মহা-মহাপ্রভু হরিচাদেঁর দ্বিতীয় আজ্ঞাঃ (পদ্য)
মহা-মহাপ্রভু হরিচাদেঁর দ্বিতীয় আজ্ঞাঃ
পরনারী প্রতি, রাখিও ভকতি, জননী তুল্য ধারণা।
পরনারী মাতৃতুল্য সদা জেনো মনে,
সতী লক্ষ্মী, দেবী, নারী রাখিও স্মরণে।
মাহেশ্বরী, মহামায়া জগৎ জননী,
সর্বজীবে অধিষ্ঠাতা, প্রাণ স্বরূপিণী।
নারী মাত্র তাঁরি ছায়া, জানিও ধীমান্
মাতৃসমা নারীজাতি, তাই ক'রো জ্ঞান ।।
সুকঠিন এই নীতি, বিশ্ব হিতকারী,
জনে জনে মহামায়া, যথা দেখো নারী।।
যেবা মানে এই সত্য, কর্মে , মনে প্রাণে,
তিনি সাধু, সচ্চরিত্র, বিনয়ী বচনে।।
সুরলোকে, নরলোকে প্রশংসিত হ'ন;
পরনারী মাতৃবৎ ধারণা কারণ।।
স্বীয় পত্নী ভিন্ন আর সর্বাধিক নারীগণে,
মাতৃসম ক'রো জ্ঞান, শয়নে স্বপনে।।
চিন্তা, বাক্য, মন প্রাণ করি একত্তর,
পরনারী মাতৃতুল্য ভাবো নিরন্তর ।।
মনের কলুষ কালি সবি হবে দুর;
অবশ্য লভিবে মনে আনন্দ প্রচুর।।
কামের কামনা যবে দুর হয়ে রয়।
নির্মল, পবিত্র হয়, মানব হৃদয় ।।
ধর্ম ভাব, প্রেমাবেশ, ভক্তিরস সার,
নির্মল হৃদয়ে শুধু হয় যে সঞ্চার।।
পরনারীগণে তাই মাতৃ সম্বোধনে,
মনের কালিমা দুর ক'রো সযতনে।।
জগৎ মঙ্গলকারী প্রভু হরিচাদঁ ।
ভক্তপ্রাণে চিরতরে বাঁধে প্রেম বাঁধ ।
মনের কলুষ রাশি করিবারে ক্ষয়,
চিরসত্য নীতি গাঁথা গাহে প্রেমময় ।।
বিশ্লেষণঃ
দেশে দেশে যুগে যুগে পরনারী প্রতি,
পাপ দৃষ্টি দিয়া হ'লো অশেষ দুর্গতি।
রামায়ণে লেখা আছে রামের কাহিনী ।
স্বীয় পত্নী সীতাসহ বনে যান তিনি।
ত্রিভুবন জয়ী বীর, রাজা দশানন,
মতিচ্ছন্ন হয়ে করে সীতাকে হরণ।
করিল সীতার প্রতি বহু অত্যাচার;
সেই পাপে হ'লো তার সবংশে সংহার ।।
পরনারী মাতৃতুল্য সদা করি জ্ঞান,
অসাধ্য সাধন করে বীর হনুমান ।
নির্মল চরিত্র তাঁর, সর্বজয়ী বীর,
রাখিল অমর কীর্তি হয়ে নতশির।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
দেবব্রত নাম ধরে শান্তনু সন্তান ।।
ভীষ্ম নামে খ্যাত সেই মৃত্যুঞ্জয়ী বীর;
নিষ্পাপ, সংযত চিত্ত, শান্ত-সুধী-ধীর।
পরনারী মাতৃতুল্য সদা ভাবি মনে,
ইচ্ছামৃত্যু বরেছিল কুরুক্ষেত্র রণে।।
দুর্যোধন, দুঃশাসন, কৌরব দুর্মতি,
অশালীন আচরণে দ্রৌপদীর প্রতি;
রাজসভা মাঝে করে ঘৃণ্য অপমান।
কুরুক্ষেত্র রণে হ'লো দর্প অবসান ।।
শ্রীচৈতন্য প্রেমধন্য, সিদ্ধ হরিদাস,
বারাঙ্গনা লক্ষহীরা করি উপহাস,
একদা তাহার কাছে মেগেছিল রতি,
সিদ্ধ হরিদাস কহে বারাঙ্গনা প্রতি;
মাগো, মোর লক্ষ বার নাম জপ শেষে,
বাঞ্ছা তব পুরাইব অভিনব বেশে।
হরিনাম জপ করি হয়ে যায় ভোর,
হরিনামে হরিদাস রহিল বিভোর,
পুনরায় নিশিরাতে লক্ষহীরা
হরিদাস কহে তারে , মাগো, তুমি ধীরা,
শান্ত সুনির্মল চিত্তে করো গো শ্রবণ,
শ্রীহরি শ্রীকৃষ্ণ নাম করিব কীর্তন ।
পুনরায় ভোর হ'লো কীর্তনের শেষে।।
লক্ষহীরা ধন্য হ'লো প্রেমের আবেশে।।
সিদ্ধ হরিদাস তাঁকে মাতৃ সম্বোধনে,
কর্ণমূলে হরিনাম দিলা সযতনে।
লক্ষহীরা বারাঙ্গনা সাধুসঙ্গ ফলে,
চিরধন্যা , মাতৃসমা দিব্য প্রেম বলে।।
পরনারী প্রতি তাই, মাতৃজ্ঞান করা চাই, হরিচাদঁ দিলেন বিধান।
যেবা মানে এই নীতি, গাহি তাঁর গুণগীতি,
তার প্রতি শ্রদ্ধা করি দান।।
কবি রসরাজ যিনি, শ্রীতারক চাঁদ তিনি,
দ্বাদশ বিধান মান্য করি।
শ্রীশ্রী লীলামৃত, মহাগ্রন্থ সুললিত, রচিলেন হরিচাদঁ স্মরি।।
ভক্ত কবি ভগবান, রাখিতে ভক্তের মান, দ্বাদশ বিধান ব্যাখ্যা করে।
শ্রীঠাকুর অংশুপতি, চরণে জানাই নতি, দোষ ত্রুটি ক্ষমো কৃপা করে।।