মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

প্রথম অংশ

মাতা পিতার বন্দনা
পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম সর্ব শাস্ত্রে কয়।
ভাবিয়া পিতার পদ রাখিনু মাথায়।।
যাহার কৃপায় আমি জগতে আসি।
তাহার শরণে পাপ খণ্ডে রাশি রাশি।।
না বুঝিয়া কত পাপ করেছি চরণে।
পাপের নাহি ক্ষমা সে চরণ বিনে।।
কত কষ্টে পিতা মোর করেছে পালন।
পিতৃ ঋণ শোধ দিতে পারে কোন জন।।
পিতা যে পরম বস্তু সাধনের ধন।
পূঁজিলিনা সে চরণ ওরে মূঢ় মন।।
মায়াজালে হয়ে বন্দি সে সব ভুলিলি।
ঘরেতে রাখিয়া ধর বাহিরে খুঁজিলি।।
যখনে ছিলিরে মন পিতৃ-মণি পুরে।
তথা হতে আইলিরে জননী জঠরে।।
দশ মাস দশ দিন ছিলি মাতৃগর্ভে।
মাতা মোর কত কষ্ট করে কত ভাবে।।
অসহ্য যাতনা মাতা সহে হাস্য মুখে।
আশাতে বাঁধিয়া বুক সদা থাকে সুখে।।
দশ মাস দশ দিন যখনে হইল।
প্রসব করিতে মাতা কত কষ্ট পেল।।
তারপর কতভাবে করেছে পালন।
স্তন দুগ্ধ দিয়ে মোরে বাঁচায় জীবন।।
তবু মাতা দিন রাত প্রফুল্ল-অন্তরে।
স্নেহভরে কোলে করে কত যত্ন করে।।
নিজে না খাইয়া মাতা খাওয়ায়েছে মোরে।
মলমূত্র ধোঁয়ায়েছে ঘৃণা নাহি করে।।
এত কষ্ট করে মাতা তবু হাসি মুখে।
মা শব্দের তুল্য দিতে আর কিছু নাই।
চরণে গয়া গঙ্গা সব কিছু পাই।।
এহেন মায়ের পদ ভাবিয়া অন্তরে।
লিখিলাম এই পুথি মা বাপের বরে।।
মাতা পিতার চরণে করিলাম স্তুতি।
পাপ দেহে যেন মোর জাগয়ে ভকতি।।
তাই বলি ওরে মন হরি হরি বল।
কান্দিয়া বিনোদ বলে বেলা ডুবে গেল।
                                                  
             শ্রীশ্রী হরিচাঁদ বন্দনা
নম নম হরিচাঁন্দ পতিত পাবন।
তব শ্রীচরণে মোর থাকে যেন মন।।
সাধনা না জানি প্রভু ভজন না জানি।
নিজ গুণে দাও তব চরণ দুখানি।।
তুমি হরি গুণনিধি জগতের সার।
ভব সাগর হতে কর মোরে পার।।
তোমার গুণের সীমা বর্ণিতে কি পারি।
গুণের অতীত তুমি দয়াল শ্রীহরি।।
তোমার ইশারাতে জগত চলে।
তোমার মায়াতে প্রভু জগত ভোলে।।
সত্য যুগে ছিলে তুমি নাম রূপ ধরি।
ত্রেতা যুগে রাম রূপে জন্মিলেন হরি।।
দ্বাপর যুগেতে প্রভু কৃষ্ণ অবতার।
কলিতে গৌরাঙ্গ রূপে হইল প্রচার।।
তারপর ওড়াকান্দি হলে অবতার।
চরণে কোটি কোটি করি নমস্কার।।
নম নম শান্তি মাতা জগত জননী।
হরিচাঁদ প্রাণপ্রিয়া লোচন নন্দিনী।।
চরণ যুগলে মাগো করি নিবেদন।
দয়া করে অধমেরে দিও শ্রীচরণ।।
হরি নাম প্রচারিতে হইলে প্রকাশ।
অধমেরে কর প্রভু শ্রী চরণে দাস।।
নমঃ নমঃ যশোমন্ত ঠাকুরের পিতা।
নমঃ নমঃ অন্নপূর্ণা ঠাকুরের মাতা।।
নমঃ নমঃ কৃষ্ণদাস প্রভু জ্যেষ্ঠ ভাই।
চরণেতে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।।
নমঃ শ্রী বৈষ্ণব দাস অংশ অবতার।
নমঃ নমঃ গৌরি দাস মহিমা অপার।।
নমঃ শ্রী স্বরূপ দাস সবার কনিষ্ঠ।
ঠাকুর চরণে যার ভক্তি একনিষ্ঠ।।
নমঃ নমঃ শ্রীসুধন্য ধীর অবতার।
নমঃ নমঃ শ্রীপতিচাঁদ তাহার কোঙর।।
নমঃ নমঃ মঞ্জুলিকা মাতা ঠাকুরাণী
করপুটে বন্দি আমি চরণ দুখানি।।
নমঃ শ্রী প্রমথচাঁদ তুমি গুণমণি
নমঃ নমঃ বীণাপাণি মাতা ঠাকুরাণী।।
নমঃ নমঃ অংশুপতি নমঃ শচিপতি।
নম শ্রীহিমাংশুপতি পদে করি স্তুতি।।
ঠাকুর হইতে এল ঠাকুরের অংশ।
করজোড়ে বন্দি আমি ঠাকুরর বংশ।।
অধম বিনো বলে দিতে নারি সীমা।
কৃপা করে অধমেরে করে দিও ক্ষমা।
                                             
 
              ভক্তগণ বন্দনা
নম নম হীরামন ভক্ত চূড়ামণি
নিজগুণে দাও তব চরণ দু’খানি।।             
নম শ্রীগোলকচন্দ্র পাগল গোঁসাই
চরণেতে কোটি কোটি প্রণাম জানাই।
নমঃ নমঃ শ্রীলোচন বড় দয়াময়।
দয়া করে অধমেরে রাখ রাঙ্গা পায়।।
নমঃ নমঃ মৃত্যুঞ্জয় সাধু শিরোমণি
দন্তে তৃণ ধরি বন্দি চরণ দুখানি।
(এখানে মনে হয় দু এক লাইন জ্ঞাপ হয়ে গেছে)
তোমার কৃপাতে পাই অমূল্য রতন।।
লীলামৃত গ্রন্থখানী শুধার মতন।।
নমঃ নমঃ শ্রী অশ্বিনী প্রেমের মূরতি
যাহার কৃপাতে পাই হরিচাঁদ গীতি।।
নমঃ নমঃ দশরথ পদ্মবিলা বাসি।
ঠাকুরের নামে প্রেমে হইল উদাসী।।
নমঃ নমঃ হরিপাল মহিমা প্রচুর।
গহন বাদার মধ্যে দেখিল ঠাকুর।।
নমঃ শ্রীগোপাল সাধু কি মধু পাইয়া।
দক্ষিণ দেশ মাতাল হরিনাম দিয়া।।
নমঃ নাটু, নমঃ ব্রজ, নমঃ বিশ্বনাথ।
দিবানিশি থাকিতেন ঠাকুরের সাথ।।
উদ্দেশ্য বন্দিনু আমি যত ভক্তগণে।
অগণিত ভক্তবৃন্দ আছে যে যেখানে।
 
শ্রীশ্রী তারক চাঁদের জন্ম কথা
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
তারকের জন্ম কথা করিব বর্ণন।।
হরিচাঁদ ভক্ত তুমি তারক সুজন।
আমার মস্তকে থাকি করিও লিখন।।
সূর্য্যনারায়ণ ছিল ডুমুরিয়া গায়।
লীলামৃতে লেখা আছে তার পরিচয়।
সৃষ্টিধর নামে ছিল তাহার নন্দন।।
হরিভক্ত মহাজ্ঞানী ছিল সেই জন।
তিনি মোরে ভালবাসে পুত্রের সমান।।
আমাদের বাড়ী তিনি আসিত যাইত
তারক চাঁদের কথা তিনি যে কহিত।।
তার মুখে শুনিতাম এসব কাহিনী।
তার আশির্বাদে হয় আমার লিখনী।।
তারকের পিতা ছিল কাশীনাথ নামে।
কালীভক্ত ছিল তিনি এই ধরাধামে।।
মাথায় চিকন কেশ ছিল সুশোভন।
চেহারায় দেখা যায় বেশ ষড়ানন।।
কালীভক্ত শিরোমণি সরল হৃদয়।
দিবা নিশি কালী নামে গাহিয়া বেড়ায়।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
বিবাহ করিতে সবে তাহাকে কহিল।।
কাশীনাথ দিল মত তার গুরুজনে।
মেয়ে দেখিবারে গেল তাহাদের সনে।।
কন্যা কর্তা মেয়ে এনে দেখাল তখন।
অন্নদা নামেতে মেয়ে অতি সু-শোভন।।
মেয়ে দেখে সকলের পছন্দ হইল।
মেয়েটিকে ঘেরে যেতে আদেশ করিল।।
অমনি অন্নদা দেবী প্রণাম করিয়া।
সজল নয়নে গেল ঘরেতে চলিয়া।।
ঘরে গিয়ে কাশীনাথ করে দরশন।
অন্নদা হইল অতি আনন্দিত মন।।
মস্তকের চুল দেখে আনন্দ পাইল।
মনে মনে স্বামী রূপে বরণ করিল।।
তারপর সবে মিলে বলিল বচন।
কি ভাবে সমন্ধ হবে কর নির্ধারণ।।
কন্যা কর্তা বলিলেন সকলের কাছে।
বিষয় সম্পদ কিবা ছেলের আছে।।
নিজ মুখে কাশীনাথ বলিল তখন
শুনিয়া কন্যার পিতা বিষাদিত মন।।
বলিলেন সম্বন্ধ আমি করিব না।
উচ্চ আশা আছে মোর মনের ধারণা।।
তাই শুনে সবে মিলে কিছু না বলিল।
জল পান করে সবে বিদায় হইল।।
তাই শুনে সে অন্নদা অন্য বাড়ী গিয়ে
কাশিনাথে ডাকাইল অন্য লোক দিয়ে।।
ঘরের মধ্যেতে নিয়ে বসিবারে দিল।
ছল ছল আখি দুটি কহিতে লাগিল।।
শুন শুন শুন তুমি আমার বচন।
চরণেতে করি আমি এক নিবেদন।।
চুল যদি নাহি কাট কোনদিন তুমি।
তব চরণেতে দাসী হয়ে রব আমি।।
করজোড়ে এই কথা কহিল অন্নদা।
চুলের যত্ন আমি করিব সর্বদা।।
তাই শুনি কাশীনাথ কহিল তখন।
সত্য করিয়া বলে মধুর বচন।।
এই চুল কোন দিন কাটিব না আমি।
পত্নী রূপে এই ভাবে হও যদি তুমি।।
এই কথা বলে তিনি বিদায় হইল।
প্রফুল্ল অন্তরে মেয়ে গৃহে চলে গেল।।
তারপর সে অন্নদা পিতার নিকটে।
ছল ছল আখি দুটি বলে করপুটে।।
শুন শুনশুন পিতা আমার বচন।
ছেলের কাছে মোর সব সমর্পণ।।
আমাকে করিতে সুখি তব ইচ্ছা পিতা।
চিরসুখী হব আমি শুন মোর কথা।।
অন্নদার পিতা শুনি এহেন বচন।
মস্তকেতে হস্ত দিয়া কহিল তখন।।
তোমার মনে বঞ্ছা আমি পুরাইব।
জয়পুরে গিয়া আমি সম্বন্ধ করিব।।
জয়পুরে গিয়া শেষে সম্বন্ধ হইল।
কাশীনাথ অন্নদার মিলন ঘটিল।।
অন্নদার মন বাঞ্ছা হইল পূরণ
কাশীনাথের হইল আনন্দিত মন।।
দাম্পত্য জীবনে তারা হলো আনন্দিত।
কালী মার চরণেতে ভকতি করিত।।
এই ভাবে বহু দিন গত হয়ে গেল।
অন্নদার গর্ভে কোন সন্তান না হল।।
এই ব্যাথা নিয়ে তারা সংসার করিত।
অন্নদাকে বন্ধ্যা বলে সকলে ভাবিত।।
কাশীনাথ কবিগান শিক্ষা করি লয়।
মাঝে মাঝে কবিগান গাহিয়া বেড়ায়।।
সূর্য নারায়ণ ছিল দলের দোয়ার।
অতি সুমধুর ছিল তার কণ্ঠস্বর।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
মনের বেদনা তার মনেতে রহিল।।
একদিন নৌকা যোগে কলিকাতা যায়।
প্রতিবেশী তিন জন ছিল সে নৌকায়।।
কলিকাতা গিয়ে তারা গঙ্গা স্নান করি।
পাপদেহ জুড়াইয়া বলে হরি হরি।।
পরেতে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে।
মালা দিয়ে ভক্তি করে প্রফুল্ল অন্তরে।।
মাতৃ ভক্ত কাশীনাথ করে তব স্তুতি।
নয়ন জলেতে ভাসি দেখে মাতৃমুর্তি।।
যখনেতে কাশীনাথ প্রণাম করিল।
চুলের বাতাস মার অঙ্গেতে লাগিল।।
তারপর সবে মিলে নৌকায় আসিল।
যার যার কেনা বেচা সকলে করিল।।
নৌকাতে আসিয়া সবে করিল ভোজন।
সন্ধ্যা হল দেখে সবে কহিল তখন।।
রাত্রি বেলা নৌকা বেয়ে যাব না কখন।
ভোর বেলা নৌকা ছেড়ে করিব গমন।।
নিদ্রা ঘোরে কাশীনাথ স্বপনে দেখিল।
কালীমাতা এসে তার শিয়রে বসিল।।
হাসি মুখে কালী মাতা কহিল তখন।
শুন শুন কাশীনাথ আমার বচন।।
তোমার চুলের বাও লাগে মোর গায়।
তাহাতে হইল মোর প্রফুল্ল হৃদয়।।
চুল কেটে দিয়ে যাও শুন বাছাধন
মম বাক্য কভু তুমি কর না লঙ্ঘন।।
চোমর করিয়া তুমি হাতে দিয়া যাও।
দিবা নিশি তব চুলে লব আমি বাও।।
কাশীনাথ বলে মাগো আমি চুল নাহি দিব।
কোন মতে এই চুল আমি না কাটিব।।
কালীমাতা বলে তুই ছারে খারে যাবি।
চুল যদি নাহি দিবি পরাণে মরিবি।।
কাশীনাথ বলে মাগো তোমারে জানাই।
পরাণ তেজিতে মোর কোন চিন্তা নাই।।
সত্য ভঙ্গ করিবারে আমি না পারিব।
সত্য রক্ষা করিবারে পরাণ তেজিব।।
তাই শুনে কালীমাতা অদৃশ্য হইল।
নিদ্রা থেকে কাশীনাথ জাগিয়া উঠিল।।
একি আজি দেখিলাম ঘুমের ঘরেতে।
ভয়েতে আকুল প্রাণ লাগিল কাঁপিতে।।
অকস্মাৎ ভেদবমি হইল তাহার।
মল ত্যাগ করিলেন দুই তিন বার।।
এই ভাবে কলেরায় মৃত পায় হল।
মা মা বলিয়া কাশী ডাকিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো মাতা বলি তব ঠাই।
তোমার চরণ বিনে অন্য গতি নাই।।
তোমার সেবক আমি তব নাম লই।
এই বুঝি মরিলাম ওগো ব্রহ্মমই।।
এই ভাবে কাশীনাথ কান্দিতে লাগিল।
শেষ রাত্রে কালীমাতা নৌকাতে আসিল।।
স্বরূপেতে দেখা দিয়ে কহিল তখন।
শুন শুন কাশীনাথ আমার বচন।।
সত্য করিয়াছ তুমি রমনীর ঠাই।
সেই জন্যে তার গর্ভে পুত্র কন্যা নাই।।
চুল যদি কেটে যাও আমার গোচরে।
সেই গর্ভে এক পুত্র হবে মম বরে।।
ব্যাসদেব জন্ম লবে এসে তব ঘরে।
সার গ্রন্থ লিখে যাবে এই ধরা পরে।।
এত বলি কালীমাতা হল অন্তর্ধান
তাই দেখ কাশীনাথ হারাইল জ্ঞান।।
ক্ষণেক চেতনা পেয়ে কান্দিতে লাগিল।
ধীরে ধীরে নৌকা হতে কুলেতে নামিল।।
ক্ষৌরকার দিয়ে চুল কাটিল তখনে।
চোমর করিয়া দিল মায়ের চরণে।।
কেন্দে কেন্দে কাশীনাথ প্রণাম করিল।
নয়নের জলে বক্ষ ভাসিতে লাগিল।।
তার পরে ধীরে ধীরে নৌকায় আসিয়া।
ভাগীদের কাছে সব কহিছে কান্দিয়া।।
শুনিয়া সবাই তাই আশ্বর্চ্য হইল।
কালীমার প্রীতে সবে হরিধ্বনি দিল।।
তার পর সবে মিলে আনন্দ হৃদয়।
কালী কালী বলি সবে তরী খুলে দেয়।।
আনন্দেতে সবে মিলে তরণী বাহিল।
তিন দিন পরে তরী ঘাটেতে আসিল।।
তরী হতে নেমে সবে গৃহেতে চলিল।
সবাকার কাছে সব ঘটনা জানাল।।
শুনিয়া সকলে তাই আনন্দ হৃদয়।
কালীমার প্রীতে সবে হরিধ্বনি দেয়।।
এই ভবে কতদিন গত হয়ে গেল।
কিছু দিন পরে দুর্গা পূজা করেছিল।।
বড় আশা কাশীনাথ করে মনে মনে।
বুক চিরে রক্ত দিল মায়ের চরণে।।
সে সব বৃতান্ত লীলামৃতে লেখা আছে।
নিজ হাতে শ্রী তারক তাহা লিখিয়াছে।।
লক্ষ দূর্গা নাম বট পত্রেতে লিখিয়া।
পূজা করে ভবানীর কান্দিয়া কান্দিয়া।।
অন্নদার মন বাঞ্ছা হইল পূরণ
কিছু দিন পরে হইল গর্ভের লক্ষণ।।
সেই গর্ভে জন্ম নিল তারক সুজন।
সবাকার মন বাঞ্ছা হইল পূরণ।।
অগ্রহায়ণ মাসেতে শনিবার দিনে।
অমাবস্যা তিথী তাহে জন্মে শুভক্ষণে।।
তারকের জন্ম ক্ষণে হেন জ্ঞান হয়।
আকাশে বাতাসে যেন হরিগুণ গায়।।
জয়ধ্বনি উলুধ্বনি করে বামাগণে
আনন্দে মাতিল সবে হরিগুণ গানে।।
দীন বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবিখানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রিতে সবে হরিবল ভাই।
 
ব্যাস মুনিই শ্রী তারক
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ করিয়া স্মরণ।
তারকের পূর্ব কথা করিব বর্ণন।।
ভাগবত পুরাণাদি লিখে ব্যাসমুনি।
ভাগবতে লেখা আছে এসব কাহিনী।।
একদা নারদ মুনি আসিল ধরায়।
ব্যাসের আশ্রমে এসে হইল উদয়।।
ব্যাস মুনি দেখিলেন গুরু আগমন।
ব্যাস্ত হয়ে ব্যাস মুনি করিল যতন।।
আসনে বসায়ে মুনি ধোয়ায় চরণ।
ভক্তি গদ গদ চিত্ত ঝরে দু নয়ন।।
কান্দিতে লাগিল ব্যাস পড়িয়া ধরায়।
নয়নের জলে তার বক্ষ ভেসে যায়।।
নারদ বলিল ব্যাস কান্দ কি কারণ
তব মনে কিবা দুঃখ বল বাছাধন।।
গুরু বাক্য শুনে কানে ব্যাস তপধন।
করজোড়ে কহিতেছে মধুর বচন।।
তোমার কৃপায় আমি জগতে আসি।
বহু গ্রন্থ লিখিলাম আশ্রমেতে বসি।।
চৌদ্দ খানি শাস্ত্র লিখি আঠার পুরাণ
কোন কিছুতেই মোর জুড়ায় না প্রাণ।।
কি করিব কোথা যাব ভাবিয়া না পাই।
বলে গুরু কি করিব তোমাকে জানাই।।
নারদ বলিল তুমি শুন বাছাধন
শ্রী শ্রী হরি লীলামৃত করহে লিখন।।
লীলামৃত লেখ তুমি ভক্তি রস দিয়া।
ভক্তগণে পাবে শান্তি সে গ্রন্থ শুনিয়া।।
তুমিও পাইবে শান্তি সে গ্রন্থ লিখিয়া।
হরি লীলামৃত লেখ শ্রী হরি ভাবিয়া।।
কহিলেন যদি ব্রাহ্মণ নন্দন।
ব্যাস মুনি করিলেন চরণ বন্দন।।
তুষ্ঠ হয়ে সে নারদ স্বর্গ পথে গেল।
আশ্রমে আসিয়া ব্যাস ভাবিতে লাগিল।।
গুরুর আদেশ বাণী শুনিয়া কর্ণেতে।
হরি লীলামৃত কথা লিখিব কি মতে।।
তারপর ভাববত সংহিতা লিখিল।
শ্রী শ্রী লীলামৃত লেখা না হইল।।
তারপর কত দিন গত হয়ে যায়।
কি লিখিব কি লিখিব ভাবিয়া না পায়।।
তারপর ব্যাসদেব লীলা সাঙ্গ করি।
সূক্ষ্ম দেহ ধরি গেল বৈকুন্ঠ নগরী।।
কালেতে দ্বাপর যুগ হয়ে গেল শেষ।
তারপর হইলে যে কলির আবেশ।।
বৈকুন্ঠে থাকিয়া ব্যাস ভাবে মনে মন।
আত্মার অশান্তি কভু ছাড়ে না কখন।।
এক দিন বৈকুন্ঠেতে নারদ উদয়।
নারদে হেরিয়া ব্যাস ধরিলেন পায়।।
কেন্দে বলে ওহে গুরু করি নিবেদন।
অধমেরে ক্ষমা করে দেহ শ্রী চরণ।।
তব আজ্ঞা না পালিয়া শান্তি নাহি পাই।
এবে আমি কি করিব চরণে জানাই।।
ব্যাসেরে কাতর দেখি বিধি পুত্র কয়।
হরি অবতারে গিয়ে জন্মিবে ধরায়।।
হরি লীলামৃত কথা লিখিও যতনে।
তাহা হলে পাবে শান্তি যত ভক্তগণে।।
সেই হেতু ব্যাস মুনি জনম লভিল।
তারক নামেতে তার জনম হল।।
সুবো চরিত ভাগবতে লেখা আছে।
এগারশ চার পৃষ্ঠা মোর দেখা আছে।।
অধম বিনোদ বলে বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।।
 
শ্রী শ্রী তারক চাঁদের হরি দর্শণ
হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ভাবিয়া হৃদয়।
তারক চাঁদের কথা লিখিব ভাষায়।।
শিশু রূপে ব্যাসদেব মাতৃ কোলে বসে।
চরিদিকে নিরিখিয়া খল খল হাসে।।
তাই দেখে অন্নদার ভরে ওঠে বুক।
তারকের ভাব দেখে কত পায় সুখ।।
কাশীনাথ তারকের কোলেতে করিয়া।
আনন্দেতে আত্মহারা বেড়ায় নাচিয়া।।
এই ভাবে কতদিন গত হয়ে গেল।
পঞ্চ বর্ষ গত হলে হাতে খড়ি দিল।।
পাঠশালে সে তারক বিদ্যা শিক্ষা করে।
একবার শোনে যাহা বলে দিতে পারে।।
শিক্ষক্ষেরা তারকেরে অতি ভালবাসে।
অতি যত্নে শিক্ষা দেয় মনের উল্লাসে।।
এত বড় শ্রুতিধর কভু দেখি নাই।
মনেতে আনন্দ পায় শিক্ষক সবাই।।
এই ভাবে বিদ্যাশিক্ষা করিতে লাগিল।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ হযে গেল।।
তারপর কাশীনাথ তারকে লইয়া।
কবিগান শিক্ষা দেয় আসরেতে নিয়া।।
পাঁচালী বলিতে যবে কবির খোলায়।
বসিয়া শুনিত তাহা অনন্দ হৃদয়।।
তারপর বাহিরেতে যখন আসিত।
সে তারক সেই ভাবে পঁচালী বলিত।।
তাই শুনি সকলেতে মানিত বিশ্বয়।
এই ছেলে বড় কবি হইবে নিশ্চয়।।
তাই শুনি কাশীনাথ আনন্দ হৃদয়।
তারকেরে কোলে করি মুখে চুমু দেয়।।
বাড়ী এসে তারকেরে শাস্ত্র পড়াইত।
অল্পদিনে সেতারক মুখস্থ করিত।।
গীতা গ্রন্থ অল্প দিনে কন্ঠস্থ হইল।
বেদ পুরাণাদি সব শিক্ষা করে নিল।।
পিতার কাছেতে কবিগান শিক্ষা করে।
তারপর কি হইল বলিব সবারে।।
পঞ্চদশ বর্ষ যবে হইল তাহার।
শুভক্ষণে কাশীনাথ তেজিল সংসার।।
পিতৃ হারা সে তারক কান্দিতে লাগিল।
কোনমতে পিতৃ কার্য্য সমাধা করিল।।
কি করিবে কোথা যাবে ভাবিয়া না পায়।
মায়ের চরণ ধরি কেন্দে কেন্দে কয়।।
বল মাগো কি করিব চরণে জানাই।
কি ভাবে বাঁচিব মাগো বলে দাও তাই।।
অন্নদা বলিল বাবা শুন দিয়া মন।
পিতার আদর্শ তুমি করহে পালন।।
সূর্য্য নারায়ণ আছে ডুমুরিয়া গায়।
কাঙ্গালি নামেতে আছে সেই মদুয়ায়।।
কবির দোয়ার তারা ভাল দুই জন।
দল করি কবি গাও শুন বাছাধন।।
মাতৃ আজ্ঞা শুনি কানে তারক সুজন।
সূর্য্য নারায়ণে গেল আনিতে তখন।।
সূর্য্য আর কাঙ্গালীকে সঙ্গেতে করিয়া।
দেশে দেশে কবিগান বেড়ায় গাহিয়া।।
তারকের কন্ঠস্বর মোটে ভাল নয়।
ধুয়া গান গেলে পরে লোকে মন্দ কয়।।
এই ভাবে কত দিন গত হয়ে গেল।
মাঝে মধ্যে কবিগান গাহিতে লাগিল।।
একদিন চলিলেন চালনা গ্রামেতে।
সূর্য্য নারায়ণ আর কাঙ্গালী সঙ্গেতে।।
কবিগান গাহিবারে হইল উদয়।
সেই দিন সেই গ্রামে আসে মৃত্যুঞ্জয়।।
কাঙ্গালীর গুরু সেই সাধু মৃত্যুঞ্জয়।
কালীনগরেতে বাস করে মহাশয়।।
কাঙ্গালী চরণে গিয়া প্রণাম করিল।
সূর্য্য নারায়ণ গিয়ে পদে প্রণামিল।।
উভয়ের গুরু সেই সাধু মৃত্যুঞ্জয়।
তাই দেখে সে তারক ভাবিল হৃদয়।।
কেমন গোঁসাই এই ভাবিতে লাগিল।
কি যেন কি আকর্ষণে প্রেম সঞ্চারিল।।
তারপর গেল সবে কবির খোলায়।
কবি গাহিতেছে সবে আনন্দ হৃদয়।।
হেন কালে মৃত্যুঞ্জয় হইল উদয়।
সযতনে সবে মিলে আসনে বসায়।।
মৃত্যুঞ্জয় গান শোনে আসরে বসিয়ে।
তারকের মন গেল দিশে হারা হয়ে।।
কি যেন কি আকর্ষণে ভুল হয়ে যায়।
তাই মৃত্যুঞ্জয় দেখে হইল বিদায়।।
আশ্রমেতে গেল তিনি কাঙ্গালীকে কয়ে।
সকালে যাইও সবে তারকেরে লয়ে।।
সেই গ্রামে গান শেষে রাত্রি কাটাইল।
প্রভাতে উঠিয়া সবে আশ্রমেতে গেল।।
আশ্রমে বসিয়া আছে সাধু মৃত্যুঞ্জয়।
হেন কালে কয় জন হইল উদয়।।
তারক কাঙ্গালী আর সূর্য্য নারায়ণ
প্রণাম করিল সবে আনন্দিত মন।।
হরি বলে আশীর্বাদ করিল গোঁসাই
সকলেতে সুখে রবে কোন চিন্তা নাই।।
শুন শুন তারক আমার বচন।
গতকাল কবিগান করিলে যখন।।
শ্রী কৃষ্ণের রূপ তুমি করিলে বর্ণণ।
নিজে কি দেখেছ তুমি শুন বাছাধন।।
তারক বলেছে আমি নিজে দেখি নাই।
শাস্ত্রে যাহা লেখা আছে বলিলাম তাই।।
তাই শুনি মৃত্যুঞ্জয় বলিল তখন।
নিজে তুমি দেখ নাই করিলে বর্ণণ।।
লেখা কথা দিয়ে তুমি বর্ণণা করিলে।
আরো কত ভাল হত স্বচক্ষে দেখিলে।।
তারক বলেছে কেউ দেখাইতে পারে।
চরণের দাস হব এই ধরা পরে।।
তারকের কথা শুনে বলে মৃত্যুঞ্জয়।
মোর সঙ্গে ভগবান হাসি কথা কয়।।
ক্ষীরোদ সাই শ্রীহরি জন্মিল ধরায়।
লীলা করে ধরা ধামে ওড়াকান্দি গাঁয়।।
পতিত পাবন বলে অবতীর্ণ হল।
হরিনামে পাপতাপ সকল নাশিল।।
তারক বলেছে আমি আশ্চর্য্য হয়েছি।
চাব্বক পুরানে আমি দেখিতে পেয়েছি।।
ক্ষীরোদ সাই হরির অঙ্গে চিহ্ন আছে।
বত্রিশটি চিহ্ন তার অঙ্গেতে রয়েছে।।
তাই যদি নিজ চোখে দেখিবারে পাই।
চির দাস হয়ে রব চরণে জানাই।।
তাই শুনে মৃত্যুঞ্জয় বলিল বচন।
নিজ চোখে দেখে নিও ওহে বাছাধন।।
হিসাব করিয়া তুমি দেখিবে কখন।
দেখিলে স্বার্থক হবে তোমার জীবন।
তাই শুনি শ্রী তারক প্রণমিল পায়।
ছল ছল আখি দুটি কেন্দে কেন্দে কয়।।
আজ হতে তুমি মোর গুরু রূপ হও।
মোরে নিয়ে ওহে গুরু হরিকে দেখাও।।
গুরু পদে ধরি কান্দে তারক সুজন।
ভক্তি গদ গদ চিত্তে ঝরে দুনয়ন।।
তারকের কান্না দেখে কহে মুত্যুঞ্জয়।
শুন শুন ওরে বাছা বলি যে তোমায়।।
ঠাকুর দেখিবে বলে মন যদি চায়।
নিশ্চই ঠাকুর আমি দেখাব তোমায়।।
এই রূপে ভক্তি পদে থাকে যদি মন।
করুণা করিয়া হরি দিবে দরশন।।
এই কথা বলে তিনি তারকে ধরিল।
হস্ত ধরে উঠাইয়া শান্তনা করিল।।
প্রশস্থ গার্হস্থ ধর্ম শিখাবার তরে।
হরিচাঁদ অবর্তীর্ণ ভব সংসারে।।
হাতে কাম মুখে সদা হরি নাম সার।
অনায়াসে হয়ে যাবি ভব সিন্ধু পার।।
ভাবে তারকেরে কত বুঝাইল।
বলে কয়ে তারকেরে বিদায় করিল।।
গৃহে গিয়ে তারকের মন সুস্থ নাই।
হরিচাঁদ দেখিবারে কেন্দে ছাড়ে হাই।।
পুনরায় আসিলেন মৃত্যু্ঞ্জয় ঠাই।
কেন্দে বলে ওহে গুরু তোমাকে জানাই।।
হরিচাঁদ দেখিবারে মন উচাটন।
এখনি আমাকে নিয়ে কর হে গমন।।
তাইশুনি মৃত্যুঞ্জয় কহিল তখন।
ভোজন করিয়া মোরা করিব গমন।।
মৃত্যুঞ্জয় ডেকে বলে কাশীশ্বরী ঠাই।
শীঘ্র করে খেতে দাও শ্রীধামেতে যাই।।
তাই শুনে কাশীশ্বরী রন্ধন করিল।
রন্ধন করিয়া দেবী কহিতে লাগিল।।
সেবায় বসিবে সবে করেছি রন্ধন।
তাই শুনে দুই জন করিল ভোজন।।
ভোজনান্তে দুই জনে শ্রীহরি স্মরিয়া
যাত্রা করে ওড়াকান্দি আনন্দে মাতিয়া।।
অগ্রভাগে মৃত্যুঞ্জয় করিল গমন।
পিছে পিছে চলিতেছে তারক সুজন।।
জলে ভরা আখি দুটি চলে পিছে পিছে।
উদয় হইল গিয়ে ঠাকুরের কাছে।।
তারকে হেরিয়া হরি কহিল তখন।
হাসিমুখে কহিতেছে মধুর বচন।।
বল দেখি মৃত্যুঞ্জয় কোথা হতে আলি।
এই তোতা পাখি তুই কোথায় পাইলি।।
আমাকে দিয়ে যাবি এই তোতা পাখি।
তাইলেই অন্তরেতে হই আমি সুখি।।
এই কথা যখনেতে হরিচাঁদ কয়।
তারক হেরিয়া রূপ ভাবলি হৃদয়।।
অনিমেষে চেয়ে চেয়ে ভাবিতে ভাবিতে।
ঠাকুরের অঙ্গচিহ্ন লাগিল গুনিতে।।
এক হতে অষ্টবিংশ গুনিল যখন।
অন্তর্যামী হরিচাঁদ জানিল তখন।।
হস্তপদ বিস্তারিয়া আলস্য ছাড়িল।
আর চারি চিহ্ন তাহে দেখিতে পাইল।।
তাই দেখে সে তারক চরণে পড়িল।
চরণধরিয়া শেষে কান্দিতে লাগিল।।
কেন্দে বলে ওগো প্রভু করি নিবেদন।
দয়া করে অধমেরে কর হে গ্রহণ।।
ক্ষীরোদের সাই তুমি পূর্ণানন্দ হরি।
তোমার গুণের সীমা বর্ণিতে কি পারি।।
তুমি হরি গুণনিধি জগতের সার।
আজ হতে মন প্রাণ সকল তোমার।।
ঠাকুর বলেছে বাছা মন ঠিক চাই।
তোর মত ভক্ত যেন যুগে যুগে পাই।।
প্রশস্থ গার্হস্থ ধর্ম পালন করিবে।
হাতে কাম মুখে সদা হরি নাম লবে।।
পর স্ত্রীকে মাতৃবত দেখিবে সদায়।
মুখে সত্য কথা কবে সকল সময়।।
আমার যুগ ধর্ম করিবে প্রচার।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় হরি নাম সার।।
তাই শুনে সে তারক কান্দিয়া কহিল।
মোর এক নিবেদন চরণে রহিল।।
দেশে দেশে ওগো প্রভু কবিগান গাই।
কন্ঠস্বর ভাল নয় চরণে জানাই।।
তারকের কথা শুনে হরিচাঁদ কয়।
শুন শুন তারক বলি যে তোমায়।।
হাটে গিয়ে যার সনে তব দেখা হবে।
মোর গান শোনে নাক তাহাকে কহিবে।।
সাত হাট সেধে সেধে হও অপমান।
তারপর ওগো বাছা গাও কবিগান।।
সে সব বৃত্তান্ত লীলামৃত লেখা আছে।
নিজ হাতে শ্রী তারক তাহা লিখিয়াছে।।
সেই হতে সে তারক হইলেন ভক্ত।
পাশরিতে নারে গুণ সদা কর ব্যক্ত।।
দেশে গিয়ে সে তারক হাটে হাটে গিয়ে।
মোর গান শোনে নাক বেড়ায় কহিয়া।।
সাত হাটে সেধে সেধে হল অপমান।
তারপর সে তারক গায় কবিগান।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
তারকের ছবি খান হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রীতে সবে হরি বল ভাই।
 
তারকের মাথায় হরিচাঁদ
হরিচাঁদ ছবি খানি হৃদয় ধরিয়া।
সে তারক কবিগান বেড়ায় গাহিয়া।।
একদিন ওড়াকান্দি হইল উদয়।
হরিচাঁদ পদ ধরি কেন্দে কেন্দে কয়।।
শুন শুন শুন প্রভু করি নিবেদন।
অধমের মিনতি কর হে গ্রহণ।।
ঢাকা ধামে যাব আমি করিবারে গান।
কৃপা করে আশির্বাদ কর মোরে দান।।
তাই শুনি হরিচাঁদ কহিল তখন।
আমা প্রতি সদা তব থাকে যেন মন।।
মন খাটি চাই বাছা মন খাটি চাই।
আমার কৃপায় তোর কোন চিন্তা নাই।।
হেন কালে শান্তি মাতা আসিল তথায়।
মায়ের চরণ ধরি কেন্দে কেন্দে কয়।।
শুন শুন শুন মাগো চরণে জানাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
তারকের কান্নাদেখে শান্তি মাতা কয়।
তোমার মনে বাঞ্ছা পূর্ণ যেন হয়।।
ঢাকায় যাইবে তুমি গান গাহিবার।
মম অভিলাষ বাছা কহিব এবার।।
এক জোড়া ভাল শাঁখা এনে মোরে দাও।
আমার মনের বাঞ্ছা তুমি হে পুরাও।।
তাই শুনি সে তারক পড়িলেন পায়।
মায়ের চরণ ধুলি মাখিলেন গায়।।
ঠাকুরে চরণ ধুলী অঙ্গেতে মাখিয়া।
আসিলেন সে তারক ঘরতে ফিরিয়া।।
তারপর দল বল সঙ্গেতে করিয়া।
বুধবারে করে যাত্রা শ্রীহরি স্মরিয়া।।
নৌকা যোগে করিলেন ঢাকায় গমন।
সুন্দর তরণী খানি অতি সুশোভন।।
নদী পথে বেয়ে বেয়ে চলিতে লাগিল।
চারদিন পরে তরী ঢাকায় পৌছাইল।।
জমিদার বাড়ী গান শুনিতে পাইল।
সেই ঘাটে সে তারক তরণী বাঁধিল।।
একদল আসিয়াছে পূর্বে সে বাড়ীতে।
নাম করা কবিয়াল বিখ্যাত জগতে।।
মন্ত্র তন্ত্র জানে ভাল দুই মহাশয়।
বিপক্ষের কন্ঠস্বর বন্ধ করে দেয়।।
অন্য দল তার সনে আটিতে পারে না।
সেই জন্য অন্য কেউ সেখানে আসে না।
তারকেরে পেয়ে তারা বায়না করিল।
দল বল লয়ে সেথা উদয় হইল।।
তার পর উঠিলেন কবির খেলায়।
বিপক্ষের সরকার দেখিবারে পায়।।
সকলের কন্ঠস্বর বন্ধ করে দিল।
গান গাহিবারে তারা কেহ না পারিল।।
তাই দেখে সে তারক কেন্দে ছাড়ে হাই।
কোথা বাবা হরিচাঁদ চরণে জানাই।।
আমি অতি মুঢ় মতি না জানি সাধন।
বিপদে পড়িয়া আজি লইনু স্মরণ।।
তুমি যারে রক্ষা কর ওগো দয়াময়।
জীবনে মরণে আর নাহি কোন ভয়।।
হরিচাঁদ ছবি খানি হৃদয় ধরিয়া।
নয়ন জলে বক্ষ জেতেছে ভাসিয়া।।
তারকের কান্না শুনি হরি দয়াময়।
পুত্তলিকা মুর্তি ধরি বসিল মাথায়।।
কোথাকার স্বর বন্ধ কোথায় লুকাল।
সবাকার অন্তরেতে আনন্দ বাড়িল।।
সকলের কন্ঠস্বর হইল মধুর।
শ্রোতাগণ বলে সব মধুর মধুর।।
তারপর সে তারক ধরে ধুয়া গান।
ধুয়া গানে হরে নিল সবাকার প্রাণ।।
শ্রোতা যারা ভাসে তারা নয়নের জলে।
আধ আধ ভাষা দিয়া হরি হরি বলে।।
কেহ কেহ কেন্দে কেন্দে গড়াগড়ি যায়।
কেহ এসে পড়িলেন তারকের পায়।।
এক শিশু বসে ছিল পিতার কোলেতে।
হরিচাঁদ ছবি খানি দেখিল চোখেতে।
জলে ভরা আখি দুটি লাগিল কান্দিতে।।
পুতুলেতে খেলা করে তারকের মাথে।
তাই দেখে সে বালক কান্দিতে লাগিল।।
তার পিতা তারে লয়ে গৃহে চলি গেল।
আসরেতে শ্রোতা যারা জ্ঞান হারা প্রায়।।
প্রেমের তরঙ্গে তারা ভাসিয়া বেড়ায়।
জমিদার গান শোনে বসে দোতালায়।
বিপক্ষের কবিয়াল ছিল যে সেথায়।।
দুই জনে গান শুনে ভাসে আখি জলে।
জ্ঞান হারা প্রায় তারা নামে ভূমী তলে।।
কবির খোলায় গিয়ে পড়িল ধরায়।
তারকের পদে পড়ে গড়াগড়ি যায়।।
হেন দৃশ্য হলো সেথা কহন না যায়।
আকাশে বাতাসে যেন হরিগুণ গায়।।
বিপক্ষের সরকার ভাসি আখি জলে।
তারকের পদ ধরি কেন্দে কেন্দে বলে।।
তুমি হও মহাজন এই ধরা পরে।
অপরাধ করিয়াছি ক্ষমা কর মোরে।।
তন্ত্র মন্ত্র শিখে আমি কবিগান গাই।
তব কাছে তন্ত্র মন্ত্র পুড়ে হল ছাই।।
তোমার চরণে আজ নিয়েছে স্মরণ।
কি করিব কোথা যাব বলহে এখন।।
তাই শুনি তারকের দয়া উপজিল।
সান্তনা করিয়া তারে কহিতে লাগিল।।
শুন শুন শুন বাছা বলি তব ঠাই।
তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে আর কার্য কিছু নাই।।
হরি নাম মহা মন্ত্র জগতের সার।
অনায়াসে হয়ে যাবে ভব সিন্ধু পার।।
যাও বাছা দেশে চলে কর কবিগান
মন খাটি হলে পরে বাড়িবে সম্মান।।
তাই শুনে সে বেচারা বিদায় হইল।
তারকের আজ্ঞা পেয়ে দেশে চলি গেল।।
জমিদার তারকেরে সভক্তি অন্তরে।
ভোজনাদি করাইল অতি সমাদরে।।
দল বল সহ তিনি রহিল তথায়।
পরদিন সবে মিলে হইল বিদায়।।
বাড়ী থেকে যখনেতে আসি রাস্তায়।
একটি বালক এসে তারকেরে কয়।।
শুন শুন শুন তুমি আমার বচন।
গতকাল গান তুমি করিলে যখন।।
নিজ চোখে দেখি তব মাথার উপর।
একটি পুতুল তুমি রাখিয়াছ সেরে।
আমাকে দেখাও তুমি দেখি প্রাণ ভরে।।
এই কথা বলে সে যে কান্দিতে লাগিল।
অমিন তারক তারে বুকেতে ধরিল।।
সে ছেলেকে ধরে বুকে ছাড়ে আখি জল।
আধ আধ ভাষা দিযে বলে হরিবল।।
মস্তকেতে হস্ত দিয়া লাগিল বলিতে।
তোমা সম ভাগ্যবান নাহি জগতে।।
সে পুতুল থাকে কোথা বলি তব ঠাই।
ওড়াকান্দি আছে সেই ক্ষীরোদের সাই।।
তাই শুনে সাথে যারা কান্দিতে লাগিল।
কেন্দে কেন্দে তারকের চরণে পড়িল।।
সূর্য্য নারায়ণ আর কাঙ্গালী বেপারী।
নয়ন জলে তে ভেসে বলে হরি হরি।।
এই ভাবে সবে মিলে কান্দিতে লাগিল।
বহুক্ষণ পরে সবে সুস্থির হইল।।
তারপর সে বালকে সান্তনা করিয়া।
তথা হতে চলিলেন বিদায় হইয়া।।
তারপর বহু স্থানে কবিগান করি।
দেশেতে চলিল সবে বলে হরি হরি।।
ঢাকা হতে এক জোড়া শাঁখা কিনে নিয়ে।
উদয় হইল শেষে ওড়াকান্দি গিয়ে।।
শান্তি মার চরণেতে সেই শাঁখা দিয়ে।
স্তুতি করে সে তারক কান্দিয়ে কান্দিয়ে।।
খুশি হয়ে শান্তি দেবী আশীর্বাদ করে।
শুন শুন শুন বাছা বলি যে তোমারে।।
তোমার মনের বাঞ্ছা পূর্ণ যেন হয়।
ভক্তি পথে মন যেন সদা তব রয়।।
তারক বলেছে মাগো অন্য আশা নাই।
পদে যেন থাকে ভক্তি এই ভিক্ষা চাই।।
তারপর সে তারক কান্দিয়া কান্দিয়া।
শান্তি হরিচাঁদ পদ বন্দনা করিয়া।।
জয়পুর চলিলেন হরষিত মন।
ভাবে গদ গদ চিত্ত ঝরে দুনয়ন।।
দিকেতে লক্ষ্মীপাশা কালীমাতা যিনি।
মনে মনে বিষাদিত হইলেন তিনি।।
ভাবিলেন শান্তি মাকে শাঁখা পরাইল।
আমাকেও সে তারক শাঁখা নাহি দিল।।
আমার বরেতে সেই আসিল ধরায়।
আমাকে বঞ্চিত করে কেমন হৃদয়।।
আমি তারে ভালবাসি পুত্রের সমান।
কন্যা রূপে শাঁখাপরি জুড়াই পরাণ।।
মনে মনে কালীমাতা বাসনা করিল।
এই ভাবে বহুদিন গত হয়ে গেল।।
অধম বিনোদ বলে পাঁচালীর ছন্দে।
হরিচাঁদ ছবি খানি হৃদয়েতে বন্দে।।
তাই বলি ভাই সব বেলা বেশি নাই।
হরিচাঁদ প্রিতে সবে হরি বল ভাই।।
 
তারকের কন্যা রূপে কালি
উদ্ধারণ দত্ত নামে,    বাস করে ঢাকা গ্রামে
শহরেতে বাণিজ্য করয়।
শাঁখার ব্যবসা করে,   ফেরি করে সদা ফেরে
মাঝে মাঝে দোকানেতে রয়।।
নৌকা যোগে নদী ঘাটে,       শাঁখার দোকান লয়ে
ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়াইয়া।।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে,         কত শাঁখা বিক্রি করে
পুনরায় আসিতে ফিরিয়া।।
সহজ সরল মনে,               মাতৃ ভাব নারীগণে
নির্বিকার সত্যের স্বভাব।
একদরে বেচা কেনা,           সকলের জানা শোনা
সংসারেতে না ছিল অভাব।।
একদিন নৌকা বেয়ে,                    নবগঙ্গা নদী দিয়ে
আসিলেন লক্ষ্মীপাশা গাঁয়
জাগ্রত সে কালীমাতা,         লোক মুখে শুনি কথা
মন্দিরেতে হইল উদয়।।
ডালা দিয়ে মার পদে,         কহিলেন কেন্দে কেন্দে
শুন মাগো বলি যে তোমায়।
ভাল কেনা বেচা হলে,         পুন তব পদ তলে
আসিয়া পূঁজি তব পায়।।
কালীমার পদ তলে,           মানত করিয়া চলে
গ্রামে গ্রামে ঘুরিতে লাগিল।
কাছে যত শাঁখা ছিল,                    সব শাঁখা বিক্রি হল
পুনরায় নৌকায় আসিল।।
নৌকা হতে শাঁখা নিয়ে,       কুলে এসে দেখে চেয়ে
এক মেয়ে দাঁড়াইয়া রয়।
ঘোর কৃষ্ণ বর্ণা মেয়ে,          শাঁখারী কাছে গিয়ে
সজল নয়নে মেয়ে কয়।।
শুন বলি শাঁখারী,            বিলম্ব সহিতে নারী
এক জোড়া শাঁখা আজি দাও।
ব্যালয়ারী শাঁখা নিতে,         বাসনা রয়েছে চিতে
শীঘ্র মোর বাসনা পুরাও।।
শাঁখারী দেখিয়া তাই           হেন রূপ দেখি নাই
সজল নয়নে দেখে চেয়ে।
মুখে মৃদু মন্দ হাসি,            এলাই কেশ রাশি
মাতৃ মুর্তি আছে দাঁড়াইয়ে।।
শাঁখারী সে দিসে হারা          মাতৃ ভাব হৃদি পোরা
স্নেহভরে শাঁখা পড়াইল।
শাঁখা দিয়ে দুই হাতে,          ঝরে আখি নয়নেতে
ক্ষীণ স্বরে কহিতে লাগিল।।
শুন বলি ওগো মাতা,                   তোমার বসতি কোথা
সত্য করি দেহ পরিচয়।
তব হাতে শাঁখা দিতে,         হেন জ্ঞান হয় চিতে
কোন দেবী হইবে নিশ্চয়।।
তাই শুনি কালীমাতা,                   ছল করি কয় কথা
মোর পিতা জয়পুর বাস।
শ্রী তারক চন্দ্র নাম,            কবি গানে অনুপম
কবি মধ্যে বিখ্যাত থরায়।।
শুনিয়া শাঁখারী তাই,           শাঁখার যে মূল্য চাই
শাঁখার দুই টাকা দাম।
শিঘ্র করি দাও টাকা,                    বেচিতে যাইব শাঁখা
বিলম্বেতে নাহি কোন কাম।।
শুনি শাঁখারীর বাণী,            বলে মাতা তৃনয়নী
টাকা দিবে আমার পিতায়।
হয়ে নদী তুমি পার,           যাহ পিতার গোচরে
মোর পিতা অতি সদায়শ।।
যদি টাকা নাহি থাকে,         কহিও মোর পিতাকে
গৃহ মধ্যে ছিকার উপর।
তিন হাড়ী তাতে আছে,       যেই হাড়ী আছে নিচে
টাকা আছে তাহার ভিতর।।
কহিও বাবার কাছে,            তব কন্যা শাঁখা নিছে
তাব কন্যা মায়া নাম তার।
আমি তার কন্যা একা,         চাহিলে সে দিবে টাকা
মিছে তুমি ভাবিও না আর।
শাঁখারী শুনিয়া তাই,           ছাড়িয়া দুঃখের হাই
মনে মনে ভাবিতে লাগিল।
আগে আমি না জানিয়া,       ভুল করি শাঁখা দিয়া
শাঁখা বিক্রি বৃথা হয়ে গেল।।
আয় কি করিব,           টাকা বুঝি নাহি পাব
বাকী পলে ফাকি হয়ে যায়।
অজানা দেশে এসে,         বাকীতে পড়িলে শেষে
টাকা বুঝি আদায় না হয়।।
তাই ভেবে মেয়েটিরে,         কহিলেন ধরী ধীরে
গো মাগো বলি তব ঠাই।
মম সঙ্গে চল তুমি,           তব সঙ্গে যাব আমি
হাতে হাতে টাকা যাতে পাই।।
তাই শুনি কালীমাতা,                   ছল করি কয় কথা
শুন তুমি আমার বচন।
এই খানে থাক তুমি,                    মন্দিরেতে যাব আমি
পরে এসে করিব গমন।
মায়ার মায়া ভুলে,           জগত সদা চলে
শাঁখারী, সে ভুলিল মায়ায়।
কালীমাতা চলি গেল,                    মন্দিরেতে প্রবেশিল
ফিরিয়ে না এল পুনরায়।।
বহুক্ষণ দেরি হল,               মায়া ফিরে না আসিল
শাঁখারী হইয়া নিরুপায়।
ব্যস্ত হয়ে তথা গিয়ে,                    মন্দিরেতে দেখে চেয়ে
কোন মেয়ে দেখিতে না পায়।।
আসিয়া নদীর তীরে,                    বেয়ে তরী ধীরে ধীরে
নৌকা হতে কুলেতে নামিল।
মনে তার এই ভাব,            তারকের বাড়ী যাব
নিরাশায় হাটিতে লাগিল।।
গিয়ে তারকের বাড়ী           তারকের চক্ষে হেরি
কহিতেছে বিনয় করিয়া।
কহ ভাই কহ মোরে,           চেন নাকি তারকেরে
সেই বাড়ী দেহ চিনাইয়া।।
হাসিয়া তারক কয়,            এই বাড়ী তার হয়
তারক আমার নাম হয়।
আসিয়াছ কি কারণ,            কহ তব প্রয়োজন
শীঘ্র করি কহত আমায়।।
শুনিয়া শাঁখারী কয়,            শুন শুন মহাশয়
তব কন্যা শাঁখা পরিয়াছে।
নদী পারে হল দেখা,                    আমি তারে দেই শাঁখা
মূল্য দিতে তোমাকে বলেছে।।
শুনিয়া তারক কয়,             শুন বলি মহাশয়
এখনও বিবাহ করি নাই।
কন্যা এল কোথা, হতে,        আসিয়াছ ফাঁকি দিতে
মনে তুমি ভেবে দেখ তাই।।
শুনিয়া শাঁখারী তাই,           ছাড়িয়া দুঃখের হাই
মন দুঃখে কহিতে লাগিল।
ফাঁকি দিতে আসি নাই,        ফাঁকিতে পড়েছি ভাই
মোর কথা মিথ্যা হয়ে গেল।।
মায়া নাত (নাম) তার হয়,             কন্যা দিল পরিচয়
তারক আমার পিতা হয়।
টাকা যদি নাহি থাকে,         বলিও মোর পিতাকে
কোথা টাকা বলেছে আমায়।।
গৃহ মধ্যে আছে ছিকা,         হাড়ীতে হাড়ীতে ঢাকা
তিনটি হাড়ী ছিকার মধ্যেতে।
তার মেধ্য নীচে যেটা,         সে হাড়ীতে আছে টাকা
সেই টাকা কহিয়াছে দিতে।।
শুনিয়া তারক তাই,            আখিতে অন্ত নাই
অনিমেষে গৃহ মধ্যে গেল।
হাড়ী মধ্যে টাকা হেরি,        আখিতে ঝড়েছে বারি
মনে মনে ভাবিতে লাগিল।।
সেই টাকা হাতে করি,         মুখে বলে হরি হরি
তখনি সে বাহিরেতে এল।
শাঁখারীর হাতে ধরি,            কহিয়া বিনয় করি
সেই টাকা শাঁখারীকে দিল।।
টাকা দিয়া তার হাতে,         আখিজল নয়নেতে
কেন্দে কেন্দে কহিল তখন।
ভুল হয়ে গেছে ভাই,                    তব কাছে ক্ষমা চাই
মেয়ে মোর আছে একজন।
কাল বরণ চেহারা,              অভিমানে বুক ভরা
মম সঙ্গে কথা নাহি কয়।
তোমার পাইয়া দেখা,          হাতে পরিয়াছে শাঁখা
তার টাকা দিলাম তোমায়।।
তারকের চোখে জল,                    করিতেছে টলমল
শাঁখারী সে কহিল তখন।
কহ কহ কহ তাই,              কান্দিতেছ কেন ভাই
কেন তুমি হয়েছ এমন।।
তারক কান্দিয়া বলে,                    ভাসিয়া নয়ন জলে
শাঁখারীর হস্ত ধরি কয়।
মম কন্যা গেল কোথা,         চল চল যাব সেথা
মেয়ে মোর লুকাল কোথায়।।
তারকের ভাব হেরি,            দিশে হারা সে শাঁখারী
সজল নয়নে কেন্দে কয়।
মন্দির ভিতরে গেল,           আর নাহি ফিরে এল
চল গিয়ে দেখি দুজনায়।।
দুজনার শিহরণ,                জাগিতেছে সর্বক্ষণ
ভাবাবেশে মন্দিরেতে গেল।
প্রস্তর মুরতী খানি,              কালীমাতা তৃনয়নী
সেই হাতে শাঁখা শোভা ভাল।।
শাঁখারী দেখীয়া তাই,                    কেন্দে কেন্দে ছাড়ি হাই
করজোড়ে কহিতে লাগিল।
মানুষের রূপ ধরি,              ছল করি শাঁখা পরি
মন্দিরেতে আসিয়া লুকাল।।
এত বলি সে শাঁখারী,                    কেন্দে যায় গড়াগড়ি
তারকের পদ ধরি কয়।
তুমি সাধু মহাজন,             করি এক নিবেদন
দয়া করে রেখ তব পায়।।
তোমাকেই পিতা বলে,        মম হাতে শাঁখা নিলে
তুমি হও জগতে মহান।
কি দিব তুলনা তোমা,         গুণের নাহিকো সীমা
অধমের কর প্রেমদান।।
তরক কান্দিয়া কয়,            হেরি বলি রসনায়
শাঁখারী কে বুকেতে ধরিল।
ভাসিয়া নয়ন জলে,            শাঁখারিকে কেন্দে বলে
তোমা পেয়ে হৃদয় শুধিল।।
ধরাধরী দুই জনে,              পড়ে তারা ধরাসনে
মায়ের চরণ ধরি কান্দে।
কান্দিয়া কান্দিয়া কয়,         পদে যেন মতিরয়
দুইজনে ভাসে প্রেমানন্দে।।
এই ভাবে কান্দি কান্দি         মায়ের চরণ বন্দি
যার যার গন্তবেতে গেল।
সে হতে তারক চন্দ্র,           মনে হয়ে প্রেমানন্দ
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিল।।
দুই জোড়া শাঁখা কিনে,        বছরে বছরে এনে
একজোড়া শান্তিমাকে দেয়।
আর জোড়া শাঁখা নিয়ে,       কালীমার হাতে দিয়ে
মনে মনে বাসনা পুরায়।।
হরিভক্ত যারা যারা,            প্রেমানন্দ তনু পোরা
ভালবাসে সর্ব দেবতায়।
কান্দিয়া বিনোদ বলে,         জনম গেল চলে
অধমের কি হবে উপায়।

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free