মতুয়া দর্শন
শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ মতুয়া সমাজ
মতুয়া মত সত্য পথ

গান নং ৩১~৪০

গান নং- ৩১
মনরে, অভাব যায় না, স্বভাব না হলে।
মাধুর্য প্রেমভক্তি রসে, যদি হৃদে কুসুম ফোটে, 
বিরাজ করে শতদল, পাক পূর্ণ সাগর জলে।
 
নিরিখ ধরা মানুষ ধর, সেই নিরিখে দৃষ্টি কর, 
হরি বলে তরণী 'পর, উঠে পড় কুতুহলে।
 
কর্মবিহীন হরিনাম, কালে কালে ঘটায় দুর্নাম, 
হাতে কর্ম মুখে নাম, জয়ী হও সবে কর্মবলে।
 
সত্য ধর্ম সৎ কর্ম, যেন সবে মূল মর্ম, 
সত্যবিহীন সব অধর্ম, খ্যাত আছে মহিতলে।
 
নারী মাত্র মাতৃ মনন, নহে ত সহজ সাধন, 
নিবৃত্তপুরে কর গমন, বাড়বে শক্তি মাতৃ বলে।
 
উচ্চাকাঙ্ক্ষা উচ্চাভাব, দিনে দিনে বাড়ায় অভাব,
সাধ্য সাধনে রাখ সদ্ভাব, পাবে শান্তি দুঃখানলে।
 
আকাশ কুসুম চিন্তা করা, সাধন পথে পিছিয়ে পড়া,
শূন্যতে হাহাকার করা, আর কিছু না তাতে মিলে।
 
সমর্পিত ভাব দেহ, দেহের মালিক অন্য কেহ,
তুমি তাহার অনুচর রহ, কর্ম কর তার কৌশলে।
 
শূন্য মার্গে সাধন করা, এ নয় মতুয়ার ধারা, 
কর্ম করে বাঁচা মরা, স্বরূপ শক্তি সহায় বলে।
 
বৃন্দাবনের কপাল মন্দ, হয়ে র'ল মায়ায় বদ্ধ,
হরিকে করতে আবদ্ধ, তার শক্তি নাহি মিলে।
 
গান নং- ৩২
কর সত্য অঙ্গীকার, ছাড় মিথ্যা ব্যবহার।
এক হরিতে বিশ্বাস ভিন্ন, যত সব অনাচার।
 
হরি ভিন্ন অন্য পূজা, সিন্ধুতে বিন্দু খোঁজা, 
সহজ ছেড়ে কঠিন বোঝা, মতুয়ার পক্ষে ব্যভিচার।
 
কত দেবদেবতায় ডাকলে এতদিন, হলে হীন হতে হীন প্রতিদিন, 
এবার দীনবন্ধু করতে অধীন, ত্যাগ করিলেন আচার বিচার।
 
জাত বিচারের গ্যাড়াকলে, ছিলে জাত বামুনের পদতলে, 
হরি-গুরুচাদঁ উদ্ধার করলে, সবাই জান সমাচার।
 
বিদ্যা শিক্ষার উর্ধগতি, সহায় হয়নি লক্ষ্মী সরস্বতী, 
দুর্গতিনাশিনী ঘটালে দুর্গতি, গুরুচাদঁ করলেন প্রতিকার।
 
ধর্মক্ষেত্রে সবাই সমান, তবু শুদ্র পায়নি নামের বিধান, 
অনর্পিত সেই হরিনাম, হরিচাদঁ অর্পিল এবার।
 
বনাশ্রিত সন্ন্যাস রীতি, ত্যজিয়া তার গতি প্রকৃতি, 
এই সংসারে চতুরাশ্রম গীতি, গার্হস্থ্য বিধান করলে সংস্কার।
 
স্বভাবে হলে সদাচারী, হবে নারী নিয়ে ব্রহ্মচারী, 
স্বভাব গুণে ব্যাভিচারী, জানাইল সত্য ব্যবহার।
 
আচার বিচার তুচ্ছ ব্যাপার, মন না হলে সংস্কার, 
প্রেমাস্পদ প্রেমের আধার, দুয়ে মিলে হয় সদাচার।
 
ভার দিলে তাহার উপর, হরি করে তাকে সনির্ভর, 
বৃন্দাবন হল কেমন বর্বর, করিলে না শ্রীচরণ সার।
 
গান নং- ৩৩
গাহ মানুষের জয়গান,
ভক্তিযুত চিত্তে জান, মানুষ ভগবান।
হরিচাদঁ মানুষ রতন, গুরুচাদঁ তাঁহার মনন, 
করজোড়ে কর বন্ধন, উথলে উঠবে প্রেমবান।
 
মানুষ যেজন ভবের মাঝে, 
কায়োমনোবাক্যে আছে, তার ঐক্যতান।
সেই মানুষের বাক্য নিলে, 
চিত্ত মাঝে সকল মিলে, বয় আনন্দবান।
সেই মানুষে চেনার উপায়, সুখ-দুঃখে সমান রয়, 
দেখলে তারে জাগে ভক্তিবান।
 
কারো বিপদ হলে পরে, 
অন্যজনে উদ্ধার করে, দেখতে পাওয়া যায়।
প্রেমপ্রীতি স্নেহ বন্ধনে, 
ঈশ্বরত্ব জাগায় মনে, মানুষে মানুষ মিলায়। 
ডাকলে যারে কাছে পাই, আপন বলে জানা চাই,
রাখতে হবে এই সূক্ষ্মজ্ঞান।
 
ঈশ্বর হয় সর্বশক্তিমান, 
মানুষের জ্ঞান অসীম পরিমাণ, বিচার অনুমিত।
জ্ঞান ভক্তি দুয়ে মিলে, 
চিত্ত রাখ একস্থলে, হবে শক্তি প্রকাশিত।
জানি না তাই শক্তি নাই, জানলে কভু অভাব নাই, 
একাগ্রতা শক্তি করে দান।
 
পরকালের ভাবনা ভেবে, 
আর কিরে তোর হবে ভেবে, শূন্যতায় গমন।
যা কর তা কর সবে, কর্মফল সবাই পাবে, সত্য অনুশাসন।
তারক চাঁদ তাই বলছে রাগে, বৃন্দাবনের পুরোভাগে,
ভজরে মানুষ অনুরাগে, পাবি পরিত্রাণ।
 
গান নং- ৩৪
ভাল কথা বললে লোকে হয় না ভাল,
কাজ করলে ভাল, হবে তোমার ভাল, 
সবাই জানবে তোমায় ভাল।
 
আজ যুগ হয়েছে এমন, কথায় মিলে উচ্চ আসন,
দিতে পারলে মিষ্ট ভাষণ, সবাই হয় পদস্থল।
 
মিষ্টি কথায় ক'দিন ভুলে, উৎপাটিত হয় স্বমূলে, 
ঘূর্ণিবাতের ঝড় এলে, মুখটি দেখায় বেজায় কালো।
 
সহজ সরল চিন্তা করা, নেই ত আর মানুষের ধারা, 
গোলক ধাঁধার ফাঁদে পড়া, স্বভাব হচ্ছে এলোমেলো।
 
সবার ভাল হবে কিসে, ভাবে না কেউ বসে বসে, 
মরছে ভুগে চিন্তা বিষে, ভবিষ্যত অগোছালো।
 
অহঙ্কারে হয়ে মত্ত, হারায়েছে মূল তত্ত্ব, 
নিজে বড় এই সত্য, আর সবারে নীচে ফেলো।
 
নিজে বড় হবে বলে, গর্হিত কাজ ছলেবলে, 
করছে দেখ কত কৌশলে, বলছে কেবল আমি ভালো।
 
তারক চাঁদ বলবে কত, কর সৎ চিন্তা অবিরত, 
সৎ কাজে হও অনুগত, মনে জ্ঞানের বাতি জ্বালো।
 
বৃন্দাবনের আপন ঘরে, আত্মচিন্তা সদাই ঘোরে, 
ভালো হবে কেমন করে, তোমরা সবাই তারে বলো।
 
গান নং- ৩৫
কেন কর ব্যবধান
আজ যাকে ভবিষ্যত বলছো, কাল হবে বর্তমান।
 
ভবিষ্যতের পথ করতে সুগম, চিন্তা কেন আগম আগম, 
কালকে কোথায় করবে গমন, করেছ কি তার সন্ধান।
 
আজকে ভাল কাজটি করলে, কাল ভাল হয় তাহার ফলে,
কর্মবিহীন চিন্তায় ম'লে, কেমনে হবে মুশকিল আসান।
 
কত লোকে ভাবে কত, ভবিষ্যতকে অবিরত, 
রাখতে চায় যে মনের মতো, ব্যার্থতায় হয় তাহার প্রমাণ।
 
কত রাজা জমিদারে, কতকিছু করিল সংসারে, 
তাদের স্মৃতিভষ্ম দেখায় সবারে, চিরস্থায়ী নয় ধনবান।
 
তবুও মোরা ভুল করি, নিজ হাতে ভবিষ্যত গড়ি,
অহঙ্কারে দেই গড়াগড়ি, মাটির সাথে করি ব্যবধান।
 
সব ভবিষ্যত যাহার হাতে, রাখ তারে আসনেতে, 
মাথা নুয়ে চরণ পেতে, তারে কর অবধান।
 
বৃন্দাবনের এই নিবেদন, কর্মে কর মন নিবেশন,
চিত্তে কর হরি স্মরণ, চিন্তার করে চির অবসান।
 
গান নং- ৩৬
(আমি) জানি বুঝি সবকিছু ভাই, কর্মে করি পদস্খলন
বারে বারে মরার আগে, আমার ঘটিল মরণ।
 
সত্যবাক্য বলিবারে বলে মহাজন
তবু সত্য ছেড়ে করি মিথ্যা বরণ।
বল তোমরা এমন মরণ, মরব আর কতক্ষণ।
 
পরনারী মাতৃজ্ঞানে কর সাধনা, শ্রী হরিচাদেঁর বাণী,
বিবেক বলে মানি মানি, মন করে ভাই কানাকানি,
বাক্য লঙ্ঘন মরন জানি, তবু থাকে না স্মরণ।
 
মাতা পিতা শ্রেষ্ঠ গুরু, যেখানে সাধনা শুরু, 
কর ভক্তি শ্রীপদযুগোলে।
(আমি) তাদের করি অবহেলা, সাধন করি সারা বেলা,
ভাবি, দোষ ঘটিল এই কপালে।
এমন কথা যদিও জানি, করতে নারি কভু পালন।
 
সর্বজীবে সমজ্ঞানে কর প্রেম আলিঙ্গন 
এই বিধান হয় সব মতুয়ার সাধন
আমি জীবে জীবে করি বিভেদ,
লই না ঐ শ্রীচরণে শরণ।
 
চরিত্র পবিত্র ব্যক্তি হয় সাধনের যোগ্য 
উপরে দেখাই পবিত্র, ভিতরে উপভোগ্য, 
ঐই সাধনায় নয় আমি যোগ্য,
জানিলেও করি না বাক্য পালন।
 
ষড়রিপুকে বাধ্য করে, চলে যাও সাধন সমরে,
করতে সবার আত্মোন্নতি।
(আমি) নিয়ে তাদের পরামিশে,চলি তাদের করা আবেশে,
সদা করি সাধনের ক্ষতি।
এসব জ্ঞান জানা আছে, করি না ত সদ আচরণ।
 
পরধর্মে নিন্দা বারণ, তবু করি আয়োজন, 
শুধু তর্কের খাতিরে।
নিজের ধর্মে জ্ঞান হল না, অন্য ধর্মে পণ্ডিতমনা,
সদা দেখাই বাহিরে।
আমার দেখে শুনে জ্ঞান হল না, করি বিরুদ্ধাচরণ।
 
বাহ্য অঙ্গে সাধুসাজ করিও বর্জন
জেনেও তা করি সর্বদা ধারণ,
ভাল পোষাক গায়ে দিয়ে, 
মোটা মালা গলে পরিয়ে,
করি সাধুর আচরণ।
 
হাতে কাজ মুখে নাম করিও সবাই
আমি কর্মে করে হেলা, নামে মেতে রই
তাই নামে করে না, সাধোন্নতি
জানলেও করলেম না, তাহার মনন।
 
ঘরে ঘরে হরিমন্দির করিও প্রতিষ্ঠা
সবারে বলিনু, নিজে করি নাই প্রতিষ্ঠা,
বাহিরে কর বা না কর, 
হরিমন্দির হৃদয়ে করহে ধারণ।
 
নিত্য কর প্রার্থনা, নিত্য দেনা শোধ
করিও সবাই যদি, থাকে শুদ্ধ বোধ।
আমার থাকতে জানা, মানতে পারি না,
করি না সূক্ষ্ম পথ দরশন ।
 
কর ঈশ্বরে আত্মদান, কর তুমি সব সমর্পন,
বারে বারে সব দিয়ছি,
তবুও নিজের বলে করি ধারণ।
এ আবার কেমন সমর্পণ, অতি অসাধারণ, 
বদ্ধজ্ঞানে হয় না বরণ।
 
তাই বলি ভাই, বলি শোন, জানার ভান করিস না।
জানা জ্ঞানে উপলব্ধি তৃণসম কর সাধনা।
বৃন্দাবনের এই ধারণা সবে শোন সর্বজন।
 
গান নং- ৩৭
ও দয়াল রে,
আমায় ঘুরাও কেন পথে পথে? 
আমার জীবন গেল খুঁজতে তোরে,
আমি পাই না খুঁজে কোন মতে।
 
শুনেছি ঐ সাধুর মুখে, তুমি থাক সবার বুকে,
সর্বস্থলে সবসময়ে, বিরাজ করে অসীম সুখে,
আমার সুখের ঘরে ব্যাঘাত ঘটে, কোন সে আঘাতে ।
 
দুঃখই যদি দিবে মোরে, সুখের আশা জাগাও ফিরে,
সুখ দুঃখের এই দোলাচলে, জীবন কাটে ঘুরে ফিরে,
আমি বসে রলেম তোমার আশায়, উঠব কবে তোমার রথে।
 
এই নিবেদন করি শেষে, আমি যদি যাই মিশে,
আঁধারের গোলকধাঁধায়, ডেকে নিও ভালবেসে, 
বৃন্দাবনের জীবন রবি, ডুবে গেলে সাঁঝের রাতে।
 
গান নং- ৩৮
আর দেখব কত রঙ্গ 
কর্ম বিমুখ ভণ্ড যত গোঁসাই সেজেছে।
তারা হরির দোহাই দিয়ে দিয়ে দাঁড়ি পাকাইছে।
 
শাস্ত্র গ্রন্থ বলে কত, ঠিক নাই তার দাড়ি কমা,
ভুল শিখায়ে দিনে দিনে ভুলটা কেবল করছে জমা,
বললে কিছু দোহাই দিবে , হরিচাদঁ বলেছে।
 
হাতে কাম আর মুখে নাম, লীলামৃতের বাণী,
এরা মুখে করে ফটোর ফটোর, কাজেরে ঘৃণ্য মানি,
মন মুখে নাই এক ঐক্য, বিড়ি ছেড়ে গাঁজা ধরেছে।
 
দলে ভারি করতে তারা দলের মাঝে বাধায় গোল
পাড়া ছেড়ে অপাড়া যায়, করে কেবল কলোরোল,
দেশ বিদেশে বেড়ায় ঘুরে, সারা দেশে শিস্য করেছে।
 
গুরু বেড়ায় ঘুরে ঘুরে, শিস্য থাকে বহুদূরে, 
জ্ঞান কর্মের অনুশীলন, তারা ধার না ধারে,
কানে মন্ত্রী দিয়ে ভাবে, পরকাল সুখে ভরেছে।
 
পড়লে কলে যাতাকলে, মন্ত্রের দোহাই মানে না,
সময় থাকতে কর্ম ধর, বিপদ হবে না।
গুরুচাদেঁর আদর্শ মত, নামে কামে হ্ও রত,
বৃন্দাবনের মনের গতি, সরলের উল্টো চলেছে।
 
গান নং- ৩৯
ভুতলে এল হরিচাদঁ , পূর্ণ হরিচাদঁ 
পূর্ণ কৃপা বরষিয়া, করল পতিত আবাদ।
 
তোরা আয়রে ধেয়ে, যত আছিস, পতিত জন
উত্তরণের মন্ত্র নিবি, তোদের তরে আছে চেয়ে শ্রীগুরুচরণ।
সত্য বাক্য সংগী করে করবি মহারণ 
শিক্ষা তোদের পথ দেখাবে, রাখিসরে স্মরণ ।
 
দলে বলে যুক্ত হলে, বাড়বে তোদের শক্তি 
দুর্বলের যত দোষ, শক্তিমানে করে ভক্তি 
কর্মহীনে কেহ নাহি করিবে সমাদর
জ্ঞান ভক্তি কর্ম দিয়ে করিবে বিচার।
 
পিতামাতা গুরুজন ঈশ্বর সমতুল্য 
প্রতিপদে বাক্য মেনে কার্য করিবে।
পেলে তাদের শুভাশিস 
ধুষর মরুর বুকে সোনার ফসল ফলিবে।
 
গান নং- ৪০
ভাব জেনে ভাই ধর পাড়ি, মহাজনের বচন
আমি ভাব না জেনে ধরলাম পাড়ি,
মাঝ দরিয়ায় র’লেম পড়ি, কাঁদি অনুক্ষণ।
 
যারে আমি ভালবাসি, তার ভাব বুঝতে নারি,
মোর ভাবনায় তারে ভাবি, তার ভাবনার নাই দিশারী।
তারে যদি ভালবাস, তার ভাবনা ভাব বসি,
নিজস্বতা দিয়ে জলাঞ্জলি, তারে কর অনুসরণ।
 
কর কৃষ্ণ পীরিত, রাধাভাবের হও বিপরীত,
ধর কৃষ্ণ চরিত, হও তার স্বভাবের অনুগামী।
তার বাক্যের সঙ্গ করে, জীবন কাটাও নিবৃতপুরে,
কাম-কামনার উর্ধে থাক, জান রাধা প্রেমের করণ।
 
হব তার অধীন, তার প্রেমে সমাসীন,
এই ত প্রেমের রীতি, প্রেম চির নবীন।
বৃন্দাবনের বুঝার ভুল, তারে করতে অধীন,
করে চেষ্টা চিরদিন, প্রেমাংগনে করে মহারণ।
 

 
শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শ তথা মতুয়া দর্শনের মাধ্যমে জীবন গড়ে তুলুন। হরিনাম করুন। হরিবোল।
This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free