গান নংঃ ১১-৩০
১০ নং সংগীত
কর নামামৃত পান, কর হরি নামামৃত পান।
নামে রুচি হলে নামে করবে প্রেম দান।।
নামামৃত পান করিলে, সুনির্মল প্রেমফলে,
একেকালে ও আমার মন জুড়াবে পরাণ।।
যেই নাম সেই হরি, ভজরে মন নিষ্ঠাকরি,
নামের সহিত হরি, আছেন অধিষ্ঠান।।
হরিনামের মর্ম জানি, পাগল হল শূলপাণি,
বীণা যন্ত্রে নারদমুনি, করে গুণ গান।।
পতি মম মহানন্দ, গতি মম গোলোকচন্দ্র,
জ্ঞান মম তারকচন্দ্র, গুরুচন্দ্র ধ্যান।।
প্রাণ মন হরিচন্দ্র, পদে প্রেম মকরন্দ,
পান করলি না তার এক বিন্দু অশ্বিনী অজ্ঞান।।
১১ নং সংগীত
শ্রীধাম ওড়াকান্দি যাবি যদি গৌণ করো না।
গৌণ করো না আমার মন অলস হয়োনা।।
প্রেম বারুণী প্রেমের মেলায় যেতে হেলা করোনা।
গেলে ধর্ম্ম অর্থ মোক্ষ ফলে,ফলের কে করে গণণা।।
যে গিয়েছে সে পেয়েছে চেয়ে দেখ না।
পেল গোলোকের ধন গোলোক হীরামন ফিরে ঘরে গেলনা।।
কোলের ছেলে ভূমে ফেলে যত কুলের অঙ্গনা।
তারা কুল ত্যজিয়ে যায় গো ধেয়ে কুলে রইতে পারলে না।।
জাতি বিদ্যা মহত্বঞ্চ প্রেমের কন্টক পাঁচখানা।
প্রেমের বন্যা এসে গেল ভেসে, ও তার কিছু রল না।
মহানন্দ ডেকে বলে তারক রসনা।
সবে হরি বলে যায় গো চলে কেবল অশ্বিনী চললো না।।
১২ নং সংগীত
আমার হৃদকদম্ব তরুমূলে দাঁড়াও শ্রীহরি
আমার এই উৎসব, বামে বসাব, প্রেমরূপ রাই কিশোরী।
ভক্তিদুতি সাজিয়ে বৃন্দে, অনুরাগ তুলসী শ্রদ্ধা চন্দন দিব ঐ পদে,
আমার মনের সাধে, দেখব হৃদে, যুগলরূপের মাধুরী।।
অষ্ট সাত্ত্বিক অষ্ট সখিচয়, ভাবের চামর ঢুলাইয়া বাতাস দিয়ে গায়,
কেহ বিনা সূতে, মালা গেঁথে, সাজাবে যতন করি।
বাসনারূপ সাজিয়ে বড়াই, যুগল-মিল দেখব বলে আনন্দের সীমা নাই,
আমার কুমতি কুটিলার দর্প ঘুচাও হে দর্পহারী।।
হরিনামের বাঁশী করেতে লয়ে, আমার দেহ গোকুল, কর আকুল, বাঁশী বাজায়ে,
যেন অন্য ধ্বনি, নাহি শুনি, তোমার নাম বংশী শ্রবণ করি।
প্রেমানুগ মহানন্দ কয়, আমার শান্তি হরির যুগল-মিলন দে’খবি কে কে আয়,
গোঁসাই তারকচাঁদ কয়, এমন সময়, আশ্বিনী অলস ভারি।।
১৩ নং সংগীত
গুরুর প্রতি প্রেমভক্তি ভ্রান্ত মন তোর কেন হল না।
ছাড় কুটীনাটী ময়লা মাটি, মন করগে ষোল আনা।।
কর্ম্ম সূত্রে হরি হলে বাম, গুরু রাখলে রাখতে পারে যায় না পরিনাম।
গুরু গোঁসাই হইলে বাম, হরিচাঁদ রাখতে পারে না।।
গুরু বলতে দুটী অক্ষর হয়, গু বলিতে চিত্তগুহতমঃ রাশিময়।
রু‘ বলিতে রবি উদয়, হলে আর আঁধার থাকে না।
গুরু কৃষ্ণ অভেদ আত্মা হয়, তথাপি শ্রীগুরুর মান্য রাখলেন দয়াময়।
ও সে আপনি হরি, চারযুগ ভরি, করলেন গুরুর উপাসনা।।
জীবন যৌবন সপে গুরুর পায়, মৎস্যচক্র ভেদ করিল বীর ধনঞ্জয়।
সমর যিনি দ্রৌপদী পায়, সহায় ছিল কেলেসোনা।।
দয়া করি তারকচন্দ্র কয়, মন সপে দে অশ্বিনী তুই মহানন্দের পায়।
তবে প্রেমানন্দ হবে উদয় নিরানন্দ আর রবে না।।
১৪নং
তাল-কাওয়ালী
ভব ব্যাধি সারবি যদি নামৌষধি কর গ্রহণ।
আছে গুরুর কাছে নামৌষধি নিরবধি কর সেবন।।
সত্য ত্রেতা দ্বাপর গেল, নামৌষধি গোপন ছিল।
কলিতে তাই বিলাইল, যেমন রোগ ঔষধ তেমন।।
শুন আমার অবোধ মন, নামৌষধির অনুপান।
প্রেম মধুর রসায়ণ ভক্তি রস কর অর্পণ।।
গুরু বৈদ্য ঘরে ঘরে, নামৌষধি বিতরণ করে।
শ্রদ্ধাতে পান করলে পরে, ভব রোগ হবে বারণ।।
নিস্কাম পথ্য কর বিধান, তবে কর ঔষধি পান।
কাম পথ্য র্স্পশিলেরে প্রাণ, অবশ্য হবে পতন।।
তারকচাঁদ কয় বারে বারে, পথ্য ঠিক না করলে পারে।
কিসে ভবব্যাধি সারে, অশ্বিনী তুই অভাজন।।
১৫ নং সংগীত
হরিবল বলরে একবার নেশা ছুটবে নাগো আর।
নামামৃত পান করিলে পাবি কি বাহার।।
তত্ত্ব জানি ত্রিপুরারী, পঞ্চমুখে বলে হরি,
সোনার কাশী ত্যজ্যকরি, পাগল দিগম্বর।
চতুর্ম্মুখে পদ্মযোনি, হরিবলে দিন রজনী,
বীণা যন্ত্রে নারদমুনি, জপে অনিবার।
হরিনামের তুল্য দিতে, কি আছে অবনীতে,
হরি হতে হরিনামের মহিমা অপার।
হরিনাম সুধাসিন্ধু, পান করিলে তার একবিন্দু।
অনায়াসে ভবসিন্ধু, হয়ে যাবি পার।।
দয়াল মহানন্দ বলে, অশ্বিনী তুই এই সকালে,
হরি বলে তরী খুলে, চল প্রেম বাজার।।
১৬ নং সংগীত
আমার মন বড় দুরাশা।
বামন হয়ে হাত বাড়া’য়ে, চাঁদ ধরিতে কর প্রত্যাশা।।
যেন তেন চন্দ্র নয়’রে তমঃ সন্দ নাশা,
দেব-দৈত্য-নর, কীটাদি আর, যে চাঁদের করে ভরসা।।
যোগী ঋষি দিবানিধি যে চাঁদ বলে নেশা,
যে চাঁদ লাগি সর্বত্যাগী, শ্মশানে শিব বাঁধছে বাসা।।
গোলোকে ভূলোকে থাকে শুনতে কি তামাসা,
ভক্তের হৃদয় হচ্ছে উদয় হারে যার সরল হৃদয় দেল খোলাসা।।
চাঁদ বলে যে পড়ছে ঢলে হয়ে দশম দশা।
ও তার অন্তরে বাহিরে সদা দিতেছে রূপের ঝালসা।।
বলে স্বামী মহানন্দ অশ্বিনী তুই চাষা,
তোর কর্মদোষে ঘটল না চাঁদ কার পরে বা কর গোসা।।
১৭ নং সংগীত
সংসার সাগর রূপে ভাই মানব মীন সেজেছে,
কালরূপী এক ধীবর এসে, জঞ্জাল জাল পেতে রয়েছে।।
জঞ্জাল জালে হয়ে বন্দী, আমি এড়াতে না পাই সন্ধি, বসে সদাই কাঁদি,
কাল হল তোর দারুণ বিধি, জালের ফাঁস এটে দিতেছে।।
সাধু মোহান্ত মকর যারা, জালের ফাঁস কেটে যেতেছে তারা, হৃদয় শক্তি পোরা।
অনুরাগে তনু ভরা, শিরে ভক্তিকরাত আছে।।
সাধু মকরের সঙ্গ নিলে ও সে বন্দী রয়না জঞ্জাল জালে, সঙ্গে যায় গো চলে।
মুখে হরি হরি বলে, প্রোমানন্দে সুখে আছে।।
এমন ভাগ্য হবে, আমার মন মীন সাধুর সঙ্গ লবে, ভবের জঞ্জাল যাবে।
গুরু গোঁসাইর দয়া হবে, কর্মবন্ধন যাবে ঘুচে।।
গোলোকচন্দ্র মকর হয়ে, যাচ্ছে প্রেমসাগরে জোয়ার দিয়ে, মত্ত মাতাল হয়ে।
অশ্বিনী তুই আকুল হয়ে এবার ঝাঁপ’দে গোঁসাইর পাছে।।
১৮নং
তাল-ঠুংরী
যদি যাবি ওপার, কর শ্রীগুরু কান্ডারী,
হরিনামের তরী, হরিবলে তরী খোল এবার।।
যুতের হালির কাঁটা ধরি, এক নিরিখে ধর পাড়ি (মন আমার।)
ওরে অনুরাগে দাঁড় মারি, হরিনামে সারী গাও অনিবার।।
প্রোমবায়ু উঠবে মনের গুণে, ভক্তি বাদাম দাওরে টেনে।
তোল সাধন মাস্তুল যতনে, গুণের ডুবি লাগাওরে তার।।
ঐহিক সুখে দিয়ে মাত্রা, কররে মন ভবযাত্রা।
কর সাধুসঙ্গে শুভযাত্রা, পাবিরে আনন্দ বাজার।।
এই সকালে ধর পাড়ি, সাধু মহাজন বহর ধরি।
তবে অনায়াসে উঠবে পাড়ি, জলের বাড়ি লাগবেনা আর।।
গোঁসাই গুরুচাঁদকে কর নেয়ে, মহানন্দে যাওরে বেয়ে।
ওরে অশ্বিনী তুই কি সুখ পেয়ে, ভুলে রলি ভবে এবার।।
১৯নং
তাল-ঠুংরী
ওড়াকান্দি প্রেম বারুণী প্রেমের মেলা দেখসে আয়।
দেখবি যদি নাই বিবাদী পাগলচাঁদ আছে সহায়।।
গৌরলীলা সাঙ্গকরি, ওড়াকান্দি এলেন হরি দয়াময়।
প্রভুর কড়ার ছিল মায়ের সনে গো ঠেকে এলেন ভক্তের দায়।।
প্রভুর পিতা হন যশোমন্ত, শুদ্ধ শান্ত একান্ত সদাশয়।
প্রভুর দীক্ষাগুরু রামকান্ত (গো) যার বরেতে জন্ম লয়।।
সাঙ্গোপাঙ্গ লয়ে সঙ্গে, উদয় হলেন পরম রঙ্গে পুনরায়।
প্রভুর প্রিয়ভক্ত বিশ্বনাথ (গো) ব্রজনাটু সঙ্গে রয়।।
শ্রীরাধার ভান্ডারের প্রেমধন, জগতে করলেন বিতরণ গোরা রায়।
পুরায় প্রেমাভিনয় করি, গুরুচাঁদ হলেন ভান্ডারী প্রেমালয়।
হলেন গোলোকচন্দ্র আবাদকারী (গো) মহানন্দ প্রেম বিলায়।।
হীরামন পেয়ে প্রেম রতন, উষারিয়া করে ভোজন রসনায়।
হয়ে অনুরাগী সর্বত্যাগী (গো) জলের পর নেচে বেড়ায়।।
তারকচাঁদ প্রেম বণিত হয়ে, জাহাজ লয়ে বেড়ায় বেয়ে, ও কে নিবি আয়।
প্রেম যে নিয়েছে সেই মেতেছে (গো), পাথারে সাঁতার খেলায়।।
দশরথ মৃত্যুঞ্জয় লোচন, তারা হয় প্রেমের মহাজন এ ধরায়।
কত পূজক ধ্যানী কর্মী জ্ঞানী (গো), প্রেম দিয়ে তাকে ডুবায়।।
লক্ষীখালীর গোপাল সাধু, পান করে হরিনামের মধু মেতে যায়।
সে আপনি মেতে জগত মাতায় (গো), যার নামেতে বাঘ পলায়।।
হরিবর মনোহর তারা, ডুবল মুদি নয়নতারা প্রেম গোলায়।
তারা ডুবাইল পুরুষ নারী (গো), হরি চাঁদের প্রেম বন্যায়।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, অশ্বিনী তোর কর্ম মন্দ দুরাশায়।
কেন অভিমানের স্তম্ভ করি (গো), তুই বসে রলি এ সময়।।
২০নং
তাল-গড়খেমটা
আমার হরিচাঁদের প্রেমের মেলা আনন্দ নগরে।
এই বেলা ভাই করগো মেলা হরিনামের তরী করে।।
শ্রীহরির প্রেমের মেলা রয়েছে দোকান খোলা,
যতসব হরিবোলা, বেচাকেনা করে।।
এবার ব্রহ্মার বাঞ্ছিত হরিনাম বিকাইতেছে সস্তাদরে।।
মেলার গুণ বলব কত, দীনহীন কাঙ্গাল যত,
পেয়ে ধন মনের মত, নিচ্ছে সিন্দুক পুরে।
মেলায় যে গিয়েছে সেই পেয়েছে, দিতেছে ধন অকাতরে।।
ছিল ধন অনর্পিত, কলিতে সমর্পিত
জীবের সৌভাগ্য কত, কে বলিতে পারে।
শ্রীরাধার খাস ভান্ডার ভেঙ্গে দিতেছে ধন অকাতরে।।
সুরসিক ভক্ত যারা, প্রেম রসে তনু পোরা,
সওদাগর হয়ে তারা ভক্তি নিক্তি ধরে।
এবার মন বুঝে ধন করছে ওজন এক মনের কম দেয়না কারে।।
গুরুচাঁদ প্রেমভান্ডারী, গোলকচাঁদ প্রেম প্রহরী,
তারকচাঁদ ধরে দাঁড়ি দিচ্ছে ওজন করে।
দয়াল মহানন্দ জাহান পূরে দিতেছে ধন ঘরে ঘরে।।
ভন্ড পাষন্ড যত, ধন পেয়ে হল মত্ত,
ত্যজে সংসার অনিত্য, সদায় নৃত্য করে।
এবার রিপুর বশে, কর্ম্ম দোষে, অশ্বিনী ধন পেলনারে।।
২১নং
তাল -একতাল
হরিনাম বলরে একান্তে।
প্রাণ সঁপে দেরে মন হরিপদপ্রান্তে।
সমর্পিত দেহ হলে, অনর্পিত প্রেম ফলে,
হরিচাঁদ হৃদয় দোলে, থেকনা আর ভ্রান্তে।
হরি অনুগত হলে, তারে প্রণমে কৃতান্তে।
হরিনাম বড়ই মধুর, নিকটে নয় বহুদূর,
যে ভজে সেই সে চতুর, ভাগবতে পাই শুনতে।
যেই নাম সেই হরি বলে সাধু মোহান্তে।।
সাধু ভাগবতের প্রমাণ, সে প্রমাণ নয় অপ্রমাণ,
কররে নাম সুধাপান সুখ পাবি যে অন্তে।
পঞ্চমূখে পরম সুখে নাম জপে উমাকান্তে।।
নাম জপা ভক্ত যারা, সুধাপান করে তারা,
প্রেমেতে মাতোয়ারা, কে পারে তাই চিন্তে।
আপনি মেতে জগৎ মাতায় হরিনাম মহামন্ত্রে।।
শ্রীগুরুর বাক্য ধর, অনিত্য তর্ক ছাড়,
এ দেহ সূক্ষ কর, যাবে ভব চিন্তে।
অশ্বিনী তোর মানব জনম গেল কান্তে কান্তে।
২২নং
তাল-গড়খেমটা
ভূতলে চাঁদ নেমেছে ভুবন মোহন।
হ’ল চাঁদের আগমন, হরিচাঁদের আগমন,
গেলে শ্রীধাম ওড়াকাঁন্দি পাবি দরশন।
সত্য ত্রেতা দ্বাপর গেলে, পূরিতে পূর্ণশশী বাকী ছিল,
এবার জীবের ভাগ্যোদয়, হ’ল পূর্ণ চাঁদ উদয়,
জীবের চিত্ত তমঃ সন্দ করিতে মোচন।।
ভকত চকোর যারা, হরিচাঁদের সুধাপানে মাতোয়ারা,
হয়ে ভাবতে বিভোল, হরিনামেতে পাগল,
প্রেমে তনু ডগ মগ করে দু’নয়ন।
পূর্ববঙ্গ বাকী ছিল, পূরাইতে ভক্তের বাঞ্চা পুনঃ এল,
সঙ্গে ল’য়ে ভক্তগণ, প্রেম রসেতেমন,
জগতে প্রেমসুধা করে বরিষণ।।
লেগে হরিচাঁদের কিরণ, মা’তল তারক মহানন্দ গোলোক হীরামন,
হ’য়ে মত্ত মাতাল, মাতায় আকাশ পাতাল,
এবার দুঃখী তাপীর জুড়াইল তাপিত জীবন।।
তারকচন্দ্র ব’লছে কাঁদি, উদয় হ’লরে চাঁদ ওড়াকাঁন্দি,
দয়াল মহানন্দ কয়, সে চাঁদ দে’খবি কে কে আয়,
অশ্বিনী দে’খলি না চাঁদ ভরিয়া নয়ন।।
২৩নং
তাল-গড়খেমটা
হরিচাঁদ রূপে পরাণ হ’রে নিল।
পরান হ’রে নিল নয়ন ভূলে গেল,
এমন মোহন মূরতি তনু কেবা গড়িল।।
বাঁকা নয়ন জোড়া ভুরু, আজানু লম্বিত বাহু কটি সরু,
তার রুপেরই ছটায়, কোটি চাঁদ পদে লোটায়,
হরিচাঁদ হেরে চাঁদের কলঙ্ক গেল।।
হেরে হরিচাঁদের ছবি, অধৈরজ হ’লরে প্রাণ ব’সে ভাবি,
আমার একি হ’ল সই, আমি কিসে ধৈর্য্য রই,
হরিচাঁদে হে’রে আত্মা তন্ময় হ’ল।।
সুধাসিন্ধু ম’থে বিধি, নির্জ্জনে গ’ড়িছে সেই গুণ নিধি,
রূপের তুল্য দিতে নাই, গুনে বলিহারি যাই,
ওরূপ নয়ন পথের ছিদ্র দিয়ে হৃদয়ে পশিল।।
নয়ন দিয়ে হরিচাঁদে, দিবানিশি হরি বলেপরাণ কাঁদে,
ও তার রূপ খানি যেমন নামটি তেমন,
জগতের সুধা এনে নামে মাখিল।।
মহানন্দ চকোর হ’য়ে, পাগল হ’য়েছে চাঁদের সুধা পিয়ে,
গোঁসাই তারকচন্দ্র কয়, হ’ল হরিচাঁদ উদয়,
অশ্বিনীর ভাগ্যে সে চাঁদ কই ঘটিল।।
২৪নং
তাল-একতাল
মনে এক বাঞ্ছা ছিল ঘ’টলনা আমার।
আমা হৃদি পদ্মে হরিচাঁদে সাজায়ে মিলাব চাঁদের বাজার।।
ভক্তগণ হইয়া তারা, আমার হরিচাঁদকে ঘিরিয়ে সবে দাঁড়াবে তারা,
ও সেই রূপে দিয়ে নয়ন তারা, আনন্দে রূপ রসে খে’লব সাঁতার।।
প্রেম কান্তি শান্তি জননী, আমার হরিচাঁদের বামে এসে দাঁড়াবেন তিনি।
দে’খব চাঁদের সঙ্গে চাঁদবদনী, রূপ দেখে যাবে মনের অন্ধকার।।
আমার মন মঞ্জরী হ’য়ে গেঁথে চাঁদের মালা চাঁদের গলে দিবে দোলায়ে।
দেবী শান্তি মায়ের আজ্ঞা পেয়ে, প্রেম সেবায় মত্ত রব অনিবার।।
মনে আমার বড় অভিলাস, সহস্রা কুঞ্জেতে সাজাইব মহারাস।
হ’বে শান্তি হরিরূপে প্রকাশ, ঐরূপে করেন যদি রাস বিহার।।
প্রেমানুগ মহানন্দ কয়, সেযে ভক্তের বাধ্য ভবারাধ্য ভক্তের মন যোগায়।
এবার সাধন গুণে হবে সদয়, অশ্বিনী সে সাধনা নাই তোমার।।
২৫নং
তাল-একতাল
কলিতে হরিচাঁদ হ’ল উদয়,
গেল চিত্ত সন্দ, কর্ম্ম বন্ধ, আর কি জীবের আছে ভয়।
ভক্তগণ তারা হ’য়ে হরিচাঁদকে ঘিরিয়ে, রয়েছে কিবা শোভা তায়,
জীবের চিত্ত চকোর হ’য়ে বিভোর প্রেমানন্দে সুধা খায়।।
লেগে সেই চাঁদের কিরণ, গোঁসাই গোলোক হীরামন, মহানন্দ তারক মৃত্যুঞ্জয়;
তারা সুধা পিয়ে, মত্ত হ’য়ে, নাম দিয়ে জগত মাতায়।
তিনটি যুগ গত ’হল পূরিতে চাঁদ বাকী ছিল, তাইতে চাঁদ এর পুনরায়;
এবার পুরা’তে ভক্তের বাসনা তাইতে অবতীর্ণ হয়।।
এল চাঁদ ওড়াকাঁন্দি, যার জন্যে নিরবধি, ভক্তগণ কেঁদে বুক ভাসায়;
এবার কলির মানুষ, ক’রতে মানুষ, হ’ল যশোমন্ত তনয়।।
তারকচাঁদ ডেকে বলে, অশ্বিনী মায় জালে, ভুলে কেন র’লি দুরাশায়;
ও তোর মানব জনব ধন্য হবে, চাঁদরে কিরণ লা’গলে গায়ে।।
২৬নং
তাল-একতাল
ত্বরায় চল ভবপারে যাই, হরিনাম তরনী এল ভাই।
হরিনাম তরণী নৌকা খানি কান্ডারী দয়াল নিতাই।।
হরিনামের তহরণী, বোঝাই প্রেম পরশ মণি,
ভক্তি রতন থরে থরে রূপের ছৈ খানি;
তাতে শ্রদ্ধা ক’রে, চ’ড়লে পরে, পরে যেতে বাধা নাই।।
আমার হরি দয়াময়, ঠেকে জীবের পারের দায়,
কলির শেষে বঙ্গদেশে হ’য়েছে উদয়;
মুখে বল্লে হরি, নাইকো দেরী, পার করে আপত্তি নাই।।
বড় দয়াল অবতার, হয় নাই হবে নারে আর,
অনর্পিত নাম দিতেছে নিয়ে পাপের ভার।
ও সে বিনামূল্যে পার ক’রে দেয় এমন দয়াল দেখি নাই।।
যা’হোক তিন যুগেরই পর, ঘাটের উঠে গিছে কর,
হরিচাঁদ পাটনি এল অনেক দিনের পর;
কত দুঃখী তাপী পার করে দেয়, ভব পারের মাশুল নাই।।
দয়াল মহানন্দ কয়, পারে কে কে যাবি আয়,
পুস্পবন্ত যোগ হয়ে’ছে, জীবের ভাগ্যোদয়,
গোঁসাই গুরুচাঁদের দয়া বিনে অশ্বিনী তোর উপায় নাই।।
(হরিবল বলরে)
২৭নং
তাল-রাণেটী
কি ধনে তুষিব গুরু দিবানিশি ভাবি হৃদয়;
আমি তোমার ধন তোমাকে দিয়ে বসে আছি তোমার আশায়।
আমার বলতে নাইক হেন ধন (হারে) কি ধনে তুষিব গুরু তোমার ঐ চরণ।
তুমি আমার সর্ব্বস্ব ধন, জীবন যৌবন দিলাম তোমায়।।
এদেহের মালিক তুমি হও, দিতে যে ধন বাকী থাকে সে ধন তুমি লও।।
তোমার শীতল প্রেম সাগরে ডুবাও এই বাসনা করি সদায়।।
এ ব্রক্ষ্মান্ডে আছে যত ধন, সকল ধনের কর্ত্তা তুমি ব্রক্ষ্ম-সনাতন;
তুমি বায়ু রূপে জীবের জীবন, রক্ষাকর দীন দয়াময়।।
অনন্ত মহিমা তোমার, জীবে কি বুঝিতে পারে শিবের বুঝা ভার।
তুমি কখন সাকার হও নিরাকার, আবক্ষ ব্রক্ষ্ম জ্যোতির্ম্ময়।।
২৮ নং
তাল – গরখেমটা
চিত্ত পত্র লিখে পাঠাও দেখি শ্রীগুরুর কাছে।
লিখ বিনয় পূর্বক, চির সেবক, গুরু ধন তোমারই কি প্রাণ বাঁচে।।
নয়ন জলে বানায়ে কালী, মনপাখি পাখারূপ কলম করে লও তুলি।
লিখে পাঠাও মনের কালী, যাতে তোর অন্তরের কালী ঘুচে।।
শ্রীপাদপদ্মে এই নিবেদন, কোন দিন যেন তলব চিঠি পাঠায় সে শমন;
সেই চিঠি করিতে বারণ, গুরুধন তোমার বই আর কে আছে।।
শ্রীচরণে এই প্রার্থনা, জন্ম মৃত্যু জরা ব্যাধি বিধির ঘটনা;
অন্তরে মর এই বাসনা, যাতে সেই বিধির লিখন যায় মুছে।।
যে দিন পদে শরণ ল’য়েছি, সেই দিন হতে এ জীবনে মঙ্গলে আছি;
একবার দেখা পেলে প্রাণ বাঁচে, অধীনের নিবেদন পদে যাচে।।
গোঁসাই তারকচাঁদের এই অভিলাষ, অশ্বিনী তোর মানব দেহ ক’রব আমি খাস;
এবার মন দিয়ে হ’গে গুরুর দাস, স্বামী মহানন্দ সহায় আছে।
২৯ নং
তাল – ঠুংরি
অপরূপ এক মানুষ এল ভাই, এল ওড়াকান্দি।
বাকা নয়ন জোড়া ভুরু, হেরে দিবানিশি কাঁদি।।
আজানুলম্বিত বাহু, তারে গ্রাস করেছে প্রেম রূপ রাহু, সঙ্গে ভক্তবহু;
দে’খলে স্থির থাকে না কেহ, তার নয়ন বানে বিন্দি।।
দেখ তার রুপের চেহারা, কেউ বলে সই শচীর গোরা, কেউ কয় মাখন চোরা।
নব রসে তনু পোরা, বদন জিনি মদন ছাদি।।
কি কব সেই রুপের কথা, দে’খলে পতি ছাড়ে পতিব্রতা খেয়ে ধর্মের মাথা।
শ্রী চরণে নোয়ায় মাথা, তাঁরা ত্যাজিয়া বেদ-বিধি।।
হেরিয়া তার মুখ শশী, যোগ ভুলে যায় যোগ ঋষি পদে লোটায় আসি।।
বলে গোঁসাই রাখ দাসী, মোদের ছজন ভজন বাদী।।
বলে গোঁসাই মহানন্দ, এবার ঘুচল জীবের চিত্ত সন্দ গেল সাধন দ্বন্দ্ব
অশ্বিনী তুই অজ্ঞানান্ধ, গুরুর চরণে হও বন্দী।।
৩০ নং
তাল – গরখেমটা
সাধ করে এই ভবে এসে হলিরে মায়ার মুটে।
গুরুদত্ত পরমার্থ নিলরে তোর সব লুটে।।
মায়াবিনী পা’তল মায়া জাল, থেকরে সামাল,
মায়াজালে বন্দি হলে ঘটবেরে জঞ্জাল।
যেন মাকড়ের জালে মক্ষী বন্দী পড়ে শেষে সংকটে।।
যদি মায়াজাল এড়াতে চাও, করে জ্ঞানের অসী লও,
গুরু পদে মন ম’জায়ে মহানন্দে রও।
শেষে যে ধন চাবি, সেই ধন পাবি, থাকবিরে প্রেমের হাটে।।
হবে দেহে গুরু কৃপা বল, ছার মনের খল;
হরির নাম পুঁটলি কর পথেরই সম্বল।
ঘাটের ঘাটমাঝি সে হবে রাজি পার করবে নিষ্কপটে।।
যদি মন কাটবি মায়াডোর, প্রেমানন্দে হও বিভোর;
শ্রী গুরুর পাদপদ্ম ফুলে হওরে ভ্রমর।
শেষে প্রেমের মধু পান করিবি, লাগবেরে বড় মিঠে।।
দয়াল মহানন্দ কয়, শোনরে দুরাশয়,
অশ্বিনী তোর মানব জনম বিফলেতে যায়।
এমন দুর্লভ জনম পেয়েছিলি, গেলি ভুতের বেগার খেটে।।