মহা-মহাপ্রভু হরিচাদেঁর চতুর্থ আজ্ঞাঃ (পদ্য)
মহা-মহাপ্রভু হরিচাদেঁর চতুর্থ আজ্ঞাঃ
জগতের জীবে, প্রেম আচরিবে, লইবে প্রেমেতে দীক্ষা।
নিত্যকাল বিশ্বব্যাপী যেই গুণ রহে,
চিরন্তন প্রেম গুণ জানি তারে কহে।
সৃষ্টি, স্থিতি, সবি হয় প্রেমের কারণ;
প্রেম বিনা সুখ শান্তি নিশিথ স্বপন।।
প্রেম গুণে বিশ্বপিতা সকলি সৃজিল,
প্রেম গুণে ভালবাসা মন মাঝে দিল।
স্নেহ, দয়া, ক্ষমা, মায়া, করুণা, মমতা,
প্রেম গুণে ধন্য হয়, শাস্ত্রের বারতা।
যত্র জীব, তত্র শিব, সাধুগণে বলে;
সর্বজীবে প্রেম করো, এই ধরাতলে।।
ভেদাভেদ ভুলে যত জগতের জীবে,
সকলের প্রতি সম প্রেম আচরিবে ।
এরূপ করিলে হবে ঈশ্বরের সেবা,
প্রেম বিনা ভগবানে লভিয়াছে কেবা।
বিশ্বশান্তি লভিবারে প্রেমগুণ সার।
সর্বগুণ শ্রেষ্ঠ প্রেম শুন সমাচার ।।
নদীয়াতে শ্রীচৈতন্য হয়ে অবতার,
প্রেমগুণে মাতাইল এ বিশ্ব সংসার ।
চাঁদ কাজী, হরিদাস, জগাই-মাধাই;
প্রেমগুণে ধন্য হলো শুনিবারে পাই।
জাতি ভেদ জ্ঞান, সেথা হয়েছিল দূর;
মানুষে মানুষে হলো মিলনের সুর।।
আলোচনা ও বিশ্লেষণঃ
জীবে প্রেম করে যেবা,
সে করে ঈশ্বরের সেবা,
রূপ সনাতন আর দয়াল নিতাই।
প্রেমিক তাদের মতো কভু দেখি নাই।
আর সেই মহাপ্রভু স্বয়ং শ্রীচৈতন্য;
ভূমণ্ডলে অবতীর্ণ জীব মুক্তি জন্য ।
আপনি আচরি ধর্ম জীবেরে শিখায়,
আচণ্ডালে দিয়া কোল, প্রেম যে বিলায়।
ঘরে ঘরে হরিনাম করিলা প্রচার,
সকলেরে প্রেম করো, শিখাইলা সার।
মহাপ্রভু অবশেষে, হরিচাদঁ রূপে এসে, মহাপ্রেম বার্তা প্রচারিল;
দ্বাদশ বিধান মাঝে, সত্য প্রেম নীতি রাজে, জনে জনে এই শিক্ষা দিল।।
শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত, মহাগ্রন্থ সুললিত, রসরাজ করিলা রচনা।
মহাপ্রেম বার্তা যত, কাব্য ছন্দে প্রকাশিত, সুমধুর সকল ঘটনা ।।
শুনি সে জীবন বেদ, দূরে যায় ভেদাভেদ, বিদ্বেষের বিষ হয় ক্ষয়;
এসে পতিতের ঘরে, প্রেম দিলা ঘরে ঘরে, জয় প্রভু হরিচাদঁ জয় ।।
কর্মী, জ্ঞানী, মহাপ্রাণ, পতিতের ভগবান, গুরুচাদঁ তমোঃ বিমোচন,
অজ্ঞান আঁধারে যারা, ছিল হ'য়ে দিশেহারা, তাহাদের দিলেন জীবন ।
সামাজিক অবিচারে, সবলের অত্যাচারে, যারা ছিল বড় অসহায় ।
প্রেমগুণে ভালবেসে, তাহাদের পাশে এসে, নবজন্ম দিলেন সবায়।।
ব্রত ছিল সেবা ধর্ম, লোকশিক্ষা পূণ্য কর্মী, পতিতের হ'ল জাগরণ ।
ভেদ জ্ঞান করি দূর, গাহিলেন সুমধুর, মানুষের মাঝে নারায়ণ ।।
তন্ত্র মন্ত্র, কুসংস্কার, নিরাশার অন্ধকার, দূর হ'ল তাঁর মহিমায় ।
সন্তান সন্ততি যত, সবে আজ জাগরিত, ভক্তিভরে প্রণমি তাহায়।।