিয়েছে, প্রেম তরঙ্গে ঢেউ খেলতেছে,
স্নেহের মন্দির ভেঙ্গে গিয়েছে।
নাই তার স্নেহের মন্দির, ভাবে অস্থির হে,
ও তার ছয় ভ্রাতা সদা নাচে।।
২। প্রেম সাগরের তরঙ্গ ভারি, বাহিতেছে স্রোত বারি,
মায়ার ভেরি ছুটে গিয়েছে।
তাহার নাই কোন ঠিক, হয়ে বিদিক হে,
তিনি পথ বিপথে চলতেছে।।
৩। মাঝে মাঝে হয় উতলা, ভাবেতে হয়ে বিভোলা,
কি করিতে কি না করতেছে।
তখন বেগের চোটে, প্রাণ যায় ফেটে হে,
শুধু হতাশে তার প্রাণ আছে।।
৪। হরি গোসাই বলে দীনা, এমন সুদিন আর পাবিনা,
সুযোগের পথ কাছে এসেছে।
এবার হরিবলে বাহু তুলে হে,
ও তুই চলে যা গুরুর পিছে।।
রাগিনী-ভেন্ডিল কাহিনী
৪৮। তাল-ঝাপ
ও দরদিরে তুমি আমার বিপদকালে নিদয়া হইওনা।
আমার বিপদকালে নিদয় হলেরেÑ
হারে দরদ কে বুঝবে তুমি বিনা।।
১। ঘুরে দেখি দেশ বিদেশে, বান্ধব নাই মোর কোন দেশে।
আমি আছি তোমার ঐ উদ্দেশ্যে রে,
গুরু আমাকে ত্যাজিও না।।
২। (আমার) এ হেন দুঃখের কপাল,
বন্ধু বান্ধব নাই মোর সবল।
(তাঁরা) জ্বালিয়ে ভীষণ অনল রে,
হারে আমার অন্তরে দেয় বেদনা।।
৩। অসহ্য অনল অন্তরে,
ধেয়ে যাই জুড়াবার তরে।
(আমার) বন্ধু বান্ধব চায় না ফিরে রে,
হারে তারা কটু বলে স্থান দেয় না।।
৪। (হরি) দেও দুঃখ যা কর্ম্মের লিখন,
সব জম্মের দুঃখ কর মোচন।
(দীনার) মনেতে এই আকিঞ্চন রেÑ
গুরু করব তোমার সাধনা।।
৪৯। তাল- ঠুংরী
নামের সাধ লাগল না আমার লোভে। (২)
কু-রসেরি সাধে মত্ত ভুলে রলেম ভবে রে।।
১। কু-রসেরি আস্বাদনে হারাইলে পিতৃধনে।
এখন পাইনে বিশ্ব-জনার্দ্ধনে, নিজের কর্ম দোষে রে।।
২। পিতৃধন সব ত্যাজ্য করি,
নিলেম গরল বোঝাই ভরি।
এখন ভবের ঘাটে ডুবে মরি,
কিনারা না হেরি রে।।
৩। নামাস্বাদ মিলায়ে হরি,
দিয়ে তোমার পদ তরি।
(ভবের) আসা যাওয়া বারণ করি,
রাখ পদ তলে রে।।
(ভবের) আসা যাওয়া বারণ করি,
রাখ পদ তলেরে।।
৪। বলে দীনা এই বাসনা,
জনম আমায় আর দিওনা।
ঐ চরণে আশ্রয় বিনা,
মৈলেম গরল পানে রে।।
রাগিনী-বিরোলা
৫০। তাল-কাওয়ালী
কাল ঘুমে ঘুমিয়ে কেন রলি অচেতন
এই ভাবে কি জনম যাবে ওরে পাষান মন।।
ও তুই দেখ না চেয়ে দু নয়ন মেলিয়ে,
দীপ্ত ময় হইল ভাই, এ বিশ্ব ভুবন।।
১। পুর্ব্বা পুরুষ ভেবে ছিল উচ্চ বর্ণেতে,
ভগবান জম্মিয়া ছিল দীজ কুলেতে।
ঐ কুলে গুরু করিলে, ভগবান পাব সকালে,
তাই যেনে ঐ চরণে, লোটায় সর্ব্বজন।।
২। খাড়া পাতায় লিখে গেল পূর্ব্বা - পুরুষগণ,
এখন কি খাড়া পাতায় লিখিয়ে,
নিজের বুঝ ভাই নেও বুঝিয়ে,
এমন সুদিন আর পাবেনা কখন।।
৩। উচ্চ কুলে গুরু করে এলি চিরকাল,
পাতিয়া গিয়াছে তাঁরা, এসব কৌশল।
যত পূজা বেদ বিধি, গঠন করল ব্যবসা আমি,
এখন ঐ ব্যবসায় তারা হয় পরিপোষণ।।
৪। (উচ্চ) কুলের গুরু না ধরিয়া, ভাবুক চিনে ধর,
তন্ত্র মন্ত্র ছেড়ে দিয়ে, হরি কর সার।
যদি উদ্ধার হতে চাও, অন্য পূজা ছেড়ে দাও,
হরি গুরু পূজায় থাকো সতত মগন।।
৫। কলিতে হরিনাম যজ্ঞ ভাগবতে পাই,
হরি-গুরু পূজা ভিন্ন, অন্য পূজা নাই।
মনকে কর সরল সূক্ষ্ম, আর থেকনা হয়ে মূর্খ,
পূজ সবে যে যেই তন্ত্রে আছ উপাসন।।
৬। নানা পূজায় কি ফল হবে, বল দেখিরে ভাই,
অন্তিম কালে এসে উদ্ধার, করবেন কোন গোসাই।
যদি বল আল্লা হরি, কে নিবে ভাই উদ্ধার করি,
মনের ময়লা কর হরি নামেতে খন্ডন।।
৭। হরি ধরায় অবতীর্ণ, অন্ধকার আর নাই,
সর্ব্ব জীবে পুলকিত, সুখের সীমা নাই।
কুল গুরুর বিচার ছাড়, মন গুরু জড়িয়ে ধর,
হরি গোসাইর করণ কর দীনা অভাজন।।
রাগিনী-অকালা
৫১। তাল-ঠুংরী
এবার প্রেম নদীতে দে সাঁতার,
যদি রে তুই যাবি রে ওপার।
ঐ দেখ প্রেম নদীর ওপারে আছে রে,
প্রেমিক গুরু কর্ণধর।।
১। ভাবের ভষ্ম অঙ্গে মেখে,
সাঁতার দেরে মন সুখে।
ও তুই অনুরাগের হাত পা ঝেকে রে,
প্রেম নদীর ধর কিনার।।
২। গেলে প্রেমিক গুরুর পাশে,
দেখবি ঐ রূপ সদা বসে।
রাখবি প্রেমের ছবি, হৃদাকাশে রে,
তবে হবি অনুগত তার।।
৩। হলে গুরুর মনের মত গুরু হবে অনুগত।
তিনি চাকর সম অবিরত রে,
(ও তোর) মন যোগাবে নিরন্তর ।।
৪। দয়াল হরি গোসাই বলে,
গুরু পদে প্রাণ সপিলে।
তবে শঙ্কা নাই তোর কোন কালে রে,
দীনা তারে ভেবে দে সাঁতার।।
রাগিনী-আকালা
৫২। তাল-ঠুংরী
আমি ভজলেম না গুরুর চরণ,
কিসে মিলবে গুরু বস্তু ধন।
আমার গোনার দিন ফুরিয়ে গেল হে,
কোন দিন যেন হয় মরন।।
১। রলেম বৃথা কাজে, সংসার মাঝে,
চললেনম না তাই আপন বুঝে।
তোমায় নাহি পূজে, মায়ায় মজে হে,
কবি রঙ্গে ভঙ্গে কাল যাপন।।
২। সৎসঙ্গ ভিতরে গেলে,
সৎ কথায় মোর মন না চলে।
আমার মন মজে কু-মতির ছলে,
ফিরে না ঐ দুষ্ট মন।।
৩। যথা হরি নাম সংকীর্ত্তন হয়,
সময় কাটাই বাজে কথায়।
আমি কর্ম দোষী হে দয়াময়,
নিলেম না তোমার স্মরণ।।
৪। দীনা বলে হরি গোসাই
পদতলে আমায় দেও ঠাই।
গুরু তুমি বিনে মোর কেহ নাই,
অন্তে পাই যেন শ্রী চরণ।।
রাগিনী-মহসালা
৫৩। তাল-ঝুলুন
বাজে কথায় দিন ফুরালি,
গুরু কেন ভজলি না।
যদি গোনার দিনের এক দিন কমে,
সেদিন তো আর পাবি না।।
১। বৃথা কাজে কাটালি দিন,
কু-কর্ম্মে হও কালের অধীন।
অসৎ কথায় হয়ে প্রবীন
গুরু কর্ম্ম করলি না।।
২। সৎসঙ্গ ভিতরে গিয়ে,
সৎ কথায় কেন মন না দিয়ে।
জংলী কথায় মত্ত হয়ে,
সৎ উপদেশ শুনলি না।।
৩। যদি যাও নাম সংকীর্ত্তনে,
মন দেও বাজে আলাপনে।
শুনতে দেও না অন্য জনে,
নিজেও তাই শুন না।।
৪। কু-ভক্ষনে হয়ে মত্ত,
সদা কর মন রাজত্ব-
সার করলিনে গুরু তত্ত্ব,
অন্তরে কু-ভাবনা।।
৫। হরি গোসাই বলে বারে বারে
দিন খুয়াসনে জুলুম করে।
যমের হাতে পড়লে পড়ে,
দীনা এড়াতে (আর) পারবি না।
৫৪। তাল-গড়খেম্টা
গুরু গজাল হইলে হবে কি
আমি যে কোচ বিহীন সম্বল বিহীন।
গজালের রূপ নিরখি সেই কোচ হাকি,
আমি তাই রলেম না একদিন।।
১। সেই গজাল রূপ সাগরে, থাকে ঐ অতল নীরে
নিবিড়ে আছে পরে, অচেতন থাকে নিশিদিন।
গজাল ধরিবারে খুজি তারে,
খুজে না পেলাম কোনদিন।।
২। ভক্তি কোচ থাকত যদি, গুরু গজাল নিরবধি-
কোপাইবার পেতেম সন্ধি, তাকিয়ে রতেম্ চিরদিন।
গজাল পেলে দর্শন, মনের মতন
কুপিয়ে করতেম্ স্বাধীন।।
৩। চিরকাল রাখতেম কাজে, অন্ধকার যেত ঘুচে,
কুলমান দিতেম পিছে, হতেম তার চরণে অধীন।
ও তার চরণ পাশে রতেম বসে,
থাকত না আমার এই দুর্দিন।।
৪। দুঃখে দীনবন্ধু বলে, গুরু গজাল নাহি মিলে,
জনম আমার যায় বিফলে, অকাজে বিজ্ঞ হই প্রবীন।
আমি রলেম্ ভ্রান্তে অসার চিন্তে,
তাইতে মোর হলো না সুদিন।।
রাগিনী লম্পট
৫৫। তাল-খেম্টা
মন্দিরে চল মন আমার,
ঐ দেখ দিন ফুরাল কাছে এল, মরণ তোমার।
মন তোর ফেলে গরল, হইলে সরল,
মিলবে হরি অনিবার।।
১। বিশ্বাস আর প্রেম ভক্তি দিও চরণে,
হরি উদয় হবে হৃদয়, দ্বিদল আসনে।
তবে রূপের ছবি দর্শন পাবি,
নাম সুধায় পুরবে উদর।।
২। ভক্তির জোরে শ্রীমন্দিরে হরির অবস্থান,
দিবানিশি ভাব বসি যুগল চরণ।
হবে বাঞ্ছা পূরণ পাবি দর্শন,
শান্তি হরি একান্তর।।
৩। চরণ পাশে রবি বসে ওরে পাষান মন
দেও সপে যুগল রূপে রাখবি দুনয়ন।
তবে রূপ নিরখি রেখে আঁখি,
থাকবি আনন্দ অন্তর।।
৪। হরি চাঁদের রূপের কিরণ, লাগে যদি গায়,
আকুল প্রাণে নিশিদিনে হরিগুণ গায়।
ওরে শুনরে দীনা ঐ রূপ বিনাÑ
যায়না মনের অন্ধকার।