মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

মতুয়াদের সামাজিক বিঁধি ও কিছু কথা-2- মৃতদেহের সৎকার ও তৎপরবর্তী সংস্কার

মতুয়াদের সামাজিক বিঁধি ও কিছু কথা-2

মৃতদেহের সৎকার ও তৎপরবর্তী সংস্কার

 

প্রচলিত মতে শ্রাদ্ধ্য বা মৃতদেহের সৎকারকল্পে সংস্কার সম্পর্কে মতুয়াদের মত কি? এটা নিয়ে মতুয়াদের মধ্যে মতের ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখা হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এবং এরপর ১০ দিন মালসা পুড়িয়ে শ্রাদ্ধ্য করা হয়। কেউ বলছে পোড়ান মতুয়া বিরোধী মত। কিন্তু এর পক্ষে শক্ত কোন যুক্তি দেখাতে কি তারা পারছে। পারছে না।

 

এখন দেখি লীলামৃত এসম্বন্ধে কি বলে। লীলামৃতে কয়েকটি মৃতদেহের সৎকার সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমে আসি রামকান্ত বৈরাগী যখন রথের নীচে আত্মোৎসর্গ করেন তখন,

“রামকান্ত ভক্ত সব একত্র হইল।

ঘৃতাগ্নি সংযুক্ত করি সৎকার করিল।।”

 

এখানে দেখা যাচ্ছে রামকান্তের মৃতদেহ ঘৃত ও অগ্নি সংযোগে দাহ করার কথা বলা হচ্ছে। এবং ব্রজনাথের ক্ষেত্রেও  একই  সংস্কার দেখা যায়।

“তার ভ্রাতাগণ যত, করিল অগ্নি সংস্কৃত, কবি কহে রবি ডুবে গেল।।”

 

এরপর আসি গোস্বামীগোলকের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে কবি তারক সরকার গোলক গোস্বামীর আজ্ঞামতে তার পুত্ররূপে তার সৎকার করেন। গোস্বামী গোলকের দেহ নবগঙ্গা নদীর জলে বিসর্জন দেওয়া হয়।

“হেন মতে চারিজন আসিলেন  ঘরে। মহোৎসব করিবেন কহে গোপালেরে।।

গোস্বামীর হুঁকা যষ্ঠি জয়পুর ছিল। রজনী প্রভাতে ওঢ়াকাঁদি পাঠাইল।।

সদ্য সদ্য মহোৎসব করিতে বাসনা। গোপালকে কহিলেন মনের কামনা।।

লীলা সাঙ্গ গোস্বামীর ত্যজিয়া ভূলোক। পুত্ররূপে মহোৎসব করিল তারক।।”

এখানে মৃতদেহ সৎকার করার পর মহোৎসব করার বিধান পাওয়া যাচ্ছে।

 

এরপর মতুয়ারা যখন লৌকিক সামাজিকতা ত্যাগ করেছে তখনকার কথা বলি। লীলামৃতের “ভক্ত মহেশ ও নরহরি শালগ্রাম” এই পয়ারে,

“মতুয়ারা নাহি করে স্বজাতিকে গ্রাহ্য। লৌকিক সামাজিকতা করেছেন ত্যজ্য।।

সামাজিক পুরোহিত হইয়েছে বন্ধ। মহেশ বলেন সামাজির ভাগ্য মন্দ।।

মহেশের ভাইঝির মৃত্যু হ’য়েছিল। পুরোহিত আনিবারে মহেশ চলিল।।

গ্রাম্যলোকে পুরোহিতে দিলে না আসিতে। পুরোহিত নাহি এল সে শ্রাদ্ধ করিতে।।

পুরোহিত, নিবাসী নিজামকাঁদি গ্রাম। স্বভক্তি অন্তরে দ্বিজ পূজে শালগ্রাম।।

পিছুভাগে দাঁড়াইল সে মহেশ গিয়া। দ্বিজ গেল পূজামন্ত্র সকল ভুলিয়া।।

ঠাকুর বলেন একি হইল বালাই। বিগ্রহ পূজিতে মন্ত্র হারাইয়া যাই।।

নরসিংহ শালগ্রাম পূজেন ব্রাহ্মণ। মন্ত্রভুলে যাই কেন ভাবে মনে মন।।

ভাবিলেন অমঙ্গল হইবেক ভারি। পিছুদিক চেয়ে দেখে মহেশ ব্যাপারী।।

একদৃষ্টে চেয়ে দেখে মহেশ পানেতে। নরসিংহ শালগ্রাম মহেশের মাথে।।

মূর্তিমন্ত নরসিংহ শালগ্রাম শিরে। মহাপ্রভু হরিচাঁদ তাহার ভিতরে।।

ব্রাহ্মণ বলেন আর নাহিক বিলম্ব। চল যাই আগে গিয়া করি তব কর্ম।।

অমনি উঠিল দ্বিজ মহেশের নায়। সমাধা করিল শ্রাদ্ধ আসিয়া ত্বরায়।।”

এখানে দেখা যাচ্ছে পুরোহিত ব্রাহ্মণ ডেকে শ্রাদ্ধ্য করার কথা স্বীকার করা হয়েছে।

 

লীলামৃত অনুসারে মৃতদেহ পোড়ান বা পুঁতে রাখার কোন নিষেধ দেখা যাচ্ছে না। তবে হয়ত সূক্ষ্মতত্ত্ব আমার অজ্ঞাত থেকে যাচ্ছে।

 

কিছুদিন আগে একবার শুনলাম মতুয়াদের মধ্যে ছোলা গ্রুপ আর আছোলা গ্রুপ নামে দুইটি গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে। ছোলাগ্রুপ শ্রাদ্ধ্যের পড়ে মাথা ছুলে ফেলে আর আছোলা গ্রুপ এর বিপক্ষে। নিজেদের মধ্যে  যদি এরকম বিভেদ থাকে তবে কিভাবে চলবে?

 

তাহলে মতুয়াদের ক্ষেত্রে মৃতদেহের সৎকার ও তৎপরবর্তী বিধানাবলী কি হবে? এবিষয়ে মতুয়াদের এখনি একমত হওয়া উচিৎ। লীলামৃত ও গুরুচাঁদ চরিত বিশ্লেষণ করে অতিসত্বর এবিষয়ের লিখিত সর্বজনগ্রাহ্য মত আশা করি।।

 

হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।


 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free