মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

শ্রীশ্রীহরিসঙ্গীত

নাম ময় এ ব্রহ্মাণ্ড, নামে কর রতি
ভক্তি, মুক্তি শক্তি করে নামেতে বসতি
মতুয়া দর্শনে সংগীত একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সংগীত ভিন্ন মতুয়া দর্শন বোঝা ভার মহা ভাবরসে নিয়ত ভক্ত চকোর ঘুরিছে তাকে পাবার আঁশে। শ্রী অশ্বিনী এমনই এক মহাভাবের মানুষ, শ্রী হরি চাঁদ কখনো তার বন্ধু-সখা, কখনো জগত পিতা, কখনো আবার ফাইফরমাশ খাঁটা নফর। ঠাকুরকে এমনি করে পেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন, জেনেছিলেন এই অশ্বিনী।
ত্যাগের প্রতিমূর্তি শ্রী অশ্বিনী, ভক্তি ও প্রেমের প্রতিচ্ছবি শ্রী অশ্বিনী শ্রী শ্রী হরি সংগীতের রচয়িতা। এই মহান পুরুষের কথা বলে শেষ করা ভার। সুধিজন, আজ আপনাদের সাথে এমন একজন মহান পুরুষের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যার ত্যাগ, ভক্তি ও প্রেমের দৃষ্টান্ত এই জগতে বিরল। দারিদ্র পীড়িত, নিরক্ষর এই ভক্তের দ্বারা রচয়িত শ্রী শ্রী হরি সংগীত আধ্যাত্ব-দার্শনিক তত্তের অমুল্য রত্ন ভাণ্ডার যা এখনো শুধুমাত্র মতুয়া ভক্তদের চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ব। শ্রী অশ্বিনীর প্রতিটি লিখনিতে ভক্ত প্রানের আকুল ক্রন্দন যেন ভেসে আসে। এই মহান ভক্তের জীবনি লেখার যোগ্য আমি নই, তবুও ঠাকুরকে স্মরণ করে লিখছি, বিবেকের তাড়নায়, আমরা যদি সঠিক ইতিহাস জগত বাসীকে না জানাই তবে অনেক অজানা তথ্য অজানাই থেকে যাবে। আশা করি আপনারাও এগিয়ে আসবেন।
গঙ্গাচন্না গ্রামে পোদ্দার বংশে রাজ চন্দ্র নামে এক ভক্ত-সুজনের আবাস। তিনটি পুত্র তাঁর। জ্যেষ্ঠ শ্রী কার্ত্তিক, মধ্যম শ্রী গণেশ এবং কনিষ্ঠ পুত্রের নাম শ্রীদাম। কার্ত্তিকের স্বভাব ছিল সহজ-সরল, ঈশ্বরগত প্রাণ। তাঁর ঈশ্বরে-লীন হবার আকুতি দেখে গ্রামের সবাই তাকে বৈরাগী উপাধি দেয় প্রতি মাসে বৈষ্ণব ভোজন করাতেন, কত ভক্ত সজ্জন তাঁর বাড়িতে আসতো তা নিরীক্ষণ করা ভার। আরও আসতো শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মতুয়ার দল। জয় ডঙ্কা, হাতে বিজয় নিশান উড়িয়ে হরি প্রেমে মাতোয়ারা মতুয়ার দল যখন তাঁর বাড়িতে আসতো কার্ত্তিক তখন মতুয়া দলের সাথে এক সাথে হরি বলে মাতোয়ারা হয়ে যেত।
এক দিনের কথা, শ্রী গোলোক পাগল মতুয়া দল সাথে নিয়া কার্ত্তিক বৈরাগীর বাড়িতে হরি নাম করতে আসেন। গোলোক পাগলের ভাব দেখে কার্ত্তিক পাগলের পদে পড়ে তাঁর অনুগত হল। মহাভাব সমাধিতে নিমগ্ন শ্রী গোলোক পাগলকে গুরু পদে মন প্রাণ সপে দিল কার্ত্তিক। গঙ্গাচন্না গ্রামবাসীও পাগলের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য হল। সেই হতে গোলোক পাগল কার্ত্তিক বৈরাগীর বাড়িতে আসা যাওয়া করতে থাকেন। এই ভাবে নয় বৎসর অতিক্রান্ত হয়ে গেল।
সদা হরি নামে মত্ত কার্তিকের মনে একটা দুঃখ ছিল। অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও তাঁর কোন সন্তান-সন্ততি ছিল না। অম্বিকা নামে তাঁর স্ত্রী সদা হরি-প্রেমে মগ্ন থাকতেন একটি সন্তানের আশায়। গোলোক পাগল তাঁদের সব দুঃখ বুঝতেন, কিন্তু তিনিও নিরব। একদিন হল কি, মতুয়াগণ সবে মিলে কার্ত্তিকের বাটীতে হরি নাম করতে থাকে। মহাভাব তরঙ্গে সকলে যেন ভাস্তে লাগলো, কি এক আকর্ষণে অবিরত হরিনামে এক দিব্য জ্যোতি তাঁদের সকলের প্রানে শিহরণ জাগিয়ে তুলল। ভক্তি-প্রেমরসে বাহ্যজ্ঞান হারা হয়ে পরল অনেকেই। এমনিই এক ঐশ্বরিক মুহূর্তে কার্ত্তিকের স্ত্রী অম্বিকা পাগলের চরণ ধরে অস্রু জলে ভাসতে থাকে। হা রে ভক্ত...... পাগল আর স্থির থাকতে পারলনা, বলল মাগো তোর কোলে ভুবন আলো করা এক পুত্র সন্তান আসবে, নাম রাখিস অশ্বিনী, সে হবে মহান হরি ভক্ত
অবর্ণনীয় এক লীলা ভক্তের দ্বারা করলেন দয়াল শ্রী হরি। সাল টি তখন ১২৮৪, কার্ত্তিক মাসের বুধবার ব্রক্ষমুহূর্তের কালে পূর্ণিমা তিথিতে ভক্ত চুড়ামণি শ্রী শ্রী অশ্বিনী গোঁসাই জন্মগ্রহন করেন। গোলোক চাঁদের বরে রত্ন জনমিল। পুত্র সন্তান পেয়ে পিতা-মাতার হৃদয় আনন্দ ভরে উঠলো। মাতৃ স্নেহে অশ্বিনী বড় হতে থাকেন। কিন্তু বিধির বিধান, অশ্বিনীর বয়স যখন দুই বৎসর ছয় মাস তখন তাঁর মাতা অম্বিকা ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকে গমন করেন।
হায় রে অশ্বিনী, যার ভক্তি-গীতি শুনে মতুয়াগণ পাগল পারা হয়ে যেত মাতৃ হারা সেই শিশু অশ্বিনীর করুণ ক্রন্দনে, ভক্ত গণের বুকটা ফেটে যেত। এই অবস্থায় অশ্বিণীর পিশিমাতা এগিয়ে আসেন তাঁর লালন পালনে। অশ্বিনীকে প্রতি-পালনের জন্য কার্ত্তিক বিবাহ করেন। অশ্বিনীর বিমাতার নাম ছিল স্বরুপিনী, তিনি প্রাণ দিয়ে অশ্বিনীকে ভালবাসতেন। মা মা বলে অশ্বিনী যখন তাঁর কাছে আসতে চাইতো, মাতা স্বরুপিনী হাতের কাজ ছেড়ে ছুটে এসে কোলে তুলে নিত। বাৎসল্যেতে তাঁর হৃদয়টা ভরপুর ছিল, তাই দেখে পাড়া-প্রতিবেশী বিস্মিত হতো।
------------------এই হল প্রেমিক কবি শ্রী অশ্বিনী কুমার সরকার এর জন্ম ও বাল্য কথন। পরিপূর্ণ বয়সে আরও অনেক লীলা করেছেন তিনি। শ্রীশ্রী ঠাকুরের কৃপায় অক্ষর জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন অমুল্য রত্নের ভাণ্ডার শ্রী শ্রী হরি সংগীত। শ্রী শ্রী হরি-গুরু চাঁদ মতুয়া মিশন (কেন্দ্রীয়), শ্রী ধাম ওড়াকান্দি থেকে ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত হয়ে প্রচারিত হচ্ছিল এতকাল ধরে। অনেক দিনের মনের বাসনা এই রত্নের ভাণ্ডারকে শুধু মতুয়াদের কাছে গচ্ছিত রাখলে চলবে না, পৌঁছে দিতে হবে সকল সুধী সমাজের কাছে।
------ ভক্ত সুজন,
আশা করি আপনাদের কাছে সমাদর পাবে।
জয় হরিবোল
অসীম কুমার রায়
সহ-সাধারণ সম্পাদক
শ্রী শ্রী হরি-গুরু চাঁদ মতুয়া মিশন
সিলেট জেলা শাখা, বাংলাদেশ।
 

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free