মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

মহা-মহাপ্রভুর চতুর্থ আজ্ঞাঃ (গদ্য)

মহা-মহাপ্রভুর চতুর্থ আজ্ঞাঃ

জগতকে প্রেম কর।

আমি আমাকে যেমন ভালবাসি, জগতকে সেইরুপ ভালবাসি, তাহা হইলেই জগতকে প্রেম করা হইবে। হিন্দু, খ্রীষ্টান, মুসলমান এবং ব্রাহ্ম প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে কাহারও প্রতি ঈর্ষা বা ঘৃণা প্রকাশ না করাই এই বাক্যের উদ্দেশ্য।

"মিছে সব শাস্ত্র জানা, আসল পথ ঠিক হল না,
যে জন যার উপাসনা, সেই বলে তার মত,
শুনি নানা মুনি শাস্ত্র বকে, বনপর্ব ভারতে বকে,
কঃ পন্থাঃ প্রশ্ন বকে, ধর্ম বকে ধর্মসুত।
শিব ভজে শৈব যারা, শাক্ত কয় কালিতারা,
সূর্য কয় সৌর যারা, গণেশ কয় গাণপত্য,
জপে কৃষ্ণ মন্ত্র জোলা নকিম, তোর কৃষ্ণ বীজ নামাজের কলিম,
শক্তিবীজ করিম, রহিম, অসীম মতের মূল এক পথ।
নাস্তিকে কয় নিরাকার, ধর্ম কই ঠিক মণিকার,
মূল ব্রহ্ম কে কার কে কার, যে যার যে যার আত্ম,
তোমায় খ্রীষ্টে বলে কই যীশুজী, বৌদ্ধ বলে বুদ্ধ ভজি,
তোরে কয় বদর গাজী, মাল্লা মাঝি নেয়ে যত।
এক ব্রহ্ম নয় বিভিন্ন, ভিন্ন ভেদে ভক্তের জন্য, শ্যামা শ্যাম শিব অভিন্ন, গণেশ আদিত্য,
তোমার সাধন করে সে সাধকে, যে ভাবে যে তোমায় ডাকে, সেই ভাবে দয়া কর তাকে, হও দেখি তার বশীভূত।
হীরামনের মনভরা, গোলক চাঁদের মনহরা,
মহানন্দ কয় আমরা, ঐ রূপের আশ্রিত,
কিসের পঞ্চ তত্ত্ব পঞ্চা ব্রহ্ম, তুই দয়াল আমার আব্রহ্ম,
তারক তার পায় না মর্ম, হয় না সে রূপের অনুগত।"

লোক দেখিয়া জাতি নির্ণয় করা যায় না। কোন মুচির ছেলেকে দেখিয়া ব্রাহ্মণ বলিয়া অনুমান হয়, আবার কোন ব্রাহ্মণকে দেখিয়া নিকৃষ্ট জাতি বলিয়া অনুমিত হয়, সবিশেষ পরিচয় পাইলেই তৎক্ষণাৎ বিপরীত ভাবের সমাবেশ হয়, যে মুচিকে দ্বিজ ভ্রম হইয়াছিল তখনই তাহার প্রতি ঘৃণা হয়, যাহাকে দেখে অপছন্দ হইয়াছিল, দ্বিজ শুনিবামাত্র তাহার প্রতি ভক্তি আবির্ভাব হয়। কি ভ্রান্তি! এই ভ্রান্তি দূরীভূত করতঃ সকলের প্রতি সমভাব দেখাইবার নাম জগতকে প্রেম করা। যে কোন জাত হোক, তাহা হইতে নীচ জাতি দেখিলেই আপনা আপনি ছোট বলিয়া অনুমান হয়। আমরা সকলেই যে এক ঈশ্বরের সন্তান ও কলাংশ তাহা শাস্ত্র দৃষ্টে জানি, অথচ বিবেকে আসে না। সমাজের গণ্ডিরেখা পণ্ডিতেও অতিক্রম করিতে পারে না। চাণক্যের শ্লোক আছে, "আত্মবৎ সর্বভুতেষু"। মাত্র শ্লোকে আছে, কার্যে পরিণত হয় কই? জাতি পঞ্চ কন্টকের এক কন্টক এবং অষ্ট পাশের এক পাশ। এই গণ্ডিরেখা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য। একমাত্র মহাপ্রভু শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গদেব তিনি যবন চাঁদ কাজী, ব্রহ্ম হরিদাস, সাকর মল্লিক, দবির খাস এবং কায়স্থ ভূঁইমালী প্রভৃতি সঙ্গে একত্রে ইষ্ট, গোষ্ট, শয়ন, উপবেশন, পরন্তু আহারাদিও করিতেন। ইদানিন্তন সেই বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের পক্ক প্রসাদান্নই সর্বোচ্চ জাতিতেই গ্রহণ করিতেছেন। অথচ জাতিভেদ তাঁহাদের আত্মাকে এমনভাবে অধিকার করিয়াছে যে, তাহা আর ফিরে না। শ্রীক্ষেত্রে গণ্ডিরেখার মধ্যে জাতিভেদ নাই, বাহিরে এলে জাতিত্ব বন্ধন সুদৃঢ় হয়। বর্তমান মহা-মহাপ্রভু শ্রীশ্রী হরিচাদঁ ঠাকুর জাতিত্ব এবং গণ্ডিরেখা সমস্ত চূর্ণীকৃত করিয়া জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে হরিভক্ত করিতেছেন, জাতিভেদ উচ্চবাচ্য কিছু নাই। যেন সকলে এক প্রাণ, এক জাতি, এক পিতার সন্তান। ব্রাহ্মণের নবগুণ, উপবীত, বৈরাগীর ডোরক কৌপিন প্রভৃতি প্রেম সাগরে ভাসাইয়া দিয়া একতার স্বর্ণসূত্রে গ্রোথিত হইয়া শ্রীহরি কীর্তন পরায়ণ হইয়াছেন।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free