মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ১৪১-১৬০

শুদ্র পক্ষে তপ জপ ত্রেতা যুগে নাই
শুদ্রকের মাথা কাটে রামচন্দ্র তাই
।।
নমঃশূদ্র অতি ক্ষুদ্র ক্ষীণ হয়ে রবে

বিদ্যা শিক্ষা তার পক্ষে কভু না সম্ভবে
।।
কৃষি কর্ম্ম করে যারা সেই ভাবে র'বে

বিদ্যা পেলে কৃষি কর্ম্ম বল কে করিবে ?
আর শুন গূঢ় কথা বলি তব ঠাঁই

জমা - যোত প্রায় কিছু আমাদের নাই
।।
যজন - যাজন আর রাজ কার্য করি

লেখাপড়া নিয়ে আছি হাল নাহি ধরি
।।
তোমার স্বজাতি যত কায়স্থ সুজন

এই ভাবে সবে তারা কাটায় জীবন
।।
যাহা কিছু খাস জমি রাখে কোন জনে

বর্গা করে তাহা প্রায় নমঃশূদ্র গণে
।।
যত জমি বঙ্গ দেশে চাষাবাদ হয়

যারা কৃষি করে তারা ফসল জন্মায়
।।
ব্রাহ্মণাদি নবশাখ আর যত জা'

ইহাদের স্কন্ধে মোরা করি কালপাত
।।
নিজ হাতে চাষ-বাস কেহ নাহি করি

প্রয়োজন মত নমঃ মুসলমানে ধরি
।।
পোদ আর পাল বটে চষে কিছু হাল

কাপালি নামেতে আছে জাতি একদল
।।
কৃষি কার্য একরূপ এরা সবে করে

ধান্য - লক্ষ্মী থাকে বান্ধা ইহাদের ঘরে
।।
লেখাপড়া নাহি জানে বোকা অতিশয়

শিক্ষিত হলে এরা মোদের হবে দায়
।।
জমি - যোত নাহি হাতে হাল নাহি ধরি

এরা যদি হয়ে বসে রাজ কর্ম্মচারী
।।
হাতে - ভাতে মারা যাবো নাহিক সন্দেহ!
ব্রহ্ম হত্যা হ'বে শেষে তাই তুমি কহ ?
নিতান্ত ভাবনা যদি আসে তব মনে

এক কাজ কর তুমি যা ' বলি এখনে
।। 
দাতব্য- চিকিৎসা -গৃহ দেহ সেই ঠাঁই

তার চেয়ে পুণ্যকর্ম্ম আর কিছু নাই
।।
রোগে শোকে মরে জীব কত কষ্ট পেয়ে

তারা-সব বেঁচে থাক ঔষধাধি খেয়ে
।।
বিদ্যাদান তুচ্ছ কথা প্রাণ দান হবে
 
পুণ্য ফলে অন্তঃকালে স্বর্গে চলে যাবে “
।।
এই মত কথা কত কহিতে লাগিল

নত - শির বসুজীর অন্তর দহিল
।।
উভয়-সঙ্কটে পড়ে মনে হল কষ্ট
 
মনে মনে ভেবে বলে হারে দুরদৃষ্ট
।।
কোন পথে যাই আমি পথ নাহি পাই

দেশে থেকে কার্য নাই কলিকাতা যাই
।।
ভাবিয়া চিন্তিয়া পরে যা' হয় করিব

আপাততঃ অসন্তুষ্ট কেন করে যাব ?
মৌনভঙ্গে মৌন রঙ্গে সে গিরিশ কয়

'যাহা বলি শুন সবে ব্রাহ্মণ তনয়
।। 
বড়ই সঙ্কটে মোরে ফেলিয়াছ সবে

জবাব ইহার কিছু আজি নাহি পাবে
।।
আপাততঃ কলিকাতা আমি যাই চলে

পশ্চাতে জানাবো কিছু জানাবার হ'লে'
।।
এত বলি চলি গেল বসু মহাশয়

ব্রাহ্মণেরা যুক্তি করে কি হবে উপায়
।।
সবে জুটি একদলে পরামর্শ করে

হানা দিল পুনরায় সপ্তাহের পরে
।।
দশ-বার-জন জুটি গেল কলিকাতা

পুনরায় গিরিশেরে বলে বহু কথা
।।
'জ্ঞান বান ব্যক্তি তুমি বসু মহাশয়

আমাদের কথা ফেলা উচিত না হয়
।।
বিদ্যাদান মহাধর্ম্ম মানিলাম কথা

দাতা দান করে তা'তে নাহি হেথা সেথা
।।
শিক্ষা নিবে ব্রাহ্মণাদি উচ্চ বর্ণ যত

তারা যাতে শিক্ষা পায়, কর সেই মত
।।

 

যেই কর্ম্ম যেবা জানে তারে তাই দাও
কৃষক লাঙ্গল পাবে মাঝি পাবে নাও
।।
নমঃশূদ্র ভরা দেখি ঘৃতকান্দী গাঁও

উলুবনে কেন বাপু মুক্তা ছড়াও ?
উচ্চ বর্ণ ব্রাহ্মণাদি ফুকরাতে বাস

স্কুল দিলে সেই গ্রামে তা'তে পাবে যশ
।।
এই ভাবে নানা ছলে ব্রাহ্মণ কায়স্থ

ফুকরাতে স্কুল হবে করে বন্দোবস্ত
।।
নিরুপায় হয়ে তায় সে গিরিশ বসু

ব্রাহ্মণের কবলেতে সেজে র'ল শিশু
।।
নিতান্ত লজ্জার দায় করে আনাগোনা

চিকিৎসালয় করিবারে করে প্রস্তাবনা
।।
কিছুকাল পরে কথা প্রচার হইল

নমঃশূদ্র গণ তাতে বড় দুঃখ পেল
।।
নিরুপায় সবে যায় গুরুচাঁদ কাছে

বলে কর্ত্তা! শুন বার্ত্তা,শিকার ভেগেছে'
।। 
স্কুল নাহি হবে হেথা হবে ফুকরায়

চিকিৎসালয় হবে মাত্র তাই শোনা যায়
।।
কুটিল ব্রাহ্মণ জাতি কায়স্থের মন্ত্রী

কায়স্থ যন্ত্রেতে দ্বিজ সাজিয়াছে যন্ত্রী
।।
উপায় কি বল প্রভু কিবা করা যাবে

চিরকাল নাজেহাল হব এই ভাবে ?”
কথা শুনি গুণমনি গুরুচাঁদ কয়

ঘরে যাও ভাইসব নাহি কোন ভয়
।।
ঈশ্বরের ইচ্ছা যাহা কে খণ্ডিবে বল

এই কর্ম্ম দ্বারা কিন্তু শিক্ষা এক হল
।।
যদ্যপি গিরিশ বসু স্কুল করে দিত

তার ঠাঁই চিরকাল হত মাথা নত
।।
ভাল হল সে জঞ্জাল নাহি হল আর

সকলে দাঁড়াও দিয়ে নিজ পায়ে-ভর
।।
যার কাজ সেই করে পরে করে কিবা ?
তারা সবে নমঃশূদ্রে পেয়েছে কি হাবা ?
প্রাণপণ কর সবে আর কথা নাই

যেভাবে সে ভাবে হোক স্কুল করা চাই
।।
উচ্চ বিদ্যালয় যদি করিতে না পার

যাহা পার তাহা কর কাজে কেন হার ?
আমি বলি মধ্য বাংলা কি মধ্য ইংরাজী

স্কুল কর,স্কুল কর কথা সোজাসুজি
।।
ছাত্র বৃত্তি স্কুল আছে ওড়াকান্দী গ্রামে

সেই স্কুল কর সবে মধ্য ইংরাজী নামে
।।
বাড়ীতে রয়েছে শশী তার কাছে যাও

তার সাথে যুক্তি করি স্কুল খুলে দাও”
।।
প্রভুর বচন শুনি সবারই আনন্দ

বর্ণহিন্দু করে হিংসা কহে মহানন্দ
।।

 

ওড়াকান্দী মধ্য ইংরাজী বিদ্যালয়
স্থাপন ও ডক্টর মিডের আগমন 

ওড়াকান্দী বাসী ছিল যত লোকজন

ঘৃতকান্দী নমঃশূদ্রে করিল মিলন
।।
সকলে মিলিয়া চলে ঠাকুরের বাড়ী

প্রণাম করিল সবে প্রভু পদে পড়ি
।।
প্রভু বলে “শশীরে ডাকিয়া বল কথা

তার সাথে আলাপনে কহ নিজ-ব্যথা
।।
তবে তো সকলে গেল বড় বাবু ঠাঁই

বলে “বাবু শুন বলি দুঃখের বালাই
।।
আশা করি জ্ঞাত আছ সব সমাচার

করেছে গিরিশ বসু যেই ব্যবহার
।।
তব পিতা গুরুচাঁদ দিলেন আদেশ

শিক্ষা দিয়া রক্ষা কর নিজ জন্ম দেশ
।।
মধ্য ইংরাজী স্কুল করিবারে চাই

তুমি যদি সাথে থাক ভয় নাহি পাই
।।
তোমাকে ভরসা করি এ জাতি-তরণী

ভাসা'ব অকূল নীরে ভয় নাহি গণি
।।

 

কোন মতে কোন পথে তাহা করা যায়
দয়া করি বড় বাবু বলুন উপায় “
।।
স্বজাতি প্রধান বর্গ এই যদি বলে

বড় বাবু বলে কথা অতি কুতূহলে
।।
নিবেদন করি আমি স্বজাতির ঠাঁই

জাগুক আমার জাতি এই মাত্র চাই
।।
যে অবধি শুনিয়াছি ছলনা পেয়েছি

মনো দুঃখে ঘরে যেন মরিয়া রয়েছি
।।
হেন দুর দৃষ্ট কেন হ'ল সবাকার

মনে মনে করিতেছি তাহার বিচার
।।
পিতা যবে বলিলেন কথা সবাকারে

সকল শুনেছি আমি থাকিয়া অন্তরে
।।
পিতৃ - আজ্ঞা পেলে মোর কোন বাধা নাই

গড়া'ব দেশেতে স্কুল মিলিয়া সবাই “
।।
বড় বাবু কাছে জানি এ হেন বারতা

সবে এল মহাপ্রভু আছিলেন যথা
।।
কথা বার্ত্তা ঠিক হল স্কুল খোলা হবে

বাকী শুধু স্থান লাগি স্থান কেবা দিবে
।।
প্রভু বলে “স্থান লাগি কোন চিন্তা নাই

যত লাগে দিব স্থান স্কুল করা চাই “
।।
ঠাকুরের ভিটা ছিল বাড়ীর পশ্চিমে!
বাড়ী মধ্যে গণ্য তাহা হল ক্রমে ক্রমে
।।
স্কুল লাগি সেই ভিটা দিলেন ঠাকুর

এই ভাবে স্থানা ভাব হল তবে দূর
।।
এই মত হল সেথা স্কুলের পত্তন

প্রধান শিক্ষক হল শ্রী শশি ভূষণ
।।
পণ্ডিতজী রঘুনাথ অতি গুণধাম

এতদিনে পূর্ণ তাঁর হল মনস্কাম
।।
শিক্ষকতা কার্য ছাড়ি যেতে নাহি চাহে

দ্বিতীয়-পণ্ডিত রূপে এই স্কুলে রহে
।।
দলে দলে ছাত্র আসি ভর্ত্তি হল পরে

পড়িল শিক্ষার সাড়া প্রতি ঘরে ঘরে
।।
উত্তম শিক্ষক ছিল শ্রী শশিভূষণ

তার শিক্ষাগুণে বাধ্য ছিল ছাত্র গণ
।।
এই ভাবে কত দিন চলিল স্কুল

নমঃশূদ্রে শিক্ষা পেল এই তার মূল
।।
দেখা দেখি দেশে দেশে নমঃশূদ্র গণ

স্কুল পাঠশালা আদি করিল গঠন
।।
ফরিদপুরের মধ্যে গোপাল গঞ্জেতে

নমঃশূদ্রে শিক্ষা পেল সবে এই মতে
।।
তাহার প্রমাণ দেখি আজো বর্ত্তমান

শিক্ষা - ক্ষেত্রে ফরিদপুর লভে শীর্ষস্থান
।।
নমঃশূদ্র কৃষ্টি বলি যাহা কিছু আছে

ফরিদপুরের মধ্যে উদ্ভব হয়েছে
।।
ক্রমে ক্রমে পাশ্ববর্ত্তী জেলা সমূদয়

এই শিক্ষা-স্রোত নিয়ে সবে ধন্য হয়
।।
গোপালগঞ্জের মধ্যে ওড়াকান্দী গ্রাম

হরি - আগমনে হল পুণ্যময় ধাম
।।
অন্ধজনে দিতে আলো অমানীকে মান

ওরাকান্দী অবতীর্ণ হল ভগবান
।।
যেই আলো ভগবান প্রথমে জ্বালিল

শতগুণে গুরুচাঁদ বর্দ্ধিত করিল
।।
সেই আলোকের জ্যোতিঃ আজি দিশিদিশি

উজ্জ্বল করেছে ধরা অন্ধকার নাশি
।।
তা'তে বলি নমঃশূদ্র - কৃষ্টি যাহা কিছু

আগে এল ওড়াকান্দী সবে পেল পিছু
।।
এই সব কাণ্ড দেখি কায়স্থ সকলে

কিবা হল কিবা হবে সবে ইহা বলে
।।
এই ভাবে ঘরে ঘরে করে কানাকানি

শুন সবে কি করিল প্রভু গুণমনি
।।
শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুচাঁদে যাহা দেখিয়াছি

তাহা মাত্র এই খণ্ডে আমি বলেতেছি
।।
ধর্ম্ম - তত্ত্বে কিবা হল কেবা ধর্ম্ম পায়

পশ্চাতে বলিব তাহা প্রভুর কৃপায়
।।

 

তবু বলি সর্ব্বজনে মূল তত্ত্ব সার
সর্ব্বনীতির মধ্যে রহে গুরুচাঁদ আমার
।।
শিক্ষা আন্দোলন যবে প্রভু করে দেশে

ভকত সুজন যত তার কাছে আসে
।।
নমঃশূদ্র তেলী মালী আর কুম্ভকার

কপালী মাহিষ্য দাস চামার কামার
।।
পোদ আসে তাঁতী আসে,আসে মালাকার

কতই মুসলমান আসে ঠিক নাহি তার
।।
সবাকে ডাকিয়া প্রভু বলে এই বাণী

শুন সবে ভক্তগণ আমি যাহা জানি
।।
নমঃশূদ্র কুলে জন্ম হয়েছে আমার

তবু বলি আমি নাহি নমঃর আকার
।।
দলিত পীড়িত যাঁরা দুঃখে কাটে কাল

ছুঁসনে ছুঁসনে বলে যত জল - চল
।।
শিক্ষা-হারা দীক্ষা-হারা ঘরে নাহি ধন

এই সবে জানি আমি আপনার জন
।। 
সবাকারে বলি আমি যদি মান ' মোরে

অবিদ্বান পুত্র যেন নাহি থাকে ঘরে
।।
খাও না বা খাও তা'তে কোন দুঃখ নাই
 
ছেলে পিলে শিক্ষা দেও এই আমি চাই
।।
বঙ্গ দেশ ভরি ' বার্ত্তা গেল অল্পকালে

দেশে দেশে স্কুল করে ভকতের দলে
।।
কি ভাবে ব্যাপক হল এই শিক্ষা নীতি

সে কাহিনী আমি নাহি বলিব সম্প্রতি
।।
ভক্ত সঙ্ঘ পরিচয় দিব যেই কালে

সেই সব বার্ত্তা আমি ক'ব কুুতূহলে
।।
আর এক কথা মোর মনেতে হইল

নমঃশূদ্র কি কারণে অগ্রগামী হল
।।
এই বঙ্গ সমাজেতে করিলে বিচার

দুই-দল লোক দেখি বিভিন্ন প্রকার
।।
চর্ব্ব চোষ্য লেহ্য পেয় খাদ্যাদি ভক্ষণ

খট্টা ' পরে অট্টালিকা মধ্যেতে শয়ন
।।
সুবেশ সুকেশধারী সুখে বসবাস

বহুমূল্য শাল গায়ে শয্যায়-ফরাস
।।
জমিদার মহাজন বিদ্বান পণ্ডিত

এই সব ধন মানে তাহারা ভূষিত
।।
জাতি-ভেদ ইহাদের মধ্যে কিছু নাই

ব্রাহ্মণ মুসলমান একদল ভাই
।। 
অন্য দলে দেখি যারা সবে অন্নহীন

বহু কষ্টে কোন ক্রমে কেটে যায় দিন
।।
বসন ভূষণ সব সামান্য প্রকার

কুঁড়ে ঘরে বাস করে ব্যাধির আগার
।।
বুকে ব্যথা তবু মাথা পেতে কষ্ট সয়

ডাল ভাত পেলে দুটি তাতে তুষ্ট রয়
।।
এ দলেও নাহি দেখি কোন জাতিভেদ

এক সাথে হাসে কাঁদে করে এক-খেদ
।।
এই দল মধ্যে নমঃশূদ্র বলবান

আরো সেই ঘরে এল স্বয়ং ভগবান
।।
ধর্ম্ম-রাজ্য বিস্তারিতে শক্তি থাকা চাই

শক্তি মান ঘরে হরি অবতীর্ণ তাই
।।
নমঃশূদ্রে ভিত্তি করি দয়াল ঠাকুর

পতিতের ব্যথা যত সব কৈল দূর
।।
আদর্শ রাখিলা প্রভু নমঃশূদ্র ঘরে

সে আদর্শ পেল সবে ক্রমে পরস্পরে
।।
প্রেম-বন্যা-ঢেউ ওঠে নমঃশূদ্র-ঘরে

ঢেউ এল তাই পেল পরম পিতারে
।।
সে - ঢেউ ছুটিল পরে জগৎ ডুবা'য়ে

কিবা হিন্দু কিবা যবন গেলরে ভাষিয়ে
।।
ভক্ত-সঙ্ঘ-পর্ব্ব যবে হইবে বর্ণনা

সকলে দেখিবে তা'তে সে সব নিশানা
।।
এবে মাত্র কহি কথা শিক্ষা - গতিধারা

স্কুল পেয়ে নমঃশূদ্র কিবা করে তারা
।।
জনে জনে ভক্তগণে প্রভু ডাকি কয়

পাঠশালা কর সবে নিজ নিজ গাঁয়
।।

 

বঙ্গ দেশে দুই দলে আছে যত লোক
সে সব বলেছি পূর্ব্বে হইয়া পুলক
।।
দীন-হীন জ্বরা-জীর্ণ ছিল পড়ে যারা

গুরুচাঁদ আগমনে ধন্য হল তারা
।।
তাহার প্রমাণ আজি দেখিবারে পাই

পিছে-পড়া দল আজ পিছে পড়ে ' নাই
।।
রাজ-শক্তি অধিকার বাঙ্গালী পেয়েছে

নিজ-বিধি-সৃষ্টি-শক্তি লাভ করিয়াছে
।।
আইন সভায় সব যায় প্রতিনিধি

তাহারাই সৃষ্টি করে দেশে যত বিধি
।।
আইন সভায় আজ যারা শক্তিশালী

একদিন তাহারাই ছিল হীন-বলী
।। 
'তপশীলী জাতি ' বলি যার পরিচয়

মন্ত্রী - সঙ্ঘ মধ্যে তার প্রতিনিধি রয়
।।
এই দলে অগ্রগামী নমঃশূদ্র জাতি

তার মূলে গুরুচাঁদ অগতির গতি
।।
আজি যারা তপশীলী জাতি সাজিয়াছে

শিক্ষা ছাড়া উন্নতি কি সম্ভব হয়েছে ?
শিক্ষার প্রেরণা তারা কোথা হতে পায়

আদি-গুরু গুরুচাঁদ আদি-শিক্ষা দেয়
।।
বৃক্ষ-শির পরে থাকে সুমধুর ফল

নয়ন - রঞ্জন কত পুষ্প - পত্র দল
।।
কোথা হ'তে আসে ফুল কোথা হ'তে ফল

ফুল কোথা হ'তে পায় স্বচ্ছ পরিমল ?
দর্শক খবর তার নাহি কিছু রাখে

অদৃশ্য-রসের-ভাণ্ড আদি-মূলে থাকে
।।
শাখারে জোগায় রস অদৃশ্য থাকিয়া

ফুল হাসে ফল নাচে সে-রস শুষিয়া
।।
দৃশ্য-বস্তু যত তার আছে ইতিহাস

অদৃশ্য-মূলের তত্ত্ব কে করে তালাশ ?
মানব-জীবন কিংবা সমাজ-জীবনে

এই রীতি আছে ব্যাপ্ত দেখি সর্ব্বখানে
।।
একদিন যে-সমাজ ছিল অন্ধকারে

পরিচয়-হীন ভাবে বিশ্বের দুয়ারে
।।
মানব-জীবন পেয়ে মনুষ্যত্ব- হীন

ধন-হীন মান-হীন চির-পরাধীন
।।
দলিত-পতিত যারা সর্ব্বস্ব হারা'য়ে

ব্যথা-ভরা বুকে ছিল ভূমিতে লুটা'য়ে
।। 
সঞ্জীবনী-সুধা নিয়ে এল সেই ঘরে

মরা-প্রাণে শক্তি দিল বাঁচা'ল সবারে
।।
প্রাণ দিয়ে সেই-প্রাণ করে শক্তি মন্ত

শিক্ষা-দীক্ষা,জ্ঞানে,ধনে 'করে তেজবন্ত
।।
আজ যারা বঙ্গ ভূমে নহে গণ্য-হীন

রাজশক্তি চালনাতে আছে রাত্রি দিন
।।
আত্মশক্তি - পরিচয় নহে হীন বল

'তপশীলী 'বলি যারা আছে এক দল
।।
বিশ্বের সভায় যারা পেয়েছে আসন

তারা কি করেছে মনে সে চিন্তা কখন ?
কে সে শক্তিধর যাঁর চরণ পরশে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ নবীন হরষে ?
কোন আলোধারী ঘরে জ্বেলে দিল আলো?
কোন সে-দরদী দীনে এত বাসে ভালো?
সে-তরুর মূল কোথা গাঢ় অন্ধকারে

প্রাণ-ক্ষয়ে রস এনে বাঁচায় শাখারে
।।
ফুল হাসে ফল নাচে জুরায় নয়ন

কে সে রস দেয় তাহা করে কি স্মরণ
।।
তপশীলী-জাতি মধ্যে যা' কিছু হয়েছে

হরিচাঁদ-কল্প বৃক্ষে সকলি ফলেছে
।।
হরি-কল্পবৃক্ষে ফলে সঞ্জীবনী ফল

সে ফল বিলায় গুরু পরম দয়াল
।।
সে-গুরু পরম - গুরু গুরুচাঁদ নাম

শত কাশী তুল্য যার ওড়াকান্দী ধাম
।।
কেন হীন হল কেন জাগিয়াছে জাতি

কে করেছে প্রাণ দান জেগে দিবারাতি
।।

 

 

আজ কেহ নাহি করে তাহার সন্ধান
শুধু শুধু হল নাকি সবে মান্য বান ?
সরল-সহজ-সত্য তাই আজি বলি

গুরুচাঁদ - কৃপাগুণে হয়েছে সকলি
।।
আদি অন্ত সে বৃত্তান্ত বলিবারে চাই

শুন সবে বিশ্ববাসী যাহা বলে যাই
।।
গুরুচাঁদ রূপে এল নিজে বিশ্বনাথ

উদ্ধারিল বিশ্বজনে করি কৃপাপাত
।।
মানব রূপেতে পালে' মানবের ধর্ম্ম

গৃহস্থ সাজেতে করে গৃহস্থের কর্ম্ম
।।
সেই শিক্ষা পেয়ে যারা মতুয়া হয়েছে

তাঁর ধর্ম্ম ঘরে ঘরে সবা'কে দিয়েছে
।।
ধর্ম্মনীতি রাজনীতি গৃহস্থের নীতি

সর্ব্ব-নীতি - দাতা গুরুচাঁদ বিশ্বপতি
।।
ধর্ম্মনীতি পেয়ে লোক মতুয়া হইল

শিক্ষানীতি প্রচারিতে মনন করিল
।।
তাই ভক্তগণে বলে গুরুচাঁদ প্রভু

'শিক্ষা নিতে অলসতা করিওনা কভু'
।।
বলা মাত্র স্রোত চলে প্রতি জেলা জেলা

কে জানে কি ভাবে করে প্রভু লীলাখেলা
।।
প্রভু দেখে শিশুজাতি নাহি শক্তি বল

শক্তি বিনা সব চেষ্টা হইবে বিফল
।।
সর্ব্বশক্তি মূলে রাজা সবার উপরে

রাজশক্তি বিনা জাতি উঠে কি প্রকারে?
ধর্ম্ম ধরি জীব যত আছে তিন লোকে

রাজ ধর্ম্ম - শক্তি ধরি তরা'ব জাতিকে
।।
রাজ ধর্ম্ম প্রচারিতে এই দেশে কত

পাদ্রী নাম ধারী আছে রাজ - পুরোহিত
।।
সেই শক্তি ধরি যদি উদ্ধার পাইব

রাজ - বলে বলী হয়ে জাতিকে তরা'
।।
কিবা ইচ্ছা করে প্রভু কেবা জানে মর্ম্ম

প্রভুুর ইচ্ছাতে ভবে হয় সর্ব্ব-কর্ম্ম
।।
নামেতে বালিয়াকান্দী একটি থানায়

অক্ষয় নামেতে তার শুন পরিচয়
।।
খৃষ্ট ধর্ম্মে দীক্ষা প্রাপ্ত জাতিতে বাঙ্গালী

ধর্ম্ম-প্রচারক বেশে ঘুরে অলি গলি
।।
দলিত-পতিত যত দীন হীন - জন

সবে কোল দিয়ে করে মঙ্গল সাধন
।।
উপকার পেয়ে পরে লোক কত শত

খৃষ্ট ধর্ম্মে দলে দলে হইল দীক্ষিত
।।
গুরু তার মহামতি মীড্ মহাশয়

অষ্ট্রেলিয়া দেশে ঘর শুন পরিচয়
।।
ডাক্তারী বিদ্যাতে তেঁহ অতি সুপারগ

দীর্ঘ-দেহ দিব্য-কান্তি রূপে ডগমগ
।।
খৃষ্ট ধর্ম্ম প্রচারিতে বঙ্গে আগমন

বিদ্যা বুদ্ধি ধর্ম্মে কর্ম্মে অতি মহাজন
।।
বালিয়াকান্দীতে রহে পাদরী অক্ষয়

নিজ হাতে দলিতেরে কোলে টানি লয়
।।
এ সংবাদ দেশে দেশে হল পরচার

পাদরী সাহেব করে দীনেরে উদ্ধার
।।
জমিদার মহাজন কিংবা বর্ণ হিন্দু

করে নাই যারে কৃপা কভু এক বিন্দু
।।
উঠিতে বসিতে যারে করে অপমান

ভাগ্যক্রমে সেই যদি হয়েছে খৃষ্টান
।।
যে-ঘরে উঠিতে বাধা ছিল পূর্ব্ব দিনে

খৃষ্টান সাজিলে বাধা নাহি কোন খানে
।।
রাজা, রাজ - পুরোহিত সকলে খৃষ্টান

ভয়ে কথা নাহি বলে এমনি সন্ধান
।।
খৃষ্টীয় প্রজার নাহি দণ্ড জরিমানা

তহুরী মহুরী ছাই কিছুই লাগেনা
।।
শুধু তাহা নহে কথা আর চমৎকার

খৃষ্টানের দ্বারা হয় কত উপকার
।।
খৃষ্টানে বলিলে কথা জমিদার শোনে

পাদ্রীকে ডাকিয়া সবে নেয় সে কারণে
।।

 

ক্রমে ক্রমে এই বার্ত্তা দেশে দেশ গেল
সবে বলে 'শুভ দিন বুঝিবা আসিল
।।
হেনকালে শুন বার্ত্তা বড়ই মধুর

দেশে দেশে ঘুরে ফিরে শ্রী শশী ঠাকুর
।।
নানা দেশে নানা ভাবে শিক্ষা লাভ করি

নিজ গ্রামে বিদ্যালয়ে করিছে চাকুরী
।।
গুরুচাঁদ-জ্যেষ্ঠ - পুত্র অতি গুণবান

রূপে গুণে নাহি ছিল তাহার সমান
।।
কার্যচ্ছলে যায় তিনি সে ফরিদপুরে

কার্যশেষে ফিরিলেন আপনার ঘরে
।।
বহুৎ সংবাদ বাবু জানিয়া আসিল

পিতৃ পদে সে-বিষয় সব প্রকাশিল
।।
যেই ভাবে কার্য করে অক্ষয় খৃষ্টান

সেই জনে সবে মানে দেবতা সমান
।।
রাজশক্তি দেখি পিছে জমিদার গণ

কোন ভাবে ছাড়িয়াছে দণ্ড- নিপীড়ন
।।
নাহি কোন ছুঁৎমার্গ খৃষ্টান হইলে!
কোন গুণে খৃষ্টধর্ম্ম নেয় দলে দলে
।।
সে-বৃত্তান্ত পিতৃপদে নিবেদন করে

সবিনয়ে বলিতেছে বিবিধ প্রকারে
।।
শুন পিতা নিবেদন করি গো চরণে

যেই চিন্তা মোর মনে জাগে নিশি দিনে
।।
নানা ভাবে মোর জাতি সহে নির্যাতন

দুঃখ-দূর করে হেন নাহি কোন জন
।।
পরম দয়াল রাজা তা'তে সন্দ নাই

রাজা কিন্তু নাহি জানে মোরা দুঃখ পাই
।।
রাজ কর্ম্মচারী যত আছে এই দেশে
 
প্রায় সব বর্ণ হিন্দু জানিও বিশেষে
।।
নিজ নিজ জাতি প্রতি তাহাদের প্রীতি

খবর রাখে না তারা কোথা দুঃখী জাতি
।।
দেশ-মধ্যে আছে যত জমিদার গণ

কিংবা ব্যবসায় করে যত মহাজন
।।
প্রায় সব বর্ণ হিন্দু নাহিক সন্দেহ

আমাদের পানে ফিরে নাহি চায় কেহ

রাজ শক্তি খৃষ্ট ধর্ম্মী তা'তে বলবান

ধনী মানী সবে করে রাজার সম্মান
।। 
রাজ-ভয়ে খৃষ্টানেরে সবে মান্য করে

উচ্চ-নীচ-ভেদ নাহি খৃষ্টান - ভিতরে
।। 
বঙ্গ দেশে যত হিন্দু আছে নিপীড়িত

খৃষ্ট ধর্ম্মে তাই সবে হ'তেছে দীক্ষিত
।।
খৃষ্টান হইতে তার কোন ভয় নাই

খৃষ্টধর্ম্মে নাহি কোন জাতির বালাই
।।
এই ভাবে আর যদি কিছু দিন যায়

সকলে খৃস্টান হবে নাহিক সংশয়
।।
বর্ণ হিন্দু যত আছে বঙ্গের ভিতরে

এই কথা তারা কেহ চিন্তা নাহি করে
।।
দিনে দিনে হিন্দুধর্ম্ম হইবে নির্ম্মুল

কেহ নাহি বুঝে ইহা কত বড় ভুল
।।
অহঙ্কারে মত্ত যত বর্ণ হিন্দু দল

বুঝেনা সমস্যা কত হয়েছে প্রবল
।।
ক্ষণে মনে ভাবি আমি খৃষ্টান আনিয়া

দুঃখ দূর করি তার সাহায্য লইয়া
।।
পুনঃ ভাবি অজ্ঞ যত নমঃশূদ্র গণ

উপকার পেয়ে যদি ভাবে মনে মন
।।
হিন্দু ধর্ম্ম থেকে কেন দুঃখ সহি'এত
 
এর চেয়ে খৃষ্ট ধর্ম্মে হইব দীক্ষিত
।।
সর্ব্বনাশ হবে তবে নমঃ নাহি রবে

ভবিষ্যতে নাহি জানি কি যেন কি হবে”
।।
এত যদি বলিলেন শশী মহাশয়

কৃপাবন্ত গুরুচন্দ্র তার প্রতি কয়
।।
শুনহে শশী ভূষণ যাহা আমি বলি!
তব বাক্য শুনে আমি মনে কুতূহলী
।।
সত্য বটে বলিয়াছ যত বর্ণ হিন্দু

বিপদের কথা নাহি বুঝে এক বিন্দু
।।

 

দূরদর্শী যারা তারা ভবিষ্যৎ দেখে
ভাবিয়া চিন্তিয়া তারা কাজ সেরে রাখে
।।
উপেক্ষা করিছে যাহা আজিকার দিনে

তার লাগি ব্যথা সবে পাবে নিজ - মনে
।।
ঈশ্বরের নিয়মেতে সুন্দর বিধান

কালে মানী হীন হয় মানী হীন-মান
।।
আজ যারা ঘৃণা করে আগামীতে তারা

ঘৃণিত হইবে সবে হয়ে মান - হারা
।।
আজিকার ভুল কল্য বুঝিতে পারিবে

তখন কাঁদিবে সবে হায়! হায়! রবে
।।
আর কথা শুন শশী বলিব তোমাকে

কাঞ্চন উজ্জ্বল হয় জ্বলন্ত পাবকে
।।
দুঃখ-রূপ-অগ্নি দাহে চিত্ত শুদ্ধ হয়

দুঃখ বিনা সুখ ভোগ কোথা কেবা পায়?
একদিন হিন্দু যবে পারিবে বুঝিতে

ভাইকে করিয়া ঘৃণা গেছে মৃত্যু পথে
।।
সে দিন নহেত দূরে এসেছে নিকটে

সেই দৃশ্য আমি যেন দেখি চিত্ত পটে
।।
ভাই ভুল করে বলে আমি কোন ভাবে

নিজে ভুল করে ডাকি মরণ- আহবে
।।
মম পিতা হরিচাঁদ যুগ - অবতার

প্রেমদানে হীন জনে করিলা উদ্ধার
।।
যেই শক্তি হরিচাঁদ দিয়া গেছে সবে

সেই শক্তি হিন্দু গণে গ্রহণ করিবে
।।
সর্ব্ব-জাতি-সমন্বয় হবে তাঁর মতে
 
ভাই ভাই হয়ে সবে চলিবে সে পথে
।।
যে-যে ধর্ম্ম যে-যে-খানে হয়েছে প্রচার

সারতত্ত্ব আছে জান ' সবার ভিতর
।।
এ ধর্ম্ম সে-ধর্ম্ম করি যারা ঘুরিতেছে

মূল ফেলে ডালে ধরি ঘুরে মরিতেছে
।।
ধর্ম্ম-তত্ত্ব ভুল নহে প্রণালীতে ভুল

প্রণালী'ত শাখা-মাত্র ধর্ম্ম কিন্তু মূল
।।
আজ যারা খৃষ্ট ধর্ম্ম করিছে গ্রহণ

বল দেখি ধর্ম্ম তারা ছাড়ে কি কারণ ?
মূলতত্ত্ব নাহি বুঝে জাগতিক দুঃখে

ধর্ম্ম ছাড়ি খৃষ্টে ভজে শুধু মুখে মুখে
।।
আপাতঃ সুযোগ লোভে এই সব লোক

মুখে মুখে বলে ' খৃষ্ট জগৎ- তারক '
।।
গৃহস্থ জনের দুঃখ নাশিবার তরে

মম পিতা হরিচাঁদ আসিলা সংসারে
।।
তাঁর আজ্ঞা শিরে রাখি আমি কাজ করি

দেখি যদি সংসারীকে সুখ দিতে পারি
।।
গৃহস্থ জনের - শ্রেষ্ঠ রাজা যিনি হয়

রাজা হ'লে সংসারীর সব দুঃখ যায়
।।
প্রজা সবে গৃহী বটে তা'তে ভুল নাই

সকল শক্তির কেন্দ্র-রাজ শক্তি পাই
।। 
রাজ শক্তি বিনা দেখ গৃহস্থ বাঁচেনা

শক্তি বিনা জীব মধ্যে পরাণ নাচেনা
।।
গৃহীজন উদ্ধারিতে রাজ শক্তি চাই

হিন্দু মধ্যে বর্ত্তমানে সেই শক্তি নাই
।।
যেই ধর্ম্মে রাজা আছে সেই ধর্ম্ম তাজা

ধর্ম্ম-রাজ্যে বাস করে ধর্ম্ম শীল প্রজা
।। 
ইতিহাসে পড়িয়াছ কথা মিথ্যা নয়

অশোক নৃপতি ছিল রাজার তনয়
।। 
তেঁহ যবে বৌদ্ধ ধর্ম্ম গ্রহণ করিল

তাঁর তেজে বৌদ্ধ ধর্ম্ম জগতে ছড়া'
।।
ইংরাজ খৃষ্টান জাতি রাজ শক্তি আছে

খৃষ্ট ধর্ম্ম এ জগতে ছড়া'য়ে পড়েছে
।। 
মোর মনে এই হয় করি এক কাজ

সহায় আছেন মোর হরি রস-রাজ
।।
রাজ শক্তি সহায়েতে যদি কাজ করি

অবশ্য ঘৃণিত জনে উদ্ধারিতে পারি
।।
ধর্ম্ম ভুলি মোরা কেন খৃষ্টান হইব

রাজশক্তি সহায়েতে ধর্ম্মকে রাখিব
।।

 

অক্ষয় খৃষ্টান যদি আসে এই দেশে
যত্ন করি আন ' তারে বিশেষ - বিশেষে
।।
আর শোন গুপ্ত কথা বলি যে তোমারে

মহাশক্তি মান এক খৃষ্টান ভিতরে
।। 
তাঁহার সন্ধান পাবে অক্ষয়ের ঠাঁই

তাঁরে পেলে জান ধ্রুব আর ভয় নাই
।।
নমঃশূদ্র মধ্যে যত আছেন প্রধান

তাহাদিগে ' সঙ্গে নিয়ে কর অভিযান
।।
সহায় আছেন হরি ক্ষীরোদ - ঈশ্বর

তাঁর দয়া বিনে কিছু গতি নাহি আর”
।।
এত যদি বলিলেন প্রভু গুরুচন্দ্র

শ্রী শশী বন্দিল তাঁর চরণার বিন্দ
।।
প্রভুর আদেশ মত ডাকিল প্রধানে

এ বার্ত্তা জানা'ল সবে অতি সঙ্গোপনে
।।
অতঃপর দেশবাসী প্রধানে লইয়া

উপনীত অক্ষয়ের নিকটে আসিয়া
।।
বালিয়াকান্দিতে হয় তাঁর বাসস্থান

তার অগ্রে উপনীত যতেক প্রধান
।।
যতেক দুঃখের কথা কহে তাঁর কাছে

উপায় কি হবে? তারা পরিশেষে পুঁছে
।। 
দুঃখ বার্ত্তা শুনি তবে অক্ষয় সুধীর

স্তব্ধ ভাবে কিছুকাল রহিলেন স্থির
।।
অতঃপর বলিলেন সেই মহাশয়

শুনিয়া দুঃখের বার্ত্তা দুঃখী অতিশয়
।।
জীব দুঃখে দুঃখী ছিল খৃষ্ট মহারাজ

তার যত আছি মোরা শিষ্যের সমাজ
।।
সেই - মত প্রাণ-পণে করিব পালন
 
শিষ্টের পালন করি দুষ্টের দমন
।।
আরও উদ্দেশ্য এক বলি অকপটে

ধর্ম্ম-তত্ত্ব-কথা কহি সবার নিকটে
।।
খৃষ্ট-ধর্ম্ম-জগজ্জীবে তারিবারে পারে

সেই-ধর্ম্ম বিলি মোরা করি ঘরে ঘরে
।। 
আজিকার পৃথীবিতে বড় রাজা যত

সবে দেখ হইয়াছে খৃষ্ট পদানত
।।
সযতনে এই ধর্ম্ম যে করে সাধন

সর্ব্ব রাজ শক্তি করে তাহারে রক্ষণ
।।
প্রধানতঃ এ উদ্দেশ্যে আছে দৃষ্টি পথে

জীব সেবা কার্য বটে করি যতনেতে
।।
ধর্ম্মের উন্নতি হবে বুঝি যদি মনে

অগ্রে মোরা যাই বটে সেই-সেই-স্থানে
।।
আপনার দেশে যদি সেই ভাব পাই

আমাদের যেতে তবে কোন বাঁধা নাই
।। 
আর কথা বলি আমি শুন মহাশয়

মম গুরু মীড্ যিনি জেলা পরে রয়
।। 
তার আজ্ঞা ব্যতিরেকে কিছু না সম্ভবে

যে আজ্ঞা করেন তিনি তাহা করি সবে
।।
কথা শুনি শশী বাবু করে পরামর্শ
 
প্রস্তাব করিল শেষে মনে হয়ে হর্ষ
।।
আমাদের যত কথা করি নিবেদন

এক মত মোরা সবে করেছি গ্রহণ
।।
আমাদের নেতা হল ওড়াকান্দী বাসী

যার আজ্ঞা ক্রমে মোরা সবে হেথা আসি
।।
শ্রী গুরু চরণ নাম উপাধী ঠাকুর

যার গুণ রাশি লোকে জানে বহুদূর
।।
নমঃশূদ্র শিরোরত্ন অপার মহিমা

রূপে গুণে কেবা তাঁর দিতে পারে সীমা?
তব গুরু মহামতি মীড ও যেমন

নমঃশূদ্র মাত্রে তাঁরে জানেও তেমন
।।
তাঁর আজ্ঞা ব্যতিরেকে মোরা কোন কথা

বলিতে রাখিনা শক্তি বলিনু সর্ব্বথা
।।
তবে এক কথা মোরা বলিবারে চাই

মনোগত ভাব সব আপনা 'জানাই
।।
হোক বা না হোক থাক পরে দেখা যাবে

মোর দেশে একবার চল বন্ধুভাবে
।।

 

যদি মনে লয় তবে বসতি করিবে
অন্যথায় নিজালয় চলিয়া আসিবে
।।
নমঃশূদ্র সবে যদি এই কথা বলে

অক্ষয় করিল মত অতি কুতূহলে
।।
স্থির হ'ল সপ্তাহান্তে অক্ষয় আসিবে

যাহা কথা তাহা ঠিক ভুল নাহি হবে
।।
দেশে ফিরে সবে মিলে প্রভুকে কহিল

সব কথা শুনি প্রভু সন্তুষ্ট হইল
।।
অক্ষয় সপ্তাহ পরে এল ওড়াকান্দী

গুরুচাঁদ গুণে তেঁহ হইলেন বন্ধী
।।
অক্ষয়ের মনে হয় ক্ষেত্র উপযুক্ত

গুরুচাঁদ নিকটেতে কথা করে ব্যক্ত
।।
মীড মহামতি আছে জেলার উপরে

রাজধানী শহরেতে সে ফরিদপুরে
।।
আমিও রিপোর্ট দিব উত্তম প্রকারে

যাহাতে সুফল হয় মীড - দরবারে
।।
অক্ষয়ের কথা শুনি গুরুচাঁদ মনি

শ্রী শশি ভূষণে আজ্ঞা করিল তখনি
।।
শুন শশী কাছে আসি আমি যাহা কই

উত্তম সুযোগ পেয়ে কেন বসে রই ?
তুমি আদি ভীষ্ম দেব দাস মহাশয়

চলি যাও সাধু মীড রয়েছে যেথায়
।।
তার কাছে সুখ দুঃখ কর নিবেদন

শুভ যাত্রা হবে আমি বলিনু কারণ
।।
ভাঙ্গা শহরেতে থাকে মণ্ডল দ্বারিক

তার সাথে মিলি ঠিক করহে তারিখ
।।
যতেক প্রধান আছে নমঃশূদ্র মধ্যে

মীডে বাধ্য কর সবে পরম সৌহৃদ্যে”
।।
এই কথা গুরুচাঁদ যখনি বলিল

আনন্দিত মনে শশী ছুটিয়া চলিল
।।
ভীষ্ম দেব আদি সহ পরামর্শ করি

ফরিদপুরেতে গেত স্মরিয়া শ্রী হরি
।।
ইচ্ছাময় প্রভু যাহা ইচ্ছা করে মনে

কভু কেহ বাধা দিতে পারে কি কখনে ?
প্রভুর হইল ইচ্ছা রাজ - শক্তি এনে
 
তারিবে পতিত জাতি বিবিধ বিধানে
।।
মানব আচারে করে মানবের রীতি

চির দুঃখী জনে দয়া হয়ে চিরসাথী
।।
সত্যবটে প্রভু যদি ইচ্ছা করে মনে

সকলি করিতে পারে নিমেষের ক্ষণে
।।
মানবের ক্ষুদ্র প্রাণে তা কি সহ্য পায় ?
আশ্চর্য মানিয়া জীবে পায় মহাভয়
।।
শৃঙ্খলা - অধীনে চলে তাঁর যত নীতি

যেখানে সম্ভব যাহা করে সেই গতি
।।
যতটুকু নরগণে সহ্য করতে পারে
 
শক্তিকে প্রকাশ করে সেই ধারা-ধরে
।।
মানব জীবনে লাগে যত প্রয়োজন

মানব আচারে প্রভু করে তা ' সাধন
।।
তাঁরে নর ভাবে নর থাকে তাঁরে ধরে

অদৃশ্য কৃপার ছায়া ধরে রাখে তারে
।।
নর পক্ষে রাজ শক্তি অতি প্রয়োজন

সেই শক্তি গুরুচাঁদ করে আকর্ষণ
।।
মানবের ভাব ধরে মানবের মত

মানবে চালায় প্রভু ভবে অবিরত
।।
সেই ভাবে গুরুচাঁদ আজ্ঞা করে দিল

মীড দরবারে সবে হৃষ্ট মনে গেল
।।
ভীষ্মদেব দাস সাজে দলের প্রধান

দলবল লয়ে তেহ আগুয়ান হন
।।
ফরিদ পুরেতে গিয়ে দিল দরশন

সবে মিলি উপস্থিত মিডের সদন
।।
সুদীর্ঘ সুন্দর বপু আয়ত লোচন

মিষ্টভাষী হাসি হাসি করে আলাপন

সরল উদার চিত্ত মীড মহামতি

বিশ্ব-জনে বন্ধু জনে করেন সম্প্রতি
।।

 

তেঁহ ঠাই সবে মিলি উপনীত হল
অভ্যর্থনা করি মীডে সবা'কে বসাল
।।
অক্ষয় রিপোর্ট লিখি দিয়েছিল আগে

মীডের মনেতে সদা সেই স্মৃতি জাগে
।।
হাসি হাসি মহামতি জিজ্ঞাসিল কথা

ভাই সব! বল দেখি ওড়াকান্দী কোথা ?
সে দেশ কেমন বল কোন জাতি বসে ?
নদী খাল নালা আদি আছে কিনা পাশে ?
দেশ মধ্যে কোন ব্যক্তি সবার প্রধান ?
কত লোকে মান্য করে কিবা গুণবান ?
বসতি লোকের ঘরে কিবা ধন আছে ?
স্কুল পাঠশালা আদি আছে নাকি কাছে ?
কি ভাবে জীবন পথে সবে চলে সেথা ?
রাজ ভক্ত প্রজা কেহ আছে নাকি হেথা
ব্রাহ্মণ কায়স্থ আদি আছে কত জন ?
জমিদার মহাজন আছে বা কেমন ?
শহর বন্দর থানা কাছে আছে নাকি ?
কোন জীব বেশী মিলে পশু কিম্বা পাখী ?
চলাচল বন্দোবস্ত আছে কি প্রকার?
কোন কোন বৃক্ষ মিলে কেমন আকার ?
চোর দস্যু ডাকাতের আড্ডা আছে নাকি ?
ব্যবসায় কার্যে লোকে দেয় নাকি ফাঁকি ?
কোন ধর্ম্ম মানে সবে কিবা ধর্ম্ম করে ?
ছুঁৎমার্গ আছে নাকি দেশের ভিতরে ?
দাঙ্গা বাজী মোকদ্দমা আছে বা কেমন ?
সব কথা মোর কাছে করুন বর্ণন
।।
সকল আমার কাছে বলুন এখনে

পশ্চাতে বলিব আর যাহা আসে মনে”
।।
অগ্রণী হইয়া কথা কহে ভীষ্ম দাস

মনেতে দারুণ ব্যথা ছাড়ে দীর্ঘ শ্বাস
।।
ওড়াকান্দী বাসী ইনি পরম পণ্ডিত

স্বজাতির তরে বহু করিল বিহিত
।।
শ্রী কমলাকান্ত দাস তার জেষ্ঠ ভাই

জ্ঞানী গুণী ধনী তাঁরে বাখানে সবাই
।।
গুরুচাঁদ সঙ্গে রাখে পরম সম্প্রীতি

এক ভাবে এক গ্রামে করেন বসতি
।।
শ্রী শশী ভূষণ সবে করে শিক্ষা দান

ভীষ্ম দেব দাস ছিল ছাত্রের প্রধান
।।
তেঁহ পরে লেখাপড়া বহুৎ শিখিল

ওকালতি পাশ করি উকিল সাজিল
।।
গুরুচাঁদ আজ্ঞা মতে সবে কার্য করে

কাউন্সিলে সভ্য তিনি হইলেন পরে
।।
মীড সঙ্গে দেখা যবে অবশ্য তখন

এসব সৌভাগ্য তেঁহ করেনি অর্জ্জন
।।
উকিল হইবার পূর্ব্বে এই সব ঘটে

মীডের নিকটে সব বলে অকপটে
।। 
দারুন বেদনা মনে সীমা দিতে নাই

কথা বলে ভীষ্ম দেব দুঃখে ছাড়ে হাই
।।
মনে মনে গুরুচাঁদে করেন স্মরণ

ধীরে ধীরে সব কথা করে নিবেদন
।।
শ্রী গুরু পাদ পদ্ম স্মরণ করিয়া

ক্রমে ক্রমে সেই কথা যাইব গাহিয়া
।।
এস হৃদে গুরুদেব! কহ তব বাণী

দীন মহানন্দ স্মরে চরণ দু'খানি
।।
পদ রজঃ বিনে গুরু মোর শক্তি নাই

নিজ গুণে দয়া করে পদে দেহ ঠাঁই
।।

 

ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,ভীষ্ম দেব দাস 
কহিছে মীডের প্রতি

শুন মহাশয়, বলি যে তোমায় 
নমঃশূদ্রের দুর্গতি
।।

 

 

 

 


এই বঙ্গ দেশে, শুনহ বিশেষে 
যত জাতি করে বাস

হিন্দু মুসলমান, বিভাগ প্রধান 
বাস করে পাশাপাশ
।।
কায়স্থ ব্রাহ্মণ, বৈদ্যজাতি ক'ন্
সবার উপরে মোরা

নবশাখ বলি, আছে কতগুলি 
জল-চল জাতি তারা
।।
জল-চল জাতি, শুন হে সম্প্রতি 
কি জন্যে তাদেরে বলে

কায়স্থ ব্রাহ্মণ, করেন গ্রহণ
এরা জল তুলে দিলে
।।
এদের ছাড়িয়া, অস্পৃশ্য বলিয়া 
বহু জাতি আছে বঙ্গে

নমঃশূদ্র জাতি,ইহাদের সাথী 
সুখে দুঃখে আছে সঙ্গে
।।
যত মহাজন,জমিদার গণ
ধন-বলে সবে রয়

অস্পৃশ্য যাহারা, কাঙ্গাল তাহারা
দুঃখে সুখে দিন যায়
।।
রক্ত করি জল, এসব কাঙ্গাল 
ধন উপার্জ্জন করে

শিক্ষা-দীক্ষা-হীন, আছে চিরদিন
কিছুই বুঝিতে নারে
।।
যাহা উপার্জ্জয়, তাহা লুটি লয় 
জমিদার মহাজন

নানা ছলে বলে, কি অপ কৌশলে 
লুটে লয় সব ধন
।।
সামাজিক রীতি, বিগর্হিত অতি
মানবতা তা'তে নাই

নমঃশূদ্র ছেলে, জল এনে দিলে
তারা বলে 'নাহি খাই '
।।
দেবতা মন্দির, দাঁড়াইয়া স্থির
এ দেশ জুড়িয়া রয়

সবে যেতে হেথা, নাহিক ক্ষমতা 
এমনি বিষম দায়
।।
অস্পৃশ্য বলিয়া, এদের ঠেলিয়া 
যারা দূরে রাখিয়াছে

পুজা দিতে পারে, সে সব মন্দিরে 
যেতে পারে বটে কাছে
।।
দেবতার জাতি, যত দুষ্টমতি 
দিয়াছে আপন মনে

হিন্দু পরিচয়, শুধু গণনায় 
অহিন্দু সকল খানে
।।
দুঃখের বারতা, বলিব বা কোথা 
সবে আছে এক দলে

সব সুচতুর,করে 'দুর' 'দুর'
এরা সবে কাছে গেলে
।।
রাজার কাছারী, যত কর্ম্মচারী 
তারা সবে বর্ণ হিন্দু

মোরা যদি যাই, কভু নাহি পাই 
কৃপা - কণা এক বিন্দু
।।
বিদ্যা শিখিবারে, উহাদের ধারে 
স্থান মোরা নাহি পাই

গেলে পাঠশালে, দূরে দেয় ঠেলে 
বিচারক কেহ নাই
।।
মোরা অর্বাচীন, রাজার আইন 
কোন কিছু নাহি জানি

যা'বলে উহারা, তাহাই আমরা
আইন বলিয়া মানি
।।
রাজাকে চিনিনা, প্রাণের বেদনা 
বলিব কাহার কাছে ?
চিনি জমিদার, প্রজা ত তাহার
ভয় করি - মরি পাছে
।।

যখনে যা' বলে, সকল আমলে 
আমরা আনিয়া থাকি

পড়ি কোন দায়, দেশে কি জেলায় 
জমিদারে মোরা ডাকি
।।
পুত্র পরিবার, মোদের সবার 
সম্বল একটু ভিট্টা

কেড়ে নিতে পারে, সব জমিদারে 
কবুল করে না পাট্টা
।।
এমত প্রকারে, বঙ্গের ভিতরে
অস্পৃশ্য জাতির বাস

আকারে মানব, আছে বটে সব 
বিচারে দাসের-দাস
।।
কত কাল হয়! নাহি পরিচয় 
এই ভাবে দিন কাটে

বিধাতার বিধি “, ভাবে নিরবধি 
তাহাতে এসব ঘটে
।।
ওড়াকান্দী পরে, নমঃশূদ্র ঘরে 
মহাজন এক জন

বিধির কৃপায় আসি জন্ম লয় 
বলি সেই বিবরণ
।।
হরিদাস নাম, গুণে অনুপম
মহা শক্তি ধারী তিনি

ধর্ম্ম প্রচারক, পতিত-তারক 
বরুণ অরুণ জিনি
।।
নানা বিধ মতে, পতিতে-তারিতে
ঘরে ঘরে দিল দিক্ষা

তাঁহার কৃপায়, মোরা কিছু হায় 
লভিয়াছে বিদ্যা শিক্ষা
।।
শ্রী হরি ঠাকুর, চরিত্র মধুর 
ঠাকুর বলিয়া ডাকে

কাঙ্গাল যাহারা, সকলে তাহারা 
তাঁর পদাশ্রয়ে থাকে
।।
বহু শিষ্য তাঁর, বঙ্গের ভিতর 
তাঁর মতে সবে চলে

সেই মহাজন, দয়ার কারণ 
এসেছিল এই কুলে
।।
তাঁহার নন্দন, শ্রী গুরু চরণ
ঠাকুর উপাধি যাঁর

পিতার আজ্ঞায়, সেই মহাশয় 
লয়েছে জতির ভার
।।
কিন্তু মন্দ-ভাগ্য, মোরা সবে অজ্ঞ
যোগ্যাযোগ্য নাহি চিনি

দিতে ধর্ম্মজ্ঞান, সেই মতিমান
করিতেছি টানা টানি
।।
শ্রী শশি ভূষণ, তাঁহার নন্দন
উপস্থিত দেখ হেথা

মোরা সবে আসি, এক দলে মিশি 
প্রাণে প্রাণে একাগ্রতা
।।
অক্ষয় কুমার, তব অনুচর 
শুনিয়াছি তাঁর মুখে

পতিতের বন্ধু, তুমি কৃপাসিন্ধু 
অসীম করুণা বুকে
।।
আদি অন্ত যত, তাহার সহিত 
করিয়াছি আলাপন

মোদের দেশেতে, অনুচর সাথে 
গিয়াছিল সেই জন
।।
স্ব-চক্ষে সকল, দৃশ্য অবিকল
দেখিয়াছে সেই সুধী

তাঁহার কথায়, আনন্দ হৃদয় 
আসিয়াছি এ অবধি
।।
নিজ মুখে তিনি, কহিল যে বাণী 
পুনরায় তাহা বলি

মীড মহামতি, দীন জন প্রতি 
সদা করে কৃপাঞ্জলি
।।

 

এ দেশের কথা, লিখিব সর্ব্বথা 
নাহি হবে কিছু আন্

তোমরা সকলে, মিলি একদলে 
হও সবে আগুয়ান্
।। 
অকপট মনে, প্রভু মীড -স্থানে 
বলিবে দুঃখের কথা
 
মম মনে হয়, সেই মহাশয় 
বুঝিবে দীনের ব্যথা

তাই আসি হেথা, করিয়া একতা
কর এবে সদুপায়

এই দীন জাতি, লভি তব প্রীতি 
যদি কোন কুল পায় “
।।
এই বাণী শুনি, মীড গুণ মণি 
দুঃখেতে অন্তর দহে

রহি কিছু ক্ষণ, দুঃখেতে মগন 
পরাণ খুলিয়া কহে
।।
শুন মহাশয়,আমার হৃদয় 
ব্যথিত হইল বড়
 
মানুষে - মানুষে,তোমাদের দেশে
দ্বেষা -দ্বেষি ভারী কর
।।
ইংরাজ আমার, জাননা তোমরা
মানুষে করি না ঘৃণা

সকলে সমান,ধনী ও নির্ধন
মানুষে হিংসিতে মানা

কোন সে বিচার, কোন সে আচার
কোন সে শাস্ত্রের কথা ?
মানুষেরে ঘৃণা, নিষেধ করে না 
বোঝেনা তাদের ব্যথা ?
করে বহু রোষ, স্পর্শে নাকি দোষ
এ কোন গর্হিত নীতি ?
এই ধরাতলে, কেবা কোন কালে
স্পর্শ - ছাড়া পায় গতি ?
পুকুরেতে জল, করে টল মল
ভিন্ন ভিন্ন রহে ঘাট

জাতি -বর্ণ ভুলি, সেখানে সকলি
ভরে নেয় নিজ ঘট
।।
জলে জলে সেথা, সীমানা বা কোথা 
ছোঁয়া ছোঁয়া কিসে বাকী?
এই সব দেখে, অতি বড় দুঃখে 
মরমে মরিয়া থাকি
।।
মানুষেরে ঘৃণা, করে যেই জনা 
গতি যে তাহার নাই

পরম - ঈশ্বর, মোরা যে তাঁহার 
সন্তান সকলি ভাই
।।
ভাই দুঃখে মরে, তাই চোখে হেরে 
চোখে নাহি যার জল

এই ধরা তলে, মানবের কুলে 
জন্মে কিবা তার ফল ?
আমি মানি খৃষ্ট, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট
আদিষ্ট তাহার নামে

জীবে ভালবাসা, তাঁর প্রেম -আশা
কহিব এ -মর ধামে
।।
বিশ্বের বাজারে, ফিরি ঘরে ঘরে
জীব - সেবা মহাব্রত

যীশু যাহা বলে, তাই সত্য বলে
জানি যে পরম -পথ
।।
নর সেবা যথা, জাতিবর্ণ তথা
ভিন্ন ভাব কিছু নাই

ব্যথিত মানব, বুকে টেনে ল'
যেখানে যাহারে পাই
।।
তোমাদের কথা, শুনিলাম হেথা
দেখিলাম ভেবে মনে

এই বঙ্গ দেশে, প্রভুর আদেশে
সেবি 'ব ব্যথিত জনে
।।

 

দেশে চলি যাও, প্রণাম জানাও 
মাননীয় গুরুচান্দে

কি জানি কেমনে, সে নাম শ্রবণে 
পরাণ আমার কান্দে
।।
কেন মনে হয়, কি জানি কোথায় 
তাহাতে আমাতে বাঁধা

দেখা নাহি হলে, যেন কোন কালে 
ঘুচেনা মনের ধাঁধা
।।
প্রাণ কেন্দে কয়, দেরী নাহি সয় 
চল চল ত্বরা করি

নয়ন ভরিয়ে, পরাণ খুলিয়ে 
সে - রূপ মাধুরী হেরি
।।
তোমরা জাননা, এমন ঘটনা 
এ জীবনে ঘটে নাই

পাগল এমন, কেন হল মন 
মনে মনে ভাবি তাই
।।
চলি যাও সবে, দেরী নাহি হবে 
ত্বরায় আসিব আমি

দেখিব কেমন, শ্রী গুরুচরণ 
নমঃশূদ্র - কুল - স্বামী
।।
এ বাণী শুনিয়া, আনন্দে মাতিয়া 
সকলে ফিরিয়ে এল

গুরুচাঁদ ঠাঁই, বলে সবে তাই 
ফেলিয়া নয়ন জল
।।
কথা শুনি প্রভু, অখিলের বিভু
আনন্দে গলিয়া যায়

সবে ডাকি বলে, শুনহে সকলে 
কেটে গেল সব-দায়
।।
মানুষ আসিবে, এ দেশে রহিবে 
করিবে মোদের কাজ

এতকাল পরে, বুঝি দয়া করে 
রক্ষা করে হরিরাজ
।।
যা বলি শুনিও,সজাগ থাকিও 
নাহি কর অবহেলা

মীড এলে পরে, যেন ঘরে ঘরে 
সাজায় পূজার ডালা
।।
ভক্তি গুণে বাধ্য, নিজে ভবারাধ্য 
মানব ত কোন ছার

মীডে ভক্তি -গুণে, বান্ধহ' এখানে 
ভয় নাহি রবে আর”
।।
ক্রমে দিন যায়, প্রভুজী হেথায় 
জনে জনে ডাকি বলে

শুনে রাখ সবে, সন্মান করিবে 
এই দেশে মীড এলে
।।
অতি সদাচারে, কুল ব্রতাচারে 
তাঁহারে দেখাও নতি

কর মন খুলে, হিংসা দ্বেষ ভুলে 
পরাণে রাখিয়া প্রীতি
।।
শ্রাবণ আসিল, বরষা নামিল
ভরা বিল কানে 'কানে '

ধানের পাতায়, ঢেউ খেলে যায়
দেশ - ভরা গানে গানে
।।
কল কল কল, ছুটে চলে জল
কত তরী চলে ভেসে

দুরু দুরু বুক, সবাই উন্মুখ
ঐ বুঝি সে মীড আসে
।।
দিন চলি যায়, শত প্রতিক্ষায়
মীডের নাহিক দেখা

শ্রাবণ আকাশে, দুরন্ত বাতাসে 
আঁকিল নিরাশ রেখা
।।
হতাশ পরাণে, তাই প্রভু - স্থানে 
সবে আসে দলে দলে

কান্দিয়া কান্দিয়া, চরণ বন্দিয়া 
বুকে ব্যথা নিয়ে চলে
।।

 

কুহকিনী আশা,বড় সর্ব্বনাশা
মরুবুকে মরীচিকা

ধরি বলে ধায়, জীব সমূদয় 
মরু - বুকে জল - রেখা
।।
নিরাশ না হলে, কোথা আশা মিলে ?
আলো শেষে অন্ধকার

অন্ধকার গেলে, আলো আসে চলে
এই ত বিধান তাঁর
।।
আশা ডুবে মরে, নিরাশা মাঝারে 
নিরাশার শেষে আশা

ভোগে কিছু নাই, ত্যাগে সব পাই 
হিংসা শেষে ভালবাসা
।।
শ্রাবণের শেষে, তাই অবশেষে
একদা প্রভাত কালে

সবুজ তরণী, গঠনে বাখানি
মন্দ মন্দ গতি চলে
।।
ওড়াকান্দী গাঁয়, পশ্চিম পাড়ায় 
দাস বাড়ী বলে খ্যাত

তাহার আঙ্গিনে,বাটির দক্ষিণে
তরী লাগে অকস্মাৎ
।।
মাল্লা মাঝি সবে, অতি উচ্চ রবে
পুছিল কাহার ঠাঁই

ভীষ্ম দেব দাস, কোথা তার বাস
বল দেখি শুনি তাই ? “
তরণী দেখিয়া, মনে ভীত হইয়া 
বলিছে বাড়ির লোকে

'কি জানি কোথায়, ভীষ্ম দেব রয় 
আমরা চিনিনা তা'কে '
।।
এ দেশে আসিতে, পথের মাঝেতে
মীড নিল পরিচয়

পরিচয় মতে, আসিয়া ঘাটেতে
ভীষ্ম দেবে নাহি পায়
।।
ক্ষুণ্ণ মনে তাই, ' ফিরে চল যাই 
মীড ডাকি বলে সবে

এ হেন দেশেতে, বুঝি কোন মতে 
মোর থাকা নাহি হবে '
।।
এতেক ভাবিয়া, তরণী খুলিয়া 
উত্তর বাহিনী হয়

মনে জানি সব, ভবাদি - বান্ধব
শ্রী শশী ভূষণে কয়
।।
বলে শুন শশী! অদ্যকার নিশি 
স্বপনে দেখেছি আমি

স্বপ্ন দেখি মন, হল উচাটন 
কেন জানে অন্তর্যামী
।।
দেখিলাম আমি, শুন বাচা তুমি 
মহাজন এক জন

এক স্বর্ণ তরী, মণি মুক্তা ভরি 
হেথা করে আগমন
।। 
ঘাটে ঘাটে ফিরি, সেই স্বর্ন - তরী 
জনে জনে মণি দেয়

কাঁচ ভাবি মনে, সেই সব জনে 
মানিক নাহিক লয়
।। 
সেই মহাজন, অতি ক্ষুণ্ণ মন 
মন দুঃখে ফিরে যায়

স্বপ্ন ভাঙ্গিল,অন্তর দহিল
বহু দুঃখ যন্ত্রণায়
।। 
মোর মনে লয়, পশ্চিম পাড়ায় 
একবার তুমি যাও

ভীষ্ম দেবে ডেকে, আনহে আজিকে
আর যারে যারে পাও”
।।
পিতার আজ্ঞায়, তব মহাশয় 
নিজ তরণীতে চলে

কিছু দূর গিয়া, দেখিল চাহিয়া 
সবুজ তরণী বিলে
।।

 

অতি দ্রুত গতি, তরণীর প্রতি 
চালায় আপন তরী

মনে ভাবে হায়! চিনেছি নিশ্চয় 
ইথে নাহি ভুল করি
।।
মধ্য বিলে যায়, তবে দেখা হয়
মহামতি মীড সনে

ধরি তাঁর তরী, নমস্কার করি 
শ্রী শশী ভূষণ ভণে
।।
কোন ভাগ্য দোষে,মোরা এই দেশে 
হারানু পরম ধনে

সবে দুঃখী মোরা, চির - দুঃখ - ভরা 
বিমুখ কি সে কারণে ?
মীড হাসি কয়, শুন মহাশয় 
তোমার দেশের রীতি

মুখে বলে যাহা, মনে নাহি তাহা 
জানে না সত্যের প্রীতি
।।
যেথা সত্য নাই, সেথা ধর্ম্ম নাই 
সেখানে উন্নতি কিসে ?
একে বলে যাহা, অন্যে বলে তাহা 
এই নাকি এই দেশে ?”
এমত বলিয়া, সমস্ত খুলিয়া 
মীড গুণমণি বলে

সব শুনে শশী, বলে হাসি হাসি 
শুধু শুধু দোষ দিলে
।।
এই দেশ বাসী, রহে জলে ভাসি 
জীবনে তাহারা তবু

এমন তরণী, সবুজ - বরণী 
দেখে নাই কেহ কভু
।।
মনে বল নাই, ভয়ে ভয়ে তাই 
তোমারে বলেছে ভাক্ত

বহু অত্যাচারে,এদের ভিতরে 
মেরুদণ্ড নাহি শক্ত
।।
তোমার তরণী, পুলিশ বাহিনী 
বহিয়া এনেছে হেথা

এমন চিন্তায়, মনে পেয়ে ভয় 
বলেছে অলীক কথা
।।
অপরাধ ক্ষম, অনুরোধ মম
বিশেষ আমার পিতা

তব আগমন, জানি মনে মন 
আমারে পাঠা'ল হেথা
।।
স্বপনের ছলে, তেঁহ মোরে বলে 
তব - আগমন - বার্ত্তা

তাঁর আজ্ঞা মতে, আসিয়াছি পথে 
ফলেছে সুফল যাত্রা “
।।
স্বপন কাহিনী, তাঁর মুখে শুনি 
মীড ভাবে মনে মন

বুঝিনু নিশ্চয়, সেই মহাশয় 
নাহি হবে সাধারন
।।
সাধরন জন, না হবে কখন 
দেব শক্তি ধারী নর

দেব -শক্তি - বিনা, কেমনে বুঝিনা
এ - হেন উন্নততর
।।
এ - হেন পুরুষে, মনের হরিষে 
দেখিতে হইবে মোর

যদি নাহি দেখি, সব রবে বাকী
কাটিবেনা চিত্ত - ঘোর
।।
এত ভাবি মনে, প্রকাশ্যে তখনে 
বলিছে শশির ঠাঁই

'যাহা বল তুমি, তাহে প্রীত আমি 
চল তব ঘরে যাই'
।। 
তরণী ফিরিল, বাহিয়া চলিল
লাগিল ঠাকুর - বাড়ী

দুই দিকে তার,আছে পরস্পর 
সারি সারি বসে দাঁড়ি
।।

 

যবে ঘাটে ভিড়ে, শশী নামি তীরে 
ত্বরিত চরণে চলে

পিতৃ পদে পড়ি, প্রণামাদি করি 
কর জোড় করি বলে
।।
তরণী এসেছে, এ ঘাটে ভিড়েছে 
সাহেব রয়েছে একা

বলেছে সম্প্রতি, করিয়া মিনতি 
আপনারে চায় দেখা
।।
তব আজ্ঞা বিনে, কিছুই পারিনে 
যদি আজ্ঞা দেহ মোরে

বড় দয়াময়, মীড সদাশয় 
কূলেতে আনিব তাঁরে “
।। 
পুত্র - মুখে শুনি, এতেক কাহিনী 
গুরুচাঁদ বলে হাসি

চল চল শশী, কেন রব বসি 
সাহেবে লইয়া আসি
।।
কোথা যজ্ঞেশ্বর, এসহে সত্ত্বর 
দেরী নাহি কর আর

সাহেব অতিথি, ইংরাজের জাতি 
বহুৎ সন্মান তাঁর
।।
এস এস সবে, ভব্য -সভ্য - ভাবে 
নারীগণ দূরে রবে

সাহেব আসিলে, অতি কুতূহলে 
উলুধ্বনি দিবে সবে
।।
শশী বাপধন! বল ত এখন 
কোন আচরণ করি ?
কোন ভাবে তারে, আনিবে উপরে 
কি ভাবে সন্তোষ করি ?
বিনয়ে শশী, বলে মৃদু হাসি 
শুন পিতা নিবেদন

আচরণ শিক্ষা, তোমার অপেক্ষা
নাহি জানে কোনজন
।।
যাহা মনে হয়, করুন তাহায় 
দোষ নাহি হবে তা 'তে!
তোমাকে দেখিলে, মোর মনে বলে 
সাহেব ধরিবে হাতে
।।
ইংরাজের জাতি, করে এই রীতি
করে ধরি কর ঝাঁকে

যার জাতি তার, জাতিয় - আচার 
বজায় রাখিয়া থাকে
।।
এদেশে আসিয়া, নিয়েছে শিখিয়া 
এদেশের যত রীতি

দরশন হলে, নমস্কার বলে 
নমস্কারে পায় প্রীতি “
।।
প্রভু কহে হাসি, বেশ বেশ শশী 
আমিও ধরিব হাত

এই হাত দিয়া, মীডেরে ধরিয়া 
ধরিব ইংরেজ - জা'
।।
চলে দ্রুত গতি, ভবানীর পতি 
অতিথি আনিবে ঘরে

অনুচর যত, সবে চলে দ্রুত 
পদাঙ্ক - সরণি ধরে
।।
সোণার বরণ,অঙ্গের কিরণ 
অরুণ - কিরণ পরে

দুই জ্যোতিঃ মিশি, হায়!দশ দিশি 
রূপেতে উজল করে
।।
দেখে সব লোক, যেনরে আলোক 
নররূপ ধারী হয়ে

চলিছে ছুটিয়া, কিসের লাগিয়া 
আলোকের পথ বেয়ে
।।
হেথা এই দিকে, তরণীর বুকে 
মীড দাঁড়াইয়া রয়

ধবল-বরণ, সুঠাম গঠন 
শ্বেত - পুত্তলিকা প্রায়
।।

 

অপলক আঁখি, যেন থাকি থাকি 
কাহারে খুজিয়া ফেরে

চাতকিনী প্রায়, দূরে চেয়ে রয় 
কাহারে আশায় করে
।।
এহেন সময়, হইল উদয় 
গৌরাঙ্গ - বরণ প্রভু

মীড ভাবে মনে, আমার জীবনে 
এরূপ দেখিনি কভু
।।
ক্ষণিকের তরে, বিস্মৃতির ঘরে 
সাহেব চেতনা - হারা

প্রভু হাত তুলে, নমস্কার বলে ----
সাহেবে মিলিল সাড়া
।।
প্রতি নমস্কার, করি বারে বার 
নামিল তরণী ছাড়ি

পরম আনন্দে, প্রভু -কর বন্দে 
কর - পদ্ম করে ধরি
।।
অপূর্ব্ব শোভন, হইল তখন 
সাধ্য নাহি বর্ণিবারে

চন্দ্র - সূর্য মিলি, হল এক - স্থলী
ভুবন উজ্জল করে
।।
রক্ত কমল, শ্বেত শতদল 
দোহে মিলি এক সাথে

সৌর কর রাশি, করে মিশামিশি 
প্রভাতে মলয় বাতে
।।
গিরি -সূতা যেন, হইল মিলন
হরের ধবল অঙ্গে

সৌর কর রাশি, মৃদু মৃদু হাসি 
মিশিল ঊষার সঙ্গে
।। 
সোণার বরণ, শ্রী গুরু চরণ 
ধবল মীডের কান্তি

তেজঃ যেন আসি, স্বরূপ প্রকাশি 
ধরিয়া লইল শান্তি
।।
সেরূপ দেখিয়া, আপনা ভুলিয়া 
সবে বলে ' হরিবোল!
রামাগণে দেখি, পালটে না আঁখি 
তুলিল মঙ্গল - রোল
।।
মীডের বদনে, শ্রী গুরু কিরণে 
ফুটিল মধুর আভা

চলে দুই জনে, প্রভু-গৃহ-পানে 
অপরূপ সেই শোভা
।।
গৃহ মধ্যে যায়, দুই মহাত্মায় 
প্রভুজী হাকিয়া বলে

আনহে আসন, মীডের কারণ
পাতি দাও ভূমিতলে
।।
নিজ করে ধরি, আসনোপরি 
মীডেরে বসাল' প্রভু

মীড ভাবে মন, হেন আচরণ 
দেখি নাই আমি কভু
।।
মীড কহে বার্ত্তা, 'শুন বড় কর্ত্তা 
আপনি বসিলে কই ?
আপনি দাঁড়ালে, আমি কোন বলে 
আসনে বসিয়া রই?
আসন গ্রহণ, করুন এখন 
পরে বলি সব কথা”

মীডের বচনে, বসিলা আসনে 
গুরুচাঁদ জ্ঞান - দাতা
।।
প্রভুরে চাহিয়া, মধুর হাসিয়া 
মহামতি মীড বলে

বুঝিলাম ভাবে, কাজে কি স্বভাবে 
তুমি রাজা নমঃকুলে
।।
নমঃশূদ্র যত, দুঃখ অবিরত 
বহিছে বুকের মাঝে

শশী বাবু কাছে, মোর শোনা আছে 
বড়ই বেদনা বাজে
।।

 

মোর সব কথা, যে - সব বারতা 
বলেছি তাঁদের ঠাঁই

দুঃখী সুখী হোক, মহাসুখে রো'ক্
সেই টুকু আমি চাই
।।
মোদের বিশ্বাস, জীবেরে আশ্বাস
প্রভুজী যীশুর দান

তাঁর ধর্ম্ম নিলে, বাঁচিবে সকলে 
স্বর্গে পাইবে স্থান
।।
এই বার্ত্তা দিতে, বিভিন্ন দেশেতে 
আমাদের আগমন

যেই মানে যীশু, হোক না সে পশু
সে মোর আপন জন
।।
প্রথমে খৃষ্টান, পরে দুঃখী জন 
আমরা আপন বলি

যেখানে খৃষ্টান, সেথা অধিষ্ঠান
সেই পথে মোরা চলি
।।
আপনার দেশে, যদি মোরা এসে
খৃষ্টান করিতে পারি

করিব দমন, যত দুষ্ট জন
মোরা বা কাহারে ডরি ?
সেই সম্ভাবনা,আছে কি আছে না 
তাহা বুঝিবারে চাই

পেলে সদুত্তর, মোরা অতঃপর
আসিব তোমার ঠাঁই
।।
জানি অভিপ্রায়, প্রভু চক্রময়
অন্তরে উঠিল হাসি

সুচতুর মীড, করিয়াছে ঠিক
আমারে এ - দেশ বাসী
।।
তাই চক্রাজালে, ভাবে মোরে ফেলে 
সাধিবে আপন কাজ

আহা কিবা ভুল, না বুঝিয়া মূল 
হেন চিন্তা করে আজ
।।
বেশ! বেশ! বেশ! দেখি এর শেষ 
কত দূর গিয়া থামে

শ্রী হরি চরণ, আমার শরণ
ভাসিলাম তাঁর নামে
।।
চক্রধর - চক্রী,কেবা করে বক্রী 
আপনি না হলে বক্র

যার নামে হায়! বাঘে নাহি খায় 
হিংসা ভুলে যায় নক্র
।।
প্রকাশ্যে হাসিয়া, মীডেরে চাহিয়া 
প্রভু বলে মধু - বাণী

শুন মহাশয়, তব অভিপ্রায় 
যত কহ সব মানী
।। 
তবু মনে জাগে, কার্য-পূর্ব্ব-ভাগে 
পরিণাম-জানা ভাল

বলিবারে তাই,সব আমি চাই 
দেখিতে চাই যে আলো
।।
মনে যাহা বলে, সে সব সকলে 
আমি বলি তব কাছে

এখনে বলিলে, ভুল যাবে চলে
দুঃখ নাহি হবে পাছে
।।
বিদ্যা, বুদ্ধি জ্ঞানে, এ তিন ভুবনে 
খৃষ্ট ধর্ম্ম অগ্রগণ্য

খৃষ্টান সমাজে, বলে বীর্যে তেজে 
ইংরাজ সবার মান্য
।।
যে - ধর্ম্ম যাজন, করে হেন-জন 
সেই ধর্ম্ম-তত্ত্ব মূল
 
অজ্ঞানে বুঝিবে, যাজন করিবে 
ইহা বুঝা বড় ভুল
।।
প্রমাণ তাহার, এ বঙ্গ মাঝার 
দেখিয়াছি কত বার

কি করি উল্লেখ, কত হিন্দু দেখ 
যীশু ভজে অনিবার
।।


 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free