মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

পৃষ্ঠাঃ ২৬১-২৮০

তোমরা চলেছ সঙ্গে যার যার আশা
জাতীয় জীবনে জাগে উন্নতির ঊষা
।।
আধার কাটিয়া আলো করে ঝলমল

কে কে তোরা যাবি সঙ্গে চল চল চল
।।
প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিল জনে জনে

সকলে আসিয়া বলে প্রভুর চরণে
।।
এ জাতির ভার কর্তা তোমার উপর

নিজগুণে কর তুমি যে ইচ্ছা তোমার
।।
আমরা অবোধ শিশু বল শক্তি নাই

দয়া করে যাহা দাও তাই মোরা পাই
।।
যারে যারে সঙ্গে নিতে তব অভিপ্রায়

শ্রীমুখের আজ্ঞা পেলে যাইবে নিশ্চয়
।।
এতেক কহিল যদি যতেক প্রধান

চারি জনে সাথে নিয়া চলে ভগবান
।।
শ্রীবিধু চৌধুরী আর ভীষ্মদেব দাস

পূর্ণ মল্লিক আর যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস
।।
মীড গেল সাথে সাথে সারথি সাজিয়া

পত্রিকাতে সব কথা নিলেন লিখিয়া
।।
ঊনিশ শ বার অব্দে জুন মাস জানি

লাট সম্ভাষণে চলে প্রভু গুণমণি
।।
যথাকালে উপনীত হইল জেলায়

অগ্রভাগে ম্যাজিষ্ট্রেট সম্মান জানায়
।।
জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট হন বড়ই কর্ম্মিষ্ট

তাঁহার শাসনে লোক ছিল শান্ত শিষ্ট
।।
মীড করে পরিচয় গুরুচাঁদ সনে

সাহেব বলিল কথা মধুর বচনে
।।
প্রভুর যতেক কীর্ত্তি কহিল প্রভুর

মনঃকুলে তুমি শ্রেষ্ঠ শুনহে ঠাকুর
।।
লাটের নিকটে আমি করেছি জ্ঞাপন

তিনি মহাসুখী জানি সব বিবরণ
।।
মিষ্টার ন্যাথান ছিল কমিশনার

লাটেরে বলেছে তিনি সব সমাচার
।।
বড়ই সন্তুষ্ট আমি তব আগমনে

চল এবে যাই সবে লাটের সদনে
।।
এতবলি দলবলে লাটর সদনে

চলিলেন গুরুচাঁদ জাতির কারণে
।।
যবে দেখা হল লাট একদৃষ্টে চায়

দেখিয়া অবাক হল ভাবে বোঝা যায়
।।
ম্যাজিষ্ট্রেট পরিচয় করাইল তাঁরে

হাত ধরি লাট তাঁরে অভ্যর্থনা করে
।।
ম্যাজিষ্ট্রেট জানাইল সব বিবরণ

নমঃশূদ্র করে নাই কোন আন্দোলন
।।
অতঃপর মীড কহে মুখপাত্র রূপে

নমঃশূদ্র কোন পড়ি ছিল অন্ধকূপে
।।
ধীরে ধীরে পরিস্কারে মীড কথা বলে

একমনে শোনে লাট অতি কুতুহলে
।।
বলা শেষ হলে লাট বলিল তখন

বড়ই সন্তুষ্ট আমি শুন মহাজন
।।
রাজভক্ত নমঃশূদ্র বুঝিলাম সার

রাজশক্তি নমঃশূদ্রে করিবে উদ্ধার
।।
আর সুখী শুনি আমি ঠাকুরের কথা

ইহাকে করিনু আমি নমঃশূদ্র নেতা
।।
নমঃশূদ্র-কুলপতি হইলেন ইনি

অদ্য হতে রাজা তাঁরে লইলেন চিনি
।।
নমঃশূদ্র কুলপতি লাটে আখ্যা দিল

হরিগুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল
।।

 

দরবার মেডেল প্রাপ্তি


তের শত ষোল সালে বারুণী সময়

বিধবা বিবাহ দিতে প্রভু আজ্ঞা দেয়
।।
তের শসতের সালে জিলা বরিশালে

মাঠিভাঙ্গা গ্রামে বাস মধুমতী কুলে
।।

 

 

দুই ভাই জ্যেষ্ঠ তার নাম ধনঞ্জয়
বিধবা বিবাহ করে প্রভুর আজ্ঞায়
।।
তস্য এক ভগ্নী ছিল স্বামীহীনা নারী

শ্রীনাথের সঙ্গে বিয়া হল বটে তারি
।।
-সময় স্বামী মহানন্দ বেঁচে নাই

তাঁর যত ভক্ত ছিল সব ছাড়ে হাই
।।
তের শআঠার সালে চন্ডালমোক্ষণ

করিলেন গুরুচাঁদ পতিত পাবন
।।
তের শঊনিশ সালে দীল্লী দরবার

এবে সবে শুন বলি সেই সমাচার
।।
বঙ্গ-ভঙ্গ আন্দোলন বাঙ্গালী করিল

আন্দোলন কালে বঙ্গ একত্র হইল
।।
সপ্তম এডওয়ার্ড রাজা জীবন ত্যজিল

শ্রীপঞ্চম জর্জ্জ তাহে সম্রাট সাজিল
।।
ভারত সম্রাট তিনি ইংল্যান্ডের রাজা

কোটী কোটী নরনারী সবে তাঁর প্রজা
।।
ভারত সম্রাট আখ্যা হইল তাঁহার

দিল্রী নগরীতে তাই হল দরবার
।।
বঙ্গভঙ্গ রদ বটে করিল সম্রাট

দিল্লী নগরীতে গেল রাজধানী পাট
।।
রাজভক্ত সম্মানিত যত প্রজা ছিল

দরবার মেডেল দিয়া সম্মান বাড়াল
।।
জেলায় জেলায় হল সেই দরবার

কি হল ফরিদপুরে শুন সমাচার
।।
যে সময়ে জ্যৈষ্ঠ মাসে ছোট লাট এল

জেলাবাসী প্রধানেরা উপস্থিত ছিল
।।
সংখ্যায় বায়ান্ন জন বসে মান্যবান

ছোট লাট আগমনে ছিল অধিষ্ঠান
।।
ম্যাজিষ্ট্রেট লিখিলেন লাটের নিকটে

মেডেল পাইতে এরা উপযুক্ত বটে
।।
নমঃশূদ্র সমাজেতে শুধু গুরুচান

সর্ব্বাগ্রে মেডেল খানি তিন মাত্র পান
।।
তের শঊনিশ সালে মার্গ শীর্ঘ মাসে

নিমন্ত্রণ চিঠি গেল ওড়াকান্দী বাসে
।।
স্বজাতি ডাকিয়া প্রভু সকলি বলিল

সকল শুনিয়া তারা আনন্দিত হল
।।
সকলে প্রভুকে যেতে করে নিবেদন

সাথী হল বিশ্বেশ্বর চৌধুরী সুজন
।।
তরাইল হতে দোঁহে গেল খুলনায়

তথা হতে পৌঁহিছিল সে কলিকাতায়
।।
ফরিদপুরেতে পরে হইল উদয়

কুমুদ মল্লিক বাবু আছিল তথায়
।।
ডেপুটী কার্য্যেতে তথা ছিল অধিষ্ঠান

ঠাকুরে সঙ্গেতে করি নিজ গৃহে যান
।।
বহু সুখে আলাপন করিলেন দোঁহে

হাসিয়া হাসিয়া প্রভু বহু কথা কহে
।।
ক্রমে ক্রমে জিলাবাসী সকলে জানিল

দরবার মেডেল নিতে নমঃশূদ্র এল
।।
উচ্চ বর্ণ হিন্দু তাতে কেহ সুখী নয়

কেহ কেহ ম্যাজিষ্ট্রেটে সে কথা জানায়
।।
শুনিয়া সাহেব কহে একি কথা কাও

মেডেল দিবার কর্তা তোমরা ত নও
।।
রাজার নিকটে প্রজা সকলি সমান

জাতি-কুল-নির্ব্বিশেষে সবে পাবে মান
।।
বড়ই দুঃখিত আমি শুনি এই কথা

তোমাদের পক্ষে ইহা শুধু বাচালতা
।।
এমত শুনিয়া বাণী ম্যাজিষ্ট্রেট কাছে

লজ্জা পেয়ে বর্ণ হিন্দু পলাইল পাছে
।।
ঘরে গিয়ে জনে জনে করে আলোচনা

এমত অন্যায় বিধি মোরা মানিবনা
।।
হেন কালে এক ব্যক্তি নামেতে সুরেন্দ্র

ওকালতী কার্য্য করে জাতি উচ্চ বর্ণ
।।
পুত্র সহ সেই ব্যক্তি এল তথাকারে

সকলি শুনিল কথা স্বজাতি গোচরে
।।

 

সকল শুনিয়া তিনি ধীরে ধীরে কয়
তোমাদের এই চিন্তা অতীব অন্যায়
।।
কার প্রতি হিংসা কর বুঝিতে না পার

সময় থাকিলে সবে আপনারে সার
।।
নমঃশূদ্র বলি যারে কর অবহেলা

আমার নিকটে শোন তাঁর এক খেলা
।।
তোমাদের মত পূর্ব্বে ভাবিতাম আমি

গর্ব নাশ করিয়াছে নিজে অন্তর্য্যামী
।।
সেই ঘটনার কথা শুন সবে বলি

গুরুচাঁদ ঠাকুর যে ধর্ম্ম-বলে বলী
।।
এই দেখ পুত্র মোর দাঁড়ায়ে সম্মুখে

আনন্দের দীপ্তি দেখ এর চোখে মুখে
।।
এই মাত্র গুরুচাঁদে দেখিলাম মোরা

সেই আনন্দের ঢেউ ওর দেহে ভরা
।।
কি কারণে ইহা হয় শুন বলি তাই

গুরুচাঁদ নিকটেতে বৃথা যাই নাই
।।
বহু দিন রোগে ভোগে আমার তনয়

ডাক্তার বৈদ্যের বাড়ী যাই সর্ব্বদায়
।।
ভারে ভারে ঔষধাদি সেবন করাই

রোগ নাহি সারে তাতে ফল নাহি পাই
।।
বড়ই দুশ্চিন্তা হল মনে নাই শান্তি

দিনে দিনে ক্ষীণ পুত্র ম্লান হল ক্লান্তি
।।
হেন কালে একদিন নিশীথ সময়

অপরূর স্বপ্ন দেখে আমার তনয়
।।
রজনী প্রভাতে মোরে কাছে ডাকি লয়

স্বপ্নের বৃত্তান্ত সব মোর ঠাঁই কয়
।।
বলে পিতা শোন কথা স্বপ্ন বিবরণ

নিশাকালে মোর কাছে এল একজন
।।
মধুর মূরতি তাঁর গৌরাঙ্গ বরণ

আজানুলম্বিত ভূজ আয়ত লোচন
।।
হাসি হাসি মোরে বলে ওরে বাছাধন

রোগে ভোগে এত কষ্ট পাও কি কারণ?
আমি যাহা বলি তাহা কর একমনে

অবশ্য রোগেতে মুক্তি পাবে একদিনে
।।
পান্তাভাত প্রাতঃকালে উদর পূরিয়া

ইলিশ মাছের সঙ্গে খাবে মাখাইয়া
।।
এত বলি সর্ব্বাঙ্গে হাত বুলাইয়া দেয়

মনে হয় মোর দেহে রোগ বুঝি নাই
।।
আনহে ইলিশ বাবা তাই আমি খাই

পুত্র মুখে এই কথা শুনিলাম যবে

ইলিশ মাছের চেষ্টা করিলাম তবে
।।
পরদিন প্রাতঃকালে পান্তভাতদিয়া

দিলাম ইলিশ মাছ নিজে মাখাইয়া
।।
যেই মাত্র খায় ভাত জ্বর সেরে যায়

দিনে দিনে স্বাস্থ্য তার ক্রমে ভাল হয়
।।
ঘটনা দেখিয়া সদা এই ভাবি মনে

কোথায় পাইব দেখা সেই মহাজনে
।।
এই ছয় মাস গত এমন চিন্তায়

অদ্য দেখা দিয়াছেন সেই মহাত্মায়
।।
গুরুচাঁদ আসিয়াছে রাজ-দরবারে

বসতি করিছে তিনি ডেপুটীর ঘরে
।।
পুত্র সহ সেই পথে আমি যবে যাই

গৃহ মধ্যে গুরুচাঁদে দেখিবারে পাই
।।
গুরুচাঁদে দেখে মোর পুত্র বলে ডাকি

ঐ সে ঠাকুর বাবা যাঁরে স্বপ্নে দেখি
।।
কথা শুনি জ্ঞানহত আমি চেয়ে রই

পুত্র বলে বারে বার বাবা তিনি অই
।।
বিষম সন্দেহ মনে হই আগুসার

প্রণাম করিল পুত্র চরণে তাঁহার
।।
সস্নেহে তাহার অঙ্গে হস্ত বুলাইয়া

জিজ্ঞাসিল গুরুচাঁদ হাসিয়া হাসিয়া
।।
কেমন সংবাদ খোকা সারিয়াছে জ্বর?
খেয়েছ ইলিশ মাছ পান্তার ভিতর?”

 

 

আশ্চর্য্য মানিয়া আমি ভাবি মনে মনে
এ তত্ত্ব ঠাকুর তবে জানিল কেমনে?
এ নহে সামান্য কেহ বুঝিনু নিশ্চয়

কুলমান ফেলে দিয়ে পড়ি তাঁর পায়
।।
যে সব শুনেছি কথা আমি তাঁর ঠাঁই

এ জীবনে হেন কথা আর শুনি নাই
।।
তাই বলি ছাড় হিংসা ছাড় গন্ডগোল

হিংসাতে টানিয়া আনে অনর্থ কেবল
।।
এত বলি গেল চলি সেই মহাশয়

বর্ণ হিন্দু সব তাত চুপ করি রয়
।।
হইল মধ্যাহ্ন বেলা গগন উপরে

সভাসদ চলিলেন দরবার ঘরে
।।
বায়ান্ন জনের লাগি মেডেলআসিল

তারা সবে ধীরে ধীরে গৃহ মধ্যে গেল
।।
আপন আসনে বসি চুপ করি রয়

সর্ব্ব শেষে গুরুচাঁদ সভাতে উদয়
।।
কুমুদ বিহারী বাবু সঙ্গে সঙ্গে চলে

রূপের তরঙ্গ যেন পড়িছে উথলে
।।
যত নমঃশূদ্র ছিল সেই সহরেতে

সকলে হাঁটিয়া চলে প্রভুর পশ্চাতে
।।
ধীর পদে অগ্রভাগে গুরুচাঁদ চলে

কাজ ফেলে চেয়ে রয় নর-নারী দলে
।।
মনোলোভা কিবা শোভা বলিহারি যাই

সবে বলে হেন রূপ আর দেখি নাই
।।
রূপের তরঙ্গ যেন করে ঝিকিমিকি

রূপ দেখে কেহ নারে পালটিতে আঁখি
।।
দোকানী দোকান করে বসিয়া দোকানে

বেচাকিনি ছাড়ি রূপ দেখে দুনয়নে
।।
পথচারী পথ চলে ব্যস্ত নিজ কাজে

সে দেখিল গুরুচাঁদে অপরূপ সাজে
।।
হাঁটা ভুলি আঁখি তুলি শুধু চেয়ে রয়

মনে ভাবে এ মানুষ আছিল কোথায়
।।
দুই সারি বাড়ী বাড়ী নর নারী যত

এক দৃষ্টে রহে চেয়ে পুত্তলিকা মত
।।
সবে কয় কেবা হেন মোহন মূরতি

রূপ দেখে মনে হয় ইনি লহ্মীপতী
।।
এই ভাবে গুরুচাঁদ অগ্রসর হয়

দরবার গৃহে আসি হইল উদয়
।।
কুমুদ বিহারী আর প্রভু দয়াময়

এক সঙ্গে গৃহ মধ্যে প্রবেশ করয়
।।
দরবার গৃহে যবে উপনীত হল

বিস্ময়ে সকল লোকে চাহিয়া রহিল
।।
পরিচয় জিজ্ঞাসিতে কেহ করে মন

শ্রীগিরশ সেন বাবু বলিল তখন
।।
ভদ্র মহোদয় যত শুনুন এখন

নমঃশূদ্র বটে হন এই মহাজন
।।
ওড়াকান্দী বাসী নাম শ্রীগুরুচরণ

বিশ্বাস উপাধি ছেড়ে ঠাকুর এখন
।।
উৎপ্রেক্ষা মতে কথা বলিল গিরীশ

নমঃশূদ্র পক্ষে তাহা হইল আশীষ
।।
গিরীশের বাক্যে কেহ নাহি দিল সায়

ব্যর্থকাম সে গিরীশ বহু লজ্জা পায়
।।
প্রভুকে করিয়া সঙ্গে কুমুদ বিহারী

চলি গেল অগ্রভাগে অতি ত্বরা করি
।।
অগ্রভাগে একখানি আসন যে ছিল

তথা আসি শ্রীকুমুদ প্রভুকে কহিল
।।
এ আসনে এই ক্ষণে বসুন আপনি

কর্ণে নাহি তুলিবেন প্রলাপ কাহিনী
।।
যদি কেহ কোন কথা বলিবারে চায়

ম্যাজিষ্ট্রেট জানে সব বলিবে তাহায়
।।
এত বলি সে কুমুদ গেল অন্য ঠাঁই

প্রভু বলে মোর লাগি কোন চিন্তা নাই
।।
লর্ড কারমাইকেল আসিলেন পরে

উঠিয়া দাঁড়ায় সবে দরবার ঘরে
।।

 

আসন গ্রহণ করি বসিলেন লাট
অপরূপ শোভা হল দরবার পাট
।।
রজন নির্ম্মিত ছিল মেডেল সকল

চন্দ্র করজ্যোতিঃ সব করে ঝলমল
।।
একে একে ম্যাজেষ্ট্রেট পড়িলেন নাম

রাজ-সম্মানিত যত ছিল গুণধাম
।।
এক এক জন করি লাটের সম্মুখে

উপস্থিত হল সবে পরম পুলকে
।।
নিজ হাতে লাট তবে মেডেল পরায়

শির নত করি সবে সম্ভ্রম জানায়
।।
মহাপ্রভু গুরুচাঁদ আসিলেন ধীরে

আপনি উঠিয়া লাট তাঁর হস্ত ধরে
।।
সম্মান করিয়া পরে মেডেলটী দেয়

মেডেল পাইয়া প্রভু নিজাসনে যায়
।।
সকলে মেডেল দিয়া বসিলেন লাট

এব শেষে হল এই দরবার পাট
।।
এই দরবারে যাঁরা মেডেলপেয়েছে

রাজ-পরিচিত তারা সবে হইয়াছে
।।
এদেশে প্রধান তাঁরা জানিল সম্রাট

দরবার শেষ হল বলিলেন লাট
।।
মেডেল পাইয়া প্রভু আসিলেন বাসে

নমঃশূদ্র সবে তাহে প্রেমানন্দে ভাসে
।।
রাজ-পরিচিত হল স্বজাতি সমাজ

নমঃশূদ্র সবে তাহে প্রেমানন্দে ভাসে
।।
আপনি করিয়া কৃপা পতিতে তরা

হরি-গুরুচাঁদ প্রীতে হরি হরি বল
।।

 

বীর সাধক মহাত্মা দেবীচাঁদ গোস্বামীর জীবন কথা প্রণতি


প্রণাম চরণে দেব দেবীচাঁদ স্বামী

জ্ঞানে কর্ম্মে ধর্ম্মে সদা ভক্ত-শ্রেষ্ঠ তুমি
।।
মম গুরু শ্রীগোপাল তুমি তস্য গুরু

মম পক্ষে তাই তুমি বাঞ্ছা-কল্পতরু
।।
বালক বয়সে তোমা হেরেছি নয়নে

আজি কিন্তু দাদু তাহা নাহি মোর মনে
।।
পুত্র হতে পৌত্র নাকি হয় প্রিয়তর

তাই নিবেদন পদে রহিল আমার
।।
গুণ নাই জ্ঞান নাই নাহি ভক্তি লেশ

তবোপরে তবু মোর দাবী নহে শেষ
।।
এসোহে দয়াল দাদু! হৃদয় কন্দরে

গাহ হরি-গুণ-গীতি মধুময় স্বরে
।।
সেই ধ্বনি বিশ্বজনে করিব বন্টন

তব পরিচয় মোর সফল জীবন
।।
সুপুত্রের গুণে পিতা হয় পরিচিত

সকলে সুপুত্র তব ভুবন-বিদিত
।।
গোপাল বিপিন আর শ্রীতপস্বী রাম

নেপাল মাধব এরা সবে গুণধাম
।।
রত্নের আকর ছিল তোমার হৃদয়

তাই বিশ্বে দিয়ে গেলে রতন নিশ্চয়
।।
জহুরী সাজিয়া তুমি আনিলে জহর

শুদ্ধ শান্ত শক্তিমন্ত সাধুর বহর
।।
গুরুচাঁদ-রূপালোকে পতঙ্গের প্রায়

ঝাঁপ দিয়ে গুণনিধি ত্যজি সমুদয়
।।
আলোকের কণা তুমি তথা হতে নিলে

দাবানল সম তাহা সর্ব্বত্র ছড়ালে
।।
পাপ তাপ মায়া মোহ পুড়ে হল ছাই

গলিত-কাঞ্চন সম বহু ভক্ত পাই
।।
পতিত তরাতে ইচ্ছা গুরুচাঁদ করে

তাঁর ইচ্ছা পূরাইলে অন্তরে বাহিরে
।।
সবার বিরুদ্ধে-কর্ম্ম নিজ তেজোগুণে
হে বীর! করিলে তুমি শঙ্ক-হীন মনে
।।
জ্ঞা কর্ম্ম সম্মিলনে তোমাতে হইল

যতেক পতিত জাতি তাহাতে তরিল
।।

 

বিধির বিধান বুঝি বুঝেছিলে মনে
তাই গেলে নিজ-লোকে কর্ম্ম অবসানে
।।
পুত্রগণে দিয়া গেলে নিজ কর্ম্ম ভার

তাহাদের মধ্যে হেরি প্রকাশ তোমার
।।
তোমার অসীম লীলা চাই লিখিবারে

আপনা আপনি লীলা লেখ দয়া করে
।।
মহাশান্ত বীর্য্যবন্ত সহজ সরল

প্রেম-গঙ্গা হৃদি-মধ্যে করে টলমল
।।
পবিত্র চরিত্র রক্ষা যাহে সবে করে

বারে বারে শতবারে দন্তিতে সবারে
।।
অগ্নি-মন্ত্রী হে তপস্বী! এসো পুনরায়

দলিত পতিত নয় তোমাকেই চায়
।।
প্রিয়তম দাদু মোর আজিকে কোথায়?
তোমার স্নেহের ছোঁয়া মহানন্দ চায়
।।
পরম দয়অল তুমি এই জানি মনে

দয়া করে এসো দাদু! মম হৃদাসনে
।।
কল্পলোকে গল্প গুলি ভাসিয়া বেড়ায়

প্রেম ডোরে বন্ধে এসে শুনাবে আমায়
।।
তোমার রচিত গাঁথা তোমারে শুনাই

তোমারে চিনুক সবে এই মাত্র চাই
।।
তোমার চরণ তলে রাখিলাম শির

হাসাও কান্দাও দাদু! ভক্ত-শ্রেষ্ঠ বীর
।।

 

পরিচয়


শ্রীদেবী চরণ নামে মন্ডল উপাধী

ধর্ম্মবীর কর্ম্মবীর বহু গুণ নিধি
।।
আদি বাস ছিল ফরিদপুর জেলায়

গোপালগঞ্জ থানা মচন্দপুর গাঁয়
।।
পরে বাস করিলেন বাণীয়ারী গ্রাম

বরিশাল জিলা মধ্যে নয়নাভিরাম
।।
পাটগাতী গ্রামে ধনী সম্মানিত অতি

মন্ডল উপাধিধারী করেন বসতি
।।
গাতিদার সেই বংশ বড়ই সম্মান

নমঃশূদ্র কুলে জন্ম বংশেতে প্রধান
।।
সেই ঘরে দেবী চাঁদ করিত চাকুরী
।।
কাজ কর্ম্মে ছিল তেঁই বিচক্ষণ ভারী
।।
অষ্ট-ধাতু-দিয়ে-গড়া সুন্দর পুরুষ

সাবধানী সর্ব্বকর্ম্মে ছিল তাঁর হুষ
।।
দুষ্ট প্রজা যদি কেহ কর নাহি দেয়

দেবীকে দেখিলে কর তখনি জোগায়
।।
কি মোহিনী ছিল তার দুইটি নয়নে

ভয়ে ভয়ে কেন নাহি চাহে তার পানে
।।
এমন তেজস্বী ছিল সে দেবীচরণ

অন্তরে কোমল যেন ফুলের মতন
।।
দুঃখী যদি ভাগ্য ক্রমে পড়ে তাঁর আগে

তাঁর দুঃখ দূর করে যত কিছু লাগে
।।
দেখিতে কঠিন বটে অন্তরে দয়াল

ঠিক যেন বৃক্ষোপরে নারিকেল ফল
।।
এই ভাবে কাজ করে সেই মহামতি

এবে শুন কোন পথে গেল তাঁর গতি
।।
প্রতিবর্ষে শারদীয়া উৎসব-কালে

শ্রীতারক গান করে সেই গৃহ-স্থলে
।।
গান করে রসরাজ রসের সাগর

প্রেমানন্দে শোনে সবে নিস্তব্ধ আসর
।।
দেবীচরণের পরে সকলি নির্ভর

দেখা শুনা করে তেঁহ প্রত্যেক বছর
।।
তারকে দেখিয়া দেবী ভাবে মনে মন

কবি গান কর্তা বটে আছে বহু জন

কিন্তু এই ব্যক্তি যেন সেই দলে নয়

এ ব্যক্তির মধ্যে যেন অন্য কিছু রয়
।।
হরিনাম শুনা মাত্র চক্ষে বহে জল

এই কোন ভাব আমি বুঝিনা সকল
।।

 

 

সন্দেহ জাগিল মনে স্থির নহে মন
তারকেরে জিজ্ঞাসিল যেই মহাজন
।।
অভয় যদ্যপি আমি পাই তব ঠাঁই

এক কথা তব পাশে জিজ্ঞাসিতে চাই
।।
তারক হাসিয়া বলে গোমস্তা মশায়

করহ জিজ্ঞাসা মোরে যাহা মনে লয়
।।
সাহসে করিয়া ভর সে দেবীচরণ

তারকের ঠাঁই তবে করে নিবেদন
।।
কোন গুণ বল তব চোখে ভরে জল

দিবানিশি বল কেন বল হরি বল?”
হরিচাঁদ! গুরুচাঁদ! বল অবিরত

আমাকে সকল কহ করিয়া নিশ্চিত
।।
দেবীর বচনে সাধু হইল আকুল

শ্রীহরি স্মরণে প্রাণ হইল ব্যকুল
।।
অবিরল ঝরে জল নয়নের কোণে

ক্ষণ কাল পরে বলে চাহি দেবী-পানে
।।
শুন শুন মহাশয়! সত্য বিবরণ

হরি বলে কভু মোর ভরেনা নয়ন
।।
শ্লেষ্মা বৃদ্ধি ধামু মোর তাই ঝরে জল

ভাণ করে মাঝে মাঝে বলি হরি বল
।।
কান্না কাটি যত দেখা তাহা কিছু নয়

তবে এক কথা আজি বলিব তোমায়
।।
হরি চাঁদ, গুরুচাঁদ শুনিয়াছ মুখে

যাহা করে তাঁরা করে আমি করার কে?
কলি শেষে ওড়াকাকান্দী হল অবতার

নমঃশূদ্র কুলে আসি করিল উদ্ধার
।।
পিতাপুত্র অভিন্নাত্মা পূর্ণ অবতার

যাহা কিছু দেখ বাপু সব গুণ তাঁর
।।
এতেক বলিয়া সাধু বহুত কান্দিল

মনে মনে দেবী তাঁর চরণ বন্দিল
।।
প্রকাশ্যে কহিল তঁরে করিয়া বিনয়

ওড়াকান্দী যেতে কিন্তু মোর ইচ্ছা হয়
।।
শুনিয়া তারক বলে শুভ সমাচার

বারুণীর কালে দেখা পাইবে আমার
।।
মম সঙ্গে যদি তুমি ওড়াকাদন্দী যাও

ব্রহ্মার-বঞ্চিত ধন অনায়াসে পাও
।।
এত বলি শ্রীতারক গেল নিজ দেশে

এ দিকে দেবীচরণ শুধু ভাবে বসে
।।
দেহ মধ্যে প্রাণ যেন আর বান্ধা নাই

উদাস হয়েছে মন সদা ছাড়ে হাই
।।
মনে ভাবে কবে যাবো ধাম ওড়াকান্দী

মিছামিছি মায়াজালে রহিয়াছি বন্ধী
।।
ক্রমে দিন গত হল বসন্ত আসিল

তারকের কথা ভাবি ব্যাকুল হইল
।।
হেন কালে একদিন প্রভাত বেলায়

কবি রসরাজ সেই পথ ধরি যায়
।।
দুই জনে নৌকা বাহে গোস্বামী আসীন

দেবীচাঁদ এল ঘাটে অন্তরে মলিন
।।
তাকে দেখিয়া চিত্ত হইল নির্ম্মল

আপনা ভুলিয়া বলে বল হরি বল
।।
সহজ প্রাণের ঢেউ তাহে প্রেম-বারি

তারকের চিত্তে হল প্রেমানন্দ ভারী
।।
হরি বোলবলি সাধু তরণী ভিড়ায়

শ্রীদেবী প্রণাম করে গোস্বামীর পায়
।।
আনন্দে তারক তাঁরে ধরে দিল কোল

প্রেমানন্দে দেবী বলে বল হরি বোল
।।
কোলাকুলি করে দোঁহে প্রেমে মত্ত হয়ে

দুই সাধু পড়ে পরে ভুমিতে লোটায়ে
।।
উভয়ের চক্ষে বহে প্রেম-বারি-ধারা

উভে কান্দে ধরি যেন জ্ঞান-হারা
।।
এই ভাবে কিছু কাল কাটিল সময়

শ্রীতারক দেবীচাঁদ ডাক দিয়া কয়
।।
এখন কি ওড়াকান্দী মন যেতে চায়

দেবী বলে আর মোর নাহিক সংশয়
।।

 

ঠিক হল বারুনীতে দেবীচাঁদ যাবে
তারক তাঁহাকে গুরু-চাঁদকে দেখাবে
।।
এই ভাবে দুই সাধু বিদায় হইল

তারকের তরী তবে বাহিয়া চলিল
।।
বারুণী আসিতে দেরী দশ বার দিন

চিন্তাতে শ্রীদেবী চাঁদ হতেছে মলিন
।।
দেহ আছে পাটগাতী মন ওড়াকান্দী

ক্ষণে ক্ষণে সাধু উঠে ফুকারিয়া কান্দি
।।
ভাব দেখে মন্ডলেরা কানাকানি করে

এত কাল পরে বুঝি দেবী যাবে ছেড়ে
।।
কাজ কর্ম্মে মন নাই সদা উদাসীন

এর দ্বারা কাজ করা বড়ই কঠিন
।।
বহু উপকারী লোক কিবা বলি তাঁরে

কিছু কাল দেখা যাক কি ভাবে কি করে
।।
দেখিতে দেখিতে দিন আসিল নিকট

দেবী যেন শর-বিদ্ধ করে ছটফট
।।
আসিল বারুণী তিথি আকাশ নির্ম্মল

হরি বলে মতুয়াচলে দলে দল
।।
এক সঙ্গ ধরে দেবী বেহালের বেশে

উদয় হইল গিয়া ওড়াকান্দী বাসে
।।
হরিবল, হরিবল, মুখে মাত্র ধ্বনি

অবিরল চোখে জল পড়িছে অমনি
।।
মতুয়ার সঙ্গে ধামে উপস্থিত হল

কীর্ত্তনে মাতিয়া বলে বল হরিবল
।।
হেনকালে শ্রীতারকে দেখিবারে পায়

প্রেমে মত্ত মহাসাধু চরণে লোটায়
।।
তারক টানিয়া তাঁরে লইলেন কোলে

কোলে পড়ি কান্দে আর হরি হরি বলে
।।
তারক কহিল তারে শুন মহাশয়
।।
চল এবে গুরুচাঁদে দেখাব তোমায়
।।
গুরুচাঁদ নাম শুনি সাধু কেন্দে কয়

আমার কি হবে বল সে ভাগ্য উদয়?
নয়নে দেখে না কিছু মন সব দেখে

মনে যাঁরে লাগে ভাল মন তাঁরে রাখে
।।
আমার অবোধ মন কাদা-মাটী-ভরা

আমার কি হবে দেখা প্রভু মনোহরা?”
বিলাপ করিয়া সাধু কান্দে উভয়রায়

শ্রীতারক বলে সাধু নাহি কোন ভয়
।।
পরম দয়াল মোর এল এই কুলে

তাঁর কৃপা দৃষ্টি আছে বেড়িয়া সকলে
।।
সুবোধের জন্যে দয়া কিবা প্রয়োজন?
অবোধ অজ্ঞানে লাগে দয়ার কিরণ
।।
অতএব চল এবে যাই তাঁর ঠাঁই

দেখি সেই রাঙ্গা পদে স্থান যদি পাই
।।
এত বলি দুই সাধু উঠিয়া চলিল

গুরুচাঁদ সন্নিকটে উপস্থিত হল
।।
আসনে বসিয়া প্রভু পরম দয়াল

ভক্ত সঙ্গে কথা কহি হাসে খল খল
।।
এমত সময় দেবী তারক সহিতে

উপনীত হল গুরুচাঁদের সাক্ষাতে
।।
চাহিয়া দেখিল যেন গলিত-কাঞ্চন

নরমূর্তি ধরি করে প্রেম-আলাপন
।।
কিবা সে চরণ-যুগ রক্তরাগ-মাখা

উভপদে দেখা যায় দীর্ঘ উর্দ্ধরেখা
।।
অঙ্গের গঠন নাহি বর্নিবারে পারি

অঙ্গহতে জ্যোতিঃ যেন উড়ে সারি সারি
।।
দীর্ঘ ভূজ করপদ্মে ঊদ্ধ-রেখা-আঁকা

প্রশস্ত বুকের ছাতি স্বল্প লোমে ঢাকা
।।
আলতা গুলিয়া যেন গুগ্ধের সহিত

প্রভুর অঙ্গেতে বিধি করেছে মিশ্রত
।।
সুকোমল ঢল ঢল চারুচন্দ্রানন

চৌরাশ কপাল তাঁর অতি সুশোভন
।।
নয়ন যুগল যেন সন্ধ্যাতারা প্রায়

ব্যথিত জীবের প্রতি চাহে করুণায়
।।

 

শির যেন সুমেরুর উচ্চ-শ্বেত-চুড়া
সুঘন কেশের দলে চারিদিকে বেড়া
।।
নিরিবিলি নিরজনে সে কোন ভাস্কর

গঠিল এমন অঙ্গ যেন সুধাকর
।।
পিক-কন্ঠ যিনি স্বর মধুর মধুর

যেই শোনে সেই হয় প্রেমেতে আতুর
।।
রূপ দেখে সুর শুনে দেবীচাঁদ নাই

আপনা ভুলিয়া শুধু ছাড়ে ঘন হাই
।।
কিছুকাল এইভাবে দাঁড়াইয়া ছিল

অকস্মাৎ ভূমিতলে লুটায়ে পড়িল
।।
তাহা দেখি গুরুচাঁদ ডাক দিয়া কয়

এ কারে আনিলে সাথে গোস্বামী মশায়?
চেহারায় মনে হয় জন্ম উচ্চ বংশে

জ্ঞানে গুণে কম নাহি হবে কোন অংশে
।।
বড়লোক বড়-মন বড় সমুদয়

ওড়াকান্দী আসে এরা ঠেকে কোম দায়?
এ বাড়ী কাঙ্গালে চেনে কাঙ্গালী-নিবাস

কাঙ্গালের বাড়ী এই তাদের বিশ্বাস
।।
ধূলা বালি মেখে তারা হেথা সুখে রয়

মিলেনা আহার তবু কথা নাহি কয়
।।
দুঃখী যারা দুঃখ ছাড়া সুখ নাহি চিনে

মিলাতে দুঃখীর মেলা আসে সে এখানে
।।
বড় যারা সুখী তারা বল কোন গুণে

দুঃখীর আলয়ে তারা আসিবে কেমনে?
যারা যারা আসে হেথা তারা ভাল জানে

দুঃখ-ছাড়া সুখ কভু পাবে না এখানে
।।
দুঃখলে পশরা তারা করে নিজ শিরে

দুঃখের-বান্ধব-হরি সাথে সাথে ফিরে
।।
সুখের পিয়াসী যারা তারা কেন আসে?
দুঃখী সুখী বল কবে এক সাথে বসে?
কাজ নাই সুখী নিয়ে দুঃখী মোর ভাল

দুঃখী জনে বন্ধু জেনে করেছি সম্বল
।।
এতেক কহিলা যদি পতিত-পাবন

করজোড়ে দাঁড়াইল সে দেবীচরণ
।।
জলধারা বহে চক্ষে কম্পিত শরীর

ঘন ঘন বহে শ্বাস চিত্ত নহে স্থির
।।
কেন্দে কয় দয়াময় কিবা কব আর?
পড়েছি অকুল নীরে কর মোরে পার
।।
এ অকুলে ভূমন্ডলে বন্ধু কেহ নাই

দয়া করে তোল মোরে ক্ষীরোদের সাঁই
।।
করুণ নয়নে চাহ অগতির গতি

গৌরবে ডুবেছি করে সুখর বসতি
।।
সুখ বলি যারে বলি সেত সুখ নয়

বাতুলতা মাত্র তাহা বুঝেছি নিশ্চয়
।।
ধন জন মান যশ জীবে সদা চায়

নশ্বর সকলি তাহা দুদিনে ফুরায়
।।
ধন-হারা হতে প্রভু না লাগে সময়

স্বার্থ গেলে জনপ্রাণী সবাই দূরে যায়
।।
মান যশ প্রতিষ্ঠাদি সকলি নশ্বর

ধনে জনে বাধ্য কভু নহেন ঈশ্বর
।।
-তত্ত্ব বুঝিল ভাল রূপ সনাতন

তুচ্ছ ধন ফেলে নিল পরমার্থ ধন
।।
সে কথা আমার বলা বাতুলতা মাত্র

আমি পাপী তারা ছিল পরম পবিত্র
।।
সুখেরে চাহিয়া প্রভু জীবন কাটিল

যত চাই সুখ মোরে দেখা নাহি দিল
।।
আলোয়ার পাশে যথা পথ-হারা ধায়

অন্ধকারে মরে ঘুরে পথ নাহি পায়
।।
এ ভব আন্ধার ঘোর আমি পথ-হারা

সুখের আলোয় মোরে করিয়াছে সারা
।।
ওহো রে! দুঃখের বন্ধু! যদি দিলে দেখা

সুখের বসতি ভেঙ্গে কর মোরে একা
।।
দুঃখের আকাশ তলে আমি বান্ধি ঘর

দুঃখ হোক সখা, সাথী দুঃখ সহচর
।।

দুঃখের আগুণ পুড়ে হবে আমি ছাই
দুঃখের বান্ধব হরি তাকে যদি পাই
।।
দুঃখের ভূষণে ঢাকা মহাশান্তি আছে

দুঃখেরে ধরিল দুঃখ নেবে তার কাছে
।।
দুঃখের মন্দিরে রাণী দেবী শান্তি মাতা

দুয়ারে প্রহরী সুখ উঁচু করে মাথা
।।
শান্তির মন্দিরে জীব যেতে যবে চায়

সুখ আসি হাসি হাসি তাতে বাধা দেয়
।।
মোহিনী মায়ায় সুখ নিয়ে যায় দূরে

আলোয়ার পাছে যথা পথ-হারা ঘুরে
।।
যে জন সুখেরে চেনে জানে সে-মোহিনী

সে কি কভু শোনে প্রভু সে সব কাহিনী?
বীরের স্বভাব ধরি মন্দিরেতে যায়

সুখ তারে কত মতে কত ভয় দেয়
।।
সে সব করিয়া তুচ্ছ সোজা যেবা চলে

দুঃখের মন্দিরে তার শান্তিময়ী মেলে
।।
অতল সাগর তলে গাঢ় অন্ধকার

মুক্ত-বুকে শুক্তি শুয়ে থাকে নিরন্তর
।।
শুক্তি ত খোলস মাত্র মুক্ত কিন্তু সার

মুক্ত লোভে শুক্তিবহে বিশ্ববাসী নর
।।
দুঃখের বুকেতে তুমি দুঃখহারা-ধন

দুঃখে বিনা তোমা নাহি মিলে কদাচন
।।
দুঃখ বহে সেত শুক্তি কেবা তাহা চায়?
দুঃখ বহে মুক্তা রূপে তোমা ধনে পায়
।।
ক্ষণিক সুখের বাসা ভেঙ্গ গেছে মোর

চিরস্থায়ী দুঃখ দাও ওহে মনোচোর
।।
এত বলি পুনঃ সাধু ধরণী লোটায়

তাহারে ধরিয়া পুনঃ তারক বসায়
।।
মহাপ্রভু ততঃপর কহে তার প্রতি

শোন দেবী, শোন সবে আমার ভারতী
।।
কোন কাজে নাহি দেখ আমাদের হাত

সকল কর্ম্মের কর্তা প্রভু জগন্নাথ
।।
ক্ষুদ্র দৃষ্টি ক্ষুদ্র চোখে কতটুকু দেখি

যা দেখি সামান্য তাহা বেশী থাকে বাকী
।।
আমি যে কি তাহা আমি নিজে নাহি জানি

সব জানে সর্ব্বজ্ঞাতা সৃষ্টিকর্তা যিনি
।।
আমি ভাবি এই পথে আমি যাব চলে

পারি কিনা পারি নাহি জানি কোন কালে
।।
আমার ইচ্ছায় কিংবা যত্ন পরিশ্রমে

হত যদি কোন কিছু এই ধরাধামে
।।
আমার মনের মত গড়ায়ে সংসারে

আমি সেজে রহিতাম কর্তা চিরতরে
।।
কিন্তু দেখ সেইখানে মোরা কেহ নই

খেড়ুয়ার হাতে মোরা পুতুল যে হই
।।
খেড়ু খেলে তার খেলা থাকিয়া আড়ালে

লোকে বলে কি সুন্দর! পুতুল নাচালে
।।
দেবী বলিয়াছে কথা কিছু মিথ্যা নয়

রূপ সনাতন ছিল রাজার আশ্রয়
।।
মহাধনী মহাসুখী অভাব না ছিল

তারা বল কি অভাবে সন্ন্যাসী সাজিল?
তারা কি জানিত কভু সে-সুখের-ঘর

ভেঙ্গে হবে ধুলিস্মাৎ এতই সত্বর
।।
রাজ-মন্ত্রী দুই ভাই সুখের দুলাল

তারা কেন সে-সুখের ভাবিল জঞ্জাল
।।
তারা কভু তারে নাই তাদের ভাবাল

ভাবের অভাবে তাই ফকির সাজিল
।।
সার্ব্বভৌম পন্ডিতের জান বিবরণ

এ সব ঘটায় প্রভু কমললোচন
।।
রাজা হয়ে রাজ্য করে বহু মহাশয়

কি রাজত্ব করে গেল শ্রীঅশোক রায়
।।
নাম যায় চন্ডাশোকপাষন্ড-হৃদয়

কোন গুণে বল পরে ধর্ম্মাশোক কয়?
অপ্রিয় কার্য্যেতে যার রত ছিল মন

তাঁরে কেন পরে বলে শ্রীপ্রিয়-দর্শণ
।।

তাই বলি কে যে কেটা কেবা তাহা জানে
পর ত দুরের কথা নিজেই জানিনে
।।
যারে দিয়ে যেই কার্য প্রভু ইচ্ছা করে

সে কার্য করাবে তারে রাখিয়া সংসারে
।।
তাঁর ইচ্ছা হলে তাতে বাধা কিছু নাই

অবাধ তাঁহার ইচ্ছা জানিবে সদাই
।।
এই যে দেবীচরণ মন্ডল মশায়

ওড়াকান্দি এল বল ঠেকে কোন দায়?
বাড়ী আছে ঘর আছে আছে ধন জন

এ কেন ধূলায় পড়ে করিছে রোদন
।।
অবশ্য প্রভুর মনে কোন ইচ্ছা আছে

সে-ইচ্ছা পুরাতে তাই উহারে এনেছে
।।
সে ইচ্ছায় দেবী যদি দিতে পারে তাল

ধন্য হবে নাম ওর রবে চিরকাল
।।
তাই বলি দেবীচাঁদ শোন বাছাধন

এসেছিস ত আয় তুই জম্মের মতন
।।
আর কোথা কিবা পাবি সব খানে ছাই

ওড়াকান্দী এলে তার জন্ম-মৃত্যু নাই
।।
এলে শুধু হবে না রে খাঁটি আসা চাই

সব ছেড়ে এসেছ যে তার শঙ্কা নাই
।।
তোরে বলি দেবী তুই আয় একবারে

বিশ্ব বাসী নাম তোর লবে ঘরে ঘরে
।।
এতেক বহিলা যদি পতিত পাবন

দেবীর চক্ষেতে যেন নামিল শ্রাবণ
।।
কেন্দে কয় দয়াময়, ধন্য তব দয়া

হীন জনে কৃপা দানে দিলে পদ ছায়া
।।
তুমি ত বলেছ প্রভুপ্রভুর ইচ্ছায়

সকলি হতেছে বিশ্বে কহিনু নিশ্চয়
।।
মোসব পতিত দিয়ে যদি কিছু হয়

ইচ্ছা হলে কর তাহা ওগো দয়াময়
।।
প্রভু কহে দেবী তোর চিন্তা নাহি আর

ঘরে ঘরে হরিনাম করগে প্রচার
।।
শুধু এক দেশে নয় দেশ দেশান্তরে

হরি নামে ডঙ্কা মেরে বেড়াতুই ঘুরে
।।
তোর সাথী আমি আছি কোন ভয় নাই

ডঙ্কা মেরে বেড়া ঘুরে আমি তাই চাই
।।
হস্ত নাচইয়া প্রভু বলে এ্ই বাণী

শক্তি পেল দেবীচাঁদ পরাণে তখনি
।।
মুহুর্ত্তে প্রাণেতে তাঁর এল মহাবল

মহানন্দে নৃত্য করে বলে হরি বল
।।
এই ভাবে দেবী চাঁদ মতুয়া হইল

দেখা মাত্র গুরুচাঁদ তাঁর শক্তি দিল
।।
সেই-বলে দেবী ঘুরে দেশে কি বিদেশে

অতঃপর কি করিল বলিব বিশেষে
।।
শ্রীগুরুচাঁদের গুণে অন্ত কিছু নাই

গেল দিন কহে হীন হরি বল ভাই
।।

 

গোস্বামী দেবীচাঁদের মতুয়া-ধর্ম্ম-বিস্তার


শক্তি দিল গুরুচাঁদ শক্তিমন্ত দেবীচাঁদ
প্রেমোন্মাদ হয়ে এল দেশে

যারে দেখে তারে কয় আয় সবে ছুটে আয়
করিস কি তোরা সবে বসে?
ওড়াকান্দী এল হরি ভক্তচাঞ্ছা-পূর্ণকারী
চল সবে যাই তাঁর কাছে

এমন রতন ফেলে গৃহে রস কেন ভুলে
ভুলে ভুলে দিন গেল মিছে
।।
জনে জনে ঘরে ঘরে বলে সবে পরস্পরে
এ মানুষ হয়েছে পাগল

ছাড়িয়াছে ধন মান নাহি যেন বাহ্য-জ্ঞান
মুখে শুধু বলে হরিবোল
।।
আগে মাথা ছিল ঠিক জ্ঞান ছিল দিগিদিক
এবে দেখ বেহালের বেশ

ছাড়িয়াছে সে চাকুরী তুচ্ছ কহে টাকা কড়ি
মুখে দাড়ি শিরে রাখে কেশ
।।

কেহ বলে শুন ভাই কিছু নাহি দিশে পাই
কিবা গুণ ওড়াকান্দী আছে

ওড়াকান্দী গেলে পরে যেন কোন রোগে ধরে
শুধু শুধু হরি বলে নাচে
।।
ছোঁয়াচে রোগের মত এই ভাব ক্রমে দ্রুত
চলিতেছে দেশে-দেশান্তরে

কি যেন কপালে আছে হয়ত বা আমি পাছে
মতো হব সেই মতো ধরে
।।
এই সব কাণাকাণি হল ক্রমে জানাজানি
টানাটানি হল নানাভাবে

কেহ ভাল কেহ মন্দ তর্কাতর্কি বাক্য-দ্বন্দ্ব
করে সবে জ্ঞানের অভাবে
।।
নিন্দা কিংবা বন্দনায় দেবী নাহি কণা দেয়
নিজ-মনে বলে হরিবোল

কেহ করে গালাগালি কেহ গায়ে দেয় ধুলি
ঘরে ঘরে উঠে কলরোল
।।
বিধির নির্ব্বন্ধ যাহা কে খন্ডাবে বল তাহা
মহামারী এল সেই দেশে

নর-নারী অগণন মরিতেছে ঘন ঘন
ভয়াকুল রহে সবে বসে
।।
ঘরে ঘরে কান্নারোল পুত্র-ছাড়া মাতৃকোল
স্বামীহারা কান্দে নারী দুঃখে

সতীহারা কান্দে পতি ভ্রাতা ভাগ্নী সখা সখী
ঘরে ঘরে কান্দে সবে শোকে
।।
আনে বৈদ্য-কবিরাজ তাতে নাহি দেয় কাজ
ঔষধেতে বাড়ায় বিষাদ

হায় হায় নিরুপায় কেবা কহে সদুপায়
দেশবাসী গণিল প্রমাদ
।।
কিন্তু কি আশ্চর্য্য কান্ড এক দিন এক দন্ড
দেবীচাঁদ না হল বিমর্ষ

নিয়ে ডঙ্কা নিয়ে খোল বলে শুধু হরিবোল
প্রেমানন্দে-মগ্ন মহাহর্ষ
।।
তাঁর ঘরে রোগ নাই হরি বলে ছাড়ে হাই
আপদ বালাই দুরে যায়

কোন কোন দুঃখী জনে তাইভাবে মনে মনে
দেবীপারে করিতে উপায়
।।
উপায় না দেখি চোখে সাহস করিয়া বুকে
পড়ে গিয়া দেবীর চরণে

দেবী কহে একি দায় পড় কেন মোর পায়
কোন ভাব নিয়ে এল মনে
।।
যারা কান্দে তারা কয় এ বিপদে কি উপায়
দয়া করি করহে গোঁসাই

ভুল করে এত দিন চিনি নাই তোমা ধনে
কর রক্ষা পদে ভিক্ষা চাই
।।
শুনিয়া সে সব কথা ক্ষণিক নোয়ায়ে মাথা
ডাক দিয়া দেবীচাঁদ কয়

আমি কিছু নাহি জানি শুধু এই কথা মানি
হরি নামে শঙ্কা দূরে যায়
।।
সবে যদি রক্ষা চাও ঠাকুরের মান্য দাও
হরি নাম কর ঘরে ঘরে

যদি প্রভু দয়া করে সব রোগ যাবে সেরে
অনায়াসে যাবে ভব পারে
।।
দুঃখী যারা এসেছিল দেবী চাঁদে সঙ্গে নিল
গৃহে আসি করে হরি নাম

সারারাত্রি সবে মিলে এক মনে হরি বলে
প্রাতেঃ রোগ হইল আরাম
।।
পাঁচ সিকা মান্য দিয়া পদে দন্ডবৎ হৈয়া
কেন্দে বলে সেই কাঙ্গালেরা

বিপদে কান্ডারী তুমি স্বর্গ হতে এলে নামি
দুঃখী জনে দিলে আজি ধরা
।।
দেবীচাঁদ ক্রোধে কয় ওরে ওরে দুরাশয়
কার পূজা কারে তুই দিলি

গুরুচাঁদ সর্ব্বমূল ডাল ধর ছেড়ে মূল
এই ভুলে নিশ্চয় মরিলি
।।

 

গুরুচাঁদ সব করে ডাকিস ত ডাক তাঁরে
তিনি বিনে বন্ধু কেহ নাই

বিপদের বন্ধু তিনি আমি মনে তাই জানি
তিনি অগ্নি আমি মাত্র ছাই
।।
এই ভাবে আলাপন করিলেন সমাপন
পরে গেল নিজ গৃহ বাসে

ঘরে ঘরে এই কথা ব্যাপ্ত হল যথাতথা
দলে দলে লোক এল শেষে
।।
সবার ভাঙ্গিল ভুল অকূলে মিলিল কূল
তারা সবে মতুয়া হইল

বানেরী সামর্থগাতী আর কত ইতি উতি
দেবীচাঁদে গুরুত্বে বরিল
।।
সন্ধ্যাকালে উতরোল ঘরে ঘরে হরিবোল
ধ্বনি উঠে আকাশ ভেদিয়া

রোগে মুক্তি শোকে শান্তি দূর হয় মনোভ্রান্তি
হরি বলে দুবাহু তুলিয়া
।।
এই ভাবে করে ঘর নাম হল সুপ্রচার
বহু ভক্ত মত্ত হল নামে

কেনুভাঙ্গা টুঙ্গীপাড়া সব খানে পড়ে সাড়া
রাজনগরাদি ক্রমে ক্রমে

বালা শ্রীতপস্বীরাম টুঙ্গীপাড়া যার ধাম
শুণবান অতি মহাশয়

দেহ মোটা দেল মোটা মোটা তাঁর প্রেমচ্ছটা
সাহসেতে মোটা অতিশয়
।।
দেবীচাঁদে করে গুরু কাজ করে দেল-পুরু
দুরু দুরু না কাঁপে হিয়ায়

যাহা বলে দেবীচান তাই করে দিয়ে প্রাণ
মানামান কোন চিন্তা নাই

পুত্র তার মল আগে তাতে দুঃখ নাহি লাগে
সদা কহে ভক্তি না হারাই
।।
পরে দিন পরিচয় বিয়া দিতে বিধবায়
আজ্ঞা যবে দিলেন ঠাকুর

দেবী চাঁদ সহযোগে যাহা কিছু করা লাগে
শ্রীতপস্বী করিল প্রচুর
।।
গুরুচাঁদ আজ্ঞাক্রমে গড়িলেন নিজ ধামে
যথাযোগ্য শ্রীহরি মন্দির

শ্রীতপস্বী মরে নাই শ্রীহরি মন্দির তাই
সাক্ষ্য দেয় দাঁড়াইয়া স্থির
।।
জহুরী সে দেবী চান জহরীতে ছিল জ্ঞান
রাশী রাশী আনিল জহর

ছুয়েছিল দেবী যাঁরে সেই পুনঃ ঘুরে ঘুরে
সাজাইল সাধুর বহর
।।
তাহার প্রমাণ যত বলিতেছি সাধ্য মত
মোর সাধ্যে কত বা কুলায়?
দাদু মোর দেবী চান করে যদি শক্তি দান
বলি কিছু সে যাহা বলায়
।।
নামেতে বিপিন চন্দ্র ফুল্ল যেন পূর্ণ চন্দ্র
কেনুভাঙ্গা গ্রামে অধিষ্ঠান

রূপ গুলে দেবোপম বলি ক্রমে সেই ক্রম
মাতুল সম্পর্কে দেবী চান
।।
শৈশবে করিল শিক্ষা যৌবনে চরিত্র রক্ষা
মন্ত্র-দীক্ষা না করে গ্রহণ

যা্ত্রাগানে অনুরক্তি অভিনয়ে মহাশক্তি
সবে বলে নয়ন-রঞ্জন
।।
এই ভাবে কাল যায় দেবী চান তাঁরে কয়
ওরে ভোলা কত কি খেলিবি?
কত কাজ আছে বাকী তোরে তার লাগি ডাকি
গেলে দিন শেষে কি করিবি?”
এই কথা শোনা মাত্র কেঁপে উঠে তাঁর গাত্র
ছিন্ন-পত্রসম ভূমে পড়ে

কেন্দে কয় দয়াময় এত দিন কেহ হায়
অভাগারে নিলে নাক ধরে?

 

 

 

খেলা ধূলা ছাই মাটি আজ বুঝিয়াছি খাঁটি
পরিপাটি শুধু হরিনাম

সাজ ফেলে পরি সাজ সে সাজ পরালে আজ
সেই সাজে আমি সাজিলাম
।।
জীবনের ভার লহ কোন পথে চলি কহ
তুমি নহ কভু মোর পর

নৌকিক সম্বন্ধ ছাড়ি গুরু বলে মান্য করি
দিব পাড়ি অকুল সাগর
।।
কথা শুনি দেবী কয় বিপিন রে! নাহি ভয়
অকুলের আছে যে-কান্ডারী

কুলহারা কুল পাবে মরিবেনা কেহ ডুবে
হরি এল ওড়াকান্দী বাড়ী
।।
মোর সাথে চল চল বসে থেকে কিবা ফল
কল্প বৃক্ষ ফল নিয়ে সাথে

আহা রে! দুর্ভাগা জীব হরি হল সদাশিব
চিনলি না কোন অপরাধে
।।
তোরা যে সন্তান তাঁর সবারে করিতে পার
কর্ণধার সেজেছে সে নিজে

যদি পারে বাঞ্ছা হয় ওঠে গিয়ে তাঁর নায়
পড় তাঁর চরণ-সরোজে
।।
এই ভাবে করে খেদ বিপিনের বক্ষ-ভেদ
ল শুনি সাধুর কাকুতি

কেন্দে পড়ে তার পায় বলে গুরু দয়াময়!
দয়া করে কর মোরে সাথী

এইভাবে সে বিপিন মত্ত হল দিনে দিন
দেবীচাঁদ দিল শক্তি তাঁরে

শক্তিবলে সুমহান কার্য করে মতিমান
সে কাহিনী বলা হবে পরে
।।
সেই হতে সর্ব্বদায় বানিয়ারী গ্রামে যায়
আয় যায় ধাম ওড়াকান্দী

দেবী চাঁদ যাহা বলে সদা সেই মত চলে
ভক্তিগুণে তাঁরে করে বন্দী
।।
শক্তিমান মহাসাধু শ্রীহরি নামের মধু
বিলাইল দেশে কি বিদেশ

কি কব গুণের কথা রোগে শোকে শান্তিদাতা
প্রাণহারা প্রাণ পেয়ে হাসে
।।
সে কীর্তি কাহিনী যত ঘটিতেছে অবিরত
পরে তাহা করিব বর্ণনা

সংক্ষেপেতেঃ বলি এই গোস্বামীর মৃত্যু নেই
অমরত্ব করেছে সাধনা
।।
রাজনগরেতে বাস নামে নেপাল বিশ্বাস
গণেশ নামেতে অন্যজন

দেবী চাঁদে করে মান্য তাঁহার আদেশ ভিন্ন
কোন কর্ম্ম না করে মনন
।।
এইভাবে পরচার করে দেবী ঘরে ঘর
সমাচার শোনে প্রভু কাণে

একদিন যবে দেবী নিষ্কলঙ্ক-পূর্ণ ছবি
প্রণমিল প্রভুর চরণে
।।
প্রভু ডেকে তারে কয় শোন দেবী এ সময়
দক্ষিণেতে করহে গমন

উঠেছে আমার মনে মনে হয় বাদাবনে
ভক্ত সেথা আছে বহুজন
।।
তুমি মোর কথা লও শীঘ্র করি চলি যাও
বাদা বনে করগে প্রচার
।।
দেবী কহে গুণনিধি এত ইচ্ছা হল যদি
পূর্ণ হোক যে-ইচ্ছা তোমার
।।
গৃহে আসি অতঃপরে ডাকি কহে গণেশেরে
মোর বাক্য শুনহে গণেশ

ঠাকুরের আজ্ঞা রয় একবার এ সময়
ঘুরে এস সে-দক্ষিণ দেশ
।।
আজ্ঞামতে সে গণেশ চলিল দক্ষিণ দেশ
খুলনা জেলায় উপস্থিত

বাগেরহাট মহকুমা বাদা যার শেষ সীমা
সেই দিকে চলিল ত্বরিত
।।

ডেউয়াতলা নামে গ্রাম তথা বসি করে নাম
হরিচাঁদবলে ছাড়ে হাই

মতুয়ার গান গায় দুই চক্ষে ধারা বয়
ভাব দেখে অবাক সবাই
।।
সেই রাত্রি সেইখানে উপস্থিত দুইজনে
নাম জানি গোপাল, গণেশ
মামা আর ভাগিনেয় ধনে মানে নহে হেয়
মনে নাহি নিরানন্দ লেশ
।।
গান শোনে সে গোপাল দুই চক্ষে ঝরে জল
পুরাতন কথা জাগে প্রাণে

সুধামাখা এ সঙ্গিত গেয়ে ছিল সুললিত
বিবাহের দিন একজনে
।।
ভস্মে যথা অগ্নি-ঢাকা এ সঙ্গীত মধুমাখা
ছিল ঢাকা বিষয়-ঝঞ্ছাটে

বহু দিন পরে দেখা আর কিরে যায় থাকা
কি যে লেখা ছিল রে ললাটে

ঢাকা যাহা ছিল বুকে বের হল ভক্ত মুখে
মনোসুখে কান্দিল গোপাল

কেন্দে কয় হে গোঁসাই! আর কোন কথা নাই
ধন্য মানি আমার কপাল
।।
মম গৃহে চল তুমি সব কথা শুনি আমি
এই গান পেলে কার ঠাঁই?
যার গান সে কোথায়? আমার যে মন চায়
সেই মানুষের দেশে যাই
।।
যেতে নাহি কর বাধা ভেঙ্গে ফেল সব দ্বিধা
এক কথা পড়ে মোর মনে

আমার ভাগ্নের নাম শোন বলি গুণধাম
নামে নামে সম তব সনে
।।
দুই জনে হও মিত্র এই পরিচয় সূত্র
বাঞ্ছা মাত্র কহি তব ঠাঁই

তুমি যদি চল সাথে বড়ই আনন্দ তাতে
মনে আমি বড় শান্তি পাই
।।
গোপালের সে কথায় গণেশের শান্তি হয়
আনন্দে চলিল তাঁর সাথে

গিয়ে গোপালের বাড়ী ফিরে এল তাড়াতাড়ি
কথা বলে বহুবিধ মতে
।।
ওড়াকান্দী গুণ গান শুনিলেন মতিমান
আর শোনে দেবীচাঁদ কথা

সকল শুনিয়া কানে গাঁথি নিল মনে প্রাণে
শ্রদ্ধাভরে নোয়াইল মাথা
।।
দেবী চাঁদ দেখিবারে বাসনা হল অন্তরে
বানীয়ারী যেতে হল মন

মাধব মামাত ভাই তাহারে জানাল তাই
একা ছিল হল দুই জন
।।
মাধবের পরিচয় বল কিছু এ সময়
বেতকাটা বাড়ী হল তাঁর

চারি ভাই শুদ্ধ শান্ত জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা লহ্মীকান্ত
রাধাকান্ত অনুজ তাঁহার
।।
তৃতীয় মাধবচন্দ্র ছোট ভাই রতিকান্ত
পিতা হল নামে নীলমণি
।।
নীলমণি সোনা রাম দুই ভ্রাতা অনুপম
গোপালের মামা এরা জানি
।।
এই দীন গ্রন্থকার এই বংশে জন্মতার
পিতা তার সাধু রাধাকান্ত

মাধবের ভ্রতুষ্পুত্র কাজে নহে নামে মাত্র
কর্ম্মদোষে আছে পথভ্রান্ত
।।
মাধব আর গোপাল বাঁধিলেন একদল
শ্রীনাথ মিশিল তার সাথে

তিনজনে চলি যায় বানেরী হয় উদয়
দেবীচাঁদ পাইল দেখিতে
।।
মন সঁপে তাঁর পায় দেবী লহ্মীখালী যায়
আর গেল বেতকাটা গ্রামে

দেবী গেল যেইখানে মহাভাব সেইখানে
সবে মত্ত হলহরিনামে
।।

 

এইভাবে বাদা বনে দেখা গেল এতদিনে
ঠাকুরের ভক্ত কত আছে

গোপালের কীর্তি যাহা অনন্ত অসীম তাহা
সেই কীর্তি গাহিব যে পাছে
।।
এখানে সংক্ষেপে বলি গোপালের পদধূলি
পেতে ইচ্ছা করে দেবতায়
।।
মহা-দেহে প্রেল প্রাণ পাপী তাপী হল ত্রাণ
গোপালের অসীম দয়ায়
।।
দেবীচাঁদ কি যে দিল পরশে পরশ হ
সে-পরশ মেলে ভাগ্য গুণে

গোপাল সাধুর নাম দিতে পারে মোক্ষধাম
রক্ষা পায় রণে কিংবা বনে
।।
দেবীচাঁদ কোনভাবে গোপালে আনিল ভাবে
কোনভাবে দেখাল ঠাকুর

সেই সব পুণ্যবাণী অমৃত রসের খনি
পরে আমি গাহিব প্রচুর
।।
এবে শুন কোন কার্য্য দেবীচাঁদ করে ধার্য্য
কিমাশ্চর্য্য দয়া ধৈর্য্য রয়

গোপালের ভক্তিগুণে দেবী চড় সুখী মনে
মাঝে মাঝে লহ্মীখালী যায়
।।
গ্রামেতে বিরোধী যারা বোঝেনা কর্ম্মের ধারা
ক্রোধ করি শাস্তি দিতে চায়

ছল করি গোস্বামীরে ইচ্ছা করে মারিবারে
গোপাল জানিতে তাহা পায়
।।
গুরুকে রাখিয়া ঘরে একা চলে রাজদ্বারে
নিজ শিরে বহে অপমান

মনে ক্ষুদ্ধ হয়ে অতি গৃহে ফিরে মন্দগতি
দেবীচাঁদ পথে আগুয়ান
।।
গোপালের মুখ দেখি বুঝিতে থাকে না বাকী
বলে দুঃখ না ভাবিও মনে

যাহা করে হরি করে দোষ নাহি দিও কারে
করে সব মঙ্গল কারণে
।।
আমাদের নিষ্ঠা কত হরি তাহা দেখিবে ত
কত শত কষ্ট আছে পাছে

শোন বলি হে গোপাল এক মাঘে শীতকাল
গত নহে আরো মাঘ আছে
।।
মনে ক্রোধ নাহি কর আমার বচন ধর
নিষ্ঠা রাখ গুরুচাঁদ পদে

বসুমতী কত সয় জগন্মাতা তাতে কয়
সৃষ্টি রক্ষা করিছে বসুধে
।।
এ ভাবে প্রবোধ দেয় গোপালের শান্তি হয়
বলে কর্তা তোমার দয়ায়

দুষ্টগণে রক্ষা পায় তানা হলে এ নিশ্চয়
জনে জনে করিতাম ক্ষয়
।।
গোপালের কাছে আসি দেবীচাঁদ কহে হাসি
হে গোপাল! এ বড় অন্যায়

ক্ষমাই সাধুর ধর্ম্ম সাধনার মূলমর্ম্ম
ক্ষমা ছাড়া উচিত না হয়
।।
এ ভাবে সান্ত্বনা করে দেবীচাঁদ গেল ঘরে
ক্রমে ঘটে অপূর্ব্ব ঘটনা

সেই সব পরিচয় মনে মোর এ আশায়
শেষ ভাবে করিব বর্ণনা
।।
দেবীচাঁদ বোঝে প্রাণে গোপালেল ভাব জেনে
মহাশক্তি ধারী সেই জন

তাঁর গুণে একদিন ত্রাণ পাবে বিশ্বজনে
নাম হবে মহা-উদ্ধারণ
।।
তাই ইচ্ছা করে মনে শিষ্যগণে জনে জনে
গুরুচাঁদে করিতে অপূর্ণ

কি ভাবে সে সব হল কোন ভাবে কারে দিল
পশ্চাদ্শাগে করিব বর্ণণ
।।
এবে শুন আরো কথা সে দেবীর তেজস্বিতা
গুরু শিক্ষা জোর কতখানি

জাতির মঙ্গল তরে মীড যে প্রস্তাব করে
প্রভু তাহা লইলেন মানি
।।

বিধবার বিয়া দিতে প্রভু রাজী হল তাতে
ভক্তগণে জানাল সে কথা

সেই আজ্ঞা শুনি কানে চিন্তা হল ভক্তগণে
কার কার ঘুরে গেল মাথা
।।
কোন হয় এ প্রকার করেছি মীমাংসা তার
বিধবা বিবাহ প্রস্তাবনে

এখনে বলিব মাত্র ধরি দেবীচাঁদ সূত্র
কিবা করে সেই মহাজনে
।।
সবে চুপ করি রয় কেহ নাহি কথা কয়
চিন্তা হল ভকত সমাজে

বীর-মূর্ত্তি দেবী চান হয়ে এল আগুয়ান
কর জোড়ে কহে গুরু-রাজে
।।
পদে এই নিবেদন শুন পতিত পাবন
মঙ্গলামঙ্গল নাহি জানি

তুমি যাতে সুখী হও তুমি তাহা বলে দেও
শুধু মাত্র সেই কথা মানি
।।
বিধবা বিবাহ তুচ্ছ ইহা হতে আর উচ্চ
যদ্যপি কঠিন কিছু কহ

দেহে যদি প্রাণ রয় বলি আমি সুনিশ্চয়
দিব তাহা তুমি যাহা চাহ
।।
শুনিয়া তেজের বাণী গুরুচাঁদ গুণমনি
বলে ধ্য দেবী চাঁদ সাধু

তোমার কর্ম্মেতে তুষ্ট হইবেন জগদিষ্ট
তুষ্ট আমি একা নহি শুধু
।।
এই কথা যবে কয় গুরুচাঁদ দয়াময়
আর দেবীচাঁদ যাহা বলে

দ্বিধা ভাব ফেলে দূরে অন্য সবে বলে পরে
বিয়া মোরা দিব কুতুহলে
।।
দেবীচাঁদ মহাশয় অতঃপর গৃহে যায়
বিবাহের জন্য ভারী ব্যস্ত

ডাকি বলে ভক্তগণে তোমাদের জনে জনে
এই কার্য্য করিলাম ন্যস্ত
।।
দেবীর সে আজ্ঞা পেলে ভক্তগণে চলে ধেয়ে
অবিলম্বে হল আয়োজন

বিধবার বিয়া হল সেই সব পরিচয়
পূর্ব্বভাগে করেছি বর্ণণা
।।
এই কার্য্য শেষ করি মুখে বলি হরি হরি
দেবীচাঁদ ওড়াকান্দী যায়

গোপাল চলিল সাথে দেবীচাঁদ সুখী তাতে
মনোগত ভাব নাহি কয়
।।
গুরুচাঁদ দরশনে অতি আনন্দিত মনে
দেবীচাঁদ কহিছে ভারতী

তব দয়া গুণে নাথ তব যাহা মনোগত
সেই কার্য্য করেছি সম্প্রতি
।।
গুরুচাঁদ শুনি কথা মীডেরে ডাকিয়া তথা
বলে মীড শুভ সমাচার

বিধবার বিয়া দিল দেবী চরণ মন্ডল
এই জন শিষ্য যে আমার
।।
মীড কহে বড় কর্তা বড় শুভ এই বার্তা
ধন্যবাদ করি এই জনে

এ লোকের ছবি চাই পাঠাব রাজার ঠাই
যাতে রাজা এই জনে চেনে
।।
গুরুচাঁদ দিল সায় মীড ছবি তুলি লয়
সেই ছবি গেল রাজদ্বারে

সবে বলে ধন্য ধন্য দেবী চাঁদ হল মান্য
নাম তাঁর গেল ঘরে ঘরে
।।
কার্য্য তাঁর হল শেষ ইচ্ছিলেন হৃষিকেশ
নিতে তাঁর আপনার লোক

দেবী চাঁদ বোঝে তাই মনে তাতে দুঃখ নাই
গোপালেরে নিজ কাছে ডাকে
।।
নিজ হাতে ধরি তাঁরে গুরু চাঁদ দান করে
গুরু পদে সে তার দক্ষিণা

অন্তয্যামী দয়াময় নিজ হাতে ধরি লয়
গোপালেরে করিল করুণা
।।

ঢালিয়া অসীম স্নেহ গড়িয়া একটি দেহ
গুরু চাঁদে দেবী করে দান

নেহারী অমৃত দৃষ্টি গুরুচাঁদ করে সৃষ্টি
শ্রীগোপাল সাধুর প্রধান
।।
দান দিয়ে ধন্য হয় দেবী ভাবে আর নয়
এ যাত্রায় খেলা করি শেষ

অস্তে যাবে দেবীচন্দ্র কহে দীন মহানন্দ
হরি বল ছেড়ে হিংসা দ্বেষ
।।

 

গোস্বামী দেবীচাঁদের মহাপ্রস্থান


বিধবার বিয়া হল বিভিন্ন জেলায়

প্রভু বলে থাক দেবী! আর বেশীয় নয়
।।
যা হল হয়েছে ভাল আর কার্য নাই

উদ্দেশ্য সফল হল আর নাহি চাই
।।
যথা আজ্ঞা বলি দেবী গৃহেতে আসিল

চন্ডাল মোক্ষণ হল সংবাদ শুনিল
।।
আনন্দে নাচিয়া সাধু বলে হরি বোল!
জন্ম জন্মান্তরে আজি কেটে গেল গোল
।।
আহা রে! অজ্ঞান জাতি! চক্ষু না মেলিল

দেখ এসে অনায়াসে কিবা ধন পেল
।।
দেশে দেশে এই বার্তা করে পরচার

দৈব ক্রমে দেহে তাঁর হল কালা জ্বর
।।
জ্বর মাত্রে দেখা দিল গোস্বামী কহিল

এস সবে মোর ঠাঁই সময় আসিল
।।
কেহ কান্দে কেহ কেহ সাহসের বাণী

গোস্বামী বলেন ওরে সব আমি জানি
।।
আমার যে যেতে হবে তাতে ভুল নাই

পবিত্র চরিত্র রক্ষা করিও সবাই
।।
ওড়াকান্দী যাতায়াত করিও সকলে

প্রাণপণে করো যাহাগুরু চাঁদ বলে
।।
গুরুচাঁদ জেন নহে কিছুতে মানুষ

পতিত পাবন তিনি পরম পুরুষ
।।
সেই পদে করো সবে আত্ম সমর্পণ

নিজালয় এসে আমি করিব গমন
।।
এতেক বলিয়া সাধু মুদিল নয়ন

হাগুরু, হাগুরু, বলোন্দে ভক্তগণ
।।
শোকের পাথারে ফেলে দেবী চাঁদ গেল

দেবী চাঁদ প্রীতে সবে হরি হরি বল
।।

 

চক্রীয় চক্র ও ভক্তগণের অগ্নি পরীক্ষা


প্রভুর ইচ্ছায় বাধা কেবা দিতে পারে?
জাতির মঙ্গল তবে আনিল মীডেরে
।।
মীড যাহা বলে প্রভু সেই কাজ করে

ভাব যেন প্রভু করে আজ্ঞা অনুসারে
।।
আপনার কাজ প্রভু মীডে দিয়া

নর নারী কেহ তাহা পারেনা বুঝিয়া
।।
ওড়াকান্দী হা্ইস্কুল হইল গঠন

পরীক্ষার আজ্ঞা তথা পেল ছাত্রগণ
।।
দাতব্য চিকিৎসা হয় মীডের আবাসে

দলে দলে দীন দুঃখী তাঁর কাছে আসে
।।
মীডের ঔষধে গুণ সবে জানে তাই

স্নানাহার বন্ধ হলে আর রক্ষা নাই
।।
রোগ ব্যাধি দেশ মধ্যে যত কিছু হয়

প্রায়শঃ মীডের কাছে সবে ছুটে যায়
।।
মীডের ঔষধে যার রোগ সারে নাই

সবে বলে তোর আর রক্ষা নাই ভাই
।।
আশাহীন- সেই দীন আর কোথা যায়?
শেষ-আশা গুরুচাঁদ, পড়ে তাঁর পায়
।।

 

 

 

 

পরম দয়াল বলে কিবা তোর ভয়?”
শ্রীমুখের আজ্ঞা মাত্রে রোগ সেরে যায়
।।
এবে শুন এক কথা সত্য পরিচয়

টিকাদার বংশ আছে ওড়াকান্দী গাঁয়
।।
সেই বংশে এক ব্যক্তি রোগে কষ্ট পায়

রোগ মুক্তি তরে গেল ডাক্তার খানায়
।।
বহু দিন ঔষধাদি করিল সেবন

কিছুতে সে রোগ নাহি হইল মোচন
।।
দিনে দিনে তনু ক্ষীণ খর্ব্ব হল বল

রোগ যন্ত্রনায় ক্রমে হইল অচল
।।
আত্মীয় স্বজন সবে ছেড়ে দিল আশা

গলা হবে রক্ত পড়ে ক্ষত কর্ণ, নাসা
।।
আজি মরে কালি মরে সবে ভাবে মনে

হেন কালে শুন কথা দৈবের ঘটনে
।।
মৃত্যু-যাত্রী এক প্রাতেঃ কহে সবাকারে

আমাকে লইয়া চল বড়-কর্তা-ধারে
।।
জীবনের আশা বটে মোর কছিু নাই

একবার গুরুচাঁদে দেখিবার চাই
।।
শুনেছি তাঁহার নামে কত মরা বাঁচে

-মরা সকলে ফেল নিয়ে তাঁর কাছে
।।
ডুবু-তরী যদি রক্ষা গুরুচাঁদ করে

চিরকাল রব বন্ধী চরণ নখরে
।।
এই কথা তার মুখে শুনিয়া সকলে

অতি কষ্টে ধরাধরি করে নিয়া চলে
।।
মনে হয় পথিমধ্যে যাইবে পরাণ

বেঁচে মাত্র রহিল সে দয়ার কারণ
।।
কতক্ষণে উপনীত ঠাকুরের স্থান

রাগিয়া ঠাকুর বলে এ নাকি শ্মশান?
টানা টানি করে কেন মরা আনহেথা?
এক দেশে বাস বলে এক কি শত্রুতা?
যার যার মরা তার বাড়ী নিয়া রাখ

মরা যে বাঁচাতে পারে তারে গিয়া ডাক
।।
কৌশলে আমার বাড়ী এ মরা ফেলিবে

একেবারে মরে গেলে মামলা বাধাবে
।।
এ সব ভঞ্ঝাটে বাপু কোন কার্য্য নাই

মরা নিয়ে বাড়ী যাও আমি তাই চাই
।।
এতেক বলিলা যদি প্রভু গুরুচন্দ্র

তারা বলে মোরা নাহি বুঝি কোন মর্ম্ম
।।
সত্য বটে বাস করি এই ওড়াকান্দী

তুমি যে কে কোন দিন করি নাই সন্ধি
।।
ইহা সত্য জানি যদি ভাল না বাসিবে

তবে কেন ওড়াকান্দী আপনি আসিবে?
-মরা তোমার মরা দিলাম তোমায়

মার কাট যাহা ইচ্ছা কর দয়াময়
।।
ভক্তি শক্তি কোন কিচু আমাদের নাই

এক দেশে বাস করি বল মাত্র তাই
।।
বিনামূল্যে ওড়াকান্দী বাসিয়াছ ভাল

ওড়াকান্দী বাসী জানে সেই মহাবল
।।
দয়া যদি হল মনে বাঁচাও মরারে

যা হোক তা হোক মরা দিলাম তোমারে
।।
দাবী করে কথা কয় সঙ্গীসাথী যারা

দাবী শুনে হাসে প্রবু সর্ব্ব-দুঃখ-হারা
।।
তাদের ডাকিয়া বলে ওড়াকান্দী বাসী!
আমি বুঝি দায়-ঠেকা এই দেশে আসি
।।
দায় ঠেকে আমি বুঝি বাঁচাব মরারে

এই কথা কোন দুষ্ট বলেছে তোমারে?
ওড়াকান্দী বাসী বলে কেন এত গর্ব্ব

এক দিনে ওড়াকান্দী হতে পারে খর্ব্ব
।।
যাক যাক সে কতায় কাজ কিছু নাই

তোমাদের জিৎ হোক আমি ঠকে যাই
।।
এত বলি প্রভু দিল রোগের ব্যবস্থা

এক দিনে ফিরে গেলে রোগের ব্যবস্থা
।।
কাঁচা লঙ্কা পান্তভাত তেলে জলে স্নান

দিবারাতি বসে কর হরি নাম গান
।।

সপ্তাহ মধ্যেতে রোগী আরোগ্য হইল
মীড সেই কথা শুনি আশ্চর্য্য মানিল
।।
এই ভাবে যত মরা গুরুচাঁদে ধরে

দয়াময় রক্ষা করে শুধু দয়া করে
।।
কঠিন কর্ম্মের বর্ম্মে প্রভু ঢাকা রয়

ফল্গু সম ধর্ম্ম-ধারা তলে তলে বয়
।।
ঐশ্বর্য্যের ভক্ত তাতে পড়ে গেল ভুলে

তারা সবে ক্রমে ক্রমে দুরে গেল চলে
।।
কেবলার-রীতি মানে সেই ভক্ত গণ

তাঁরা হলাগ্রসর বীরের মতন
।।
সংক্ষেপে বিস্তার তাই করিব এখন

কোন ভাবে প্রভু কিবা করিল তখন?
পূর্ব্ব ভাগে করিয়াছি সে সব বর্ণণ

দশভূজা পূজারম্ভ হল কি কারণ
।।
কিছু কাল ওড়াকান্দী দূর্গা পূজা হল

হেন কালে মীড আসি সেথা দেখা দিল
।।
কোন ভাবে কি কি কথা মীড বলেছিল

পূর্ব্ব ভাগে সেই সব বর্ণনা হইল
।।
মীড ভাবে গুরু চাঁদে নিব নিজ দলে

গুরু চাঁদ ইচ্ছে কার্য করাব কৌশলে
।।
মীডের আজ্ঞায় যেন সব কাজ করি

এই ভাবে ভান করে বাঞ্ছাপূর্ণকারী
।।
তাতে মীড মহোল্লাসে সব কাজ করে

মাঝে মাঝে বলে কথা প্রভুর গোচরে
।।
খৃষ্ট ধর্ম্ম মহাত্মাদি বলে বারে বার

প্রভু বলে এই ধর্ম্ম বড়ই সুন্দর
।।
মীডে বলে তবে কেন করণা গ্রহণ

প্রভু বলে আগে জানি সব বিবরণ
।।
কথা শুনি মীড তবে ভাবে মনে মন

সবুরে মেওয়া ফলে জ্ঞানীর বচন
।।
কিছু দিন দেরী করে ভাব বুঝে লব

পরে যা করিতে হয় তাহাই করিব
।।

 

ইতি উতি গতি তাঁর কিছুতে না যায়
দ্বিধাযুক্ত করে কাজ চিন্তা অতিশয়
।।
র্প্রভু দেখে মনে মনে মীডের সন্দেহ

বিশেষতঃ খৃষ্টধর্ম্ম নাহি লয় কেহ
।।
চক্রধর চক্রজাল করিল বিস্তার

চক্রজালে কেহ নাহি পাইল নিস্তার
।।
যত ধাতু অগ্নি মাঝে সকলি ফেলিল

স্বর্ণ ভিন্ন অন্য সব পুড়ে ছাই হল
।।
বিশুদ্ধ স্বর্ণেতে বাড়ে বহু উজ্জ্বলতা

এবে শুন বলি তবে সেই সব কথা
।।
দশভূজা মূর্ত্তি পূজা হত ওড়াকান্দী

বন্ধ করে প্রভু তাহা করে অভিসন্ধি
।।
সকলেরে ডাকি বলে শোন সর্ব্বজন

মুর্ত্তি পূজা করা দেখি শুধু অকারণ
।।
ডক্টর মীডের কথা কিছু মিত্যা নয়

মেটে-মুর্ত্তি পূজা করা বড়ই অন্যায়
।।
আরো আমি দিনে দিনে বুঝিতেছি সার

খৃষ্টধর্ম্ম তুল্য ধর্ম্ম নাহি কিছু আর
।।
হিন্দু থেকে এত কষ্ট বৃথা কেন সই

মনে বলে খৃষ্টধর্ম্মে আমি দীক্ষা লই
।।
এতদিন এই কার্য্য করিতাম শেষ

শশীর অপেক্ষা মাত্র জানিও বিশেষ
।।
এই কথা যবে করিল প্রচার

দেশবাসী লোক সবে লাগে চমৎকার
।।
কাণাকাণি জানাজানি হল ঘরে ঘরে

জনে জনে বলাবলি করে পরস্পরে
।।
হেন কথা বড়কর্তা কেমনে কহিল?
যদি সত্য হয় তবে নমঃশূদ্র ম
।।
ক্রমে কথা শুনিলেন শ্রীবিধু চৌধুরী

তিনি বুঝে প্রভু শুধু করিছে চাতুরী
।।
ক্রমে ক্রমে দলে দলে নরনারী গণে

সকলে উল্লেখ করে যার যাহা মনে
।।


শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free