পূর্ব ইতিহাস গীতিঃ ১ম অংশ
পূর্ব ইতিহাস-গীতি
বন্দনা
জয় জয় হরিচাঁদ ক্ষীরোদ বিহারী।
জয় জয় গুরুচাঁদ রূপে লীলাকারী।।
জয় জয় ভক্তবৃন্দ লীলার প্রসঙ্গে।
প্রকাশে মধুর লীলা এসে পূর্ববঙ্গে।।
জয় বন্দ ঠাকুরের পূর্ব ইতিহাস।
শ্রীধামেতে মহালীলা করেন প্রকাশ।।
জয় শ্রীবারুণী জয় মহালীলা কাজ।
জয় জয় মৃত্যুঞ্জয় ভকত স্মাজ।।
যার জন্যে শ্রীবারুণী তার জয় জয়।
প্রকাশ করিলে যেবা তার জয় জয়।।
দন্তে তৃণ ধরি বন্দি চরণ সবার।
বিচরণে রেখ সবে আনন্দবাজার।।
শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি মহাপ্রভু হরিচাঁদের জন্ম উপলক্ষ্যে মহাবারুণী
শুন শুন ভক্তগণ পূর্ব ইতিহাস।
হরিচাঁদ হ’ল যবে ভুবনে প্রকাশ।।
বারশ’ আঠারো সালে অতি শুভদিনে।
মধুমাসে অবতীর্ণ দিন শুভক্ষণে।।
তিথি হয় ত্রয়োদশী বার বুধবার।
সপ্তম বার মধ্যে শ্রেষ্ঠ বুধবার।।
মহাবারুণীর দিনে প্রভাত কালেতে।
ক্ষীরোদ বিহারী এল কলিজীব হিতে।।
প্রকাশ মধুর লীলা শ্রীধাম ওঢ়াকাঁদি।
প্রেমসূত্রে ভকতগণে লইলেন বাঁধি।।
রাউতখামার সদা করে যাতায়াত।
মল্লকাঁদি আদি ভ্রমে ভকতের সাথ।।
ক্রমে ক্রমে বহু ভক্ত বহুস্থান হ’তে।
একত্তর হ’ল সবে হরিপ্রেমে মেতে।।
মাতিয়াছে মল্লকাঁদি রাউতখামার।
মধুর মধুর লীলা করেন প্রচুর।।
নারিকেল বাড়ি আর সেই সুরগ্রাম।
তালতলা আদি করি জয়পুর ধাম।।
বহুদিনাবধি লীলা করি মধুময়।
বারশ’ চুরাশী সালে লীলাসাঙ্গ হয়।।
শ্রীগুরুচাঁদের দেহে হইয়ে মিলিত।
চাঁদে চাঁদে সম্মিলন মধুর পিরীত।।
প্রভুর ভকত ছিল নামে রামচাঁদ।
শ্রীহরিচাঁদের হয় আদি পারিষদ।।
ওঢ়াকাঁদি গ্রামে জন্ম চৌধুরী বংশেতে।
করিলেন কত খেলা প্রভুর সঙ্গেতে।।
ঠাকুরের বংশধর শ্রীকালা নামেতে।
অনুক্ষণ ছিল মত্ত প্রভুর প্রেমেতে।।
হরিচাঁদ লীলা সাঙ্গে কাঁদে নিরবধি।
বিরহ অনলে তার দগ্ধ হয় হৃদি।।
দোঁহে মিলি একদিন বসিয়ে নির্জনে।
হরিচাঁদ স্মরি কাঁদে আকুল পরাণে।।
আহারে দয়াল হরি কোথা লুকাইল।
মরম বেদনা আর কে বুঝিবে বল।।
কেমনে বাঁচিবে প্রাণ প্রভু অদর্শনে।
এমত বিলাম করি কাঁদে দুইজনে।।
বহুক্ষণ পরে দোঁহে সুস্থির হইল।
মৃদুস্বরে রামচাঁদ মালুকে বলিল।।
প্রভু যদি ছেড়ে গেল কি নিয়ে থাকিব।
প্রভুর জন্ম উপলক্ষ্যে বারুণী করিব।।
জন্মোৎসব করিবার মনে হেন লয়।
স্মৃতি স্বরূপেতে তাহা রবে এধরায়।।
চল দোঁহে যাই এবে মতুয়া সদনে।
প্রকাশিব মমতাপ প্রতি জনে জনে।।
এইমত পরামর্শ করিয়ে দু’জন।
প্রাতঃকালে চলি যায় মতুয়া ভবন।।
শ্রীনবীন বসু আর শ্রীরাইচরণ।
বংশীমহাভাগ পাশে এল দুইজন।।
শুন ভাই আমাদের মরম বেদন।
প্রভুর বিরহ দাহ না রহে জীবন।।
এক কর্ম মোরা এবে ধারণা করেছি।
বলিতে মরম কথা আমরা এসছি।।
প্রভুর জনম তিথি যে দিনেতে হয়।
বারুণী মিলাব ব’লে ভেবেছি হৃদয়।।
সেই দিন সবে মোরা একত্র হইব।
প্রভুকে স্মরিয়ে মোরা আনন্দ করিব।।
শ্রীহরিচাঁদের জন্ম উৎসব হইবে।
শ্রীমহাবারুণী ব’লে নাম ব্যাখ্যা হ’বে।।
এইমত বলাবলি করি একে একে।
হরিষে বিষাদ হ’য়ে কাঁদে মনোদুঃখে।।
অধৈর্য হইয়ে সবে কাঁদিতে লাগিল।
কেঁদে কেঁদে রামচাঁদ সবাকে বলিল।।
প্রতি অবতারে হেন করে ভক্ত সব।
স্থানে স্থানে করে প্রভুর জন্ম উৎসব।।
শ্রীকৃষ্ণর জন্মাষ্টমী করে ভাদ্রমাসে।
কৃষ্ণভক্তগণ ভাসে প্রেমের উচ্ছ্বাসে।।
নদীয়ায় মহোৎসব করে বৈষ্ণবেরা।
হা গৌরাঙ্গ ব’লে সবে হয় মাতোয়ারা।।
পরেতে খেতরী ধামে লীলার প্রকাশ।
নিত্যানন্দ হইলেন নরোত্তম দাস।।
শ্রীনিবাস শ্রীনিমাই অদ্বৈত শ্রীরাম।
তিনপ্রভু করে লীলা অতীব উত্তম।।
অদ্যপিও সেই লীলা করে ভক্তগণ।
মোরাও করিব এক মেলার সৃজন।।
একে হয় ওঢ়াকাঁদি চাঁদের বাজার।
গুরুচাঁদ রূপে হয় মালিক তাহার।।
প্রেমের বাজারে হ’বে আনন্দের মেলা।
খেলাইব মতোগণে প্রেমের এ খেলা।।
হরিবোলাগণ হবে দোকান পশারী।
প্রেমে পুলকিত হ’য়ে রবে সারি সারি।।
আনন্দের পূর্ণলীলা হইবে তথায়।
বিকিকিনি করিবেন আনন্দ হৃদয়।।
অতএব চল সবে গুরুচাঁদ ঠাই।
সেই দেহে স্থিত আছে ক্ষীরোদের সায়ী।।
এত শুনি সবাকার আনন্দ উদয়।
উপনীত যথা গুরুচাঁদ দয়াময়।।
প্রণমি প্রভুর পদে কহে সমাচার।
সকাতরে প্রভুপদে মাগি পরিহার।।
মরমের কথা মোরা বলিতে এসেছি।
হৃদয় মাঝারে এক ধারণা করেছি।।
কৃপা কর এইবার শুন দয়াময়।
যে বাসনা আমাদের অন্তরেতে হয়।।
প্রভুর জনম তিথি সেই দিনে হয়।
শ্রীবারুণী মিলাইব ভেবেছি হৃদয়।।
কৃপাবলে আপনার আজ্ঞা যদি হয়।
পূর্ণ হয় নাকি হরিচাঁদের কৃপায়।।
এমত বলিয়ে সবে করে সবিনয়।
শুনিয়ে তাদের প্রতি বলে দয়াময়।।
তোমরা বলিলে যাহা এবে মম ঠাই।
শিশুকালে পিতা মোরে দেখালেন তাই।।
ঘোর অন্ধকার নিশি ছিলাম ঘুমিয়ে।
শোভনা দেখাল মেলা দেখিলাম যেয়ে।।
মনে যদি হয়ে থাকে তোমা সবাকার।
তাহে কোন বাঁধা নাই জানিও আমার।।
যতবার অবতার হয় ধরাধামে।
প্রতিস্থানে এ উৎসব তিথি অনুক্রমে।।
কৃষ্ণের জনম তিথি অষ্টমী তিথিতে।
নন্দ করে সে উৎসব সেই গোকুলেতে।।
সেই তিথি অনুযায়ী জন্মতিথি ধ’রে।
নানাস্থানে কত লোক জন্মাষ্টমী করে।।
শ্রীগৌরাঙ্গ জন্ম লয় মায়াপুরী গায়।
বৈষ্ণবে উৎসব করে শ্রীধাম নদীয়ায়।।
এইবারে মহোৎসব হয় যথা তথা।
তোমাদের বাঞ্ছা পূর্ণ কর সবে হেথা।।
কোন প্রকারেতে যদি করিবারে পার।
ব্যাপক হইবে পরে সকল সংসার।।
ওঢ়াকাঁদি নহে শুধু হবে এই মেলা।
প্রতি দেশে হবে এই মধুর খেলা।।
লড়িবে অনেক দেশ মেলার কারণে।
অগণিত লোকে শান্তি পাবে দরশনে।।
বাল্য বৃদ্ধ যুবা পৌঢ় নারী কি পুরুষ।
সবে এসে এই মেলায় লভিবে পীযুষ।।
ভাবী কালে হবে মেলা ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিত।
এই মেলা যদি সবে করে সংস্থাপিত।।
যদ্যবধি চন্দ্রসূর্য উদয়ান্ত হবে।
তদবধি এই লীলা বিদ্যমান রবে।।
এইমত বলে যদি প্রভু দয়াময়।
শ্রুতমাত্র সবে ভাসে আনন্দ গোলায়।।
বিপুল আনন্দে মেতে বলে সর্বজন।
আপনার কৃপা হলে হইবে পূরণ।।
প্রেমের পাথারে সবে খেলিব সাতার।
অদ্য হতে হল নিমন্ত্রণ অভিসার।।
বুঝিলাম তুমি হও জীবের জীবন।
তুমি হও আমাদের ভবারাধ্য ধন।।
ভক্তবাঞ্ছা পুরাইবে ভক্তাধীন হরি।
হ’লেম নিশ্চিন্ত শুনে বচন মাধুরী।।
আগামী চৈত্রেতে হোক মেলা অভিসার।
শুভস্য শীঘ্রং বাক্য রয়েছে তোমার।।
অতএব এই কর্ম ভাবয়েছি সার।
আজ্ঞা দিলে জানাইব গোচরে সবার।।
বন্ধন পানেতে চাহি আছি মোরা সব।
অবিলম্বে হ’ক এই বারুণী উৎসব।।
প্রভু বলে হোক তাই ক্ষতিই কিবা তায়।
জানাইয়ে দাও তব সকল জনায়।।
এইভাবে বারুণী পরামর্শ হ’ল।
পুনরায় রামচাঁদ প্রভুকে বলিল।।
কিবা ভাবে প্রভু মোর দেখাইল তাই।
কৃপা করি কহ প্রভু শুনিবারে চাই।।
প্রভু বলে একদিন রজনী যোগেতে।
ঘুমিয়ে ছিলাম আমি নিদ্রা আবেশেতে।।
কি যেন ভাবিয়ে পিতা বাটীর বাহিরে।
একাকী এলে পিতা না বলিয়ে কারে।।
মহামেলা মিলিয়েছে চাঁদের বাজার।
নানা বর্ণ ঘরদ্বারা অতি চমৎকার।।
স্থানে স্থানে আছে কত দোকানী পশারী।
কোন স্থানে মতুয়ারা বলে হরি হরি।।
নানা মত খেলা কত বর্ণনা অতীত।
খেলার ছলে কেহ কেহ গাহিতেছে গীত।।
ভাগ্যক্রমে শোভনা দেখিতে পাইল।
আনন্দে বিভোর হ’য়ে আমাকে ডাকিল।।
দুইভাই এক সঙ্গে হইনু বাহির।
নেহারিয়ে মম চক্ষু হ’য়ে গেল স্থির।।
দেবতা মানুষে মিশে বলে হরি হরি।
অনুক্ষণ উঠিতেছে প্রেমের লহরী।।
হুঙ্কারিছে মতুয়ারা বলে হরিবোল।
মেঘের মণ্ডলে যেন দেবের বাদল।।
নানা স্থানে নানা রঙ্গে মরি কি বাহার।
ঘোড় দৌড় হইতেছে অতি চমৎকার।।
নিশ্চল নিস্পদ যেন হ’ল মম কায়।
নেহারিনু সেই লীলা নির্বাক হৃদয়।।
হেনকালে উমাকান্ত এক অশ্ব ধরি।
পিতার সকাশে বলে সবিনয় করি।।
এই ঘোড়া দিতে হবে আমাকে বাঁধিয়ে।
ছাড়িব না এই ঘোড়া রাখিব ধরিয়ে।।
পিতা বলে মহামেলা কর দরশন।
এই ঘোড়া নহে তুমি করিও ধারণ।।
অনেক কৌশলে সেই ঘোড়া ছাড়াইল।
ক্ষণপরে সেই মেলা সমাপ্ত হইল।।
সেইদিন এ মেলার সৃষ্টি হইয়াছে।
আমার প্রাণেতে তাহা অঙ্গিত রয়েছে।।
পিতার মন বাসনা করিতে পূরণ।
তোমরাও কর এবে তার আয়োজন।।
শুনিয়ে সবার চিত আনন্দে ভরিল।
হরিগুরু প্রেমানন্দে হরি হরি বল।।
মহাবারুণী বা আনন্দমেলার অভিসার
পরে বারুণীর দিনে আইলেন ভক্তগণে
হরি বলে ক’রেছে কীর্তন।
হাসে কাঁদে নাচে গায় বয়ান ভাসিয়ে যায়
সবাকার প্রেমাবিস্ট মন।।
কেহ বা করায় স্নান কেহ করে নাম গান
কেহ কেহ ধুলায় লোটায়।
কেহ আর্তনাদ করি মুখে বলে হরি হরি
ক্ষণে ক্ষণে করে হায় হায়।।
কীর্তনের ধ্বনি শুনে ধেয়ে এল বহু জনে
শুনিতেছে হরিগুণ গান।
শুনে এই সংকীর্তন প্রেমাবিস্ট তনুমন
আঁখিজলে ভেসেছে বয়ান।।
আসিল দেবলাগণে মিশে নরবালা সনে
স্নান করি গিয়ে প্রভুপাশ।
ভক্তিডালা নিয়ে হাতে অতি আনন্দিত চিত্তে
প্রণমিল গলে দিয়ে বাস।।
প্রভু বলে সব মাতা শুনহ আমার কথা
এস হেথা প্রতি বারুণীতে।
নেহারি আনন্দ মেলা ঘুচে যাবে সব জ্বালা
প্রেমানন্দ বাড়িবে হৃদেতে।।
এই মেলা দরশিলে বাঞ্ছনীয় ফল ফলে
দূরে যায় অসার ভাবনা।
বিদুরিত হবে দুঃখ হৃদে হবে প্রেম সুখ
এই ভাবে অভাব র’বেনা।।
গয়া, গঙ্গা, বারানসি সকলে মিলেছে আসি
রহে তারা হ’য়ে একত্তর।
এসে তারা মম পাশে ব’লেছে মধুর ভাষে
ঘুচাইব জীব পাপ ভার।।
এমত বলিয়ে তারা বহিয়ে প্রেমের ধারা
আছে মম পুকুর মাঝার।
স্নান সমর্পিলে তথা দূর হবে কলুষিতা
আর না থাকিবে পাপভার।।
এইমত কহে বাণী গুরুচাঁদ গুণমণি
শুনে সবে আশ্চর্য গণিল।
সবে আনন্দিত হ’য়ে পুকুরে চলিল ধেয়ে
হরষিতে স্নান সমাধিল।।
এদিকে মতুয়াগণ করে নাম সংকীর্তন
মহাভাবে হইল কীর্তন।
তাহে হ’ল মহাভাব নবরূপ নব ভাব
কি যেন কি হইল তখন।।
এক জ্যোতিঃ অকস্মাতে হ’ল কীর্তনের ভিতে
পুনঃ তাহা লুক্কায়িত হ’ল।
বাতাহত বৃক্ষ যত মতুয়ার গণ যত
সবে মিলে ভুতলে পড়িল।।
কাহার নাহিক জ্ঞান সবে যেন মৃত প্রাণ
ভাবের তরঙ্গ ব’য়ে যায়।
জ্যোতিরূপে হীরামন মৃত্যুঞ্জয় শ্রীলোচন
শ্রীগোলক দশরথ হয়।।
ব্রজনাথ বিশ্বনাথ নাটুকে করিয়ে সাথ
এল সবে কীর্তনের ভিতে।
প্রেম বন্যা উথলিল কারো হৃদকম্প হ’ল
কেহ বা আকুল বড় চিতে।।
রবে প্রেম সমীরণ মহাবেগে অনুক্ষণ
অনুরাগ মেঘ গর্জে তায়।
অভিমানী কর্মীজ্ঞানী শুনে কীর্তনের ধ্বনি
সবে তারা মানিল বিস্ময়।।
নাম ব্রহ্ম শিলাবৃষ্টি দলিল ব্রহ্মার সৃষ্টি
ত্রিভুবন করে টলমল।
কোথা রৈল বাড়ি ঘর পুত্র কন্যা পরিবার
সব ত্যজি বলে হরিবল।।
শ্রীবারুণী অভিসার করে ব্রহ্ম পরাৎপর
মাতাইতে কলি জীবগণে।
আনিয়ে পরম ধন করিলেন বিতরণ
ধনী করিবারে সর্বজনে।।
প্রথমে অধিক নহ অল্প খরিদ্দার সহ
বেচাকেনা আনন্দ বাজারে।
ক্রমেই জুটিল আসি বহু বহু দেশবাসী
নিল ধন শক্তি অনুসারে।।
সে হইল হরিবোলা বিস্তারে আনন্দ মেলা
মিলিয়েছে ওঢ়াকাঁদি ধামে।
গুরুচাঁদ রূপধারী আছে ক্ষীরোদ বিহারী
মহাজন রূপে সে মোকামে।।
আছে বহু সদাগর হরিপ্রেমে অধিকার
করিয়েছে জনমের মত।
শ্রীতারক মহানন্দ আর আর ভক্ত বৃন্দ
বিলায়েছে বুঝিয়ে সে চিত।।
কেহ কেহ ফেরী করে বহু দূর দেশান্তরে
খরিদ্দার জুটিল বিস্তার।
এসে দোঁহাকার পাশে হারাইয়ে দ্বেষ দিশে
পদে ধরি কাঁদে অনিবার।।
বুঝিয়ে তাহার মন ধন করে বিতরণ
পুনঃ সেও নিজ দেশে গিয়ে।
তার হয় ভাবোদয় ফিরে এসে পুনরায়
প্রেমধন নেয় আর চেয়ে।।
এইভাবে নিশিদিন সবে করে প্রেমাধিন
দূর দেশে করয় ভ্রমণ।
হরি হরি বল ভাই এমত হবার নাই
দোঁহে হয় পতিত পাবন।।
প্রেম বন্যার উত্তাল তরঙ্গ বা মহাবারুণী বিস্তার
যে দেশেতে ভ্রমিতেন স্বামী মহানন্দ।
অথবা যে দেশে যান শ্রীতারক চন্দ্র।।
সেই খানে খরিদ্দার আসিয়ে জুটিত।
দোঁহার সকাশে সবে ধন প্রাপ্ত হ’ত।।
ওঢ়াকাঁদি বারুণীর দিবসে আসিয়ে।
আনন্দ বাজারে সবে বেড়ায় নাচিয়ে।।
প্রেমের তরঙ্গ মালা বহে নিশিদিন।
সে তরঙ্গে ভাসে যত মতুয়া প্রধান।।
তাহা হেরে অনেকের হ’ত ভাবোদয়।
সে জন ভাসিত শেষে তরঙ্গ গোলায়।।
এইভাবে অনেকেই হয় মাতোয়ারা।
প্রেমনীরে তা সবার ভাসে আঁখি তারা।।
হরিগুরুচাঁদ বলি জোড়ায় ধরণী।
ব্যাকুলিত চিত্তে কাঁদে পুরুষ রমণী।।
অম্বর নাহি সম্বরে মেতে হরি নামে।
কুলমান যায় ভেসে শ্রীহরির প্রেমে।।
এইভাবে বহু জনা প্রেমেতে মাতিল।
অভিমান উচ্চকুলে ভাঙ্গন লাগিল।।
বৈদিক ক্রিয়াদি যত সব ভেসে যায়।
কর্ণফল বৃক্ষ ভেঙ্গে সমূলে তলায়।।
পঞ্চশাখা বিস্তারিয়ে ছিল মুক্তি তরু।
ডালে মূলে ভাসাইল বাঞ্ছা কল্পতরু।।
মন্ত্র বীজ শস্য ক্ষেত্রে ঘটেছে প্রলয়।
উত্তাল তরঙ্গ মালা বাড়িছে সদায়।।
চিত্রগুপ্ত হেরে তাহা মানিল বিস্ময়।
কোন যুগে হেন বন্যা না বহে ধরায়।।
বারুণী দিবসে আমি ওঢ়াকাঁদি যাব।
হরিভক্তগণ সনে কীর্তন করিব।।
শুধুমাত্র করিলাম পাপের বিচার।
হরিনাম নিতে না পাইনু অবসর।।
হা হা প্রভু দয়াময় ক্ষীরোদ বিহারী।
বহায়েছে পূর্ব বঙ্গে প্রেমের লহরী।।
একবার জম্বুদ্বীপে করুণ প্রেরণ।
উদ্ধার হইয়ে যাক পাপী তাপীগণ।।
সেই সনে এ অধমে লইবেন তীরে।
এই ভিক্ষা মাগি প্রভু ও পদ নখরে।।
বিনয় বচনে চিত্রগুপ্ত ইহা কয়।
স্বামী মহানন্দ ডাকে আয় আয়।।
এইবার পূর্ণ লীলা বাকী না রাখিব।
একে একে সবাকারে প্রেমধন দিব।।
এমত শুনিয়ে বাণী বিমানে চড়িল।
মহানন্দ পদতলে শির লোটাইল।।
ভক্তিভরে প্রণমিল গুরুচাঁদ পদে।
কেঁদে বলে ওহে প্রভু স্থান দেও পদে।।
মহাপ্রভু বলে তুমি শুন মহাশয়।
মহানন্দ পদতলে বিকায়েছে কায়।।
তবে আর নিরানন্দ কেন বাছাধন।
অকপটে নিয়ে যাও হরি প্রেমধন।।
ধনের প্রভাব মেনে করিও বিচার।
তা হইলে তব দোষ না থাকিবে আর।।
এইরূপে চিত্রগুপ্ত পেল প্রেমধন।
ধ্রুব সত্য বলেছেন সাধনের ধন।।
বারুণী দিবসে নাই যমের কাছারী।
চিত্রগুপ্ত রবিসুত বলে হরি হরি।।
যদি কেহ বারুণীতে শ্রীধামে মরিলে।
বিষ্ণুদূতে নিয়ে যাবে তাকে অবহেলে।।
যমদূত তাঁর পানে ফিরিয়ে না চায়।
যে ভাবে সেভাবে তাঁর প্রাণ গত হয়।।
যে স্থানে যে ভাবেতে হারাক পরাণি।
যদি সে জানিতে পারে প্রভুর বারুণী।।
মহাপাপী হইলেও না থাকিবে পাপ।
মহাপ্রভুর কৃপায় সে হইবে নিষ্পাপ।।
এইমত বারুণীর মহিমা প্রচার।
ক্রমেই মহাবারুণী হইল বিস্তার।।
যে দেশে যে দেশে আছে যত হরিবোলা।
বারুণী দিবসে এসে করে প্রেম খেলা।।
ফেরী করি যেবা করে মুদ্রা উপার্জন।
মাথে করি এনে দেয় যথা মহাজন।।
তার মাঝে যদি কেহ কিছু করে চুরি।
সে হইতে আর তার নাহি চলে ফেরী।।
আপনি হইতে সেই চোর পড়ে ধরা।
জনমের মত শেষ হয় ফেরী করা।।
নানারূপে শাস্তি পায় আপন হইতে।
এ বড় আশ্চর্য ফেরী প্রেম বাজারেতে।।
এ দানিতে ফেরিওয়ালা হইল অশ্বিনী।
গোঁসাই অশ্বিনী বলে তাহার বাখানী।।
শ্রীতারক মহানন্দ তাহার রক্ষক।
স্বয়ং শ্রীগুরুচাঁদ তাহার চালক।।
শ্রীহরি সংগীত খানি ভাষায় রচিত।
ফেরী করা মূলধন তাহে আরোপিত।।
মহাপ্রভু পদে তাহা সমর্পণ করি।
জনমের মত সাং করিয়াছে ফেরী।।
রতন মণির রত্ন রত্নকে দানিয়ে।
প্রভুর পদ সেবায় র’য়েছে মাতিয়ে।।
ফেরিওয়ালা হয় এক শ্রীদেবী চরণ।
শ্রীতপস্বী বালা নামে হয় আর জন।
এইমত ফেরিওয়ালা যত জন হয়।
বারুণী দিবসে এসে সবাই উদয়।।
কেহ বহু খরিদ্দার করিয়ে সঙ্গেতে।
শ্রীহরি সংগীত গাহে নামে প্রেমে মেতে।।
বাজাইয়ে জয় ডঙ্কা কাপায় ধরণী।
ঝাঁজ খোল করতাল সুমধুর ধ্বনি।।
বিজয় নিশান হস্তে করি হুহুঙ্কার।
শ্রীধামাভিমুখে সব হয় অগ্রসর।।
বিচিত্র গতিতে সবে করে হরিনাম।
কপিগণসহ যথা যোদ্ধাবেশে রাম।।
সেইমত বীরবেশে বলে হরি হরি।
কাহার বা দু’নয়নে বহে প্রেমবারি।
হা হা গুরুচাঁদ ব’লে ধুলায় লুটায়।
বহে ধারা দু’নয়নে বরিষার প্রায়।।
কেহ আসে নৌকা পথে পায়ে দলে কেহ।
পথি মধ্যে নানা রঙ্গে করয় উৎসাহ।।
নরবালাগণ সনে দেববালা গণে।
মত্ত থাকে সুমধুর কীর্তন শ্রবণে।।
কেহ বা শ্রবণ করে কেহ নাম গায়।
কেহ গুরুচাঁদ ব’লে কাঁদে উভরায়।।
অদৃশ্য ভাবেতে রহে মানব গোচরে।
কীর্তন মাঝেতে থেকে হুহুকার করে।।
সেই দলে রাগাত্মিক ভাবের উদয়।
হুঙ্কার করিয়ে তারা উভরোড়ে ধায়।।
সেই দলে থাকে সে পাগল হীরামন।
বীর করুণ রসেতে মত্ত সর্বজন।।
এইমত আসে যায় মতুয়ার দল।
ঘাটে পথে বহে সদা হিল্লোল কল্লোল।।
শ্রীলোচন দশরথ আর মৃত্যুঞ্জয়।
মহানন্দ পূর্ণানন্দ ব্রজনাটু রয়।।
বিশ্বনাথ ব্রজনাথ মঙ্গল সুজন।
সবে মিলে করে এসে বারুণী দর্শন।।
অদ্যপিও সেই লীলা করে দয়াময়।
কোন কোন ভাগ্যবান দেখিবারে পায়।।
মানুষেতে করে লীলা মানুষে মিশিয়ে।
স্বরূপ মূরতি রাখে সবে লুকাইয়ে।।
দিবানিশি হয় নাম মধুর মধুর।
বড়ই আশ্চর্য হয় এ লীলা প্রভুর।।
যে যেখানে যে ভাবেতে আছেন বসিয়ে।
সবে মিলে করে নাম আনন্দে মাতিয়ে।।
স্থান কি অস্থান ব’লে নাহিক সন্দেহ।
সবাকার হৃদি মাঝে প্রেমের প্রবাহ।।
কোন স্থানে বসি দশ বার জন।
করিতেছে বসি হরি কথা আলাপন।।
তাহাতেও কান্নাকাটি প্রেমের লহরী।
কাঁদিছে আকুল হ’য়ে ব’লে হরি হরি।।
নরনারী এক সনে ক’রেছে রোদন।
আঁখি জলে সবাকার ভেসেছে বদন।।
হাড়ি মুচী জোলা তাঁতি শূদ্র কি যবন।
ঝালো মালো সাহা পাল কামার ব্রাহ্মণ।।
গণ্ডিরেখা মাঝে নাহি হয় জাত পাত।
সর্বজাতি এক হ’য়ে সেবে এ’টো ভাত।।
জগন্নাথ প্রসাদন্ন সর্ব জাতি খায়।
একাত্ম একান্ন ভোজ ভিন্ন ভেদ নয়।।
কিব্বা সে আমিষ ভাব বর্ণনা অতীত।
মনে অন্য নাহি জাগে আপনা ব্যতীত।।
একের দর্শনে অন্যে আনন্দিত হয়।
অমিয় স্নেহের ভাব ধারা বাহি যায়।।
কোনদিন কারো সনে দেখা শুনা নাই।
দরশনে মনে জাগে যেন ভাই ভাই।।
সম্বন্ধ বিহীন মহা সম্বন্ধ হিসাব।
কোন যুগে যেন চেনা চিনি ছিল সব।।
ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপিত যত মতুয়ার গণ।
সবে যেন হয় এক জনক নন্দন।।
বহুদিন পরে যথা হইলে মিলন।
অমিয় স্নেহের ধারা হয় বরিষণ।।
কিবা যেন গুপ্তভাব ছিল পূর্বাপর।
মধুময় ভাব নাহি জাতির বিচার।।
দরশন মাত্রে করে প্রেম সম্ভাষণ।
গুরুজন হ’লে করে চরণ বন্দন।।
লঘুজনে গুরুজন করে আশীর্বাদ।
অবিলম্বে প্রাপ্ত হয় গুরুচাঁদ পদ।।
উত্তাল তরঙ্গ বাহি ধরা ভেসে যায়।
নরনারী ভাসে সবে প্রেমের গোলায়।।
যতদূর হ’তে যেবা আসে ওঢ়াকাঁদি।
স্বদেশ গমন কালে কহে কাঁদি কাঁদি।।
পারি যেন পুনরায় শ্রীধামে আসিতে।
এতেক বলিয়ে ভাসে আঁখির জলেতে।।
যেন প্রাণে নাহি চায় স্বদেশ যাইতে।
অলক্ষিত সূত্রে টানে পিছন হইতে।।
চলে যায় তবু তারা ফিরে ফিরে চায়।
গুরুচাঁদ ছেড়ে প্রাণ পাখী নাহি যায়।।
পুনরায় এসে করে চরণ বন্দন।
সরোদনে কহে কত কাতর বচন।।
যাই তবে ওহে বাবা আপনার দেশে।
দেশ শুদ্ধ লোক যেন ওঢ়াকাঁদি আসে।।
এত বলি আঁখি জল ঝরিয়ে অঝোরে।
মহাভাব জাগে শেষে হৃদয় মাঝারে।।
প্রভু বলে গৃহে যাও ওহে বাছাধন।
সকলে মিলিয়ে করো নাম সংকীর্তন।।
কাঁদিতে কাঁদিতে যায় আপনার দেশে।
দিবানিশি হরিগুণ গাহে প্রেমাবেশে।।
এইমত বহুলোক আসে আর যায়।
ঠাকুরের ধর্ম কেহ প্রচার করয়।।
এইভাবে শ্রীবারুণী দিগন্ত ব্যাপিত।
তীর্থ ছাড়ি বহু লোক হয় সমুদিত।।
একেরে শুধায় সেই তীর্থবাসী যিনি।
এ হেন ভাবের নাম কভু নাহি শুনি।।
বহু তীর্থ ভ্রমি আমি বহুজন সঙ্গ।
হেরি নাই কভু হেন প্রেমের তরঙ্গ।।
স্বয়ং এর অবতার সত্য বটে হেথা।
হরিনাম বিনে তাই নাহি অন্য কথা।।
ওঢ়াকাঁদি পূর্ণলীলা হ’য়েছে প্রকাশ।
হরিবল দিল গেল করিব এ ভাষ।।
বারুণী স্নানের ফল
ম’তোগণ গিয়ে শ্রীধামে উদিয়ে
নামে প্রেমে যায় মেতে।
হরিগুরুচাঁদ হৃদয়ের চাঁদ
বলে ভাসে প্রেম স্রোতে।।
গুরুচাঁদ মোর করুণা সাগর
কামনা সাগর করে।
ম’তোগণে যত হয়ে ভাবাশ্রিত
স্নান করে সেই নীরে।।
যেবা স্নান করে কামনা সাগরে
কোটি কুল পাবে মুক্তি।
সে জলে ডুবিতে প্রেমানন্দ চিতে
যেবা করে তারে ভক্তি।।
ব্রহ্ম কি গো হত্যা কিংবা ভ্রূণ হত্যা
করে যদি কোন জন।
ভকতি অন্তরে যদি স্নান করে
সর্ব পাপ বিমোচন।।
নাহি থাকে পাপ জাগে অনুতাপ
সুনির্মল হয় দেহ।
হয় প্রেমোদয় চিত্ত সন্ধ যায়
হৃদেতে হয় উৎসাহ।।
নাচে কাঁদে হাসে প্রেম নীরে ভাসে
পূর্বভাব নাহি রয়।
পাপে হ’য়ে মুক্ত নামে অনুরক্ত
সেই সে জনার হয়।।
নরবালাগণে আনন্দিত মনে
স্নান করে কুতূহলে।
যে যাহা বাঞ্ছায় সেই ফল পায়
বর্তমান ফল ফলে।।
তাহার কারণ তীর্থ অগণন
আগমন করে আসি।
না হবে এমন সুদিন কখন
উদিল যে পূর্ণ শশী।।
কৃপার সাগর কামনা সাগর
ক’রেছেন জীব তরে।
বন্ধ্যা নারীগণে প্রভুর বচনে
স্নান করে পুত্র তরে।।
নিস্ফল বৃক্ষেতে প্রভুর বাক্যেতে
সুফল ফলিত হয়।
বহুত ফলেছে জীবিত রয়েছে
বর্ণনা অতীত তায়।।
যার যে কামনা অথবা বাসনা
পূর্ণ অবলীলাক্রমে।
সন্তান লভিয়ে পুনঃহারা হ’য়ে
নানা ঠাই কত ভ্রমে।।
যে জন আসিয়ে মানসী করিয়ে
প্রভুপদে কাঁদে কত।
প্রভু দয়াময় সদয় হৃদয়
বলে দেন স্নান বিহিত।।
শ্রীহরি মন্দিরে মানসাদি ক’রে
স্নান করে কামনায়।
পুরিবে বাসনা শুন গো ললনা
স্বরূপ বচন হয়।।
পতির চরণে সদা নিশিদিনে
রাখিও প্রগাঢ় ভক্তি।
বাসনা পুরিবে সন্তান মিলিবে
পুণ্যক পাইবে মুক্তি।।
অষ্টাদশ মাস ত্যজি সহবাস
সদাই পবিত্র থেকে।
পতির সঙ্গেতে একান্ত প্রাণেতে
হরিনাম কর সুখে।।
অন্যে নাহি মন করিও কখন
যতনে পালিও কথা।
দুঃখ বিনাশিবে পুত্রবতী হবে
ঘুচে যাবে মনের ব্যাথা।।
কামনা সাগরে ভক্তি অন্তরে
যে জন করিবে স্নান।
ত্রিকুল উদ্ধার হইবে তাহার
হ’তে নহে কভু আন।।
স্নানে মহাফল ফলিবে সুফল
অবশ্য জানিবে তাই।
হেন অবতার এই ধরা পর
কখন ত ঘটে নাই।।
ঘটিবে না আর এই বাক্য সার
এইবার গত হ’লে।
প্রভু কৃপা বশে সব তীর্থ এসে
শ্রীধামে এসে উদিলে।।
ধন্য কলিকাল ধন্য হে সকল
প্রভুর ভকতগণ।
বিচরণ ভণে প্রেমানন্দ মনে
হরিবল সর্বজন।।
বারুণীর জন্ম ও মাহাত্ম
শুন হরিভক্তগণ পূর্ব ইতিহাস।
মহাপ্রভু নিজমুখে করেন প্রকাশ।।
একদা অষ্টমী দিনে গিয়েছি শ্রীধাম।
বহু ভক্তগণ এসে করি হরি নাম।।
বিপুল আনন্দ হল অষ্টমীর কালে।
সবে ভক্তগণ ভাসে প্রেমের হিল্লোলে।।
পরদিন প্রভু ঠাই বলি নানা কথা।
শুনিয়ে প্রভুর বাণী ঘুচে মন ব্যাথা।।
এ হেন সময় এক পুরুষ রতন।
শ্রীদ্বারিকা নাথ বাবু সেই সে সুজন।।
নিশ্চিন্তপুরেতে বাস করে মহামতি।
শাস্ত্রেতে সুবিজ্ঞ তিনি বুদ্ধে বৃহস্পতি।।
গুরুচাঁদ পদে তার একান্ত ভকতি।
রায় বংশে জন্ম তার শুদ্ধ শান্ত অতি।।
শ্রীধামেতে মাঝে মাঝে যাতায়াত করে।
গুরুচাঁদ বড় ভালো বাসেন তাহারে।।
একদিন এসে উপনীত ওঢ়াকাঁদি।
গ্রন্থ আলোচনা করে উল্লাসিত হৃদি।।
বড় মিষ্টি ভাবে তিনি বলিলেন কথা।
আসনেতে অধিষ্ঠান আছে বিশ্ব পিতা।।
নানা কথা আলোচনা করিয়ে উল্লাসে।
শ্রীদ্বারিকা নাথ এক বালকে জিজ্ঞাসে।।
বারুণীর জন্ম কথা বল শুনি তাই।
বহু শাস্ত্র অন্বেষীয়ে কভু নহে পাই।।
সন্দেহ রয়েছে প্রাণে বহুদিন ধরি।
বল হে মধুর কথা শুনি কর্ণ ভরি।।
সে জন শুনিয়ে হয় উল্লাসিত প্রাণ।
উৎকণ্ঠিত হ’ল বড় শুনিতে আখ্যান।।
শাস্ত্রজ্ঞান নাহি তার নাহি বুদ্ধি বল।
ভক্তিহীন অতি দ্বীন বড়ই দুর্বল।।
এ মহা প্রশ্নের উত্তর কেমনে দিবে।
তার সম অনভিজ্ঞ কেহ নাই ভবে।।
সে কি পারে প্রশ্নের করিতে উত্তর।
শুধুমাত্র ওঢ়াকাঁদি আসাযাওয়া সার।।
বিচরণ সঙ্গে মাত্র আসে আর যায়।
বর্তমানে পেয়ে ধন তবু নাহি লয়।।
চক্ষু হীন জ্ঞান হীন ভজন বিহীন।
মতুয়া অযোগ্য হয় অতি দীনহীন।।
সে জন বলিল বাণী করি সবিনয়।
উহার মরম তত্ত্ব পাইব কোথায়।।
আমি নহে জানি কভু এসব বচন।
জিজ্ঞাসা করিয়ে দেখি প্রভুর সদন।।
এত বলি দুইজন প্রফুল্লিত মনে।
উপনীত হয় গিয়ে প্রভুর সদনে।।
জিজ্ঞাসিল প্রভু ঠাই আনন্দ হৃদয়।
মম নিবেদন এক ওই রাঙা পায়।।
বারুণীর জন্ম তত্ত্ব শুনিতে বাসনা।
বলুন করুণাময় করিয়ে করুণা।।
শ্রীদ্বারিকানাথ বাবু জিজ্ঞাসে আমারে।
মূল মর্ম নাহি জানি কি কব তাহারে।।
নিজ গুণে কৃপা করি বলুন এবার।।
শ্রবণে জনম ধন্য করিব দোঁহার।।
এত শুনি দয়াময় প্রভু গুরুচাঁদ।
কহিতে মধুর গীতি পরম আহ্লাদ।।
মহাপ্রভু বলে শুন পূর্বের কাহিনী।
লক্ষ্মী অংশে জন্ম নিয়েছে বারুণী।।
সাগর দুহিতা হয় লক্ষ্মী ও বারুণী।
শুন বৎস হয় এই পূর্বের কাহিনী।।
এই দুই কন্যা হেরি যত দেবগণ।
ভক্তি ভরে করে সবে চরণ সেবন।।
মনফুলে আঁখিজলে সভক্তি চন্দনে।
ভক্তিভরে করে পূজা সহ নারায়ণে।।
সমুদ্র মন্থন কালে প্রথম মন্থনে।
দুই কন্যা জন্ম নিল হেরে দেবগণে।।
লক্ষ্মী ও বারুণী তাই ভবে প্রকাশিল।
পুনঃ মন্থনে উচ্চৈঃশ্রবাঃ জন্ম নিল।।
আর এক অশ্ববর জন্মিল তখন।
মন্থন করিয়ে পেল যত দেবগণ।।
উচ্চৈঃশ্রবাঃ ঐরাবত অশ্ববর হয়।
লক্ষ্মী ও বারুণী জন্ম একই সময়।।
বারুণী করিল স্তব চাহি নারায়ণে।
কিভাবে রহিব আমি এ বিশ্ব ভুবনে।।
নারায়ণ বলে শুন আমার বচন।
মধুমাসে তোমাকে পুজিবে নারায়ণ।।
বহুলোক স্নান দান করিবে তোমাকে।
ব্রাহ্মণ লইয়া পূজা করিবেক লোকে।।
সলিল সনেতে মিশে রবে ভূমণ্ডলে।
বহু লোক ডুবাইবে তোমার সলিলে।।
তব জলে ভক্তিভরে যে করিবে স্নান।
তা সবার চিরকাল করিও কল্যাণ।।
আর এক কথা আমি বলিব তোমায়।
অষ্টবিংশ মন্বন্তরে হইব উদয়।।
তব পূজা যেবা দিনে তিথি অনুসারে।
ক্রমেই হইবে ব্যক্ত বিশ্ব চরাচরে।।
কলির সন্ধ্যায় গিয়ে পূর্ববঙ্গ দেশে।
জনম লভিব আমি তোমার দিবসে।।
দেবতা সহিতে নরে পাইবে সেকালে।
এক সনে স্নান করিবেক যত জলে।।
দেবাসুর এক সাথে করাব মিলন।
সবে মিলি প্রেম সিন্ধু করিবে মন্থন।।
অপরূপ লীলা মোর হইবে ধরায়।
ভক্তগণে রবে ডুবে প্রেমের গোলায়।।
নামে প্রেমে মত্ত হবে দেবতা সকল।
তব জলে নামিবেক ব’লে হরি বল।।
মহাসুখে পাবে তুমি তাদের পরশে।
ভক্ত গৃহে যেতে হবে বহু দেশে দেশে।।
সন্তান সদৃশ মম ভকতের গণ।
দেব নর এক সনে হইবে মিলন।।
দেববালাগণ সব নরবালা সনে।
তোমার সলিলে ডুবাইবে সর্বজনে।।
তব নাম সে দিবসে হইবে প্রচার।
বারুণী দিবসে নাই জাতির বিচার।।
মিলিবে ছত্রিশ জাতি একাত্ম একান্ন।
তোমার পরশে হবে সর্বলোক ধন্য।।
ধন্য সেই কলিকাল ধন্য ভক্তগণ।
সে দিবসে হবে শুধু নাম সংকীর্তন।।
সেই কালে তব জলে যে করিবে স্নান।
যদি চ ভকতি হীন তথাপি কল্যাণ।।
মহাপাপী হ’লে তাঁর সর্বপাপ ক্ষয়।
পবিত্র ভক্তের কথা বলিবার নয়।।
এত বলি মহাপ্রভু বিদায় করিল।
এই সেই দিন সেই অবতার হ’ল।।
অষ্টবিংশ মন্বন্তর এই সেই লীলা।
হরিগুরুচাঁদ রূপে করে নব খেলা।।
এক অবিলম্বে তিনি করে বহু কর্ম।
ভাগবতে জানে মাত্র তাঁর মূল মর্ম।।
তাহার প্রমাণ আছে পুঁথি রামায়ণে।
বাল্মীকি লিখেছে তাহা অতি সযতনে।।
ষাট হাজার বর্ষ পূর্বে গীত রামায়ণ।
বৈকুণ্ঠেতে এ লীলার প্রথম সৃজন।।
এক হ’তে চারি মূর্তি করিয়ে ধারণ।
অবতার সংকল্পিত করেন তখন।।
সেই মূর্তি দেখে গিয়ে দেব প্রজাপতি।
প্রণমিল প্রভু পদে হ’য়ে হৃষ্টমতি।।
বলিলেন একি লীলা কহ চক্রপাণী।
এহেন মধুর লীলা না দেখি না শুনি।।
প্রভু কন শুন তবে ওহে মহাশয়।
রাম লীলা করিবে সে গিয়ে অযোধ্যায়।।
দশরথ পুত্র রূপে ক্ষত্রিয়ের বংশে।
জনম লভিব আমি তথা চারি অংশে।।
এক আমি হেনভাবে হইয়ে বিভক্ত।
জয় বিজয় নামে উদ্ধারিব মম ভক্ত।।
এই মত প্রকাশিয়ে ব্রহ্মার সদন।
রাম লীলা প্রকাশেন আনন্দিত মন।।
মহাদস্যু রত্নাকর করিয়ে উদ্ধার।
তাঁর দ্বারা লিখে রাম অংশ অবতার।।
প্রভুর মধুর বাণী করিয়ে শ্রবণ।
বারুণীর জন্মকথা লিখে বিচরণ।।
সমুদ্র মন্থন কালে মহাপ্রভু বলেছিলে
ভবে হব সেদিন উদয়।
ওঢ়াকাঁদি শেষ লীলা খেলেন মধুর খেলা
সঙ্গে যত ভকত নিচয়।।
পূর্ব কথা অনুসারে এসে এই ধরা পরে
বারুণী দিবসে জনমিল।
হয় নাই হবার না আইল ক্ষীরোদ শায়ী
পূর্ববঙ্গ উজ্জ্বল করিল।।
শ্রীবারুণী বঙ্গদেশে ব্যক্ত প্রভুর আদেশে
বহু ভক্ত করে স্নানকেলী।
মুখে বলে হরি হরি যেন মদমত্ত করি
বারুণীর জলে প্রেমকেলী।।
বারুণীর দিবসেতে বহুভক্ত একত্রেতে
হরিনামে হয় মাতোয়ারা।
হাসে কাঁদে উচ্চৈঃস্বরে কেহ পড়ে ধরা পরে
দু’নয়নে বহে প্রেমধারা।।
ধেয়ে প্রেম তরঙ্গিণী যথা রয় শ্রীবারুণী
মিলনেতে মহাভাবোদয়।
বর্ণিবারে নাহি জানি জয় জয় শ্রীবারুণী
পূর্ণলীলা হ’ল এ ধরায়।।
শ্রীহরির আগমনে আসিয়েছে জনে জনে
যেবা দেশে যত তীর্থ ছিল।
তীর্থরাজ গুরুচাঁদ লভিবারে সেই পদ
সবে এসে মিলন হইল।।
গয়া গঙ্গা বারাণসী কুরুক্ষেত্রে পুস্ক রাসি
প্রায়াগাদি তীর্থ যত হয়।
শ্রীকালিন্দি দ্বারাবতী শ্রীযমুনা সরস্বতী
ওঢ়াকাঁদি হইল উদয়।।
দ্বাদশ পুষ্করিণী করিলেন গুণমণি
দ্বাদশ তীর্থের অধিষ্ঠান।
শুধুমাত্র জীব হিতে সমাগত এ মহীতে
মানবের সাধিতে কল্যাণ।।
কে আছে এমন বন্ধু ত্বরাইতে ভবসিন্ধু
নানা ভাবে করে জীবোদ্ধার।
কভু হেন অবতার হয় নাই ধরাপর
ধন্য লীলা শ্রীধামে প্রচার।।
দীনহীন যত ছিল সবাকারে কোল দিল
আর দিল অমূল্য রতন।
বিনা পরিশ্রমে এবে প্রেমানন্দ উৎসবে
সর্ব তীর্থ করে দরশন।।
তীর্থ আছে যথা তথা অর্থাভাবে কেহ তথা
নাহি পারে করিতে গমন।
অর্থাভাবে সব নষ্ট গৃহে বসি পায় কষ্ট
শুধু মাত্র মনে আকিঞ্চন।।
করাঘাত হানি বুকে কেহ কাঁদে মনোদুঃখে
তীর্থধামে যাইতে নারিনু।
হায় হায় কিবা করি বিষ খেয়ে প্রাণে মরি
বৃথা এই জনম ধরিনু।।
কাঁদে হরি হরি ব’লে ভাসিতেছে আঁখিজলে
মনদুঃখ বাড়ে অতিশয়।
অর্থাভাবে ঘটে সব মনে হয় নিরুৎসব
শুধুমাত্র করে হায় হায়।।
জীবের দুর্গতি হেরি মোর গুরুচাঁদ হরি
সর্ব তীর্থ করে এক ঠাই।
ওঢ়াকাঁদি এলে মাত্র দেখা হবে সর্বতীর্থ
আর পাবে ক্ষীরোদের সায়ি।।
মুখে লও হরিনাম পূর্ণ হবে মনস্কাম
তীর্থরাজ পাবে দরশন।
সর্বতীর্থ ফল পায় যদি তার কৃপা হয়
যম ভয় হয় নিবারণ।।
আদি তীর্থ শ্রীবারুণী পরিষ্কার রূপে জানি
শুনিলাম শ্রীমুখের বাণী।
আদি তীর্থ স্নান কালে ব্রহ্মমুহূর্ত হ’লে
আদিদেব আইল ধরণী।।
পূর্ণব্রহ্ম আগমনে অংশরূপে যে যে স্থানে
সবে আসি হইল মিলন।
হরি বলে কাঁদি কাঁদি যেবা যাবে ওঢ়াকাঁদি
অবহেলে পাবে প্রেম ধন।।
চুম্বকের আকর্ষণে লৌহখণ্ড ধরি টানে
নিজ অঙ্গে করেন ধারণ।
জানিয়ে আপন মনে তীর্থসহ দেবগণে
ওঢ়াকাঁদি করিল মিলন।।
হবে তার তীর্থ ফল জনম হ’বে সফল
কৃপা হ’লে পাবে প্রেমধন।
প্রেম ভক্তি পরকাশ দুষ্কৃতি হইবে নাশ
কর্ম ফাঁস রবে না কখন।।
যাবে শমনের ভয় হবে ভক্তি ভাবোদয়
এ বড় মধুর লীলারঙ্গ।
কলিজীব ভাগ্যাকাশে পূর্ণচন্দ্র সুপ্রকাশ
কলির কলুষ করে ভঙ্গ।।
ঘটিয়েছে শুভদিন আসিয়েছে ভক্তাধীন
জীববাঞ্ছা করিতে পূরণ।
হরি হরি বল ভাই হেন দিন হ’তে নাই
কহে পদাশ্রিত বিচরণ।।
মনসার জন্ম কাহিনী
এইকালে কহে প্রভু অপূর্ব কাহিনী।
মনসার জন্ম তত্ত্ব আশ্চর্য বাখানী।।
সমুদ্র মন্থন কালে জন্মে পদ্মবন।
পদ্মবন ভালবাসে প্রভু নারায়ণ।।
পদ্মবনে মহাপ্রভু করেন বিরাজ।
ইহার প্রমাণ আছে সব গ্রন্থ মাঝ।।
তুলসী কানন যত্র যত্র পদ্ম বনানিচ।
পুরাণ পঠনং যত্র, তত্র সন্নিহিত হরি।।
পূর্ব পূর্ব গ্রন্থে আছে ইহার প্রমাণ।
পদ্মবনে বিরাজেন প্রভু ভগবান।।
এই পদ্মবনে জন্মে পদ্ম নামে কন্যে।
পদ্মবন করে আলো সে রূপ লাবণ্যে।।
প্রথমা যৌবনা কন্যা ত্রৈলোক্য মোহিনী।
বিষহরি বলি নাম রাখে পদ্মযোনী।।
রূপে মুগ্ধ হ’য়ে ভোলা তাহাকে ধরিল।
সুবর্ণের ঝাঁপি মাঝে তাহাকে রাখিল।।
সযতনে ঝাঁপি ল’য়ে কৈলাসেতে গেল।
মহামায়া মনে মনে সকল জানিল।।
মহামায়া মনে ভাবে এ কারে আনিল।
স্বপত্নী রূপিণী গঙ্গা শিরেতে ধরিল।।
পুনঃ বুঝি একে নিয়ে করিব বিহার।
সে আশা নৈরাশ আমি করিব এবার।।
শঙ্করের অদর্শনে ঝাঁপি নিয়ে করে।
আছাড়িয়ে ফেলে ঝাঁপি কৈলাস শিখরে।।
মনসার প্রতি দেবী করিয়েছে সন্দ।
আছাড়ের ঘায়ে হয় এক চক্ষু অন্ধ।।
বড়দুঃখ পেয়ে পদ্ম শিব প্রতি কয়।
কি উপায় হবে মোর কহ দয়াময়।।
মহামায়া এই দশা করিল আমার।
কেমনে বাঁচিবে প্রাণ কহ একবার।।
মনসার বাক্য শুনে কহে ত্রিলোচন।
স্বরূপ বচন মম করহ শ্রবণ।।
নির্ভয়েতে রহ তুমি সংসারের মাঝে।
তোমাকে পুজিবে অগ্রে দেবের সমাজে।।
পুজিবে তাহার পরে হাসেন হোসেন।
দেব ধন্বন্তরি তোমা শেষে পুজিবেন।।
তস্য পরে পুজিবেন চাঁদ সওদাগর।
সেই হ’তে তব পূজা হইবে প্রচার।।
ক্রমে সেই রাজ্য মাঝে প্রতি ঘরে ঘরে।
করিবে তোমার পূজা সবে ভক্তি ভরে।।
সর্ব দুঃখ দূরে যাবে না করিও ভয়।
যখন যা ঘটে তাহা ঈশ্বরের ইচ্ছায়।।
আমার বচন কভু অন্যথা না হবে।
বিশ্ব মাঝে সব করে তোমাকে পুজিবে।।
তব তত্ত্ব যেই জন করিবে প্রকাশ।
তাহাকে রক্ষিও সদা ব’লে হরিদাস।।
যে ধারণা ক’রে দেবী করিল এ কর্ম।
নাহি জানে মহামায়া তার মূল মর্ম।।
জরৎকারু মুনি নামে হবে তার পতি।
মিছামিছি দ্বেষ তোমা করে ভগবতী।।
অস্তিক নামেতে পুত্র হইবে তোমার।
মহাতপা হ’বে পুত্র ধরণী মাঝার।।
অনন্ত নাগের ভগ্নী তুমি মহাদেবী।
তোমার মঙ্গল গীতি গাহিছে সুকবি।।
ঘরে ঘরে তব নাম হইবে প্রচার।
তব তত্ত্বে বিশ্ব প্রাণী করিবে আদর।।
বহুলোক তব গুণে গা’বে এক সনে।
কেহ কেহ বসাইবে রতন আসনে।।
কেহ তব প্রতিমূর্তি করিয়ে গঠন।
তব গীত তব পার্শ্বে করিবে কীর্তন।।
কেহ ঘটে কেহ পটে পুজিবে তোমায়।
এই মত ব্যক্ত হবে জানিও নিশ্চয়।।
স্ত্রোত্র গীতি কেহ কেহ করিবে রচন।
ভক্তি ভরে কেহ কেহ করিবে পঠন।।
আর কিবা চাও ধনী বল একবার।
অবশ্য বাসনা পূর্ণ করিবে তোমার।।
বিষহরি বলে প্রভু আর নাহি চাই।
জনমে জনমে যেন তব পদ পাই।।
তথাস্তু বলিয়ে শিব বিদায় করিল।
হরি-গুরুচাঁদ পদ পারের সম্বল।।