মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

অন্তখণ্ডঃ চতুর্থ তরঙ্গ

অন্তখণ্ড
চতুর্থ তরঙ্গ
বন্দনা

জয় জয় হরিচাঁদ জয় কৃষ্ণদাস।
জয় শ্রী বৈষ্ণব দাস জয় গৌরী দাস।।
জয় শ্রী স্বরূপ দাস পঞ্চ সহোদর।
পতিত পাবন হেতু হৈলা অবতার।।
জয় জয় গুরুচাঁদ জয় হীরামন।
জয় শ্রী গোলোকচন্দ্র জয় শ্রী লোচন।।
জয় জয় দশরথ জয় মৃত্যুঞ্জয়।
জয় জয় মহানন্দ প্রেমানন্দময়।।
(জয় শ্রীসুধন্যচাঁদ সভ্যভামাত্মজ।
প্রেমানন্দে হরি গুরু শ্রীপতিচাঁদ ভজ।।)
জয় নাটু জয় ব্রজ জয় বিশ্বনাথ।
নিজ দাস করি মোরে কর আত্মসাৎ।।
 
শ্রীরামভরত মিশ্রের উপাখ্যান
দীর্ঘ-ত্রিপদী
বসতি অযোধ্যাধাম        শ্রীরামভরত নাম
বিপ্র কুলোদ্ভব মহাশয়।
বৈষ্ণবের শিরোমণি       মহাসাধু তপমণি
সর্বজীবে সম দয়া রয়।।
তীর্থ ভ্রমণ কারণে         গিয়াছিল বৃন্দাবনে
হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ রব মুখে।
জয় রাধা রাণী জয়        বলিত সবসময়
জয় হরি বলে ফিকে ফিকে।।
সাধুহাটি গ্রামে ঘর         শ্রীরসিক সরকার
তিনিও ছিলেন বৃন্দাবনে।
শ্যামকুণ্ডের নিকটে        শ্রীরাধা কুণ্ডের তটে
দেখাদেখি হয় দুইজনে।।
দুই সাধু মেশামেশি       প্রেমরসে ভাসাভাসি
হরি কথা প্রেমের আলাপে।
কহিছে রসিকচন্দ্র          মনেতে পরমানন্দ
সাধু রামভরত সমীপে।।
কহ তব কোথা ধাম       কিবা জাতি কিবা নাম
রসিকের শুনিয়া ভারতী।
বলে রামভরত নাম       উপাসনা রাম নাম
অযোধ্যায় আমার বসতি।।
রামভরত জিজ্ঞাসে        তব ঘর কোন দেশে
রসিক দিলেন পরিচয়।
বঙ্গদেশে মম ধাম        সাধুহাটি নামে গ্রাম
রসিক আমার নাম হয়।।
জনম কায়স্থ কুলে        বের হই কৃষ্ণ বলে
যদি প্রভু করিতেন দয়া।
করি তীর্থ পর্যটন                    অযোধ্যাদি বৃন্দাবন
ঘুচাইতে সংসারের মায়া।।
সাধু একথা শুনিয়া         দুই বাহু প্রসারিয়া
জড়িয়া ধরিল রসিকেরে।
আমিও যেমন দুঃখী      তোমাকে তেমন দেখি
বলিব কি যে দুঃখ অন্তরে।।
বাসনা হইতে বৈরাগী      হয়েছি সংসার ত্যাগী
রামনাম করিয়া স্মরণ।
তবু মায়া ফাঁসীগুণে        সংসার বন্ধনে টানে
ঘুচাইতে পারিনা কখন।।
রসিক কহে তখন          কিছা করেছি ভ্রমণ
কাশী কাঞ্চি অবন্তী মথুরা।
ভ্রমি অযোধ্যা ভুবন       আইলাম বৃন্দাবন
ভ্রম মাত্র এ ভ্রমণ করা।।
ভ্রমণেতে কার্য নাই       এবে নিজ দেশে যাই
মনের মানুষ যেই দেশে।
করিয়া তীর্থ ভ্রমণ         করি দিক দরশন
রাজক্রিয়া মনের হাউসে।।
শুনামাত্র এই কথা         মনের মানুষ কোথা
রামভরত কহে কাঁদি কাঁদি।
রসিক কহিছে তায়        মম মন যে ভোলায়
সে মানুষ আছে ওঢ়াকাঁদি।।
মম প্রাণ তার ঠাই         তবু যে ঘুরে বেড়াই
সে কেবল মনের বিকার।
শুন হে রামভরত                    গুরু করি শত শত
সে গুরু যে নাশে অন্ধকার।।
যেখানে সেখানে যাই      স্থান মাত্র দেখি ভাই
দেখে শুনে জন্মিয়াছে হুঁশ।
শ্রীক্ষেত্র নৈমিষবন         নবদ্বীপ বৃন্দাবন
নরলীলা সকলি মানুষ।।
এক মানুষের খেলা        সকল মানুষ লীলা
আছে যারা তারাও মানুষ।
কত স্থানে কত মূর্তি      মানুষ গঠিত মূর্তি
রক্ষাকারী তারাও মানুষ।।
আমি যে মানুষ বরে       জন্মিলাম ধরাপরে
সেই মোর মনের মানুষ।
মনের কথা যে জানে     সে মানুষ সন্নিধানে
যাই ভাই দেখিগে মানুষ।।
সাধু কহে রসিকেরে       সে মানুষ দেখিবারে
আমি কি যাইতে পারি সাথে।
রসিক কহিছে তারে       সে মানুষ দেখিবারে
বিশ্বাস কি হইবে মনেতে।।
ভরত কহিছে ভাই         আর ছাড়াছাড়ি নাই
তুমি গুরু আমি যেন শিষ্য।
আমিত যাইতে নারি      লহ মোরে সঙ্গে করি
সে মানুষ দেখিব অবশ্য।।
আসিয়া রসিক সঙ্গে      উপনীত হ’ল বঙ্গে
তারাইল কাছারীতে রয়।
তথা লইয়া চাকরী         সদা বলে হরি হরি
সাধুহাটি মাঝে মাঝে যায়।।
থেকে রসিকের সঙ্গে      কৃষ্ণ কথা রসরঙ্গে
এক একবার উঠে কাঁদি।
কেঁদে কহে রসিকেরে     দেখা’বে বলিলে মোরে
কবে ল’য়ে যা’বে ওঢ়াকাঁদি।।
রসিক কহিছে তারে       আমি যা ভাবি অন্তরে
ভাবিলে ঠাকুর দেখা পাই।
আমি যাব পিছুভাগে      তুমি যাও কিছু আগে
ঠাকুর চিনিয়া লহ ভাই।।
ওঢ়াকাঁদি যাইবারে        রামভরত যাত্রা করে
অন্তরেতে কাঙ্গালের ভাব।
বাহিরে দেখায় বেশ       নাহি যেন ভক্তি লেশ
রাজসিক বীরত্ব স্বভাব।।
মহিষ চর্ম পাদুকা         মোজা তোলা পদ ঢাকা
পরিধান রেশমের ধুতি।
গরদ চাদর গায়           নামাবলীটে মাথায়
হাতে ধরা কাপড়ের ছাতি।।
বড় এক ষষ্ঠী হাতে        চৌগোপ আছে মুখেতে
মুখে হরিবোল বলি ধায়।
কতক পথ আসিয়ে        ক্ষণেক কাল বসিয়ে
নয়নের জলে ভেসে যায়।।
রামভরত যাত্রা পথে      ওঢ়াকাঁদি শ্রীধামেতে
সব ভক্তে কহে হরিচাঁদ।
তোরা সব থাক হুঁশ        আসিয়াছে এক মানুষ
পূর্ণ হবে তার মনোসাধ।।
বলিতে বলিতে এসে      রামভরত প্রবেশে
ওঢ়াকাঁদি প্রভুর বাটীতে।
উপস্থিত হ’য়ে একা       পাইয়া প্রভুর দেখা
করজোড়ে দাঁ’ড়াল সাক্ষাতে।।
অনিমিষ বারি চক্ষে       প্রভুর শ্রীঅঙ্গ দেখে
ছাতি লাঠি ছাড়িয়া দিলেন।
ঠাকুর বলেন বাঁচি         তোমা আমি চিনিয়াছি
ভূমে লোটাইয়া পড়িলেন।।
ঠাকুর বলেন তায়         তোমার ঘর কোথায়
কোথা হ’তে এলে মহাশয়।
কহিছে রামভরত          জান প্রভু ত্রিজগত
দুঃখী দেখে চেন না আমায়।।
প্রভু হরিচাঁদ কয়                    থাক থাক মহাশয়
যতদিন লয় তব মন।
যাহা ইচ্ছা তাই খাও      যাহা ইচ্ছা তাই লও
কর সদা শ্রীহরি সাধন।।
থেকে ওঢ়াকাঁদি ধাম      সদা করে হরিনাম
দুই তিন দিন পরে যায়।
কভু যায় রোজে রোজে   ময়দা চাপড়ী ভাজে
ভোগ দিয়া সন্ধ্যারতি গায়।।
ঠাকুরের আজ্ঞাধীন        রহিলেন কিছুদিন
একদিন ঠাকুরকে কয়।
এবে আমি আসি গিয়া    কিছুদিন বেড়াইয়া
আসিয়া মিলিব তব পায়।।
গিয়া তারাইল গ্রামে       থাকি কাছারী মোকামে
পেয়াদা হইব বলি রয়।
করেন পেয়াদাগিরি        দিবানিশি বলে হরি
গোমস্তা ভাবেন একি দায়।।
না করেন রাজ কাজ      থাকিয়া কাছারী মাঝ
দিবানিশি হরিগুণ গায়।
ইনি হ’ন হরিভক্ত         ইহাকে করিতে ত্যক্ত
আমার যে উচিৎ না হয়।।
আমরা করিলে ত্যক্ত      রাজজী হবে বিরক্ত
আমাদের মহাপাপ তায়।
নায়েব কহে তখন         তুমি প্রেম মহাজন
কাছারীতে থাকা যোগ্য নয়।।
তব কার্য সুমাধুর্য          মোরা করি রাজকার্য
কি জন্য বিষয় মধ্যে রও
জেনে যে মানুষতত্ত্ব       হইয়াছ যে উন্মত্ত
নয় সে মানুষ ঠাই যাও।।
আমরা বড় পাষণ্ড         কভু কারু করি দণ্ড
তাহা দেখি তুমি দুঃখী হও।
কর গিয়া সাধুসঙ্গ         প্রেমকথা রসরঙ্গ
যেখানে যাইয়া তুমি পাও।।
শুনিয়া এতেক বাণী       সাধু উঠিল অমনি
ধীরে ধীরে করিল গমন।
যাত্রা করে হরি বলে       এমন সময়কালে
আসিতেছে একটি ব্রাহ্মণ।।
পদেতে নাহি পাদুকা      তাহার পাইয়া দেখা
পাদুকা ধরিয়া দিল তায়।
করে প্রেম কোলাকুলি     মস্তকের নামাবলী
বেঁধে দিল তাহার মাথায়।।
গায় গরদ চাদর           বলে কার্য নাহি মোর
এত বলি দিল তার গায়।
ফেলিয়া হাতের লাঠি      বামহাতে এক ঘটি
তাই ল’য়ে পূর্বদিকে ধায়।।
রূপদাস বৈরাগীরে         দেখা পাইয়া তাহারে
হাতে হাতে ধরিয়া চলিল।
আসি তার আখড়ায়       ঘটি ধরি দিল তায়
হাতের ছাতিটা তাকে দিল।।
বলে তার পায় পড়ি       আমার মস্তক মুড়ি
দেও ভেক হইব বৈরাগী।
ষষ্টি রৌপ্য মুদ্রা ছিল      তাহারে ধরিয়া দিল
বলে মোরে কর অর্থত্যাগী।।
তার অর্ধ মুদ্রা এনে        বিলাইল দুঃখী জনে
দুই এক করি দরিদ্রকে।
অগ্রেতে মস্তক মুড়ি       ফেলিল চৌগোপদাঁড়ি
ডাকিয়া এনে পরামানিকে।।
তসরের ধুতি ছেড়ে        ছেড়ে এক কানি ফেড়ে
ডোরক কপিন বানাইল।
পরিয়া ডোর কপিন        বলে আমি অতি দীন
হরি বলে নাচিতে লাগিল।।
এমন কাঙ্গালবেশে       পুনঃ ওঢ়াকাঁদি এসে
লোটাইল ঠাকুরের পায়
ঠাকুর বলিল শেষ         কোথা তোর সেই বেশ
এই বেশে কে তোরে সাজায়।।
রমভরত বলে বাণী        যত সাজ কি সাজনী
সাজিতে কাহার সাধ্য হয়।
যত সংসারের সাজ       সকল তোমার কাজ
তোমা বিনা কে কারে সাজায়।।
নাচিয়াছ যেবা নাচ        সাজিয়াছ যেবা কাচ
নাচ কাচ সব তুমি হও।
তুমি সূত্রধর হরি           একমাত্র সূত্র ধরি
নাচ কাচ নাচাও কাচাও।।
ঠাকুর তাহারে কয়        এইভাব যার হয়
তার হয় এইসব সাজ।
হরিচাঁদ লীলাকথা         ভকত চরিত্র তথা
কহে দীন কবি রসরাজ।।
 
রামভরতের ওঢ়াকাঁদি স্থিতি
দীর্ঘ-ত্রিপদী
ঠাকুর বলেন বাছা         সাজ সাজিয়াছ সাচা
এখন কি ইচ্ছা তোর মনে।
কহিছে রামভরত          আর নাহি কোন পথ
বিকাইনু তব শ্রীচরণে।।
আর কাহা নাহি যাব       আন কথা নাহি কব
আর নাহি অন্য অভিলাষ।
স্থান দিয়া শ্রীচরণে        রাখ প্রভু নিজ গুণে
চরণে করিয়া নিজ দাস।।
অমনি ঠাকুর বলে         তোরে করিলাম কোলে
যথা ইচ্ছা তথা কর কাজ।
এই ওঢ়াকাঁদি বাড়ী        এ বাড়ী তোমার বাড়ী
বাড়ী মধ্যে তুমি মহারাজ।।
ইচ্ছামত খাও পর         যাহা ইচ্ছা তাহা কর
হরিনাম কর নিরন্তর।
রাত্রিতে নিদ্রা যেওনা      ঘরে যেন চোর আসে না
নিদ্রা ত্যাগ কর এইবার।।
রহিল রামভরত            তাহার যা অভিমত
সেই মত কাজ করে তথা।
দিবানিশি হরিনাম         তাহাতে নাহি বিরাম
কভু মুখে নাহি আন কথা।।
প্রেম গদ গদ চিত্ত         সদাই নামেতে মত্ত
অশ্রুপূর্ণ নেত্র সর্বক্ষণ।
নামে প্রেমে হ’য়ে ভোর   দেখি কোকিল ভ্রমর
কৃষ্ণরূপ হয় উদ্দীপন।।
কখন বা অনাহার          কখন করে আহার
চারি পাঁচ দিন পরে খায়।
শাল্য আমন্য তণ্ডুল       মুগ ছোলার ডাউল
ঘৃত পক্ক খিচড়ি পাকায়।।
এ ভাবে করেন বাস       হরিনামে মনোল্লাস
পুকুরের ঘাটেতে যেতেছে।
দেখিল বাম দিকেতে      পশ্চিম ঘর কোণেতে
শান্ত বসি মৎস্য বানাইছে।।
তাহা দেখি জ্ঞান শূন্য     ক্রোধে হ’য়ে পরিপূর্ণ
বলে ওরে ডঙ্কিনী নারী।
কত পাপে পতি হারা      জীবন থাকিতে মরা
পিশাচিনী মৎস্য মাংসাহারী।।
ধাইয়া যাইয়া কয়         তোরে আজ দিব ক্ষয়
নহে তোরে তাড়াইয়া দিব।
করি মধুমতী পার         তোহারে দিব এবার
এ দেশে না তোহারে রাখিব।।
প্রভু হরিচাঁদ ডেকে        জিজ্ঞাসিল ভরতকে
কি হ’য়েছে মোর ঠাই বল।
রামভরত কহিছে          কেন ডঙ্কিনী রহিছে
এ বাড়ীতে প্রমাদ ঘটাল।।
মহাপ্রভু বলে তারে        মাফ কর অবলারে
জ্ঞানহীনা এরা যে অবলা।
এ মৎস্য দেশের চল      মাংসাদি খায় সকল
আগে ওরে না হ’য়েছে বলা।।
ক্ষমা  কর অপরাধ        আমাকে কর প্রসাদ
হেন কর্ম আর না করিবে।
ঘটাইল যে বিপাক         থাকে থাক যায় যাক
থাকে যদি গোপন থাকিবে।।
ভরত কহিছে কথা         ডঙ্কিনী লুকা’ল কোথা
প্রভু কহে পালিয়ে গিয়াছে।
থাকে যদি এ বাড়ীতে     রহিবেক গোপনেতে
আর না আসিবে তব কাছে।।
ভরত কহে প্রভুরে         আসিলে না রেখ ওরে
অসতে আসিতে দেহ পথ।
আর বা কহিব কারে       স্থান দেহ অসতেরে
মহাপ্রভু তুমিও অসৎ।।
যথা ভরত রহিত                    শান্ত নাহি তথা যেত
ঠাকুর কহিত সে শান্তরে।
যেও না ভরত ঠাই        গেলে আর রক্ষা নাই
গেলে বাছা বাঁচাবেনা তোরে।।
দেশোয়ালী রাজপুত       না মানে যমের দূত
দেব দৈত্য যম নাহি মানে।
ওরা মানে সূক্ষ্ম ধর্ম       আর মানে গুরু ব্রহ্ম
আমি ওরে ভয় করি মনে।।
বীর রসে ভক্ত ওরা        সদা প্রেমে মাতোয়ারা
ভক্তি গুণে ল’য়েছে বাঁধিয়ে।
বীর রসে ভক্তি ডোরে     বেঁধে নিয়াছে আমারে
আমি আছি ওর বাধ্য হ’য়ে।।
ভরত হইল শান্ত           এই ভাবে থাকে শান্ত
পলাইয়া দেখা নাহি দিল।
ভরতের মহাক্রোধ         ঠাকুর দিল প্রবোধ
কবি রসরাজ বিরচিল।।
 
*ভক্ত রামধনের দর্পচূর্ণ
পয়ার
একদিন রামধন বাহির প্রাঙ্গণে।
ধান্য রাশি ভাঙ্গি গরু জুড়িল মলনে।।
চারিটি বলদ এনে আগে তাহা ছাঁদে।
আর এক বকনা গাভী তার সঙ্গে বাঁধে।।
পাঁচটি গরুতে ধান্য করিছে মর্দন।
এইভাবে গরু ঘুরাইছে রামধন।।
রাজ-জী যাইতে ঘাটে দেখিলেন তাই।
ক্রোধে পরিপূর্ণ হ’ল রাজ-জী গোঁসাই।।
বলে ওরে ধনা কানা করিলি কি কর্ম।
বড় অধার্মিক তুই নাই কোন ধর্ম।।
এই বাড়ী থাকিস শ্রীধাম বৃন্দাবনে।
সুরভী মাতাকে কেন জুড়িলি মলনে।।
পূর্ব জন্মে মহা মহাপাপ আচরিলি।
এবার সে পাপ জন্য অন্ধ হ’য়ে রলি।।
নয়ন বিহীন তুই এখানে আইলি।
ঠাকুরের কৃপা দৃষ্টে দৃষ্টিশক্তি পেলি।।
দৃষ্টি কম চক্ষু তোর প্রস্ফুটিত নয়।
কম দৃষ্টি তবু তোর কর্ম চলে যায়।।
তোর এই অত্যাচার করা কি উচিৎ।
নয়ন বিহীন তোর কর্ম বিপরীত।।
ছেড়ে দে সুরভী মাকে ওরে বেটা আঁধা।
মহাপাপ হইয়াছে সুরভীকে বাঁধা।।
এত বলি যায় সুরভীকে ছেড়ে দিতে।
রামধন বলে বল কি দোষ ইহাতে।।
এত শুনি সাধু হ’ল ক্রোধে পরিপূর্ণ।
ঠেঙ্গা নিল রামধনে মারিবার জন্য।।
রামধন মলন ছাড়িয়া পলাইল।
মলনের বক্না সাধু ছাড়াইয়া দিল।
কোথা গেল আঁধা পাপী মারিব উহারে
মোর হাত এড়ায়ে পালাবে কোথাকারে।।
আজ তোরে বিনাশিব ওরে দুরাশয়।
অদ্য পলাইলি কল্য যাইবি কোথায়।।
তর্জন গর্জন করি করেন চীৎকার।
ক্রোধে রক্তবর্ণ চক্ষু বহে অশ্রুধার।।
ঘোর শব্দ শুনি মহাপ্রভু তথা এল।
স্তুতি বাক্যে রাজ-জীকে তখনে শান্তাল।।
এই কার্য করে বেটা বড় দুষ্ট খল।
সুরভী মলনে ছাঁদে আরো করে ছল।।
আমি আছি গৃহমাঝে পূরীর ভিতরে।
দেখি নাই হেন কর্ম যে সময় করে।।
দুষ্কার্য করেছে আরো তোমা ক্রোধ করে।
যেমন মানুষ শাস্তি না হলে কি সারে।।
রাজ-জী বলেন এই পাপীষ্ঠ অসৎ।
হেন দুষ্টে স্থান দাও তুমিও অসৎ।।
প্রভু বলে সত্য সত্য আছে মোর পাপ।
আমি করিয়াছি পাপ মোরে কর মাপ।।
রাজ-জী বলেন বটে মাপ যদি চাও।
আঁধা আর ডঙ্কিনীকে তাড়াইয়া দেও।।
প্রভু বলে তাড়াইব চ’লে যাবে ওরা।
পতিত পাবন নাম বৃথা হ’ল ধরা।।
ঠাকুর ডাকেন আয় আয় রামধন।
ধর এসে রাজ-জীর যুগল চরণ।।
রামধন আসিলেন ঠাকুর নিকট।
ভরত বলেন প্রভু না করিও হট।।
তোমারে সকলে মানে না জানে তা কেটা।
পাপ ভয় নাহি করে এই আঁধা বেটা।।
দেবে মানে দৈত্য মানে গন্ধর্বেরা মানে।
ইন্দ্র চন্দ্র নত হয় তব শ্রীচরণে।।
তোমার চরণ সেবি থাকি তব দ্বারে।
তাহাতে আমাদিগকে যমে ভয় করে।।
ঠাকুর বলেন মোর এই বড় ভয়।
পতিত পাবন নামে কলঙ্ক রটায়।।
রাজ-জী বলেন হে দয়াল অবতার।
আন দেখি সে আঁধারে করিব উদ্ধার।।
ঠাকুরের আদেশে আসিল রামধন।
প্রভু কহে রাজ-জীর ধরগে চরণ।।
রামধন যাইতেছে পদ ধরিবারে।
রাজ-জী বলেন বেটা ছুসনে আমারে।।
সুরভীর সঙ্গেতে থাকিবি ছয় মাস।
এক মাস সুরভীর সঙ্গে খাবি ঘাস।।
ছয়মাস সুরভীর গোময় খাইবি।
রাত্রি ভরি সুধামাখা হরিনাম লবি।।
ঠাকুর বলেন গেল কঠিন হইয়া।
দয়া করি দণ্ড কিছু দেহ কমাইয়া।।
রাজ-জী বলেন তবে হোক আধাআধি।
এক বেলা গোময় সকালে খাওয়া বিধি।।
এইভাবে মেয়াদে রহিল রামধন।
বকনা গাভীর সঙ্গে করিত শয়ন।।
গোষ্ঠে গিয়া বকনার সঙ্গে খেত ঘাস।
তোলাক গোময় প্রাতেঃ খায় তিনমাস।
রামধন রাজ-জীর মেয়াদ পালিল।
হরিচাঁদ পদ ভাবি তারক রচিল।

শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free